আমি আপনিতে আসক্ত পর্ব ৭+৮+৯

0
1151

#আমি_আপনিতে_আসক্ত (৭+৮+৯)
#ফারহানা_জান্নাত

“আপনি বিয়ে করে নেন মাইশু। আমি বেকার, আমার কাছে আপনি সুখি হতে পারবেন না।”

“আচ্ছা আচ্ছা তুই যদি আমাকে বিয়ে না করিস তাহলে প্রেম করতে আসছিলিস কেনো? তুই কিন্তু আগে প্রপোজ করছিস। তো তখন ও তুই বেকার ছিলিস। তখন মনে হয়নি যে আমাদের রিলেশন এ না জরানোই ভালো।”

“মাইশু আপনি আমাকে তুই করে বলতিছেন!? আপনার দেখি ভাড়ি উন্নত হয়ছে। এই আপনি তো বেয়াদব হয়ে গেছেন।”

“সরি আপনি আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছেন কেনো বলেন তো। আপনি বাসায় আমার কথা বলে রাখেন। আপনার না একটা ছোট ভাই আছে? তাকে ও বলে রাখবেন। আর শাশুড়ী মাকে তো আগেই বলবেন। আমি খুব শিগ্রয় আপনার বাসায় পা রাখবো।”

“আপনি কি মনে করেন? আপনার পরিবার আমাদের এই রিলেশন মেনে নিবে? মেনে না নিলে কি করবেন ভাবছেন কি?”

“আপনি মেনে নেওয়া তে আছেন! আর আমার তো সহস হচ্ছে না বাসায় বলার কথা। হুহ্ আর আপনি মেনে নেওয়ার কথাতে পড়ে আছে বাবা গো।”

“এই একদম চুপ। যদি বলতে না পারেন তাহলে রিলেশন এ আসছিলেন কেনো হ্যা? আপনি বলতে না পারলে বলেন। আমি আপনার পরিবার কে বলবো। না হয় আপনার আব্বুর পা ধরে আপনাকে চেয়ে নিবো।”

“আমি আপনাকে কারো কাছে ছোট হতে দিবো না রাহুল। আপনি আমার বড়ই প্রিয় মানুষ। তাকে কিভাবে অপমান হতে দিবো বলুন? আপনি চিন্তা করবেন না, আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনার হয়ে থাকবো।”

“তাহলে বাসা থেকে যদি বিয়ে ঠিক হয় তখন আপনি কি করবেন?”

–আমরা ওদের মেসেজ দেখছিলাম এতোক্ষণ। তবে রাহুল ভূল কিছু বলে নাই। বাসায় বলতে ও পারবে না, আবার রাহুল কে ও বাসায় যেতে দিবে না তাহলে কিভাবে কি হবে? মাইশা কি ভাবতিছে আমাদের মাথায় আসে না। তাই উপায় না পেয়ে আমি মেসেজ করি।

“মাইশা তাহলে কি করবি। কিছু তো বল বুইন। তোদের জুটি দেখার জন্য কতোদিন থেকে ওয়েট করতেছি।”

“আচ্ছা এসব বাদ আজকের মতো। সবাই ঘুমা তো যা, আর রাহুল আপনি ইনবক্সে একটু চোখ রাখুন। আপনাকে সেই কখন মেসেজ দিছি দেখেন নাই।”

–রাহুল মেসেজ চেক করে ছোট করে একটা সরি লিখে দেয়।

“হ্যা এখন তো সরি বলবেন। গ্রুপ এ মেসেজ করার সময় আমার মেসেজ আপনার চোখে পড়ে না তাই না।”

“সরি মিস খেয়াল করি নাই।”

“আপনার কি মন খারাপ?”

“আপনাকে ছাড়া কি আমি থাকতে পারবো মাইশু? আপনি যে আমার হ্নদয় এ বিচরন করছেন। আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো সেটা ভাবতেছি আর কি।”

“ওহ আমাকে ছাড়া থাকার প্লেন ও করছেন তাহলে? আচ্ছা আমাকে না পেলে কি কি করবেন, কি কি প্লেন করছেন একটু বলেন শুনি।”

“শুনবেন?”

“জ্বী মহারাজ বলেন”

“আপনি আমার না হলে, প্রথমে আমি সিগারেট খাওয়া শিখবো। সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট দূর হয়। তারপর আরো বেশি কষ্ট হলে নেশা করবো
গা’ঞ্জা খাবো, ইয়া’বা খাবো তারপর, তারপর হ্যা তারপর আরো কষ্ট হলে ঘুমের মেডিসিন নিবো আর পড়ে পড়ে ঘুমাবো। আর তাও যদি কষ্ট না কমে তাহলে উপর ওয়ালার কাছে চলে যাবো।”

“তুই থাক আমি তোর কাছে আসতেছি। না তোর কাছে না তোর বাসায় গিয়ে তোর মাকে বলে আসবো সব কথা? মানে তুই মরবি তাই না!! এই তুই ভাবলি কি করে এসব হ্যা?”

