অস্তিত্বের খোজে part 22+23

0
743

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২২



– ভোরে আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। শুভ্র ঘুমাচ্ছিল তখনও……. আমি ওয়াসরুমে গেলাম দেন ফ্রেস হয়ে ওযু করে আসলাম।
– শুভ্রের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে আস্তে আস্তে শুভ্র….. শুভ্র বলে ডাকলাম।


– হুম বলে চোখ খুলল। শুভ্র পরীকে দেখে বলল কিছু বলবা! বলেই পাশ ফিরে আবার শুইল।

– শুভ্র ওঠো আমার সাথে নামায পড়বে আসো……

– এত্ত সকালে,,,,,,,! আর একটু ঘুমাইনা?

– না,,,,,,, একদম বাহানা করবা না বলেই ওর গা থেকে কম্বল কেড়ে নিয়ে বললাম এক্ষুনি মানে এখুনি উঠবা



– একদিন না যেতেই আমায় শাসন করছো পরী?

– হ্যাঁ করছি,,,,,,,,,,,, জলদি ওঠো। আমি ওয়েট করে আছি তো…..

– পরীর কথা শুনে শুভ্র উঠে ওয়াশরুমে গেল এবং ফ্রেস হয়ে ওযু করে এসে পরীর সাথে সালাত আদায় করে আবার সুয়ে পড়ল।



– শুভ্র সুয়ে পড়লে আমি একটু বাহিরে গেলাম। কেউ ওঠেনি এখনো……. তাই আমাদের জন্য ২ কাপ কফি বানালাম এবং রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি মহাশয় এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে।



– এসিটা অফ করে জানালা গুলো খুলে দিলাম। চিন্তা করছি ওকে ডাকব কিনা….. ঘুমাচ্ছে তো!


– কিছুক্ষন পর শুভ্র জেগে উঠে বলল,,,,,,,,পরী এসি অফ করছো কেন! আমার গরম লাগছে তো?

– কম্বল গায়ে দিয়ে কেন এসি চালাও। অপচয় করতে নেই জানোনা?

– পরে তোমার লেকচার সুনাইও,,,,,,,,,,, প্লিজ এসিটা ছাড় বলেই শুভ্র চুপ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

– কি আর করা,,,,,,,, সব জানালার থাই বন্ধ করে এসি অন করে ওর পাশে বসলাম। কফি আর আমাদের কারো খাওয়া হলনা।



– সকাল ৮ টার দিকে আবার ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্ত আস্তে করে ডাকলাম।

– শুভ্র চোখ খুলে বলল পরী তোমার ঘুম থেকে একজনকে ডাকার স্টাইল একদম আলাদা। এভাবে কেন ডাকো?

– কারন একজন মানুষ যখন ঘুমায় তখন তাকে তাড়াহুড়া করে ডাকলে তার ব্রেনে প্রবলেম হতে পারে তাই এভাবে ডাকা।

– বাহ্,,,, আমার বউ দেখি অনেক বুদ্ধিগুণ সম্পন্ন……..




– শুভ্র সব ব্যাপারেই ফাষ্ট। কোন অলসতা ওর মধ্য নেই,,,,,, এই ব্যাপার টা আমার খুব ভাল লাগে।
– শুভ্র উঠে গোসল করতে ওয়াসরুমে চলে গেল।

– আমি কফির কাপ ২ টা নিয়ে নিচে আসতেই পলা আন্টি বলল,,,,,,,,,, পরী,,,,,,! শুভ্র কি তোমার সাথে খারাপ কিছু করছে গতকাল রাতে?


– না তো পলা আন্টি! আপনি এমন কথা কেন বলছেন?

– না ও তোমাকে ওর রুমে নিয়ে গেল তো তাই।

– অহ,,,,,,, নাস্তা রেডী করেছেন?

– পরীর ভাবসাব ঠিক ঠেকতেছে না পলার। ব্যাপার কি! যে মেয়ে ওকে ২ চোখে দেখতে পারেনা সে এত্ত তার কেয়ার কেন করছে?




– শুভ্র গোসল সেরে রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে নিচে এসে দেখল পরী সব নাস্তা রেডী করে দিচ্ছে।

– My sweet hart কি করছো?

– আমি শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই বললাম কাজ করছি শুভ্র!



– শুভ্র এসে চিয়ারে বসে বলল বাহ্ এত্ত নাশতা! তুমি বানাই ছো পরী!

– আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,,,,,,,, না মানে পলা আন্টি বানিয়েছে শুভ্র।

– পরী,,,,,,,,, ! তুমি কি একটুও রান্না করতে পার না?

– একটু একটু পারি,,,,,,, তবে সব না।

– ওকে,,,,,, মা ফিরলে মার কাছ থেকে রান্না শিখে নিবা। আর হ্যাঁ আজ তুমি রান্না করবা। যে রকমই হোকনা কেন,,,,,,, পলা আন্টির কাছ থেকে বা কারো কাছ থেকে সাহায্য নিবা না। আমি লান্স টাইমে বাসায় খেতে আসব কিন্তু!

– ওকে ট্রাই করব,,,,,, খারাপ হলে কিন্তু আমার দোষ নেই আগে থেকেই বলে রাখছি।

– আচ্ছা যেমন পারো করো বলে পরীকে নিয়ে নাস্তা সেরে শুভ্র অফিসে চলে গেল।



– পরী তোমার ভাব সাব ভাল ঠেকছেনা কিন্তু,,,,,, শুভ্র তোমার কাছে এত্ত প্রিয় কবে থেকে হল হুম।


– জানিনা আন্টি,,,,,, মনে হয় ভালবেসে ফেলছি শুভ্রকে বলেই রান্না ঘরে এসে বিভিন্ন জিনিস জোগাড় করতে লাগলাম।


– পরী,,,,,,, আমি রান্না করছি। তুমি বসে বসে দেখ আমার রান্না।

– না আন্টি ও বলল না! আমাকেই রাধতে হবে!



– মার্টন,ডাল, সবজি, ভাত,ইলিশ ভূনা আর সালাদ বানালাম। জানিনা ওর কেমন লাগবে।
– সব রেডী করে গোসল দিয়ে নামায পরে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।



– দেড়টার দিকে শুভ্র আসল। দেন ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে এসে খাবার গুলো দেখে বেশ খুশিই হল।
– বাহ্ ভালই রান্না করছো তো!

