অস্তিত্বের খোজে part 30+31

0
680

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩০



– পরের দিন সকালে নিশু এসে আবার দরজায় অনেকবার নক করল।


– আমি গভীর ঘুমে মগ্ন। দরজায় শব্দের চোটে ঢুল ঢুল চোখে উঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়লাম।



– নিশু ফ্লোরে ওর ভাঙ্গা গিটার দেখে রেগে পরীর কাছে গেল। ঘুমন্ত পরীকে দেখে ওর এক নিমিষেই সব রাগ পানি হয়ে গেল। কি নিষ্পাপ ছোট্ট একটা মেয়ে। এরে দেখলে কে বলবে এর এত্ত তেজ। কাল রাতে পরীকে ঠিকমত দেখতে পারেনি নিশু। সকালের শুভ্র আলোতে পরীকে দেখতে চমৎকার লাগছে। নিশু গিটারের ভাঙ্গা অংশ গুলো পরিষ্কার করে বাহিরে চলে গেল।



– আমি ঘুমাতে অনেক দেরি করেছি বলে একটু বেলা করে ঘুম ভাঙ্গল আমার। যা রে এত্ত দেরি করে ঘুম ভাঙ্গল আমার বলেই রাতের সব কথা মনে পরে গেল।

দরজা খুলল কেডাই বলেই বের হলাম রুম থেকে। নাহ্ পুরো বাসায় কেউ নেই। আমিতো ভয়ে শেষ। এ সত্যি পাচারকারী দল না তো!



– কিছুক্ষন পর দরজা কেউ খুলতেই আমি লুকিয়ে পড়লাম সোকেসের আড়ালে। ওমা এতো নুরজাহান খালাম্মা। আমি জলদি দৌড়ে ওনাকে গিয়ে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।



– কি হইছে পরী! তুমি কি ভয় পেয়ে গেছ?(নুরজাহান)


– আমি ওনাকে সব খুলে বললাম।


– উনি শুনে হেঁসে বলল ওটা নিশু ছিল। ওদের এই বাসা। আমি এখানেই কাজ করি। আমিই ওকে বলছিলাম তোমাকে দেখে আসতে। আর ও তুলেই নিয়ে আসছে।


– আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, জিন্স প্যান্ট এবং ট্রী শার্ট পড়া । দাড়িয়ে আছে একটু দুরে। দেখতে ভালয় স্মার্ট ছেলেটি,,,,,,তাতে আমার কি!
চোখ সরিয়ে খালাম্মাকে বললাম আমি বাসায় যাব এক্ষুনি,,,,, চলেন!


– এই মেয়ে আজ থেকে এখানেই তোমার থাকা। এই অবস্থায় তোমাকে আমরা ওখানে রাখি কি ভাবে।( নিশুর মা)


– কিন্তু পরী থাকতে নাছোড় বান্দা। অবেশেষে চুক্তি হয় যত টাকা পরীর পিছে খরচ হবে সেসব টাকা ধার হিসেবে পরী নিচ্ছে যা পরে শোধ করে দিবে।


– খালাম্মা আপনি আমার ফোন আর ব্যাগটা এনে দিয়েন বাসা থেকে তাহলে।


– আচ্ছা বলে পরীকে একটা রুমে নিয়ে গেল নুরজাহান।


– নিশু দুর থেকে দেখছে শুধু পরীকে।



– একদিন নিদ্রা সিড়ি দিয়ে নামছিল এমন সময় পা স্লিপ খেয়ে পড়তেই শুভ্র ধরে ফেলল। শুভ্র নিদ্রার পিছনে নামছিল।


– কৌশকের তোহ্ মনে হয় জিবন শেষ নিদ্রার পরে যাওয়া দেখে।


– বৌদি এত্ত দ্রুত কেউ নামে! এই সময় সাবধানে চলতে হয় জানোনা বলে নিদ্রাকে নিচে নেমে দিয়ে শুভ্র বের হয়ে যায় অফিসে।


– শুভ্রর বার বার মনে পড়ছে পরীতো যে বাচ্চামো কাজ নিয়ে মেতে থাকে ওর যদি বৌদির মত কিছু হয় তাহলে ওকে কে সাহায্য করবে। আল্লাহ্ ওকে হেফাযতে রেখ।

পুরোটা দিন শুভ্রর কোন কাজে মন বসল না। অস্থিরতা যেন ওকে ঝেকে বসেছে। ।



– অনিতা শুভ্রকে বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। অনিতা প্রচন্ড দুঃশ্চিন্তা করছে। কোন সমস্যা হলো না তোহ্। রাত ১০ টা পার হয়ে যাচ্ছে।


– রাত ১১ টার দিকে শুভ্র বাসায় ফিরে। রুমে এসে দেখে ওর মা বসে আছে খাটে।


– স্যরি মা অনেক দেরি করে ফেলছি।


– তোর কান্নার যখন এতই সখ রুমের ভিতর বসে থেকে কাঁদতে পারিসতো শুভ্র! এত্ত রাত অবদি বাহিরে কেন থাকবি। তোর অনুপস্থিত কারো জন্য যন্ত্রনা দায়ক বাবা।


– মায়ের কাছে ধরা পরে গেছে শুভ্র। তাই ওখানেই বসে পড়ল শুভ্র।


– অনিতা দৌড়ে এসে শুভ্রর পাশে বসে বলল কি হল তোর শুভ্র! কষ্ট হচ্ছে,,,,,আমায় বল।


– শুভ্র এবার ওর মাকে জড়িয়ে ধরে নিশব্দে চোখের জল ফেলাতে লাগল।

মা! পরী আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। প্রার্থনা কর মা,,,,, ওর সাথে যেন আমার না দেখা হয় আর কোনদিন। কারন আমি ওকে আর শান্তিতে বাঁচতে দিবনা। ওর প্রতিটা আঘাত ৩ গুন ফিরে দিব।


– অনিতা যা ভয় করেছে তাই ফলে গেছে। শুভ্রকে আর আটকানো যাবেনা এর থেকে সেটা অনিতা ভালভাবে বুঝে গেছে।


– দেখ শুভ্র! পরী ছোট মেয়ে ও একটা ভুল করেই ফেলেছে। তাই বলে ওকে এত্ত শাস্তি তুই দিতে পারিস না। আমার কথা শোন বাবা মেয়েটার দুনিয়াতে কেউ নেই তুই ছাড়া।


– ও ছোট! ওর বাচ্চামোর ভিমরতি আমি ছুটিয়ে দিব,,,,,,,, জাষ্ট একবার পাইনা কেন বলে শুভ্র ওয়াসরুমে চলে গেল।


– শুভ্রর চলে যাওয়া শুধু অনিতা চেয়ে চেয়ে দেখল।




– পরী আর কোন দিন নিশুর সাথে একটা কথাও বলেনি। যদিও নিশু বলার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

শুভ্রর পিক দেখা,,,,, পিকের সাথে কথা বলা নামায কালাম পড়া বাসায় টুকিটাকি সবার সাথে কথা বলা। আর রাতে না ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শুভ্রর কথা ভেবে কান্না করা এভাবেই জিবন চলছে।



আমি একদিন নিশুর রুমের সামনে দিয়ে যেতেই দেখি ওর রুম খোলা। নিশুর বেড়ালটা মিউ মিউ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি রুমের ভিতর ঢুকলাম। সব কিছু খুব সুন্দর করে সাজানো। অনেক ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো আছে।

আমি একটা একটা ছবি গুলো দেখতে লাগলাম। সব ফ্রেন্ড রা মিলে অনেক পিক উঠানো। হঠাৎ একটা ছবির দিকে চোখ আটকে গেল। হুম এটাতো শুভ্র! অনেক আগের পিক। এধরনের পিক শুভ্রর ল্যাপটপে দেখছিলাম।

আমি একটা চিয়ার নিয়ে ওর উপরে উঠে ছবিটা নামিয়ে নিচে নামার সময় উষ্ঠা খেয়ে পড়তেই নিশু এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমিতো ভাবছি আজ শেষ।



– পরী! তুমি কি বলতো এভাবে কেউ রিক্স নেয়!
কি তোমার প্রয়োজন সেটা কি আমাকে বলা যেত না…….. আমি যদি এখানে না থাকতাম তাহলে কি হত আজ!

