#আমি_আপনিতে_আসক্ত (৫+৬)
#ফারহানা_জান্নাত
“মাইশা চড় মারলি কেনো!? আমি তো ভাবছি তুই আমাকে পছন্দ করিস সে জন্য আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারিস না। সরি আমার ধারণা ভূল বুঝতে পারি নাই। আমাকে মাফ করে দেস প্লিজ, কিন্তু বন্ধুত্ত্ব নষ্ট করিস না।”
–রাহুল এর কথা শুনে মাইশা আবার ও একটা থাপ্পড় মারে। তারপর কিছুটা আওয়াজ করে বলে-
“শা’লা মাহি কে হ্যা? এই তোর কোন মেয়ের নাম মাহি!? তুই আমাকে না বলে বিয়ে করছিস!! আর আমাকে আবার বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছিস। লজ্জা করে না তোর? আমার সামনে থেকে সর।”
–এতোক্ষণে সবাই রাহুল কে থাপ্পড় মারার কারণ বুঝতে পারে। সবাই খুশি রাহুল মাইশাকে প্রপোজ করছে সে জন্য। কারণ দু’জন কে বরাবর সুন্দর লাগে। কিন্তু মাইশার বোকামি দেখে সবাই জোরে জোরে হাসতে থাকে। রাহুল তো প্রপোজ হিসাবে মাহি নামটা নিছে, আর সেটা নিয়ে ও মাইশা ভূল বুঝতিছে।
“যা তোরে প্রপোজ করা ভূল হয়ছে আমার। আমাকে মাফ করে দে বুইন, কোন গাধাকে প্রপোজ করলাম রে খোদা।”
“ঐ একদম উঠবি না বল মাহি কে। না বলে উঠলে কিন্তু এখানে বসে বসে কাঁদবো আমি।”
“আব্বে.. মাহি তোর হবু সন্তান, মানে তোর আর আমার যখন মেয়ে হবে তখন তার নাম মাহি রাখবো। সেই হিসাবে মাহি নামটা নিলাম। তুই কি আমার মাহি মামুনির মাম্মাম হবি?”
“হুহ আগে ভালো করে বললেই হতো। আয় জড়িয়ে নে আমাকে। কথা দিলাম তোর মাহি মামুনির মা হয়েই ছাড়বো তো। তার আগে কখন ও ছাড়বো না।”
“তার মানে! মাহি হওয়ার পর আমাকে ছেড়ে যাবি?”
“আরে না না ঐটা কথার কথা। আমি ছেড়ে গেলে তুই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করিস। রাহুল তোর পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি না রে। আমাকে যেনো কখন ও ছেড়ে যাস না প্লিজ। তোকে ছাড়া আমি মরেই যাবো। জানি না তোর প্রতি আমার এতো আবেগ ভালোবাসা কই থেকে আসে।”
“চুপ তোর কিছু হবে না। আজ থেকে আমি শুধু তোর, আর তুই আমার।”
“ভাই আমাদের সামনে জরাজরি আর করিস না প্লিজ। আমরা সবাই পিচ্চি মানুষ, তুই এই ভাবে মাইশাকে জড়িয়ে ধরছিস। দেখ আমরা সবাই লজ্জা পাচ্ছি।”
–আমার কথা শুনে সবাই হেঁসে দেয়। রাহুল আমাদের দেখানোর জন্য মাইশা কে ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে মাইশার কপালে শব্দ করে চুমু খায়। যাতে আমরা শুনতে পাই শব্দটা। মাইশা তখন খিলখিল করে হেঁসে উঠে। তারপর সময় যায়, আমরা এসএসসি এক্সাম দিলাম । আমরা সবাই সবার বাসা দেখলে ও মাইশার বাসাতে কখন ও যেতে পারি নাই। কারণ ওদের বাসায় নাকি ছেলে বন্ধুরা যেতে পারে না। আর সে কারণে আমরা কেও কখন ও ওর বাসায় যাই নি। এসএসসি দিয়ে ইন্টার এ ভর্তি হওয়া রেজাল্ট সব মিলিয়ে প্রায় তিন মাস সময় পাওয়া যায়। সবাই প্লেন করলাম কোথাও ঘুরতে যাবো। কিন্তু বাঁধ সাধে মাইশার পরিবার থেকে। মাইশা কে একা কারো সাথে যেতে দিবে না।
“আব্বুউউউ আমি কিছু জানি না মানে জানি না। আমি তো একা না তাই না? ১২ জন সবাই মিলে কক্সবাজার যেতে চাচ্ছি আপনি প্লিজ আমাকে বাঁধা দিয়েন না। আমি ও যাবো প্লিজ আব্বু প্লিজ আমি যাবো।”
“শুধু কক্সবাজার যাচ্ছো তোমরা?”
