অস্তিত্বের খোজে part 32+33

0
651

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩২

– শুভ্র খুব ভাল করেই জানে পরীর জন্য কতটুকু ব্যাথা সহ্যকর আর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই চট করে হাত সরিয়ে নিয়ে পরীকে শুয়ে দিল।

বেসিনে হাতটা ধুয়ে শার্ট পরে নার্স কে ডাকতে লাগল শুভ্র।



– নার্স এসে দেখে পরীর সেন্সলেস হয়ে গেছে। এটা কি করে হল বলেই নার্স পরীর কাছে ছুটে এল।


– আপনি নার্স হতে পারেন কিন্তু আপনার অভিঙ্গতা অতিব কম। জায়গাটা চট করে ড্রেসিং করে দেন। অল্পক্ষনের মধ্য সেন্স ফিরে আসবে বলে শুভ্র রুম থেকে বাহির হতেই নিশু আর ইশিতাকে দেখে।


– শুভ্র! তুমি কি মানুষ,,,,,,,, কেউ কাউকে এতটা আঘাত করে?( ইশিতা)


– নিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। কোন কথা বলতেই পারছেনা।


– আমার স্ত্রী! আমিই ওকে বার বার আঘাত করব বার বার ভালবেসে সেটা পূর্ন করে দিব। ওর উপর শুধু একমাত্র আমার অধিকার। মায়ের থেকে মাসীর দরদ দেখতে মোটেও ভাল দেখায় না ইশিতা। তাই আমাকে উপদেশ দিতে এসো না।


– শুভ্র! আমি ওকে ৪ টা মাস আমার চোখের সামনে দেখেছি। ওর মত মেয়েকে কেউ না ভালবেসে থাকতে পারবেনা। আর তুই ওকে এতটা আঘাত কি করে করিস। বুঝতে পারছি ওর চরম দোষ আছে তাই বলে এধরনের শাস্তি!

তোর যদি ওকে নিয়ে এতই সমস্যা হয় তাহলে আমরা নিয়ে যাচ্ছি ওকে। কোনদিন তোর কাছে আসতে দিবনা। ওর কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছেনা।(নিশু)


– নিশু! তোর কথার যুক্তি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে,,,,,, তোরা আমার পরীকে এতদিন আগলে রাখছিস তাই তোদের একটা ওর উপর অধিকার আছে। পরী যদি যেতে চায় আমি শুভ্র ওয়াদা করছি নিজে তোদের বাসায় পরীকে পৌছে দিয়ে আসব। ২য় বার তোদের মুখও দেখাব না।



– শুভ্রর কথার নড়চড় হয়নি আজ পর্যন্ত। তাই নিশু বেশ খুশি হল। পরীকে যতটা আঘাত করেছে পরী নিশ্টয় শুভ্রর সাথে থাকবেনা। শুধু পরী কেন কোন মেয়েই থাকবেন্ এই পরিস্থিতিতে। আমরা আজ পরীকে নিয়ে যাচ্ছি তাহলে।



– ইশিতাও বেশ খুশি হল। শুভ্রর কাছে পরীকে রাখা যথেষ্ট রিক্স আছে।



– ডাক্তার এসে পরীর অপেরেশনের জায়গাটা আবার ভাল করে ড্রেসিং করে দেয়। আর একটা ইনজেকশন দিয়ে চলে যেতেই নার্স বলল,,,,,, স্যার পেসেন্টের সমস্যা হবে না তো!


– আরেহ না। কিন্তু এটা হল কিভাবে! পেসেন্ট তোহ্ ভালয় ছিল।



– শুভ্র পরীর পাশে বসে আছে। একটু পর পরীর সেন্স ফিরে আসে। চোখ খুলে শুভ্রকে পাশে দেখে অনেক ভাল লাগছে পরীর।



– আমি শুয়ে থেকেই শুভ্রর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। শুভ্র আর কিছু বললনা। ওভাবেই বসে আছে। তাই সাহস পেয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে উঠে ওকে ভাল করে জড়িয়ে ধরে বসলাম।


– পরী কি করছো! ছাড়ো এখানে সবাই আছে। সবাই দেখে কি ভাববে বল………


– নাহ্ ছাড়বনা। যে যা পারে ভাবুক। আমার এতে যায় আসেনা। আমি কি পরপুরুষ কে ধরে আছি নাকি হুম!


– নিশু আর ইশিতা রুমে ঢুকে পরীকে ওমন ভাবে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরা দেখে অবাক হয়ে যায়। এই মেয়ে কি! এর মধ্য সব ভুলে গেল?

এবার নিশু ভাল করেই বুঝতে পেরেছে শুভ্র কেন এত্ত কনফিডেন্স এর সাথে বাজি ধরেছে।

নিশু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,,,, পরী কেমন আছো?


– জ্বী ভাইয়া ভাল আছি। আপনারা ভাল আছেন!


– ইশিতা এসে বলল আমাকে চিনো পরী?


– দেখিনি কখনও বাট কথা বলছি আপনার সাথে।
আমি নিশুকে বললাম ভাইয়া এটা আমার শুভ্র।


– ওকে তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই শুভ্র চলে যেতেই পরী ওর হাত ধরে বলল,,,,,, না কোথাও তুমি যাবা না। এখানে থাকবা তুমি। তাছাড়া আমিও কিন্তু যাবো তোমার পিছে পিছে।


– শুভ্র আর কিছু না বলে পরীর পাশে আবার বসে পড়ল।


– পরী তোমার বেবিটাকে আমাদের বাসা দেখাবা না? চলনা আমাদের বাসায়,,,,,,, তোমার ইশিতা আপুও যাবে আমাদের সাথে।


– ভাইয়া আমার বেবিটাকে একেবারে নিয়ে যান। আমার ওকে লাগবে না।


– এবার শুভ্র পরীর উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে রাগীত চোখে পরীর দিকে তাকাতেই পরী চুপ হয়ে গেল।


– শুভ্র তোর বউ যে এত্ত এত্ত চঞ্চল,,,,,, ওকে কেউ আটকাতে পারেনা। কিন্তু কি আজব তোর কাছে একদম ভিজে বিড়াল। ( নিশু)


– পরী তুমি থাকো,,,,,, আমি সব formality কমপ্লিট করে আসি। আজই বাসায় নিয়ে যাব তোমায় বলে শুভ্র চলে গেল।


– আমি আর কিছু না বলে মনে মনে খুব খুশি হলাম। আমি আমার সংসারে যাব। কত্ত দিন বাসায় যাইনি।


– পরী কি হল! আমাদের সাথে যাবা?( নিশু)


– ভাইয়া আপনি পাগল হয়ে গেছেন! আমি শুভ্রকে ছাড়া আপনাদের বাসায় যাবো? চিন্তা করেন না আপনার টাকা সব ফেরত দিয়ে দিব।


– নিশু পরীর বাচ্চামো কথা শুনে কেঁদে ফেলে। কতটা অবুঝ বাচ্চা মেয়ে পরী।

পরী! তুমি বুঝতে পারছোনা শুভ্র তোমার জন্য খুবই রিক্স। ও তোমাকে বাঁচতে দিবেনা। ওকে যত বড় আঘাত দিছো তুমি,,,,,,,,,, এর প্রতিটা হিসাব তোমায় পাই পাই করে দিবে।
তুমি আমাদের সাথে চল। শুভ্র কিচ্ছু বলবেনা। ও ওয়াদা করেছে আমাকে। বুঝার চেষ্টা কর পরী!