–মাইশা কয়েকটা রাগের ইমোজি দেয়। তাও তার রাগ কমতিছে না দেখে রাহুল কে ভিডিও কল দিয়ে উড়াধুরা গালি দেয়। রাহুল এর এতোক্ষণ মন খারাপ থাকলে ও মাইশার রিয়েক্ট করা দেখে, মন খারাপের মাঝে ও হেঁসে দেয়।

“মাইশু বউ আমার সরি। রাগ করবেন না প্লিজ, আপনাকে রাগতে দেখলে যে আমার আদর করতে খুব ইচ্ছে করে। আপনি আমার কাছে নেই কিভাবে আপনাকে আদর করবো? প্লিজ আপনি রাগ করবেন না। আমি শুধু আমার ভাবনা গুলো আপনার কাছে শেয়ার করলাম।”

“কথা দেন আমি যদি কখন ও আপনাকে ছেড়ে ও যাই তাও এসব পাগলামি করবেন না প্লিজ। তবে আমি কথা দিলাম এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া আমাকে আপনার কাছ থেকে কেও আলাদা করতে পারবে না।”

“আর আপনার বলা অনুযায়ী আল্লাহ যদি আমাদের আলাদা করে মাইশু?”

“না পারবেন না, আল্লাহ এটা কখন ও করবে না। হ্যা আমার মৃত্যু ছাড়া আমাকে আপনার থেকে আলাদা কেও করতে পারবে না।”

“আচ্ছা এসব ভাববেন না। আপনি আমার না হোন তবুও ভালো থাকেন। এসব মৃত্যু নিয়ে ভাববেন না। আপনাকে হারানো হয় তাহলে আমার মনে জেকে বসবে।”

“সরি আপনি প্লিজ এমন কিছু বলেন না যাতে আমার রাগ হয়।”

“আচ্ছা বাদ দেন। আমার ছোট বউ কোথায়? ইশ ছোট বউ কে দেখি নাই সেই এসএসসিতে দেখছিলাম।”

“ও এখন আলাদা রুমে থাকে। ইশ মিথ্যে বলেন কেনো? দেখছেন তো পিচ্চি কে।”

“ওহ হুহ্ কই দেখলাম? পিক এ দেখছি সরাসরি তো দেখি নাই। আচ্ছা পিচ্চি, মানে আমার ছোট বউ টা তো বড় হয়ে গেছে। তা আমার ছোট বউ এর মনে কি আছে এই বুড়োর কথা?”

“উফ আপনাকে বলতে ভুলে গেছি আমি। আপনাকে না ওর এখন মনে নাই। আর মনে থাকবে কিভাবে বলুন? সেদিন এর পর থেকে তো আপনার কথা ওর কাছে বলা হয়নি। যদি কখন ও শুনতো তাহলে হয়তো মনে থাকতো।”

“হ্যা তাও ঠিক। যাক তাও ভালো নয়তো দেখতাম আপনাকে বিয়ে করার পর আমাকে বুড়ো দুলাভাই বলতো। শুনতাম কানের কাছে কেও বলতিছে-”

“এই বুড়ো তুমি আমার আপুনিকে বিয়ে করছো কেনো? আমার আপুনিকে কোনো বুড়োর সাথে আমি বিয়ে দিবো না”

“যাক মনে নেই ভালো হয়ছে।”

“হিহি আপনি ও না।”

–মাইশা হাসতে থাকে রাহুল এর কথা শুনে। যে পিচ্চির কারণে তারা কতো মজা করছিলো। সেই পিচ্চি তো এখন ক্লাস নাইনে উঠছে, তাও শেষের দিকে আর দুই মাস পর ক্লাস টেন এ উঠবে। ইশ কতো সময় পেরিয়ে গেলো চোখের পলকেই।

“মাইশু আপনার এই হাসিটা আমার ব্যাক্তিগত একান্ত ভাবে কবে হবে বলুন তো।”

–রাহুল এর কথায় মাইশা হাসি থামিয়ে দিয়ে বলে-

“খুব শিগ্রয়”

“আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পরুন। আর কালকে কি হয় আমাকে জানাবেন।”

“আচ্ছা আপনি ও টেনশন নিয়েন না আমি আপনার হয়ে থাকবো। ঘুমিয়ে পরুন আপনি ও। আপনাম চেহারা খারাপ হলে কিন্তু আমি আপনাকে মাহি উপহার দিবো না।”

–রাহুল হেঁসে দেয় এমন কথায়। মাইশা ও হালকা হেঁসে ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

[বিকালে]

–আরুহি প্রাইভেট থেকে বাসায় এসে দেখে বাসায় অনেক মানুষ জন। আর সবার সামনে তার আপুনি মাথা নিচু করে বসে আছে। পরনে শাড়ি, আরুহি ভাবে তার আপুনি এই ভাবে বসে আছে কেনো? সে সবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজের রুমে গিয়ে গোসল করে খাওয়ার জন্য নিচে আসে। টিফিন পিরিয়ডে সে কখন ও খাবার নিয়ে যায় না। তার আপুনির হাতে না খেলে তো তার খুধা মিটে না। নিচে এসে কিছু না জেনে বুঝেই মাইশা কে ডাকে।

“আপুনি আমার খুধা লাগছে তারাতাড়ি খাওয়াই দেও তো।”

–আরুহির কথায় সেখানে থাকা মানুষ জন আরুহির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এতো বড় মেয়েকে তুলে খাওয়াবে!? মাইশা দেড়ি না করে যখন উঠতে যাবে। তখন যে দেখতে আসতে তার মা বলে-

“মা তুমি কই যাচ্ছো বসো।”

“না আসলে আন্টি আরুহিকে খাওয়াতে হবে। ও একা একা খায় না। ওর তো খুধা লাগছে।”

“তোমার বিয়ে হলে ওকে খাওয়াবে কে? আরুহি মা এই দিকে আসো। তুমি তো বড় এখন কি উঠায় খাওয়াতে হবে?”

“আপুনির বিয়ে মানে? কবে বিয়ে!!”