– আমি বললাম,,,,,,,,,, তোমার ভাল লাগলেই সব স্বার্থক।

– শুভ্র খাইতে বসে শুধু সুষিয়ে সুষিয়ে খাচ্ছে আর একটু পর পর পানি খাচ্ছে।

– শুভ্র ঝাল কি বেশি হইছে!

– আমিতো ঠিকঠাকই ঝাল দিছি তাহলে কেন এমন করছে।
– একটু পর শুভ্রর মুখ লাল হয়ে গেল আর কপালের রগ গুলো নীল হয়ে গেল।


– পরী,,,,! ফ্রীজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসতো?


– আমি দৌড়ে মিষ্টি নিয়ে এলাম ফ্রীজ থেকে।

– শুভ্র মুখে মিষ্টি পুরে আমার দিকে তাকি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল তুমি যানো না আমি ঝাল একদমই খাইতে পারিনা!

– আমি লজ্জা আর ভয়ে চুপসে গেছি……. আমি যা ঝাল ক্ষোর আর বর আমার ঝালই খেতে পারেনা। ভাবা যায় এগ্লা!



– স্যরি আমি জানতাম না। আর ভুল হবেনা এবার থেকে।
“”

– দেখ পরী,,,,,,,, আমি কখনও মিথ্যা প্রসংসা করি না। একদম মুখে বলে দেই। নেক্সট বার কখনও ভুল করবা না। আমি কি পছন্দ করি না করি সেটাও তোমাকেই খেয়াল রাখতে হবে…… যেমনটা আমি রাখি। মাঝে মাঝে মিসটেক হলে সমস্যা নাই কিন্তু সব সময় নো মিসটেক বুঝছো!


– আমি চুপ করে থাকলাম। কারন আমি জানি শুভ্র যতটা আঘাত করে তার থেকে হাজার গুন ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে। এই গুনটাই সব থেকে বেশি পছন্দ আমার। তাই ও প্রসংসা না করলেও আমার যায় আসেনা।


– ওকে,,,,,, বলে খেতে লাগলাম আমি।

– শুভ্র আমার খাওয়া দেখছে….. বেচারা খেতে পারছেনা একদমই।

– শুভ্র আমিতো রান্নাতে কম ঝাল দিছি….. আমি এর থেকেও বেশি ঝাল খেতে পারি।

– এই জন্যই তোমার ঘটে একটুও বুদ্ধি নাই পরী……. শুধু ভুল ডিসেশন নাও।

– কি ভুল ডিসিশন নিলাম আমি?

– আগে খাওয়া কমপ্লিট কর তার পর তর্ক করতে এসো।

– লও ঠেলা….. তর্ক করলাম কেমনে…….

– শুভ্র আর কোন কথা না বলে উঠে গিয়ে ফ্রীজ থেকে দই নিয়ে আসল…… আর সেটা দিয়ে বাকি ভাত টা খেয়ে বলল এবার পারফেক্ট।

– শুভ্রতো দেখছি পাক্কা মিষ্টি ক্ষোর।



– খাবার শেষ করে উঠতেই শুভ্র বলল পরী তোমার ভাষা গুলো একদম বিশ্রী ও গুলো চেঞ্জ করবা। ভাষা গুলো শুনতে খুব খারাপ লাগে। অর্থনীতি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করছো কিন্তু ভাষার ব্যাবহার এরকম তাহলে খুব খারাপ দেখায়। আর আমাদের বাচ্চারাও এরকম ভাষা শিখবে তোমার থেকে তাই ভাষার বিকৃতি একদম করবা না।



– উমমমম বলে কি….. একদিন না হতেই এত্ত শাসন!.
পরী,,,, তোর কপালে দুঃখ আছেরে….. কার পাল্লায় পড়ছিস। আগেই জানতাম শুভ্র কড়া ধরনের মানুষ কিন্তু এতটা কড়া সেটা জানতাম না।



– পলা আন্টিরে ডাক দিয়ে সব গুছাতে বলে নিজের রুমে আসলাম। খাটে বসে ধুমছে গান শুনছিলাম।
– এমন সময় শুভ্রের মাসেজ….. রুমে যেতে বলছে।



– আমি গান অফ করে শুভ্রর রুমে গিয়ে দেখি ও কি যেন ল্যাপটপে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাঁসছে…..
– আমাকে দেখেই চট করে সব কিছু অফ করে দিয়ে আমার দিকে তাকাল।

– কি দেখছিলা?

– না তেমন কিছু না বলেই শুভ্র ওয়াশরুমে চলে গেল।

– আমার মনে সন্দেহ জেগে উঠল….. ও আসলে কি দেখছিল বলেই ল্যাপটপ চট করে খুললাম। কিন্তু বার বার পাসওর্য়াড চাচ্ছে। ধুর,,,,,,,, এখন কি পাসওর্য়াড……. আমি কেমনে বলব।


– এমন সময় শুভ্র বলে উঠল সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ পরী। যেটা সংসার জিবনটাকে একনিমিষেই ফিনিশ করে দেয়। তোমার কিছু জানা থাকলে আমায় বল,,,,,,, আমি কিছুই লুকাবো না তোমার কাছ থেকে……

– আমার অত্যন্ত লজ্জা লাগল,,,,,, শুভ্রর কাছে ধরা পড়েছি বলে।



– পরী রেডী হও তোমাকে আজ ডক্টর দেখাব। তোমার শরীর নাকি খারাপ তাই।

– কই না তো….. আমি বেশ আছি।


– এত্ত কথা বল কেন,,,,,, যা বলছি তাই কর। জলদি রেডী হও।
“”
– বাহিরে তো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে,,,,,,, এখন যাওয়া কি ঠিক হবে?
আসলে একটা দিন সময় পাইছি তাই সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিনা। শুভ্রর পাশে পাশে থাকার বাহানা আরকি!



– শুভ্র আমার কাছে এসে বলল ২০ মিনিট সময় দিচ্ছি যাও রেডী হও।

“””””””””””
– ওর ধমক সুনে সুড় সুড় করে আমার রুমে এসে ইচ্ছা মত গালি দিয়ে রেডী হলাম। সাথে একটা ব্যাগে একসেট ড্রেস নিলাম। কারন আমিও কম না মনে মনে ফন্দি এঁটেছি।


– শুভ্র গাড়ীতে ওয়েট করছে অনেকক্ষন থেকে কিন্তু পরীর আসার নাম নাই।


– পরীকে রেডী হয়ে নিচে নামতে দেখে পলা বলল কই যাও পরী?

