অস্তিত্বের খোজে part 24+25

0
730

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৪



– শুভ্র দরজা লক করে দিয়ে রুমে লাইট জ্বালিয়ে পরীর কাছে এসে বসল। পরী গভীর ঘুমে মগ্ন। শুভ্র এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিল যাতে পরী ঠান্ডায় আরো ওকে জড়িয়ে ধরে। অদ্ভুত অদ্ভুত বুদ্ধি সব শুভ্রর।



– শুভ্র পরীর পাশে আধাশোয়া হয়ে বসল। অনেকক্ষন পরীর দিকে তাকিয়ে থেকে ওর গলায় হাত বুলিয়ে দিল। গলায় এখনও স্পষ্ট দাগগুলো বোঝায় যাচ্ছে। আর চোখের পানির দাগ শুকিয়ে গেছে……। দেখে বোঝায় যাচ্ছে পরী অনেকক্ষন কান্না করেছে।

“পরীর একটা গুন আছে শুভ্র ওকে যেভাবেই আঘাত করুক না কেন সেটা ও মুখ বুঝে সহ্য করে যেটা শুভ্রের কাছে খুব ভাল লাগে। শুভ্র পরীর কপালে একটা কিস♥♥♥♥ করে বুকের ভিতর টেনে নিল। শুভ্রর ২ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল,,,,, পরীকে ছাড়া ও কেমনে থাকবে। পুরো রাত পরীকে ওভাবেই নিয়ে থাকল ঘুম আর আসলনা শুভ্রর।



– ভোর বেলায় শুভ্র পরী কে ডাক দিতেই পরী আরো জাপটে ধরল শুভ্রকে।

– পরী,,,,,,,,! ওঠো….. ভোর হয়ে গেছে নামায পড়বা না?

– উমমম্ বলে চোখ খুলতেই দেখি শুভ্রের পেটের উপর পা তুলে দিয়ে ওকে জাপটে ধরে সুয়ে ছিলাম এতক্ষন।

– আল্লাহ্ কি করেছি আমি,,,,, বলেই চট করে পা নামিয়ে উঠে বসি।

– শুভ্র পরীর কান্ড দেখে মিটমিট করে হাঁসছে। এভাবে প্রায় বাঁকিটা রাত আমার পেটে পা দিয়েই সুয়ে ছিলা পরী!


– শুভ্রর কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে যাই আমি। আমি চোখ ২ টা বড় বড় করে বললাম তুমি কখন আসছো শুভ্র আর আমাকে ডাকোনি কেন?


– তোমার ঘুম নষ্ট করতে চাইনি তাই,,,,,, বলেই শুভ্র উঠে ওয়াশরুমে গেল।

– আমার খুব ঠান্ডা লাগছিল তাই এসিটা অফ করে দিয়ে উঠে পড়লাম।


– শুভ্র আর আমি ২ জনেই ফজরের সালাত আদায় করলাম একসাথে।




– শুভ্র সালাত আদায় করে খাটে বসে আমাকে ডাক দিল।
পরী এখানে আসতো?



– আমি গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও আমাকে একটানে ওর কাছে নিল এবং আমাকে নিয়ে সুয়ে পড়ল আর আমার বুকে মাথা রেখে বলল আমি এখন ঘুমাব। পুরো রাত জেগে তোমাকে পাহারা দিছি। এই জন্য তোমাকে ঘুম থেকে জাগাইনি। এখন আমি ঘুমাবো বাঁকিটা তুমি সামলাবে।



– কেন বাসায় কি ডাকাত এসেছিল তাই তুমি আমাকে পাহারা দিয়েছিলে?



– শুভ্র চট করে আমার গলায় ২ ঠোট দিয়ে একটু চাপা দিয়ে বলল,,,,,, পরী! কোন কথা না আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আর বিরক্ত করনা তো।


– শুভ্র সকাল হয়ে গেছেতো মা যদি তোমার রুমে গিয়ে দেখে তুমি নেই তাহলে?



– তাহলে কিছুই না,,,,আমার রুমে ভিতর থেকে চাবি পুশ করে দিছি,,,, তাই বাহির থেকে ডুকতে পারবেনা। আর এত্ত কথা কেন বল তুমি!
তুমি কি চাও আমি চলে যাই। প্লিজ ঘুমাতে দাওতো। মুখ একদম বন্ধ করে রাখবা।




– আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। ইশ্ কবে এরকম করে শুভ্র কে নিয়ে সুয়ে থাকব পারমেন্টলি ভাবে সেটা “”””””আল্লাহ্”””””””” ভাল জানে বলেই শুভ্রর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। শুভ্র ততক্ষনে গভীর ঘুমের ভিতর তলিয়ে গেছে। মনটা চাচ্ছে শক্ত করে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে রাখি।


– সকাল ৯ টার দিকে সব নাস্তা রেডী করে কাজের লোক পলাকে বলল দিদি সব রেডী করেছি। আপনি সবাইকে ডাক দেন।




– অনিতা শুভ্রের রুমে এসে কয়েকবার নক করল কিন্তু শুভ্রর কোন সাড়াশব্দ নেই। শুভ্র হয়ত ঘুমাচ্ছে বলে অনিতা নিচে আসল।
সবাই আছে কিন্তু পরী নেই দেখে পলাকে বলল,,,,,,, পলা! পরীকে ডেকে নিয়ে আয়তো। এখনও কেন আসল না মেয়েটা।



– পলা উপরে এসে পরীকে দরজায় নক করেই পরী বলে ডাকতে লাগল।



– পলা আন্টির ডাক শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম একটু। এখন কি করি। শুভ্রতো ঘুমাচ্ছে। ডাকতে একদম নিষেধ করছে। আমি শুভ্রকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে নিশব্দে এসে দরজা খুলে বললাম,,,,,,, আন্টি শুভ্র আমার রুমে ঘুমাচ্ছে,,,,, একটু সবাই মানেজ করেন না।
শুভ্র ঘুমাইছে কিছুক্ষন আগে ওর ঘুমের প্রয়োজন তাই ওকে ডাকতে পারছিনা। আপনি যদি ব্যাপারটা দেখতেন,,, আপনি ছাড়া তো আমার কেউ নেই যে তাকে বলব।



– পরীর ছলছল চোখে করুন ভাবে তাকানো দেখে পলা আর কিছু না বলে নিচে চলে আসল। আসলেই মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই। আমাকেই বিস্বাস করে। এতদিন পর একটু সুখ পাইছে সেটা আমি কেমনে নষ্ট করি কথা গুলো পলা মনে মনে ভাবতেই অনিতার ডাকে ওর ধ্যান ভাঙ্গল।



– কি রে পলা! পরী আসল না?