এখুনি কি হয়ে যেত বলেই খাটে এনে বসায় পরীকে।
অনেক কথা শুনাতে লাগল পরীকে নিশু।



– আমি ছবিটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ওকে বললাম এটা কে হয় আপনার?


– নিশু অবাক হয়ে যায় এতদিনে পরী ওর সাথে কথা বলছে।

আমার ফ্রেন্ড শুভ্র। মাধ্যমিক অবদি একসাথে পড়েছি। তারপর দেশের বাহিরে চলে যায়। এখন নাকি অনেক বড় পদে কর্মরত আছে। অনেকদিন দেখা হয়না।

তুমি কি ওকে চিনো!




– আমি কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। না কিছু বলা যাবেনা নিশুকে। এসে খালাম্মা কে বললাম শুভ্রর ব্যাপারে যেন নিশুকে কিছু না বলা হয়।



– শুভ্র অফিসে সবার সাথে মিটিং এ অ্যাটেন্ড করেছে। সব বড় বড় অফিসার গন রয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টা মিটিং শেষে শুভ্র বের হতেই একটা কল আসে ওর ফোনে। শুভ্র কলটা রিসিভ করে একটু দুরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে।



– স্যার! ম্যাম একবার ফোন অন করেছিল। কিন্তু তখন
আপনি অসুস্হ ছিলেন তাই এটার ব্যাপারে আর এগুনো হয়নি।



– দেখ আমি কিছু শুনতে চাইনা। যত টাকা তোমরা চাও তত দিব। কোন দরাদরি করব না। আমি শুধু জাষ্ট আমার স্ত্রী পরীকে চাই। সেটা যেভাবেই হক। পাতালে থাকলে সেখান থেকেও খুজে আনেন। আর যেই সিসি ফুটেজ পাঠিয়েছিলাম সেটা দেখে ট্রাক্সি নাম্বার তো কালেক্ট করে এটা দেখা সম্ভব যে ট্রাক্সিটা পরীকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছে?


– স্যার! সেটাও করেছি কিন্তু তেমন ভাল সাড়া পাওয়া যায় নি। ট্রাক্সি ডাইভারটি পেশাটা ছেড়ে দিয়ে আরও কিছু মাস পর দেশের বাহিরে কাজ করতে চলে গেছে।


– দেখেন তার ফ্যামিলির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সব কি আমাকে বলে দিতে হবে! আপনাদের তাহলে কাজ কেন দিছি?


– স্যার প্লিজ রেগে যান না। আশা করি খুব শিঘ্রই ভাল কিছু information দিতে পাবর। একটু ধর্য্য ধরেন স্যার।


– এবার যেন না শুনিনা বলেই শুভ্র কল কেটে দেয়।

পিছন দিক থেকে শুভ্রকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। I Love you শুভ্র।

– মেয়েটা একটা মুসলিম ছিল তাই সে তোমাকে ছেড়ে গেছে। আমি তোমাকে এত্ত ভালবাসি তাও তুমি কেন বোঝনা বলে শুভ্র কে ছেড়ে দিয়ে নিতু শুভ্রর সামনে এসে দাড়ায়।



– শুভ্র এমনি টেনশনে আছে তার ভিতর এমন কাহিনী পরীর বিরুদ্ধে তাই অত্যন্ত ক্ষেপে গিয়ে নিতুকে একটা ঠাশশশ্ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

এই মেয়ে তোমাকে কত বার বলেছি তুমি আমার সামনে আসবে না! তবুও বেহায়ার মত কেন আবার আসছো?



– নিতু গালে হাত দিয়ে বলল তোমার বউ তো তোমাকে দাম দেয়না অবদি আর তুমি আমার সামনে তেজ দেখাও। যে মেয়ে তার স্বামীকে রেখে চলে যায় তাকে বেশ্যা ছাড়া আর কি বলা যায় শুভ্র!



– এবার শুভ্রর নিতুর গলা চিপে ধরে বলে ঐ পরীই অনুরোধ করেছিল তোমাকে জেলে না দেওয়ার জন্য তাই তুমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলে। তাছাড়া মানসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে হাতে হারিকেন ধরে জেলে পচে মরতে হত তোমায়। আর ওকে এধরনের কথা বল!



– শুভ্র! একটা মুসলিম মেয়ের সাথে তুমি কোন ভাবেই সম্পর্ক রাখতে পারবেনা। আর সে যদি তোমায় এতই ভালবাসে তাহলে ছেড়ে গেল কেন? গিয়ে দেখ অন্য ছেলের সাথে তলে তলে টেম্পু চালায়। আমাকে শিখাতে এসো না এধরনের মেয়েদের সম্পর্কে। আমি মানুষ চিনে খাই বুঝছো?



– আমি পরীকে সে দিন বলেছিলাম তোমার মত মেয়ে কোন দিন শুধরানোর না। কিন্তু আমিতো আবার বউ বলতে পাগল কিনা! তাই বউয়ের মিষ্টি ভালবাসায় ভুলে তোমায় সেদিন ছাড় দিয়েছিলাম। যার ফলাফল তো সামনেই।

পরীকে শুকরিয়া জানাইও। ওর জন্য তোমার সম্মান এখনও আছে। আর হ্যাঁ আমি একজন মুসলিম ছেলে। মোঃ শুভ্র আমার নাম। তাই ভুলেও আমার ধারে কাছে আসবে না।

আমার মন, শরীর সব কিছু শুধু ঐ বেহায়া,বেয়াদপ মেয়ে পরীর । তাই আর কিন্তু কোন ধরনের সুযোগ তোমাকে দিবনা এরকম কথা ২য় বার বললে বলেই শুভ্র বের হয়ে চলে আসে।



– আমাকে রেশমা আন্টি এসে বলল চল মা! তোমার আলট্রাসন করে নিয়ে আসি। ৭ মাস তো হয়ে গেল।


– না আন্টি আমি চাইনা বাচ্চা দেখতে। আমি এমনি ঠিক আছি। তাছাড়া এরে আমার চাই না।


– নিশু এসে বলল কেন পরী! যাবেনা কেন? বাচ্চার জন্য সব মা পাগল আর তোমায় দেখি বাচ্চার সম্পর্কে তোমার কোন ফিলিংস নাই……


– আমার বাচ্চা হলে আমি আপনাকে দিয়ে যাব। তখন যা ইচ্ছা করেন। নিবেন তো! I am serious……



– পরীর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। এ কেমন মা যে বাচ্চা চায় না?