– আন্টি শরীরটা কয়েকদিন থেকে খুব খারাপ লাগছে তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।
– পলা আর কিছু বলল না।


– আমি গাড়ীতে উঠতেই শুভ্র বলে উঠল,,,,, তুমি কবে বড় হবে পরী! সময় মেইনটেইং করে চলতে হয়। আর সাথে এত্ত বড় ব্যাগ নিছ কেন?

– আমি ওর কথার জবাব দিলাম না। কিছুক্ষন পর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম…. তুমি আছ তো,,,,,, তাই আমার কোন চিন্তা নাই।

– শুভ্র আর কোন কথা বলল না….. গাড়ী স্টার্ট দিল দেন আমরা চলতে লাগলাম।

– প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে….. আমি শুধু একটা প্লেস খুজছি আমার প্লান অনুযায়ী। পেয়েও গেলাম…. মানুষ জন একদম নেই। কারন যে কাজ করতে যাচ্ছি গালে ২ টা চড়ও পড়তে পারে তাই নিরবশূন্য রাস্তায় খুজছিলাম।



– শুভ্র,,,,,,শুভ্র গাড়ী থামাও প্লিজ……


– শুভ্র চট করে ব্রেক কষে বলল প্রবলেম কি তোমার!

– আমি ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে ডোর খুলেই বৃষ্টির মধ্য দৌড়……… অনেক দুর অবদি চলে এসেছি।


– শুভ্র পরীর কান্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। পরী কি শুরু করে দিল। ডক্টরের কাছে না যাওয়ার বাহনা।



– জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বললাম ইয়া…….হু আমি সাকসেস।
– ২ টা হাত মেলে দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব খুব খুব ভাল লাগে।


– শুভ্র গাড়ীতে বসেই কান্ডগুলো দেখছে,,,,,, চোখ বড় বড় করে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না আমিতো আজ ভিজবই। আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া! যাওয়া বের করছি……


– প্রচন্ড বৃষ্টি আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। শুভ্রটা থাকলে আরো ভাল হত। কিন্তু ও গাড়ীতেই বসে আছে আর আমাকে দেখছে।
– অনেকক্ষন ভিজলাম মনের আনন্দে।



– শুভ্র জানালার গ্লাস খুলে আমাকে ইশারা করল ওর কাছে যেতে।


– আমি দৌড়ে ওর কাছে এসে বললাম শুভ্র কিছু টাকা দাও তো…..


– কেন! টাকা দিয়ে কি করবা?


– আমিতো পুরাটাই ভিজে গেছি তাই গাড়ীর সিট ভিজে যাবে। আমি একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় যাব। তুমি বাসায় চলে যাও।



– পরীর কথা শুনে শুভ্র চোখ গরম করে বলল থাপ্পড় খাওয়ার খুব সখ উঠছে! আমি যদি গাড়ী থেকে একবার বের হই তাহলে কিন্তু তোমার কপালে সেই দুঃখ আছে।



– শুভ্রর রাগীত চেহারা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। যাহ্ বেশি বলে ফেললাম নাকি।


” ধুর,,,,,,,,, কিসের বেশি বলা মনে করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললাম ভয় দেখাচ্ছো কেন,,,,,,,,, ভালবেসে বলতে পারোনা!

আবার একটু হেঁসে বললাম,,,, শুভ্র তোমার রাগী লুকটা জাষ্ট ওয়াও। তুমি এত্ত সুন্দর কেন শুভ্র। আমি যত দেখি ততই ফিদা হয়ে যাই। উফ্ আমার বরটা এত্ত কিউট♥♥♥♥♥



– এই মেয়ে আজ জ্বর বাধিয়েই ছাড়বে দেখছি। পরী,,,,, এখুনি গাড়ীতে ওঠো….. আমাকে চটাও না বলছি।

– এইরে শুভ্রতো চটে গেছে তাই সুড় সুড় করে গাড়ীতে উঠলাম।


– শুভ্র কিছু না বলে গাড়ী ঘোড়াতেই ওর হাত চেপে ধরে বললাম আমি বাসায় যাব না শুভ্র……..

– শুভ্র এবার চটে গিয়ে বলল,,,,, সবার সামনে বৃষ্টিতে ভিজা একদম অপছন্দ করি আমি। কারন সাবার সামনে ভিজা শরীরে বেশ খারাপ দেখায়। কখনও যেন আর এমন দেখি না।


– আচ্ছা আর করবোনা। কিন্তু বাসায় যাবনা। বাকিটা সময় তোমার সাথে ঘুড়বো।

“পরী যে আজ ডাক্তারের কাছে গেলনা সেটার জন্য যে কত বড় মাষুল দিতে হবে সেটা ও নিজেও জানে না।



– শুভ্র কিছু না বলে আবার ড্রাইভ করতে লাগল।
– একটা চায়ের টং দোকানের সামনে এসে থেমে ছাতা নিয়ে নেমে গেল শুভ্র। দোকানে কেউ ছিলনা। শুধু দোকানি ছিল।

– কাকা কেমন আছেন?(শুভ্র)

– বৃদ্ধ বয়সী দোকানিটা শুভ্রকে দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল আরে শুভ্র,,,,,, ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছো।

– জ্বী কাকা ভাল আছি। ২ কাপ চা দেন। একদম কড়া বলেই পরীকে ইশারা করল ওখানে যেতে।

– শুভ্র দোকানির সাথে হেঁসে কথা বলছে আর দোকানি চা বানাচ্ছে।
– আমি দোকানে গিয়ে বললাম চাচা আমার টা কড়া রং চা দেন। মিষ্টি একদম হালকা।


– ওরা দু জনেই আমার দিকে তাকালো। আমি কিছু মনে না করে শুভ্রর কাছে গিয়ে বসলাম।

– আমাকে চা দিতেই আমি চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্য দাড়িয়ে চা খেতে লাগলাম। অদ্ভুত রকম সুখ। বৃষ্টির ফোটায় চায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। তবুও বেশ লাগছে।



– শুভ্র আর কিছু না বলে চায়ে চুমুক দিল।

– মেয়েটা কে শুভ্র?(দোকানি)


– আপনার বউমা কাকা…….

– তুমি কাকা বল আর মেয়েটা চাচা বলছে কেন?