“ইয়ে না মানে ১ মাসের ট্যুর এখন যে কয়টা জায়গা ঘুরতে পারবো সেই কয়টা জায়গা ঘুরবো আর কি।”
“একটা শর্তে আমি রাজি আছি, তাহলে তুমি যেতে পারবা। না হয় রুমে যাও, ১৫ দিন ও হয়নি এক্সাম শেষ হওয়া আর তুমি লাফালাফি করতিছো।”
“না না আব্বু আপনি বলেন কি শর্ত, আমি আপনার সব শর্তে রাজি। আমি যেতে চাই আব্বু প্লিজ। দেখেন ১ মাসের ট্যুর কতো সুন্দর হবে একটু বুঝার চেষ্টা করেন।”
“আরুহি কে সাথে নিয়ে যাও। আর এটিএম কার্ডে হয়তো ৩ লক্ষ টাকা আছে ঐ কার্ড সাথে নিও।”
“এ্যা! এই পিচ্চিকে আমি নিবো? আব্বু আপনি কি বলতিছেন? ও তো একা ১ লক্ষ টাকা খেয়ে দিবে ১ মাসে। মাত্র ক্লাস টু এ পড়ে, রাস্তায় আইসক্রিম চকলেট দেখলেই খেতে চাইবে। তাছাড়া কেও কোনো পিচ্চি নিয়ে যাবে না। আমি আরুহি কে নিতে পারবো না আব্বু।”
“তাহলে তোমাকে যেতে হবে না মা, যাও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।”
–মাইশা কিছু আর বলতে পারে না। রুমে যখন ঘুমাতে যায় তখন দেখে আরুহি খাটে বসে হাত মুখ মেখে চকলেট খাচ্ছে।
“আপুনি তোমার কি হয়ছে? বাবা কি তোমাকে বকা দিসে! তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেনো?”
“কিছু না রে পিচ্চি। এই ভাবে কেও চকলেট খায় নাকি! পুরো মুখ মেখে গেছে এই দিক আয়।”
–মাইশা আরুহিকে কাছে টেনে নেয়। তারপর ওড়না দিয়ে আরুহির মুখ মুছে দিয়ে আরুহিকে সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়। সকালে সবাই আমরা এক জায়গায় হই ঘুরতে যাওয়ার প্লেন নিয়ে কথা বলবো সে জন্য।
“মাইশা বাসায় বলছিস? আঙ্কেল কি বললো যেতে দিবে তো নাকি? আবার এই দিকে রাহুল গোঁ ধরে বসছে ও নাকি যাবে না।”
“বলছি তিথি যেতে দিবে শর্ত হচ্ছে পিচ্চিকে সাথে নিতে হবে।”
“পিচ্চি মানে তোর বোন তাই না? উফ আচ্ছা সমস্যা নেই পিচ্চি কে ও সাথে নিশ। তাও প্লিজ ট্যুর প্লেন নষ্ট করবো না। এখন তুই রাহুল কে সামলা।”
“কি হয়ছে যাবেন না আপনি?”
“না”
–রিলেশন এর পর থেকে রাহুল আর মাইশা আপনি বলে একে অপরকে সম্মোধন করে। মাইশার কথা “#আমি_আপনিতে_আসক্ত” আজ থেকে নো তুই নো তুমি। আপনি ওকে? আমার রাহুল আমি যে আপনিতে আসক্ত।
“যাবেন না কেনো? আপনার আবার কি হলো বলেন তো। দেখেন এখন আর প্লিজ আপনি না করেন না। আমি আব্বুকে অনেক কষ্টে রাজি করাইছি। আচ্ছা আমি পিচ্চিকে নিচ্ছি সে জন্য কি আপনি রাগ করতিছেন?”