– ইশিতা আপু! ছোট বেলায় মায়ের হাতে মাইর খাইছেন?


– ইশিতা হেঁসে বলল,,,, প্রচন্ড খাইছি মাইর আম্মার হাতে। এত্ত দুষ্ট ছিলাম যে মাইর ছাড়া আমার ভাত হজম হইত না পরী।


– এত্ত মাইর খাইছেন,,,,,, মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করেনি আপনার?


– কি বল পরী! মায়ের মত কিছু হয় নাকি। মাকে কেন ছেড়ে যাব?


– তাহলে শুভ্র নামে আমার পাগল অস্তিত্বটাকে ছেড়ে আমি কেন যাব!
সেটা বলতে পারেন?


– মায়ের সাথে কখনও শুভ্রের তুলনা করনা পরী?


– কিন্তু আমিতো আমার মায়ের কোনদিন আদর পাইনি। শুভ্রের ভালবাসার স্বাধ আমি প্রথম পেয়েছি। তাই সব কিছুর উদ্ধে আমি শুভ্রকে চাই। কোন আপোস না কারো সাথে আমার জাষ্ট শুভ্রকেই চাই। আশা করি বুঝবেন। এমন কোন কথা বলেন না যে আমি আপনাদের সাথে রুড ব্যবহার করি।


– বুঝলাম তুমি শুভ্রকে ভালবাস অত্যাধিক। শুভ্রও কি তোমাকে চায় এভাবেই? (ইশিতা)


– আমার থেকেও হাজার গুন শুভ্র আমাকে ভালবাসে আপু। আমি কখনও ওর সমান হতে পারবনা। তাই এত্ত মূল্যবান জিনিস আমিতো ছাড়তে রাজি না!
আমি ওকে আঘাত দিছি আমিই ওর ক্ষত পূর্ন করব। বিষেই বিষক্ষয় হয় আপু। শুভ্রর এই স্বভাবটা আমায় পরিবর্তন করতে হবে না!


– ইশিতা শিখো এই ছোট্ট মেয়ের কাছ থেকে ভালবাসতে হয় কেমনে। আমি একটু কল রিসিভ না করলে তুমি কত্ত কথা শোনাও।


– হুম ওর কাছ থেকে শিখার অনেক কিছু আছে দেখছি। (ইশিতা)




– শুভ্র অনেকক্ষন পর এসে বলল,,,,,, পরী হেটে যেতে পারবে না হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করব?


– কেন তুমি কি হইছো? কোলে নিয়ে চল আমাকে।


– পরী বাজে কথা বলবানা একদম। চল ওঠো বলেই শুভ্র পরীর কে আস্তে আস্তে করে উঠিয়ে রুম থেকে বাহির করল।


– শুভ্র! নিশু ভাইয়া এই অবদি ১ লাখ ২৮ হাজার আমার পিছে ব্যয় করছে আর নুরজাহান খালাম্মা ৩২ হাজার। ওনাদের টাকা দিয়ে দিও।


– নিশু হাসবে না কাঁদবে পরীর কথা শুনে বুঝতে পারছেনা। এই মেয়ে তোমার থেকে কি আমি টাকা চাইছি!


– না ভাইয়া কথার খেলাফ আমার একদম পছন্দ না। আমার আপনার সাথে একটা চুক্তি হইছিল। সেটা ভুলে যাবেন না দয়া করে।



– পরী নিশুদের থেকে বিদায় নিয়ে শুভ্রের সাথে গাড়িতে উঠল। এবং বাসার পথে রওনা দিল। অনিতা আগেই পরীর বেবিটাকে বাসায় নিয়ে গেছে।


– পথের মধ্য আমি শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। কিন্তু ও একটা কথাও বলেনি। না বলুক তাতে আমার কি। আমিতো আমার শুভ্রের কাছে আছি। আর কিছুর দরকার নাই আমার।



– কত দিন পর বাসায় আসলাম । অনেকটা চেঞ্জ চেঞ্জ লাগছে বাসাটা। এবার শুভ্র আমাকে কোলে নিয়েই ওর রুমে নিয়ে গেল।


– শুভ্র! এখন থেকে কি আমি এখানেই থাকবো?


– হুম বলে শুভ্র আমাকে বেডে রেখে বাহিরে চলে গেল।


– রুমটা পুরোটাই চেঞ্জ। অনেক সুন্দর করে নতুন করে সাজানো হইছে। একটা বিশাল পেইন্টিং,,,,,, “শুভ ও পরীর নীড় ” মাঝখানে লেখা। ওয়াও দারুন লাগছে।


– মা এসে আমার কাছে বেবিটাকে দিয়ে বলল পরী ওর হয়ত ক্ষুদা লেগেছে তাই কান্না করছে। তুমি খাওয়াও ওকে।


– আমার প্রচন্ড রাগ হল বেবিকে দেখে। আমি দেখতে চাইনা ওকে। মার জন্য কিছু বলতে পারলাম না। মা চলে যেতেই ওকে কোল থেকে নেমে পাশে রাখলাম। আর ও কেঁদেই চলছে।


– শুভ্র রুমে এসে সব কিছু দেখে বুঝল পরী কেন বাচ্চাকে ছুতে চাচ্ছেনা। এবার শুভ্র দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,,,,, বাবু কাঁদছে শুনতে পাচ্ছিস না!


– কাঁদুক আমার ওকে ভাল লাগেনা। ওটার সাথে এটাও কেন চলে গেলনা। অহস্য লাগছে।


– এবার শুভ্র এসে পরী কে ঠাশশশ্ ঠাশ করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলল,,,,,,, ভিমরতি শুরু করছিস আমার কাছে! এখুনি ওকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামা তাছাড়া আমার থেকে কেউ খারাপ হবেনা কিন্তু?


– আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম আমি ওকে নিবনা শুভ্র,,,,, ওর জন্য এত্ত দিন তোমাকে ছেড়ে ছিলাম। আমার ওকে চাইনা।


– পরী! আমাকে কিন্তু একদম বিগড়াবি না। তাছাড়া তোর কপালে কিন্তু আজ দুঃখ আছে। এমন মাইর দিব এমনি সব সোজা হয়ে যাবি।


– আমি সুড় সুড় করে ওকে কোলে নিলাম। বুকে নিয়ে বললাম থামছে না তো। আমি কি করব।


– ওর খুদা লাগছে।(শুভ্র)


– তোহ আমি কি করবো?


