অস্তিত্বের খোজে part 28+29

0
620

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৮


– বাসায় এক প্রকার হট্টগল শুরু হয়ে গেল। কৌশিক শুভ্রকে পাজা কোলা করে নিয়ে বাহিরে প্রায় দৌড়ে নিয়ে গেল সাথে অনিতাও গেল।



– কৌশিক শুভ্রকে নিয়ে গাড়িতে উঠাতেই অনিল এসে গাড়িতে উঠে আর কারো জন্য অপেক্ষা না করে গাড়ি স্টার্ট দিল।



– কৌশিকের প্রাথমিক চিকিৎসা যা জানা ছিল সব প্রয়োগ করছে শুভ্রের উপর। শুভ্রর গা শুধু একবার ঝিকে উঠল। অনিতা নিশ্চুপ হয়ে গেছে। যাকে বলে অধিক শোকে পাথর।



– কাছের যে হসপিটাল ছিল সেখানে শুভ্রকে অ্যাডমিট করা হল। শুভ্রর অবস্থা খুবিই খারাপ। হার্ড অ্যাটাক সহ পেশার একদম নিচে নেমে গেছে। শুভ্রকে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়।



– কৌশিক দ্রুত আসলাম কে কল করে বলল শুভ্রর অবস্থা খুব খারাপ তুমি যেখানেই থাকনা কেন জলদি আসো বলেই লোকেশন বলল।



– বাসায় অর্পিতা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে দাদা দাদা বলে কেঁদেই চলছে। যে দৃশ্যটা দেখবে কারো চোখে পানি ধরে রাখতে পারবেনা। কেউ ওকে থামাতে পারছেনা।



– আসলাম জলদি এসে সোজা আইসিইউ রুমে ঢুকে যায়। চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখে আসলাম ক্ষেপে যায়।

আপনাদের এখানে যথেষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই কিন্তু পেসেন্ট কে আটকে রাখছেন কেন! ব্যবসা শুরু করেছেন আপনারা? আপনারা জানেন পেসেন্ট কে! আপনাদের ব্যবসা লাটে উঠাই দিবে ওর কিছু হলে। জাষ্ট একটা ফোনেই আপনাদের হসপিটাল আগামী কালের সূর্য অবদি দেখতে পাবেনা।



– ডাক্তারদের সাথে আসলামের বেশ কথাকাটি হয়। এক প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার অন্য প্রতিষ্ঠানে কথা বলার অধিকার নাই তবুুও আসলাম এক নাগাড়ে তর্ক করেই যাচ্ছে।

একপর্যায়ে আসলাম জোড় করে কৌশিকের সাহার্য্য নিয়ে শুভ্রকে আইসিইউ থেকে বের করে আরও অত্যাধুনিক হসপিটালে শিফর্ট করে।



– আসলাম রিক্স নিয়ে সব কাজ করে একাই। কারো কাছে শুভ্রের দায়িত্ব দেয়না। যদি কিছু হয়ে যায় এই ভয়ে। কিন্তু সাথে কয়েকজন অভিঙ্গ সিনিয়র ডাক্তার সব সময় রয়েছে।

শুভ্রের অবস্থা বেশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাচ্ছে। আসলাম আইসিইউ থেকে বের হতেই কৌশিক বলল ওর অবস্থা কেমন আসলাম?



– দাদা উপরওয়ালাকে ডাকুন। তিনিই একমাত্র ভরসা। শুভ্রর উপর দিয়ে এতটা স্ট্রজ গেছে যে মস্তিষ্কে রক্তখরন হচ্ছে। প্রার্থনা করুন দাদা।



– অনিতা কথাগুলো শুনে ওখানেই স্নেসলেস হয়ে যায়। একদিকে শুভ্র একদিকে অনিতা। অনিল কোন দিকে সামলাবে। ওখানেই অনিতার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই অনিতার ঙ্গান ফিরে আসে। অনিতা সেখান থেকে উঠে দৌড়ে আইসিইউ রুমের সামনে গিয়ে দেখে শুভ্র নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। অক্সিজেন মার্কস পড়া।



– ভগবান আমার ছেলেটাকে ভিক্ষা দাও আমার কাছে। আমি কিছু চাইনা শুভ্রটাকে ভাল করে দাও শুধু। আমার শুভ্রকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। অনিতার বুক ধরফড় করছে এই বুঝি খারাপ খবর আসে।



– কৌশিক এসে অনিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা চুপ কর এটা হসপিটাল।



– তোর জন্য সব হয়েছে। তোকে আমি কখনও ক্ষমা করবনা কৌশিক বলে অনিতা ডুকড়ে কেঁদে উঠল।


– কৌশিকও অনিতাকে জড়িয়েই কান্না করে দেয়।



অনিল বার বার মনে মনে প্রার্থনা করছে মাধুরীকে কেড়ে নিছ আমার জিবন থেকে প্রভূ দয়া করে শুভ্রকে নিওনা। ওটা মাধুরীর সব থেকে বড় উপহার আমার জন্য। এই বয়সে আমাকে এতবড় কষ্ট দিও না।




– মাঝ রাতে পরীর খুব অসস্তি হচ্ছিল ঘুমের মধ্য। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। বুকের ভিতর ধকধক করে ওঠে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।



– নুরজাহান ঘুমাচ্ছিল। পরী উঠে পানি খেতে যায় কিন্তু গায়ে কোন শক্তি কাজ করেনা। হাত থেকে গ্লাস পড়ে যায়।


– গ্লাস পড়ে যাওয়ার শব্দে নুরজাহানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
পরী! কি হয়েছে মা?



– পরী কোন কথা বলতে পারছেনা শরীরের কন্ডিশন খারাপ হতে লাগছে। শুধু হাঁপিয়েই যাচ্ছে।
নুরজাহান জলদি উঠে পরীকে চৌকিতে বসিয়ে
দিয়ে বলল কি হইছে মা ওমন করছো কেন?



– অনেক কষ্টে পরী বলল,,,,,,খালাম্মা আমাকে আমার ফোনটা একটু এনে দিন জলদি। আমার মন বলছে শুভ্র ভাল নেই।



– নুরজাহান ফোনটা এনে দিতেই পরী ফোনটা অন করে পাগলের মত শুভ্রকে কল দিতে থাকে।
কিন্তু সিমের টাকার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে কল দিতে পারল না। নতুন করে টাকা না উঠানো অবদি কল দেওয়া যাবেনা।



– খালাম্মা আমার শুভ্র ভাল নেই বলেই কেঁদে উঠল পরী।
আমাকে একটু কলের পাড়ে নিয়ে যান। আমি একটু অযু করব।


– নুরজাহান অনেকটা অবাক হয়ে যায়। তারপর পরীকে ধরে কলের পাড় থেকে অযু করে নিয়ে আসে।



– জায়নামায বিছিয়ে পরী অনেক কষ্টে বসে গেল নামাযে। শুভ্রের নিয়তে সালাতুল হাজত নামায পরে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে। তারপর ২ হাত তুলে কান্না করতে করতে বলে,,,,,,