– পরী তুমি কি শুভ্র কে চিনো?( নিশু)


– আমি কিছু না বলে সেখান থেকে আবার চলে আসলাম। শুভ্র সম্পর্কে কোন মিথ্যা কথা আমি বলতে পারবো না।



– আমার রুমের ছোট্ট বারান্দায় কয়েকটা ফুলের গাছের টব রয়েছে। নিশু এনে দিছে। যাতে আমার মন ভাল থাকে ফুল দেখে।



-গাঁদা, বেলি, ঘাসফুল এই ৩টি ফুলের গাছ কে পরী ৩টি নাম দিছে। পুতুল, দিপা, নিতু। এদের সাথে এক মনে কথা বলে। যত কষ্ট, হাসি সবরকম কথা এই গাছ গুলোর সাথে শেয়ার করে।



– পরী সন্ধার পরে বারান্দায় গাছগুলোর সাথে কথা বলছিল এমন সময় নিশু এসে বলল আমার সাথে কথা গুলো শেয়ার করতে পারতা পরী। এভাবে গাছের সাথে কেউ কথা বলে?

জানো! তোমাকে মানুষ মনে হয়না আমার। হয় তুমি বনের পশু না হয় কোন দেবী। কারন তুমি যেভাবে চল কারো সাথে কথা বলনা। কোন স্বাভাবিক মানুষ এভাবে বাঁচতে পারেনা। তা তুমি কোনটা! মানুষ না কোন দেবী হুম?


– একদম আমায় দেবী নামে ডাকবেন না। আমার বর শুধু আমায় ঐ নামে ডাকে। আমি শুধু তার দেবী তাছাড়া কোন দেবীর অস্তিত্ব আমার কাছে নেই।


– ওপস্ স্যরি,,,,,,,,, ভুল হয়ে গেছে। আসো তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো। আমি শিউর তোমার খুব ভাল লাগবে বলে আমাকে নিয়ে রুমে আসল নিশু।


– একটা অ্যালবাম দিয়ে বলল দেখ এটা আমার স্কুল আর কলেজ লাইফের সব পিক আছে। তোমার খুব ভাল লাগবে আশা করি।



– আমি অ্যালবাম খুলে একের পর এক ছবি দেখতে লাগলাম। এখানে আমার শুভ্রটাও আছে। আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না। নিশুর সামনে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলাম।


– পরী আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম নাকি? বল আমায়……….


– না ভাইয়া ছোট বেলার স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে পিক গুলো দেখে তাই খুশিতে কান্না করে উঠলাম। আচ্ছা এই ছেলেটা দেখতে অনেক সুন্দর তাই না! বলেই পরী শুভ্রের পিকে হাত দিল।



– হুম সুন্দর তবে যতটা সুন্দর তার থেকে হাজার গুন ডেন্জারাস্। এর মত ট্যালেন্ট আমাদের স্কুল বা কলেজে একটাও নেই। ফাষ্ট ছাড়া কখনও সেকেন্ড হতে দেখিনি। সব দিকে টপে থাকত। অনেক বড়লোকের ছেলে। আমাদের এই একটাই হিন্দু ফ্রেন্ড ছিল। ক্লাস টেনে থাকতে ওর একটা ফ্রেন্ড ওর গোপন কথা আমাদের বলেছিল। বিশ্বাস ঘাতকতা একদম সহ্য করে না শুভ্র। তাই ঐ ফ্রেন্ড কে সবার সামনে এত্ত মেরেছিল যে ওর হায়াত ছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল। তারপর থেকে ওকে সবাই ভয় পেত। ওর অনেক এধরনে রেকর্ড আছে। কোন মেয়েকে কোন দিন পাত্তা দেয়নি ও। আমাদের একটা বান্ধবী রুপা ওকে এতটা লাভ করত যে শেষে ওর জন্য সুইসাইড করে।

যেহেতু এতে শুভ্রের কোন দোষ ছিলনা তাই ওর কিছুই করতে পারেনি। আর তাছাড়া ওর দাদু ব্যারিস্টার আর বাবা একজন বিশাল বিসনেস্ ম্যান তাই কেস করলেও ধোপে টিকতো না।

আমরা অনেক জায়গায় কনসার্ট করতাম। শুভ্র দেশের বাহিরে থেকে এসেও প্রায় ৩ ডর্জন খানেক কনসার্ট করেছে। শুধু পেশাদার শিল্পী নয়। আমাদের একটা ব্যান্ড দলও আছে। জিবনে একসাথে অনেক জায়গায় শো করেছি আমরা।


– অহ্,,,,,,, আপনার তার সাথে আর দেখা হয়না?


– হত কিন্তু গত ১ বছর ধরে কারও সাথে তেমন যোগাযোগ রাখেনি শুভ্র। হয়ত বিজি তাই। পরী! ওর ব্যাপারে এত্ত কিছু জানতে চাচ্ছো কেন! আর বললে না তো শুভ্রকে চিন কিনা?


– ভাইয়া আমার বেবিটাকে আপনি নিবেন? আমি চাইনা ওকে…….


– পরীর কথা শুনে নিশু আবার অবাক হয়ে যায়। কি বলছে মেয়েটা।
পরী! তুমি এধরনের কথা কেন বল,,,,,,,,,এটা কি তোমার বরের সন্তান না? কারো সাথে আকাম কুকাম করছো নাকি!
আর আমি ভেবে পাইনা তুমি এই বয়সে কেন বেবি নিছো?
তোমার বর কি সেফটি বলতে কিছু যানেনা?
কেমন বর তোমার! যে তোমার সেফটির ব্যাপারে উদাসীন ছিল…….
কতটা রিক্স এই বয়সে বেবী নেওয়া সেটা তুমি নিজেও জানোনা। তার ভিতর তুমি কোন ডক্টর দেখাওনি একবারও।



– আপনি আমার রুম থেকে এখুনি বের হোন। আর একটাও কথা বলবেন না আমার বর সম্পর্কে। কি জানেন আর কতটুকু জানেন তার সমন্ধে। যে এধরনের বাজে মন্তব্য করছেন?



– সেদিনের পর থেকে নিশুর সাথে আর একটা কথাও বলেনি পরী। নিশু চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু পরীর কাছ থেকে কোন রেসপন্স পায়নি। এমনকি ইশিতা কে দিয়েও কথা বলানোর ট্রাই করছে কিন্তু লাভ হয়নি।



– এভাবে ৯ মাস পার হয়ে যায়। যেকোন সময়ে পেইন উঠতে পারে পরীর।


– সকালে অলিবয়েল ম্যাসেজ করছিল পেটে পরী। কিছু অলিবয়েল নিচে পড়ে যায় যা ও বুঝতে পারেনা। শুভ্রকে বার বার মনে পড়ছে। পরীর মনে হচ্ছে ও বাঁচবে না। হয়ত আর শুভ্রের কাছে যাওয়া হবেনা।



– আমার খুব খারাপ লাগছিল। দুপুরের দিকে বের হলাম রুম থেকে। গাড়ীর ডাইভার কে নিয়ে সোজা শুভ্রের অফিসের সামনে আসলাম। গাড়ী একটা জায়গায় পার্ক করে ডাইভার বলল,,,,
পরী! এখানে আসলে কেন? এটা তো অনেক হাইফাই এলাকা। এখানে কি তোমার কেউ আছে?



