অস্তিত্বের খোজে part 26+27

0
612

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৬



-“”” আল্লা……..হ্”” আমাকে কেন স্বপ্ন দেখাইলা! আর কেনই বা আমাকে এটা ভাঙ্গতে হবে। কোনদিন ভাবিনি আমাকে শুভ্রের থেকে দুরে থাকতে হবে…….
আমি শুভ্রের জন্য পৃথিবীতে হয়ত আসছি জুটি হিসাবে তাহলে কেন ওকে ছেড়ে আমাকে দুরে থাকতে হবে। বুকের ভিতর অসহ্য ব্যাথা তরপরাচ্ছে।



– পরী…..! আমার কল কেন রিসিভ করিসনি। আর এত্ত বেয়াদপ কবে থেকে হলি।(শুভ্র)


– চোখ মুছে বললাম,,,,,, স্যরি শুভ্র আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও এমনটা হবেনা।


– স্যরি মাই ফুট…….. কোন ভাল মেয়ে এত্ত রাত অবদি বাসার বাহিরে থাকে? তোর এত্ত সাহস কি করে হয় রাত ১০ টা অবদি বাসার বাহিরে থাকা?


– আমি বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে শুভ্র…..


– ল্যাপটপ নিয়ে জলদি আমার রুমে যা।


– আমি এখনও গোসল করি নাই শুভ্র! গোসল করে যাই!


– যা বলছি তাই কর…….. একটা কথা আর বলবি না। go


– আমি ড্রেস, ল্যাপটপ,চাবি,ফোন নিয়ে শুভ্রের রুমে চলে গেলাম এবং এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।


– পলা চট করে বলে উঠল কি ব্যাপার বৌদি সূর্য কোন দিকে উঠছে পরী শুভ্রর রুমে গেল তারপর দরজা বন্ধও করে দিল।


– ওরা স্বামী- স্ত্রী যা পারে তা করুক,,,,,,,, তোর সমস্যা কি! বলেই অনিতা কাজে মনযোগ দিল।


– পলা বেশ খুশি হল যাহোক বৌদি মেনে নিছে সব।




– চোখের পানি বাধ মানছেনা আমার। ল্যাপটপ সেটিং করতেই শুভ্র ভিডিও কল দিল।


– পরী,,,,,! সামনে আসবি না তোকে টেনে বসাব আমি। কাছে থাকলে এতক্ষন কানের নিচে ৫০ খানা চড় পড়ত। কি হল,,,,, আসবি সামনে?



– ওড়না দিয়ে ভাল করে মুখ চোখ মুছে শুভ্রর সামনে একটা হাঁসি দিয়ে বসে পড়লাম।


– পরীকে দেখে শুভ্রের পুরো দিনের একরাশ ক্লান্তি দুর হয়ে গেল যেন।

শুভ্রের দেবীটা কি এই শুভ্রের উপর রাগ করেছে খুব?(শুভ্র)



– শুভ্রের কথাটি শুনে আমার বুকের ভিতর তুলপার করতে লাগল।
এরে ছেড়ে আমি কেমনে থাকব বলেই ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলাম।



– পরীর কান্না দেখে শুভ্রর প্রচন্ড খারাপ লাগল।

পরী! কি হইছে সোনা?
আমার কথায় কি খুব কষ্ট পাইছো সোনা?
শুভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।



– না শুভ্র,,,,,, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার ভাল লাগছেনা কিছু।


– শুভ্র ল্যাপটপের স্কীনে পরীর মুখে হাত দিয়ে বলল কি হইছে তোমার আমাকে বল। আচ্ছা আমাকে বলতে তোমার অস্বস্তি হলে মাকে বলতে পার। তাও তুমি কান্না করনা। কান্না আমার একদম বিশ্রী লাগে পরী।



– পরী কেবল শুভ্রকে কিছু কথা বলতে যাবে এমন সময় অনিতা দরজায় এসে নক করে।



– পরী চোখটা মুছে জলদি দরজা খুলে দিয়ে বলল মা কিছু বলবেন?


– তোমার নামে কিছু চপ বানিয়ে আনলাম। এসেতো কিছু খাওনি। অনিতা দেখল পরীর চোখ ২ টা বেশ লাল। কিন্তু কিছু বলল না।


– মা! আমারতো পেট ভরাই আছে।


– থাক ভরা,,,, তবুও খেয়ে নিও বলে আমার হাতে ট্রে টা দিয়ে বলল এখন থেকে শুভ্রের রুমেই থাকতে পারো পরী,,, কথাটা বলে মা চলে গেল।


– আমি ট্রী টেবিলে খাবার টা রেখে এসে শুভ্রকে বললাম শুভ্র আমি গোসল সেরে আসি!


– কি যেন বলতে চাইছিলা সেটা বলে যাও।


– আমার মনে নাই শুভ্র।


– শুভ্র আর কিছু না বলে বলল ফোন ওয়াশ রুমে নিয়ে যাও বলেই কল কেটে দিল। শুভ্র বুঝতে পারল পরী ওকে কোন কথা বলতে চাচ্ছেনা।


– মন খারাপের ভিতর ও আমার প্রচন্ড হাঁসি পেল ওর কান্ড দেখে।


– আমি ফোনটা নিয়ে সেট করে ওকে কল দিয়ে সাওয়ার চালু করলাম।


– শুভ্র এক দৃষ্টিতে পরীর গোসল দেখছে এবং ভিডিও টা সেভ অপসনে চাপ দিয়ে মুচকি হেঁসে উঠল।


– আমি যেন সব ভুলে গেলাম,,,,,, শুভ্র তোমার সাথে গোসল করতে আরও ভাল লাগত তাইনা?


– টেনশন নিও আমি এবার এসে তোমার এই সখটাও অতিব চমৎকার ভাবে পূর্ন করব যাতে তোমার সারা জিবন মনে থাকে।



– আমি টাওয়াল পড়ে রুমে আসতেই শুভ্র কল কেটে দিল। আমি চুলটা ভাল করে না মুছতেই ল্যাপটপে আবার কল দিল।


– পরী টাওয়াল না পড়লেও চলতো কিন্তু।


– খুলে ফেলব বলেই ওর দিকে চেয়ে দুষ্টমি একটা হাসি দিয়ে উঠলাম।


– হুম ,,,,,,,, পরী আলমারিতে ড্রয়ারে আমার যতগুলো শার্ট আছে সব বের করতো?


– কেন?


– এত্ত কথা কেন বল হুম! যা বলছি তাই কর।


– আলমারি থেকে সব শার্ট বের করে বললাম এবার কি করব।


– তুমি একেকটা করে পড়। আর আমাকে দেখাও।


– শার্ট গুলো তো নতুন ছিল শুভ্র। নষ্ট হবে তো!