“”””আল্লাহ্”””” আপনার হেফাযতে শুভ্রকে রেখে আসছি। ওর সমস্ত বিপদ আপদ দুর করে দাও “”আল্লাহ্””।

“”আল্লাহ্”” আমি অনেক কষ্টে এই গর্ভবতী অবস্থায় এত্ত রাতে তোমার দরবারে হাত উঠাইছি। আমার দোয়া কবুল কর প্রভু। আমার শুভ্রকে ভাল রেখ।
আমার এই কষ্টের প্রতিদান দাও প্রভু। আমার অস্তিত্ব টাকে আপনার কাছে আমানত হিসেবে রেখেছি। আপনি কখনও আমানতের খেয়ানত করেন না…… আমাকে সঠিক সময়ে আরও উত্তম রুপে শুভ্রকে আমার কাছে ফিরে দিও প্রভু।
ওকে ভাল রেখ প্রভু। আমার কাছ থেকে ওকে যেন কেড়ে নিও না “””আল্লাহ্”””

পুরোটা রাত অনেক কষ্টে জায়নামাযে কাটালো পরী। পায়ে পানি জমে গেছে তবুও জায়নামায থেকে উঠতে নাছোড় বান্দা পরী।
মেয়েটার কান্না থামছেনা।
নুরজাহান ও জেগে রইল বাঁকি রাতটুকু। এত্ত ভালবাসে মেয়েটা তবুও ভাগ্য পরিক্রমায় আলাদা ২জনে। পরীর কান্না দেখে নুরজাহানের ও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।



– এটা পরীক্ষিত যে যার প্রতি সবচেয়ে বেশি টান থাকে আর সে যদি পৃথিবীর অপর প্রান্তে বিপদের সম্মুখীন হয় তাহলে বিপরীত মানুষটি টের পাবেই। যেটা পরীর ক্ষেত্রেও ঘটেছে।




– সকালের দিকে শুভ্রর সেন্স ফিরে…… কিন্তু কথা বলতে পারেনা।
শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছিল শুভ্রর।
স্বাভাবিক হতে আরও টাইম লাগবে।



– সবাই এসে শুভ্রকে দেখে গেছে শুধু অনিতা শুভ্রের পাশে বসে আছে। অনিতা ২৮ বছর আগের কথায় ফিরে যায়। কৌশিকের বয়স তখন ৫ বছর ছিল। বাসায় কাজ করছিল অনিতা এমন সময় অনিল বাসায় আসে। কিন্তু তার কিছুক্ষন পরে একটা মেয়ে এসে সবার সামনে অনিল কে জড়িয়ে ধরে। সবাইতো হতবাক হয়ে যায়।

মেয়েটার নাম মাধুরী। অত্যন্ত সুন্দরী,স্মার্ট,
আধুনিক রুচিশীল একটা মেয়ে। মাধুরী নিউয়র্ক কে থাকে। পিএসডি ডিগ্রীধারী একজন মেডিসিন স্পেশালিষ্ট। অল্পবয়সে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক নাম করেছে।

অনিলের সাথে পড়াশুনা করেছে একসাথে। কিন্তু মাঝপথে অনিল সব ছেড়ে বাবার কথায় অনিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। মাধুরীর সাথে অনিলের ৫ বছরের রিলেশন ছিল।
অনিতাকে বিয়ে করার পর অনিল মাধুরীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কারন ২ নৌকায় পা দিয়ে সে চলতে পারবেনা। মাধুরী এই ৬ বছর ধরে বাংলাদেশে ৪ বার আসে অনিলকে খুজতে। কিন্তু ব্যার্থ হয়ে ফিরে গেছে। এবারও আবার আসে। ভাগ্যর মিল থাকায় মাধুরী রাস্তায় অনিলকে দেখে ওর পিছু নেই।

অনিতা এসে মাধুরীকে অনিল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল এই মেয়ে আমার স্বামীকে কেন ধরেছো!


– অনিল তুমি বিয়ে করেছো!(মাধুরী)


– শুধু বিয়ে করেনি ওর একটা ৫ বছরের বাচ্চাও আছে। (বিমলা)


– মাধুরী প্রচন্ড কষ্ট পায়। ৯ বছরের জমানো ভালবাসা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যায়।
তবুও নিজেকে সামলিয়ে অনিলের হাত ধরে বলল এত্ত দিনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারেনা। আর তুমি আমাকে রেখে কেমনে আর একটা বিয়ে করতে পারলে! তুমিতো এমন না,,,,, তাহলে কেন কাজটা করলে। আধা বাংলা আধা ইংরেজী ভাষায় কথা গুলো বলে উঠল মাধুরী।



– নিতাই সেন মাধুরীর সামনে এসে বলে কি বলছো তুমি! আমার ছেলে বিবাহিত। ৬ বছর আগে বিয়ে করেছে।


– আপনিতো অনিলের বাবা তাইনা!


– হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কে?


– অনিলকে না হয় বলুন আমি কে!


– ও মাধুরী,,,,,,, কিন্তু ও যা প্লান করছে সেটা আমি বেঁচে থাকতে সফল হতে দিবনা।( বিমলা)



– বাবা মাধুরী আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমি দেশে আসার ১ সপ্তাহ আগে ওকে বিয়ে করেছিলাম বলে অনিল চুপ করে যায়।



– অনিতার মাথায় বাজ পড়ল কথাটি শুনে। এটা কি বলছে অনিল। এতদিনে অনিলের আচরন দেখে কখনও অনিতা বুঝতে পারেনি। অনিল অত্যন্ত মাধুর্যতার সাথে সংসার জিবনের সব দায়িত্ব পালন করেছে।



অনিতা ভাল করে মাধুরীকে খুটে খুটে দেখে। অনিতা ইন্টার পাশ করা একটা মেয়ে । মাধুরীর নখের যোগ্যতার সমানও অনিতার মূল্য নাই কোন দিকেই। অনিতার ভয় হয় অনিলকে মাধুরী না জানি কেড়ে নিয়ে যায়।



– বাসায় সেদিন অনেক কথাকাটি হয় অনিলের সাথে নিতাইয়ের। কিন্তু মাধুরী আর একটাও কথা বলেনা। অত্যন্ত ভদ্র মার্জিত একটা মেয়ে মাধুরী।



– তোর যখন বিয়ে হয়েছে তাহলে ২ টা মেয়ের জিবন কেন নষ্ট করেছিস?( নিতাই)



– এবার বিমলা মুখ খোলে। ওর কোন দোষ নেই। ও আমাকে সব কথা খুলে বলেছিল। আমি মেনে নেইনি।
অনিলকে আমি বাধ্য করি অনিতাকে বিয়ে করার জন্য। কারন অতি শিক্ষিত তাও আবার বিলাতী মেয়ে তাই আমার পছন্দ হয়নি। আমার সংসারী বউ দরকার ছিল।

অনিলের বার বার অনুরোধ সেদিন বিমলার হৃদয়ে নাড়া দেয়নি। হয় মা না হয় মাধুরী।
অনিল মাধুরীকে বাদ দিয়ে মা কে বেছে নেয়। কারন অনিল একটাই সন্তান তাদের ছিল।



