আমি আপনিতে আসক্ত পর্ব ১০

0
1133

#আমি_আপনিতে_আসক্ত (১০)
#ফারহানা_জান্নাত

“সরি আমরা আপনার স্ত্রী আর ছেলেকে বাঁচাতে পারি নাই। মেয়েটাকে সুস্থ অবস্থায় বাঁচানো গেলো। সবটাই আল্লাহর হাতে ছিলো, তাছাড়া মাইশা ম্যাম নিজেই একজন ডাক্তার। উনি খুব ভালো করেই জানতেন যে উনার বেবি হচ্ছে না সমস্যার কারণে। উনার অতিরিক্ত সমস্যা ছিলো, সে জন্য উনাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে বুঝছি না কিভাবে যেনো মেয়েটা কে বাঁচানো গেলো। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব হয় সেটা প্রমাণ পেলাম আজ।”

–ডাক্তার কথাটা বলে মাইশাকে অন্য একটা কেবিন এ বর্তমান রেখে দেয়। রাহুল সেখানেই ঢলে পরে। সেন্স হারাইছে। যেখানে আমাদের খুশি হওয়ার কথা ছিলো সেখানে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরে। প্রায় রাত ২ টার সময় রাহুল এর জ্ঞান ফিরে। তখন থেকে সে মাইশার লাশকে জড়িয়ে কান্না করে যাচ্ছে। ছেলেটা হয়তো ভাবতে ও পারে নাই, তার জীবনে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটবে। সে তখন একটা বার ও নবজাত শিশুকে কোলে নেয় নি। বাচ্চাটা একটা বার ও কান্না করে নাই জন্মের সময় শুধু কান্না করছিলো। রাহুল কাঁদতে কাঁদতে যখন আবার ঢলে পরে, তখন মেয়েটা কেঁদে উঠে। সকালে আমাদের বাকি দুইটা ফেন্ড দেশে ফিরে। তারপর সকাল ১০ টা হওয়ার আগেই মাইশাকে মাটি দেওয়া হয়। আমরা সবাই দু’দিন রাহুলের বাসায় ছিলাম। ছেলেটা একদম ভেঙ্গে পড়ছে। প্রায় ১ মাস সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখে।

[বর্তমান]

“সরি আরুহি বুঝতে পারি নাই কথা বলতে বলতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ছে। জয় ফোন করছে, বুঝতেই পারলাম না সময় কখন চলে গেছে। রাত ১ টা বাজে, আসি ভালো থেকো।”

–তিথি রেঁস্তুরা থেকে তারাতাড়ি বের হয়ে যায়। তার খুব কান্না পাচ্ছে, মাইশা সবার চোখের মনি ছিলো। এই দিকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে সবাই সেই শব্দের উৎস খোঁজে। আরুহি মেঝেতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছে। মাহির এতোক্ষণ গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ছে। আরুহি পড়ে যাওয়াই সে ও ঢলে পরে। তারপর ধর ফরিয়ে উঠে দেখে তার আরুহি আপু মেঝেতে পড়ে আছে। সেখান কার কিছু লোক আরুহির চোখে মুখে পানি সিটাই কিন্তু সেন্স ফিরে না। এখান কার রেস্তরাঁ সারা রাত খোলা থাকে, তাই অনেক মানুষ আছে। মাহির তাদের বলে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। সবাই মিলে আরুহিকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যায়। আর ভর্তি করে দিয়ে যে যার কাজে যায়।

“তিথি কি হয়ছে কান্না করছিস কেনো? এতো রাতে ফোন দিয়ে তোর কান্না শুনাচ্ছিস আমাকে!?”

“রাহুল”

–তিথি বাসায় গিয়ে রাহুল কে ফোন দেয়। জয় তিথিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আছে। তিথি সেই তখন রেস্তোরাঁ থেকে এসে কান্না শুরু করে দিছে। আর কান্না থামার নাম নেই।

“তিথি কি হয়ছে, জয় আছিস? জয়”

“হ্যা”

“কি হয়ছে তিথিকে কি কিছু বলছিস! কান্না করতিছে কেনো এতো রাতে?”