“এই কি বলতিছেন! আমি তো পিচ্চিকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানতাম না। আমি যাবো না আপনি বাকিদের সাথে ঘুরে আসেন প্লিজ।”
“রাহুল কি সমস্যা তুই যাবি না কেনো?”
–জয় রাহুলকে প্রশ্নটা করে, তবে পরক্ষণেই কারণটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে। রাহুলের ফেমেলি নিম্নবিত্ত ১ মাসের ট্যুর করতে গেলে বহু টাকা লাগবে। এতো টাকা কই পাবে রাহুল? সে জন্য হয়তো যাবে না। মাইশা জয় আর রাহুলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে তারপর ফোন বের রাহুল এর ফোনে মেসেজ করে।
“আপনি প্লিজ রাজি হয়ে যান। আমার কথাটা একটা বার ভেবে দেখুন। আপনি না বলছিলেন আমার খুশিতে আপনি খুশি। তাহলে সবাই কে বলুন আপনি যাবেন। আপনার কোনো টাকা লাগবে না। আমি সব টাকা দিবো আপনার। প্লিজ না করেন না, সমস্যা নাই ধার হিসাবে না হয় নিলেন। আপনি যখন জব করবেন তখন না হয় সব শোধ করে দিবেন।”
–রাহুললর ফোনে মেসেজ এর টুং করে শব্দ হয়। মাইশা ইশারায় মেসেজ চেক করতে বলে। তারপর মেসেজ দেখে কিছুক্ষণ মাইশার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখে। মেয়েটা তার পিছনে অনেক টাকাই খরচ করছে। সব তো সে নোট ও করে রাখছে এই ভেবে যে জব করে সব টাকা ফিরিয়ে দিবে।
“আচ্ছা চল সবাই যখন রাজি, তাহলে আমি আর না করবো না।”
“এই তো তাহলে চল কবে থেকে ট্যুর শুরু করবি? আর গাড়ি! একটা নিজস্ব গাড়ি দরকার এই মুহূর্তে।”
“সমস্যা নাই জয় আমাদের গাড়ি আছে, নতুন যেটা সেটাই নিবো। আর ড্রাইভার নিবো নাকি নিজে চালাবো?”
“এই না আপনি গাড়ি চালাবেন না। আপনার কিছু হয়ে যেতে পারে। আপনি বরং ড্রাইভার নিয়ে চলেন, একটা ড্রাইভারকে একমাস ঘোরানোর টাকা তো আপনার আছে তাই না!? না মানে সবাই যেখানে যাবো উনাকে ও সাথে নিয়ে স্হান গুলো দেখাবো। খুশি হবে লোকটা ও।”
“আচ্ছা তাহলে তাই হোক। চল সবাই এখন তাহলে মার্কেট শুরু করে দেই।”
“আচ্ছা রাহুল তুই ও যে মাইশার কথা রাখতে গিয়ে ওকে আপনি করে বলতেছিস। আচ্ছা আপনি করে বলতে পরপর লাগে না?”
–ফেন্ড সার্কেল এর মধ্যে থেকে হিয়া কথাটা বলে। রাহুল কিছুটা হাসি মুখে মাইশার দিকে তাকায়। তারপর মাইশার হাত ধরে বলে-
“নারে হিয়া, জানি না এখন আপনিতে আমি সুখ খুঁজে পাই। আমি মাইশাকে আপনি করে বলাতে মনে হয় এখন সুখি। মাইশার মতো আমি ও আপনিতে আসক্ত।”
“আচ্ছা বিয়ের পর ও কি আপনি করে বলবি?”
“অবশ্যই”
–সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে মার্কেট করতে বের হয়। ৩-৪ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে বেশ কিছু মার্কেট করে নেয় সবাই। ১ মাসের ট্যুর বলে কথা মার্কেট না করলে হয়?
“রাহুল তুই মার্কেট থেকে কিছু কিনলি না যে।”
“আমার জামা-কাপড় বাসায় আছে তিথি। অযথা এখন আর কেনার ইচ্ছে নাই। যাই হোক সবার তো শেষ চল খুধা লাগছে খেতে যাবো। আর মাইশা কই রে ওকে দেখছি না যে।”
“ঐ তো।”
“এই আপনি কই গেছিলেন?”