– তুমি কতবড় ভুল করেছো বুঝতে পারছো! ( নিতাই)



– ভুল করছি কি জানিনা কিন্তু আমার জিবন থাকতেও ওকে মেনে নিবনা। বিদেশি মেয়েদের কোন জাত-পাত নেই।(বিমলা)


– আর তোমার ছেলের বুঝি জাত-পাতের ড্রিগী ধারী!(নিতাই)


– অনেক কথাকাটি হয়। অনিতা তো কেঁদেই যাচ্ছে। কোন দিন অনিলের আচড়নে এটা প্রমান পায়নি যে তার জিবনে আরও একটা নারী আছে। তাহলে অনিল কতটা কষ্টে আছে।



– এবার মাধুরী সরাসরি অনিতার পা ধরে বলে ৬ টা বছর ধরে ওকে পাগলের মত খুজেছি। আজ পেয়েছি,,,,,, আমি অনিলকে খুব ভাল করে চিনি পরিবারের কথা ছাড়া ও কিছু করবেনা। আমার একটা অনিলের অস্তিত্ব চাই যেটা নিয়ে সারা জিবন চলতে পারি এই টুকু আমাকে দাও প্লিজ।



– কিন্তু সেদিন মাধুরীর কান্না কারো মন গলাতে পারেনি। এক পর্যায় মাধুরী চলে যায় বাসা ছেড়ে।



– সেদিন রুমের ভিতর অনিল বাচ্চাদের মত কেঁদেছিল। অনিতা সেটা দেখে খুবই কষ্ট পায়। যে মানুষ তাকে একদিনও সরে অবদি বসতে বলেনি সে এতটা কষ্টে এতদিন কাটিয়েছে।


– অনিল! মাধুরীর সম্পর্কে বলবে একটু আমায়?(অনিতা)


– অনিল বলতে শুরু করে,,,,,, অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে মাধুরী। ৫ বাবা-কাকার মধ্য পুরো বংশে এই একটিই মেয়ে। কতটা আদরের মেয়ে। ওর বাবা-কাকারা সবাই আমেরিকায় বসবাস করে অনেক আগে থেকেই। ওখানেই মাধুরীর জন্ম। ঠিক মত বাংলা কথাও বলতে পারেনা। ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা ভাষা বলতে পারে।

মাধুরীর সৌন্দর্য আভিজাত্য উচ্চশীল পর্যায়ে কোন জিনিসের কমতি নেই। সে কেন যে অনিলকে ভালবেসে ফেলছে সেটাই অনিলের মাথায় আসে না। সবসময় টপে ওর রেজাল্ট হত। অত্যান্ত মেধা সম্পূর্ন একটা মেয়ে। পড়ালেখার সুবাদে অনিলের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ও ডাক্তার পেশায় এখন। হয়ত এক দেড় মাসের জন্য বাংলাদেশে আসছে অনিলকে খুজতে। কারন মাধুরী অত্যন্ত বিজি থাকে।
ওর হাতে বেশি সময় নেই অনিতা…… হয়ত খুব জলদি সে চলে যাবে।



– অনিতা আবিভূত হয়ে যায় এত্ত উচ্চ পর্যায়ের একটা মেয়ে সে কিনা অনিতার পা ধরে অবদি কান্না করল। একটা মেয়ে কতটা গুনসম্মত্ব হলে তার এমন চরিত্র হয়।



– বাসার সবার অমতে অনিলকে মাধুরীর হাতে তুলে দেয় অনিতা। তবে খুব কঠিন শর্ত দেয় মাধুরীকে, ও কনসিভ্ করার সাথে সাথে সবার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। এবং বাংলাদেশে কোনদিন আসতে পারবেনা।
সেবার বেশ কিছুদিন মাধুরী বাংলাদেশে সময় কাটায় অনিলের সাথে।


“বলতে গেলে মাধুরী অনিতার সংসার ভাঙ্গেনি বরং মাধুরীকেই অনিতার জন্য সব ছাড়তে হয়। যেহেতু মাধুরী প্রথম স্ত্রী তাই ওর হকটাই আগে ছিল। কিন্তু মাধুরী বুঝেছিল বাঙ্গালী নারী স্বামী ছাড়া কতটা অসহায় তাই অনিতাকে সব কিছু দিয়ে চলে যায়।


মাধুরী ওর কথাও রাখে কনসিভ্ করার সাথে সাথে অনিল কে না জানিয়ে আমেরিকায় চলে যায়।


– মাধুরীর এই পাগলামিটা ওর পরিবারের সবাই মেনে নেয়। কারন মাধুরী ছিল সবার আদরের। কিন্তু মেয়েটা সুখ পায়না। বাচ্চা ডেলিভারি হওয়ার পর ৩ দিন বেঁচে ছিল। অত্যাধিক রক্তক্ষরণে মেয়েটা দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।



– মাধুরীর শেষ ইচ্ছা ছিল শুভ্রকে যেন ওর বাবার কাছে দিয়ে আসা হয়। তাই দেড় মাস পর শুভ্রকে ওর নানা আর নানী মিলে বাংলাদেশে এসে তাদের কলিজার টুকরার শেষ অস্তিত্ব অনিলের কোলে দেয়।



– মাধুরীর বাবা অর্নব মুখার্জী অনিতার হাত ধরে বলে আমি জানি না মাধুরী শুভ্রর দায়িত্ব তোমাদের কেন দিল। আমাদের থেকে হয়ত তোমাদের বিশ্বাস করে। তাই তোমাদের দিয়ে গেলাম ওর খেয়াল রেখ মা। একটি চিঠি অনিতার হাতে দিয়ে চলে যায় ওরা।



– সেদিন ছোট্ট শুভ্রকে বুকে নিয়ে অনিলের আর্তচিৎকার চার দেয়ালে ভেদ করে বের হয়ে সবার কানে ধাক্কা দিয়েছিল। ১ মাস ধরে কারো সাথে কোন রকম কথা বলেনি। বাসায় এসে শুভ্রকে নিয়ে থাকত বেশিভাগ। শেষ দেখাটাও মাধুরীকে দেখতে পারেনি অনিল।



– প্রিয় অনিতা
আমি বুঝতে পারছি আমার সময় বেশি নেই। আমি নিজেও একজন ডাক্তার তাই সবাই যত সান্তনা দেকনা কেন আমি সব বুঝতে পারি। আমাকে যদি গড একবার সুযোগ দিত তাহলে আমার শুভ্রটাকে কখনও নিজের কাছ ছাড়া হতে দিতাম না। আমার ছেলেটাকে তোমার কাছে আমানত হিসাবে রাখলাম। ওর খেয়াল নিও। আমি শুভ্রকে শুধু অনিলের জন্য তোমার কাছে দিলাম। আমি ছাড়া এতদিন অনিল কতটা কষ্টে কাটিয়েছে সেটা তুমি অনিতা না বুঝতে পারলেও আমি মাধুরী ঠিক জানতাম। তাই বাঁকি জিবনটা যেন অনিল না কষ্ট পায় তাই আমার কলিজার টুকরাকে তোমার হাতে দিলাম। ওকে কষ্ট দিও না এটা আমার অনুরোধ রইল তোমার কাছে। আমি তোমার সুখের জন্য নিজের স্বামীকে ছেড়েছি তার বিনিময়ে না হয় শুভ্রকে নিজের সন্তানের মত লালন পালন কর। শুভ্রর উচ্চামাধ্যমিক পরীক্ষার পর আমার বাবার কাছে পাঠিয়ে দিও। তাদেরও হক আছে। আমি সব ব্যবস্হা করে রাখছি আগে থেকেই।
বাংলা ইংরেজী মিশ্রিত চিঠিটি ছিল। অনিতার নিজের কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছিল চিঠিটা পরে।