– যা বলছি তাই কর।


– আমি শুভের সামনে একেকটা শার্ট পরে,,,,,,, তারপর চেঞ্জ করতে থাকলাম।


– শুভ্রের ২ টা চোখ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পরীকে দেখছে আর স্কীন শর্ট দিচ্ছে। পরীকে এভাবে কখনও দেখা হয়নি শুভ্রের।


– শুভ্র তুমি পিক তুলে নিচ্ছো? যদি কেউ পেয়ে যায়!


– শুভ্রকে তুমি বোকা ভাব! তুমি যানো না পরী আমি যখন নিউয়র্কে পড়তাম তখন একটা স্যার আমাদের কিছু আস্যাইমেন্টের কাজ দিয়েছিল। আমি স্যারের পুরো আইডি হ্যাক করে কাজ অনায়াসে করছিলাম। পরে স্যার বুঝতে পেরে আমাকে পানিশমেন্ট হিসাবে আবার একটা কাজ দেয়। সেটাও আমি একই ভাবে কাজ কমপ্লিট করি। পরে স্যার আরও কাজ দিয়েছিল বাদবাকি গুলো নিজে থেকেই করেছিলাম। স্যার পরে বলছিল আমাকে এটা শিখাবা!
আমি তাকে বলেছিলাম স্যার আমি যেমন তেমন স্টুডেন্ট না সেটা আপনার আগেই বোঝা উচিত ছিল কিন্তু বার বার পানিশমেন্ট দিয়েছেন। তাই কাজটা আমি আপনাকে শিখাবোনা। তাই এব্যাপারে আমাকে শিখাতে এসো না পরী! তোমার বর কে হ্যাকার ও বলতে পারো।


– বাব্বা আমার বর দেখছি সেই লেভেলের এক্সপার্ট সব দিকে।


– পরী তুমি বার বার পেটে হাত দিচ্ছো কেন? পেটে তোমার বাবু আছে নাকি হুম,,,,,,,


– কথাটা শুনে আমার কলিজা অবদি শুকিয়ে গেল। আমার চোখ ছলছল করতে লাগল।


– কিন্তু শুভ্রের সেদিকে খেয়াল নেই কারন শুভ্র অনেকটা আসক্ত হয়ে গেছে পরীকে এই অবস্থায় দেখে।


– পরী তোমার চুলগুলো সামনে নিয়ে আসতো?


– আমি চুলগুলো সামনে নিয়ে এলাম। চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।


– পরী! তুমি চুলগুলো কিন্তু একদম ভাল করে মোছ না। তবে এভাবে বেশ লাগছে।



– এবার শুভ্র ওর ট্রী শার্টটা খুলে ঠিক বুকের মাঝখানে হাত দিয়ে বলল পরী এখানে কিস♥ করতো আমাকে।


– আমি কয়েকটা ফ্লাই কিস♥ করলাম।


– পরী এভাবে না,,,,,,, এভাবে বলেই কয়েকটা কিস♥ করে দেখালো শুভ্র।


– আমি বেশ গভীর করে অনেক শব্দ করে কিস♥ করলাম।


– শুকরিয়া আমার মিষ্টি বউ। আমার রাত জাগা দেবী বলেই কিস♥ করতে লাগল শুভ্র।


– এবার পরী কান্না করে বলল শুভ্র আমার তোমাকে খুব প্রয়োজন। আমি স্ট্রেজ নিতে পারছিনা আর। আমার নিঃস্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।


– পরীর যে কিছু একটা হয়েছে সেটা শুভ্র ভাল করে বুঝতে পারছে। কিন্তু ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কালকেই ও বাসায় ফিরবে। কিন্তু এটা পরীর জন্য সারপ্রাইজ।



– চিন্তা করনা সব ঠিক হয়ে যাবে সোনা,,,,,,, পরী,,,,,,,,! চোখ বন্ধ করে শুধু এই শুভ্রকে ফিল কর।


– হুমমমমম বলেই চোখ বন্ধ করে ওর কথা শুনছিলাম। যাকে বলে কথার আদর।





– তুমি যান পরী! আমি ১৮ টা সুরা মুখস্থ করে ফেলেছি। কোরআনও খুব ভাল করে মোটামুটি শিখে ফেলছি বলেই কয়েকটা সুরা পরে পরীকে শুনাল শুভ্র।


– শুভ্র তোমার কন্ঠ তো দারুন……. আমার থেকেও ভাল করে সুরা পাঠ করছো।



– তাই! দেখ ল্যাপটপে আমার অনেক সিক্রেটস আছে বলেই সব দেখে দিয়ে শুভ্য পরীকে বলল তুমি দেখ আমি খাবার নিয়ে আসি। পুরা দিন কিছু খাওয়া হয়নি আমার।


– শুভ্র তুমি পুরো দিন খাওনি কেন?


– তুমি পুরোটা দিনে কল রিসিভ করবা না আর আমি মুখে খাবার তুলতে পারব?
আর কখনও এরকম করনা,,,, ,, আমার কষ্ট হয়তো পরী!


– স্যরি শুভ্র। I LOVE YOU my heart ♥


– I Love You Too my mehebuba♥…..

ওকে তুমি দেখ আমি খাবার নিয়ে আসি বলেই শুভ্র চলে গেল।



– আমি শুভ্রের পিক দেখতে লাগলাম। বিভিন্ন কনসার্ট করেছে বিভিন্ন স্থানে সব ফেন্ডরা মিলে। তাছাড়া আরও অনেক বড় বড় অকেশনে বিভিন্ন স্টাইলে পিক তোলা। আমি আবিভূত হয়ে গেলাম শুভ্রের এতটা ট্যালেন্ট দেখে। ওর সমন্ধে আমার আরও জানার দেখছি ষোল আনাই বাঁকি রয়েছে।


– শুভ্র প্লেটে খাবার নিয়ে পরীর সামনে বসে বলল কি দেখা হইছে?


– শুভ্র তুমি এতটা সুন্দর করে গান পারো আমাকে বলনি তো?


– হুম এত্ত গুনের জন্য তোমার বর সব মেয়েদের কাছে অনেক ফেমাস যা তুমি যানো না হয়ত।


– শুভ্র তুমি আমাকে তোমার জিবনে পরবর্তী তে রাখবে তো?


– এবার শুভ্র ভিষন রেগে গিয়ে বলল তোকে কি আমি সাধে বিয়ে করেছি যে সখ মিটল আর ছুড়ে ফেলে দিব? বললাম তো জিবনে কোন মেয়ের সাথে সখে কথা বলিনি প্রয়োজন ছাড়া। এমনকি তোর সাথেও না।


– বারে বকা দিচ্ছো কেন! ভয় করেতো তোমাকে নিয়ে যদি তুমি হারিয়ে যাও!


– আমি না আমার মনে হয় তুই আমার লাইফ থেকে হারিয়ে যাবি। অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পর।


– তোমার শার্ট গুলো গুছিয়ে রাখি! তারপর ঘুমাই?


