আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা♥ সিজন ১ পর্ব ৯

0
641

#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_৯
#সাহেদা_আক্তার

– তুমি আনতে বলবা না আমি আবার বমি করমু?

আম্মা বিরক্ত হয়ে উঠে বলল, যা খুশি কর। বাপে ঝিয়ে একেবারে জ্বালাই খাইলো।
.
.
.
.
আমি মনের আনন্দে জিলাপী খাইতেসি আর ক্ল্যান্ডারের সামনে দাঁড়াই আছি। মনে মনে হিসাব কষতেসি। আজকে মাসের তেইশ তারিখ। আগামী মাসের মাঝামাঝি আমার প্যারা মানে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। আর আমি যদ্দুর জানি ক্রাশেরও এইচ এস সি পরীক্ষা। আল্লাহ, আমার ক্রাশ যাতে ভালো করে। আমি মনে এই দোয়া করতেসি আর আম্মা আইসা কইল, তোর পরীক্ষার রুটিন দিসে? আমি মনোযোগ দিয়ে ক্ল্যান্ডার দেখতে দেখতে কইলাম, হুম।

– ঝুলাস নাই যে?

– ঝুলাবো।

আমি আঙুল চুষতেসি আর তাকাই আছি। আম্মা বলল, হাতটা মুখ থেকে নামা। নইলে পরীক্ষা দিতে গেলে আর আঙুল খুঁজে পাওয়া যাবে না।

– আরেকটা খাবো তো।

– আরো একটা!?

– হুম।

– এই নিয়ে কয়টা জিলাপি খাইছিস?

– মাত্র পাঁচটা।

– পাঁচটা কম? এভাবে খাইলে তো বাপের মতো ডায়বেটিস রুগী হয়ে যাবি।

আমি আস্তে আস্তে কইলাম, ডায়বেটিস রুগী হই গেলে তো ক্রাশ আমার দিকে ফিইরা তাকাইবো না। থাক, আর খামু না।

– কি বলিস বিড়বিড় করে?

– কিছু না। তুমি জিলাপি ফ্রিজে তুলে রাখো। পরে খাবো।

আম্মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেল। আমি রুটিন ঝুলাইলাম। আজকে থেকে ঠিকমতো পড়তে হবে। শুনছি আমার ক্রাশ নাকি সেই লেভেলের ভালো স্টুডেন্ট। তার বউ হিসেবে তো আমাকেও ভালা করতে হবে। এবার আমি ফার্স্ট হয়ে ছাড়মু। না হলে আমি চেরির বউ না।

পরের সপ্তাহের শুক্রবার আর ক্রাশবার হইলো না। আম্মা কাপড় ধোয় নাই। কিন্তু আমি ছাদ থেকে ঘুরে আসছি। সে ছিল না। তাইলে মনে হয় ধুমাইয়া পড়তেসে। আমারেও পড়তে হবে। আমি তাড়াতাড়ি নাইমা গেলাম। এখন আমি রাত দিন পড়ি। পড়ার আগে ক্রাশের বোতামটারে একটা চুমু দিই। আম্মা আব্বা আমার পড়ার গতি দেইখা খুশি হই গেল।

পরের পুরা মাস আমার সেই খাটুনি আর প্যারা গেল। আমি সেই রকমের পরীক্ষা দিসি। আমারে এবার থামায় কে। শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আইসা দেখি মিষ্টি খালা (আমি ডাকি) আর খালু এসে বসে আছে। তার সাথে মুনতাহা আর সানজিদা আপু। আমি এসে ওদের দেখে লাফাইতে লাগলাম। আমার আব্বু আম্মুর বিয়েতে নানা নানু দাদা দাদু কারোরই মত ছিল না। তাই বিয়ের পর থেকে ওনারা আম্মুর মুখ পর্যন্ত দেখতে চান নাই। তাই আমিও জন্মের পরে নানা নানু দাদা দাদু কাউকে দেখতে পাই নাই। শুধু দাদা মারা যাওয়ায় আব্বু গেসিলো। আমাদের নিয়ে যায় নাই। কিন্তু আমার মিষ্টি খালার সাথে আমার আম্মুর খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। এখনও আছে। মিষ্টি খালা আর আম্মু প্রাণের বোন। তাই হয়ত ছাড়তে পারে নাই। আমি ফ্রেশ হয়ে আইসাই সুখবর শুনলাম। সানজিদা আপুর বিয়া। শুইনাই মন ডিংকা চিকা নাচ দিল। পরশু নাকি বিয়া। আমার পরীক্ষা দেইখা আম্মু বলে নাই। এখন যাইতে হবে। পুরা পরিবার ঐদিনই রওনা দিলাম। দিন চার ইচ্ছা মতো নাচ গান কইরা ফিরলাম। আমার জ্বালায় আব্বা আম্মা থাকতে পারলো না। বিয়ে শেষ হইতেই আমার মন আর টিকলো না। বৌভাতের দিনই চলে আসলাম বাসায়। আমি তো আবার এখন বাসা ছাড়া দুই মিনিটও টিকতে পারি না। বাসায় যতক্ষন থাকি চোখ সব সময় দরজার কাচে শেটে রাখি। ক্রাশ কখন যায়। কখন আসে। সব সময় দেখতে থাকি। কবে যে তার পরীক্ষা শেষ হইবো। এখন আন্টিও কম আসেন। আমি যাই মাঝেমধ্যে।