– এ যাবত শুভ্রের পিছে যত টাকা খরচ হয়েছে সমস্ত মাধুরীর টাকা। শুভ্রের জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল। জিবনের যত উর্পাজন করেছে মাধুরী সব শুভ্রের নামে। শুভ্র বসে থেকে খেলেও ফুরাবেনা। এ বাসা থেকে শুভ্রের জন্য এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। শুভ্র দেশের বাহিরে থেকে পড়াশুনা করেছে ওর নানুর বাসা থেকে। কিন্তু কোন দিন শুভ্রকে বুঝতে দেয়নি ওরা
ওটাই ছিল ওর আপন নীড়। যেখানে তার নিজের মায়ের অস্তিত্ব রয়েছে। কারন শর্তের বিনিময়ে ওখানে শুভ্রকে পাঠিয়েছিল অনিতা। শুভ্র যেন কিছু না জানে।



– অনিতা কয়েকদিন শুভ্রের পাশে আসে নি কিন্তু শুভ্রের প্রচন্ড কান্নায় ওকে আসতে বাধ্য করে। সেই থেকে অনিতা শুভ্রকে বুকে আগলে মানুষ করেছে। অনিলের তেমন ভালবাসা না জুটলেও অনিতার অসীম ভালবাসায় শুভ্র পরিপূর্ন।



– অনিল শুভ্রের কাছে যেতনা একদম। কৌশিক আর অর্পিতাকে সব থেকে বেশি ভালবাসা দিয়েছে যাতে অনিতার ভালবাসার কমতি শুভ্রের উপর না পরে। অনিতা যেন রাগ না করে শুভ্রের উপর খারাপ আচরন না করে।



– অনিতাকে অনেকে জিঙ্গাসা করেছে……
তোমার শুভ্রের চেহারাটা বাবার সাথে কিছুটা মিল থাকলেও তোমার সাথে মিল নেই কেন!
– এই কথার জবাব দিতে পারেনি অনিতা।



– শুভ্র ওর মায়ের মত সম্পূর্ন হয়েছে। গায়ের রং, মেধা, মাধুর্য, শিক্ষা, রুচিশীল ভদ্রতা সব দিকে মায়ের ডুবলিকেট। মাধুরীর যেন অপর পিঠ। কিন্তু শুভ্র কোনদিন জানতেই পারেনি মাধুরী নামে তার একটা মা আছে। যে শুভ্রটাকে পৃথিবীতে আনতে নিজের জিবন বিসর্জন দিয়েছে। এই হল মাধুরী নামের অস্তিত্বের কাহিনী।



– অনিতা কোনদিন জানতেও দেয়নি শুভ্রকে। কেউ যেন কেড়ে নিয়ে যেতে না পারে অনিতার কাছ থেকে শুভ্রকে। কিন্তু নিজের ছেলে কৌশিকই কাল হয়ে দাড়াল অনিতার জিবনে।



– অনিলের কর্মফল শুভ্রের উপর পড়েছে। মাধুরী কনসিভ্ করার পর বাধ্য হয়ে অনেক কষ্টে দেশ ছেলে চলে যায়। যে সময়টা স্বামীর সার্পোট একটা মেয়ের জন্য সব থেকে বেশি দরকার হয়। কিন্তু শেষ দেখাটাও মাধুরী পায়নি অনিলের। ঠিক বিপরীত পরীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। পরীও কনসিভ্ করার পর শুভ্রকে ছেড়ে যায় এক বুক কষ্ট নিয়ে। সেটা জেনেই হোক না জেনেই হোক। এই সময়টা শুভ্রের খুব দরকার ছিল পরীর কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধ সেটা হতে দেয়নি। পিতার কর্ম ফল সন্তানের উপর পড়েছে সেটা অনিল ঠিকি বুঝতে পেরেছে।



– আরও ৩ দিন পর শুভ্রকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। শুভ্র একদম শুকিয়ে গেছে। বড় বড় চুল গুলো কেটে একদম ছোট করা হয়েছে।সাদা ফর্সা গালগুলোতে ক্লান্তির ছাপ পড়ে গেছে। চোখের নিচে ব্লাক স্পর্ট পড়েছে। এই অবস্থায় পরী শুভ্রকে দেখলে হয়ত ও শেষ হয়ে যেত।



– কৌশিকদের বিদেশে যাওয়ার টিকেট টা ক্যানসেল করে দিতে বাধ্য হয় শুভ্রর এই অবস্থা বলে।
কৌশিক খুবই অনুতপ্ত। ছোট বেলায় শুভ্রকে অনেক মারত তবুও শুভ্রর তার কৌশিক দাদা কেই চাই। নিজের ভাইও কখনও এমন হবেনা। শুভ্র কোন দিন কৌশিকের মুখের উপর একটা কথাও বলেনি।
হোক না অন্য ধর্মের তবুও ভালবাসার অস্তিত্বকে অস্বিকার করা যাবেনা। এই কথাটি কৌশিকের বুকে ধাক্কা দেয় বার বার।



– অনিতা শুভ্রের বিছানাটা ঠিক করে ওখানে শুভ্র কে বসিয়ে দিয়ে চলে যায় কিছু খাবার আনতে।


শুভ্রের রুমে সবাই বসে শুভ্রকে দেখছে। এটা শুভ্রের জন্য খুবই বিব্রত লাগছে।
শেষে শুভ্র বলে উঠল কি ব্যাপার! আমি কি জন্তু জানোয়ার যে আমাকে এভাবে দেখছো তোমরা! আমাকে কি কখনও তোমরা দেখনি?


– দাদা আমরা তোকে দেখছি সেটা তোকে কে বলল আমরা তো আমাদের প্রিয় অস্তিত্ব কে দেখছি।(অর্পিতা)


– এবার শুভ্র বলে উঠল তাহলে সবাই এখানে লাইন ধর তোদেরও তোহ আমাকে তাহলে দেখতে হবে। কারন তোরা সবাই আমার প্রিয় অস্তিত্ব।


– শুভ্রের কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠল। অনেক কথা হয়েছে অনিতা খাবার নিয়ে এসে বলল।
শুভ্রকে এখন একা থাকতে দাও।


– সবাই চলে গেলে অনিতা শুভ্রের কাছে এসে বসে ওকে সুপ খাইয়ে দেয়। আর শুভ্র চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। মায়ের সব কিছু শুভ্রের খুব প্রিয়।


– শুভ্র!

” হুম,,,,,,, বলো মা!