– না আমি বাসায় গিয়ে গুছিয়ে রাখব তুমি ঘুমাও।

– আচ্ছা বলেই চেঞ্জ করার জন্য ড্রেস হাতে নিতেই শুভ্র ওর শার্ট টা আমার গায়ে থেকে খুলতে নিষেধ করল।


-পরী এভাবেই ঘুমাওনা,,,,,,,,,,,, আমার এভাবেই তোমাকে বার বার দেখতে ইচ্ছা করছে।


– ওকে শুভ্র বলে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর পরিশ্রম গেছে আজ তাই শুতেই চোখ জুড়িয়ে ঘুম নেমে আসল।



– শুভ্র খাবার কমপ্লিট করে বুকের নিচে বালিশটা রেখে ল্যাপটপ টা কাছে নিয়ে পরীকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে।



– শেষ রাতের দিকে খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে যায়। পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে শুভ্রের। পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে ও গভীর ঘুমে মগ্ন।

কাল ভালই ভাল বাসায় গিয়ে পরীকে পেলেই হয়। আর ঘুমাল না শুভ্র। এভাবে কিছুক্ষন কেটে যেতেই ফজরের আযানের সুর কানে ভেসে উঠল।

তার কিছুক্ষন পর শুভ্র পরীকে কয়েকটা ডাক দিতেই পরী চোখ মেলে পিটপিট করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।


– পরী যাও গোসল দিয়ে ফ্রেস হয়ে নামায পড়ো। আর হ্যাঁ ভুলভাল ডিসিশন নিবেনা কিন্তু। বলেই কয়েকটা কিস♥ করল শুভ্র পরীকে।


– আমি ঘুমে ঢুল ঢুল চোখে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালাম।


– পরী ওয়াশরুমে চলে গেলে শুভ্র লাইনটা কেটে দিয়ে উঠে পড়ল।


” সকালটা কেটে গেল এভাবেই। দুপুরে আমরা সবাই খাইতে বসেছি এমন সময় কৌশিকদা বলে উঠল মা! আজকের রান্নাটা গতকালের তুলনায় একটু খারাপ হইছে। সাথে অর্পিতাও যোগ দিল।



– বিমলা বলল এই প্রতিদিন কি রান্না ভাল হয়? এতে ঢোল পিটিয়ে বলার কি আছে তোদের?


– কেন দিদুন যেদিন ভাল হবে সেদিন প্রসংসা করতে কি আমি কার্পন্য করি নাকি হুম(কৌশিক)


– এই তোদের এত্ত পাকামো কথা বলতে হবেনা,,,,,,,, তোরা একদিন রান্না করে আমাকে খাওয়াস। তারপর বড়বড় কথা বলতে আসিস।(মা)


– আমি মার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি অন্যমনস্ক ভাবে কথা বলছেন। তার মানে উনি হয়ত কষ্ট পেয়েছেন।


– অনিতা শুভ্রটাকে খুব মিস করছে। শুভ্র হলে কোনদিন অন্তত তার মায়ের রান্নার ভুল আজ অবদি ভুল ধরেনি। সবাই ভাল মন্দ খাচ্ছে আর আমার ছেলেটা যে কি খাচ্ছে। তবে অনিতা একটু খুশি কারন আজ শুভ্র আসবে সন্ধার দিকে। শুভ্র কল করে আসার কথাটি বলেছিল।



– আমি খাবার খেয়ে চলে আসলাম আমার রুমে। কয়েকটা ভিডিও করলাম আমার এবং ল্যাপটপে সেভ করে রাখলাম দেন সুয়ে পড়লাম।



– বিকেলের দিকে শুভ্রর ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি রিসিভ করে সালাম দিয়েই বললাম কেমন আছো শুভ্র!


– সালাম নিয়ে বলল পরী তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে সোনা!


– কি সারপ্রাইজ বলেই একটা কিস♥ করলাম শুভ্রকে।


– আর ৪৫ মিনিট পর বাসায় আসছি। আমি রাস্তায়।


– কিহ্ তুমি বাসায় আসছো,,,,,, আমাকে কেন বলনি বলেই ধরপড় করে উঠে বসলাম।


– কেন আমি আসাতে তুমি খুশি নও পরী!


– শুভ্র আমাকে কখনও ভুলে যেওনা প্লিজ বলেই ফোন কেটে দিলাম। আমার প্রেগন্সসি রির্পোট ল্যাপটপের নিচে রেখে একটা ব্যাগ আর ফোন নিয়ে মার রুমের দিকে গেলাম।


– শুভ্র অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন একটা ছেলে। তাই বুঝতে পারল পরী কিছু একটা করতে যাচ্ছে। কাল থেকে সব কিছু পরিবর্তন পরীর মাঝে দেখেছে তাই শুভ্র আজ বাসায় ব্যাক করছে। শুভ্র সিটে একটা হাত দিয়ে বারি দিয়ে বলল এত্ত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম।

ওকে কেন কল দিতে গেলাম। এতটা রিক্স হত না বলেই ওর মাকে কল দিল।



– পরী অনিতার রুমে গিয়ে বলল মা আমি একটু আসছি। বাহিরে যাচ্ছি। এদিকে শুভ্রর কল বাজছে। অনিতা সেদিকে তাকাতেই পরী জলদি সিড়ি দিয়ে নামতে লাগল।


– পরী আস্তে যাও পরে যাবা তো?(অনিতা)


– মা শুভ্র হয়ত আপনাকে কল দিছে রিসিভ করুন বলেই খালি পায়ে আধা দৌড়ে বাসা থেকে বের হলাম। এখন দাড়োয়ান মানেজ। দাড়োয়ান এর কাছে গিয়ে বললাম শুভ্র আসছে চাচা আমি একটু রাস্তায় দাড়িয়ে আছি বলেই বের হলাম।

যেহেতু মেইন রাস্তায় বাসা আমাদের তাই ট্রাক্সি পেতে দেরী হলনা। আমি টাক্সি দাড়াতে বলেই,,,,,, বললাম মামা চলেন ট্রাক্সি ব্যাক করুন। কারন এই রাস্তা দিয়ে শুভ্র আসছে। ও আমাকে ধরে ফেলবে।



– না ম্যাম গাড়ি ব্যাক করবনা বলেই টাক্সি নিয়ে যেতেই বললাম ৩ ডবল ভাড়া দিব বলেই ১ হাজার টাকা তাকে দিয়ে উঠে পড়লাম।


– উনিও টাকার জন্য টাক্সি ব্যাক করল।



– ২ বার কল বাজতেই অনিতা শুভ্রের কল রিসিভ করে বলল কোথায় তুই এখন?


– মা পরী কই?




