আমায় ডেকো একা বিকেলে পর্ব ১

0
1835

#আমায়_ডেকো_একা_বিকেলে?
#লামিয়া_সুলতানা_সিলভী ( লেখিনীতে)
#পর্বঃ_১

আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে,, এসেছে কি বলছি আজ থেকে আমি একজনের বাগদত্তা হয়ে যাবো! মানে এংগেজমেন্ট হবে, বেশির ভাগ দেশেই বিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ! আর বাগদান (এনগেজমেন্ট) হচ্ছে বিবাহ-পূর্ব একটি শুভ অনুষ্ঠান, যে অনুষ্ঠানে বাগদানের অঙ্গুরি বাঁ অথবা ডান হাতের অনামিকায় পরানো হয়! বাঁ হাতের অনামিকায় আংটি মানে বিয়ের লক্ষণ, নিদেনপক্ষে বাগদান হয়ে গেছে বোঝা যায়! যাই হোক, আমি পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি গোল্ডেন কালারের একটি লেহেঙ্গা পরিধান করেছি! কপালে ছোট সাইজের একটা টিকলি, কানে ম্যাচিং দুল আর হাতে কিছু চুরি! আমাকে এখন আমার এক কাজিন ছেলেটির পাশাপাশি বসিয়েছে! প্রচুর অসস্তি লাগছে এখানে বসে থাকতে, ড্রয়িং রুমে আসার পর তার দিকে একবার তাকিয়েছিলাম আমি! এক দেখাতেই চোখাচোখি হয়ে গিয়েছে আমি সাথে সাথেই নিচের দিকে চোখ নামিয়ে ফেলি! কি একটা বিশ্রিকর অবস্থা, আমার খুব লজ্জা লাগছিলো! কেননা সেই ছেলেটিও আমার দিকে মারাত্মক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলো, এখন সে কিভাবে আছে আল্লাহই ভালো জানে! যদিও আমি তার পাশেই বসেছি কিন্তু তাঁকানোর সাহস নেই আমার! একদিকে যেমন লজ্জা কাজ করছে আবার প্রচুর ভয়ও কাজ করছে, বুকে ধরপর শব্দ করে যাচ্ছে ওলওয়েজ! হঠাৎ তার মা এসে আমার পাশে বসে পড়লেন, টুকটাক কিছু কথা বলতে বলতে গলায় একটা চেইন পড়িয়ে দিলেন! তারপর এক পর্যায়ে তার ছেলের কাছে আংটি দিলেন পড়িয়ে দেওয়ার জন্য! ছেলেটিও হাত বাড়িয়ে দিলো আংটি পড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু সমস্যা হলো এখন আমি কি করবো? কোন কিছু ভেবে পাচ্ছি না, হাত বড়িয়ে দিবো নাকি চুপচাপ বসে থাকবো! সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে দিলে যদি আমাকে নির্লজ্জ ভাবে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে না? এসব আকাশ-পাতাল এক করে দিয়ে ভাবলাম কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করে কোন গতি পেলাম না, তাই নিচের দিকে তাকিয়েই চুপচাপ বসে রইলাম! পাশে থেকে আমার বোন বলে ওঠলো,,,,

সামিয়াঃ আপু তুই ভাইয়ার দিকে হাত টা বাড়িয়ে দে, এভাবে নির্বোধের মতো বসে আছিস কেনো?