– রফিক ভাইয়া চুপ করেন তো। আপনার সমস্যা হলে আপনি চলে যান। আমার এখানে কাজ আছে। আর আঙ্কেল কে কল দিয়ে বলেন আমি আপনাকে নিয়ে বের হয়েছি। চিন্তা করেন না আমি সময় করে আপনাকে এর দাম দিব। আমার কাছে এখন টাকা নাই।



– আমি তোমার কাছে টাকা চেয়েছি নাকি! কথাটা বলেই রফিক একটু দুরে গিয়ে কল দিল নিশুকে। সব কথা বলে এসে আবার গাড়ীতে বসল রফিক। কারন নিশু সবসময় ওর কাছে থাকতে বলেছে।



– দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল দেন সন্ধ্যাও হয়ে গেল কিন্তু শুভ্রকে দেখতে পেলাম না। ও কি আজ অফিসে আসেনি! না আবার কোথাও বদলি হইলো।



– অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। রুমে এসে বসে পড়লাম। খুব কষ্ট হচ্ছিল। আর নিজেকে কন্টোল করতে পারলাম না। তাই ফোনটা অন করে শুভ্র কে কল দিলাম। ফোন ঢুকছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছেনা। যতবার কল কেটে যাচ্ছে ততবার আমার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিলো।

প্রায় ১ ঘন্টার বেশি সময় হবে ওকে ট্রাই করছি কিন্তু রিসিভ করছে না। আমি রাগে কষ্টে কাঁদতে লাগলাম। শুভ্র আমাকে ভুলে গেছে। শেষে মাসেজ করলাম “””শুভ্র তুমি বাসায় আছো তবুও কেন রিসিভ করছোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে তো।””””



– শুভ্র ফোনটা রুমে রেখে ওর মায়ের রুমে এসে বসে আছে এবং কথা বলছে। সাথে আরও একটা ফোন আছে কিন্তু এটা দিয়ে কখনও পরীর সাথে কথা বলেনি।


– এমন সময় শুভ্রর ফোনে কল এল।


– হ্যাঁ বল…… কিছু Information পেয়েছো?


– Sir জলদি ম্যাম কে কল দিন ওনার নাম্বার খোলা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে। এই নাম্বারে বার বার ট্রাই করছে। ওনার কল ট্রাক করেছি। আপনাকে ম্যাসেজ করছি লোকেশন।


– শুভ্র নাম্বারটি শুনে হচকিয়ে উঠল। আরে এটাতো আমার নাম্বার। তার মানে এর আগেও আমাকে কল দেওয়ার ট্রাই করছিল।


– Sir শুধু শুধু আমাদের পিছনে এত টাকা খরচ করলেন। ম্যাম আপনাকে এত্ত ভালবাসে যে এর আগেও বার বার ট্রাই করছে। আপনিই বুঝতে পারেননি।



– শুভ্র আর কোন কথা না বলে দৌড়ে রুমে এসে ফোন নিয়ে দেখল ১৫০+ বার কল দেওয়া হয়েছে পরীর নাম্বার হতে। পরীর মাসেজ দেখে শুভ্রর বুকের ভিতর কেমন জানি হতে লাগল।



– অনিতা শুভ্রের দৌড়ানো দেখে অনিতাও শুভ্রের পিছে পিছে এসেছে।


– মা পরী! বলেই শুভ্র কল ব্যাক করল। আল্লাহ্ নাম্বারটা যেন খোলা থাকে।


– অনিতা শুভ্রের কথা শুনে আরও কাছে এলো শুভ্রের।



– আমি কাঁদছিলাম আর এমন সময় কল আসল। আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলনা এটা আমার শুভ্রের কল ছিল। বুকের ভিতর হাতুরির একেকটা বাড়ি মনে হয় পড়ছে। আমি কল আর রিসিভ করতে পারলামনা। কয়েক বার বেজে কেটে যাচ্ছে শেষে কল রিসিভ করে বললাম

“””” শুভ্র তুমি আমায় ভুলে গেছ,,,,,, আমার কথা তুমি একটুও ভাবোনা। তুমি খুব খারাপ। খালি খারাপ না একদম নষ্ট খারাপ বলেই কাঁদতে লাগলাম।””””””



– শুভ্র পরীর কথাগুলো কানে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। কত দিন পর শুভ্রের দেবীটার কথা শুনছে শুভ্র। শুভ্রের মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে। কত প্রতীক্ষার পর এই শব্দ গুলো শুনতে পাচ্ছে শুভ্র। শুভ্র চোখ মেলাতেই ওর চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়তে লাগল। অনিতা সেটা দেখে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তাদের ২ জনকে একান্ত টাইম দেওয়া উচিত এই ভাবে।



– কি হল শুভ্র কথা বলছো না কেন! তুমি আমাকে সত্যি ভুলে গেছ তাইনা?

শুভ্র! ৬ মাস আমি ঠিক মত ঘুমাতে পারিনা। তোমাকে ছাড়া আমি চলতে পারছিনা শুভ্র। আমি শুধু তোমাকেই চাই এটা ছাড়া আর কিছু আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি তোমাকে খুব মিস করি। আমার শুভ্রকে আমার খুব প্রয়োজন।

শুভ্র তোমার অনুপস্থিতি আমাকে পাগল করে দেয়, আমাকে বড্ড কষ্ট দেয়, আমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করে। আমি আর পারছি না শুভ্র। আমাকে নিয়ে যাও।


—————————–?


– শুভ্র আমার সাথে কথা বলবানা! আমার শরীর খুব খারাপ। আমি মনে হয় বাঁচবনা। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। তুমি আসবা আমার কাছে শুভ্র?
আমার চোখ দিয়ে পানির বাঁধ মানছেনা। শুভ্রটা আমার সাথে কথা বলছেনা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে নিশব্দে।


– কোথায় আসিছ এখন?


– শুভ্রের কথা শুনে আমার বুকের ভিতর তোলপাড় করতে লাগল।
এভাবে শুভ্রের কথা শুনে বুঝে গেলাম এখন আমার উপর বেশ রেগে আছে।

শুভ্র! তুমি আমার উপর ভিষন রাগ করে আছো?

My heart I Love you♥ বলেই অনেক গুলো কিস♥♥♥♥করতে লাগলাম।
আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল নিশ্বাস নিতে তবুও পাগলের মত শুভ্রকে কিস♥♥♥♥ করতেই থাকলাম।


– কিস♥♥♥♥ করা থামাবি…….কি হলো বল! তুই এখন কোথায়?


– ওকে বলছি। আমি একটু পানি খেয়ে আসি।


– না কোথাও যাবিনা তুই। এখুনি বল বলেই শুভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে।

– আমি একটু পানি খেয়েই বলছি। আমার গলা তেষ্টাই ফেঁটে যাচ্ছিল তখন।


– কথা কেন শুনিসনা তুই! আমাকে আর কত কষ্ট দিবি। আমি দুনিয়া থেকে বিদায় হলে তুই থামবি।


– পরী কোন কথা না বলে ফোনটা রেখে পানি খাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অলিবয়েলের উপর পা পড়তেই স্লিপ খেয়ে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে জোড়ে মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।


– পরীর চিৎকার শুনে শুভ্র স্তব্ধ হয়ে গেল। পরীর আর্তনাদ শুভ্রের কানে এসে ধাক্কা খেল।


– নিশু দৌড়ে এসে দেখে পরী ফ্লোরে পড়ে কেঁপে যাচ্ছে। আর পুরো ফ্লোরে রক্তে ভেসে গেছে। এই পরী এটা কি করে হল তোমার বলে নিশু পরীকে এসে ধরল।



– অনেক কষ্টে পরী বলে উঠল ভাইয়া আমার শুভ্র বলে ফোনের দিকে হাত দেখিয়ে দিল। আর কিছু বলতে পারল না সেন্সলেস হয়ে যায় পরী………..