“আমার না মাইশার কথা খুব মনে হচ্ছে আজ”

–তিথি কান্না করতে করতে কথাটা বলে। রাহুল কান থেকে ফোনটা সরিয়ে মাহি’র দিকে একবার তাকায়। তারপর বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার ফোনটা কানে নেয়।

“কি হয়ছে হঠাৎ?”

“ও আমাদের ছেড়ে গেলো কেনো রে রাহুল?”

“তিথি মাঝ রাতে ফোন দিয়ে আমাকে এসব শুনাচ্ছিস!? তুই খুব ভালো করে জানিস। মাইশার কথা মনে হয়ে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না তাও!?”

“সরি, আজকে একজন কে মাইশার কাহিনি বলতে গিয়ে কান্না করে দিছি। সে জন্য এখন আর নিজেকে সামলাতে পারতেছি না।”

“ফোনটা জয় কে দে তো”

“বল”

“জয় মাঝ রাতে কি শুরু করছে তিথি? ও কাকে আবার আমাদের কথা বলছে!?”

“জানি না মাত্র বাসায় ফিরছে ও। রেস্তোরাঁ তে নাকি একটা মেয়ে ছিলো তাকে তোদের গল্প শুনাইছে আজ। আর এখন এসে কান্না করতিছে।”

“কিহ! মা-মানে এই তিথির থেকে শোন তো ও আবার কোনো ভাবে আরুহিকে আমাদের গল্প শুনাইনি তো?”

–লাউডস্পিকার এ দেওয়া ছিলো তিথির ফোন। তিথি কথাটা শুনতে পেয়ে চোখের পানি মুখে নেয়। তারপর ভাবে রাহুল বুঝলো কিভাবে? তিথি ধির কন্ঠে বলে..

“হ্যা আমি তো ঐ মেয়েটাকে তোর বিষয়ে বললান। ঐ মেয়েটা নাকি তোকে ভালোবাসে।”

“ও মাই গড, আরুহি কি এখন ও ঐ রেস্তরাঁ তে আছে?”

“রাহুল কি হয়ছে এমন করিস কা? আমি তো ওখানে বসেই গল্প করছিলাম।”

“আরে বা’ল ঐটা মাইশার বোন। উফ কি ভূল করছিস জানিস? মাইশার বোন ঐটা সেই পিচ্চি। এতোদিন পর বোনের খোঁজ পাইছে তাও মারা যাওয়া বোনের, ওর অবস্থা এখন কেমন হবে বুঝতে পারছিস?”

“মা-মানে! ঐটা পিচ্চি?”

“হুম”

–রাহুল সিগারেট ফেলে দিয়ে মাহিকে তার মায়ের রুমে দিয়ে বেরিয়ে পরে। তিথি আর জয় থ মেরে বসে আছে। তিথি তো আর জানতো না সেটা মাইশার বোন ছিলো। তাছাড়া রাহুল যখন জানে তাহলে একটা বার তো বলে ও নাই কাউকে। রাহুল তরি ঘরি রেস্তোরাঁ তে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে হসপিটালে মেয়েটাকে ভর্তি করানো হয়ছে। রাহুল জানতো এমন কিছু হবে। সে জন্য তার এখানে আসা। হসপিটালে গিয়ে আরুহির কেবিন এ যায়। দেখতে পায় একটা ছেলে আরুহির পাশে বসে বসে ঝিমাচ্ছে।

“কে আপনি?”

–রাহুল কে রুমে ঢুকতে দেখে মাহির কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

“তুমি আমাকে চিনবে না। তোমার আপু আমাকে চিনবে। আরুহির জ্ঞান ফিরে নাই?”

“না ডাক্তার বললো অতিরিক্ত সক্ট পাইছে সে জন্য সেন্স হারায়ছে।”

“ওহ”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনি কে? আমার আপু এখানে আপনাকে কে বললো?”