আমি ভেবে পাই না এই মেয়ের এতো সাহস কোথায় পায়, আমাকে বলছে নির্বোধ! বাসায় মেহমান না থাকলে এতোক্ষনে ওর পিঠে দুই/তিনটা পড়ে যেতো! কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না এই অসভ্য মেয়েটাকে, ওর এই শাস্তি পাওনা থাকলো বাসা একবার ফাঁকা হোক দিবো মনের খায়েস মিটিয়ে ইচ্ছামতো পিটুনি! পাশে থেকে আমার কাজিন আদিবা হালকা ধাক্কা দিয়ে কানে ফিসফিস করে বললো, “কিরে আর কতক্ষণ এভাবে বসিয়ে রাখবি? বেচারীকে দেখ, একদম যায় যায় অবস্থা”! আমি আদিবার কথায় চোখ তুলে তাকালাম, দেখি সত্যিই বেচারী আমার দিকে অসহায় ভঙিতে তাকিয়ে আছে! এই মুহূর্তে আমার তাকে দেখে দমফাটা হাসি দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিজেকে সংযত করলাম! হাত টা বাড়িয়ে দিতেই আমার অনামিকা আংগুলে একটা ডায়মন্ডের রিং টা পড়িয়ে দিলো! পড়ে নিলাম তো ঠিক আছে কিন্তু এখন আমার হাত প্রচন্ড কাপছে, আমার এমন অবস্থা দেখে সে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক হতে বললো! অতঃপর অন্যদের বলায় আমিও কাপা কাপা হাতে কোনো মতো পড়িয়ে একটা জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ি! আমার এই অবস্থায় আয়াশ নামের এই ছেলেটা আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসছে! ব্যাটা তো বহুত খাটাইস,,, আর তার সংগ দিলো আমার কাজিনরা ওরাও আমার এই অবস্থা দেখে হাসছে! অবশ্য এটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ আমার মতো চঞ্চল মেয়েকে কিনা কেও এক মুহূর্ত দমিয়ে রাখতে পারে না আর আজ আমার এই ঘাবড়ে যাওয়া সবাই যেনো আনন্দ নিচ্ছে! আর আমার ভাবখানা এই ছিলো যে, একবার সবাই বের হোক তোদের কে আজকে আগুনে পুড়িয়ে বারবি কিউ বানিয়ে খাবো!

ওহ হ্যা আমার যার সাথে এংগেজমেন্ট হলো তার নাম হচ্ছে আয়াশ, মিস্টার আয়াশ শিকদার! আয়াশ সাউথ কোরিয়া থেকে স্টাডি কমপ্লিট করে এক বছর হলো বাংলাদেশে ফিরেছে, শুনেছি এখানে নাকি ভালো কয়েকটা জবের অফার পেয়েছে বাট আদৌ জব করে কিনা আমি জানিনা, জানার ইচ্ছেও নেই! কোয়ালিফিকেশন যেহেতু ভালো অবশ্যই ভালো কিছুই করবে! ওর একটা ছোট মিষ্টি বোন আছে রাইসা, আমার বোন সামিয়ার বয়সী! তার বাবা-মা ভীষণ ভালো, জানিনা এই লোকটা কেমন হবে! আমাদের বাড়ি থেকে তাদের বাড়ি বেশ ঘন্টাখানেক যেতে হয়, আমার এক দূর সম্পর্কেদ আত্নীয় এই বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো আমার বাবার কাছে! সবকিছু ঠিকঠাক আছে জন্য বাবা হ্যা বলে দিয়েছে, আর আমার পড়ালেখার বারোটা বাজিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিলো! আম্মু প্রথম দিকে না করেছিলো, এখনই বিয়ে দিবে না কিন্তু আমাদের ফ্যামিলিতে বাবার কথাই সব তার ওপর আমরা কেও কথা বলার সাহস পাই না এমনকি আম্মুও না!

আর আমি হলাম লামিয়া খন্দকার, সবাই লামি নামেই ডেকে অভ্যস্ত! আমার পুরো নাম আমি ভুলেই গিয়েছি, এই সংক্ষেপের চক্করে পড়ে! আমরা দুই বোন- লামিয়া আর সামিয়া, আমি এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর আমার বোন নিউ টেন! বাবা বিজনেজম্যান আর মা হাউজ ওয়াইফ! আপাতত এতটুকু জানলেই চলবে, আরো কিছু বলার বাকী থাকলে গল্পের মাঝেই বলবো!

আয়াশদের বাড়ি থেকে ওরা চারজন ব্যাতীত চাচা,মামারা এসেছে তবে সীমিত আর আমাদের বাড়িতেও খুব সীমিত আত্নীয়-স্বজন এসেছে! যাই হোক,, এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হতেই রাফসান খন্দকার (আমার বাবা) আয়াশের বাবা মানে রায়হান শিকদারের সাথে কথা বলে বিয়ের দিন পাকা করলেন তিন মাস পর! কারণ এর মাঝে আমার বোন সামিয়ার প্রি-টেস্ট এক্সাম তাই কিছুদিন সময় নিয়েছেন! বাড়ি থেকে লোকজন যাওয়ার পর হাফ ছেড়ে বাচলাম আমি, খুব অসস্থি লাগছিলো! তাই ফ্রেশ হতে ওপরে নিজের রুমে চলে এলাম, দরজা লাগিয়ে ফ্রেশ হয়ে যেই না বিছানায় গা এগিয়ে দিলাম সাথে সাথেই সব পিশাচ বাহিনীরা আক্রমণ করলো আমার দরজার ওপর! যাকে বলে শয়তানে ভর করা, এখন না খুললে ভেঙেই ফেলবে সাথে জুটেছে আমার কয়েকটা বান্ধুবিও!