– কারন ও মুসলিম তাই তাই চাচা বলছে।

– দোকানি চুপ করে গেল। তার মাথায় হয়ত কিছু ঢুকছে না।
– দোকানি বলল বাচ্চা মেয়ে তাই ওরকম করছে।


– শুভ্র চায়ে চুমুক দিয়ে পরীর দিকে তাকাল। সদ্য কুড়ি তে পা দেওয়া একটা মেয়ে পরী। যার বাচ্চামো স্বভাব এখনো যায়নি।

– পরী চা শেষ করে ফাকা গ্লাসটা বৃষ্টির পানিতে ধরে আছে।


– পরী,,,, কি করছো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো এখানে আসো(শুভ্র)


– চায়ের গ্লাসে বৃষ্টির জল জমাচ্ছি শুভ্র! তোমাকে ভিজাবো বলে। তুমিতো ভেজনি তাই।

– পরীর কথা শুনে দোকানি উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠল। শুভ্র বেশ লজ্জা পেল। এই মেয়ে কবে মানুষ হবে! কোথায় কি বলতে হয় জানে না।


– আমি দৌড়ে এসে চায়ের গ্লাসটা রেখে দোকানি কে বললাম শুকরিয়া চাচা। চা টা বেশ ছিল…. আমার খুব ভাল লেগেছে।



– আমি জলদি গাড়ীতে এসে উঠলাম। শুভ্রর মোড ভাল তাই আর সমস্যা নাই বলেই ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে চেঞ্জ করে নিলাম। ভিজা কাপড় গুলো ব্যাগে রেখে দিলাম।



– শুভ্র দোকানিকে ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল কাকা পুরটা রেখে দিন।


– দোকানি শুভ্রের হাত ধরে বলল বাবা জিবনে আমাকে এত্ত সুন্দর করে শুকরিয়া বলে বলেনি যে চাচা চা টা বেশ ছিল,,,, আমার খুব ভাল লেগেছে।
কথাটা শুনে আমার মন ভরে গেছে বাবা। টাকা দিয়ে আমাকে ছোট করনা। তোমরা সারা জিবন সুখে থাক।


– শুভ্র আর কিছু না বলে ছাতা নিয়ে গাড়িতে এল।
– শুভ্র তো অবাক পরী এর মধ্য ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে।


– কখন এসব করলে! সব তোমার প্লান ছিল তাই না?

– আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম শুধু।


– পরীর চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে যা শুভ্রকে খুব টানছে। শুভ্র একদম পরীর কাছে গিয়ে ওর ঠোটের কাছে ঠোট আনতেই পরী চোখ বন্ধ করে ফেলে। পরীর নিঃস্বাস ভারি হয়ে আসছে সেটা দেখে শুভ্র নিজেকে সরিয়ে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল।

– আমি চোখ খুলে বললাম শুভ্র দাওনা একটা কিস♥♥♥♥


– পরী,,,,,,,,,,! আজ তুমি আমার একটা কথাও শোননি তাই তোমার জন্য আজ আমার কোন আদর নাই।

– শুভ্র আমার ওড়না টা নিয়ে বলল চুল গুলো ভাল করে মোছ পানি পড়ছে।


– ধ্যাততেরি বলেই চুল গুলো মুছতে লাগলাম।
— বিকাল হয়ে গেছে বৃষ্টিও থেমে গেছে।
– অচেনা একটা জায়গায় শুভ্র আমাকে নিয়ে আসল। জায়গাটা অনেক সুন্দর। আমি নেমে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। শুভ্র একটু দুরে গিয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে লাগল। আমরা সন্ধ্যা অবদি সেখানে থাকলাম। তার পর শুভ্র আমাকে নিয়ে শপিং করতে গেল।



– সব ওর পছন্দ মত কিনছে আর আমি বসে আছি পাশে।

– স্যার ম্যাডাম কিছু পছন্দ করছেনা যে,,,,,,,,,,সব আপনিই করবেন?

– শুভ্র শাড়ী হাতে নিয়েই বলল আমার পছন্দই ম্যাডামের পছন্দ।

– ওরা আমাকে বলল খুব সৌভাগ্য করে এমন বর পাইছেন ম্যাডাম। কারও বর সময় দিতে চায়না কিন্তু আপনার বর একদম সব নিজে পছন্দ করে কিনে দিচ্ছে।


– আমি শুধু শুভ্রের দিকে তাকালাম। আর ও একমনে ড্রেস চুজ করছে।




– ড্রেস, জুয়েলারি, সু সব মাচিং করে নিল।প্রায় ১৮ সেট। শুভ্রের জন্য নিল ৫ সেট। কয়েকটা আমার সেটের সাথে মাচিং করা।


– শুভ্র,,,,,,,,! অর্পিতা, মা ওদের নামে নিলে হত না?


– সেটা তোমাকে বলতে হবেনা পরী। ২৩ সেটের মধ্য তোমার আর আমার জন্য ১০ বাঁকি গুলো ওদের জন্য। আমাদের গুলো মাচিং করা। যেদিন আমি যেটা পরব সেদিন তুমিও মাচিং করে পড়বা ওকে।

– বাহ্ কি প্লান তোমার। ফ্যাশন ডিজাইনার হলে তোমাকে আরও বেশি মানাতো।


– হুম,,,,,, বলে শুভ্র আমার হাত ধরে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে আবার গাড়ি স্টার্ট দিল।


– ফোনে দেখলাম রাত ১০ টা বেজে গেছে। সপিং করতে করতে এত্ত রাত হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।



– শুভ্র আমরা কই যাচ্ছি! বাসায় যাব না?

– না,,,,,,, গেলেই দেখতে পারবে।

– আমি ওর গায়ে হেলান দিয়ে রাস্তা দেখছিলাম। একটা রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি দাড়াল। শুভ্র গাড়ি পার্কিং করে আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে গেল। আমরা গিয়ে একজায়গায় বসে পড়লাম। অনেক হাইফাই রেস্টুরেন্ট। সব কিছু হাইফাই। শুভ্র খাবার অর্ডার দিল। এবারও ওর পছন্দের খাবার অর্ডার দিল।

– আমি খালি ওর দিকে তাকিয়ে মহা ভাবনায় পরে গেলাম। এত্ত গুলো মানুষের সামনে খাব কিভাবে!