চলবে——

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩১


– নিশু পরীর ফোনটা পকেটে নিয়ে পরীকে ফ্লোর থেকে তুলে নিল। একটু দাড়াতেই রক্তে পা স্লিপ খেয়ে পড়ে যায় নিশু। কিন্তু নিশু পরীকে ঠিকি সেভ করে নেয়। নিশুর শরীর ব্লাডে মেখে গেছে। সে
দিকে ওর কোন খেয়াল নেই।

নিশু উঠে মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে পরীকে নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে রফিক কে ডেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।



– নিশুর বাবা-মা আর নুরজাহান নিশুর চিৎকার শুনে ডাইনিং রুমে এসে দেখে রক্তের ছোপ ছোপ অনেক গুলো দাগ। যেটা বাহির অবদি চলে গেছে।



– নুরজাহান জলদি পরীর রুমে এসে দেখে সারা ফ্লোরে রক্তের ছড়াছড়ি। নুরজাহানের আর বুঝতে বাঁকি রইল না কি ঘটেছে। আল্লাহ্ বলে একটা চিৎকার দিয়ে বাহিরে এসে বলল আপা আমার পরীটা শেষ বলে কাঁদতে লাগল।



– শুভ্রর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি হয়ে গেল। শুভ্র জলদি পরীর নাম্বার ট্রাক করে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। রাত ৮ পার হয়ে গেছে। আল্লাহ্ আমার পরীটাকে ভাল রেখ। আমার ওকে ছাড়া আর কিছু চাইনা বলে অনেক বিপদের দোয়া গুলো পড়তে লাগল শুভ্র।




– নিশু পরীকে নিয়ে বসে আছে আর ওর সেন্স ফিরানোর চেষ্টা করছে। পরী পরী বলে বার বার ডাক দিচ্ছে কিন্তু ওর কোন রেসপন্স নাই। গা হাত পা সব মনে হয় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।



– ১৫ মিনিট পর হসপিটালে এসে পৌছালে নিশু দ্রুত পরীকে নিয়ে হসপিটালে ঢুকে গেল। কিন্তু বাঁধ সাধল ওর চিকিৎসা নিয়ে। নার্স এসে বলল আপনি পেসেন্টের কে হন। আপনি কি তার হাসবেন্ড হন?



– না আমি ওর husband নই। বাসার লোক হই।


– দেখেন সিরিয়াস কেস্ তাই সিগনেচার দরকার husband এর। পরে কোন সমস্যা হলে আপনারা যে আমাদের বিরুদ্ধে একশন নিবেন সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই জলদি ওনার husband বা বা-মা কে ডাকুন। যত দ্রুত পারেন বলেই নার্স চলে গেল।



– নিশু পরীকে নিয়ে ঢুকার ৫ মিনিটে শুভ্র হসপিটালে ঢুকল।


– শুভ্র দৌড়ে এসে নার্স কে জিঙ্গাসা করল পরী নামে পেসেন্ট কে কোথায় এডমিট করা হয়েছে। পেসেন্টটি প্রেগন্যান্ট ছিল।


– স্যার পরী কে জানিনা কিন্তু একজন পেসেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ একটু আগেই এডমিট করা হয়েছে বলে শুভ্রকে নিয়ে গেল পরীর কাছে নার্স।


– ICU রুমে ডাক্তারগন ছুটাছুটি করছে। পেসেন্টের অবস্থা খুবিই খারাপ।


– Sir আপনাকে বললাম না জলদি ওনার আপন কাউকে ডাকুন বলে নিশুর কাছে এগিয়ে এল নার্স।
নিশু ভেবে পাচ্ছেনা কি বলবে। কেবল বলতে যাবে আমিই ওর husband কিন্তু কারো কথা শুনে নিশু থমকে যায়।



– নার্স আমার ওয়াইফ সিরিয়াস কন্ডিশনে আছে আর আপনারা formality নিয়ে বসে আছেন বলেই একটা ধমক দিল শুভ্র নার্সকে।


– নার্স একদম হচকিয়ে ওঠে শুভ্রর ধমক শুনে। নিজেকে সামলিয়ে বলল sir এটাই নিয়ম বলে শুভ্রকে নিয়ে গেল।


– পরীর ভিতরে চিকিৎসা চলছে। শুভ্র সব কমপ্লিট করে এসে ওর মাকে দ্রুত কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে। শুভ্র ঠান্ডা মাথায় চুপ করে বসে আছে মাথা নিচু করে। একদম ঠান্ডা।



– নিশু কিছুতেই ভাবে পাচ্ছেনা পরী কি করে এর স্ত্রী হতে পারে। পরীকে এই কয়েক মাসে কাছ থেকে দেখেছে নিশু। নামায কালাম পড়া সহ সব ধার্মিক কাজে কমতি রাখে না। আর তার স্বামী শুভ্রর মত একজন অন্য ধর্মের ছেলে হয় কিকরে। নাহ্ মাথায় কিছু ঢুকছেনা নিশুর।

এই জন্য পরী বার বার শুভ্রর কথা জিঙ্গাসা করে। তাহলে পরী বাসা থেকে কেন বের হয়ে আসছে! এমন একটা শশুর বাড়ী রেখে! যেরকম সব মেয়েই চায় এমন একটা উচ্চ পরিবার।

শুভ্র কি তাহলে পরীকে জোড় করে বিয়ে করেছে!
নাহ্ শুভ্র তো এমন না,,,,,,, কোন মেয়ের প্রতি আলাদা ফিলিংস নাইতো। কি সব হচ্ছে।



– শুভ্রর মনে হচ্ছে বার বার,,,, পরীকে ছাড়া ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরীকে কতটা চায় শুভ্র…….. সেটা শুভ্র আর আল্লাহ্ই ভাল জানে।



– অনিতা সহ বাসার সবাই হসপিটালে এসে যায়। এমন সময় ডাক্তার এসে বলে প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে পেসেন্টের। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পেসেন্টের টুইন বেবী ছিল। কিন্তু একটা মারা গেছে অপর জনের অবস্থা আর পেসেন্টের অবস্থা খুবই জটিল। সিন্ধান্ত নিতে পারছিনা আমরা।



– একটা গেছে অন্যটাকেও মেরে দিন। কোন দিন যদি বাচ্চা নাও হয় তবুও খুশি আমি কিন্তু আমার স্ত্রীকে যে কোন মূল্য ফেরত চাই। আর যত রক্তের প্রয়োজন আমি ব্যবস্থা করছি। প্রথমে আমার থেকে রক্ত নেন আমারও O+ পজেটিভ ব্লাড গ্রুপ। বাঁকিটা আমি ব্যবস্হা করছি।



– অনিতা চট করে এসে বলল যদি বাচ্চা না বাঁচে তাহলে পেসেন্টের বাঁচার কোন দরকার নেই।


– ডাক্তার তো এদের মা ছেলের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল। এরা এত্ত উচ্চ একটা পরিবার তবুও এদের মুখে এমন কথা। শুভ্র শুধু চুপ করে আছে।



– অনিতা ভাল করেই জানে আজ যদি পরী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যায় তাহলে পরী বাঁচবে তো ঠিক কিন্তু জিবন্ত লাশ হয়ে বাঁচবে। শুভ্রের সম্পর্কে অনিতা খুব ভাল জানে। শুধু অনিতা কেন শুভ্রর আসে পাশে সবাই জানে শুভ্র কি জিনিস। তাই পরীর জন্য শুভ্র কতটা রিক্স। বাচ্চার মুখ দেখে যদি শুভ্রের মন গলে তাই অনিতা এই কথা বলেছে।



– নিশু অনিতার কথা শুনে চুপ করে যায়। কারন শুভ্রকে দেখার পর থেকে নিশু একদম স্থির থাকতে পারছেনা। পরীকে যে শুভ্র কতটা ভালবাসে সেটা নিশু বুঝতে পেরেছে এতক্ষনে। আর সেই শুভ্রকে পরী আঘাত করেছে তার ফলাফল যে কতটা খারাপ হবে সেটা ভেবেই নিশুর শরীর শিউরে উঠছে।

নিশু সিন্ধান্ত নিয়ে নিছে পরী সুস্থ হলে ওকে নিয়ে নিশু চলে যাবে সেটা যেভাবেই হোক না কেন। প্রয়োজন হলে সারা জিবন পরীর দায়িত্ব নিবে নিশু তবুও শুভ্রর কাছে এক মুহুত্বও রাখা যাবেনা।



– নিশু বাসায় কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলল সবাইকে।


– নিশু অনিতার কাছে গিয়ে বলল আন্টি কেমন আছেন!