– তোর নিজের মাকে দেখতে ইচ্ছা করে না? খুব কষ্ট নিয়ে কথাটি বলে ওঠে অনিতা।


– শুভ্র কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে ওঠে মা! মানুষের কয়টা মা থাকে বলতো?
আমিতো জানি একটা মা থাকে। আমার ও মা আমার কাছে বসিয়ে এখন আমাকে খাবার খাওয়াচ্ছে। আমার এই মা টাকেই আমি বড্ড ভালবাসি মা!


– অনিতার যেন বুকে প্রান ফিরে এলো। ও জানে শুভ্র এমনটাই বলবে তবুও মন মানছিলনা বলে শুভ্রকে কথাটা বলেই ফেলল।


– কৌশিক বাহির থেকে সব শুনছিল। এই ভাইকে ও এতটা কষ্ট দিছে! কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছিল কৌশিকের।


– কৌশিক শুভ্রের পাশে এসে বসে পড়ল।
এখন কেমন লাগছে তোর শুভ্র!


– শুভ্র মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল,,,, ভাল দাদা।


– আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই বলে কৌশিক শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।


– দাদা! অর্পিতার মুখে শুনলাম তুই নাকি আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলি। আমাকে তুললি কেমনে। তোর শক্তির তারিফ করতে হয় দাদা।


– শুভ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় কৌশিক। এই অবস্থায় এধরনের কথা একমাত্র শুভ্রের দাড়ায় সম্ভব।

কৌশিক শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে বলল ছোট বেলায় যেমন করে কোলে নিতাম তেমন করে।


– মাফ করেছিস আমাকে শুভ্র!


– শুভ্র কৌশিকের হাত কাছে এনে বলল দাদা তোর হাতে কিস করি!
বউ নাই তো তোকে কিস করে মনের সখ মেটাই।


– শুভ্রের কথা শুনে কৌশিক শব্দ করে হেঁসে উঠল। কৌশিক শুভ্রকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল তোর পাগলামি কথা গুলো এখনও গেল না।


– আহ্ কৌশিক ওকে ধাক্কা দিচ্ছিস কেন….. ওর লাগবে তো! ( অনিতা)

– শুভ্র তোর যদি কিছু হত তাহলে মা আমাকেই আগে পাঠার মত বলি দিত।

– শুভ্র শুধু ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

চলবে——

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৯



– পরী শুভ্রকে অনেক বার কল দেয় কিন্তু নাম্বার বন্ধ পায়। হয়ত “”আল্লাহ্”” ওর ভাগ্যেতে আরও অনেক কিছু লিখে রেখেছে । “””আল্লাহ্”””ভাল জানেন।

শুভ্রকে আর ফোন না দিয়ে আবার বন্ধ করে রেখে দেয়। আর কোন যোগাযোগ করে নি পরী।




– অনিতা শুভ্রের কাছে সব সময় থাকে। কারন পরীর জন্য শুভ্র এখনও দুশ্চিন্তায় থাকে সবসময়। মুখের হাঁসি টুকু ওর মধ্য দেখা যায় না।



– শীতের কুয়াশার চাদর পড়তে শুরু করে দিছে চারদিকে। অনিতা রাতেও শুভ্রর কাছে থাকে। শুভ্র সোফায় থাকে আর ওর মাকে বেডে রাখে। কারন অনিতা একমুহুত্ব শুভ্রকে কাছ ছাড়া করতে চায়না।



– এর কিছুদিন পর নিদ্রা কনসিভ্ করে। বাসার সবাই অত্যন্ত খুশি হয়। শুভ্রও খুব খুশি হয় কিন্তু পরীর কথা বার বার চিন্তা করে। এই সময় কি করছে না করছে এই সব নিয়ে।




– মা! আমি কি ছোট বাচ্চা যে তুমি আমাকে সব সময় পাহারা দাও?(শুভ্র)



– তুই আবার কবে বড় হলি শুভ্র! (অনিতা)


– কি বল! এত্ত বড় হয়ে গেলাম তাও তুমি ছোট বলছো?


– আমার কাছে তুই সবসময় ছোট।


– মা আমি সিরিয়াস! দেখ বাবা একা থাকে। বাবার তো সমস্যা হবে। এই বয়সে সঙ্গী ছাড়া থাকা অনেক কষ্টের মা। তাছাড়া শীত পড়ে গেছে কত কি দরকার পড়বে বাবার,,,,,,, আর তুমি আমাকে সবসময় পাহারা দিতে ব্যাস্ত ।


– তোর সমস্যা কি রে! আমি তোর কাছে থাকলে প্রবলেম টা তোর কি?


– আমার কোন প্রবলেম নেই। আমার বাবার জন্য চিন্তা হয় মা!
তাছাড়া বৌদির এই সময়ে তোমাকে খুব প্রয়োজন।


– পরীরও তোহ্ এই সময় আমাকে দরকার ছিল কিন্তু থাকতে পারছিনা। নিদ্রাকে দেখার অনেকে আছে কিন্তু পরী কোন অবস্থায় আছে আমরা কেউ জানিনা। তাই লেকচার দেওয়া বন্ধ কর।


– কথাটা শুভ্রর কলিজাতে আঘাত করল। কিন্তু কিছু না বলে শুধু বলল ওকে,,,,, বাবা কেও আমাদের সাথে রেখ। সাথে অর্পিতাকে ও নিয়ে আসো। পরিবার কমপ্লিট হবে তাহলে।


– অনিতারও খুব কষ্ট হয় এই অবস্থায় অনিলকে একা রাখতে। কিন্তু শুভ্রের কথা ভেবে কষ্টের সাথে কোন আপোস না করে অনিতা এখানেই আছে। যেটা শুভ্র বেশ বুঝতে পারে। শুভ্রের মায়ের কাছে থাকতে প্রচন্ড ভাল লাগে কিন্তু অবস্থার বেগতি দেখে কথা গুলো বলতে বাধ্য হয়।


– অনিতা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন সময় শুভ্র এসে ঝট করে ওর মাকে কোলে নিয়ে ওর বাবার রুমের দিকে পা বাড়াল।


– শুভ্র ছাড় বলছি আমাকে। সবাই দেখে কি ভাববে বল,,,,, এই বয়সে ছেলের কোলে উঠে বসে আছে।


– ছাড়ব তবে এখানে নয় বাবার রুমে নিয়ে গিয়ে বলেই শুভ্র চলতে লাগল।


– বাসার সবাই দেখে তো সেই হাঁসি। নিদ্রা একটু জোড়েই বলে উঠল শুভ্র তোমার মত যদি আমার একটা সন্তান হত তাহলে খুব খুশি হতাম। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কোলে চড়তে পারতাম।


– চিন্তা করনা বউদি,,,,,, দাদার এন্ট্রিতে তোমার কাছে আমার থেকেও উত্তম একজন আ,,,,সি,,,,তে,,,,,ছে বলেই শব্দ করে হেঁসে উঠল শুভ্র।


– শুভ্র কতদিন পর হাসল যেটা দেখে অনিতার চোখে জল এসে গেল।

-শুভ্র ওর বাবার রুমে গিয়ে অনিতাকে নেমে দিয়ে অনিল কে বলল,,,,, বাবা! মাকে যদি আমার রুমে দেখি তাহলে আগে তোমার খবর আছে। নিজে জিনিস নিজে সামলাতে পারোনা!