আজকে গেলাম দুপুরে খেয়ে। গিয়ে দেখি আন্টি কি যেন বাটতেসে। দরজা খুলে একটা হাসি দিয়েই রান্নাঘরে চইলা গেলেন। আমিও পিছু পিছু গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি বাটছেন?

– কুমড়ার বিচি।

– ও, কি হবে এটা দিয়ে?

– মাছের ডিম যেভাবে রান্না করে ওভাবে রান্না করবো।

– ও।

আমি মনে মনে কইলাম, জীবনে রান্নাঘরে গেলাম না। মাছের ডিম কেমনে রাঁনধে ওইটাই জানি না। কুমড়ার বিচি তো পরের কথা। আন্টি বললেন, ছেলেটার অসুখ, কিছু খেতে পারে না। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে কইলাম, কি হইসে?

– ভেতরে ভেতরে জ্বর।

– এক কাজ করেন। নিম পাতার রস খাওয়ান। আম্মু বলে এটা নাকি অনেক উপকারী।

– ছেলে খাবে?

– খাবে না মানে? তার না পরীক্ষা? ভালো থাকতে হলে খেতে হবে। না খেলে আমি আছি আন্টি। জোর করে খাইয়ে দেবো।

আমি নিমপাতা যোগাড় করে ব্ল্যান্ড করে নিলাম। আন্টি বললেন, দেখো পারো কি না। আমি খুশিতে মনে মনে চিনা হাসি দিতেসি। ঐ চাঁদনীর লগে পিরিত আমি এই নিমপাতার রস দিয়া ধুইয়া দিমু। আমি গ্লাস নিয়ে তার সামনে হাজির হইলাম। আমাকে দেখে সে বই থেকে চোখ তুলে তাকাল। ইশারাই জিজ্ঞেস করল, কি?

– শরবত। আন্টি দিয়েছেন। আপনি খাওয়ার জন্য।

সে উঁকি মেরে বলল, ইস্, নিমপাতার রস!!! খাবো না। আমি রাগ দেখাইয়া কইলাম, আপনি খাবেন না তো আমার শ্বশুর আব্বা খাবে। সাথে সাথে জিভ কাটলাম। সে ভ্রূ কুঁচকায় বলল, কি বললা তুমি?

– কিছু বলি নাই। খাবেন নাকি ঘাড় ধরে খাওয়াবো?

– এত কষ্ট করার দরকার নাই। একটা শর্তে খাবো।

– কি?

– তোমাকে অর্ধেক খেতে হবে।

সাথে সাথে মুখ বাংলার পাঁচ হইয়া গেল। আল্লাহ গো!!! কি কয়!!!! নিমপাতা আমার জন্মের শত্তুর। কিন্তু ক্রাশের অসুখ। তার উপর পরীক্ষা চলতেসে। কি আর করা! নাক টিপে এক নিঃশ্বাসে পুরা অর্ধেক খাইয়া তার দিকে বাড়াই দিলাম। সে উদাস ভাব করে কইল, এটা দিয়ে আমি কি করব? তিতায় গলা দিয়ে স্বর বের হইতেসে না। তবু কইলাম, খান।