“ওমা তুমি জানো না! আজকে তো তোমার আপুনি কে আমরা দেখতে আসছি। আমাদের তোমার মিষ্টি আপুনি কে পছন্দ ও হয়ছে। তাই বিয়ের ডেট ও তো ফিক্সড করলাম। সামনের ১৫ তারিখ এ বিয়ে। কারণ ডিসেম্বর মাস থেকে নাকি তোমার পরিক্ষা”

“হ্যা, না আমি আপুনিকে বিয়ে হতে দিবো না। বাবা আপনি এখন আপুনিকে বিয়ে দিয়েন না প্লিজ।”

“তা তো হয়না আম্মু। তোমার আপুনি বড় হয়ছে তাকে তো বিয়ে দিতে হবে তাই না?”

“তাহলে আমাকে খাওয়াবে কে?”

“এই তার মানে তুই আমার হাতে খাবি সে জন্য বিয়ে হতে দিবি না! আমি ভাবলাম আমার জন্য তোর কষ্ট হবে।”

“না কষ্ট হবে কেনো? তুমি তো আমাকে আর চকলেট, চিপস, আইসক্রিম কিনে দেও না তেমন। এখন তো মাহির কে বেশি বেশি আদর করো। তাই তোমাকে বিদায় করবো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাকে খাওয়াবে কে? তুমি কি শশুর বারি থেকে এসে খাওয়াবে?”

“হ বুইন আমি প্রতিদিন তোকে এসে খাইয়ে দিবো কেমন?”

“আচ্ছা, আন্টি আমাদের বাসা থেকে আপনাদের বাসা কতোদূর এ?”

“বেশি দূরে না মা, সামনের যে ফ্লাট আছে না? ঐটা আমাদের বাসা।”

“আচ্ছা এই ভাইয়া শুনুন আপনি কি আপুনির হবু জামাই?”

“হুম”

“আচ্ছা আপুনি যদি আমাকে খাইয়ে দিতে আসে তাহলে কি আপনি রাগ করবেন?”

“নাহ”

–ছেলেটা হাসি মুখে কথাটা বলে। কেও কেও মাথায় হাত দিয়ে আছে, আবার কেও কেও গালে হাত দিয়ে আরুহির কান্ড দেখতিছে। এতো মানুষের সামনে কি বলতিছে মনে হয় তার ধারনা নেই। মাইশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে পিচ্চি কে দেখতিছে। ইশ পিচ্চি টা বড় হলো কেনো? এই পিচ্চি কে ছেড়ে সে অন্য কোথাও যাবে। তার তো কষ্ট হবে।

“আচ্ছা বিয়ান-বিয়াই তাহলে এই কথায় রইলো। আমরা তাহলে আজ আসি আপনারা বিয়ের আয়োজন শুরু করে দেন।”

“আচ্ছা”

–সবাই চলে গেলে মাইশা আরুহিকে খাইয়ে দেয়। আরুহি খেয়ে পড়তে বসে নিজের রুমে গিয়ে। তার এখন মন খারাপ, তার আপুনি তাকে ছেড়ে যাবে? সে তো বোঝে তার আপুনি গেলে আর আগের মতো ভালোবাসবে না। তখন মজা না করলে তো তার আপুনি কান্না করতো।

“মাইশা কি করতিছো মা”

“এই তো আম্মু কিছু না, কিছু বলবা? রুমে আসো।”

“হুম তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।”

“হ্যা আম্মু বলো”

“তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

–মাইশা কি বলবে ভেবে পায় না। হ্যা বলবে নাকি না! সেটা নিয়ে নিজেই কনফিউশ হয়ে যায়। তখন মিতু মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে-

“তোমার কোনো পছন্দ থাকলে আমাদের বলতে পারো মা। হ্যা ছেলে দেখার আগেই তোমার থেকে আমাদের শোনা উচিত ছিলো। কিন্তু সেটা আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গেছিলো। তবে তোমার পছন্দ থাকলে বলো তার সাথেই আমরা তোমার বিয়ে দিবে।”

“না আম্মু আমার কোনো পছন্দ নেই। তোমাদের পছন্দ আমার পছন্দ।”

“আচ্ছা তাহলে কালকে আরুহি কে নিয়ে মার্কেট এ গিয়ে কি কি লাগবে কিনে নিও।”

“আচ্ছা”

–রাত ১০ টা। রাহুল এখন ও মাইশার ফোন রিসিভ করে নাই। এমন না যে রাহুল ফোনের কাছে নেই। ও ফোনের কাছেই আছে। কিন্তু ওর ফোন রিসিভ করার সাহস হচ্ছে না। কি কথা বলবে ও মাইশার সাথে? বিয়েটা ঠিক হলো কিনা তাও বুঝতে পারতিছে না।

“রাহুল আপনি ফোন রিসিভ না করলে আমি কিছু একটা করে বসবো। আপনি আমাকে এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেনো? আপনাকে বিয়ে করা তো আমার দ্বারা সম্ভব না। এখনই কষ্ট দিচ্ছেন বিয়ের পর তো উঠতে বসতে মারবেন আমাকে।”

–মাইশা মেসেজটা লিখে রাহুল এর নাম্বার এ সেন্ড করে। রাহুল মেসেজ দেখে সাথে সাথে ফোন করে। মাইশা ফোন বেক করে রাগ ঝারে কিছুক্ষণ।

“আপনার রাগ কমলে আমি কিছু বলতে চাই।”

“বলেন”

“বিকালে কি হলো আমি জানতে চাইনা। প্লিজ আমি মানতে পারবো না আমার খারাপ লাগবে। আপনি আমাকে বিয়ে করে নেন প্লিজ মাইশু।”

“শুনবেন না আজকে কি হলো?”