আমার ঘাড়ে কেন চাপাও বলে রুম থেকে বের হয়ে আসল শুভ্র।



– অনিল হেঁসে বলল শুভ্র ছেলে হয়ে বুঝল তোমাকে আমার কতটা প্রয়োজন আর তুমি বউ হয়ে বুঝলানা অনিতা!


– অনিল! শুভ্রকে নিয়ে আমার খুব ভয় হয়। ওর আক্রোশ পরীর উপর দিন দিন বেড়েই চলছে। মনে হচ্ছে পরীর সাথে যেন ওর দেখা না হলেই ভাল হবে। এই আক্রোশ টা ১০ বছর আগে দেখছিলাম। জানিনা ভবিষ্যতে কি হয়।


– অনিল অনিতার কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেল। কারন অনিতার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে পরীর জন্য রিক্স হয়ে দাড়াবে শুভ্র।
কি সব হচ্ছে ভেবেই অনিলের গা শিউরে ওঠে।




– শুভ্র রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। আর দেরি না করে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। একের পর এক পরীর ছবি গুলো দেখতে লাগল। পরী চলে যাওয়ার আগের রাতের কথার সব ভিডিও করে রেখেছিল। শুভ্র কি জানত এটাই ওর সাথে শেষ কথা হবে! শুভ্রর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে কথা গুলো ভেবে। অনেক ভিডিও করে রেখেছে শুভ্র, পরীর অজান্তে।
পরী! কেন বুঝতে পারলে না তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। আমি তোমাকে কতটা চাই।

পরীর সাথে যেদিন প্রথম শারিরীক সম্পর্ক হয়েছিল সেটার ভিডিও টা বের করল শুভ্র।
এবার শুভ্রর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। পরীকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিল এই ভিডিও টা দেখিয়ে কিন্তু পরীই ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে চলে গেল। শুভ্র ভিডিও গুলো দেখছিল আর একের পর এক সিগারেট টানতে লাগে। অনিতা থাকার জন্য কিছু করতে পারেনি কটা দিন। তাই মনে হয় আজ পাগল হয়ে যাচ্ছে। পুরো রুম সিগারেটের ধুয়াই সাদা হয়ে গেল কিছুক্ষনের মধ্য।

শুভ্র উঠে গিয়ে বেলকোনির থাইটা খুলে দিল যাতে সব ধোয়া বের হয়ে যায়। কারন ওর মা যদি এসে দেখে সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ তাহলে খবর আছে। তাই রুমে ঝট ঝট করে সব কোনায় রুমস্প্রে করল। হুম এখন সব ঠিক বলে একটা নিস্বাস নিল প্রান ভরে। মায়ের জন্য ব্যাপক ভয় তার।



– পরী অন্ধকার রুমে একা একা সুয়ে আছে। রাত ১০ টা বেজে গেছে তবুও নুরজাহান আসছেনা। এমনতো কখনও হয়না। কোন বিপদ হলনাতো!



– এমন সময় দরজায় নক পড়ল।
কে?


– কোন জবাব এল না।


– এবার আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। খালাম্মা হলে তো কথা বলত কিন্তু এত্ত বার বলছি কে তাও কোন জবাব আসছেনা।


– খটখট শব্দ বেড়েই গেল আর আমার ভয় বেড়ে যেতে লাগল। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমার আর বুঝতে বাঁকি রইল না এটা কে ছিল। বজ্জাত লফির এটা।

কয়েক দিন আগে দোকানে ফ্লাক্সি দিতে গিয়েছিল শুভ্রর সাথে কথা বলার জন্য। তখন পরীকে দেখে ফেলেছিল লফির। পরে খালাম্মা কে অনেক কিছু জিঙ্গাসা করে পরীর ব্যাপারে কে মেয়েটা। এতদিন দেখে নাইতো। খালাম্মা বার বার সাবধান করে দিয়েছিল। আমার গা হাত পা কাঁপছে।



– এবার চাপা শব্দ ভেসে আসলো। ঐ মাইয়া দরজা খুলবি না দরজা ভাইঙ্গা ঘরে ঢুকমু বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে লাগল।


– কি বিশ্রী ভাষাগুলো ছিল। এবার দরজায় লাথি পরে কয়েকটা। আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা কর এই অবস্থা থেকে বলেই কান্না চলে আসল।



– ঐ মাইয়া আমি জানিনা ভাবছোস পর পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে পেট বাঁধাইছোস তাহলে আমার কাছে থাকতে তোর এত্ত শরম কেন বলেই আবার লাথি দিল দরজাতে।



– আমি কথা গুলো শুনে কেঁদে উঠলাম। কি সব বলছে লোকটা। আমি আজ শেষ।



– কে কার সাথে ফষ্টিনষ্টি করছে,,,,,,,, এমন একটা শব্দে লফির পিছন দিকে তাকায়। বাহিরে ৩ টা পুরুষ দাড়িয়ে আছে। ওদের দেখে এবার লফির বেশ ভয় পেয়ে যায়। লফির দৌড় দিতেই ২ টা ছেলে ধরেই চড় থাপ্পড় দিতে শুরু করল।



– বাহিরে ধাপধুপ শব্দে আর লফিরের আৎনাদে আমি একটু দরজা খুলে দেখলাম লফিরকে ৩ ছেলে ধরে মারছে আর বলছে মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করা!

আমি একটু সাহস পেয়ে রুম থেকে একটা বড় লাঠি বের করে বাহিরে বের হয়ে সটাসটা কয়েকটা বাড়ি মারলাম লফিরকে।



– ব্যাটা বুড়ইরা খাটাস্ বজ্জাত কোথাকার আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগলি করা! বলেই আরো কয়েটা লাঠির বাড়ি পড়ল লফিরের পিঠে। বুইড়ার সাহস কত্ত আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে। হারামি বুইড়া আমি প্রেগন্যান্ট তাই ভয়ে চুপ করে ছিলাম না হলে তোর মত কত খারাপ ব্যাটাকে শায়েস্তা করেছি এই জিবনে বলেই কয়েকটা লাথি মারলাম।



– পরীর কান্ড দেখে ৩ টা ছেলেই অবাক হয়ে যায়। এটা কি মেয়েরে। এত্ত রাতে রুম থেকে বের হয়ে মারছে। এই অবস্থায় ও তার তেজ দেখ।



– ঐ ব্যাটা তোর ঘরে বউ বাচ্চা নাই! মেয়ে মানুষ দেখেই লুচু গিরী করতে মন চায় বলেই আবার লফিরের পিঠে লাঠির বারি পড়ল। আজতো তুই শেষ। তোকে মেরেই ফেলব আজ আমার দরজায় লাথি মারা! বলে তেড়ে যেতেই একটা ছেলে এসে হাত ধরে টেনে আনল পরীকে।