– সেটাও শিখে দিতে হবে তোকে!
বাচ্চার মা হয়ে গেছিস আর তুই নিজে বাচ্চামো শুরু করেছিস বলে শুভ্র পরীর কাছে এসে বলল একটা ৭ দিনের বাচ্চা কি খায় জানিস না! জামা খোল!


– আমি ঠোট উলটিয়ে ওর কথা মত কাজ করে বেবিকে ফিডিং করাতেই বেবি চুপ করে খেতে লাগল।


– শুভ্র তুমি বেবিকে কেন কোলে নাও না! বিকাশের বেবি বলে?


– পরী! ও আমার বাচ্চা তাই ফালতু কথা একদম বলবা না। ওটা জাষ্ট শুভ্রের অস্তিত্ব।


– শুভ্র তুমিতো মিথ্যা কথা বলনা তাহলে কেন বলছো মিথ্যা কথা?


– শুভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। চট করে উঠে গিয়ে ল্যাপটপ টা এনে ভিডিও টা বের করে পরীর সামনে রাখল।


– এমা ছিহ্ তুমিতো আচ্ছা পাজি। এই কাজ করে কেউ করে!


– হুম কাজটা করে ছিলাম বলেই আজ প্রুভ দিতে পারছি। তাছাড়া তো তুমি আমাকে বিশ্বাস করবানা ,,,,,, কারন শুভ্রতো আবার মিথ্যা কথা বলতে শিখে গেছে।
ভাল করে দেখতো যেদিন বিকাশ তোমাকে মিষ্টি খাওয়ায় সে দিন এই ড্রেস পড়ে ছিলে নাকি!


– আমি শুভ্রর কথা শুনে আবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ভাল করে সব খুটে খুটে দেখতে লাগলাম। এটা আবার কবে করলাম। মাথায় কিছু আসছেনা। আর শুভ্রকে এত্ত আঘাত করছি যেটা দেখে আমারই খারাপ লাগছে। তার মানে সেদিন বিকাশ না শুভ্র ছিল বলেই শুভ্রের দিকে তাকালাম।


– সেদিন একাধিক বার তোমায় শান্ত করতে হয়েছে
আমাকে। সেদিন ও আমাকে আচড়ে কামড়িয়ে দেহ শেষ করেছো আর এখন আমার মন শেষ করে দিয়েছো। তোমায় আমি কোনদিনও ক্ষমা করবনা পরী বলেই শুভ্র চলে গেল রুম থেকে।


– আমি সব কিছু বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আমার ক্ষমা পাওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। এতটা কষ্ট দিছি শুভ্রকে! নিজেই নিজের প্রতি ঘৃনা হতে লাগল। আমার মেয়েটার দিকে এবার ভাল করে তাকালাম। আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমার এক সন্তান মারা গেছে এটারও মৃত্যু কামনা করছি। শুভ্রর তাহলে কতটা কষ্ট হইছে ঐ সময়। আমি একটা নিষ্ঠুর মা। না হলে এমন কাজ করি আমি।



– প্রায় এভাবে ৬ টা মাস কেটে যায়। শুভ্র আমার সাথে একটা কথাও বলেনি সেদিনের পর থেকে। আমি সম্পূর্ন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। আমার মেয়েটাকে নিয়ে আমার সময় কাটে বেশিভাগ। আমার বেবীর নাম “জান্নাত” রাখি আমি। আর বাবা ওকে মাধুরী বলে ডাকে। আমি বুঝতে পারিনা বাবা জান্নাত কে কেন এই ওল্ড নামে ডাকে! বাবার চোখের মুনি জান্নাত। বাহিরে থেকে এসে আমার মেয়েটাকে তার চাই।

নিদ্রা আপুর বাচ্চাটা হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যায়। আপুর কান্নায় সেদিন সবাই কেঁদেছিল। আমি জান্নাত কে ওনার কোলে দিয়ে বলেছিলাম,,,,,আপু আবার হবে ইনশাল্লাহ্। আমারও তো একটা বেবী মারা গেছে।



– শুভ্র কথা না বলুক আমার কাছে তো আছে! এটাই আমার কাছে অনেক সুখের। শুভ্র এখনও জান্নাতকে কোনদিন কোলে নেয়নি। আমাদের ২ জনের কাছে ঘুমাইনা অবদি। সোফায় ঘুমায়। আমি শাড়ী পড়তে শিখে গেছি। কারন শাড়ী পড়া শুভ্রের খুব পছন্দ। কিন্তু শুভ্র আমার দিকে ভুলেও তাকায় না।



– আমি একদিন এশারের নামায পড়ছিলাম। জান্নাত প্রচন্ড কান্না করছিল। আমি নামায ছেড়ে উঠতেও পারছিলাম না।



– হঠাৎ ওর কান্না বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে নামাযের সালাম ফিরে পিছন ফিরে দেখি শুভ্র অফিস থেকে এসে জান্নাত কে আদর করছে। আর জান্নাত হেঁসেই চলছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল। জলদি ২ রাকাত শুকরিয়ার নামায পড়ে নিলাম। অবশেষে কন্যা তার পিতার বুকে ঠাই পেল এত দিনে। “”আল্লাহ্”” দয়া করে সব ঠিক করে দাও জলদি।



– শুভ্র ওর মেয়েকে নিয়ে বেলকুনিতে গেল। পরীর সামনে কিছু বলতে পারছেনা বলে এখানে নিয়ে এসে মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে কান্না করতে লাগল শুভ্র। ওর আর একটা সন্তানের কথা বার বার মনে পড়ে। কিন্তু আল্লাহর জিনিস উনি নিয়ে নিছেন।


– আমি সব বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। কারন সময়টা ওদের বাবা মেয়ের।

নিচে এসে মাকে কাজে হেল্প করতে লাগলাম। আমি তরকারি টেষ্ট করে দেখলাম আমি যেমন ঝাল খাই তেমন ঝাল হইছে তরকারি তে।


– মা! হঠাৎ আজ এরকম তরকারি রান্না করলেন?


– রোজ তো আমাদের মত রান্না হয়। আজ তোমার আর নিদ্রার মত রান্না করলাম। তোমরা আমাদের জন্য এত্ত sacrifice করো আমরাও না হয় একদিন করলাম। কি বল পরী!



– মার কথা শুনে আমি অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম। সবাই খাইতে পারলে শুভ্র এক লোকমাও খাইতে পারবেনা। ও কেমন করে খাবে এই খাবার?


– খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে বসেছে। কাজের ৩ টা লোক সবাইকে সার্ভ করছে। অনেক গুলো আইটেম দেখে নিদ্রা আপুতো সেই খুশি হল। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।


– শুভ্র খাবারের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। মায়ের হাতে রান্না বলে কথা। এমনি দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি ওর তার ভিতর এত্ত স্পাইসি খাবার ও কি করে খাবে।


– অনিতা ইচ্ছা করে কাজটা করেছে। শুভ্রের জন্য পরী এত্ত কিছু করতে পারলে শুভ্র কেন পারবেনা?