“নাহ”

“তাহলে কাল দেখা করেন আমি আমার ছবি জন্ম নিবন্ধ যা যা লাগবে আপনাকে দিয়ে আসবো। আপনি বিয়ের কাগজ ঠিক করে রাখবেন। আমরা তাহলে পালিয়ে বিয়ে করতেছি।”

“পালিয়ে!?”

“তো আপনার কি মনে হয় রাহুল?”

“আপনার বাবা-মা কষ্ট পাবে।”

“বাবা-মাকে বলার সহস আমার হচ্ছে না কেনো বুঝতেছি না। আমাকে ভালোবাসে খুব কিন্তু যানেন তো কেমন রাগি। যাই হোক বিয়ে করবো দেখবেন এক সময় ঠিকি মেনে নিবে। কিন্তু আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।”

“আচ্ছা কবে বিয়ে করবেন বলেন?”

“১৫ তারিখ! হা ১৫ তারিখ এই। আপনি সব ফেন্ড কে বলে দেন আমরা ১৫ তারিখ এ বিয়ে করতে ছি।”

“আচ্ছা”

“রাহুল আপনি এক কাজ করুন ৩টা রুম আছে এমন একটা ফ্লাট ভাড়া নেন। আপনি বাবা-মা আপনার ছোট ভাই আর আমি থাকবো। টাকার চিন্তা করবেন না প্লিজ। আমি টাকা দিবো। আমি তো চাকরি করি, আমার টাকা বাবা-মা নেয় না। আমার টাকা দিয়ে না হয় আমও আমার সংসার চালাবো। তাছাড়া আপনার বাবা তো একটা ছোট জব করেই।”

“আপনি এতো ভালো কেনো মাইশু?”

“আমি যে আপনার সে জন্য।”

“পাগল আপনি জানেন?”

“আপনার জন্য”

“হয়ছে”

“হা”

“হা কি?”

“মা-বাবা, আমার দেবর টাকে সাথে নিয়ে কিন্তু আমি বিয়ে করবো। আপনি দুই দিন এর মধ্যে সবাইকে আপনার কাছে নিয়ে আসেন। আপনাদের আগের জায়গা বিক্রি করে দেন।”

“আচ্ছা”

[দু’দিন পর]

“কিরে রাহুল বাবা, তুই আমাদের এখানে নিয়ে আসলি কেনো? কি হয়ছে বল তো।”

“আম্মু তোমাকে বলছিলাম না? মাইশুর কথা ওকে আমি বিয়ে করতেছি ১৫ তারিখ এ। পালিয়ে আপনারা থাকবেন।”

“ওর বাসায় বলে নাই?”

“ও ভয় পাচ্ছে আম্মু প্লিজ তোমরা না বলো না। আর তোমরা ও আজ থেকে আমার সাথে থাকবে।”

“আচ্ছা যা ভালো বুঝিস তাই কর।”

“লাভ ইউ মা”

[রাতে]

“মাইশা তুমি তেমন মার্কেট করো নাই যে!! বেপার কি বলো তো?”

“আম্মু তুমি ও না। এতো মার্কেট করে কি লাভ। বিয়ের পর কিনে নিবো সমস্যা নাই।”

“তোমরা যে কি করো কে যানে।”

“হিহি”

–বিয়ের দিন ঘুনিয়ে আসে। আজ ১৪ তারিখ হলুদ শেষ করে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় রাত ২টা বেজে যায়। আরুহি সকালে ঘুম থেকে উঠে আপুনির রুমে গিয়ে দেখে তার আপুনি রুমে নেই। বাড়িতে হৈচৈ পড়ে যায়। মাইশা পালিয়ে গেছে, ছেলের বাড়ির লোকজন জানার পড়ে এসে কথা শুনিয়ে যায়। দুপুর বারোটা, আরুহি এখন ও তার আপুনির রুমে বসে কান্না করতিছে। তার আপুনি তাকে রেখে কোথাও চলে গেছে। সেটা যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। আরুহি সারা রুম খোঁজার পর একটা চিঠি ও খুঁজে পায় না। তার আপুনি কিছু না জানিয়ে চলে গেলো। সিম ও অফ বলতিছে।

[অপরদিকে]

–সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর মাইশা বাসা থেকে পালিয়ে রাহুলদের নতুন ফ্লাট এ আসে। আর দুপুর এর আগেই সব আয়োজন করে ছোট খাটো ভাবেই বিয়েটা সেরে ফেলে তারা। দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে সবাই মিলে আড্ডা দেয়। আজ আবার ও একটা কারণে সব ফেন্ডরা এক হতে পারছে।

“রাহুল বন্ধু তোর তো বাসর রাত না, তোর বাসর দিন! তা বাসর টা কি কমপ্লিট করবি?”

“হা’রা’মি চুপ কর একদম লজ্জা করে না এসব বলতে?”

“আজব তো রে, তুই বিয়ে করলি বাসর করবি না বুঝি? আচ্ছা তিথি তুমি তাহলে আজকে আরুহির সাথে থেকো কেমন?”

“হ্যা জয় ঠিক বলছো।”

“আসলেই তো রে, ইশ ওরা বিয়ে করছে বাসর করবে না। তা মাইশা তুই তাহলে আজকে আমাদের সাথে থাকিস কেমন?”