– কেন! একটু বাহিরে গেল। বলল একটু পর আসছে।


– মা! আমার মন বলছে পরী বাসায় ফিরার জন্য বাসা থেকে বের হয়নি। জলদি তুমি ওকে আটকাও। প্লিজ মা জলদি কর। ও বেশি দুর যেতে পারেনি।


– অনিতা শুভ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। কি বলছিস শুভ্র মেয়েটা আমাকে বলে গেল। কিছুক্ষন পরেই চলে আসবে।


– না মা তুমি বোঝার চেষ্টা কর ও আর ফিরবেনা। তুমি জলদি যাও।


– অনিতা এবার নিচে দৌড়ে নেমে এসে বাহিরে চলে গেল।


– অনিতার দৌড়ানো দেখে পলা আর বিমলাও অনিতার পিছে গেল। কি এমন হল যে অনিতা ওভাবে দৌড়াল।


– অনিতা একদম রাস্তায় বের হয়ে দেখে পরী নাই। এতটুকু সময়ের মধ্য গেল কোথায়। ভিতরে এসে দাড়োয়ান কে বলল “পরিমল! পরী কই?


– আঙ্গে মা! দিদিতো চলে গেল শুভ্র বাবা আসবে বলে।


– অনিতা বাসায় এসে আবার শুভ্রকে কল দিয়ে বলল শুভ্র পরী তো নাই। কি বলেছিস ওকে যে মেয়েটা এভাবে চলে গেল। নিশ্চয় কিছু বলছিস মেয়েটাকে। ভাল মেয়ে দুপুরে সবার সাথে খেল আর এখন নেই,,,,,, বোকা বানাচ্ছিস আমাকে!



– মা কথা বলার সময় নাই জলদি আকাশকে বল বাহিরের গেটের সিসি ক্যামেরা চেক করতে। পরী কোন দিকে গেছে ওটা দেখে বোঝা যাবে। জলদি কর মা!



– কি হয়েছে বৌমা এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?(বিমলা)


– মা! সব শেষ বলেই অনিতা আকাশের কাছে গিয়ে বলল আকাশ বাহিরের সিসি ক্যামেরা চেক করতো।


– ওকে ম্যাম বলেই সিসি ক্যামেরা চেক করে অনিতাকে দেখাল। অনিতা দেখল পরী অপজিট দিকে একটা টাক্সি নিয়ে চলে যায় জলদি। পায়ে জুতা অবদি নাই মেয়েটার।


– অনিতা শুভ্রকে কল করে সব বলল।


– ওকে মা আমি ২০ মিনিটের মধ্য আসছি।


– অনিতা রাস্তায় এসে দাড়িয়ে আছে শুভ্রের জন্য।

প্রায় ২৫ মিনিট পর শুভ্রের গাড়ি অনিতার সামনে দিয়ে চলে গেল। শুভ্র শুধু গ্লাস খুলে হাত ইশারা করে দেখাল।


– অনিতার চোখ ছলছল করে উঠল। এইতো বেশ দিব্যি ছিল মেয়েটা কিন্তু কেন এমন করল।



– ভয় আর কষ্ট নিয়ে টাক্সিতে বসে আছি। আমি শুভ্রকে কখনও মুখ দেখাতে পারবনা। কিন্তু কই যাবো সেটাও জানিনা। কিন্তু বাসায় আর ফিরবনা।


– ম্যাম আপনি কই যাবেন কিছু তো বললেন না।


– চলেন,,,,,,, আমি দেখছি বলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।


– শুভ্র ভেবে পায়না কি হল যে এত্ত বড় ডিসেশন নিল পরী। ওকে আজ পেলে ওর ভিমরতি যদি না ছুটাইছি।
কত কষ্ট দিবে আমাকে। ও জানেনা পরীকে ছাড়া শুভ্র থাকতে পারবেনা।



– ট্রাক্সি অনেক দুর চলে আসছে তাই বললাম মামা এখানে থামান।


– এখানে আপনি আসতে চাইছিলেন? জায়গাটা অনেক খারাপ ম্যাম। আপনি সুন্দরী মেয়ে মানুষ এখানে থাকা রিক্স ম্যাম আপনার জন্য তারপর সন্ধ্যা নেমে আসছে।



– চিন্তা করেন না আমার এখানে আত্বীয় আছে। আমি সেখানেই যাব বলে টাক্সি থেকে নামলাম।
টাক্সি ডাইভার ও আর কিছু না বলে চলে গেল।



– আমিও রাস্তা থেকে নেমে অজানা পথে হাটতে লাগলাম। একটু পর হয়ত মাগরিবের আযান দিবে……..

চলবে————-

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৭




– বাসার সবার কানে কথাটা গেছে পরী বাসা থেকে চলে গেছে। নিতাই সেন চুপ করে সোফায় বসে আছে পাশে বিমলা আছে। কৌশিক আর অনিল বাসায় এখনও আসেনি। এমন একটা কান্ড করবে পরী,,,,,,, কেউ কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।




– শুভ্র পাগলের মত খুজেই চলছে কিন্তু কোন অস্তিত্ব খুজে পাচ্ছেনা পরীর। যে নিজ ইচ্ছায় চলে যায় তাকে কই থেকে খুজবে শুভ্র।



– আমি সোজাই চলে যাচ্ছি। এমন সময় মাগরিবের আযান দিল। কই যাব বলতেই সামনে গাছের একটা বেদী পেলাম সেখানে বসেই আল্লাহ্ কে ডাকতে লাগলাম। একটা ব্যবস্থা করে দাও আল্লাহ্।



– নুরজাহান মানুষের বাসায় কাজ করে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় গাছের নিচে একটা মেয়েকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। এই ভর সন্ধায় ভূতটুত বসে নাইতো?



– কিন্তু ঐ পথ দিয়েই যেতে হবে। তাই ধীরে ধীরে কাছে গেল মেয়েটির। দেখল মেয়েটি কাঁদছে বসে থেকে।



– এই মেয়ে কে তুমি?


– অনেক আশার আলো দেখতে পেলাম মহিলাকে দেখে।


– আমাকে ১ রাত থাকার ব্যবস্হা করে দিবেন! আমি প্রেগন্যান্ট। ভর সন্ধায় এভাবে থাকলে আমার ক্ষতি হতে পারে বলেই মহিলার দিকে তাকালাম।


– নুরজাহান আগাগোড়া পরীকে ভাল করে দেখে বলল দেখে মনে হচ্ছে ভাল ঘরের মেয়ে। তোহ এখানে কি করছো! পায়ে জুতাও দেখছিনা। বাসা থেকে রাগবাগ করে চলে আসনিতো?