– অনিতা নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল নিশু! তুমি এখানে,,,,, আর তোমার শরীরে এত্ত রক্ত কেন?


– এগুলো পরীর রক্ত আন্টি। ও আমাদের বাসায় ছিল এতদিন বলেই নিশুর চোখ ছলছল করে উঠল।


– নিশু তোমার ঋন কিভাবে শোধ করব আমরা জানা নেই বাবা। আমাদের প্রিয় জিনিসকে তোমরা আগলে রাখছো এতদিন,,,,,,, এটা আমাদের কাছে অনেক।



– আন্টি ওকে পেয়ে আমরা অনেক খুশি। অন্য ধরনের একটা মেয়ে। আমি জানতাম না পরী শুভ্রর ওয়াইফ।

পরীও কখনও বলেনি আমাদের। মেয়েটাকে কোনদিন হাঁসতে দেখিনি। জানিনা কেন সে এমন একটা কাজ করল আর শুভ্রের সাথেই বা কেমনে বিয়ে হল! এটা তো সম্ভব নয়। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা।



– নিশু অনেক ইতিহাস। এখন বলা সম্ভব নয় বাবা।


– কিন্তু আন্টি আমি যতটুকু শুভ্রকে চিনি পরী যদি আজ বেঁচেও যায় তাহলে শুভ্রর হাত থেকে বাঁচবেনা। আমি শুভ্রকে ভাল করে চিনি তাই বললাম।

আপনাদের সমস্যা হলে আমি পরীকে আমাদের বাসায় রাখতে পারি।


– নিশু কথাটি আমাকে বলেছো ঠিক আছে শুভ্র বা পরী কাউকে বলো না। তোমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেনা পরী। আর শুভ্রের কথা তো বাদ দিলাম তোমায় এখানেই খুন করবে কথাটি শুনে। তুমি জানো না সব কিছুর উর্দ্ধে শুভ্র পরীকে শুধু চায়।
তাই পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ন ছেড়ে দাও।



– শুভ্র,নিশু এবং অনিল মিলে পরীকে রক্ত দিল। তবুও পরীর কন্ডিশন খুবই খারাপ। পরীর টুইন বেবী ছিল যার মধ্য ছেলে বেবিটা আঘাত পাওয়ার সাথে সাথেই মারা গেছে। মেয়ে বেবিটা এখনও বেঁচে আছে। ওকেও লাইফ সার্পোটে রাখা হয়েছে।



– অনিতা বার বার ভাবছে শেষে মাধুরীর মত পরীও চলে যায় কিনা। আর কিছু ভাবতে পারছেনা অনিতা ২ চোখ ছলছল করে উঠল।


– অনিল সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে এখানে। মাধুরীর ও একই সমস্যা হয়েছিল। আজ যদি পরীর ও এই অবস্থা হয় শুভ্রটার কি হবে। জিবন বড়ই কঠিন। প্রভু আমার ভুলের শাস্তি আমার ছেলেটাকে দিওনা। পরীকে ঠিক করে দাও।



– বিমলা কেঁদেই চলছে হসপিটালে আসার পর থেকে। বাসায় সব থেকে পরীকে কেউ কষ্ট দিলে,, সেটা বিমালা দিয়েছে। মেয়েটা সব সময় হাঁসিখুশি মনে সব কথা মেনে নিছে। কোন দিন প্রতিবাদ টুকু করেনি। কথা গুলো মনে করে কেঁদেই চলছে বিমলা। পরীকে এই অবস্থায় দেখবে সেটা সে কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি।



– মা! কান্নাকাটি না করে প্রর্থনা করুন। পরী যেন জলদি আমাদের বাসায় সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে পারে। আমাদের সবার কষ্ট হচ্ছে মা……. চলেন বাসায়। অনেক রাত হয়ে গেছে। (অনিতা)


– নিদ্রা প্রেগন্যান্ট তাই ওকেও জলদি হসপিটাল থেকে বাসায় যেতে বলা হল। এর মধ্য রাত ১২ টা বেজে গেছে।


– নিতাই সেন সেই তখন থেকে চুপ করে আছে। নিতাইয়ের হাত ধরে পরী এখানে আসছে। আর আজ চোখের সামনে পরীর নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। সেটা নিতাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।


– কৌশিক সবাইকে নিয়ে চলে যায়। অর্পিতা থাকতে চাইছিল কিন্তু অনিতা ওকেও দিয়ে পাঠায়। শুভ আর অনিতা শুধু রয়ে যায় পরীর পাশে।


– নিশুর বাবা-মা ও আসে। নুরজাহান তো এক কান্নায় আছে। ওর কান্না দেখলে কেউ স্থির থাকতে পারবেনা। নিজের মেয়ের মত আগলে রাখছে এতদিন পরীকে। নুরজাহান ও থেকে গেল। নিশু ওর বাবা মাকে নিয়ে বাসায় আসলো।



– নিশু ওয়াশরুমে এসে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে কান্না করতে লাগল। নিশুর শরীর থেকে পরীর রক্ত গুলো ধুয়ে ফ্লোরের পানি লাল হয়ে যাচ্ছে।


– নিশু গোসল শেষ করে এসে ইশিতাকে কল দিল। কারন অনেকবার ইশিতা এর মধ্য কল দিয়েছিল।

– জান,,,,,,,,,,, তোমায় কত্ত বার কল দিয়েছি। তুমি এমন কেন!

– ইশিতা পরীর কন্ডিশন খুবই খারাপ। নিশু সব কিছু খুলে বলল।
আচ্ছা ইশিতা পরীকে আমাদের সাথে রাখলে কি তোমার সমস্যা হবে!

– না জান,,,,,, আমার কোন সমস্যা নেই। পরীকে যদি ওর স্বামীর কাছে রাখা না যায় তাহলে ওকে আমাদের কাছেই রখব।


– এবার নিশু কেঁদে বলল ইশিতা জানো পরীর বর কে?


– না তো! কে ওর বর,,,,,, তুমি কি ওর বরকে চিনো?


– আমাদের ক্লাস মেড শুভ্র ওর বর। এবার বুঝছো পরী কতটা রিক্সে আছে।


– ইশিতা চমকে ওঠে নিশুর কথা শুনে। কিহ্ শুভ্র পরীর বর!


– আমি এমনি আমাদের কাছে রাখতে চাচ্ছি!