–হিয়ার কথায় সবাই হাসতে থাকে। রাহুল মুখটা ছোট করে বসে আছে। তাকে নাকি বউ ছাড়া থাকতে হবে। হ্যা এতো সহজ নাকি? কতো কষ্টের পর বউটাকে সে পেলো। মাইশা রাহুল এর দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হেঁসে দেয়।

“এই আপনি একদম হাসবেন না বলে দিলাম। দেখছেন না এরা কিসব বলে। আপনি জানতো রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেন। আপনি রাত থেকে ঘুমান নাই।”

“হ্যা হ্যা মাইশা একটু ঘুমিয়ে নে। রাতে কিন্তু ঘুমাতে পারবি না। তোদের মাহিকে তো আবার এখন আনতে হবে।”

“ছি তোরা কিসব বলিস রে। আমার লজ্জা করে না বুঝি?”

–মাইশার কথায় আর এক দফা হাসা হাসি শুরু হয়ে যায়। তবে রাহুল জোর করে মাইশাকে ঘুমাতে বলে। কাল রাতে এসে মেয়েটা কান্না করছে ২ ঘন্টা থেকে। ঘুমাই নি এখন না ঘুমালে তো শরীর খারাপ করবে।”

[রাতে]

“আমি তাহলে একান্তই আপনার হয়ে গেলাম রাহুল।”

“হ্যা মাইশু আপনি একান্তই আমার। এখন শুধু আমাদের মাহিকে আনার পালা।”

“এই আপনি ও না সরেন তো।”

–রাত তখন ১টা সবাই আবার ও কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে যায়। রাহুল দের ঘুমাতে যেতে যেতে রাত ১ টা বেজে যায়। মাইশা নরমাল ড্রেস পরে বিছানায় হেলান দিয়ে ছিলো। তখন রাহুল মাইশার কোলে মাথা রেখে কথা গুলো বলে।

“আমাকে আপনার থেকে আজ সরাতে পারবেন না মাইশু। আপনাকে আমার করে নেওয়া এখন ও বাকি আছে।”

–রাহুল এর কথায় মাইশা কেঁদে উঠে। তার বাড়ির কথা মনে হচ্ছে খুব। রাহুল মাইশার কোল থেকে উঠে মাইশাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

“মাইশু কান্না করবেন না প্লিজ। আপনার কান্না দেখলে যে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনাকে বললাম বাসায় ফোন করে বলে দেন আমরা বিয়ে করছি। কিন্তু আপনি জেদ ধরে বসলেন বাচ্চা হলে বলবেন। উফ আপনার মাথায় কি চলে আল্লাহ জানে।”

“এখন বললে আব্বু রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দিবে। আর যখন দেখবে একটা বাচ্চা হয়ছে তখন আর আমাকে বকাবকি করবে না। বাচ্চার জন্য হলে ও মেনে নিবে।”

“আপনি যে কি বোঝেন কে জানে।”

“আমাকে একটু আদর করবেন?”

–রাহুল মাইশার কথা না শুনে পকেট থেকে একটা চেন বের করে পরিয়ে দেয়। মাইশা গলায় হাত দিয়ে রাহুল কে জড়িয়ে নেয়। এই ছোট গিফট তার কাছে অনেক কিছু। রাহুল রুমের লাইট অফ করে মাইশার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।

[তিনদিন পর]

–আরুহি এই তিন দিনে মুখে কিছু দেয় নাই। সে আপুনির হাতে খাবে বলে জেদ ধরে বসে আছে। সে কি আর বুঝতিছে না? ‌যে তার আপুনি আর ফিরে আসবে না।

“আম্মু খেয়ে নেও। এভাবে আপুনির জন্য মন খারাপ করে থাকে না। আপুনি কি তোমার কথা ভেবেছে? তাহলে তুমি কেনো আপুনির জন্য ভাবতিছো?”

“বাবা আমি আপুনির কাছে যাবো।”

“খেয়ে নেও আম্মু, তোমার মা কষ্ট পাচ্ছে, তুমি না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বা। সামনে ১ তারিখ থেকে তোমার এক্সাম।”

“বাবা”

–আরুহি বাবার বুকে পরে কান্না করতে থাকে। মাইশা আপুনিকে সে তো অনেক ভালোবাসে। আর আপুনি তাকে না বলে হারিয়ে গেলো। ৬ মাস কেটে যায়, আরুহি এখন পড়াশোনায় ব্যাস্ত। মাইশা আপুনিকে ভুলতে, আশা আর ও মাঝে মাঝে এখানে সেখানে ঘুরতে যায়।

[ঐদিকে]

–মাইশা মন খারাপ করে গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে। তার মন খারাপ হওয়ার কারণ এই ৬ মাসে ও সে বাচ্চা কনসিভ করতে পারে নাই। হালকা সমস্যা দেখা দিসে সে জন্য বাচ্চা আসবে কিন্তু সময় লাগবে। কিন্তু তার এখনি বাচ্চা চাই সে জন্য মন খারাপ করে রাহুল এর দিকে তাকিয়ে থাকে।

“আল্লাহ আমাদের উপর খুশি না মাইশু। আমরা পালিয়ে বিয়ে করছি, সে জন্য হয়তো আল্লাহ এই শান্তি আমাদের দিলো।”

“আপনি এসব বলবেন না। এমনি আমার মন খারাপ আর আপনি আমাকে এসব বলতিছেন? থাকবো না আপনার কাছে। আমি মার কাছে গেলাম থাকেন।”

“এই একটু কথা বললেই মার কাছে যাবো মার কাছে যাবো করেন কেনো? ছি আপনি মার কাছে যান আর আমি মার কাছ থেকে আপনাকে আনি। আমার লজ্জা নেই নাকি।”

“হিহি লজ্জা করে লাভ নাই আজকে ও গেলাম।”

–মাইশা তার শাশুড়ির রুমে যাবে তখন রাহুল সামনে দাড়িয়ে কোলে তুলে নেয়। তারপর একটু জোরেই বিছানায় ফেলে দেয়। মাইশা কমড়ে ব্যাথা পেয়ে রাহুল এর দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায়।

“আপনি আমাকে ব্যাথা দিলেন রাহুল!!?”