– খাবার চলে আসল। পরী,,,,,, একদম স্ট্রেজ নিবানা। আরামে আস্তে আস্তে খাবা। সমস্যা হলে আমাকে অনুসরন কর আমি কিভাবে খাচ্ছি,,,,ওকে…..


– দেখছি আমার প্রবলেম সব বোঝে শুভ্র।


-আমাদের খাবার আলাদা কেন শুভ্র?

– কারন তুমি ঝাল খাও যেটা আমি খেতে পারিনা তাই আলাদা বলে খেতে শুরু করল।

– আমি ওকে অনুসরন করে আস্তে আস্তে খাচ্ছি।

“এমন সময় শুভ্র বলে কয়েকজন ডেকে উঠল।

– শুভ্র দেখল ওর কয়েকটা ভার্সিটির ফ্রেন্ড সাথে আকিক ও আছে। এরা কই থেকে আসল।


– দোস্ত কেমন আছিস বলেই ওরা কাছে এসে বসল।

– আমি চট করে উঠে শুভ্রর কাছে দাড়ালাম। শুভ্র কিছু বলল না আর আমাকে।

– দোস্ত এটা কে,,,,,,,,, তোর গার্লফেন্ড? বলেই ওরা সবাই হেঁসে উঠল। শুধু আকিক চুপ করে আছে।


– শুভ্র উঠে ওর জায়গায় আমাকে বসিয়ে দিয়ে আমার জায়গায় ও বসে কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর একটা ফ্রেন্ড বলে উঠল যেই শুভ্র কোন মেয়েকে পাত্তা দিত না তার আজ এই পরিনিতি বলেই হেঁসে উঠল ওরা।

– হাই মিস. আপনার নাম টা জানতে পারি?

– ওর নাম পরী।(আকিক)

– কিরে আকিক তুই ওকে চিনিস?

– আকিক আর কিছু বলল না শুধু পরীর দিকে তিক্ষ্ণ ভাবে চেয়ে থাকে।



– এই তোরা কে কি খাবি বলেই ওয়েটার কে ডাকল শুভ্র।

– এই ফাঁকে শুভ্র আমার খাবার গুলো পার করে দিল আমার কাছে এবং ওরটাও নিল।

– ওরা আড্ডা দিচ্ছে আর খাচ্ছে আর আমি একমনে খাচ্ছি। কিন্তু আকিক একভাবে পরীর দিকেই তাকিয়েই আছে।


– পরী খুব সুখে আছো?(আকিক)

– আকিকের কথা সুনে আমি থমকে গেলাম। কারন শুভ্র যদি একবার রেগে যায় তাহলে সব শেষ।

– শুভ্র আমাকে বলল ,,,,,,,, প্রশ্নর উত্তর দাও পরী।

– আমি শুভ্রের দিকে তাকাতেই ও আমাকে আস্বাস দিল ইশারা করে।

– আমি আকিকের দিকে তাকিয়ে বললাম আলহামদুলিল্লাহ্ খুব ভাল আছি ভাইয়া।

– শুভ্র এবার বলল ও আমার গার্লফ্রেন্ড না,,,,,, পরী আমার বিবাহিত স্ত্রী।

– কিরে মেয়েটার কথা সুনে মনে হল ও মুসলমান। জাতপাত না দেখেই বিয়ে করেছিস?

– আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। কি আর খাব এরা একের পর এক প্রশ্ন আমাকে করেই যাচ্ছে। বৌদি এটা বৌদি ওটা নানা প্রশ্ন।

– যে মেয়ে নিজের জাত ত্যাগ করে তার আবার কিসের সম্মান।( আকিক)

– কথাটা সুনে আমার চোখে পানি চলে আসল। টপ করে ২ ফোঁটা পড়েও গেল।

– শুভ্র চোখ গরম করে আকিকের দিকে তাকাল।

– আরে পরী আমিতো ফ্যান করলাম তোমার সাথে বলেই আকিক হেঁসে উঠল।


– খাওয়া কমপ্লিট করে আমরা বাহিরে আসলাম।


“ওর ফ্রেন্ড গুলো চলে যাওয়ার সময় বলল দোস্ত ঝাক্কাস একখান বউ পাইছিস। দেখলেই পরাণ জুড়িয়ে যায়।


– শুভ্র এবার চটে গেল,,,,,,,আমি ওর হাত ধরলাম। ও আর কিছু বলল না।


– এই আকিকের জন্যই সেদিন আমায় অনুরোধ করছিলা? যাতে ওর বিরুদ্ধে এ্যাকশন না নেই। দেখছো ওর ব্যবহার! শয়তানটা এতদিন জেলে পঁচে মরত তুমি সেদিন না আটকালে। ব্যাটা বজ্জাত ফাজিল কোথাকার।(শুভ্র)


– শুভ্র ছাড়তো এসব বলে ওর হাত ধরে গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে উঠলাম।


– আমারা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। রাস্তায় শুভ্র ইচ্ছা মত ওর ফ্রেন্ডদের মনের সুখে গালি,বকা যাইচ্ছা তাই বলতে লাগল।

-আমিতো ভয়ে চুপ। একটা কথা বললেই সব রাগ আমার উপর এসে পরবে।



এমন সময় ধাম করে বিকট একটা শব্দ হল। সামনে দেখলাম একটা লোক গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ল। গাড়ি সম্পূর্ন থেমে গেল…………..
চলবে——



অস্তিত্বের খোঁজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৩



– গাড়ি থেমে যাওয়াতে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই।


– পরী,,,,, রিলাক্স আমি দেখছি বলেই শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে গেল। তখন রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে।


– শুভ্র আশেপাশে সব খুঁজে দেখল কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। শুভ্র নিজে দেখেছে একটা লোক গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছে কিন্তু সে কোথাও নাই।



– আমিও গাড়ি থেকে নেমে শুভ্রর কাছে যেতেই শুভ্র একটা ধমক দিয়ে বলল কে তোমাকে গাড়ী থেকে নামতে বলেছে?


– আমি কিছু না বলে ওর হাত টা ধরে দাড়িয়ে রইলাম।


– শুভ্র ভূত টুত কিছু না তো?