– শুভ্র ভাত নিয়ে নাড়াচারা করছে কিন্তু মুখে তুলছেনা। সবাই মোটামুটি খাবার প্রসংসা করছে।


– কি শুভ্র খাচ্ছিস না কেন! সবার ভাল লাগছে তোর ও ভাল লাগবে খা। (অনিতা)


– দাদা দারুন হয়েছে খাবার। টেষ্ট করতো!(অর্পিতা)



– মায়ের কথা শুনে শুভ্র খেতে শুরু করল। ও চুপ করে খেয়ে যাচ্ছে। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে ওর। আমি আর সহ্য করতে না পেরে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দই আর মিষ্টি এনে শুভ্রের পাতে দিলাম। শুভ্র একবারও আমার দিকে আর তাকালো না। চুপ করে খেতে লাগল।


– সব প্লান মাঠে মারা গেল অনিতার।
পরী! শুভ্রকে কেন মিষ্টি আর দই দিলা।
তুমি আর নিদ্রা আমাদের জন্য অঝাল তরকারি মুখে তুলতে পারলে আমরা কেন তোমাদের ভালবাসে একদিন এই রকম তরকারি খেতে পারবনা?


– আসলে মা শুভ্রতো একদমই ঝাল খেতে পারেনা। খেতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই ওগুলো দিলাম।


– খুব খারাপ কাজ করেছো। উচিত হয়নি বলেই অনিতা খেতে শুরু করল।


– যে যার মত খেয়ে চলে গেল। কিন্তু শুভ্রর খাওয়া এখনো শেষ হয়নি। আমি পলা আন্টিকে হেল্প করছিলাম।


– শুভ্র যেন সবার চলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। বাটির সব তরকারি ঢেলে নিয়ে খেয়ে উপরে চলে গেল।


– আমার এতটা কষ্ট লাগল বোঝানো দায়। আমার উপর রাগ করে কেন এই কাজ করল! আমাকে কি ও কখনও ক্ষমা করবেনা?


– আমি বাটিতে কিছু পায়েশ নিয়ে রুমে গেলাম। মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে আছে। পায়েশের বাটিটা রেখে
শুভ্রকে খুজলাম। কিন্তু ও রুমে নেই। সব জায়গায় খুজলাম কিন্তু কোথাও নেই। কই গেল বলে খুজতে শুরু করলাম শুভ্রকে।

শেষে ছাদে গিয়ে দেখলাম দোলনায় ও বসে আছে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও উঠে গিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল।

নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগল। শুভ্র আমার মুখও দেখতে চায় না। কতটা কেউ কাউকে ঘৃনা করলে এই অবস্থায় এসে পৌছে যায়।




– আমি আবার শুভ্রের কাছে যেতেই শুভ্র বলে উঠল পরী! প্লিজ আমার কাছে এসো না। তোমাকে দেখলে আমার অতীত মনে পড়ে যায়। তাই আমার কাছ থেকে যত দুরে থাকবা ততই তুমি সেভ থাকবা।



– শুভ্র আমার সাথে কত্ত দিন পরে কথা বলল। আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরে গেল। আমি ওর আরও কাছে গিয়ে বললাম শুভ্র আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। তুমি যেভাবে আমাকে বলবে আমি সেই ভাবে চলব। আমার খুব কষ্ট হয় শুভ্র। আমি আর পারছিনা এই যন্ত্রনা সহ্য করতে।
I’m addicted to you. I’m all about you. you are my dream. I’ ve got feeling for you।



– আমি এর থেকেও অনেক যন্ত্রনা সহ্য করেছি পরী তাই আমার সামনে থেকে চলে যাও। আমি তোমাকে কোন দিনও ক্ষমা করবনা।


– আমার জিদ উঠে গেল। আমি ওর ট্রী শার্টের কলার ধরে বললাম,,,,,, এই! আমার কষ্ট হয়নি। আমি না হয় একটা ভুল করছি তার জন্য এত্ত শাস্তি কেন আমাকে দিবা! আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তোমার উপর শুধু আমার হক আছে। কেন বুঝনা শুভ্র! আমার ভালবাসা শুধু তোমার জন্য….. I Love you Suvro♥♥♥♥
প্লিজ আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না বলে শুভ্রের গলায় একটা কিস♥♥♥♥ করলাম।


– শুভ্র এবার যা করল সেটা আমার ধরনার বাহিরে ছিল। শুভ্র ওর সিগারেটটা আমার কোমরে চেপে ধরল।

আমি কি করব একে ছাড়া যে আমার চলেনা তাই আমি নিজেই আরও জোরে জলন্ত সিগারেটটা চেপে ধরলাম আমার কোমড়ে। অসহ্য যন্ত্রনায় আমায় চামড়া পুড়ে যাচ্ছিল।


– শুভ্র চট করে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে নিচে নেমে যায়। আমিও একটু পর নেমে গেলাম নিচে। আজকে আমি ওকে দেখেই ছাড়ব। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যা দেখলাম এতে আমার কলিজাটা মনে হয় ফেটে গেল।

” শুভ্র জলন্ত সিগারেটটা ওর কোমড়ে ধরে আছে। যেখানে আমাকে ছ্যাকা দিছে। এরকম ২ জায়গায় অলরেডি ছ্যাকা দিয়ে ফেলছে।

আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা বাহিরে ফেলে দিয়ে এসে ওর পা ধরে কাঁদতে লাগলাম।

আমার ভুল হয়ে গেছে শুভ্র আমি আর কখনও তোমার কাছে যাবনা। আমি থাকতে পারিনা একা,,,, আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে তাই বার বার তোমার কাছে যাই। আজকের পর থেকে আর কখনও তোমার কাছে যাব না আমি। প্লিজ তবুও এই কাজ গুলো করনা। আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমি মরে যাব তোমার কিছু হলে।



– শুভ্র এই বার পরীর কাছে বসে বলল,,,,,, আমার কাছে একদম ঘেষার চেষ্টা করবেনা। তাহলে আমি বা জান্নাত কেউ তোমার কাছে থাকব না। কথাটা মাথায় ঢুকে নাও বলে ,,,,,,, ফ্লোর থেকে উঠে গিয়ে ঘুমন্ত জান্নাত কে বুকের মধ্য নিয়ে শুভ্র সুয়ে পড়ল।

চলবে——

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৩৩



– আমি চুপ করে ফ্লোরেই বসে রইলাম। শুভ্র যেটা বলে সেটাই করে দেখায়। আমার আর এগুনোর কোন মানেই হয়না। আমি কাউকেই হারাতে চাইনা।আমি ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম।



– মাঝ রাতে হালকা হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি শুভ্র আমার কোমরে জেল মাসেজ করে দিচ্ছে। আমি আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ওর স্পর্শ উপভোগ করছিলাম। কারন এখন কিছু বললে ওর হাতের স্পর্শ টাও হারাতে হবে।