দিপ্তিঃ এই লামি খোল, নাইলে কিন্তু এখনি লাথি দিবো দড়জায়! ( থাপড়াতে থাপড়াতে)

নিশাঃ এখন কি আর আমাদের মনে পড়বে? তার মনে বাসা বাধার মানুষ যে এসে গেছে!

নিলুফাঃ বোন, তুই লজ্জা পাচ্ছিস? আমাদের সামনেও এতো লজ্জা? যেখানে লজ্জা তোর ডিকশনারিতেও লেখা নেই!

রাফিঃ এই পিচ্ছি, জিজু এসেছে দেখ!

সায়ানঃ বোন তোর ননদটা কি মিষ্টি দেখতে, একটু সেটিং করিয়ে দিবি না?

নাহ, এদের কথা-বার্তা আর সহ্য করার মতো না! এদের কথা শুনেই আমার রাগ গুলো রি রি করে বাড়ছে, একেতে সব গুলোর ওপর ক্ষেপে ছিলাম আর এখন তো দ্বিগুন হলো আমার রাগ! বিছানা থেকে ওঠে চুলগুলো হাতখোপা করে নিলাম তারপরে আশেপাশে তাকিয়ে একটা লাঠি খুজে বের করলাম! আসতে আসতে দরজার কাছে গেলাম, বুঝতে পারলাম এরা দরজা ধাক্কা দেওয়ার জন্য সবাই রেডি, 1,2,3 বলছে তারমধ্যে গিয়ে দরজা দিলাম খুলে আর একে একে সব পিচাশ বাহিনীগুলো এসে পড়লো আমার রুমের ফ্লোরে! চিন্তা করা যায়, এতো বড় হয়ে এদের কমন সেন্সের এতো অভাব যে ফাইযলামি করার জন্য এভাবে দড়জা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়! এদের এক একটা কে পাঠা বলি দিতে ইচ্ছে করছে, চোখ আমার অটোমেটিকলি লাল হয়ে গেলো!..

সামিয়াঃ আপু তুই এতো ফাজিল কেনো? দড়জা যেহেতু খুলবিই তাইলে আরো একটু আগে খুলতি, আমাদের কোমর তো একদম গেছে রে!

সামিয়াকে নিচ থেকে টেনে তুলে দিলাম শরীরের সব শক্তি দিয়ে পিঠে দুইটা কিল বসিয়ে!

সামিয়া জাস্ট স্তব্ধ হয়ে গেলো, আমার এমন রাগী মুখ দেখে সবাই অসহায়ের মতো নিচে বসেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

লামিঃ তোমরা জানো না? আমি ফাইযলামি একদম পছন্দ করি না? আর এই (সামিয়ার কান ধরে) তুই কোন সাহসে আমাকে নির্বোধ আর ফাজিল বলিস?

সবাই এবার ওঠে দাঁড়ালো,,,

নিলুফাঃ লামি বুড়ি ছাড় ওকে,, ও ব্যাথা পাচ্ছে!

লামিঃ আপু তুমি ছাড়ো ওকে ও বেশি বেয়াদব হয়েছে! আমার হাতের লাঠি দেখেছিস? চাপকে সোজা করে দিবো, যদি আর একদিন আমাকে উল্টা-পাল্টা বলিস! ( কান ছেড়ে) এবার সবাই যাও, আমার মাথা ঠান্ডা হলে আমি নিচে আসছি! (লাঠি ফেলে দিয়ে)

সবাই কিছুটা অপমানবোধ করলো, কিন্তু আমি জানি কেও রাগ করেনি কারণ আমার রাগটা বরাবরই একটু বেশী এটা ওদের অভ্যস্ত হয়ে গেছে! আমি ঠিক হলে একাই ভাব দেখাতে যাবো, যদিও প্রথমে ঢং দেখাবে ওরা পড়ে ঠিক হয়ে যাবে! সবাই চলে গেলে আমি আবার বিছানায় এসে মাথায় মুভ লাগাই, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে! মুভ লাগিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লাম বিছানায়, কিছুক্ষন পর ফোনে একটা কল আসলো! কিন্তু ধরলাম না, জানি নিচে থেকে ফাজিল গুলো দিয়েছে তাই তাকালামও না! কিন্তু দুই-তিনবার বাজতেই ফোন তুলে নিলাম চোখ বন্ধ করেই,,,

লামিঃ এখনো শান্তি পাসনি আমাকে জ্বালিয়ে?