“বাঁদরামি করবেন না। আপনি হসপিটাল চেঞ্জ করছেন, এখন আপনার বাবা-মা আপনাকে খুঁজবে ও না। সব রাস্তা আপনি বন্ধ করে দিছেন। আপনার মা-বাবার কাছে যাবো যাবেন?”

“এই না রাহুল। আপনাকে তো বলছি আমি মাহি কে আনবো তারপর মা-বাবার সাথে দেখা করবো।”

“আপনাকে নিয়ে আর পারি না আমি।”

“আমি ও”

“তবে রে”

–দু’জনে বালিশ ছোঁড়া ছুড়ি করে মারামারি লাগে। কিছুক্ষণ পর মাইশা নিজেই ঝগরা থামিয়ে রাহুল এর সাথে নিজেকে আবদ্ধ করে।

[কয়েক মাস পর]

“মাইশু আপনি নাকি সারাদিন থেকে কিছু খান নাই? আপনি এমন করলে কি হবে বলেন! আপনি অসুস্থ হয়ে পরতিছেন কিন্তু।”

“আমার ভালো লাগছে না খেতে। আপনি আমার জন্য একটু আচার আনবেন রাহুল?”

“আপনি নাকি আজ বমন করছেন আম্মু বললো। এই সময় আচার খাবেন? শরীর খারাপ করবে না?”

“না আমি আচার খাবো নিয়ে আসেন।”

“এখন রাত ১১টা বাজে আমি আপনার জন্য আচার কই থেকে আনবো?”

“আচ্ছা বাদ দেন, আপনি যে শিক্ষক নিয়োগ এর এক্সাম দিলেন। তো রেজাল্ট কবে?”

“কালকে রেজাল্ট দিবে।”

“রাহুল আমি না আজ অনেক হ্যাপি।”

“কেনো বলুন তো?”

“আমাদের মাহি আসতে চলছে।”

“কিহ!”

“হ্যা”

“ওয়েট”

–রাহুল মাইশা কে রেখে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মাইশা হা হয়ে রাহুলের কান্ড দেখে। পড়ে বিছানা থেকে উঠে দেখে রাহুল বাসায় নেই। মাইশা ভেবে পায় না ছেলেটা এতো রাতে কই গেলো? রাহুলের ফোনে ফোন করবে তার ও উপায় নেই। ফোন বিছানায় পড়ে আছে। মাইশা গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিট পর রাহুল বাসায় আসে। হাতে একটা আচার এর বৈয়াম। মাইশা সেই দিকে তাকিয়ে হা হয়ে রাহুল কে দেখে। কিছুক্ষণ আগে আচার আনবে না সে জন্য কথা শুনালো। আর এখন!? মাইশা উঠতে যাবে তখন রাহুল বারন করে নিজেই মাইশার সামনে বসে। রাহুল ঘেমে গেছে। এপ্রিল মাস চলে, গরম তার উপর তারাহুরো করে বাজারে গেছে আসছে। মাইশা ওড়না দিয়ে রাহুলের মুখ মুছে দেয়।

“আপনি না তখন বললেন রাতে আচার নিয়ে আসতে পারবেন না! তাহলে হঠাৎ আপনার কি হলো এই রাতে আচার নিয়ে আসলেন আমার জন্য।”

“সরি বউ আমি জানতাম না তো যে, আমার মাহি মামুনি আসবে সে জন্য আপনি আচার খেতে চাচ্ছেন। আচ্ছা কয়মাস চলে?”

“দুই মাস।”

“ওহ”

–রাহুল গায়ের ট্রি-শার্ট খুলে মাইশাকে শুয়ে দিয়ে, মাইশার পেটে কিস করে। পেটে হাত দিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলতে থাকে।

“মাহি মামুনি তুমি কি জানো তুমি আমাদের জন্য কতোটা স্পেশাল? তোমার মাম্মাম আর আমি যে তোমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেছি।”

“এই দেখি গরম লাগতিছে, আপনার হাত গরম পেট থেকে হাত সরান তো। উফ এখন বাচ্চার অস্তিত্ব হচ্ছে, ও একদম পুঁচকে বুঝলেন ও এসব এর কিছু বুঝবে না।”

“এই আপনি ঘুমিয়ে পরুন আমি মাহির সাথে কথা বলবো। তারপর ঘুমাবো, আমাকে বিরক্ত করলে হাত পা বেঁধে রাখবো আপনার।”

“উফ বিরক্ত তো।”

“ওয়েট ওয়েট আপনি কিছু খান নাই তাই না? ওয়েট আমি খাবার নিয়ে আসি আপনাকে খাইয়ে দিবো।”

“নায়য়য়য়য়”

“চুপ”

–রাহুল খাবার এনে মাইশার সামনে বসে। মাইশা গাল ফুলে বসে আছে। তার খুধা নেই সে খাবে না। তাও রাহুল জোর করে মাইশাকে খাওয়াতে থাকে। মাইশাকে খাওয়াই দিয়ে হাত ধুয়ে মাইশার ওড়নায় হাত মুছে নেয়। হুট করে মাইশা রাহুল এর গালি বুকে বমন করে দেয়। মাইশা ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।