– ওনার কথা শুনে চুপ করে গেলাম।


– পরীকে চুপ করে থাকা দেখে নুরজাহান বলে উঠল দেখ আমি যেখানে থাকি তুমি হয়ত থাকতে পারবেনা। কারন আমি নিতান্ত গরীব মানুষ। নিন্দা করতে পারো আমাকে।


– এবার আমি তার কাছে এসে বললাম আমাকে যেখানে নিয়ে যাবেন যান তবুও এখান থেকে নিয়ে যান দয়া করে।


– নুরজাহান পরীকে নিয়ে তার বাড়িতে আসল।


– মাটির একটা ঘর তার ভিতর একটা চৌকি কিছু আসবাব পত্র। তবুও নিজেকে শান্তনা দিয়ে বললাম এটাই অনেক পরী। মন শান্ত করে এখানেই থাকতে হবে।


– নুরজাহান পরীকে টিউবয়েল পাড়ে এনে বলল তুমি হাত- চোখমুখ ধোও। আমি একটু দুরে দারিয়ে আছি।


– আমি ফ্রেস হয়ে এসে সব আসর আর মাগরিবের কাযা নামায আদায় করে বসে রইলাম।


– নুরজাহানেরর বয়স ৫০ বছর। ছেলেমেয়ের উপর বোঝা হতে চায়না বলে এখানে এসে একা থাকে। পরীকে পেয়ে তার অনেকটা সুবিধা হল।



– খালাম্মা আমাকে যেভাবে রাখবেন সে ভাবেই থাকব। আমি অনেক অসহায় খালাম্মা।


– দেখ বাবা আমিতো মানুষের বাসায় কাজ করি। সকালে যাই সন্ধায় ফিরি। এই সময়টা খুব সাবধানে থেক। আসে পাশের মানুষ খুব খারাপ। যত কম বের হবা ততই তোমার জন্য ভাল। বাকিটা আমি সামলে নিতে পারব। খালা বলে যখন ডেকেইছো তোমাকে আমি ফেলে দেই ক্যামনে!



– শুভ্র রাত ৯ টার দিকে বাসায় ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসল। পুরোটা দিন ধকলে ওর অবস্থা বেশ খারাপ।



– অনিতা শুভ্রকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। ১৮ দিন পর বাসায় ফিরছে ছেলেটা আর তার এই হাল।


– শুভ্র রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে দেখে গতরাতের শার্ট ওভাবেই খাটের উপর পরে আছে। শুভ্রর কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ঝটপট করে সব শার্ট ওয়াড্রপের ভিতর ঢুকে রেখে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে ল্যাপটপের নিচে কিছু কাগজ । সেটা হাতে নিয়ে শুভ্র রির্পোট দেখে ফ্লোরে বসে পড়ল। পরী প্রেগন্যান্ট!
শুভ্রর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। শুভ্র ওকে কথাটা না জানিয়ে কত বড় ভুল করেছে। সেটা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।



– অনিতা দরজা খুলে এসে বলল শুভ্র! তুই মেয়েটাকে কিছু বলছিস না? তাছাড়া এত্ত বড় ডিসিশন পরী কখনও নিত না। তোর আসার জন্য কষ্টে ও চলে গেছে।



– মা! আমি ওকে কিছু বলিনি বলেই রির্পোট টা অনিতাকে দিল শুভ্র।


– অনিতা রির্পোট দেখে সম্পূর্ন চুপ হয়ে গেল। শুভ্রর পাশে বসে বলল ও এই অবস্থায় কই গেল পরী!


– জানিনা মা! ও আমার কথা একবারও ভাবল না মা বলেই মাকে জড়িয়ে ধরল শুভ্র।


– অনিতার চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়তে লাগল। শুভ্রের যে কি হয়ে যাচ্ছে সেটা অনিতা ভাল করেই বুঝতে পারছে।


– নিদ্রা আর অর্পিতা রুমে এসে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
পরী ছোট মানুষ একটা ভুল ডিসিশন নিয়েই ফেলছে শুভ্র।(নিদ্রা)


– যে বাচ্চার মা হতে চলেছে সে কখনও ছোট না বউদি। ওর হয়ে একদম সাফাই করবেনা আমার কাছে বলেই শুভ্র কিছুটা রেগে গেল।



– অনিতা ওদের চলে যেতে ইশারা করতেই ওরা চলে গেল। শুভ্র ওভাবেই বসে।



– বাসার সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। বাসাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মেয়েটা পুরো বাসা মাতিয়ে রাখত।



– শুভ্র উঠে সাওয়ার রুমে গিয়ে লম্বা সময় নিয়ে সাওয়ার করে। কাঁদতে পারছেনা হয়ত ছেলে বলে।
সাওয়ার রুম থেকে বের হয়ে দেখে অনিতা খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।


– শুভ্র বস এখানে পুরোদিন কিছু খাসনি খেয়ে নে বাবা।


– মা! আমি কি করে খাই। আমার পরীটা যে এই অবস্থায় কিভাবে আছে, কি করছে , আমি কিছুই জানিনা। ও কি খাইছে না কোন বিপদে পড়েছে। আমার কিচ্ছু ভাল লাগছেনা মা!


– আমি সব বুঝতে পারছি বাবা,,,,,,,, তবুও কিছু খেয়ে নে বলেই শুভ্রকে কাছে বসাল অনিতা।


– শুভ্র এই একটা মানুষের ভক্ত। কোন দিন মায়ের উপর কথা বলেনা। যা বলে তাই করছে যেটা কৌশিক বা অর্পিতার মাঝেও দেখা যায়না।


– অনিতা শুভ্রকে ভাত তুলে খাওয়াচ্ছে।
শুভ্র খাচ্ছে আর চোখগুলো দিয়ে পানি পড়ছে। অনিতা খাওয়া সব কমপ্লিট করে দিয়ে শুভ্রকে বিশ্রাম নিতে বলে চলে যায়।



– পরী তোমায় ছেড়ে থাকতে হবে এটাতো কথা ছিলনা! তুমি কি মানুষ! এত্ত কষ্ট কাউকে দেয়। আমি তোমাকে কখনও ক্ষমা করবনা।



– শুভ্র পরীকে দেওয়া ল্যাপটপ টা খুলে দেখে একটা নতুন ভিডিও সেভ করা। সেটাতে ক্লিক করতেই পরীর
কন্ঠ ভেসে আসল।

” শুভ্র এটা যখন তুমি দেখবা তখন আমি অনেক দুরে। পরী পেটে হাত দিয়ে বলে শুভ্র এখানে আমার বাবু আছে। জানো সেটা বিকাশের মনে হয়। আমি ইচ্ছা করে তো কিছু করতে চাইনি। কিকরে হল আমি নিজেও জানিনা। বিশ্বাস কর এই বাচ্চাকে মনে হয় এখন পেট থেকে বের করে হত্যা করি। কারন এ আমার শুভ্রকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমার কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি কাকে কথা গুলো শেয়ার করতাম বল যে এটা বিকাশের বাচ্চা? আমাকে ভুলে যেওনা বলে ফ্লোরে বসে কিছুক্ষন কাঁদল তার পর অফ।




– শুভ্র ভিডিও দেখে চুপ করে বসে থাকল অনেকক্ষন। তারপর ল্যাপটপ টা গায়ের শক্তি দিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারল। ল্যাপটপ টা ভেঙ্গে শেষ।

এই তোমার বিস্বাস আমার প্রতি ছিল! যে, একটা কথা অবদি আমার সাথে শেয়ার করতে পারনি? তুমি কেমন পরী,,,,,, আমার কষ্ট হয়না! আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না……..?