“এই তো এখানে। ব্যাগ ধরেন এতো ব্যাগ নিতে কষ্ট হচ্ছে। আপনি কেমন প্রেমিক বলেন তো! আপনার প্রেমিকার কষ্ট হচ্ছে দেখে সাহায্য করতিছেন না।”
“সরি মিস দেন আমার হাতে কিছু ব্যাগ”
–মাইশা ৫টা ব্যাগ রাহুল এর হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে থেকে খাওয়া দাওয়া করে ৩টার দিকে বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সা ধরে নেই।
“মাইশা আপনার ব্যাগ গুলো নেন।”
“ঐ গুলো আপনার, আপনি নিয়ে যান। আর আমাকে সব কয়টা পড়ে পিক দিবেন। দেখবো আপনাকে কেমন লাগে।”
“আপনি?”
“রাগ করবেন না প্লিজ। আমরা সবাই নতুন জামা পড়বো আপনি পড়বেন না এতে আমার খুব কষ্ট হবে। ওখানে ৩৫ হাজার টাকার জিনিস আছে। ঐযে আপনার পিছনে যে ট্রলি আছে সেটা ও আপনার ঐটা নিয়ে এখন বাসায় যান। মামা চলেন।”
–মাইশা আর রাহুলের উওর শোনার অপেক্ষা না করে রিক্সা নিয়ে চলে যায়। বাসায় এসে আরুহির জন্য আনা ড্রেস গুলো আরুহিকে পড়িয়ে ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে নেয়। আরুহি নতুন জামা পেয়ে মাইশা আপুনির গলা জরিয়ে মুখে চুমু খেতে থাকে।
“আপুনি তুমি সবার থেকে ভালো। তোমাকে চকলেট খাওয়াবো থামো নিয়ে আসি।”
–আরুহি বিছানা থেকে নেমে চকলেট এনে মাইশার হাতে ধরিয়ে দেয়। মাইশা হালকা হাসে, সেই তো পিচ্চিকে চকলেট কিনে দিসে! আর তার কেনা চকলেট তাকে উপহার হিসাবে পিচ্চি দিচ্ছে বাহ।
“ওলে পিচ্চি আমার হয়ছে, আমাকে এতো আদর করতে হবে না। চল ছাঁদে গিয়ে দেখে আসি ফুলের গাছ গুলো, আর পানি দিতে হবে তো।”
“আপুনি আমাকে কোলে নেও।”
“এতো বড় মেয়েটাকে কোলে নিয়ে ছাঁদে যাবো?”
“না আমি পিচ্চি আমাকে কোলে নেও।”
–মাইশা আর কিছু না বলে আরুহিকে কোলে নিয়ে সিড়ির কাছে এনে নামিয়ে দেয়। তারপর হাত ধরে ছাঁদে যায়। আরুহি গাছে পানি দিচ্ছে আর মাইশা বসে বসে ফোন চাপতিছে।
“আমার ছোট বউ নাকি? মাশাআল্লাহ বড় বউটার থেকে ও দেখি সুন্দর।”
–মাইশা আরুহির কয়টা পিক রাহুল কে সেন্ড করে। তখন আরুহির পিক দেখে রাহুল মসেজটা পাঠায়।
“আমার ছোট বউ নাকি? মাশাআল্লাহ বড় বউটার থেকে ও দেখি সুন্দর।”
“হিহি হ্যা এটা আপনার ছোট বউ কেমন বলেন। পছন্দ হয়ছে তো ছোট বউকে?”
“এই আমি পিচ্চিকে ছোট বউ বলায় রাগ করলেন না কেনো! ফেন্ডদের সাথে ও তো মজা করতে দেন না তাহলে?”
“কারণ এই টা আমার কলিজার টুকরা। এটাকে যদি আপনি বউ করে রাখেন আমার কাছে তাও আমার কষ্ট হবে না। বরং আমি আমার পিচ্চিকে সাথে নিয়ে থাকতে পারবো হিহি।”
“বাহ আমার মাইশু দেখি পিচ্চিকে নিয়ে হিংসে করে না। ইশ পিচ্চি তুমি বড় হলে না কেনো? তাহলে তোমাকে ও বিয়ে করে আমার কাছে রাখতাম। মাইশু পিচ্চি কতো বছরের ছোট আপনার?”