– এই ছাড়ুন বলছি আমায়। আপনিও তো কম লুচু নন হাত ধরেন কিয়ের লায়।


– ছেলেটা কোন কথা না বলে পরীর মুখ বাঁধে জলদি করে। আর একটা ছেলে এসে হাত পা দুটাই বেঁধে ফেলে পরীর।


– আমি ভয়ে চুপসে যাই। এরা মেয়ে ধরা না তো! বলেই ছটফটাতে লাগলাম। ছেলেটা এবার শক্ত করে আমাকে ধরে বলল আপনার যা অবস্থা না নড়াচড়া করলে আপনারই ভাল বলে আমাকে কোলে তুলে নিল।

পরীরে আজ তুই শেষ। ছেলে ধরার কবলে পড়ে গেছিস কেন রুম থেকে বের হইতে গিয়েছিলি ব্যাটা লফির কে মারতে। এখন ঠেলা সামলা। আল্লাহ্ গো মাফ করে দাও জিবনে এভাবে রুম থেকে বের হব না। এবারেরর মত ছাড়ার ব্যবস্হা করে দাও। মুখ বাধা কথাও বলতে পারছিনা।



– ছেলেটা ২ টা ছেলেকে নির্দেশ দিল লফিরকে বেঁধে রাস্তার সামনে রেখে দাও। আর গলায় প্লাকার্ড দিয়ে লিখে দাও আমি লুচ্চামি কইরা ধরা খাইছি।

আর রিপন তুমি রুমে চাবি দাও। আমরা মেয়ে চুরি করি কিন্তু করো বাসা চুরি করিনা। কাজ সেরে তোমরা দুজনেই চলে যাও।


– ভাই মেয়েটাকে নিয়ে যেতে পারবেন তো?


– জিবনে কত্ত আমা,ডাব চুড়ি করলাম ধরা খাইনি।


– ভাই এটা ডাব না,,,,,,,, একটা বিছাতু মেয়ে। যা তেজ দেখেই ভয় লাগে।

– সেটা দেখা যাবে পরে,,,,,,,আমি যাচ্ছি বলেই পরীকে নিয়ে রাস্তায় নেমে গেল ছেলেটি।



– চারদিকে যা কুয়াশা । ২ হাত দুর অবদি দেখা যাচ্ছেনা। তার ভিতর আবার রাত হয়ে গেছে অনেক।
আল্লাহ্ গো এই রাতে গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। কেউ বেরও হবেনা। কি করব আমি।



– এই আপনি ছটপটাচ্ছেন কেন। আমার সমস্যা হচ্ছে। আমাকে শুকরিয়া জানান ঠিকমত না আসলে আপনার কি হাল হত সেটা ভাবতেই আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি। মেয়েদের এত্ত জেদ ভাল না। আর আপনার এত্ত সাহস কি করে হয় রাতে লাঠি নিয়ে বের হইছেন তাও একটা পুরুষ মানুষকে মারতে! আপনার কি মনে ভয় নাই?



– ছেলেটির কথা শুনে পরী আরও ছটফটাতে লাগল।


– এই নড়তে নিষেধ করলাম না! একদম এখান থেকে নিচে ফেলে দিব কিন্তু! তখন কি হাল হবে আপনার বুঝতে পারছেন? এমনি যে ভারি আপনি,,,,,,,নিয়ে যেতে দম বের হয়ে যাচ্ছে আর উনি নড়েই যাচ্ছেন। আমাকে রাগেবেন না কিন্তু তাহলে অবস্থা খারাপ করে ছাড়ব বলেই একটা হাইস এর সামনে দাড়াল ছেলেটি। দেন গাড়িতে তুলে ডাইভার কে যেতে বলল।




– প্রায় ৩০ মিনিট পর একটা বাসায় এসে পরীকে নামিয়ে সোফায় উপর রেখে মেইন দরজায় চাবি দিয়ে পরীর কাছে আসল। এবার ওর হাত পায়ে বাধন খুলে দিতেই পরী জোড়ে একটা ধাক্কা দিল ছেলেটাকে। নিশু ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।



– আমি জলদি মুখের বাধন খুলে আসেপাশে কিছু জিনিস খুঁজতে লাগলাম যাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারি। না তেমন কিছু পেলাম না অবশেষে দরজার কাছে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম দরজায় চাবি দেওয়া।



– নিশু ওভাবেই বসে পরীর কান্ড গুলো দেখছিল। যতটা সহজ মনে হচ্ছিল একদম সহজ না মেয়েটা। বাবা-মা কোন দিন গায়ে হাত তোলেনি আর এই মেয়েটা গায়ে ধাক্কা মাড়ল! মা খুব অসুস্থ বলে নুরজাহান আর বাবা সেখানে আছে। নুরজাহান অনুরোধ করেছিল যাতে মেয়েটাকে দেখে আসে তাই নিশু গিয়েছিল।
কিন্তু যা অবস্থা ওখানে পরীকে একা রাখা রিক্স তাই তুলে আনছে এভাবে। তার ফল এখন ভোগ তো করতেই হবে।



– নিশু উঠতেই তেড়ে এল পরী কারন কাছেই চাবি পড়ে ছিল। চাবিটা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই নিশু পিছন দিক থেকে ধড়ে ফেলে পরীকে।



– এই মেয়ে চোর,,,,,,,,,, ছাড় বলছি আমাকে ছাড়! (পরী)


কিন্তু নিশু শক্ত করে ধরে আবার তালা দিয়ে চাবি পকেটে রেখে দিল। এই আমি মেয়ে চোর তোমাকে কে বলল?


– ব্যাটা নিশ্চয় তুই পাচারকারী দলের সদস্য তা না হলে আমাকে ধরে আনিস?


– এখন তোমার যে অবস্থা কোন পাচার কারী কেন কেউ নিবেনা। নিশু এবার পরীকে ছেড়ে দিয়ে বলল চুপচাপ থাকো তাছাড়া আমি যদি একবার ক্ষেপে যাই তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে বলে চলে যাচ্ছিল।



– ছেলেটার কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হল আমার টেবিলে একটা গ্লাস ছিল সেটা গায়ের শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারলাম। গ্লাস টা একদম নিশুর পিঠ গিয়ে লেগে ফ্লোরে পরে যায় আর ভেঙ্গে যায়।



-নিশু প্রচন্ড রেগে যায়। একে কিছু বলতে চাচ্ছি না আর এ ততই বেড়ে যাচ্ছে। ঠাশঠাশ করে গালে ২ টা চড় পড়লে এমনি ঠিক হয়ে যাবে। এই রকম মেয়েদের কেমনে সোজা করতে হয় তা নিশুর খুব ভাল করেই জানা আছে বলে পিছনে ফিরল নিশু।



– ছেলেটার এই চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি। এক দৌড়ে একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। উফ্ বাঁচছি বাবা আর একটু হলে আমার খবর ছিল। আল্লাহ্ তোমাকে লাখ লাখ শুকরিয়া।



– এবার নিশু চিল্লায় বলল এই ভিতুর ডিম ভয় পেয়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলে কেন?আমাকে আঘাত করা! এই নিশুকে আঘাত করছো তার ফলতো তোমাকে ভোগ করতেই হবে পিচ্ছি মেয়ে কোথাকার। সাহস থাকলে বের হও একবার একটা থাপ্পড়ও মাটিতে পড়বেনা।