– শুভ্র কাজ কমপ্লিট করে আমার কপালে হালকা একটা কিস♥ করে উঠে গেল। মন চাইছিল ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি। কেন এমন করছো শুভ্র! আমাকেও কষ্ট দাও নিজেও কষ্ট পাও।

জান্নাত ঘুম থেকে জেগে উঠে কান্না করতেই শুভ্র ওকে নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেল আর থাইটা বন্ধ করে দিল যাতে জান্নাতের কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে না যায়।



– অনেকক্ষন নিশব্দে কাঁদলাম। শুভ্র জান্নাতকে আদর করছে বুকে জড়িয়ে। এই এক মেয়ে হইছে আমার। ও আমার জিবনে আসার পর থেকে শুভ্রের সমস্ত ভালবাসা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেই উপভোগ করছে। ইশ্ জান্নাতের জায়গায় যদি আমি থাকতাম! নিজের মেয়ে হলে কি হবে ওর প্রতি শুভ্রের অগাধ ভালবাসা দেখে খুব হিংসে হয়। আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।



– পরদিন সকালে আমার পোড়া জায়গায় প্রচুর যন্ত্রনা করতে লাগল তাই শাড়ী না পড়ে থ্রী পিস পড়ে রুম থেকে বের হইলাম।



– কি ব্যাপার পরী শাড়ী না পড়ে এটা পড়ছো। তোমাকে শাড়িতে খুব সুন্দর লাগে……… (মা)


– শখে আর,,,,,,,,, শাড়ী বাদ দিয়ে এটা পড়েছি মা! আপনার ছেলে কাল যা করেছে সেটা মুখে আনার মত নয় কথা গুলো মনে মনেই বললাম।

আসলে কি মা! এগুলো পড়তে মন চাইল তাই পড়লাম আরকি!



– এভাবে আরও অনেক দিন কেটে গেল। আমি শুভ্রের কাছ থেকে ১০ হাত দুরে থাকি। থাকনা শুভ্র ওর মত করে। আমাকে চায় না,,,,,,, না চাক ভাল আছিতো। কাছে কাছে থাকে তো। জানিনা তার কবে রাগ ভাঙ্গবে।


– শুভ্র অফিসে কাজ করা কমে দিয়ে বেশি ভাগ কাজ বাসায় থেকেই করে আর মেয়ে কে সময় দেয়। শুভ্র বাহির থেকে আসলে আর জান্নাতকে কোলে রাখা যায় না। তার বাবাকে চাই। শুভ্রকে চেঞ্জ অবদি করতে দেয় না। শুভ্রর কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। এটাই শুভ্রের সব থেকে শান্তি লাগে। শুভ্রকে অদ্ভুত ভালবাসায় সিক্ত করে দেয়।

শুভ্র একদিন জান্নাতকে ওর বুকে রেখে আদর করছিল। এমন সময় প্রথম বাবা বলে ডেকে ওঠে জান্নাত শুভ্রকে। আর সেটা বার বার বলে। শুভ্র সেদিন প্রচুর কান্না করছিল নিশব্দে। মনে হয় ও পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ।

শুভ্র জান্নাতের সাথে এত্ত কথা বলে যে জান্নাত আগে বাবা ডাকটাই শিখে। আমিতো অবাক। পেটে রাখলাম আমি, জন্ম দিলাম আমি আর আমাকে ছেড়ে বাবা ডাক আগে শিখে গেল?
জায়গা আমার, বড় করলাম আমি,পরিচর্যাকারী আমি আর যে গাছ রোপন করেছে তার পুরো গাছটাই হয়ে গেল! হায় কপাল কি অদ্ভুদ নিয়ম পৃথিবীর।



– রাতে আমি সব কাজ কমপ্লিট করে রুমে এসে দেখি শুভ্র বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর জান্নাত শুভ্রর পিঠে উঠে ওর গলা ধরে বাবা বাবা করে ডাকছে।


– বা….বা,,,,,,,,,,, বা,,,বা

– জ্বী,,,,, মা!

– বাবা বাবা বলে জান্নাত শুভ্রর সাথে খেলাতে ব্যস্ত

– শুভ্রও কাজ করছে আর ওর ডাকের সাড়া দিচ্ছে হেঁসে হেঁসে।



– মা! আসো আমার কাছে। বাবাকে কাজ করতে দাও বলে হাত বাড়ালাম জান্নাতের দিকে।


– ওমা! এ তো বাবা কে ছাড়া আমার কাছে
কিছুতেই আসবেনা!


– শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে অন্য দিকে মুখ করে আছে।


– মেজাজ টা আমার খারাপ হয়ে গেল। বজ্জাত মেয়ে দুদু খাবিনা! তখন আসিস মজা বুঝাবো।
আমার কাছে না এসে তোর বাবার টা খাস বলেই রাগে সোফায় গিয়ে বসে পড়লাম।


– পরীর কথা শুনে শুভ্র হাঁসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এটা কি ধরনের কথা। একে আর শুভ্র কোন দিন মানুষ করতে পারবেনা। সেটা শুভ্র ভাল করেই বুৃঝে গেছে।

শুভ্র জান্নাত কে ফ্লোরে নেমে দিয়ে বলল,,,,,, মা! তোমার আম্মুর কাছে যাও। কারন তোমার আম্মু যেটা দিতে পারবে সেটা আমি হাজার তপস্যা করলেও দিতে পারবোনা। তাই আপাতত ওখানেই যাও।


– কি বাবা ভক্ত মেয়েরে। বাবা বলতে দেরি মেয়ে আসতে দেরি করে নি। আমার কাছে আসতেই ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলাম।


– ঐ তোর বাবাও আমাকে শান্তি দেয় না তুই ও ওর সাথে এক হইছিস! পাটি শুরু করেছিস? তোদের বাবা মেয়ের ভিমরতি ছুটিয়ে দিব।


– কে কার কথা শোনে ওর এখন খাবার চাই। বুকে মুখ ঘষছে তাই কথা না বাড়িয়ে ওকে ফিডিং করাতে শুরু করলাম। মা হওয়ার স্বাধ একটা অন্য রকম। পৃথিবী টা অনেক সুন্দর। “” আল্লাহ্”” মানুষের শান্তির জন্য কত রকম ব্যবস্হা করেছে। তার ভিতর মা হওয়ার একটা ব্যবস্থা।



– মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষন আগে তাই ওকে নিয়ে রুমে এসে শুভ্রর পাশে সুয়ে দিয়ে নিজে ড্রেস চেঞ্জ করে সোফায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম।



– একদিন বাসায় বিকাশের বিয়ের কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করে গেল বিকাশের বাবা। সামনে সপ্তাহে নাকি বিকাশের বিয়ে।


– কৌশিকদা বাহিরের কি যেন কাজে কয়েক দিনের জন্য গেছে তাই নিদ্রা আপু আমার রুমে এসে গল্প করছে অনেক রাত অবদি। বেচারা শুভ্র রুমে আসতেও পারছেনা। একটু ঘুমানোর জন্য। আমি সেটা দেখে নিদ্রা আপুকে নিয়ে ওনার রুমে চলে গেলাম আর শুভ্র রুমে ঢুকে গেল।



– জানো পরী! আমার বিয়ের আগে একটা মুসলিম ছেলেকে খুব ভাল লাগত। ওর নাম আরাফাত ছিল। কিন্তু ও আমাকে একদম পাত্তা দিত না আমি হিন্দু বলে। অনেক ঘুর ঘুর করছি কিন্তু লাভ হয়নি। তারপর থেকে এই মুসলিম জাতি টাকে আমার একদম পছন্দ না। তাই তোমাকে পছন্দ করতাম না আগে।



– কেন আপু! কৌশিকদা কে পেয়ে খুশি নও তুমি!