“সে-সব তোমার না জানলে ও চলবে। বাসায় খবর দিছো?”

“হ্যা মা-বাবা আসতিছে।”

–রাহুল কি করবে বুঝতে পারতিছে না। এখানে থাকবে নাকি চলে যাবে? মাইশার বাবা-মায়ের সামনে কিভাবে সে দাড়াবে? সে তো ভয়ে এখন ও মাইশার বাবা-মায়ের সামনে যায় নি। সে ভেবে নেয় একবার যখন আরুহি সব টা জানছে। তখন সবাইকে সব টা বলে দিবে। কতোদিন তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তান এর মৃত্যুর খবর লুকিয়ে রাখবে?

“তুমি মাহির না?”

–রাহুল একটা চেয়ার টেনে বসে মাহির এর উদ্দেশ্য কথাটা বলে।

“হ্যা”

“কোন ক্লাসে পড়ো?”

“সেভেন।”

“এতো রাতে বাহিরে কি করছিলে তোমরা?”

“মার্কেট করতে আসছি। আপু মাইশা আপুর গল্প শুনতে লাগছিলো, আমি সব শুনতে পাড়ি নাই। তার আগেই ঘুমাই গেছি।”

“ওহ”

“ঐ তো আম্মু-আব্বু আসছে।”

“মাহির তোমার আপু এখন কেমন আছে?”

–আয়ুশ হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বলে। মাহির হাতের ইশারায় আরুহিকে দেখায়। আয়ুশ একবার ছেলেটার দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে একটা ছেলে বসে আছে। আয়ুশ আরুহির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর আয়ুশ রাহুলের সামনে বসে। আচমকায় তার সামনে কেও বসায় কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।

“তুমি বিবাহিত?”

“হুম”

“তোমার বাচ্চা আছে?”

“হ্যা!”

“তাহলে তোমার জন্যই আমার মেয়ের এমন অবস্থা?”

–আকস্মিক এমন প্রশ্নে রাহুল ভড়কে যায়। তার উপর আবার বলে তার জন্য আরুহির এমন অবস্থা না-কি!? রাহুল নিজেকে শান্ত করে, তার ভয় হচ্ছে এখন কি হবে সেটা বুঝে উঠতে পারতিছে না।

“মানে বুঝলাম না, কি বলতে চাচ্ছেন?”

“তুমি তো সেই ছেলে তাই না! যার জন্য আমার মেয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করছিলো। আর আজকে ও নিশ্চয় এমন কিছু হয়ছে সে জন্য এখন বেডে শুয়ে আছে।”

“বাবা আপনি উনাকে কিছু বলবেন না। আমি যাকে ভালোবাসি উনি সেই মানুষ না। উনাকে যেতে দেন, উনাকে আটকিয়ে রাখছেন কেনো?”

–আরুহির কথা শুনে মিতু মেয়ের কপালে চুমু খায়। মেয়েটা দিনদিন কেমন হয়ে যাচ্ছে। আয়ুশ ও মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর বলে।

“তুমি আমাকে শিখচ্ছো আম্মু? যে উনি কে! আচ্ছা ছেলেটা যদি সে না হয় তাহলে এখানে কি করতিছে? ছেলেটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোমার থেকে ওর বয়েস বেশি। তাই তোমার ফেন্ড হতেই পারে না। আর তুমি বলছিলে না! তুৃমি যাকে ভালোবাসো সে বিবাহিত এবং একটা বাচ্চা ও আছে? তো ছেলেটা ও তো সেম।”

–রাহুল অবাক হয়ে যায়। আরুহি কাউকে ভালোবাসে সেটা তার বাবা-মা ও যানে! আর মাইশা ভয়ে রিলেশন এর কথা বাসায় বলতে পারছিলো না। যদি সাহস করে বলতো, তাহলে কি এসব হতো?

“স্যার সরি আপনি এখন আসতে পারেন।”

“তুমি আরুহির স্যার হও!?”