– একটু পর আসছে বউদি,,,,,তোমরা খেয়ে নাও।

– পলার কথার ভাবসাব ভাল ঠেকছেনা তাই অনিতা নিজে পরীকে ডাকতে গেল। পলাতো ভয়ে শেষ।

– পরী দরজা খোল তো,,,,,,, বলে অনিতা দরজায় নক করল।

– মার ডাক শুনে আমি শেষ। এখন কি করি আমি। এসে যদি শুভ্রকে দেখে তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। যা খুশি তাই হোক,,,,,দেখলে আমার জন্যই ভাল তাহলে শুভ্রর সাথে অন্তত যেতে পারবো তো বলেই ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুললাম।


– অনিতা পরীর দিকে তাকিয়ে বলল তুমি খেতে গেলেনা কেন? আর রুম অন্ধকার কেন?

– আন্টি এখনই নিচে যেতে বের হচ্ছি এই সময় আপনি এলেন বলেই বের হলাম রুম থেকে।
“””আল্লাহ””” যা আমার জন্য ভাল হয় তাই কর বলে জলদি নিচে নেমে আসলাম।



– অনিতা আর রুমে না ঢুকে মনে মনে বলল শুভ্র রুমে থাকলে পরী কখনও দরজা খুলতো না আর দরজা খোলা রেখে নিচে যেত না। তাই অনিতাও নিচে নেমে আসল পরীর পিছে পিছে।



– আমি এসে চেয়ারে বসে পলা আন্টিকে ইশারা করতেই উনি উপরে গিয়ে আমার রুমে দরজা লক করে নিচে নেমে আসল। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি।



– আমি নাস্তা কমপ্লিট করে নিচেই থাকলাম। রুমে আর গেলাম না। কারন মা যা চালাক ধরে ফেলতে ২ সেকেন্ড লাগবেনা। তাই ওনার পিছ পিছ ঘুরছি।



– দুপুর ১২ টার দিকে শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দেখে পরী নেই তাই জলদি রুম থেকে বের হয়ে ওর রুমের কাছে এসে চাবি পুস করে দরজা খুলে ফ্রেস হতে চলে গেল। (কি লুকোচুরি প্রেম জাষ্ট ওয়াও)




– আমি আর শুভ্রের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলাম না একবারও। মা ওর পাশে পাশেই আছে সাথে নিদ্রা আপু, অর্পিতা, দিদুন সবাই। আমি শুধু দুরে দাড়িয়ে থেকে হাংলার মত দেখছি সবাইকে। কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি শুভ্র। তাই দুরে থেকেই দেখতে হচ্ছে শুভ্রকে।




– দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে শুভ্র যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে নিচে গেল। সবাই ওকে বাহির অবদি এগিয়ে দিয়ে আসে কিন্তু আমি ওকে দেখতে অবদি পারিনি। কারন শুভ্রের নিষেধ ছিল রুম থেকে একদম বের হওয়া।



– শুভ্র গাড়িতে উঠলে অনিতা এসে শুভ্রর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল নিজের খেয়াল রাখিস। এটা করবি না ওটা করবি না বলে অনেক কথা বলল অনিতা।


– মা আমি কি ছোট আছি! তাই এত্ত কড়া নির্দেশ দিচ্ছো?


– নিজের যখন সন্তান হবে বুঝবি,,,,,,, সন্তান কাছে না থাকার কি জ্বালা।


– শুভ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ডাইভার কে বলল দাদা চলুন।


– শুভ্রর গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই অনিতার চোখ ভারী হয়ে গেল। চোখের পানি মুছে বাসার ভিতর আসলো। পুরো বাসাটা খাঁ খাঁ করছে।



– পরী দিদি কি করছো?(অর্পিতা)


– বসে আছি,,,,, ভিতরে আসো অর্পিতা।


– অর্পিতা পরীর হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল দাদা সবার জন্য এনেছে। তোমাকে এটা দিতে বলছে,,,,, তুমি কিন্তু এটা পড়বা কেমন। আর শোন আমার দাদা কিন্তু একটুও খারাপ না তুমি যতটা মনে কর।


– অর্পিতার কথা শুনে বুকের ভিতর মনে হয় দুমরে মুচরে যাচ্ছে।



– এমন সময় শুভ্র আমাকে কল দিল। সামনে অর্পিতা দেখে কেটে দিয়ে মাসেজ করলাম,,,,, অর্পিতা আছে সামনে।


– কল কেটে দিলে কেন! কার কল ছিল দিদি?


– আর বলনা কাষ্টমার কেয়ার থেকে কল আসছে তাই কেটে দিলাম। তুমি কি জানি বলছিলা সেটা বল।


– জানো দিদি দাদা যখন দেশের বাহিরে স্কলারশিপ নিয়ে যায় তখন আমি ক্লাস ফাইভ এ পড়তাম। যাওয়ার দিন দাদার কোলে চড়ে খুব কেঁদেছিলাম। কিন্তু আজ বড় হয়েছি বলে সেটা পারলাম না।


– শুভ্রর কোলে কি এখনও চড়তে ইচ্ছা করে তোমার অর্পিতা?


– আরে চড়তে চাইলেই কি চড়া যায় বলেই অর্পিতা হেঁসে উঠল।



– কেন তোমার কৌশিক দার কোলে চড়নি কখনও!


– কৌশিকদা কে কখনও তেমন কাছে পাইনি তো আমরা। দেশের বাহিরেই বেশি কাটিয়েছে। তাই শুভ্রদার সাথে আমার বেশি মিল বলেই অর্পিতা আমার হাত ধরে বাহিরে টেনে নিয়ে গেল। একটু শুভ্রটার সাথে কথা বলব সেটাও হলো না।



– অর্পিতা আমাকে নিয়ে দিদুনের রুমে গেল। দাদু সুয়ে আছে আর দিদুন নিদ্রা আপুর সাথে গল্প করছে।


– আমাকে দেখে দিদুন আজ কিছু বলল না। আমি একটু সাহস পেয়ে বললাম,,,,,, বিমলা সুন্দরী কিটা কর?


– ঐ ছুড়ি ফাজলামি বাদ দিবি? না তোর ব্যবস্থা নিব।


– কি ব্যবস্থা নিবা সুন্দরী! তোমার বরের সাথে আমাকে বিয়ে দিবা বুঝি?