– এভাবে বেশ কয়েকমাস কেটে যায়। শুভ্র অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। কাজের মধ্য বিজি থাকে কিন্তু রাত এলেই পরী নামক দেবীটাকে শুভ্রের খুব মনে পরে যায়। একাকি নিষঙ্গতা জিবন বড়ই কষ্টের। শুভ্রের রানী টা হারিয়ে গেছে শুভ্রের জিবন থেকে।



– পরীর ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট। এখানে থাকতে ওর অনেক কষ্ট হয়। তবুও মেনে নিছে। রুম থেকে একদম বের হয়না কিছু কাজ ছাড়া। খুদা,কষ্ট দারিদ্র ওকে অনেকটা মানুষিক ও শারিরীক দিক দিয়ে আঘাত করেছে। ফোন টা বের করে শুভ্রের পিক, ভিডিও দেখে,,,,,শুভ্রের ছবিগুলোর সাথে কথা বলে,,,,,অনেক অভিযোগ করে এভাবেই দিন কেটে যায় মেয়েটার।



– নুরজাহান যেখানে কাজ করে সেই পরিবারটা অনেক ধনী পরিবার। আযাহার আর রেশমার একমাত্র ছেলে নিশু এই ৩ জন মিলে পরিবার।


– নুরজাহান তুমিতো একা থাক,,,,,,,, আমাদের এখানে এসে থাকলে আমাদেরও কিছুটা সুবিধা হত। ( রেশমা)


– আপা আমার একটা মেয়ে আছে তার মধ্য ওর বাচ্চা পেটে,,,,, ওরে ছেড়ে কেমনে আসি?


– তোমার মেয়ে কই থেকে এলো নুরজাহান!


– নুরজাহান সব খুলে বলল রেশমাকে।


– সব কথা শুনে রেশমা বলল ওকেও নিয়ে এসো তোমার সাথে। ভালই হবে তাহলে।


– অনেক সৎ মেয়েটা কারো দয়া নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়না। আমি এ যাবত পর্যন্ত যত টাকা ওর পিছে খরচ করেছি সব খাতায় লিখে রাখে। পরে শোধ করে দিবে বলে। সবসময় চুপ করে থাকে। এতদিনে একদিনও মুখে হাঁসি দেখিনি মেয়েটার। একাএকা কথা বলে ওর স্বামীর নাম ধরে। ওকে দেখে খুব কষ্ট হয় আপা। ছোট মেয়ে এই অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়ে আসছে। আমি তার ঠিকমত যন্তও নিতে পারিনা।




– একদিন শুভ্র নামায পড়ছিল রুমে কিন্তু চাবি পুশ করতে ভুলে যায়। সেটাই শুভ্রের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।


– অনিতা সন্ধার পূজা শেষে শুভ্রের রুমের দরজা খুলে শুভ্রকে এই অবস্থায় দেখে ফ্লোরে বসে পড়ল আর হাতের সব কিছু পরে গেল।




– শুভ্র তখন একমনে দোয়া করছে,,,,,, “”””” আল্লাহ্”””” আমার সন্তান আর স্ত্রী যেখানেই থাকুক না কেন ওদের সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা কর প্রভু। জানিনা ওরা কেমন আছে। আপনিই আমার একমাত্র শেষ ভরষা সব কাজে।

আমি ওর কাছে নেই যে, এই সময় ওর একটু যত্ন নিব,,,,, ওকে সহিসালামতে রেখ প্রভু বলে মোনাজাত শেষ করে উঠে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে পিছনে ফিরে ওর মাকে দেখল। শুভ্র সব বুঝে ঠান্ডা মাথার অনিতার দিকে পা বাড়াল।




– শুভ্র ধীরে ধীরে ওর মায়ের কাছে গিয়ে পাশে বসে অনিতার ২ পায়ে চুমু খেয়ে বলল মা পরীটা আমাকে চেঞ্জ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু দেখ আজ ও নাই।


– অনিতা কোন কথা বলে না। অনিতা বিড়াট শক্ খেয়ে গেছে।



– মা কিছু বল। আমি খুব কষ্টে আছি মা। তুমি যদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি শুভ্র বাঁকিটুকুও শেষ হয়ে যাব। প্লিজ মা কিছু বল বলেই অনিতার কোলে মাথা রেখে ওভাবেই সুয়ে শুভ্র বলে উঠল মা আমার সাথে কথা বল। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু অনিতা চুপ করেই রইল।



– অনিতা ছাড়াও শুভ্রের কাজ গুলো আরও একজন দেখে ফেলেছে আর সে জলদি সরে যায় দরজা থেকে।



– আজ ১০ দিন হয়ে গেল অনিতা শুভ্রের সাথে কথা বলেনা। শুভ্র যেখানে থাকে সেখান থেকে অনিতা চলে যায় যা শুভ্রের জন্য খুবই কষ্টকর।

একদিন শুভ্র অনিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল মা!
আমার খুব কষ্ট হয়তো তুমি আমার সাথে কথা না বলার জন্য। তবুও অনিতা কথা বলেনা। শুভ্র অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে থেকে অনিতার কপালে কিস করে চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে যায় রুম থেকে।




– কয়েকদিন ধরে কৌশিক ব্যাপারটা লক্ষ্য করে যে মা শুভ্রের সাথে কথা বলেনা।

কিছুদিন পর কৌশিক নিদ্রাকে জিঙ্গাসা করে,,,, নিদ্রা! মা শুভ্রর সাথে কথা কেন বলেনা? তুমি কি কিছু জানো?



– শুভ্র রুমে নামায পরছিল একদিন সেটা মা দেখে ফেলে। এর জন্য মা ওর উপর রাগ করে আর কথা বলে না। শুভ্র মুসলমানদের মত নামায পড়ে কৌশিক!(নিদ্রা)



– নিদ্রার কথা শুনে কৌশিক অত্যন্ত রেগে যায়। কৌশিক হনহন করে শুভ্রের রুমে গিয়ে ওর কলার ধরে হির হির করে টেনে নিচে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বলল তুই এটা কি করেছিস।



– কৌশিকের চিৎকারে বাসার সবাই চলে আসে। শুধু অনিতা ওর দাদার বাসায় গিয়েছিল সেদিন তাই অনিতা অনুপস্থিত ছিল সেখানে।



– অর্পিতা দৌড়ে গিয়ে কৌশিক কে শুভ্রের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে কৌশিকদা দাদা কে কেন মারছো?