– না পরী! কৌশিক কে পেয়ে আমি খুব খুশি। আমার অনেক ভাগ্য ভাল দেখে ওর মত বর কে পেয়েছি। শুধু একটাই আকাঙ্খা কবে ওকে একটা সন্তান দিতে পারব তোমার মত যেমন তুমি শুভ্রকে দিছো।


– টেনশন কর না আপু ইনশাল্লাহ্ খুব শিঘ্রই হবে দেখ।


– তোমার কথাই যেন ঠিক হয়। আচ্ছা পরী! শুভ্র কি তোমার সাথে এখনও স্বাভাবিক না?


– কি আর বলব আমি। মাথা নিচু করে চুপ করে আছি।


– নিদ্রা সব বুঝতে পেরে বলল আমি কিছু শিখে দিচ্ছি তোমায়। সেগুলো শুভ্রের উপর প্রয়োগ করে দেখ আশা করি কাজে দিবে।


– আমি মনযোগ দিয়ে সব শুনলাম আর হাঁসলাম। মুরব্বীদের কথা শুনতে হয় পরী। নিজেই নিজেকে কথা গুলো বললাম।
আজ থেকেই মাঠে নেমে যাব। দারাও শুভ্র এবার তোমার কি হালটাই না করি। আমাকে ইগ্নোর করা!



– আমি রুমে এসে দেখি শুভ্র এখনো ঘুমাইনি। ফেসবুক চালাচ্ছে মেবি।
আমি ঘুমানোর আগে ওর সামনেই ড্রেস চেঞ্জ করলাম।


– শুভ্র আড় চোখে পরীকে দেখছে। পেটের অপারেশনের দাগটা থাকার জন্য আরও আকৃষ্ট করছে শুভ্রকে। কিন্তু সব বুঝে ফেলে শুভ্র তাই পাশ ফিরে সুয়ে পড়ে।


– উমহ্,,,,,, প্লান ফল্প। মনে হচ্ছে নিজের চুল নিজে ছিড়ি বলে সব ড্রেস নিচে ছুড়ে মারলাম। থম থম করে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।


– শুভ্র আবার পাশ ফিরে পরীকে দেখছে আর মুচকি মেরে হেঁসেই যাচ্ছে। শুভ্রকে বোকা বানানো! তোমার মত পরীর হাজার বার জন্ম নিতে হবে। তবুও শুভ্রকে ঠকানো তোমার পক্ষে সম্ভব না।



– পরের দিন শুভ্র ওর মার রুমে গিয়ে বলল,,,,,,মা! আমি বা পরী আমরা কেউ বিয়েতে যাচ্ছিনা। কারন ঐ বিকাশ কুলাঙ্গারের মুখও দেখতে ইচ্ছা করে না। সে দিন ওকে মেরেই ফেলতাম। অসভ্য ছেলে কোথাকার।


– অনিতা সব বুঝতে পেরে বলল,,,,,, তোরা যাবিনা কিন্তু লোকে অনেকে অনেক কথা বলবে যে!


– মা! প্লিজ এই অনুরোধ করো না অন্তত। এটা রাখতে পারবনা মা। তুমি সব জেনে কেন অনুরোধ করছো। কিছু একটা বলে দিও। আমি ব্যাস্ত আছি এমন কিছু একটা।



– অনিতা কিছুক্ষন ভেবে বলল আচ্ছা। কিন্তু তুই অফিসে থাকবি আর পরী বাসায় একা থাকবে!
বাসা ভর্তি কাজের মানুষ তাও আবার পুরুষ মানুষ।


– মা! টেনশন নিওনা। ওদের ব্যবস্থা আমি করবো নি। তোমরা যাচ্ছো কবে?


– আজতো যাওয়ার কথা। দেখি তোর বাবা আর কৌশিক কে বলি ওরা ফ্রী আছে নাকি।


– আচ্ছা মা! বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে এল।


– শুভ্র অফিসে চলে গেছে। আর আমি রুম গোছাচ্ছিলাম। অর্পিতা জান্নাত কে নিয়ে রুমে ঢুকলো।


– বউদি! তোমরা নাকি বিয়েতে যাবা না?


– কে বলল অর্পিতা?


– মা বলল,,,,,, দাদার নাকি অফিসে কাজ আছে তাই যেতে পারবেনা। তুমি গেলে কত্ত মজা হত।


– নিশ্টয় তোমার দাদার অফিসে কাজ আছে বলেই হয়ত যেতে পারছেনা অর্পিতা। আর তাছাড়া তোমার দাদার সাথে এ ব্যাপারে কথাও হয়নি আমার।

তবে আমি মনে মনে অনেক খুশি হলাম। শুভ্র ঠিক সিন্ধান্তই নিছে।


– অর্পিতার সাথে দিদুনের রুমে গেলাম। দিদুন বসে চা আর পাকোড়া খাচ্ছিল। আমি গিয়ে বসে দাদুর কোলে জান্নাত কে দিয়ে বললাম একা একা খেতে নেই বিমলা সুন্দরী,,,,,, আশে পাশেও একটু তাকাতে হয় বলেই চায়ের কাপে একটা চুমুক দিলাম।

দাদুতো আমার কান্ড দেখে হাঁসতে হাঁসতে বলল,,,,,,,,, জান্নাত তোমার মা কোনদিন বড় আর হবে না।


– সব এঁঠো করে দিলি তো? তুই এমন কেন রে……. সবসময় আমাকে জ্বালাবি!