– দাদু তো আমার কথা শুনে হাহাহা করে হেঁসে উঠল। বাহ্ কি কপাল আমার এই বয়সেও সুন্দরী মেয়েরা আমার পিছে পরে আছে……


– পরী দিদি দাদুর সাথে তো আমি লাইন মারী এবং অনেক জিনিসপত্র আদায় করি তুমি এতে কেন ভাগ নিচ্ছো?(অর্পিতা)


– এটা প্রতিযোগিতা অর্পিতা! যে পাবে সে লুফে নিবে দাদুকে তাই না দাদু? ( নিদ্রা)


– ঠিক বলছো নিদ্রা,,,,,, বলেই নিতাই বিমলার দিকে তাকালো।


– বিমলাকে ইনসাল্ট! ঐ তোরা সবাই বের হ আমার রুম থেকে বলে চিল্লাচাটি করল কিছুক্ষন দিদুন।


– আহ্ বিমলা তুমি রেগে যাচ্ছো কেন,,,,, সবাই একটু আনন্দ করছে করতে দাও।( নিতাই)


– সবাই মিলে অনেকক্ষন আড্ডা,,,, হাসি,,,,,, তামসা সব করল।



– রাতে শুভ্র এসে পৌছায় ওর গন্তব্য স্থলে। ২ টা রুম, ছোট্ট ডাইনিং রুম,কিচেন, বেলকুনি, বাথরুম বেশ ছোটখাট একটা ফ্লাট। খুব একটা খারাপ না।

শুভ্র গোসল সেরে চেঞ্জ করে আগে ওর মাকে কল দেয়। মায়ের সাথে কথা বলতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। কলটা কেটে দিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখে কয়েকজন। ওর স্টাফ ছিল সেগুলো। দরজা খুলে দিয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন কথায় মগ্ন হয়ে যায়। এদিকে পরী কল দিতেইছে। শুভ্র ফোনটা সাইলেন্ট করে আবার তাদের সাথে কথা বলে।



– অনেক রাত অবদি আলোচনা সেরে ওরা চলে যেতেই একজন খাবার নিয়ে এল।

– স্যার আপনার খাবার………

– ওকে রেখে যান।

– লোকটি খাবার রেখে চলে গেল।

– খাবার কমপ্লিট করে সব জিনিসপত্র গোছাইতে রাত ১ টা বেজে গেল।

– শুভ্র একটা সিগারেট ধরিয়ে বেলকুনিতে এসে দাড়াল। খুব সুন্দর বাতাস বইছে। শুভ্রর মনটা জুগিয়ে গেল ঝির ঝির বাতাসে।
শুভ্র সিগারেট টা শেষ করে এসে ফোনে হাত দিয়েই দেখে ১০০+ কল স্কীনে উঠে আছে।

শুভ্র পরীকে কল দেয় কিন্তু রিসিভ হয়না। কয়েক বার কল দিল তাও রিসিভ যখন হলনা তখন শুভ্রর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। পরীকে মাসেজ করল।।

” আমি ভাল করেই জানি তুমি ফোনের সামনে বসে আছো কল রিসিভ করো।”



– শুভ্র আবার কল দেয় কিন্তু এবারও রিসিভ হয়না। এবার শুভ্রর রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেল। আবার মেসেজ করল।


“””” কল ধরবি না সারা জিবনের জন্য কথা অফ করে দিব আজকেই””””।


– এবার কল ঢুকতেই রিসিভ হল। পরী প্রথমে সালাম দিল তার পর চুপ।

– শুভ্র সালাম নিয়ে বলল স্যরি কাজ ছিল। রুমে অনেকে ছিল তাই কল রিসিভ বা ব্যাক করতে পারিনি। তবুও কোন কথা নেই।



– পরী,,,,,,! বলেই একটা ধমক দিল শুভ্র। সমস্যা কি তোর। আমার কি সময়ের মূল্য নাই তোর পিছে পুরো রাত জেগে থাকব? নেট অন কর ভিডিও কল দিচ্ছি বলেই কল কেটে দিল শুভ্র।



– নেট অন করতেই কল আসল। পরী কল রিসিভ করে
চুপ করে বসে আছে।



– কি রে তোর মুখ দেখা যায়না কেন….. আমি কি রুম দেখার জন্য কল দিছি বলতেই পরী ওর মুখের দিকে ক্যামেরা আনতেই শুভ্র দেখল একটা শাড়ী পড়ে আছে, হাতে চুড়ি। অল্প সল্প সাজ আর চোখ দিয়ে অনরবত জল পড়ে যাচ্ছে বলে কাজলটা ঢেপসে গেছে। এটা দেখে শুভ্ররই খুব খারাপ লাগল।



– অহ্ “””আল্লাহ্””” আমার বউ এগুলো কি সাজ দিছে…… একদম বাজে দেখাচ্ছে। যাও ওগুলো তুলে ফ্রেস হয়ে আমার সামনে আসো। এগুলো সাজগোজ আমার একদম ভাল লাগেনা। আর চোখে কখনও কাজল দিবানা। এমনি তোমার চোখ সুন্দর ওটা দিলে তোমায় ভুত ভুত লাগে।
৫ মিনিট সময় দিচ্ছি একদম সিম্পল ভাবে আসো।



– ৫ মিনিটের অধিক সময়ের পর পরী ক্যামেরার সামনে দাড়াল।



– এই তো একদম পারফেক্ট। স্যরি সোনা বলেই কয়েকটা ফ্লাই কিস♥♥♥♥ করল শুভ্র।


– সাজ গোজ কেন করেছিলা পরী!
” জানো না সাজ গোজ আমার একদম পছন্দ নয়।



– পরী স্বাভাবিক ভাবে বলল বর বাহিরে থাকলে নাকি তার সামনে সেজে যেতে হয় তাই সাজছিলাম।



– কে বলছে তোমাকে! আমার কাছে তোমাকে ন্যাচারাল ভাবেই বেশ লাগে। আর তাছাড়া যে যাকে ভালবাসবে তার সামনে সাজের প্রয়োজন পরে না সে এমনিই তোমায় ভালবাসবে। আমি কি তোমার সামনে সব সময় কোট প্যান্টশার্ট পরে বসে থাকলে বুঝি তুমি আমায় বেশি ভালবাসবা?