ফোনের ওপর প্রান্তে কোন সাউন্ড আসলো না, এটা দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো!

লামিঃ কথা বলবি না ফোন দিয়েছিস কেনো? আমাকে বিরক্ত করিস না আমি এখন ঘুমাবো, রাগ কমলে নিচে আসছি!

ফোনটা যখনই কেটে দিবো তখন কারোর গলা খেকড়ের শব্দ শুনতে পাই,,

আয়াশঃ রাগ হয়েছে কেনো তোমার?

লামিঃ (ভ্রুঁ কুচকে) আপনে কে?

ওপাশ থেকে নরম কণ্ঠ ভেসে এলো,,

আয়াশঃ আয়াশ বলছিলাম!

লামিঃ কোথাকার আশায়, কিসের আয়াশ? আশায় মানে ( জিহ্বায় ছোট করে কামুড় দিয়ে) ওহ মাই গড..

অবাক হয়ে সাথে সাথেই ফোন কান থেকে নামিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে চেক করলাম অচেনা নাম্বার! সাথে সাথেই নিজের মাথায় একটা চাপড় দিয়ে মনে মনে বললাম-“উফ লামি, তুই না? আসলেই একটা যা তা, না দেখেই ফোন রিসিভ করেছিস কেন? লোকটা কি ভাববে এখন তাছাড়া উনি বা আমার নাম্বর কোথায় পেলো? এসব ভাবতেই আবার সে ওপাশ থেকে বললো,,,

আয়াশঃ হ্যালো? শুনতে পাচ্ছো?

এবার আমার হুশ ফিরলো,,

লামিঃ জ্বি, আসসালামু আলাইকুম!

আয়াশঃ (মৃদু হেসে) ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি এতোটা রাগী? দেখে কিন্তু বোঝা যায় না! এনিওয়েস, তুমি কি প্রথমের কথাটা আমাকে বলছিলে?

লামিঃ মানে, কোনটা?

আয়াশঃ ওইযে, “এখনো শান্তি পাসনি আমাকে জ্বালিয়ে?” এটা!.

লামিঃ এমা ছি ছি,, না আপনাকে কেনো বলতে যাবো! আসলে,,, ( থামিয়ে দিয়ে)

আয়াশঃ বুজেছি, কাজিনরা ডিস্টার্ব করছিলো?

লামিঃ হুম, বাট আপনে কিভাবে বুঝলেন!

আয়াশঃ হা হা এই আয়াশ শিকদার বুঝেনা এমন কিছুই নেই! তুমি যে নেক্সে বললে, আমার রাগ কমলে নিচে আসছি তখনি বুঝেছি! কিন্তু ফস্টে একটু অদ্ভুত লেগেছিলো, আমি আবার তোমাকে জ্বলাচ্ছি নাকি! তাই চুপ ছিলাম তোমার নেক্স কথা শোনার জন্য!

লামিঃ সরি, একচুয়েলি আমি,, ( আবার থামিয়ে)

আয়াশঃ ইট’স ওকে, সরি বলতে হবে না!

লামিঃ হুম!

আয়াশঃ তো কি করা হচ্ছে এখন?

লামিঃ কিছু না, এমনেই শুয়ে আছি!

আয়াশঃ টায়ার্ড?

লামিঃ হুম!

আয়াশঃ ডিস্টার্ব করছি?

লামিঃ না, বাট একটা কথা ছিলো!

আয়াশঃ কি? তোমার নাম্বার কোথায় পেলাম?

এই লোক দেখি মানুষের মন পড়তে পারে, এ কি সাইকোলজি নিয়ে পড়েছে নাকি আযব! ( মনে মনে)

লামিঃ আপনে বুঝলেন কিভাবে?

আয়াশ আবারো হাসলো,,

আয়াশঃ বললাম না আয়াশ বুঝেনা এমন কিছুই হয়তো পৃথিবীতে তৈরী হয়নি!

এই লোক কি একটু বেশি বেশি বলছে না, নিজেকে নিয়ে? আজাইরা পাবলিক, কিন্তু এমন কিছু আমার মনেই থাকলো বলতে আর পারলাম না!