– আমিতো এঁঠো করিনি বরং আমিই তোমার এঁঠো খেলাম। যাতে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা আরও জন্মে। বিমলা সুন্দরীকে ভালবাসতে বড্ড মন চায় গো।


– বিমলা পরীর হাত থেকে ছো মেরে চায়ের কাপটা নিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলল তোকেও আমার ভালবাসতে বড্ড মন চায়রে পরী।


– কথাটা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেল। শুভ্রটা আমাকে জিবনে কত কি দিছে আর আমি শুধু আঘাতই দিয়ে গেছি ওকে।



– বিকেলের দিকে সবাই চলে গেল। বাবা জান্নাত কে বুকে নিয়ে অনেকক্ষন আদর করে আমাকে দিয়ে চলে যায়। দাদু যে এত্ত ভালবাসে কোন নাতনীকে আমার জিবনে দেখিনি।

সবাই চলে গেছে। বাসায় কেউ নেই। কোন কাজের লোকও রাখার নির্দেশ দেয়নি শুভ্র। শুধুু সকালে কয়েকজন এসে সব কাজ করে চলে যাবে। সেটা শুভ্র অফিস যাওয়ার আগ অবদি ।

আহ্ কি আমার সেফটিরে । দেখলেই গা জ্বলে। বউয়ের খোঁজ নেয়না কিন্তু সেফটির দিকে খুব মনযোগ।



– সন্ধার পর নামায পড়ে জান্নাত কে নিয়ে কিচেনে গিয়ে রান্না করতে লাগলাম। আমি ওকে রেখে সবজি কাটছিলাম আর ও খেলা করছিল ওর মত। সবজি কাটতে এতই মগ্ন ছিলাম যে মেয়ের কথা ভুলেই গেছি।

বাবুর শব্দ না পেয়ে আমি সব রেখে বাহিরে এসে দেখি,,,,,,আমার মেয়ে হাটছে।

“” আল্লাহ্”” আমার মেয়ে হাটতে শিখে গেছে। আমি দৌড়ে গিয়ে একটু দুরে অবস্থান করে ২ হাত বাড়িয়ে বললাম,,,,,,,,,,, মা! এদিকে আসতো?

কারন মাঝে মাঝে শুভ্র এই রকম করে। শুভ্র প্রচুর জান্নাতে সাথে কথা বলে আর এভাবে হাটা শিখাই তাই হয়ত এত্ত দ্রুত সব রপ্ত করে নিয়েছে মেয়েটা। যাহোক বাবার মত হয়ে বাঁচছি। আমার মত হলে কত যে পিঠে মাইর পড়ত জান্নাতের সেটা “”আল্লাহ”” ভাল জানত।



– জান্নাত হাঁসতে হাঁসতে আমার দিকে ওর ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে আসতেই পড়ে গেল। তবুও আমি ওভাবেই হাত বাড়িয়ে থাকলাম। ও আবার আস্তে আস্তে উঠে অনেকক্ষন পর আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরল। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা কিস♥ করে বললাম আজ কে বাবাকে সারপ্রাইজ দিবা কেমন।


– জান্নাত হাটছে আর খেলা করছে। আমি কাজ প্রায় সব কমপ্লিট করে ফেলছি। এমন সময় শুভ্র বাসায় আসল দেন ওর রুমে চলে গেল।


– পরী! বলেই কয়েকটা ডাক দিল শুভ্র। আমি তো ভাল করেই জানি কেন ডাকছে শুভ্র আমাকে।

বেশ তবুও অনেক দিন পর নিজের নাম শুনতে পেলাম শুভ্রের মুখ থেকে।


– আমি নিচ থেকেই বললাম,,,,,,, স্যার! কিছু বলবেন? আমার এত্ত সময় নেই যথেষ্ট কাজ আমার জন্য অপেক্ষায় আছে………


– শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,আমার এত্ত সখ ওঠেনি তোমাকে বার বার ডাকা। আর এভাবে স্যার স্যার বলে কেন কথা বলছো!
তুমি কি আমার অফিসের কর্মচারী নাকি? যে স্যার স্যার বলছো।


– কিছু বলবেন? বলে বিরক্তি ভাবে শুভ্রর দিকে পরী ইশারা করল।


– জান্নাত কই?


– যেখান কার জিনিস সেখানে আছে খুজে দেখতে হয় বলেই চলে আসলাম।


– শুভ্র তো অবাক এধরনের আচরন দেখে। ওর সাহস হয় কি করে এভাবে কথা বলার। শুভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগল। বাসায় কেউ নেই দেখে সাহস দেখাচ্ছে।


– আমি জান্নাতকে কোলে নিয়ে আমাদের রুমের দরজার সামনে রেখে আসলাম। ও যে বাবা পাগল এমনি চলে যাবে শুভ্রর কাছে।


– শুভ্র কেবল শার্টটের বোতাম খুলে ফেলে এমন সময় জান্নাত বা…..বা বাবা করে ডেকে ওঠে। শুভ্র পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মেয়েটা হাটছে।

শুভ্র ওখানেই ফ্লোরে বসে পড়ল আর হাত ২টা বাড়িয়ে দিল ওর মেয়ের দিকে। মেয়েটাও আধা দৌড়ে শুভ্রের কাছে এগিয়ে যেতেই শুভ্র ওকে ধরে ফেলে। অজান্তেই শুভ্রর চোখ দিয়ে সুখের জল গড়িয়ে পড়ল।

শুভ্র জান্নাতকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,, আমার বাবাটা তো দেখছি হাটতে শিখছে বলেই কয়েকটা কিস♥ করে। শুভ্র ভাল করেই বুঝতে পারল এটা পরীর সারপ্রাইজ ছিল বলে ওমন ব্যবহার করছিল। শুভ্রর মনটা নিমিষেই ভাল হয়ে গেল।

জান্নাত শুভ্রর জন্য পৃথিবীর সব থেকে বড় নেয়ামত। অনেকক্ষন বুকে নিয়ে শুভ্র আদর করল ওকে।

জান্নাতকে বেডে রেখে চেঞ্জ করে ওয়াসরুমে গেল। গোসল সেরে এসে দেখে ওর মেয়ে শুভ্রের ফোন নিয়ে খেলা করছে। জান্নাত এতই শান্ত একটা মেয়ে যে কান্নার আওয়াজ খুবই কম শোনা যায় ওর। পুরোই শুভ্রর ডুবলিকেট জান্নাত।



– আমি সব কাজ কমপ্লিট করে সব ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রেখে রুমে এসে গোসল দিয়ে জান্নাত কে নিয়ে খাবার খাওয়ানোর জন্য নিচে আনতেই শুভ্র আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেল। আমার মেয়ে আর আমার থেকেই কেড়ে নেয়! বলে ওখানে না থেকে চলে আসলাম। যে যেমন থাকতে চায় তাকে তেমন থাকতে দেওয়া উচিত।



– ছাদে এসে দাড়িয়ে আছি। ঝির ঝির ঠান্ডা বাতাস বইছে। বেশ ভাল লাগছে।ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকে আকাশের চাঁদ দেখছি। হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস আমাকে ছুয়ে যায়। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। চুল গুলো বেঁধে জলদি নেমে আসি ছাদ থেকে।

– রাত ১১ অবদি ছাদে ছিলাম! “”আল্লাহ্”” আমিতো বুঝতেই পারিনি এতক্ষন ছাঁদে ছিলাম!
রুমে এসে দেখি জান্নাত ঘুমিয়ে পড়ছে আর শুভ্র কাজ করছে।