– না না আমি ওগুলো নেটে পড়েছিলাম। তাই সাজুগুজু করেছিলাম। আর তোমার এই থ্রী কোয়াটার প্যান্ট এবং ট্রী শার্ট পড়ে থাকাটা আমাকে বড্ড তোমার কাছে টানে শুভ্র♥♥♥♥।



– ঔ নেটই সব শেষ করে দিছে অনেকটা সবাইকে। I love you pari♥♥♥♥



– I love you toooo my heart ♥♥♥♥

শুভ্র দেখতো আমার পিঠে কি যেন হইছে বলেই ব্লাউজ টা খুলে পরী পিঠটা দেখাল শুভ্রকে।



– শুভ্র ভাল করে দেখে বলল রাশ বের হইছে তো সোনা। কি খাইছো আজ!


– ইলিশ খাইছি আর বেগুন ভাজি।


– তুমি জানোনা তোমার ফুড আর্লাজি আছে। আর কি কোন মেনু ছিলনা খাবারের! সেগুলো খাইতে……


– আমার মনে ছিল না শুভ্র……


– ওকে ব্লাউজ টা পরে নাও আর ফোনটা নিয়ে লাইট অফ করে আমার রুমে যাও জলদি। আর আমার রুমের চাবিটা নিও।


– আমি সব কমপ্লিট করে লাইট অফ করে দরজা খুলতেই শুভ্র বলল আস্তে শব্দ কর।



– আমি নিশব্দে রুম থেকে বের হয়ে দরজা বন্ধ করে শুভ্রর রুমে গিয়ে দরজা লাগাতেই একটু শব্দ হয়।



– পরী! কি করছো শব্দ করতে নিষেধ করলাম না?


– আমি জ্বীভে কামড় দিয়ে স্যরি বলে লাইট জ্বালালাম।



– এবার চিৎকার কর যা খুশি তাই কর শব্দ বাহিরে যাবেনা। সাউন্ড প্রুভ করা রুম। তাই কোন শব্দ বাহিরে যাবেনা।
ওখানে চাবি আছে ওটা নিয়ে আলমারিটা খোল।



– আমি ওর কথামত আলমারি খুলে একটা ল্যাপটপ, গিফট্ পেপারে মোড়ানো একটা বক্স আর কিছু সপিং ব্যাগ বের করলাম। এবং শুভ্র একটা মেডিসিন বক্স দেখিয়ে দিয়ে ওখান থেকে একটা মেডিসিন এর নাম বলল এবং সেটা খাইতে বলল।


– আমি খেয়ে ল্যাপটপ সেটিং করে ল্যাপটপ দিয়ে কথা বলতে লাগলাম।



– বড় স্কীনে পরী কে পুরটাই দেখে শুভ্রর বেশ ভাল লাগছে। পরী বক্সটা খোল তো…. কিছু একটা আছে। আমাকে একটা মেয়ে গিফট্ করছে বলেই শুভ্র হেঁসে উঠল।


– কিহ্ মেয়ে! বলেই জলদি আমি বক্সটা খুলে দেখি ঝালের জিলাপী….. এগুলো আমার♥! বলেই শুভ্রর দিকে তাকালাম।



– নাহ্ ওগুলো তো আমার বউ এর জন্য…. পাক্কা ৩ ঘন্টা ধরে পরিশ্রম করে পাইছি ওগুলো। বউয়ের পছন্দ বলে কথা।



– ধুর আমিই তো তোমার বউ বলেই খেতে লাগলাম। কারন এই জিনিসটা আমার খুব প্রিয়।



– পরী! এমন শব্দ করে খাচ্ছো যেন মনে হচ্ছে কারো হাড় চিবিয়ে খাচ্ছো।



– আমি খাওয়া অফ করে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম হিংসে হচ্ছে শুভ্র?


– নাহ্ ,,,,,, কিন্তু কিছুতো একটা হচ্ছে।

– পরী,,,,,, তুমি খাও আমি একটু আসতেছি।

– ওকে বলে খেতে লাগলাম।

– শুভ্র কিছুক্ষন পর এসে দেখে পরী বসে আছে।
তোমার খাওয়া শেষ?

– হুম….. শুভ্র আমাকে কিস করবা একটু!

– করলাম তো কিছুক্ষন আগে বাবা……..

– নাহ্ বলে শাড়ীটা সরিয়ে বলল এখানে কর,,,,,,,,

– শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ওর কান্ড দেখে। এই সেইদিন এত্ত শাস্তি দিলাম তাও তোমার সখ মিটেনি? অন্য কেউ হলে ভয়েই আমার কাছে আসত না আর কিস করাতো দুরেই থাক।।।।

– নাহ্ মেটেনি,,,,,,,,, নাও শুরু করে দাও শুভ্র।

– নাহ্,,,,,, তোমার এত্ত বেহাপানা কেন?

– কই,,,,,,, আমি কি আর কিছু চাইছি নাকি?

– কিছু চাইলেও আর পাবানা পরী।

– গাল ফুলিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষন তার পর একটা বালিশ নিয়ে সুয়ে পড়লাম। আর শুভ্র আমার দিকে তাকিয়েই আছে। থাকুক না,,, আমার কি তাতে বলেই চোখ বন্ধ করলাম এবং একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম।



– শুভ্র পুরো রাত জেগে পরীকে দেখার একটা নেশা হয়ে গেছে। শাড়ীটা অনেকটা হাটুর কাছে চলে আসছে। মনে হয় একটা দেবী সুয়ে আছে। অপূর্ব লাগছে ঘুমন্ত পরীকে। শুভ্র উঠে গিয়ে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসে কাজ করছিল আর মাঝে মাঝে
পরীকে দেখছে।




– ঘন্টা ২য়েক না যেতেই পরী কেমন যেন করতে থাকে মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু স্বপ্ন দেখছে। লাফ দিয়ে ধরপড় করে উঠে বসে ঘামতে লাগল।


– পরী,,,, এই পরী কি হয়েছে আমি আছিতো। আমার দিকে তাকাও। কি হইছে সোনা,,,,, খারাপ স্বপ্ন দেখছো?

– কে কার কথা শোনে মেয়েটা ঘেমেই চলছে আর কেঁপে উঠছে।


– পরী! বলে একটা জোরে ধমক দেয় শুভ্র। এতেই ও শুভ্রর দিকে তাকায়।

– শুভ্র হাত দিয়ে ইশারা করে বলে বাজে স্বপ্ন দেখছো?