“১০ বছরের। পিচ্চিকে ও সাথে নিয়ে যাবো আপনার কাছে ওকে।”
“থাক আপনাকে সামলাতে আমার হাই ফাই উঠে যায়। আর আপনার পিচ্চিকে সামলাতে গেলে দেখবেন আমি জিহবা বের করে চোখ উল্টে পড়ে আছি।”
“হিহি”
“কি করতিছেন?”
“গল্প লিখতেছি আর পিচ্চি ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে, পিচ্চিকে দেখবেন?”
“ভিডিও কল দেন দেখি।”
–মাইশা ভিডিও কল দিয়ে পিছনের কেমেরা দিয়ে আরুহিকে দেখায়। আরুহির পরনে আজকের কেনা নতুন একটা জামা। পিচ্চি মানুষ নতুন জামা পেলেই গায়ে দেয়। তখন ছাঁদে আর একজন আসে।
“মাইশু এই পিচ্চিটা আবার কে?”
“এটা আমার পিচ্চির ফেন্ড। ওরা দু’জন একই ক্লাসে পড়ে। তাছাড়া ও আমার বড় আব্বুর মেয়ে।”
“আপুনি কার সাথে কথা বলতিছো?”
“তোর ভাইয়ার সাথে কথা বলবি?”
“আমার তো ভাইয়ু নাই আপুনি।”
“এই দিক আয়।”
“এই ছোট বউ কেমন আছো?”
“এই ছেলে তুমি কে হ্যা? আমাকে বউ বলবা না একদম। নয়তো বাবা কে বলে তোমাকে এতো বড় ইনজেকশন পুশ করে দিবো হুহ।”
“ওমা ছোট বউ দেখি রাগ করতিছে। বউ শোনো তোমাকে না আমার পছন্দ হয়ছে আমাকে বিয়ে করবা?”
“আপুনি এই বুড়োকে আমি বিয়ে করবো না। এই ছেলে তুমি জানো না আমি পিচ্চি আমাকে বউ বলবে না আচ্ছা।”
–আরুহি কাঁদো কাঁদো মুখে কথাটা বলে। রাহুল আর মাইশা হাসতে থাকে আরুহির কান্না দেখে। পাশে আশা ছিলো আরুহির কান্না দেখে নিজে ও ফেস ফেস করে কান্না করে দেয়।
“এই মাইশু থামেন দেখেন দুই পিচ্চি এবার এক সাথে কান্না করতিছে।”
“হাহা”
–মাইশা ফোন কেটে দিয়ে আরুহিকে কাছে টেনে নেয়। আরুহির কান্না থামলে নিচে নিয়ে যায়। সন্ধা লেগে আসছে এখন। ট্যুরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমরা সবাই প্রথমে বগুড়ার উদ্দেশ্য পাড়ি জমায়। আসলে বগুড়া শহর ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছে তাছাড়া সেখান থেকে রাজশাহী যাবো। ঢাকাতে থেকে থেকে বোরিং লাগে। বগুড়া গিয়ে বগুড়ার পার্ক, মময়িং একদিনে যা যা পারি সব কিছুই দেখি। রাত ১০ টাই হোটেল এ উঠি।
“এই তোরা তাহলে সবাই এখন ঘুমা। কালকে আবার রাজশাহী যাবো। এই মাইশু আমার ছোট বউ দেখি সারাদিনে একবার ও আমার কোলে আসে নাই। ছোট বউ এই আসো দেখি।”
“এই আপনি ওকে কোলে নিবেন!? ও কি একদম ছোট নাকি হ্যা! দূরে থাকেন ওর থেকে। আপনাকে ও পছন্দ করতিছে না। আপনি নাকি বুড়ো।”
“এই পিচ্চি আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে বুড়ো মনে হয় হ্যা! আহ যানো এই বুড়োর জন্য তোমার আপুনি পাগল।”
