#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_১০
#সাহেদা_আক্তার
খুশি মন থেকে উপচাইয়া উপচাইয়া পড়তেসে। আমি সুন্দর করে একটা লাল জামা পরে রেডি হইয়া নিলাম। একটু সাজুগুজুও করলাম। ক্রাশের সাথে দেখা করতে যামু বলে কথা।
আমি মার্কেটের রাস্তায় না গিয়া কলেজের রাস্তা ধরলাম। রিদি জিগাইলো, ঐদিকে কই যাস?
– একটা জায়গায় যামু।
– কোথায়?
– গেলে দেখবি।
আমরা দেড়টার সময় কলেজ গেটে পৌঁছাই গেলাম। রিদি বলল, এখানে আসলি কেন? আমার চোখ তখন ক্রাশরে খুঁজতেসে। বললাম, দেখতে আসছি। কলেজটা নাকি অনেক সুন্দর। ভাবতেসি এখানে পড়মু। মনে মনে কইলাম, ধুর বাবা, এত বড় কলেজ, ক্রাশরে দেখতেই পাইতেসি না।
এমনসময় রিদি বলল, দেখ, ওখানে কিসের ভীড়। কারো কিছু হইলো নাকি!? চল তো দেখি। রিদি আমারে টাইনা নিয়া গেল। আমি অনিচ্ছার সত্ত্বে গেলাম। দুইজনে ভীড় ঠেলে ঢুকতেই আমি থমকে গেলাম। আমার হূদয় ভেঙে শতটুকরা হইয়া গেল। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা। এ আমি কি দেখতেসি!? এইটা দেখার জন্য আমি আজকে আসছি? আমি আগাইতে পারলাম না। চোখের পানির প্রথম ফোঁটা পড়ার আগেই ভীড় ঠেলে বেরিয়ে দৌঁড় দিলাম বাসার দিকে। তখনই সবার উল্লাস ধ্বনি। আমি কান চেপে ধরে চলে আসলাম৷ আমি শুনতে চাইনা।
বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে। আম্মা অনেকবার ডাকল। আমি দরজা খুললাম না। আমি দরজার পাশে ফ্লোরে বইসা আছি। হাতে ক্রাশের ছবি। একদিন চুরি কইরা নিয়ে আসছিলাম ছবিটা। ইচ্ছা করতেসে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলি। কিন্তু সাহস হইল না। কেমনে পারল সে? তাহলে তার ক্রাশ চাঁদনীই ছিল? আজকে চাঁদনী ক্রাশরে প্রপোজ করসে আর সে ফুলটা হাতে নিয়ে নিসে। তারমানে সে প্রপোজ একসেপ্ট করসে৷ হায় রে!!! আমি কোন স্বপ্নের জগতে আছি? নাহ্ আর না। বহুত পাগলামি করসি আর না। তবুও খুব কাঁনদন আসতেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ইচ্ছে মতো কাঁনলাম। কাঁনতে কাঁনতে ভিজা বিড়াল হই গেলাম। মনটা হালকা হইতেই ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে বাইর হইলাম। দুপুরে খাই নাই। আম্মা নিজের রুমে। আব্বা মনে হয় নাস্তা আনতে গেসে। আমি বের হয়ে দেখলাম টেবিলে বাটিতে মিষ্টি রাখা। আমি বাটিটা নিয়ে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। মাত্র একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে আরেকটা নিসি তখন আম্মা টিভির আওয়াজে রুম থেকে বের হয়ে কইল, খালি পেটে মিষ্টি খাইতেছিস কেন?
– আম্মু এগুলা কিসের মিষ্টি?
– ভাবিরা কয়দিন পর লন্ডন চলে যাবে। ওখানে নাকি ছেলেকে পড়াবে। তাই মিষ্টি দিয়ে গেছে।
শুনে আর দ্বিতীয় মিষ্টিটা গলা দিয়ে নামল না। ওটা মাঝ পথেই আইটকা গেল। আম্মা বলতেই আছে, ওর বাবা লন্ডনে থাকে। ছেলে ভালো পড়াশোনা করছে। এখন শুধু রেজাল্ট দিলেই লন্ডনে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দেবে। আমি তো…… আম্মা আর কথা শেষ করতে পারল না। বাটি ভাঙার শব্দে চমকে উঠল। আমার হাত থেকে মিষ্টির বাটি পইড়া সাত আট টুকরা হই গেসে। রসে ফ্লোর মাখামাখি। আমি আস্তে করে কইলাম, সরি, আম্মু। তারপর গিয়া রুমের দরজা বন্ধ কইরা দিলাম। আম্মা বহুবার ডেকে কইল, ছোঁয়া কি হইসে তোর? দরজা খোল। আমার উত্তর দেওয়ার সময় নাই। সারাদিন প্রায় না খাওয়ার মতো। এখন মিষ্টি পড়াতে বমি হইতেসে। আমি বমি করে ওয়াশরুম থেকে বের হইলাম। কেন জানি মাথা ঘুরাইতেসে। সব আবছা আবছা। আমি শুয়ে পড়লাম বিছানায়। তারপর আর কিছু মনে নাই।
.