“জ্বী”

“আম্মু! তুমি আর কাউকে পাও নি!? শেষে কিনা নিজের স্যার কে ভালোবেসে ফেলছো।”

–আয়ুশ এর কথায় আরুহি লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে হালকা হাসে, রাহুল ও কিছুটা লজ্জিত হয়। তারা তো জানে না তাদের বড় মেয়ের জামাই ও। রাহুল নিজেকে ঠিক করে নেয় সত্যি টা বলার জন্য।

“আঙ্কেন আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

“হ্যা জানি, সরি বাবা, আমার মেয়ে জানতো না তুমি বিবাহিত। ওকে আমি বুঝাবো তুমি কিছু মনে করো না। ইশ আমার এই মেয়েটার জন্য তোমার কতোই না সমস্যা হয়ছে। মাফ করে দিও বাবা।”

“আঙ্কেল আমি অন্য কিছু বলতে চাই।”

“কি বলো”

“বাবা কিছু না, স্যার আপনি এখন আসতে পারেন।”

–আরুহি মন খারাপ করে কথাটা বলে। তার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করার সাহস হচ্ছে না। সামনে বাবা-মা আছে। কিন্তু কান্না আর থামাতে না পেরে হুট করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার আপুনি আর নেই। আয়ুশ আর মিতু বিচলিত হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। রাহুলের ও খুব কষ্ট হচ্ছে, মাইশার কথা তার মনে পড়তিছে খুব।

“আম্মু কান্না করছো কেনো?”

“বাবা আমার কষ্ট হচ্ছে বাবা, আমি বাসায় যাবো বাবা, আমি এখানে থাকলে মরে যাবো।”

“আম্মু কান্না করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“বাবা মাইশা আপুনি।”

–আরুহির মুখে মাইশার নাম শুনে রাহুল এবার নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। সে ও হুট করে উঠে পড়ে, রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। আয়ুশ অবাক হয়ে ওদের কান্ডো দেখতিছে।

“কি হয়ছে আম্মু? মাইশা আপুনির কথা কি মনে হচ্ছে?”

“হুম”

–আরুহি মাথা নাড়ায়। মাহির মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আয়ুশ মেয়েকে শুয়ে দিয়ে কপালে চুমু খায়।

“কান্না করো না আম্মু, আমি না হয় কেস ফাইল করবো মাইশার বেপারে চিন্তা করো না। তোমাকে তোমার মাইশা আপুনির সাথে দেখা করাবো সমস্যা নাই।”

“বাবা মাইশা আপুনি আর ফিরে আসবে না। আপনি লেট করছেন, কেস ফাইল তো আরো আগে করতে পারতেন। আপনারা সিদ্ধান্ত সব কিছু ঘটার খুব পরে নিয়ে নেয়।”

“মানে?”

“আমি বাসায় যাবো বাবা।”

“আঙ্কেল আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।”

–রাহুল রুমে ঢুকে আয়ুশ এর উদ্দেশ্য কথাটা বলে।

“আচ্ছা বলো কি বলবে আর।”

“আমি মাই…”

“স্যার আপনার মেয়ে বাসায় আছে, আপনি বাসায় যান।”

–আরুহি ইশারায় সত্যি টা বলতে বারন করে। রাহুল আরুহির দিকে তাকিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।

“ছেলেটা কি বলতে চাচ্ছিলো?”

“আব্বু শোনো আপু এই ভাইয়ার জন্য সেন্স হারাইনি। আপু না মাইশা আপুর গল্প শুনছিলো একটা আপুর থেকে। আমি মাঝখানে ঘুমিয়ে যাওয়াই কিছু মনে নাই আর। আপু পড়ে যাওয়ার কারণে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো।”

“মানে তোমার মাইশা আপুর কথা? তোমার মাইশা আপু কই?”

“সেটা আপু যানে।”

“আরুহি আম্মু তুমি সত্যি করে বলোতো মাইশাকে তুমি খুঁজে পাইছো?”

“না আমি বাসায় যাবো।”

“আরুহি”

“বাবা আমি বাসায় যাবো।”

চলবে……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here