– হুম বলে অনেকক্ষন চুপ করে থেকে তারপর বলল,,,,, কয়েকটা লম্বা লম্বা সাপ আমাকে ধাড়ানি বলেই জ্বিভে কামড় দিয়ে বলল স্যরি দৌড়ানি দিছে আমাকে। কিং কোবরা, ব্লাক মামবা সাথে বিশ্রী একরকম বেঁটে মানুষ ও ছিল। ওরা আমাকে ধরতে আসতেই জেগে গেলাম।



– ভাল করছে। আর একটু সাপে দৌড়ানি দিতে পারলনা তোমাকে,,,,! তাহলে উচিত শিক্ষা হত। ভুতের মুভি দেখবা না! দেখ ভালো করে দেখ। চিন্তা করনা আমি আরও ভয়ঙ্কর কিছু পাঠিয়ে দিব নি। বসে বসে দেখ আর রাতে স্বপ্নে চিল্লে চিল্লে ওঠ। আহ্ কি সুন্দর ভয়ঙ্কর দৃশ্য। বডি গার্ড আছেতো একটা শুভ্র নামের। পুরো রাত পাহারা দিবে তাইনা!



– শুভ্রর কথা শুনে লাইন কেটে দিলাম। শুধু খোচা মারা আমাকে। এবার কাকে মারবি মার!
চলবে——

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৫



– আমি ল্যাপটপ সহ সব কিছু নিয়ে শুভ্রর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে এলাম। তারপর আবার শুয়ে পড়লাম। শুভ্রও আর কল দেয় নি।


– এদিকে শুভ্র ও সব গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরে।



– সবাই সকালের নাস্তা সেরে উঠে গেলে আর পরী সোজা অনিতার রুমে গেল।

– আন্টি আসব?

– হুম আসো। কি ব্যাপার পরী অনেকদিন এই রুমে আসনা তো আজ হঠাৎ কি মনে করে এলে বাবা!

– কেন আঙ্কেল আমার কি আসা মানা? বাবার কাছে যখন খুশি মেয়ে আসতেই পারে।

– তোমার সাথে আমি কথায় পারবনা বলে অনিল অফিসের জন্য রুম থেকে বের হয়ে গেল একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে।

– অনিতা কিছু কাজ করছিল। পরী বসো,,,, কিছু বলবে?

– না,,,, আপনি তো ফ্রী নাই আন্টি।

– মা আমার কাছে এসে বলল সমস্যা নাই তুমি বল।

– আমার বাসায় চাচী আমাকে অনেক কথা শুনাত দেন গায়েও হাত তুলেছে অনেক বার। কিন্তু আমার এই মা টা আমাকে যতটা ভালবাসা দিছে সেটা কোথাও পাইনি। এখন মনে হচ্ছে আল্লাহ্ যা করে সব কিছু ভালর জন্যই করে।

– অনিতা পরীর ওভাবে অপলক চেয়ে থাকা দেখে আরও কাছে এসে বলল,,,,,,, চুপ করে কেন আছো মা?

– পরী চট করে বসে থেকেই অনিতাকে জড়িয়ে ধরে ওর শাড়ীর মধ্য মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগল।

– অনিতা পরীর কান্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। কি হয়েছে পরী! তোমাকে কেউ কিছু বলছে,,,,,বল আমায়।

– মেয়েটা চুপ করে নিশব্দে কেঁদেই যাচ্ছে?

– এবার অনিতার খুবই খারাপ লাগল। শুভ্রর কাজগুলোতে হয়ত পরী খুব কষ্ট পাইছে তাই এভাবে কাঁদছে মেয়েটা। আসলেই মেয়েটাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি।

” শুভ্র কিছু বলেছে পরী! বল শুধু একবার ওর কি হাল করি বলেই ফোন হাতে নিয়ে শুভ্রকে কল দিতে যাবে এমন সময় পরী বলল আমাকে কেউ কিছু বলেনি মা……..

– পরীর মুখে মা ডাক শুনে অনিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। কারন কোন মানুষ চট করে কিছু বলেনা। তার মানে পরী আগে থেকেই ওকে মা বলে মেনে নিছে।


– জানেন আমার মা নাই। কোনদিন দেখিওনি। কেমন দেখতে সে ছিল। মায়ের শরীরের গন্ধ কি জিনিস আমি জানিনা। বাবা টাও চলে গেল আমাকে রেখে এতিম করে। অনেক কষ্ট যন্ত্রনা সহ করে আজ আমি এখানে এসে নতুন একটা মাকে পেয়েছি। আমি কি আপনাকে মা বলে ডাকতে পারি?


– পরীর কথা গুলো শুনে অনিতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অনিতা বলল ডাকতে মন চাইছে ডাকবে এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে মা। বরং আমার আরও একটা সন্তান বেড়ে গেল বলেই অনিতা নিজেকে পরীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওর সামনে বসল।

– পরী শুভ্র এতটা খারাপ না যে তোমাকে ওভাবে বিশ্রী ভাষায় গালি দিবে! কারন আমি ওকে এটা শিক্ষা দেইনি। হয়ত অন্য কেউ তোমাকে গালি দিছে আর তুমি সেটা শুভ্রকে ভেবে চড় মেরেছিলে।

শুভ্র সব সহ্য করতে পারে কিন্তু ওর অপমান আর ওকে কেউ ধোঁকা দেওয়া এগুলো সহ্য করতে পারেনা। তাই তোমার সাথে সেদিন অমন ব্যবহার করেছে। তুমি যদি চাও আমরা তোমাকে তেমন জিবন সাজিয়ে দিব যেমনটা তুমি চাও।


– জানেন যেদিন শুভ্র সিঁদুরটা পড়িয়েছিল সেদিন বাসায় এসে চাচী আমাকে যাইচ্ছা তাই বলে গালি দিয়েছে। চাচাটাও আমার কথা শোনেনি,,,,, সবার সামনে আমাকে চড় মারে। ভাবছিলাম নিজেকে শেষ করে দিব। ৫/৭ বার গলায় দড়ি দেওয়ার ট্রাই করছি কিন্তু পরে নিজেকে শান্ত করে অজানা পথে পাড়ি দিয়ে আজ এই জায়গায় আমি।


– অনিতার কথা সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেল পরীর কথা শুনে। এত্ত কথা সে জানতনা। পরীর উপর দিয়ে কতটা ঝড় গেছে তাহলে।


– দেখ পরী শুভ্রর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমার ছেলেটা না বুঝে ভুল করে ফেলেছে।


– পরী কোন জবাব না দিয়ে অনিতার কোলে মাথা রেখে বলল আমার একটা মা চাই আন্টি। আমার একটা বাবা চাই। ঠিক অর্পিতা যেমনটা আপনাদের কাছ থেকে শাসন, আদর, ভালবাসা পায় অমনটাই আমার চাই। আমাকে দিবেন?