– কৌশিক অর্পিতাকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে বলল ছোট মানুষ ছোটর মত থাকবি। আর একবার কাছে আসলে এক থাপ্পড়ে তোর ভিমরতি ছুটে দিব।



– নিদ্রা কৌশিককে জোর করে টেনে আনে। কৌশিক কি করছো! কথাটা আমি তোমাকে বলেছি কি শুভ্রের গায়ে হাত তোলার জন্য!

শুভ্র চুপ করে আছে। শুভ্রর সব বোঝা শেষ কৌশিক সব জেনে গেছে। এখন বাঁকিটা আল্লাহ্ র হাতে।



– আরে ও যে মেয়ের জন্য নিজ ধর্ম ত্যাগ করেছে সেই ওকে ছেড়ে গেছে। ও এটা বোঝেনা! ওকে আজ আমি মেরেই ফেলব।

নিতাই এসে কৌশিককে একটা জোড়ে ধমক দিয়ে বলল কি হচ্ছেটা কি এখানে!



– দাদু ও সব শেষ করে দিয়েছে।
যার নিজের মা বেলজ্জাহীন সে কেমনে ভদ্র হবে।

যে মহিলা একজন বিবাহিত পুরুষকে বেলজ্জার মত বিয়ে করে এটা জানার পরেও যে সে বিবাহিত তার সন্তান কতটা ভাল হবে।

সৎ সারাজীবন সৎ ই থাকে যেটা আজ ও আবার প্রমান করে দিল। ও কিকরে এটা করল। আমাদের কথা একবারও ভাবলনা। সমাজে মুখ দেখাব কেমনে!



– শুভ্রর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাথার উপড়ে। দাদা এসব কি বলছে। চোখের পলকে সব কিছু দুমড়ে মুচরে গেল শুভ্রর বুকের ভিতরটা।



– কৌশিক কি সব বলছো,,,,,,, পাগল হয়ে গেছ তুমি। মুখে লাগাম দাও।( নিদ্রা)



– তুমি কতটা যান ওর বিষয়ে নিদ্রা! ওর মা মাধুরী বাবা বিবাহিত জানা স্বত্বেও জোর করে বিয়ে করেছে।

শেষে মার হাত-পা ধরেছে মাধুরী শুধু বাবাকে পাওয়ার জন্য।

আমিতো ওকে সহ্যই করতে পারতাম না। মা আমাকে বাধ্য করেছে ওকে মেনে নিতে। আমার মা হয়ে ওকে মেনে নিছে অন্য কেউ হলে কখনও মেনে নিত না।

আর সেই মাকে কষ্ট দেয় ও। ওকে এই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বল ওর মুখও দেখতে ইচ্ছা করছেনা আমার।



– শুভ্র আর একটিও কথা না বলে চলে আসতেই অর্পিতা গিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে দাদা কই যাচ্ছো…….. কোথাও যাবা না!

কিন্তু শুভ্র নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।




– অনিলও কিছু না বলে রুমে এসে বসে পরে। কারন কৌশিক যে কথাগুলো বলেছে সব কটা কথা অনিলের বুকের ভিতর বিধে গেছে।

শুভ্রটাকে ঠিকমত আদরও করেনি কখনও যাতে কেউ পিছে কথা বলে অনিলের দুর্বলতা নিয়ে। কিন্তু আজ শুভ্র সব জেনে গেল।



– বিমলা কান্না করতে করতে বলল কৌশিক খুব খারাপ কাজ করেছিস কথাটি সবার মাঝে বলে। আশা করিনি তোর কাছে এরকম ব্যবহার।




– পুরোটা দিন আর শুভ্র বাসায় ফিরে না। একদম ও শেষ হয়ে গেছে। এক জিবনে কতটা কষ্ট সহ্য করবে আর। পুরো বাসায় থমথমে ভাব।



– সন্ধার পর বাসায় অনিতা আসলে অর্পিতা কান্না করতে করতে সব বলে দেয় বাসায় কি কি ঘটেছে।

মা পুরোটা দিন দাদা বাসায় ফিরে নি। কারও কলও রিসিভ করছেনা। দাদার কিছু হয়নি তো?




– অনিতা কথা গুলো শুনে ক্ষেপে সোজা কৌশিকের রুমে গিয়ে কৌশিককে একটা থাপ্পড় মেরে বলল তোর সাহস কি করে হল শুভ্রকে এধরনের কথা বলা! বলেই একটা ধাক্কা দিল কৌশিককে।

আমার ছেলে আমি বুঝবো তুই বোঝার কে? শুভ্রর যদি কিছু হয় আগে তোকে বাড়ি ছাড়া করব।




– মা শুভ্র তোমার কাছে সব হয়ে গেল আমি বা অর্পিতা তোমার কিছু নয়।

যে মহিলা তোমার সংসার নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল তার সন্তান তোমার কাছে প্রিয় হয়ে গেল!



– কৌশিক আজ যদি শুভ্রকে না পাই আগে আমি নিজেকে শেষ করে দিয়ে তোদের মুক্তি দিয়ে যাব বলেই হনহন করে বের হয়ে গেল অনিতা



– অনিতা রুমে এসে দেখল অনিল সুয়ে আছে। অনিতা খুব ভাল করে যানে আজ অনিলের উপর কি বয়ে গেছে।



– অনিল উঠে এসে অনিতার হাত ধরে বলল “অনু” আমার ছেলেটাকে এনে দাও প্লিজ। ফোন রিসিভ করছেনা। সারাদিন হয়ত কিছু খায়নি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অনু।



– অনিতার চোখদিয়ে পানি পরে গেল। আজ ১৯ টা দিন শুভ্রের সাথে কথা বলেনি অনিতা। তার মধ্য এমন একটা আঘাত ও কিকরে সহ্য করবে।

অনিতা দেরী না করেই শুভ্রকে কল দেয়। কিন্তু রিসিভ হয়না।
অনিতা এবার মাসেজ করে বলল “”” শুভ্র আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা কেন এরকম করছিস।””””



– এবার শুভ্র কল ব্যাক করল।

” হ্যাঁ মা বল।”


– শুভ্রের কান্না মিশ্রিত কথা শুনে অনিতার বুক হুহুহু করে কেঁদে উঠল।
কই আসিছ শুভ্র?



– শুভ্র লোকেশন বলে ফোনটা কেটে দিল। শুভ্রের আগের জিবন হলে হয়ত এতক্ষন নেশার মধ্য ডুবে থাকত। কিন্তু ইসলামে নেশা করা হারাম। তাই একাই কষ্ট গুলো বয়ে বেড়াচ্ছে।



– অনিতা বের হতেই নিদ্রা বলল মা আমি যাই আপনার সাথে?