– তোমার মুখ দেয়া জিনিস আমি খাবো না।

আমি গ্লাস হাতে বেকুব হই গেলাম!!! এ্যাঁহ্, খাবে না। ঐ দিন আমার খাওয়া গাজরের হালুয়া খাইসে যে তখন মনে ছিল না? আসছে, এখন খাইবো না। আমি বললাম, আমি অন্য একটা গ্লাস আনছি। আমি নিমের গ্লাসটা রেখে বেরিয়ে গেলাম। এসে দেখি নিমের গ্লাস খালি! আমি আবার বেকুবের মতো দাঁড়াই রইলাম। সে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ কইরা। মেজাজটা সেই খারাপ হইল। আমি গ্লাস নিয়ে চইলা গেলাম রান্নাঘরে। আন্টি জিজ্ঞেস করলেন, খেয়েছে?

– জ্বি, আন্টি।

– ভালো কাজ করেছ। এবার দেখি কি হয়।

– আন্টি আমাকে রান্নাটা শিখিয়ে দেবেন?

– আমার তো প্রায় হয়ে এসেছে। খুবই সিম্পল। প্রথমে কুমড়োর বিচিগুলোর খোসা ছাড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর ওগুলো বেটে নেবে। ভাজির কড়াইয়ে পেঁয়াজ কেটে ভাজি করে তাতে লবণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো সব দিয়ে কসিয়ে নেবে। এর মাঝে বাটা কুমড়োর বিচি পানি দিয়ে গুলে নেবে যাতে কোনো চাক না থাকে। তারপর ওগুলো কড়াইয়ে দিয়ে দেবে। সেগুলো ফুটতে থাকলে একটা ডিম ফাটিয়ে দিয়ে দেবে। এরপর লবণ দেখে পানি শুকিয়ে আসলে নামিয়ে ফেলবে। সোজা না?

সব শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলাম, আমার কিছুই মাথায় ঢোকেনি, আন্টি। আন্টি হেসে বললেন, আচ্ছা, আরেকদিন শিখিয়ে দেবো।

– ঠিক আছে আন্টি। আমি ডায়রী নিয়ে আসবো। সব তুলে রাখব। আজকে আসি।

– আচ্ছা।

আসার সময় আবার ক্রাশের রুমে গেলাম। সে বাচ্চাদের মতো ঘুমাইতেসে। লোভ সামলাইতে পারলাম না। তার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম। তারপর আমি চইলা আসলাম। রান্নায় যে এত খাটুনি তা কেমনে জানমু। ক্রাশ তোমারে বালুবেসে জীবন শ্যাষ!
.
.
.
.
আজকে ক্রাশের পরীক্ষা শেষ। প্র্যাকটিকাল না কি ওটাও শেষ। আমার ইচ্ছা করতেসে ক্রাশের কলেজ যামু। গাজর খাইতে খাইতে চিন্তা করতে লাগলাম কি করমু। তখনই মাথায় একটা বুদ্ধি আইলো। আমি আম্মারে গিয়া কইলাম, আম্মু, আমি একটু মার্কেট যামু। আম্মা আমার দিকে পুলিশের মতো তাকাই বলল, ক্যান?

– একটা জিনিস কিনতে হবে।

– কি জিনিস?

– আরে বাবা, এতো জেরা করতেসো কেন? চুরি তো করতে যাইতেসি না। চলে আসমু। রিদিকে নিয়ে বের হমু।

– আচ্ছা যা।

আমি দৌঁড়ে রিদিকে ফোন দিলাম। কইলাম, ওই, তাড়াতাড়ি রেডি হ। মার্কেট যামু।

– এখন? এই দুপুরে? আমি কালো হই যাবো।

– তোর কালোর খ্যাঁতা পুড়ি। তুই বের হবি না আমি জুতার কালি আনমু তোর জন্য।

– ছিঃ ছোঁয়া, তোর বেস্টুকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে পারিস না।

– তুই আর একটা কথা বাড়াইলে শুধু ব্ল্যাক না হোয়াট ব্লু গ্রীন সব মেইল করমু। তুই রেডি হ। আমি দশ মিনিট পরে ফোন দিতেসি।

আমি ফোন কাইটা দিলাম। খুশি মন থেকে উপচাইয়া উপচাইয়া পড়তেসে। আমি সুন্দর করে একটা লাল জামা পরে রেডি হইয়া নিলাম। একটু সাজুগুজুও করলাম। ক্রাশের সাথে দেখা করতে যামু বলে কথা।
চলবে…

বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here