– এই বোকা মেয়ে তুমিতো আমাদের মেয়ের মত। এগুলো চাওয়ার কি আছে? আচ্ছা পরী তোমার চাচা-চাচী তো কোন দিন কি তোমার খোঁজ নিবে না?


– এবার পরী ফিকরে কেঁদে উঠে বলল ওরা আমাকে চায় না আন্টি। এতিম দের কেউ থাকেনা। এরা বাসার কাজের মেয়েদের মত জিবনযাপন করে। আমাকে ওদের প্রয়োজন নাই। আমি না থাকাতে ওরা বেঁচে গেছে আন্টি। স্বার্থের পৃথিবীতে একমাত্র স্বার্থের দাম ছাড়া আর কোনকিছুর দাম নেই। অপয়া মেয়ে আমি। সুখ আমার কপালে বেশিদিন টিকে না। এই ছোট্ট জিবনে অনেক কিছু সহ্য করেছি। মৌলিক চাহিদাটাও
আমার কখনও পুরুন হয়নি। চাচী কত্ত ভাতের প্লেট কেড়ে নিছে। কতদিন না খেয়ে থেকেছি। কত মৃত্যু কামনা করেছি।


– পরী চুপ কর মা। আর এগুলো শুনবো না। কেন অতীত মনে করে কষ্ট পাচ্ছো?


– আমিতো মনে করতে চাইনা মা,,,,,,, কিন্তু বার বার মনে পরে যায়।


– অনিতা অনেক কথা বলে ওর পরিবার সম্পর্কে, শুভ্র সম্পর্কে। আরও অনেক গল্প। কিন্তু পরীর দিকে তাকিয়ে দেখে ও ঘুমিয়ে গেছে। হয়ত অনেক ক্লান্ত ছিল মনের দিক থেকে।


– অনিতা ওভাবেই বসে আছে পরীকে নিয়ে। মেয়েটার চোখ ২টো এখনো ভেজা।এমন সময় অর্পিতা পরীর ফোন এনে বলল পরী দিদি তোমাকে কে জানি কল দিছে।

অনিতা অর্পিতাকে ইশারা করল চুপ করতে। ফোনটা রিসিভ করে হালো বলতেই শুভ্র কোন কথা না বলেই কেটে দিল কল।


– পরীর কল মা কেন ধরল? তার মানে মা কাছে!


– কল কেটে যেতেই অনিতা ফোন রেখে দিয়ে ওমন ভাবেই বসে রইল।


– ঠিক ১৫ মিনিট পর আবার কল দিল শুভ্র।


– শুভ্র কত বার ফোন দিতে হয়! আর তুই এত্ত
বেহায়া কেন বল তো?


– শুভ্র ওর মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় লজ্জায়। আর কিছু বলেনা।


– পরী আমার রুমে ঘুমাচ্ছে। পরে কল দিস।


– মা তুমি কেমনে জানলা আমি কল দিছি! নাম্বার টা তো তুমি জান না…..


– তোর প্রতিটা নিঃস্বাস আমি ভাল করে বুঝতে পারি তাই অন্তত তুই আমাকে তোকে চিনাতে আসিস না।


– ওকে মা ফোন রাখছি।


– আরে শোন না!(অনিতা)


– বল শুনছি মা!


– তুই পরী কে যেভাবেই বিয়ে করনা কেন আজ আমি খুব খুশি। তোর জন্য এই পারফেক্ট।


– আর কিছু বলবে মা! তোমার কথা শুনে আমি রিতিমত ঘাবড়ে ও লজ্জা ২টাই পাচ্ছি।


– না আর কিছু না বলে অনিতা কল কেটে দিল।


– অনিতা পরীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল ” ও থাকলে কি পরীকে মেনে নিত!” অনিতার চোখ ছলছল করে উঠল।



– মার হাত ছোয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি চট করে উঠে বললাম স্যরি মা,,,,, ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। না জানি আপনাকে কতটা কষ্ট দিয়ে ফেললাম।



– মা একটু হেঁসে বলল শুভ্র কল দিয়েছিল। যাও কথা বল। ছেলাটা আমার অস্থির হয়ে গেছে।


– স্ট্রেঞ্জ! মা কোন রিয়াক্ট না করে আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেল?


– আমি রুমে এসে ফ্রেস হয়ে শুভ্রকে কল দিলাম।


– শুভ্র কলটা কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিল।
জান, সোনা, কলিজা I Love you বলে অনেক গুলো কিস ♥♥♥♥করল পরীকে।
বউ কি কর?


– I Love you tooo my কলিজা।
কিছু না শুভ্র! ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মার রুমে।


– জানিতো সোনা আমার পরীটা ঘুমাইছিল।

পরী! আমি খিচুরি রান্না করব আমাকে শিখাইয়ে দাওতো বলে শুভ্র কিচেনে ঢুকল।


– তুমি সকালে কিছু খাওনি শুভ্র?


– নাহ্,,,,,, কিছুক্ষন আগেই ঘুম ভেঙ্গেছিল। তোমাকে কল দিয়ে পেলাম না তাই বসে ছিলাম এতক্ষন।


– আমি ওকে বলছি কি কি দিতে হবে আর শুভ্র সেগুলো বের করছে।

শুভ্র সবজি কাটছে। ওর সবজি কাটা দেখে মনে হল ও সব কাজ নির্ভুল ভাবে অনায়াসে করে যাচ্ছে। তারমানে ও সব পারে।


– শুভ্র তুমি সব কাজ পারো তাই না?


– এতক্ষনে বুঝলা?


– তাহলে আমার জন্য কেন ওয়েট করছিলা।


– সব পারলে কি হবে বল,,,,, খিচুরির ভিতর বউয়ের ভালবাসা না মিশালে যে আমার চলে না তাই তোমার অপেক্ষা বলেই দ্রুত সব কাজ করতে লাগল।


– শুভ্র! তুমি একদম সুপার ম্যান,,,,, সব কাজ পার বলেই পরী ওকে কিস♥♥♥♥ করতে লাগল।


– ফোনটা কিস করতে করতে ভেঙ্গে ফেল পরী। ফোনে এত্ত যে কিস♥ করছো আমার কাছে একটা আসছে?


– নাহ্। মনের সুখ মিটাচ্ছি।


– শুভ্র হেঁসে বলল মনের সুখ!
যখন কিস♥ গুলো কাছেই পাইনা তাহলে কেন দাও পাগলের মত কিস এভাবে?


– তুমি যে কাছে নেই শুভ্র! তাই খুব কষ্ট হয়।


– শুভ্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল আজকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব পরী!


– আমিতো এখানে,,,,,, তুমি কেমনে নিয়ে যাবা আমায়?