.
.
.
চোখ খুলে দেখি আম্মা আব্বা আমার দুইপাশে বইসা আছে। পায়ের দিকে তাকাই দেখলাম ব্যান্ডেজ। বাটির ভাঙা কাচে কখন পা কাটছে খেয়াল নাই। রুমের দরজা ভাঙা। হাতে স্যালাইন। শরীর দুর্বল। আমি উইঠা বসতে লাগলে আব্বা আম্মা দুজনে উদ্বিগ্ন হইয়া গেল। আমারে হেলান দিয়ে বসাইল। আম্মা জিজ্ঞেস করল, কেমন লাগছে?
– শরীর দুর্বল লাগছে।
– সারাদিন না খাওয়া। লাগবে না।
– কি হইসে আম্মু? দরজা ভাঙা।
– কি আর হবে? তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি। তুই এত ডাকেও যখন সাড়া দিচ্ছিলি না তখন ভয় পাই গেসিলাম। তোর আব্বু এসে দরজা ভেঙে দেখে তুই বিছানায় পড়ে আছিস। তারপর ডাক্তার ডেকে নিল। ডাক্তার বলছে না খেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে এই অবস্থা।
আম্মা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলল, কি হইসে তোর। এমন অনিয়ম করিস কেন? তোকে নিয়ে কত চিন্তা হয়। তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো। আমি আম্মার চোখের পানি মুইছা কইলাম, ওরে আমার কিউট আম্মু রে, এভাবে কেউ কাঁদে? আব্বা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কিছু কি হইসে? আমি বললাম, কই না তো। আসলে আজকে কেন জানি খুব মন খারাপ হইসে তাই এমন… আব্বা আমি কথা শেষ করার আগেই বলল, বুঝলে শিমু, আমাদের মেয়ে অনেক বড়ো হয়ে গেছে। দুঃখ লুকাতে শিখে গেছে। এখন কিছু খাওয়াও। আমি কিছু বললাম না। আম্মা বলল, তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি আজকে ওর কাছে থাকবো। আব্বা চলে গেল। আম্মা গেল খাবার আনতে। আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। মনে মনে বললাম, কিসের ক্রাশ? কার জন্য নিজের ক্ষতি করতেসি? আমি আব্বা আম্মার আদরের একমাত্র মেয়ে। আমাকে নিয়ে তাদের জগত। আর আমি কিনা এমন একজনকে নিয়ে জগত গড়তেসি যে কখনো আমার ছিলই না। আমি নিজের চোখের পানি মুছে বললাম, আজ থেকে আমার জগত আমার আব্বু আম্মু। আর কেউ না।
আম্মু খাবার এনে খাইয়ে দিল। পা মেঝেতে রাখতে পারতেসি না। ভালোই কাঁটছে। রক্তে বিছানার চাদরও ভিজে গেসিল। আম্মা ওটা পাল্টাইলো। আমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। আম্মাও আমাকে জড়াই ধরে শুয়ে পড়ল। আমার চোখে ঘুম নাই। অন্ধকারে বাইরে থেকে আসা আলো খেলতেসে, ছুটে বেড়াইতেসে জানালা থেকে দেয়াল পর্যন্ত। আমি তাকাই আছি। আমার চোখে ভাসতেসে ক্রাশের সাথে দেখা হওয়ার সময়ে ওর লাল হয়ে থাকা মুখখানা। তারপর আর ভাবলাম না। ডুব দিলাম ঘুমের সাগরে।
.
.
.
.
