আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা♥ সিজন ১ পর্ব ১১

0
650

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_১১
#সাহেদা_আক্তার

হঠাৎ বাক্সটার কথা মনে পড়ল। আম্মুর রুমে গিয়া বাতি জ্বালাই বাক্সটা খুললাম। খুলে অবাক হইলাম। খুব সুন্দর একটা নীল সুতির শাড়ি। দেখতে জামদানির মতো। তারসাথে একজোড়া নুপুর আর এক গাছি নীল কাচের চুড়ি। সাথে একটা উড়া চিঠি পাইলাম।

‘ ছোঁয়া, এগুলো তোমার জন্মদিনের গিফট। আমার পক্ষ থেকে। আমি কে? জানতে চাইলে আজকে রাত সাড়ে এগারটায় ছাদে আসো। ও হ্যাঁ, তোমার নীল জামাটা আমার কাছে। তোমার প্রিয় নীল জামা। যদি জামাটা পেতে চাও তবে শাড়িটা পরে সুন্দর করে সেজে আসবে যেভাবে তুমি তোমার মনের মানুষটার জন্য সাজো।’

কে এটা? আমার জামা চোর নাকি!? আমার সাধের নীল জামাটা সেলাই করতে দিয়েছিলাম টেইলারের কাছে। কোন পোলায় নাকি নিয়ে গেছে আমার নাম করে। আমার বিশ্বাস হয় নাই। জামাটার জন্য আমার বহুত দুঃখ হইসে। কিন্তু এই জামা চোর হঠাৎ আমাকে এত সুন্দর শাড়ি দিল ক্যান! সে জানলই বা কি করে আমি চেরি ফলের জন্য সেজেগুজে বের হতাম! ভাব্বার বিষয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, পনে এগারটা।

জামার টানে হোক বা কৌতুহলে হোক আমি রেডি হলাম। শাড়িটা সেই রকম সুন্দর। ইস্! আমারই নজর লাগি যাইতেসে। কানে নীল ছোট দুল পড়লাম। চোখে কাজল দিলাম। হাতে চুড়ি আর পায়ে নুপুর পইরা বাইর হলাম। তাড়াহুড়ায় চুল বাঁধি নাই। আমি কেন যে এত সাজলাম তাও জানি না। হয়ত চোরের শর্ত মানার জন্য যাতে আমার সাধের জামাটা দিয়ে দেয়?

ছাদে আইসা থমকে গেলাম। ছাদে লাভ শেইপ করে মোমবাতি জ্বালানো। তার মাঝে C + A দেওয়া। সি না হয় আমি। এ টা কেডা? আমি এদিক ওইদিক তাকাইলাম। কেউ নাই। যেই না আমি ফিইরা যামু কে যেন আমার চোখ বাঁইধা দিল। আমি কইলাম, কে? গলা একটু কাঁইপা উঠল। ভয় লাগতেসে। নিজে মনে মনে নিজেরে গালি দিতেসি। খাই দাই কাম ছিল না? একটা চোরের কথায় ছাদে চলে আসলাম। আমি কে কে করতেসি দেখে চোখ বেঁধে দেওয়া মানুষটি শসসসস্ করে শব্দ করল। তারপর আমাকে কোনদিকে টেনে নিয়ে দাঁড় করাইলো। আমার মনে হল আমাকে পর্যবেক্ষণ করতেসে। তারপর আমার খুব কাছে এসে আমার দুই গালে চুমু দিয়ে দিল। আমি বেকুব হয়ে গেলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। আমি চোখ থেকে কাপড়টা সরাতে যাবো তখন সে আমার দুইহাত পেছনে মুড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল। আমি ভয় পাওয়া গলায় আবার কইলাম, কে? সে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, লাভার ভ্যাম্পায়ার। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার ডান পাশের কাঁধের চুলগুলো সরিয়ে চুমু দিয়া দিল। আমি ওখানেই শ্যাষ। মনে হইল সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেছে। এমন অনুভূতি জীবনেও হয় নাই। তারপরই চিৎকার দিতে গেলাম। সে মুখ চাইপা ধরল। আমি ব্যাথায় কোকাইতেসি। মনে মনে বলতেসি, সত্যিই কি ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়লাম নাকি! মানুষ হইলে তো কামড় দিতো না। আরে হালার ভ্যাম্পায়ার ছাড়। একটু পরে সে ছাইড়া দিল। তারপর হঠাৎ পাগলের মতো আমার ঘাড়ে গলায় চুমু দিতে লাগল। আমি সহ্য করতে না পাইরা ছটফট করতেসি। সে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, লাভ বাইট দিয়ে সিল মেরে দিলাম। আজকে থেকে তুমি শুধু আমার। আর কারো না। এই চিহ্নই তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। আমার অপেক্ষায় থেকো। আই লাভ ইউ মাই লাভ বার্ড। হ্যাপি বার্থডে ছোঁয়া। নিমিষেই তার ছোঁয়া থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম। দ্রুত চোখ খুইলা দেখি কেউ নাই। মোমবাতি গুলা আগের মতোই জ্বলতেসে। ঘাড়ে হাত দিলাম। ইস্ রে। রক্ত বের হইসে মনে হচ্ছে। হাত দিতে পারতেসি না। দ্রুত সিঁড়ির দিকে ছুটলাম। ব্যাটা বাটপার। আমার অবস্থা খারাপ করে দিসে। সিঁড়ি দিয়ে উঁকি দিলাম। কিন্তু অন্ধকারে কাউকে দেখতে পাইলাম না। হঠাৎ কুকুর একটা ডাইকা উঠল। সাথে সাথে আমার বুক কাঁইপা উঠল। সত্যিই ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়লাম না তো!!!