“এই ছেলে একটা কথা ও বলবে না ওকে। আমার আপুনি পাগল না। তুমি পাগল তুমি। আপুনি এই ছেলেটার সাথে তুমি কথা বলবে না এটা পাগল একে রাস্তায় ফেলে দিবো।”
–আরুহির কথা শুনে আমরা সবাই হাসতে থাকি। রাহুল মজা করতে গিয়ে হা হয়ে পিচ্চিকে দেখে। পিচ্চি মেয়ে তার উপর খুব বিরক্ত বুঝতে পারে। পাশে ফুলের দোকান ছিলো সেখান থেকে রাহুল কিছু ফুল কিনে আর চকলেট কিনে পিচ্চির সামনে বসে।
“এই পিচ্চি তুমি আমাকে বুড়ো বলো কেনো? তুমি কি আমার উপর বিরক্ত! আচ্ছা পিচ্চি তোমাকে প্রতিদিন চকলেট, আইসক্রিম, চিপ্স, আর কোলে নিয়ে ঘুরাবো আচ্ছা? তবুও আমাকে একটু মানে এই যে একটু পাত্তা দেও। কারণ তুমি পাত্তা দিচ্ছো না দেখে তোমার আপুনি আমাকে বলতিছে-
“রাহুল ইয়াক আমার পিচ্চিটার থেকে ও আপনি পাত্তা পাচ্ছেন না। আপনি কি তাহলে সত্যি বুড়ো?”
“এই পিচ্চি আমাকে একটু পাত্তা দেও প্লিজ। তোমার আপুনির মুখটা বন্ধ করতে হবে।”
–পিচ্চি কথাগুলোর কি বুঝলো কে জানে! ফুল নিয়ে রাহুলের গলা জড়িয়ে ধরে। চকলেট পাইছে আর কি লাগে? মাইশা মিছে রাগ দেখায় আরুহিকে। কিন্তু আরুহি আর মাইশাকে পাত্তা না দিয়ে রাহুলের গলা জড়িয়ে বসে থাকে। এমন হয়ছে যে ঘুমাতে ও যাচ্ছে না রাহুল কে ছাড়া।
“এই বড় বউ দেখেন আমি তো আপনার ছোটটাকে ও পটিয়ে নিলাম। এবার কি আমাকে আর বলবেন যে পাত্তা দেয় নি?”
“না গো বলবো না, রাত হয়ছে পিচ্চি আয় ঘুমাতে যাবো।”
“আমি বুড়োর সাথে থাকবো।”
“হোয়াট!! আমি বুড়ো!? মাইশু আপনি এটাকে নিয়ে জান।”
–রাহুল রেগে গটগট করে নিজের রুমে যায়। মাইশা ফিক করে হেঁসে দিয়ে আরুহি কোলে নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সকালে রাজশাহীর উদ্দেশ্য বের হই। রাজশাহী গিয়ে ৯টার দিকে পৌঁছায়। সকালের খাওয়া দাওয়া করে প্রথমে গার্ডেন এ গেলাম। তারপর চর এ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে, রাজশাহী ভার্সিটিতে গেলাম। রাজশাহী পুরো কেম্পাস রিক্সা করে ঘুরি আমরা। তারপর সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে এবার সিলেট গেলাম। সেইদিন আর ঘুরা হলো না ৪র্থ দিন থেকে সিলেট এর ঘোরার মতো দেখার মতো জায়গা গুলো ৪ দিন সময় নিয়ে দেখলাম।
“আপুনি আমি ঐ খেলনাটা নিবো।”
–আমরা সিলেট থেকে আসবো তাই সিলেট এর সৃতি রাখার জন্য সেখান কার দোকান এ যাই তখন পিচ্চি একটা দোকান হাত দিয়ে দেখে দেয়।
“কি নিবা ছোট বউ?”
“ঐযে ঐটা নিবো বুড়ো”
–হাস্যকর বিষয় পিচ্চি সেই থেকে রাহুল কে বুড়ো বলেই ডাকতে থাকে। আমরা সেই মজা নেই এটা নিয়ে। তো রাহুল আরুহির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কোনটা?”