– সেটা দেখলেই বুঝতে পারবে। জাষ্ট সারপ্রাইজ পরী!


– অনেক কথা হল,,,, এর মধ্য খিচুরি রান্না কমপ্লিট হয়ে গেল।

ওকে শুভ্র তুমি খাও। আর শোন তুমি খিচুরিতে ১ টা মাত্র কাচা মরিচ দিছো তার সাথে হাপ চামুচ চিনি। আমি হলে কখনও এটা খাইতে পারবোনা।


– তা পারবে কেন! ঝালখোর কোথাকার।(শুভ্র)

– হুম,,,,,আর কিছু????? আর তুমিতো মিষ্টি খোর।


– তাই! তুমি আমাকে কতটা ভালবাস পরী?


– অনেক অনেক অনেক বলে ২ হাত প্রসারিত করে দেখালাম। I Love you শুভ্র♥


– I Love you tooo jan বলেই শুভ্র বলল আমি তোমার সাথে বাজি ধরে বললাম এই খাবার একদিন তুমি খাবা সেচ্ছায় আমার সাথে।


– কখনও না। তোমাকে ভালবেসে খাব কিন্তু সেচ্ছায় না বুঝলা?


– ওকে ডান। তুমি বাজিতে হারবা শিউর বলেই ও কল কেটে দিল।


– যাক বাবা আর কথা বলার সুযোগই দিলনা?



– আমি গোসল সেরে যহরের সালাত আদায় করে নিচে কিচেনে গেলাম। মা রান্না করছে। অতিব চমৎকার তার রান্না।


– মা আপনার ছেলে ঝাল খেতে কেন পারেনা? আপনারা তো মোটামুটি খান কিন্তু শুভ্র খায়না কেন?


– এটা ওর জন্মগত অভ্যাস। অনেক চেষ্টা করিয়েছি কিন্তু ঝাল ও একদমই খেতে পারেনা। ওর সাথে কথা হল?


– হুম মা বলেই ওনাকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলাম।


– পরী তুমি যদি এভাবে জড়িয়ে ধর আমাকে রান্না করব কি করে?


– আমি মা কে ছেড়ে দিয়ে বললাম আপনাকে জড়িয়ে ধরতে আমার খুব লোভ করে তাই জড়িয়ে ধরলাম মা!



– পুরাটা দিন এভাবে কাটল। শুভ্রর একটা কথা বারবার মনে পড়ছে। সময় একদিন আমাদের হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিবে পরী। তখন আমরা নিজেরাই অবাক হব। হুম কিছুটা ফলছে কথাটা। মা মেনে নিছে সব।



– সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শুভ্র কল দিয়ে বলল পরী চল তোমাকে নিয়ে সপিং যাই।


– কিভাবে?

– শুভ্র আমার সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ি নিয়ে বাজারে গেল এবং কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিয়ে প্রতিটা জিনিস দেখাচ্ছে আর বলছে পরী এটা কেমন এটা নিব! এভাবে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে অনেকগুলো দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করল আমাকে দেখিয়ে। অদ্ভুদ রকম ভাল লাগছিল। প্রতিটা জিনিস আমাকে একটা একটা করে দেখাচ্ছিল। তারপর বাসায় এসে আমাকে লাইনে রেখেই ফ্রেস হতে গেল দেন কিছু টাইম পর এসে বলল কেমন লাগল আমার সাথে শপিং করতে?



অসম্ভব রকম ভাল লাগছে শুভ্র বলেই কয়েকটা কিস♥♥♥♥ করলাম।



– পরী তুমিতো জানো না আমি এখানে একটা হুযুর রেখেছি যে আমাকে ২ ঘন্টা টাইম দেয় রাতে কোরআন শেখানোর জন্য। এখানে এসে এই কাজটা ভাল হয়েছে। বাসায় থাকলে পারতাম না। হাতে ১ মাস সময় তাই জলদি শেষ করতে চাচ্ছি।



– বাহ্ দারুন কাজ করেছো তোহ্। সময়টা জেনে নিলাম কখন পরে ও। একমাস হাতে টাইম মানে?


– এখানে ১ মাস আমি আছি। ওদেরকে লেটার পাঠিয়ে দিছি কিন্তু এর বিনিময়ে আমাকে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। তারপর কাজটা করতে পেরেছি।


– ওখানে এত্ত টাকা কোথায় পেলে শুভ্র?


– বোকার মত কেন কথা বল! টাকা মানেজ করা কোন ব্যাপার হল। আর তাছাড়া তোমাকে ছাড়া আমি এখানে বড্ড কষ্টে আছি পরী! কথাটি বলেই শুভ্র চুপ হয়ে গেল।


– শুভ্রর কথা শুনে ঝরঝর করে আমার চোখ দিয়ে পানি পরে গেল। আমারও খুব কষ্ট হয় যে শুভ্র।

– শুভ্র বেশ বুঝল এ এখন কাঁদবে।
ওকে এখন রাখছি একটু কাজ করে রাখতে হবে। এশার নামাযের পর হুযুর আসবে। ভাল থাক জান। আর হ্যাঁ ফোন সবসময় কাছে রাখবা। একবারের উপর যদি ২বার কল দিতে হইছে তোহ্ তোমার খবর আছে কিন্তু বলেই কয়েকটা কিস♥ করে শুভ্র কল কেটে দেয়।


– আমার কান্না আর থামছেই না। শুভ্রকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয়।


– এভাবে আরও কয়েকটা দিন যায়। একদিন আমি ভুল করে ফোনটা রেখে দিদুনের কাছে চলে যাই। আর তাছাড়া এই টাইমটাই শুভ্র কোরআন শিখে।


– আমি, বাবা আর দিদুন মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম। একটু পর দাদু এসেও যোগ দিল। এই পরিবার টা অসম্ভব রকমের ভাল। সবাই সবার সাথে মিল। পলা আন্টি মচমচে পিয়াজু ভেজে দিয়ে গেল আড্ডাটা যেন জমে ক্ষীর হয়ে গেল। আড্ডা শেষে আমি উঠতেই বাবা বলল রাতের খাবার খেয়ে উপরে যেও পরী।


– কি আর করা একটু ওয়েট করে রাতের খাবার খেয়ে ১০ টার পর রুমে চলে আসলাম। এতক্ষনে শুভ্র ফ্রী হয়ে গেছে হয়ত বলে ফোনে হাত নিয়ে দেখি ১০+ কল দিছে শুভ্র। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। জানিনা আজ আমার কপালে কি আছে বলেই কল দিলাম কিন্তু রিসিভ হয়না। এরকম করে বার বার কল দিলাম কিন্তু রিসিভ হয়না। শেষে কান্না করতে লাগলাম। পুরোটা রাত ওকে ট্রাই করছি কিন্তু কল রিসিভ হয়নি।