আয়াশঃ আমাকে বকছো? আমি কি নিজেকে নিয়ে সাফাই গাচ্ছি বেশী?

লামিঃ ( চোখ বড় বড় করে) না ঠিক আছে,, আংকেল-আন্টি, রাইসা ওরা কেমন আছে?

আয়াশঃ হুম সবাই ভালো আছে, বাট আংকেল-আন্টি কাকে বলছো? ওরা তো এখন থেকে তোমার বাবা-মা হয়!

লামিঃ না মানে সরি, আমি সে…

আয়াশঃ আমার বউ হয়ে তো এতো ভুল করা যাবে না, নিজের পারসোনালিটি সব-সময় স্ট্রং রাখবে! আর সরি কথাটা আমি মোটেও পছন্দ করি না! তুমি হয়তো অনেকটা রাগী, কিন্তু তোমার ধারণা নেই আমার রাগ সম্পর্কে! আমার রাগ হলে আমি কি করি সেটা শুধু আমার ফ্যামিলি আর আমার ফ্রেন্ড সার্কেলই জানে, তবে সবার সামনে আমি রাগ দেখাই না, নিজেকে কনট্রোল রাখি! তাই কখনো এমন কোন কাজ করবে না তোমার সামনে আমার ভয়ংকর রূপ প্রকাশ হয়! কি মনে থাকবে?

লামিঃ হুম!

আয়াশঃ দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল, আর হ্যা…

তখনি দড়জা কেও নক করে, আমি যেনো এবার হাফ ছেড়ে বাচলাম! ভাবী ডাকছে, নিশীথ ভাইয়ার বউ, আমার এংগেজমেন্টের উপলক্ষে এসেছে ওরা! দড়জার দিকে তাকিয়ে আয়াশকে বললাম…

লামিঃ আমাকে ডাকছে ভাবী, আমি কি যাবো?

আয়াশঃ ( মৃদু হেসে) আমি কিন্তু অতো তাও হার্ড পারসন না, যে সব কিছুতেই আমার পারমিশন লাগবে! যাও ফ্রী হলে কল দিও, আল্লাহ হাফেজ!

বলেই কেটে দিলো,, “কি দূর্দান্ত কথা বলে! বাট আমার তো কথা বলতেই ভয় লাগছে, আমি সারা জীবন একে সামলাবো কিভাবে? কথার ধাচে মনে হলো আমার রাগ এর কাছে কিছুই না!” এসব বলতে বলতে দরজা খুলে দিলাম, ভাবী এসেই শুরু করে দিলো,,,

ভাবীঃ লামি, তোরে বেশ মানিয়েছে আয়াশের সাথে! কি ধারুন দেখতে! দুজনকে একসাথে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো! তুই তো লজ্জায় শেষ, আর সে তো তোর লজ্জা দেখে নিজেই ঘাবরে গিয়েছিলো! আমি দেখলাম তো, তখন তোকে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক হতে বললো না? বল বল..( হালকা ধাক্কা দিয়ে)

আমি এর কথাগুলো ঠিক মেনে নিতে পারলাম না, একবার তো কাজিনদের রাগারাগী করে পাঠালাম! এখন ভাবীকে কি বলবো, এর সাথে তো আর রাগ দেখানো যাবে না! তাই নরম সুরেই বললাম,,,

লামিঃ না ভাবী তেমন কিছু না,,( মুখের কথা কেড়ে নিয়ে)

ভাবীঃ কিছু না মানে কি? বেশী ইন্টেলিজেন্ট ভাবিস নিজেকে? তবে, তোর জামাইটা কিন্তু বেশ ভালো, বিয়ে হবার আগেই তোকে কেমন আগলে রাখতে শুরু করেছে! বিয়ের পর তো আরো রাখবে দেখিস!

লামিঃ হুম,, (যে ধাচের মানুষ, এ নাকি রাখবে আমায় আগলে)

ভাবী আরো কিছুক্ষন বকবক করলো, অবশেষে আপ্রান চেষ্টা করে ভাবীকে রুম থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছি! এর কথা একবার শুরু হলে যেন আর থামার নাম গন্ধ নেই! কিছুক্ষন পরে আমিও নিচে গেলাম দুপুর থেকে কিচ্ছু খাই নি, এখন না হলে মাথা ঘুরে পরে যাবো আর নিচে পিশাচগুলো তো আছেই! সব মিলিয়ে প্রচুর প্যারায় আছি!

#চলবে…

[ হ্যাপি রিডিং❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here