– অনিতা চিৎকার দিয়ে বলল স্বামীকে কথা লাগানোর আগে একবারও মনে হইছিলনা এর ফল কি হবে!

আমার ক্ষত হয়েছে তাই আমাকে মলম লাগাতে দাও বলেই অনিতা ডাইভারকে বলে গাড়ী নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।



– একটা রেল লাইনের মাঝখানে শুভ্র বসে আছে। অনিতা পাগলের মত দৌড়ে আসে শুভ্রর কাছে।



– শুভ্র অনেকটা শান্ত হয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। অনিতা শুভ্রের ঘাড়ে হাত দিয়ে ওখানেই বসে পড়ল।



– মা! খালি পায়ে কেন এসেছো! পাথরের মধ্য হাটতে কষ্ট হচ্ছে তো তোমার….. এভাবে কেউ আসে?




– পাথর শুধু রক্ত ঝড়ায় কিছুক্ষনের জন্য কিন্তু কিছু কথা বুক চিড়িয়ে দেয় দীর্ঘ সময় ধরে। যা তার থেকেও অনেক কষ্টকর হয় শুভ্র!



– শুভ্র হেসে উঠল অনিতার কথা শুনে।
মা! তুমি কবি হলে কবে থেকে!



– শুভ্র বাসায় চল…….



– শুভ্র অনিতাকে অচমকায় নিজের কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে বলল মা! দাদাতো নিষেধ করেছে বাসায় যেতে। আমি কেমন করে যাই বল?



– কৌশিক তোর কাছে বড় হয়ে গেল! আমি তোর কাছেই কিছু না?



– মা! পরী খুব কষ্ট দিছে ,,,,,, দাদাও দিল কিন্তু বিস্বাস কর এতে আমার যতটা কষ্ট হয়েছে তার থেকেও বেশি কষ্ট পাইছি যেদিন থেকে তুমি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলা।

আমার খুব কষ্ট হয়তো মা বলেই শুভ্র ওর মায়ের কপালে গভীর ভাবে চুম খায়।
এবার শুভ্র ফুফিয়ে কান্না করতে লাগল ছোট বাচ্চাদের মত।

“”

– আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। আর কখনও করবনা এমন ব্যবহার তোর সাথে। আমাকে ক্ষমা কে দে।



– রেল লাইন থেকে উঠে বড় রাস্তাটা পার করে শুভ্র অনিতাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে এসে বসে পড়ল।



– গাড়ির ডাইভার একটু দুর থেকে এদের মা- ছেলের ভালবাসা দেখে কেঁদে ফেলে। মায়ের কষ্ট হবে বলে এতদুর অবদি মাকে কোলে নিয়ে হেঁটে গাড়িতে তুলল। কতটা মায়ের প্রতি প্রেম থাকলে একটা ছেলে এতটা করে।



– শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে অনিতা কেঁদে বলল চিন্তা করিসনা শুভ্র ওরা যদি এবার কিছু বলে তাহলে তোকে নিয়ে আমি বাসা থেকে বের হয়ে আসব।



– অনিতা শুভ্রকে বাসায় নিয়ে আসে।



– অর্পিতা শুভ্রকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। দাদা ফোন কেন ধরোনা। আমার কি কষ্ট হয়না?



– আমি যদি কলটা ধরতাম তাহলে কেমনে জানতাম অর্পিতা আমায় এতটা ভালবাসে বলেই অর্পিতার কপালে একটা কিস করল শুভ্র।



– শুভ্রের কথা শুনে বাসার সবাই ডাইনিং রুমে চলে আসল।



– অনিতা নিতাইকে বলল বাবা! শুভ্র এখানেই থাকবে আমার সাথে, এখানেই নামায পড়বে, এমনকি মসজিদে গিয়েও নামায পড়বে।

কারো যদি এতে সমস্যা হয় আমি শুভ্র কে নিয়ে বাসা থেকে চলে যাব।



– বউমা আমাদের সমাজ বলে কিছু আছে। এবার অনিলও নিতাইয়ের সাথে সুর মেলালো। বাবা ঠিকি বলেছে অনু।

সমাজ বলেও তো কথা আছে। বাসার সবার যেন একই কথা। শুভ্রের ধর্ম পরিবর্তন কেউ মেনে নিতে চাচ্ছেনা।



– কিসের সমাজ। আমার ছেলের কিছু হলে কোন সমাজ দেখতে আসবেনা। আমি কোন সমাজ মানিনা। আমি বললাম তো আমি শুভ্রকে নিয়ে চলে যাব আপনাদের সমস্যা হলে।



– মা শুভ্রই তোমার কাছে সব হয়ে গেল। আমাদের কথা না ভাব কিন্তু বাবা কি করছে তার কথা একটু ভাব।(কৌশিক)



– আমার যা বলার বলে দিছি। কৌশিক, অর্পিতার জন্য ওর পরিবার আছে।

কিন্তু আমার ছেলেটার আমি ছাড়া কেউ নেই। দেখি ওর সাথে থাকলে আমার জাত- পাত চলে যায় কিনা।

অনিতা আজ খুবই কঠোর। কখনও কারো মুখে উপর কথা বলেনি কিন্তু শুভ্রের গায়ে হাত তোলার জন্য আজ প্রচন্ড রেগে আছে। কারো সাথে কোন মিমাংসা নয়।

ওর শেষ কথা শুভ্রকে নিয়ে অনিতা আলাদা থাকবে।



– শুভ্রর শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসে। নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে সবার সামনে ফ্লোরে পড়ে যায়।

অর্পিতা ধরেও ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারেনা শুভ্রের। অর্পিতা দাদা বলে চিৎকার করে ওঠে। শুভ্রর শরীর ২ বার কেঁপে উঠে একদম নিস্তেজ হয়ে যায়।




– অনিতা শুভ্রের কাছে বসে পরে ধপ করে।
কৌশিক দৌড়ে এসে শুভ্রের গায়ে হাত দিতেই অনিতা চিৎকার করে বলে উঠল আজ যদি আমার ছেলের কিছু হয় বাসার কাউকে ছাড়ব না আমি। সবাইকে জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব। কারো কোন মাফ নেই বলে কেঁদে উঠল অনিতা।



– অনিতা শুভ্রের গা ঝাকিয়ে বলে উঠল শুভ্র কি হল তোর আমার সাথে কথা বল বাবা।

তুই আমার কাছে আমানত বাবা। তোর কিছু হয়ে গেলে পাগল হয়ে যাব আমি। আমি তোকে নিয়ে চলে যাব এখান থেকে কথা বল বাবা।

শুভ্রের মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হতে লাগল। একটা মানুষ কতটা শারিরীক এবং মানুষিক আঘাত সহ্য করবে। শুভ্র নামের ভিতের প্রান পাখিটাই মনে হয় বের হয়ে গেল। সব শেষ……………..

চলবে—————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here