– এভাবে খুব কষ্টে ৩ টা দিন কেটে গেল। শুভ্র বাসার সবার সাথে কথা বলে শুধু আমার সাথে বলেনা। খুব কষ্ট লাগে। এই তিন দিনে কত হাজার বার যে কল দিছি অকে গুনে শেষ করা যাবেনা।


– ৫ দিনের বেলায় আমার রুমে আমি সুয়েছিলাম। হঠাৎ প্রচুর গা গুলায়। ওয়াসরুমে প্রচুর বমি করতে করতে অস্থির হয়ে যাই। শরীর খুবই খারাপ হতে শুরু করে। রুমে এসে আবার সুয়ে পরি। বান্ধবীর কাছে সুনেছিলাম বেবি কনসিভ্ করলে নাকি এমন হয়। আমি জলদি নেটে সার্চ দিলাম। হুম সব উপস্বর্গ মিলে গেছে। ওহ্ মাই গড আমার পেটে বাবু আছে বলেই আমার বান্ধবী শিরীনকে কল দিলাম। ওর মা একজন গাইনীকোলজিষ্ট। শিরীন আমাকে লোকেশন বলে দিল। আমি রেডী হয়ে কিছু টাকা নিয়ে মার কাছে গিয়ে বললাম মা! আমি একটু বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তাই আসতে একটু লেট হতে পারে। পরীর হাঁসি মুখ দেখে অনিতা আর কিছুনা বলে
অনুমিত দিল যাওয়ার। বাসার গাড়ীতে যেও পরী। আর টাকা আছে তোমার কাছে?

– হুম আছে মা। আর গাড়ীর প্রয়োজন নাই। আমার রিক্সাই বেশ লাগে।




– রাস্তায় শিরীনের সাথে কথা বলতে দেখি শুভ্র কল দিল। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শিরীনের সাথে কথা বলতে লাগলাম। আমার তো বাবু আসছে তাই তোমার রাগ নিয়ে তুমি থাকো শুভ্র!


– আমি আর শিরীন অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষায় আছি।
টেষ্টের রির্পোট এর অপেক্ষায়। কিছুক্ষন পর শিরীনের মা আন্টি শুধু আমাকে ডাকল।


– আমি একা যাব বলেই শিরীনের দিকে তাকালাম।


– আরে আমি অবিবাহিত তাই মা আমার সামনে কিছু বলতে চাচ্ছেনা। কোন সমস্যা নাই তুই ভিতরে যা আমি আছিতো এখানে।


– আমি ভিতরে গিয়ে ওনার সামনে বসলাম।


– পরী! মিষ্টি খাওয়াও তুমি কনসিভ্ করছো। সাড়ে ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট তুমি বলেই আমার দিকে হাসি মুখে তাকাল।


– কিন্তু আমার মাথা ঘুরে গেল। শুভ্র সাথে সম্পর্কই আমার ২ মাস ঠিকমত হয়নি সেখানে ৩ মাস কিভাবে হয়। আমি চুপ করে গেলাম।


– কি পরী! তুমি খুশি হওনি?


– আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম হইছি আন্টি।


– এর পর আন্টি আরও অনেক কথা বলল। কি সমস্যা হতে পারে আর কি কি করতে হবে। আরও অনেক কিছু।


– এরপর শিরিন আমাকে জোর করে ওদের বাসায় নিয়ে গেল। বাসায় কাজের লোক আর ওর ছোট ভাই ছাড়া কেউ ছিলনা। ও অনেক গল্প করল খাওয়াল।



– সন্ধার পর আমি মাকে কল দিয়ে বললাম মা আমার ফিরতে দেরী হবে বলেই আন্টির সাথে কথা বলিয়ে দিলাম। এদিকে শুভ্র অনেক বার কল দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমার ভিতরে এতটা খারাপ লাগছিল যে শুভ্রর সামনে দাড়ানোর ইচ্ছা টাই মরে গেছে।



– শুভ্র এদিকে ছটপট করছে। নাম্বার বিজি তার পর ৬/৭ ঘন্টা ধরে কল করছে তবুও মেয়েটা কল ধরছে না। শেষে বাধ্য হয়ে ওর মাকে কল দিল।


– হ্যাঁ শুভ্র বল।


– মা পরী কই?


– ওর এক বান্ধবীর বাসায় গেছে ফিরতে একটু রাত হবে,,,,, কেন?


– মা ৯ টা পার হয়ে গেছে এত্ত রাত অবদি কোন মেয়ে বাহিরে থাকে?


– সেটা তোকে ভাবতে হবে না। নিজের চরকায় নিজে তেল দে।


– শুভ্র আর কিছু বলল না। কল কেটে দিয়ে চুপ থাকে। পরীর ভিতর এত্ত চেঞ্জ কেন? যে শুভ্রকে ছাড়া কিছু বোঝেনা আজ কি এমন হল যে কল রিসিভ করার মত সময় নাই?



– রাত ১০ টার দিকে আন্টি আমাকে বাসায় পৌছে দিল। আন্টি মার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বলল আপা আমার ১১.৩০ এর দিকে একটা সার্জারি আছে আমাকে এখুনি যাইতে হবে। পরীর খেয়াল রাখবেন বলে চলে গেল আন্টি। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাগ্গিস কিছু বলেনি আন্টি।



– আমি রুমে এসে অনেকক্ষন ধরে কাঁদলাম। এটা কি করে সম্ভব। আমিতো কারো কাছে যাইনি তাহলে। হঠাৎ মনে পড়ল পূজার ভিতর বিকাশ আমাকে কিছু খাইয়েছিল। তারপর ২ দিন ধরে ঘুমাইছি তার মানে বিকাশ!



– নিজেই নিজেকে প্রচন্ড ঘৃনা করতে লাগলাম। কান্নার বাধ যেন আর থামছেই না। কি করে মুখ দেখাব আমি যখন শুভ্র জানবে। একরাশ হতাশা নিয়ে বেলকুনিতে বসে কাঁদতে লাগলাম।



– বার বার ফোনে কল বেজেই চলছে কিন্তু ধরতে মন চাচ্ছে না।
– আরও কয়েকবার কল আসতেই রুমে এসে কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই পুরো শরীর আমার কেঁপে উঠল—————-

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here