আমি দৌঁড়ে বাসায় ঢুকলাম। দরজা মেরে আম্মুর রুমে চলে গেলাম। আয়নার সামনে যেতেই আঁতকে উঠলাম। ভ্যাম্পায়ার না ছাই। আস্তো একটা মানুষ আমারে কামড় দিসে। আবার কয় নাকি লাভ বাইট। লাভ বাইটের খ্যাঁতা পুড়ি৷ একেবারে রক্ত বাইর করে ফেলসে। আমি মলম লাগাইতে লাগাইতে কাঁনতেসি আর কইতেসি, এবার আমার কি হইবো। আমি সবার সামনে কেমনে যামু!? কে আমার এত বড় সর্বনাশ করলো। এত বড় আকামটা কেডা করল? যদি ঐ হালার লাভার ভ্যাম্পায়াররে পাই আমি তার রক্ত চুইষা খামু। আম্মা গো……। আমি সব খুলে গুছাইয়া রাইখা নাক টানতে টানতে শুইয়া পড়লাম।
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে জাইগা দেখি রিদি আমারে কোলবালিশ বানাই ফেলসে। আমি ঠেইলা ওরে সরাই দিলাম। সে অপর পাশ ফিইরা শুইয়া পড়ল। কালকে রাতের কথা মনে পড়তেই ঘাড়ে হাত দিলাম। বাপরে!!!! কি ব্যাথা। এখনো হাত দিতে পারতেসি না। ফুইলা ঢোল হই আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আম্মা ফোন দিল। আমি দৌঁড়ে গিয়া ধরলাম।

– কেমন আছো আম্মু?

– ভালো। তুই?

– আছি আর কি। (মনে মনে) আম্মা গো একটা মানুষ নামের ভ্যাম্পায়ার থুক্কু ভ্যাম্পায়ার নামের মানুষ তোমার মেয়ের সর্বনাশ করে দিসে।

– রিদি আছে না?

– হ্যাঁ। পড়ি পড়ি ঘুমাইতেসে।

আম্মা আমার কথা শুইনা হাসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, নানু কেমন আছে? আম্মা মলিন মুখে জবাব দিল, আছে ভালো।

– নানা ভাই কিছু বলসে?

– নাহ্, তোর মামা, নানা কেউ কথা বলে নাই। তোকে বলছি না তোর নানার জেদ বেশি। সেই পুরানো রাগ এখনও মনের মধ্যে পুষে রাখসে।

– ইট’স ওকে আম্মু। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা কখন আসবা?

– নয়টায় রওনা দিবো।

– আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসবা কিন্তু, আমার ভালো লাগতেসে না।

– ওকে, বাবা।

– হ্যালো, ছোঁয়া মা।

– হ্যাঁ, আব্বু বলো।

– তোর কি কিছু লাগবে? কিছু আনবো?

– উম…… জিলাপী এনো।

– আচ্ছা। সাবধানে থাকিস। অপরিচিত কেউ আসলে দরজা খুলবি না। ভালো মেয়ের মতো থাকবি। সময় মতো সব কাজ করবি।

– এমন করে বলছ যেন আজকে আসবে না।

– আসবো তো। আচ্ছা আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। রাখি?