নিচে এসে দেখি ওদের খাওয়া কমপ্লিট করেছে। ভালয় হয়েছে। আজ শুভ্রর অখাদ্য খাবার গুলো প্লেটে নিয়ে এক লোকমা মুখে দিতেই গা গুলিয়ে আসলো।

ওয়াক্,,,,,,,,,,, শুভ্র এগুলো খায় কেমনে! তবুও মুখে পুরে দিলাম খাবার। নাহ্ এটা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না বলেই কাঁচা মরিচ চাবাতে লাগলাম প্রতিটা গ্রাসে।



-শুভ্র উপর থেকে পরীর খাওয়া দেখছে আর হাঁসছে।
এমন সময় পরী উঠে বেসিনে গিয়ে বমি করে দেয়। “”আল্লাহ্”” গো এই খাবার কোন মানুষ খায়!গরু- ছাগল খায় বলে পরী আর না খেয়ে সব গুছাতে লাগল।
শুভ্র রুমে এসে শুয়ে পড়ল।




– আমি সব ঘুছিয়ে রেখে কয়েকটা পিয়াজু আর পানি খেয়ে এসে সুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।



– মনে হল ঠান্ডা কিছু আমাকে ছুয়ে দিচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল এবং চট করে উঠে পড়লাম।

শুভ্র! নাহ্ ওতো ঘুমাচ্ছে তাহলে এমন কেন হল। মনে হল কেউ আমার পাশে বসে ছিল। হয়ত স্বপ্ন দেখছিলাম ভেবে কথাটা বাদ দিয়ে শুভ্রর দিকে তাকালাম।

ড্রিম লাইটে ঘুমন্ত শুভ্রকে দেখতে অপূর্ব লাগছে।

আমি উঠে ওর কাছে গিয়ে বসলাম। এত্ত রাগ- অভিমান কেন তোমার শুভ্র? হঠাৎ নিদ্রা আপুর কথা মনে পরে গেল। হুম এটাই সুযোগ। শুভ্র দাড়াও না চান্দু তোমার হাল কি করি বলেই ওর গায়ে হাত দিলাম। কিছু প্রসেস করতেই শুভ্র ঝিকে উঠে চোখ খুলে পরীকে এক টানে ওর কাছ থেকে ছিটকে ফেলে দিয়ে উঠে পড়ল।



– পরী! কি করছো এসব?
তুমি জানোনা! এগুলো করা আমার একদম পছন্দ না। তবুও কাজটা কেন করলে বলে শুভ্র জোরে একটা ধমক দিল পরীকে।



– কি করছি বুঝতে পারছোনা! দাড়াও ভাল করে বুঝিয়ে দিচ্ছি বলে পরী শুভ্রের দিকে পা বাড়াল।



– তুমি আবার আমার কাছে ঘেষছো! আমি বলেছিনা আমাকে চটাবেনা। তোমার কপালে তাহলে দুঃখ আছে। আমার রাগ চরম সীমায় উঠাও না পরী! তোমাকে আঘাত করতে ২য় বার ভাববোনা কিন্তু আমি।

তুমি কাছে আসলে আমার কষ্টের ক্ষত গুলো নতুন করে জেগে ওঠে। তাই আমার কাছ থেকে দুরে থাকাই তোমার জন্য ভাল। অন্য কেউ হলে এতদিন তাকে পৃথিবীতে রাখতাম না। আমার বাচ্চার মা তুমি তাই তোমাকে কিছু বলিনা। তাই বলে ভেবনা সবসময় নিজেকে কন্টোল করে রাখতে পারব।



– ওর কথা শুনে প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে গেল আমার। ওর বাচ্চার মা বলে আমাকে ওর কাছে রাখছে! আমার কোন মূল্য নাই ওর কাছে? নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হতে লাগল।

আমি কার জন্য এখানে আছি আর তার এরকম কথা! যে আমাকে চায়না আমি তার কাছে কেন বার বার যাই বেহায়ার মত। লজ্জা হওয়া উচিত আমার। এবার জেদ আমাকে ঘিরে বসল।

আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম,,,,,,, হয় আমাকে ছেড়ে দাও না হয় নিজের সাথে মানিয়ে নাও। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে সেটাও বল আমি তোমার বা তোমার সন্তানের উপর কোন দাবি করবনা।

এক কাপড়ে আমি এই বাসা আর তোমার জিবন থেকে নিশব্দে চলে যাব। কোন অভিযোগ করবনা। আমার আর ভাল লাগছেনা এসব। হয়ত বাঁচতে দাও না হয় ছেড়ে দাও। তবুও এভাবে রেখ না আমায়।



– ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে শুভ্র এতটাই রেগে যায় যে ওর এতদিনের পুরো আক্রোশ এক সাথে পরীর উপর গিয়ে পড়ল।

পরীকে খাটের উপর ফেলে দিয়ে রেগে চিৎকার করে বলল আমাকে,,,,,,! এই শুভ্রকে ছেড়ে যাওয়ার খুব শখ তাইনা তোর?

আগের বার কাছে ছিলাম না বলে সেই সুযোগ নিয়ে চলে গেছিস। এবার গিয়ে দেখাস। তোকে এভাবেই থাকতে হবে আমার মর্জিতে। যতটা কষ্ট দিছিস আমাকে সব কিছু ফেরত দেওয়া এখনও অনেক বাঁকি আছে পরী!

কষ্টের স্বাধ যে তোকে আরও পেতে হবে। কেবল তো শুরু। বার বার নিষেধ করা শর্তেও আমাকে আঘাত করে খুব মজা পাস তাই না। ছেড়ে যাবি তো! দেখা ছেড়ে গিয়ে বলে একটানে শাড়ী খুলে ফেলে শুভ।

আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলা তোর সখ আজ মিটাচ্ছি বলেই পরীর উপর attack করে নিকৃষ্ট ভাবে। পরী প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। কারন এই শুভ্রকে ও কখনও দেখেনি। মনে হচ্ছে অন্য কেউ।


– শুভ্র শুভ্র প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আমি কখনও এমন কাজ বা কথা বলবনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বলেই কেঁদে উঠল পরী।



পরীর আর্তচিৎকারে জান্নাত অবদি জেগে উঠে কান্না করে উঠল,,,,, কিন্তু শুভ্রের কানে কারো আর্তনাদ জায়গা পেল না। জান্নাত দোলনায় সুয়ে কেঁদেই চলছে।

পরীকে আজ আর আস্ত রাখবেনা শুভ্র। ও পাইছেটা কি! আমাকে,,,,, এই শুভ্রকে ইনসাল্ট আর কথা শুনায় এভাবে। ওর এত্ত সাহস কি করে হয়। আজ ওর সব ভিমরতি ছুটিয়ে দিব। সব জায়গায় পাগলামি! সারা জিবন মনে রাখবে এই রাতের কথা।



– ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুভ্র উঠে ওয়াসরুমে চলে গেল। আর পরী ওভাবেই পড়ে থেকে ফিকরে কান্না করে যাচ্ছে।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here