“সরি”

–রাহুল নিজের শরীরের দিকে তাকায়! ইয়াক বুক বমনে মেখে গেছে। ভাগ্য ভালো যে বিছানায় পড়ে নাই। রাহুল এর পেন্ট আর খালি বুক মেখে গেছে। রাহুল উঠে গোসল করে একটা ভিজা কপড় এনে মাইশার মুখ মুছে দেয়। মাইশা রাহুলকে জড়িয়ে ধরে।

“সরি আপনাকে তো বললাম খাবো না।”

“ইট’স ওকে পাগলি। আমি কিছু মনে করি নাই। আপনি বমন করলেন পেট ব্যথা করতিছে তো তাই না? সে জন্য আমার মনটা খারাপ। কারণ বমন হলে তো মনে হয় পেটের নাড়িভুড়ি সব ব্যাথা ধরে যায়।”

“না এই যে একটু ব্যাথা করতিছে।”

–মাইশা একটা হাত উঁচু করে দুইটা নখ ছোট করে বলে। রাহুল মাইশার এমন কান্ডে হেঁসে দেয়। তারপর মাইশাকে শুয়ে দিয়ে নিজে ও মাইশাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে।

“রাহুল আপনার মেয়ে হবে। আপনি তো খুশি চলেন না আমাকে একটু কোথাও থেকে ঘুরে নিয়ে আসেন।”

–মাইশার ৭মাস রানিং। আজকে আলতাস্নোগ্রাফ করে জমজ বেবি একটা ছেলে একটা মেয়ে। বাড়িতে যেনো খুশির শেষ নেই। একদিকে রাহুল বিসিএস পরীক্ষায় উত্তির্ন হয়ছে। সাথে একটা ভার্সিটিতে আজকেই জয়েন্ট করছে সে। তার উপর এতো বড়ো খুশির খবর। বাড়িতে এক সাথে দুইটা খুশির খবর। মাইশা প্রেগন্যান্ট দেখে রাহুল কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় না। ভয় করে সে, যদি কিছু হয়ে যায়? তবে দুইটা খুশির খবর পেয়ে মাইশা সহস করে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে।

“আচ্ছা যান আপনি রেডি হয়ে নেন। তবে একদম লাফালাফি করবেন না ওকে?”

“আচ্ছা, রাহুল আর মাত্র কয়টা মাস দেখেন। তারপর আমি আমাদের বাবা-মাকে জানাতে পারবো আমাদের বিয়ের কথা। মানে তখন বাচ্চা নিয়ে তাদের সামনে যাবো। ইশ আমি না সেই এক্সাইটেড।”

“আপনি আপনার এক্সাইটেড নিয়ে থাকেন।”

“রাগ করতিছেন কেনো? আচ্ছা ঘুরতে যাবো না কোথাও যাবো না যান।”

–মাইশা কান্না করে দেয়। তার এখন অতিরিক্ত মুড সুইং হয়। একটুতেই মন খারাপ করে বসে। রাহুল মাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর নিজেই একটা শাড়ি এনে মাইশার হাতে ধরিয়ে দেয়। মাইশা রাহুলের দিকে মুখ তুলে ঠোঁট উল্টায়। রাহুল ঠোঁটে হালকা কিস করে শাড়ি পড়ে নিতে বলে।

“এই দেখেন আমাকে কি সুন্দর লাগতিছে তাই না?”

–মাইশার কথায় রাহুল মাইশার দিকে তাকিয়ে দেখে। চোখ ফিরানো যায় না। সুন্দর শরীরে কালো রংটা যেনো একদম মিশে গেছে। তার উপর কমসিভ করার পর থেকে সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে মাইশার। রাহুল উঠে মাইশার চোখে কাজল পড়িয়ে দেয়। তারপর হালকা কাজল টিপ আকারে কপালে দেয়।

“নজর না লাগজায়ে বউ”

“হিহি আপনাকে ও সুন্দর লাগতিছে। দেখি এই দিকে আসেন আপনাকে ও একটু কাজল লাগিয়ে দেই।”

“আমাকে একটু মানুষ দেখুক সমস্যা নাই।”

“এই আমি আপনিতে আসক্ত। আমি ছাড়া আপনাকে কেও দেখবে না ওকে?”

“এই আমি আপনিতে আসক্ত। আমি ছাড়া আপনাকে কেও দেখবে না ওকে?”

“উফ আপনি আমাকে কপি করেন কেনো?”

“উফ আপনি আমাকে কপি করেন কেনো?”

“এই ভালো হচ্ছে না কিন্তু”

“এই ভালো হচ্ছে না কিন্তু”

–মাইশা এবার কেঁদে দেয়। রাহুল হালকা ভাবে জড়িয়ে নেয়। মাইশা কান্না থেমে দিয়ে রাহুল এ বাহুতে জোরে কামড় বসায়। রাহুল চোখ মুখ শক্ত করে থাকে। মাইশা এখন প্রায় কামড় বসায় তাই অভ্যেস হয়ে গেছে। তবে আজকের কামড়টা অনেক জোরেই দিসে। তাছাড়া মাইশা এখন ও দাত দিয়ে গোস্ত ধরে আছে। রাহুল মুখ থেকে হালকা শব্দ বের করে।

“আহ”

–মাইশা মুখ তুলে ঠোঁট উল্টায় রাহুল এর দিকে তাকায়। রাহুল এর চোখের কোনে পানি জমা হয়ছে। যেখানে কামড় দিসে সেই জায়গাটায় জামার উপর থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রাহুল শার্ট খুলে মাইশার সামনে দাড়ায়। মাইশা নিজের নখ মুখে দিয়ে নখ খোটলায় আর রাহুল কে দেখে। রাহুল মাইশার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে-