– কিহ্ আমাকে থাপ্পড় মারবি! ঐ লুচু ব্যাটা কোথাকার তোর সাহস থাকলে আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখা!
তোর হাত ভেঙ্গে যদি না ঝুলিয়ে দিছি তাহলে আমার নামও পরী না হুম।

যাই হোক রুমে তো আর আসতে পারবে না তাই চিল্লায় কথা গুলো বললাম।



– এই বিয়াদপ মেয়ে! কি ভাষার শ্রী এক থাপ্পড়ে সব সোজা করে দিব। দরজা খুলে দেখাও তোমার কি হাল করি বলেই দরজায় ২ টা লাথি দিল নিশু।




– ব্যাটা বজ্জাত জলহস্তি কোথাকার দরজা ভেঙ্গে দেখা তার পর বুঝবো তোর কতটা শক্তি। তারপর পরীর গালে চড় দিতে আসিস। ব্যাটা কুলাঙ্গার কোথাকার।



– নিশুর ধর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল এবার। ঐ আমি কুলাঙ্গার! তুমি এবং তোমার চৌদ্দ গোষ্টী কুলাঙ্গার । অ্যানাকোন্ডা, বান্দরনী, জংলী একটা মেয়ে। খালি দরজা একবার খুলে দেখাও কি হাল করি তোমার। একদম খুন করে ফেলব। তারপর যা হয় হোক বলেই দরজায় কয়েক টা আবার লাথি মারে নিশু। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে নিশুর। এখন পরীকে পেলে অঘটন ঘটাতে এক মিনিট সময় ও লাগবেনা।




– আমিও দরজায় কয়েকটা লাথি মেরে বললাম আমি মেয়ে হতে পারি কিন্তু দুর্বল না। আমাকে একটা ছুড়ি ধার দে তোকে মেরে আবার ছুড়িটা তোকেই ফেরত দিব।



– আমার ছুড়ির দরকার নেই এমনিই তোমাকে খুন করতে পারব একবার শুধু বের হও।


– ব্যাটা তোকেও আমি খুন করব আয় শুধু একবার। তোরে খুন করে প্রয়োজন হলে এরশাদ শিকদারের মত ফাসিতে ঝুলব তাও তোরে ছাড়ছিনা বলে রুমে যত জিনিস ছিল একেকটা করে ভাঙ্গতে লাগলাম। একটা গিটার ছিল সেটা ফ্লোরে বাড়ি দিয়ে ভেঙ্গে চিল্লায় বলে উঠলাম কেবল তো তোর গিটার ভাঙ্গলাম তার পর দেখ আর কি কি ভাঙ্গি বলে ই ডেসিং
টেবিলের দিকে পা বাড়ালাম। আমার সাথে লাগা! রুমের একটা জিনিসও রাখবনা দাড়া না একটু সবুর কর বাছা কি করি আমি! সকালে চেয়ে চেয়ে দেখবি শুধু।



– হায় হায় আমার গিটার! বলে নিশু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। ওর সখের গিটার টা ভেঙ্গে ফেলেছে আর অনেক কিছু আছে রুমে সেগুলোও ভাঙ্গার হুমকি দিছে,,,,,, নিশু শেষ।
নিশু এবার হাত জোড় করে বলে উঠল মা! আমার ভুল হয়ে গেছে। দয়া করিয়া আর কিছু ভাঙ্গিওনা। আর কিছু বলবনা দয়া করে আপনি ক্ষান্ত হন। আপনার রাগের অগ্নিতে আমার পুরো রুম আজ ভষ্মের পথে।



– কেন রে একটা ভাঙ্গতেই আমাকে মা ডাকতে শুরু করে দিছিস। দেখনা আরও কি করি। আমাকে তুলে নিয়ে আসা! বজ্জাত পঁচা পান্তা কোথাকার। আমি কি জিনিস এবার হারে হারে টের পাবি।



– আমি বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে এই যে কান ধরছি। আর করবনা। শুধু সকালটা হোক আপনি যেখানকার জিনিস সেখানে রেখে আসব। তাও আমার সখের জিনিস ভাঙ্গেন না।



– আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে দেখি ও সত্যি কান ধরে দাড়িয়ে আছে। খুশিতে বলে উঠলাম yes! আমি পেরেছি। ডিলবর ডিলবর ডান্স দিতে মন চাচ্ছে।

আমি শান্ত হয়ে বললাম ওকে আপনি কান ধরে কয়েকটা উঠবস করেন তাহলে আর ভাঙ্গবনা। আর হ্যাঁ আমাকে কিন্তু সকালে বাসায় পৌছে দিতে হবে ওয়াদা করেন।



– সব শর্তে রাজি আছি তাও তুমি আর কিছু ভেঙ্গনা। বলে কান ধরে উঠবস করতে যাবে এমন সময় বললাম না ঠিক আছে ওটা করতে হবেনা। কাল দরজা খুলব। অনেক রাত হইছে আমার ঘুম পাচ্ছে বলেই সুয়ে পড়লাম। ফোনটা ছেড়ে আসছি শয়তার টার জন্য…….. এখন কি করি শুভ্রকে না দেখলে আমার ঘুম আসে না যে। খুব খারাপ লাগছে।



– নিশুর চোখে পানি চলে আসছে। এত্ত ছোট মেয়ের কাছে যে নাস্তহাল হতে হবে জিবনেও কল্পনা করেনি। সখের গিটারটা ভেঙ্গে ফেলে দিছে। নিশু ওর গার্ল ফ্রেন্ড ইশিতা কে কল দিল।


– হ্যালো জান এত্ত রাতে কল দিছো যে!

– ইশিতা এখন আমার বাসায় আসবা! তোমাকে নিতে যাই?

– ইশিতা চট করে উঠে বসল। কি হয়েছে জান এরকম করছো কেন কি হইছে তোমার বল!

– চিড়িয়াখানা খানা থেকে একটা প্রেগন্যান্ট বান্দরনী সখ করে বাসায় আনছি। এখন আমায় শেষ করে দিচ্ছে। আমার কিছু রাখেনি।

– জান প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সবায় অতিরিক্ত রাগী হয়। সেটা মানুষ কি পশু যেটাই হোক না কেন। বিপদের সম্মুখীন হলে সোজা আক্রমন করে বসে।

আর কোন সুখে তুমি প্রেগন্যান্ট বান্দর আনতে গেছ! ওর কাছে যেওনা কিন্তু কামড় দিবে। খুব রিক্স বলে বান্দরের ইতিহাস খুলতে শুরু করল ইশিতা।


– নিশু কল কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখল। এই মেয়ে জাতটাই বাচ্যাল। কোথায় আমি কষ্টে মরি আর ও বান্দরের ইতিহাস বলা শুরু করে দিছে। আরে যেনাতেনা বান্দরনী নয় চাক্ষস মহিলা বান্দরনী।
ধ্যাত কাল সকাল না হওয়া অবদি এভাবেই বসে থাকতে হবে।

চলবে——————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here