– শুভ্রর কাছে পরীকে আমরা রাখবনা একদম। আমি জানি শুভ্রটা কি জিনিস। পরী হয়ত চিনেনা ওকে।


– পরীর আর্তনাদ শুধু আমার কানে ভাসছে ইশিতা। আমি ঠিক থাকতে পারছিনা বলেই নিশু কল কেটে দিল। আর ফোন সাইলেন্ট মোডে রেখে পরীর ফোনটা অন করল।

আশ্চার্য পরীর একটা সিঙ্গেল পিক নেই। সব শুভ্রের সাথে পিক। না হয় বাসার কারো না কারো সাথে পিক উঠানো।

নিশু এটাও দেখল পরী সেলফি ওঠাচ্ছে আর শুভ্র ওর গালে কিস করছে না হয় ওকে বুকে নিয়ে আছে। কেউ কাউকে কতটা ভালবাসলে এধরনের সব পিক থাকে। কোন সিঙ্গেল পিক নাই। যতই পিক দেখছে ততই নিশু শিউরে উঠছে। পরী কে শুভ্র কতটা ভালবাসে। আর সেই শুভ্রের সাথে পরী এই কাজ করেছে। তার মানে শুভ্র ওর কি অবস্থা করবে। পরী নিজেও জানেনা ওর সাথে কি হতে চলছে।

শেষে নিশু পরীর একটা ভিডিও দেখল যেখানে পরী কান্না করতে করতে বলছে আমার এই বাচ্চা চাইনা শুভ্র। এই বাচ্চার জন্য আমি তোমার কাছ থেকে এত্ত দুরে।

নিশু কোন কিছুই বুঝতে পারছেনা। বিশাল জট আছে এর ভিতর।

নিশু এবার পরীর রুমে এসে দেখল রুমের রক্তগুলো জমাট বেঁধে কালো রং ধারন করেছে। এটা দেখে জলদি নিজের রুমে এসে নিশু নামাযে দাড়িয়ে যায়।

“”আল্লাহ্”” ছোট্ট একটা মেয়ে পরী,,,,, ওকে সুস্থ করে দাও। আমি ঠিকমত নামাযও পরিনা। কিন্তু আজ বড় বিপদে পরে তোমাকে ডাকছি হয়ত। তুমি পরীকে ঠিক করে দাও।



– শুভ্র পরীকে দেখছে অপলকে। হৃদয়ে ক্ষত যেন বেড়েই চলছে। শুভ্র ওর মেয়েকে একটি বারের জন্যও দেখেনি।
সবাই দেখেছে কিন্তু ও একবারও তাকায়নি ভুলেও। যার জন্য এত্ত কিছু তার মুখও শুভ্র দেখতে চায়না।



– বাসার সবাই দেখে যায় পরীকে। পরীর মেয়েটাকে সব সময় নুরজাহান পরিচর্যা করে। কারন একে নুরজাহান আগলে রেখেছে তাই ওর হক বেশি।



– শুভ্র রাতদিন হসপিটালে থাকে। পরীর কাছে কাছে একদম। শুভ্রর মনে হয় শুভ্র এখান থেকে চলে গেলেই পরী আবার হারিয়ে যাবে।



– ৭ দিন পর পরীর সেন্স আসে। প্রথমে নুরজাহান কে পাঠাইয়ে দেওয়া হল পরীর কাছে। নুরজাহান ওর মেয়েকে নিয়ে পরীর কাছে নিয়ে যেতেই পরী অন্য দিকে মুখ ফিরাল।


– পরী এটা তোমার মেয়ে আর তুমি মা হয়ে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?


– খালাম্মা ওকে আমার কাছ থেকে সরান এখুনি। আমি ওকে দেখতে চাইনা। ওকে দেখলে আমি ওকে হয়ত মেরেই ফেলব। সরান ওকে আমার কাছ থেকে বলেই পরী চিৎকার করে ওঠে।


– নুরজাহান বেশ ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চাকে নিয়ে বের হয়ে বলল আজব তো! বাবা মা ২ জনেই বাচ্চার মুখ দেখতেই চায়না। কথাটি শুনে অনিতা বলল কিছু মনে করেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে বলে বাবুকে কোলে তুলে নেয় অনিতা।

বাবুকে দেখার পর থেকে অনিতার মনে হয় বাবুটি দেখতে একদম মাধুরীর মত হয়েছে। সবকিছুর মধ্য মাধুরীর ছোয়া এসেছে। মাধুরীর শেষ কথা ছিল “আমি শুভ্রকে তোমার কাছে আমানত হিসেবে রেখেছি।”‘”

তার মানে মাধুরীর কি ২য় জন্ম হয়েছে? ( হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে)

এটা অনিল ও নোটিস করেছে অনিতাকে। অনিল বাবুটাকে মাধুরী বলে ডাকে। কি আজব সব কিছু।



– একে একে সবাই পরীকে দেখে যায়। বিমলা তো কান্না করে পরীর হাত ধরে। এই ছুড়ি আমাকে মাফ করে দিস। এমন কান্ড কেউ করে! কি এমন হল যে বাসা ছেড়ে বের হয়ে এলি?



কি বলবে পরী সময়টা মনে হচ্ছে ওর হাতের মুঠোয়। শুভ্রর কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। সবাই ওকে চায়। মেনে নিছে সব। কিন্তু শুভ্রকে দেখতে পাচ্ছেনা পরী। বাচ্চাটা ওর নয় বলে কি আমার মুখও দেখতে চায় না শুভ্র? শুভ্রকে চিরদিনের জন্য হারানোর ভয়টা ওকে পেয়ে বসে।

না না আমি আর শুভ্রকে ছাড়া থাকতে পারবনা। অনেক কষ্ট পেয়েছি ওকে হারানোর জন্য। ও রকম হাজার টা সন্তান আমি ত্যাগ করতে পারব শুভ্রের জন্য। আমি ওকে কিছুতেই ছাড়তে আর পারবনা।



– বউদি,,,,,, যানো আমি এখন কলেজে পড়ি?(অর্পিতা)


– অর্পিতার মুখে বউদি ডাক শুনে আমার মনে হয় কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল। এরা তাহলে শুভ্রর এই পরী নামক অস্তিত্ব টাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমার শুভ্রটা কই। ও কেন আসছেনা।


– বউদি তোমার রেজাল্ট বের হয়েছে ৩.২৮ পাইছো ফাষ্ট ইয়ারে। দাদা সেদিন তোমাকে খুব বকেছিল। তুমি নাকি পড়ই নি। কোনমতে ঠেলেঠুলে ফাষ্ট ক্লাস পাইছো বলে অর্পিতা হেঁসে উঠল।


– দেখ অর্পিতা! এই রেজাল্ট আমার কাছে অনেক। তোমার দাদার মত আমার এত্ত মেধা নাই যে টপে থাকব।


– বউদি তুমি কি রাগ করছো?


– না না তোমার উপর কেন রাগ করব! তোমার টপে থাকা দাদার উপর রাগ হয় মাঝে মাঝে বড্ড। আমাকে সবার মাঝে বেইজ্জতি না করলে তো তার একদমই চলে না।


– নিদ্রা আপুকে দেখে বললাম আপু তুমি প্রেগন্যান্ট!


– হুম ৫ মাস চলছে। কিন্তু আমার আগে তুমি তো এই পরিবারে বংশ ধর দিলে। এদিক থেকে তুমি আমার থেকেও অনেক বড়।


– বংশধর মাই ফুট। ওরে দেখলেই গলা টিপে মেরে ফেলতে মন চাচ্ছে,,,,,,, কথা গুলো মনে মনে বেশ ক্ষোভের সাথে বলে উঠলাম।



– নিতাই দাদু, বাবা,মা, খালাম্মা, নিশু ভাইয়া, আঙ্কেল আন্টি সবাই দেখে গেছে। শেষে পলা আন্টিও দেখে গেল কিন্তু শুভ্র! ও কেন আসছেনা। আমার এতটা কষ্ট হচ্ছিল যে ফিকরে কাঁদতে লাগলাম।



– একটা নার্স জলদি এসে বলল ম্যাম আপনার কি কোন ধরনে পেইন হচ্ছে! স্যার কে ডাকব?