“একদম বাচ্চা স্বাভাব হয়ে গেছে এর। কেমন বাচ্চাদের মতো ফেস টা করে রাখছে। উফ রাক্ষসীর মতো কামড় দিয়ে রক্ত বের করছে।”

–মাইশা ফাস্ট টেড বক্স এনে রাহুলের হাত টেনে বেন্ডেজ করে দেয়। তারপর শাড়ির সাথে মেচিং করা একটা শার্ট রাহুলের হাতে দেয়। রাহুল ভ্রু কুঁচকে তাকালে মাইশা নিজে শার্ট পড়িয়ে দেয়।

“চলেন”

“হুম”

–রাহুল নিচে নেমে মাইশাকে নিয়ে একটা পার্কে যায়। যে পার্কের সাইট ধরে নদী বহমান। মাইশা রাহুলের হাত ধরে হাটতিছে। রাহুল মাইশাকে দেখতিছে চোখ ভড়ে। আজ-কাল কেমন যেনো মাইশাকে হারিয়ে ফেলার ভয় তার মনে জেকে বসছে। সে নিজে ও জানে না এটা কেনো হয়।

“মাইশু চলেন রাত লেগে আসছে আমাদের বাসায় যেতে হবে।”

“চলেন না ফুসকা খাবো।”

“এই সময় ফুসকা?”

“আমি ডাক্তার নাকি আপনি? একদম বেশি কথা বলবেন না। চলেন আমি ফুসকা খাবো।”

“উফ”

“যাবেন না?”

“যাচ্ছি তো”

–রাহুল বিরক্ত হয় মাইশার জেদে। বাহিরের খাবার খাচ্ছে যদি কিছু হয়? কিন্তু মাইশা সে সব কানে নেয় না। রাহুল কে টেনে নিয়ে গিয়ে ফুসকার দোকানের সামনে দাড় করায়। রাহুল কিছু না বলে রাগি মুখ করে মাইশা কে দেখে। মাইশা বাচ্চাদের মতো করে আঙ্গুল দিয়ে ফুসকা দেখে দেয়। দোকানের আশেপাশে অনেক মানুষ ছিলো তারা মাইশার কান্ডে হেঁসে রাহুল এর উদ্দেশ্য বলে।

“ভাই ভাবিকে একটু ফুসকা খেতে দেন। দেখতিছেন না কতো সুন্দর করে বাচ্চাদের মতো আপনার কাছে আবদার করতিছে। এই কিউট ভাবিকে না করেন না।”

–রাহুল কিছু না বলে, এক প্লেট ফুসকা নিয়ে নিজেই সুন্দর করে খাইয়ে দেয়। তারপর রাতের ডিনার বাহিরে থেকেই করে আসে তারা। জানুয়ারি তারিখ ০১, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে মাইশা। তার ১০ মাস চলে হঠাৎ করেই পেইন শুরু হলে মাকে ডেকে উঠে।

“মা কই গেছেন একটু আসবেন।”

“কি মা কি হয়ছে”

“আ-আমার পেইন উঠছে মা হসপিটালে যেতে হবে। আপনার ছেলেকে আসতে বলেন একটু তারাতাড়ি।”

–রাহুলের মা রাহুল কে ফোন করার ২০ মিনিট এর মধ্যে বাসায় চলে আসে। তারপর হসপিটালে নিয়ে যায়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর ওটির আলো নিভে যায়। রাহুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ডাক্তার এসে একটা মেয়ে রাহুলের হাতে ধরিয়ে দেয়।

“আমার ওয়াইফ কেমন আছে ডাক্তার? আর আমার ছেলে কই? মাইশুর তো জমজ বেবি হওয়ার কথা ছিলো।”

“আসলে….”

“আসলে আসলে না করে বলেন ডাক্তার আমার ছেলে কই!?”

“আপনার ছেলেকে আমরা বাঁচাতে পারি নাই।”

–ডাক্তার মাথা নিচু করে কথাটা বলে। রাহুল মাহিকে নিয়ে মাটিতে বসে পরে। তাদের ছেলেকে বাঁচানো যায় নি। মাইয়া নিশ্চয় খুব কান্না করবে শুনলে। সে তো দুইটা বেবি নিয়েই এক্সাইটেড ছিলো। ডাক্তার মাইশার কথা রাহুল কে কিভাবে বলবে বুঝতে পায় না। একটা সন্তান মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পরই কান্না করে দেয়। আর মাইশার খবর শুনলে কি হবে ছেলেটার? ততখনে আমরা কয়জন বন্ধু হসপিটালে এসে উপস্হিত হই। আমাদের মাইশা মা হচ্ছে আমরা থাকবো না এটা কি হয়? কিন্তু দুইজন ফেন্ড দেশের বাহিরে পরিবার সহ সেটেল হয়ছিলো। তারা আসবে বলছে আমাদের, মাইশা যখন ১০ মাসের প্রেগন্যান্ট তখন ওরা ভিসা যা যা লাগে ঠিক করে রাখে। যাই হোক, ডাক্তার রাহুল এর কাঁধে হাত রাখে। আমি সেই পিচ্চি মাহিকে কোলে উঠিয়ে নেয়। একদম সে মাইশার মতো হয়ছে। হয়তো বড়ো হলে মাইশার পুরো মুখ পাবে। ডাক্তার আমাদের সবার উদ্দেশ্য বলে…

চলবে?…………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here