– Just shut up……. কি পাগলের মত প্রলাপ বকছো। শুভ্রও কিছুটা বুঝতে পারছে সামথিং রং। কিন্তু পরীকে কিছু বললে ও আরও ভয় পেয়ে যাবে তাই নিজেকে শান্ত রেখে পরীকে নিয়ে আবার গাড়ীতে উঠল।



– গাড়ী স্টার্ট দিল শুভ্র…… কিন্তু খুবই স্লো গতিতে চলছে। প্রচন্ড ভারী লাগছে আর যতই স্পীড দিচ্ছে তবুও একই ভাবেই চলছে।



– আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলনা….. আমারা কার মধ্য পরে গেছি। রাস্তাটা পুরোই ফাঁকা,,,,,,,,২ ধারে চাপা গাছ। কি করব মাথায় কিছু আসছেনা। হঠাৎ মথায় বুদ্ধি আসল এরা কোরানের তেলায়াত শুনলে চলে যায় তাই ফোনটা বের করে ” সুরা বাকারা ” চালু করে দিলাম।


– কিন্তু গাড়ি একেবারে থেমে গেল। মনে হয় পিছন থেকে কেউ ধরে রেখেছে।

– শুভ্র আবার গাড়ি থেকে নামতে চাইলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম না না তুমি যেও না। যা হয় হোক। পুরা রাত এখানে থাকতে হলে থাকব তবুও নেমনা তুমি।

– পরী কিছু হয়নি। মনে হয় ইন্জিনে কোন প্রবলেম হইছে,,,,,, তুমি থাক জাষ্ট আমি দেখে আসব।

– আমি এবার কেঁদে ফেললাম। না না তুমি নামবা না একদম,,,,, আমরা কোন কিছুর মধ্য পরে গেছি। তুমি যেওনা। কারন আমি গ্রামে মানুষ হয়েছি এগুলো সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানি। এরা কতটা ভয়ঙ্কর।


– শুভ্রও বুঝতে পারছে এধরনের কিছু সমস্যা। শুভ্র একটু জোরেই বলে উঠল,,,,,,,,, আপনারা কে আমরা জানিনা। প্লিজ আমাদের যেতে দিন। অনেক রাত হয়ে গেছে বাসায় ফিরতে হবে।


– কিন্তু কোন রেসপন্স নাই।


– প্লিজ আল্লাহ্ সাহায্য কর আমাদের বলেই কাঁদতে লাগল পরী।


– প্রায় ১৫ মিনিট ধরে “সুরা বাকারা ” চলে এবং শেষে একটা আযান হয় এতেই মনে হল বিকট শব্দে কেউ কাউকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাচ্ছে আর গাড়ি একাকি চলতে শুরু করল।

– শুভ্রও আর দেরি না করে ড্রাইভ করতে শুরু করল।

– আমরা বাসায় চলে আসলাম। বাসায় ঢুকতেই পলা বলে উঠল শুভ্র এত্ত দেরী করে কেউ? বউদি কতবার কল দিচ্ছিল তোমাকে না পেয়ে। আমি মিথ্যা কথা বলেছি,,,, যে তোমরা ঘুমিয়েছ।

– স্যরি আন্টি কাজ ছিল একটু,,,,,, আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। (শুভ্র)

– আমি রুমে এসে অযু করে একবালতি পানিতে ২ হাত ডুবিয়ে রুকাইয়া পানি প্রস্তুত করে শুভ্রকে বললাম এই পানি দিয়ে গোসল কর।

– এটা কি!(শুভ্র)

– কিছু না তুমি এটা দিয়েই গোসল করবে বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। নিজের জন্যও পানি প্রস্তুত করে গোসল দিলাম।


– যা ভয় পাইছি আমি…. শুভ্র না থাকলে আমি নিশ্চত হার্টফেল করতাম। শুভ্রর রুমে এসে দেখি ও টাওয়াল পড়ে চুল মুছছে।


– শুভ্রর ফর্সা পিঠ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে…… ওটা দেখে আমার কানে মনে হয় শো শো আওয়াজ করছে। ফিলিংস এসে মনে বার বার ধাক্কা দিচ্ছে। আমি সোজা ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।


– শুভ্র একটা মুচকি হেঁসে বলল খুব ভয় পেয়েছিলা পরী?

– হুম খুব,,,,,,,,,,,,, বলেই ওর ভিজা পিঠে কিস♥ করলাম।

– পরী কি করছো,,,,, অনেক রাত হয়ে গেছে যাও সুয়ে পর।(শুভ্র)

– না,,,,,,,, যাবনা।

-শুভ্র এবার ওর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর আবার বলল………

– আচ্ছা পরী! তোমার পিরিয়ড কি রেগুলার হচ্ছে না অফ? শুভ্র পরীর প্রেগন্সসি কনফার্ম করতে কথাটা জিঙ্গাসা করছিল।

– এবার শুভ্রকে ছেড়ে দিয়ে খাটে এসে বসে পড়লাম। খুব লজ্জা পাইছি।

– পরী এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আমার টেনশন হচ্ছে,,,, বল আমাকে?

– এতে টেনশনের কি হল বুঝলাম না। আর আমি যদি কিছু বলি তাহলে নিশ্চিত ডাক্তারের কাছে আবার নিয়ে যাবে। কি লজ্জার বিষয়। প্রবলেম হচ্ছে বাট বলা যাবেনা।

” নাতো শুভ্র,,,,,,,,,,,, সব ঠিক আছে মাথা নিচু করে বললাম কথাটি।


– শিওর বলছো তো?

– হুম সত্যি বলছি,,,,,,,,,( বিপদ আসলে মানুষের মনে হয় হিতাহিত বোধ থাকেনা যেটা পরীর ক্ষেত্রে ঘটছে)


– শুভ্র বলতে চেয়েছিল সেই দিনের ব্যাপার গুলো কিন্তু সব যখন ঠিক আছে তাহলে আর বলার দরকার নাই। কারন বললে কি ভুল বুঝতে কি বুঝবে বলা যায় না। যে পরীর টার ছেড়া,,,,, রিক্স না নেওয়ায় বেটার।


– শুভ্র কি ভাবছো?

– কিছু না,,,,, খুদা লাগলে কিছু খেয়ে নাও। না হয় ঘুমিয়ে পর পরী।

– ধুর,,,,, বর আমার কিছুই বোঝে না।

– শুভ্র চেঞ্জ করে এসে খাটে সুয়ে পড়ল আর আমাকেও ঘুমাতে বলল।

– শুভ্র আমার ঘুম আসছেনা।

– কিহ্ রাত ২ টা বেজে গেছে এখনও তোমার ঘুম আসছেনা!