সকালে দশটায় ঘুম থেকে উঠলাম। উঠতে ইচ্ছে করতেসিলো না। তাও উঠলাম। কালকের কথা মনে পড়তেই কেন জানি পাগলের মতো হাসলাম। তারপর ফ্রেশ হইয়া মাথা আঁচড়ানোর জন্য চিরুনিটা নিলাম। চোখ পড়ল বোতামটার দিকে। একবার ভাবলাম খুইলা ফেলি। আবার ভাবলাম না থাক। মাথায় একটা বেণী বানিয়ে খোঁপা করে ফেললাম। শরীরের আড়মোড়া ভেঙে মাত্র রুম থেকে বের হইতেসি এমন সময় দেখলাম বসার ঘরে আন্টি, ক্রাশ আর একটা লোক বসা। বোধ করি লোকটা ক্রাশের বাবা। ধুর, দুইমাস হইয়া গেল এখনও ছেলেটার নামই জানি না। এখন আর ওর নাম ক্রাশ না। কি ডাকমু? হ্যাঁ, চেরি ফল। তাই ভালা। আমি আসতেই আব্বা আমারে ডাকল৷ আমি এসে বসতেই লোকটা বলল, কেমন আছো? আমি উত্তর দিলাম, ভালো। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে চেন? আমি চেরির দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললাম, ওনার বাবা। আঙ্কেল হেসে বলল, একদম ঠিক। কালকে দেশে এসেছি। তোমার আন্টির কাছে তোমার গল্প শুনতে শুনতে আর তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি হাসলাম। ক্রাশ থুক্কু চেরি ফল আমার দিকে তাকাই আছে। হয়ত ভাবতেসে আমি কিসু কমু। কইলাম, আঙ্কেল, আমার না একটু কাজ আছে। আমি রুমে যাচ্ছি।
– আচ্ছা।
আমি রুমে আইসা বিড়বিড় করতে লাগলাম। আম্মার ফোন নিয়া কানে এয়ারফোন গুজতে গুজতে কইলাম, মনে হচ্ছে যেন বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসছে। আমি গান শুনতে লাগলাম। গানও ভালো লাগতেসে না। আমি এয়ারফোন খুলে শুনলাম আম্মা বলতেসে, এখনো তো সময় হয়নি। আমরা ভেবে দেখবো। ও… কালকে আমার মেয়ের জন্মদিন। আপনারা আসবেন কিন্তু। হয়ত বেশি বড়ো হবে না। ছোটখাটো করে একটু করবো। এই। ওনারা রাজি হয়ে গেলেন। ওনারা চলে যাওয়ার পর আমি আমার ফ্রেন্ডদেরকে ইনভাইট করলাম। আমার কেন জানি চেরি ফলকে ইনভাইট করাটা ভালো লাগলো না।
বিকালের দিকে আম্মু বলল, আমরা একটু বাইরে যাচ্ছি। আজকে হয়ত নাও আসতে পারি। তুই এক কাজ কর। রিদিকে বল এসে থাকতে।
– কোথায় যাচ্ছো?
– তোর নানাবাড়ি।
– হঠাৎ?
– শুনলাম তোর নানুর শরীর খারাপ।
– আমিও যাবো।
– আমরা যাবো আর চলে আসবো। অবস্থা খারাপ দেখলে থাকবো।
আমার কেন জানি যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না। তবুও জোর করলাম না। রিদিকে ফোন করে আসতে বললাম। রিদি বলল, আধা ঘন্টা লাগবে। আমি বললাম, আচ্ছা। চারটার দিকে আব্বা আম্মা বের হই গেল। যাওয়ার আগে আব্বা বলল, তোর আম্মুর ফোনটা রেখে গেলাম। দরকার হলে ফোন দিস।
– আচ্ছা।
আব্বা কইল, ভালো থাকিস। সাবধানে থাকিস। আমি হাসলাম। আব্বা আম্মা বের হই গেল। আমি ফোন টিপতে বইসা পড়লাম। পনের বিশ মিনিট পর কলিংবেল বাজল। আমি দরজা খুলে বললাম, এতক্ষণ লাগে? এ্যাঁ!!!! কেউ নাই। নিচে তাকাই দেখলাম একটা বাক্স। আমি বাক্সটা নিয়ে দরজা মেরে দিলাম। টেবিলে রেখে দেখলাম, উপরে আমার নাম দেওয়া। একবার ভাবলাম কে দিল এটা? আমি মাত্র বক্সটা খুলব তখন আবার কলিংবেল বাজল। আমি বক্সটা আম্মুদের রুমে রেখে দরজা খুললাম। রিদি ভেতরে ঢুকে বলল, কি অবস্থা? প্রিপারেশন কেমন?
– কিসের?
– তোর বার্থডের।
– আর অবস্থা।
– কেন? কি হয়েছে?
– কেন জানি ভালো লাগছে না। আব্বু আম্মু না থাকলে ভালো লাগে না।
– ইট’স ওকে। রিদি যখন এসে গেছে তখন আর চিন্তা নেই।
এই ওই কইরা সন্ধ্যা রাত কাটল। দশটার মধ্যে খাইয়া শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসতেছে না। রিদি তো শুতেই নাক ডাকতে শুরু করসে। হঠাৎ বাক্সটার কথা মনে পড়ল। আম্মুর রুমে গিয়া বাতি জ্বালাই বাক্সটা খুললাম। খুলে অবাক হইলাম।
চলবে…
বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?