–রাহুল পিচ্চি কে দোকানে নিয়ে যায়। পিচ্চি নাম লিখে দিচ্ছে সেটা দেখে দেয়। অবশ্য ভালোই ছিলো আমরা ও কাঠের উপর নাম লিখে নেই। এমন কি আমাদের সবার বাসায় একটা করে আছে। যাতে ১২ জনের নাম লেখা আছে। যাই হোক, এই ভাবে ১৫ দিন ঘোরাঘুরি করার পর কক্সবাজার বাজারে গেলাম।
“আচ্ছা আমাদের কক্সবাজার এতো সুন্দর কেনো বল? বালুর চরে দাঁড়িয়ে থেকে ঐ দূর আকাশে তাকিয়ে থাকতে এতো ভালো লাগে কেনো? যখন ডেউ এসে ভাসিয়ে দেয় তখন মনটা আনন্দময় হয়ে উঠে। সৃষ্টিকর্তা যেন রূপসী বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছে বালুর আঁচলে। সুর্য্যস্নান কিংবা সমুদ্রস্নানে নিজেকে বিলীন করে দে নীলাভ প্রকৃতিতে। খোলা জীপে, স্পীড বোটে বা ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানো আর সমুদ্রের বালির বিছানায় দাঁড়িয়ে শামুক-ঝিনুকের সাথে লোকোচুরি খেলতে খেলতে উপভোগ করা সূর্যাস্তের অনাবিল আনন্দ।”
–আমরা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সকালের সূর্যউদয় হওয়া দেখছিলাম। তখন মাইশা কথাটা বলে, মাইশার কথা শুনে পিচ্চিটা রাহুল এর গলা জড়িয়ে ধরে। পিচ্চি তখন রাহুল এর কোলে ছিলো। কারণ কক্সবাজার মানুষ অভাব নেই, এই ভিড়ে একটা পিচ্চিকে হাঁটিয়ে নিয়ে বেড়ানোটা ট্রাফ এর ব্যাপার। সে যাই হোক পিচ্চি রাহুল এর গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে-
“আপুনি আমি যদি বুড়োকে এই পানিতে ছেড়ে যাই তাহলে কি বুড়ো হারিয়ে যাবে?”
–পিচ্চির কথা শুনে আমরা হাঁসতে থাকি। পিচ্চি বলে কি ও নাকি রাহুল কে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিবে। রাহুল অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে পিচ্চির দিকে তাকায় তারপর বলে-
“এই ছোট বউ তুমি আমাকে ভাসিয়ে দিবে কেনো হ্যা?”
“তুমি আমাকে ছোট বউ বলো কেনো? তুমি কি আমাকে বিয়ে করছো? তুমি ছোট বউ বলো তাই ভাসিয়ে দিবো।”
“ওহ তাই বুঝি, আচ্ছা তাহলে আমার কোলে উঠছো কেনো? হেঁটে হেঁটে যাও। আচ্ছা নামো আর এই বুড়ো তোমাকে কোলে নিবে না।”
“না না তোমার কোলে থাকতাম না তো বুড়ো। তুমি অনেক পঁচা, কিন্তু এখানে তো সবাই বড়। তোমাদের সাথে গেলে আমি তোমার পায়ের নিচে পড়ে মরে যাবো তো। তখন আপুনি কান্না করবে, বাবা আপুনিকে মারবে আমি মরে গেলে। তাই তোমার কাছে আছি যাতে মরে না যাই।”
–পিচ্চির এতো বুদ্ধি দেখে আমরা প্রসংশা না করে পারি না। রাহুল বেচারা পরে বিপাকে, তার কোলে থেকে তাকেই পঁচা বলা হচ্ছে ।
“রাহুল আপনার সমস্যা হলে আমাকে দেন, আমি ওকে কোলে নিচ্ছি। আর আপনি ও না, ও এতোটা ও ছোট না যে কোলে রাখতে হবে।”
“উফ এতো কথা বলেন না তো। আমার স্পেশাল মানুষ এর কলিজা এটা, তাই বড়োটাকে তো আর কোলে নিতে পারবো না তাইনা? তাই ছোট’টাকে কোলে রাখি কিরে কি বলিস তোরা!?”