– না আসলে আমি কি করব।

– ওকে আসো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই এমনি ঘুম চলে আসবে।



– শুভ্রর কথা শুনে মাথায় একটা বেশ বুদ্ধ এল,,,,,,, এবার শুভ্র তুমি কই যাবা বলেই আমার কামিজটা খুলে শুভ্রর কাছে গিয়ে পাশ ফিরে সুয়ে বললাম মাথায় হাত বুলাতে হবেনা আমার পিঠে সুড়সুড়ি দিয়ে দাও এমনি আমার ঘুম আসবে। ওকে আমি ফ্রী নিব না। আমিও তোমার পিঠে দিব। তুমি ১০০ বার আমি ১০০ বার। তবে আমারটা আগে দিতে হবে। নাও নাও শুরু কর।



– শুভ্র তো হতবাক পরীর কথা সুনে। ছোট বাচ্চারা যেগুলো ঘুমাতে গেলে কাজ করে,,,,, একই কাজ পরী শুভ্রর সাথে করছে। কি পাজি মেয়েরে বাবা….. মুক্ষম চ্যাল দিতে যানে।


– পরী,,,,,,,,,, তুমি কি আমার ধর্য্যর পরীক্ষা নিচ্ছ এই রাতে!


– পরীক্ষা নিব কেন,,,,, এটা খুব কাজ করে আমার ঘুম আসতে তাই করতে বলছি। কেমন বর তুমি,,,,, একটুকু কাজ করতে পারছো না? নাও নাও জলদি শুরু করে দাও বলে শুভ্রর কাছে আরও ঘেষে গেলাম।


– শুভ্র চোখমুখ শক্ত করে পরীর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আর পরীর গায়ে লোম সাথে সাথে শিউরে উঠল। এই মেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে!


– প্রায় ১০০ টা দিয়ে ফেলল তাও শুভ্রর কোন রেসপন্স নাই। লাষ্ট প্লান ওর উপর প্রয়োগ করলাম। ওর দিকে মুখ ফিরে বললাম ওকে এবার আমার পালা আমি তোমাকে দিব এখন।


– আমার লাগবে না বলেই শুভ্র সুয়ে পড়ল। আর হ্যাঁ জামাটা গায়ে দাও।


– মেজাজ আমার ৩৬০ ডিগ্রীতে উঠে গেল। কিহ্ আমাকে ইগ্নোর করা বলেই শুভ্রকে একা ধারছে কিস♥♥♥♥করতে লাগলাম।


– এবার শুভ্র রেগে গিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে বলল……….. এই রাতে কি শুরু করছো হুম!
“ঘুমন্ত সিংহ কে জাগাইও না শেষে লোড নিতে পারবানা কিন্তু। তাই ঘুমিয়ে পড়।

– শুভ্রের কথা শুনে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।
শুভ্রর পিঠ খামচেঁ ধরলাম।

– এবার শুভ্র একঝটকানে পরীকে নিচে ফেলে বলল খুব সখ তোর তাইনা আমাকে চেতানো,,,, আজ তোর মজা বুজাবো বলেই শুভ্র পরীর হাত ২ টা ধরে ওর সুধা পান করতে লাগল। মধুচন্দ্রিমা।




– পরদিন সকাল ১১ টার দিকে সবাই বাসায় ফিরল। শুভ্র ততক্ষনে অফিসে চলে গেছে।


– নিতাই পরীর রুমে এসে দেখল ও সুয়ে আছে।

– পরী বলে কয়েকবার ডাকতেই আমি চোখ মেলে দেখি দাদু দাড়িয়ে আছে।

– পরী তোমার শরীর কি খুব খারাপ! এই অবেলায় সুয়ে আছো?



– কি আর বলব,,,,, নিজের ইচ্ছায় শুভ্রকে চেতাইতে গিয়েছিলাম যার ফলাফল পুরু শরীর ব্যাথায় ডাক ধরে আছে। আর গলায় অসংখ্য দাগ। এগুলো নিয়ে ওদের সামনে ক্যামনে যাব।


– একটু জ্বর এসেছে দাদু। কেমন আছেন আপনি? আর কখন আসলেন!

– ভাল,,,,,,,, একটু আগে আসছি। তোমাকে দেখতে না পেয়ে তোমার রুমে আসলাম।
ওকে রেষ্ট নাও,,,,,, মেডিসিন নিছ?

– না দাদু,,,,,খাবার খেয়ে নিব নি।


– আচ্ছা,,,,, সমস্যা হলে আমাকে বল কেমন,,,,, কথাটি বলেই চলে গেলেন তিনি।


– আমি সুয়ে পড়লাম। কেবল চোখ ধরেছে এমন সময় অর্পিতা চিক্কুর মেরে পরী দিদি বলেই এক হাঁক ছাড়ল।


– আমি ধরপড়িয়ে উঠে বসে পড়লাম,,,,,, চেয়ে দেখি অর্পিতা।

– অর্পিতা,,,,,তুমি! এত্ত জোড়ে কেউ চিক্কুর মারে?

– স্যরি পরী দিদি। তোমার নামে পিঠা আনছি খাবা?


– আমি অর্পিতার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা বড়সর বাটিতে অনেক গুলো পিঠা। আমার পিঠা খুব পছন্দ তার চট করে ওর হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বললাম কই পাইলা পিঠা?

– অর্পিতা আমার পাশে বসে বলল বৌদির মা তোমার জন্য পাঠিয়েছে,,,,,, তুমি আগে চলে আসছো তো তাই।


– অহ্ বলেই খেতে লাগলাম। দারুন ছিল পিঠা গুলো,,,,হরেক রকমের। অনেকগুলোর তো নামই জানিনা। পিঠা খেতে খেতে ওকে বললাম তুমি কেমন আছো অর্পিতা?

– ভাল আছি দিদি। গায়ে ওড়না জড়িয়ে আছ কেন?

– ঠান্ডা লাগছে খুব,,,,,,মনে হয় জ্বর আসবে তাই।

– কি হয়েছে তোমার পরী?(অনিতা)

– কেমন আছেন আন্টি?