– হুম।

আব্বু ফোন কেটে দিল। আমি ফোনটা রেখে রিদির দিকে তাকাইলাম। মেয়েটা এতো কেমনে ঘুমায়!? অবশ্য আমিও তো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাই। কিন্তু কেন জানি আজকে মনটা অস্থির অস্থির করতেসে।
.
.
.
.
আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই ক্ষতটা দেখতেসি। ইস্, সবাই দেখলে কি ভাববে!? সবচেয়ে বড়ো কথা বলবটাই বা কি? নিশ্চয়ই কালকে ঐটা কোনো রাক্ষস আছিল। উফ্!!!! মলম লাগাইলাম বহু কষ্টে। হাত দিতে পারতেসি না। মলম লাগানো শেষ হইলে আমি রান্নাঘরে গেলাম। কি বানানো যায়? ভাবতেসি এমন সময় কলিং বেল বাজল। আমি খুইলা দেখলাম আন্টি। হাতের ট্রেতে কি যেন ঢাকা দিয়ে আনসে। আমি সালাম দিয়ে সইরা দাঁড়াইলাম। আন্টি ভিতরে ঢুইকা বললেন, কেমন আছো, ছোঁয়া?

– জ্বি আন্টি ভালো।

– তোমার আম্মু ফোন দিয়েছিল। বলল তারা নাকি কালকে ছিল না।

– হ্যাঁ, আন্টি।

– কোনো সমস্যা হয়নি তো?

– না, আন্টি। (মনে মনে) ও শ্বাশুড়ি আম্মা গো, কোন হালার পুত আপনার বৌমার গলার বারোটা বাজাই দিসে।

– আমাকে ডাকতে পারতে।

– আমার এক ফ্রেন্ড ছিল। এখনও ঘুমাচ্ছে।

– ও। এত গরমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছ কেন?

– এমনি। (মনে মনে) প্যাঁচাইসি কি সাধে? বার বার ঘষা লাইগা জ্বলতেসে। ঐ ভ্যাম্পায়র রে আমি আস্তো চিবাই খামু। ব্যাটা ফাজিলের হাড্ডি।

– তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি। তোমার জন্মদিনের গিফট।

– কি আন্টি?

আন্টি ট্রের প্লেটটার ডাকনা সরাতেই আমি বললাম, পায়েস!!! থ্যাংক ইউ আন্টি। আন্টি হেসে বললেন, তুমি নাকি পায়েস পছন্দ করো তাই ক্ষীরের পায়েস করে এনেছি। কাছে এসে বসো। আমি খাইয়ে দেই। আমি গিয়া বসতেই উনি আমাকে যত্ন কইরা খাওয়াই দিলেন। আমি কইলাম, আন্টি আপনি বসেন, আমি চা করে আনি। আন্টি হাসলেন।

আমি রুমে গিয়া রিদিকে ঠেলতে লাগলাম, এই রিদি, রিদি… ওই রিদুর বাচ্চা উঠ। রিদি চোখ ঢলতে ঢলতে কইল, কি হইসে? আমি ওরে টেনে উঠাই বললাম, ওঠ, পাশের বাসার আন্টি আসছে। সাড়ে নয়টা বাজে। তোকে এমন পড়ে থাকতে দেখলে কি কইবো। উঠ। যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি চা বানাইতে গেলাম। রিদি চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি জিগাইলাম, কি হইসে?

– তুই? চা?

– তো?

– পারবি?

– না পারার কি আছে? তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। তোকেও দিবো। টেস্ট করে দেখিস।

আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম। চা বানাই ফেললাম চটপট। এখন আমি ভালোই বানাইতে পারি। আব্বা বলসে আমি নাকি ফাটাফাটি চা বানাই। মাত্র কাপগুলো ট্রেতে রেখে চা ঢাললাম। এমন সময় ফোন এলো। ফোন নিয়ে দেখলাম মিষ্টি খালা ফোন দিসে। আমি রিসিভ করে কানে ফোন ধরে ট্রেটা নিয়ে বসার ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললাম, হ্যালো, মিষ্টি খালা। কি হইসে? আমার হাত থেকে ট্রে পইড়া কাপগুলো টুকরো টুকরো হয়ইয়া গেল। চায়ে ভাইসা গেল ফ্লোর। কান থেকে ফোন পইড়া ব্যাটারি খুলে ছিটকে পড়ল একজায়গায়। আমি চায়ের মধ্যে বইসা পড়লাম। আন্টি দৌঁড়ে এলেন। রিদিও দৌঁড়ে আইল। জিজ্ঞেস করতেসে কি হইসে। আমি পাথরের মতো বইসা আছি। আমার জগতটা ভেঙে গুড়িয়ে গেল চোখের সামনে।
চলবে…

বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here