– আমার বর শুভ্র কই বলেই উঠতে লাগলাম বেড থেকে।


– ম্যাম কি করছেন। সব শেষ করে দিবেন দেখছি। আপনার husband বাহিরে কথা বলছে,,,,,, যিনি আপনাকে এখানে নিয়ে আসছিল ওনার সাথে।


– নিশুর সাথে কথা বলছে হয়ত। শুভ্র তাহলে সব জেনে গেছে এতদিন আমি নিশুদের বাসায় ছিলাম।


– ম্যাম আপনার স্বামীকেই দেখলাম যে, আপনাকে এই কয়েকদিন চোখে হারা করে নি। আপনার বাচ্চা মারা গেছে একটা এটারও বাঁচার সম্ভবনা ছিলনা। আপনার স্বামী সরাসরি বলে দিল এই বাচ্চাটাকেও মেরে দিতে। শুধু আপনাকে চায়। অদ্ভুদ ভাল বাসা।


– আমি মনে মনে বললাম এটাও কেন বাঁচল। এটাও গেলে ভাল হত।


– জানেন আপনার বাঁচার আশা একদম ছিলনা। সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই মানুষটা এতটুকু আশা ছাড়েনি। সব সময় আপনার পাশে থেকেছে। শেষে ওনার কান্না দেখে আমরা সবাই বাধ্য হইছি কান্না করতে আপনার জন্য। এত্ত ভাল স্বামী কোন মেয়ে পায়! আপনি বড়ই ভাগ্যবতী একটা মেয়ে।



– দেখেন আমি জানি আমার বর আমায় কতটা ভালবাসে তাই লেকচার বন্ধ করে দয়া করে শুভ্রকে ডাকুন। তা না হলে আমি এখুনি এখান থেকে উঠব বলে কান্না করতে লাগলাম। আমার শুভ্রকে চাই বলে সালাইনের পাইপ একটানে খুলে ফেললাম।


– ম্যাম কি করছেন,,,,, আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে তো।


– আমার স্বামীর ভালবাসা দেখেছেন আমারটা দেখেননি বলেই এককেটা করে খুলতে লাগলাম শরীর থেকে। পাইপটা খোলার সাথে সাথে পরীর হাত থেকে চিরিক দিয়ে ছিটকে রক্ত বের হতে লাগল।

আমি বলছিনা শুভ্রকে আমার সামনে আনতে! আপনি কথা শুনছেন না কেন?


– পরীর চিৎকারে ডাক্তার ছুটে এসে দেখল পেসেন্ট চরম মাত্রায় পাগলামি করেই যাচ্ছে। এর পেসার খুবই লো তার ভিতর এগুলো শুরু করেছে লাইফ রিক্স হয়ে যাবে।


– শুভ্র কই,,,,, আমাকে হয় ওর কাছে নিয়ে যান না হয় ওকে নিয়ে আসুন বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল পরী।


– এমন সময় দরজার কাছে এসে শুভ্র দাড়াল। শুভ্রকে দরজার সামনে দেখতে পেয়ে পরী একদম স্বাভাবিক। কোন কথা না বলে শুভ্রকে দেখতে লাগল পরী।


– শুভ্র কাছে এসে বলল আপনারা যান বাঁকিটুকু আমি দেখছি।


– এত্ত জেদি বউকে যে কেমনে সামলান আপনি “”আল্লাহ্”” ভাল জানেন বলেই সবাই রুম থেকে চলে গেল।


– শুভ্র এসে অগোছালো বিছানার চাদর ঠিক করছে আর আমি চুপ করে ওকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম।

শুভ্র আমার কাছে পুরোটা একটা নেশার জিনিস। আমার পুরো শরীরে নেশা লেগে গেল শুভ্রকে দেখে। দাড়ি গুলো বড় হয়ে গেছে। অনেকটা উশকু খুশকোর মত লাগছে শুভ্রকে। চুল ঠিক নাই অগোছালো। তবুও জাষ্ট ওয়াও লাগছে। এ এক অন্য ধরনের ভাল লাগা।



– শুভ্র পরীর পাশে বসে পরীর কপালে অনেক টাইম নিয়ে একটা গভীর কিস করে। শুভ্রর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ল পরীর কপালে।



– আমি উন্মাদের মত শুভ্রের শার্টের বোতাম একটার পর একটা খুলতে লাগলাম। দেহ থেকে শার্টটা আলাদা করলাম,,,,,, এতে অবশ্যই শুভ্র একটু সাহার্য্য করল আমাকে। ও ভাল করেই জানে আমি কি করব এখন।

শুভ্রর ফর্সা উন্মুক্ত লোমে ভরা বুকে আমার মুখ ডুবিয়ে কয়েকটা দীর্ঘ কিস করলাম এবং আমার বুকের ভিতর জড়িয়ে নিলাম শুভ্রকে।

আমি পেয়েছি আমার অস্তিত্ব,,,, আমার ভালবাসা,,,,,,আমার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন,,,, আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন,,,,,আমার হার্ড,,,আমার জিবন বলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম শুভ্রকে। আর পাগলের মত কিস করতে লাগলাম ওকে।

শুভ্র! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা। আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে ছেড়ে এসে। আমাকে ক্ষমা করে দাও শুভ্র। আর কখনও এধরনের কাজ করবনা আমি বলেই কেঁদে উঠলাম।



– পরী! আমাকে ছাড়া যদি তোর একা থাকতে এতই কষ্ট হয় তাহলে ছেড়ে গেলি কেন এই শুভ্রকে….

আমাকে এত্ত কষ্ট দিলি কেন? তোর শারিরীক ও মানুষিক সমস্যা হচ্ছে আমার সাথে কেন শেয়ার করলি না।

তুই জানিস না তোকে ছাড়া শুভ্রের একদম চলে না বলেই পরীর পেটে সিজারিয়ান জায়গায় শুভ্র একটা খামচা দিয়ে ধরল।

কয়েকদিনের অপারেশন তাই শুভ্রের পুরো হাত রক্ত দিয়ে মেখে গেল।


– পরী ব্যাথায় কুকড়ে উঠল এবং ওর চোখমুখ নীল হয়ে গেল।


– পরী কষ্ট হচ্ছে তোর! এরকম কষ্ট প্রতিদিন আমি পেয়েছি। আমি শেষ হয়ে গেছি পরী। আমাকে শেষ করে ফেলছিস তুই। আমার আবেগ নিয়ে খেলা করেছিস তুই। এর শাস্তিতো তোকে ৩ গুন আমি শুভ্র ফিরে দিব। জাষ্ট ওয়েট এ্যান্ড সী বলে আরও জোড়ে চাপ দিল শুভ্র।


– আমার প্রচন্ড ব্যাথা করছিল। মনে হয় জিবন বের হয়ে যাবে বুঝি।

আমি প্রস্তুত শুভ্র তোমার সব শাস্তি সহ্য করতে। যত পারো আঘাত দাও তুমি আমাকে ধর্য্য শীলই পাবা বলে আমার ঠোট দিয়ে শুভ্রের ২ ঠোট আবদ্ধ করে ফেললাম আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম শুভ্রকে আমার বুকে।


– কিন্তু কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে পরী,,,,,,, চিনচিনে অসহ্য ব্যাথার চোটে একসময় সেন্সলেস হয়ে শুভ্রের বুকের উপর ঢলে পড়ে গেল পরী। আর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল শুভ্রর বুকে।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here