“হ্যা হ্যা বন্ধু ঠিক।”
–সবাই একসাথে বলে হেঁসে উঠি। ১ মাস সময় কেটে গেলো। প্রায় ১০-১২ টা জেলার শহর ঘুরে দেখি আমরা। ঢাকা ফিরে এসে কলেজ এ ভর্তি হলাম সবাই। রেজাল্ট সবার ভালো হওয়াই একই কলেজ এ ভর্তি হতে পারি সব কয়টা। সময় বহুমান আমাদের ইন্টার লেবেল টা ও চোখের পলকেই শেষ হয়। এবার প্রিপারেশন নিতে থাকি ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার জন্য। কিন্তু বলে না বয়েস এর সাথে সাথে বন্ধুত্ত্ব কমে যায়। আমাদের কমে না গেলে ও, এক সাথে থাকা হয়ে উঠে না। মাইশা ডাক্তারির প্রিপারেশন নেয় আর চান্স ও হয়ে যায়, রাহুল আমি জয় ভার্সিটিতে চান্স নেই। আল্লাহ রহমতে একই ভার্সিটিতে ৩জয় চান্স পাই। ২জন নার্সিং এ যায়। ২ জন তাদের বিজনেস আছে সেই সুবাদে বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা চালায়, আর বাকি চারজনের মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়, আর দু’জন ইন্জিনিয়ারিং এ যায়। আমরা যখন অনার্স ৩র্থ ইয়ারে তখন সবাই এক জায়গায় হই। আর যে পিকটা দেখালে না? সেটা তখন’কার তোলা পিক। এর মাঝে আমার আর জয়ের রিলেশন হয়। আর জয় এমন ছেলে সাথে সাথে বাসায় জানায়। ওর কোনো ভাই বোন ছিলো না, বাসায় জানা মাত্র আমাদের বিয়ে দেয়। এখন অবশ্য আমি দুই সন্তান এর মা হিহি। একটার বয়েস ৫ বছর আর একটা পেটে আছে ৪ মাসের। সে যাই হোক এর মধ্যে সবার চাকরি হয়ে যায়। মানে যারা চাকরি লেভেল এ ছিলো। মাইশা ডাক্তারতে জয়েন করে। জয় একটা কোম্পানি তে জয়েন করে সাথে মাস্টার এ ভর্তি থাকে। রাহুলের ফেমেলি প্রবলেম ছিলো টাকা ছাড়া জব হচ্ছিলো না কোনো। একদিন রাতে গ্রুপ এ সবাই কথা বলছিলাম তখন মাইশা আমাদের জানায় কালকে বিকালে তাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। আর একটা কথা সেই যে ট্যুর থেকে আসলাম তারপর আর আমরা পিচ্চি কে সরাসরি কখন ও দেখি নাই। সরাসরি কেনো মাইশা কখন ও পিক ও দিতো না তাই দেখা হয়ে উঠে নাই। জানি’না পিচ্চিটা কেমন আছে এখন। হয়তো বড়ো হয়ে সেখে। যাইহোক মাইশার মেসেজ টা ছিলো এমন-
“কালকে আমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে।”
“কিহ! এতো তারাতাড়ি বিয়ে দিবে তোকে?”
“শা’লি আমি এখন ডাক্তারি করি, সো বয়েস ও হয়ছে বিয়ে দিবে এটা সাভ্বাবিক।”
“তাহলে রাহুলের কি হবে? মাইশা তুই কি রাহুল কে বিয়ে করবি না? ও বেকার সে জন্য কি তুই ওকে ছেড়ে দিবি?”
“আমি একবার ও বলছি নাকি যে উনাকে আমি ছেড়ে দিবো! তোরা সব কয়টা বেশি বুঝিস কেনো রে!?”
“তো আপনি কি বলবেন মাইশা? আপনি কেমন পরিবার আর আমি কেমন পরিবার এর বুঝতে পারতিছেন কি? এখন আমার চাকরি ও হয়নি যে আপনাকে বিয়ে করবো।”
“এই তার মানে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?”
রাহুল বেশ কিছুক্ষণ পর রিপ্লে দেয়-
চলবে……………
(দিনে দুইটা পর্ব দেই তাও রেসপন্স নাই🙂 এতো খারাপ হয় লেখা যানতাম না💔)