– হুম ভাল,,,,, গায়ে জ্বর আসলো কিভাবে বলেই আমার কপালে হাত দিল মা।

– হুম জ্বর আসছে তো বলেই পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল ওর ঘাড়ে রক্ত মরে গিয়ে কালশিটে দাগ পরে গেছে। অনিতা খুব ভাল করে দেখে যা বুঝার বুঝে গেল। মনে মনে শুভ্রকে হাজারটা গালি দিল। বিস্বাস করে ওর সাথে মেয়েটাকে পাঠাইছি আর জানোয়ার টা করছে কি বলেই রাগী একটা ভাব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।


– মার ওভাবে তাকানো দেখে আমি চুপসে গেছি ভয়ে। কিছু আন্দাজ করেনি তো! ওড়নাটা ভাল করে জড়িয়ে নিলাম।




– অনিতা কিচেন রুমে এসে দুধ গরম করতে লাগল। এমন সময় পলা আসতেই অনিতা খেঁকিয়ে উঠে বলল তোকে আমি কিসের জন্য এখানে পাঠিয়েছিলাম?

– কি হইছে বৌদি?(পলা)

– অনিতা আর কিছু না বলে গ্লাসে দুধ ঢেলে নিয়ে ওর রুমে এসে ২ টা ব্যাথার মেডিসিন দুধের সাথে মিশিয়ে একটু চিনি মিশ করে পরীর রুমে আসল।

– অর্পিতা ও পরী ২ জনেই গল্প করছিল আর হাসছিল।


-পরী দুধটা খেয়ে নাও তো?(অনিতা)

– এই সময় দুধ! আগে পিঠা খাই?

– না গ্লাসের সব দুধ খতম কর তার পর পিঠা। আর পিঠাতো কেউ খেয়ে ফেলছেনা,,,,, ওগুলো তোমার জন্যই।

– কি আর করা দুধ টুকু এক নিঃস্বাসে শেষ করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম শেষ,,,,,,

– গুড গার্ল,,,, বলেই উনি গ্লাস নিয়ে চলে গেলেন।

– দুধ খেয়ে পেট ভরে গেছে কি আর পিঠা খাব। প্রচুর ঘুম চলে আসছে। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

– অর্পিতা চেয়ে দেখে পরী ঘুমাই পড়ছে তাই কিছু না বলে পিঠার বাটি নিয়ে চলে গেল।




– শুভ্রের হাতে একটা খাম। ওর সিলেটে পোষ্টিং হয়েছে। যা শুভ্রের জন্য মোটেও সুখকর নয়। হঠাৎ বদলি এটাই মাথায় আসছে না। নিশ্চয় টাকা খাওয়ার ধান্দা উপর মহলের।



– সন্ধ্যার পর শুভ্র বাসায় এসে সোজা ওর মায়ের রুমে গেল। অনিতা কিছু হাতের কাজ করছিল।


– মা কেমন আছো?

– অনিতা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল কিছু বলবি?

– মা আমার উপর চটে কেন আছে? কথাটি কি বলব না বলবনা ভেবে শুভ্র বলেই ফেলল মা আমার সিলেটে
পোষ্টিং হইছে…… কাল পরশুর মধ্য যেতে হবে।


– কবে হল,,,,, কই কিছু বলিসনি তো?

– আজই লেটার পাইছি মা!

– অহ্ আর কিছু বলবি?

– আমি চলে যাচ্ছি মার কোন রিয়াক্ট ই না দেখছি। মা তুমি কি আমার উপর কোন বিষয়ে রেগে আছো?

– নাহ্ তো! তুই কি এমন কোন কাজ করেছিস যে তোর উপর রেগে যাব?

– মা,,,,, আসলে একটা কথা বলতাম…… আমার সাথে যদি পরীকে নিয়ে যেতাম তাহলে আমার একটু সুবিধা হত। খাওয়া দাওয়ার সমস্যা আরকি। ওকে কি আমার সাথে নিয়ে যাব!



– অনিতা শুভ্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,,,, বাছা….. তোমার কি মতলব সেটা বুঝছো আমি বুঝিনা! তোমার কার্যসিদ্ধি কখনও করতে দিচ্ছিনা।
না ওকে নিয়ে গিয়ে কোন কাজ নাই। আর তাছাড়া ছোট মেয়ে ও কি রান্না করতে পারে? ওর যেয়ে কোন কাজ নাই। নিজের কাজ নিজে একাই করতে পারিসনা! অনিতা বেশ জোড়েই কথাগুলো বলল। আজ অনিতা শুভ্রের উপর বেশ চটে গেছে।


– শুভ্র আর একটা কথাও না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসে।



– অর্পিতা মার রুম থেকে আসছিল। ওকে ডাক দিলাম। ও আমার কাছে আসলেই ওকে বললাম…..
অর্পিতা! আন্টি শুভ্রের উপর চিল্লাচাটি করল কেন?


– অহ্ তুমি তো জান না পরী দিদি! কাল পরশুর মধ্য দাদা সিলেট চলে যাচ্ছে। দাদার পোষ্টিং হইছে সিলেটে। আর কি যেন বলছিল। জানিনা মা কেন চিল্লাচাটি করল!



– কিহ্,,,,,, আমার মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল। শুভ্র সিলেট যাবে কেন? আর এটার জন্য মা ওকে ধমক দিয়ে কেন কথা বলল। আমি এক মুহুত্ব দেরি না করে রুমে চলে আসলাম। ঠিক থাকতে পারছিনা। বরের কাছে যে যাব! তার জন্যও সুযোগ খুঁজতে হয়। যা হয় হোক বলেই রুম থেকে বের হয়ে শুভ্রের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে দেখি ও শার্ট খুলছে। আমি ঐ অবস্থায় ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম তুমি কই যাচ্ছো?


– পরী ছাড় তোমার গায়ে ঘাম লেগে যাবে তো!

– লাগুক,,,,, আগে বল কই যাচ্ছো,,,,, অর্পিতা বলল তুমি নাকি সিলেট চলে যাচ্ছো?

– শুভ্র দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলল হুম পরী। করার কিচ্ছু নাই।

– আমাকেও সাথে নিয়ে চলনা,,,,,,, তাছাড়া তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হবে।

– শুভ্র পরীকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল সেটাই বলতে মার কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু মা,,,তো রাজিই হল না।

– আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।

– শুভ্র এবার পরীকে একটা ট্রী টেবিলের উপর বসিয়ে নিজে ফ্লোরে বসে পরী কোলে মুখ লুকিয়ে বলল,,,,,, আমার ও যে যেতে মন চায় না পরী,,,, তোমাকে ছেড়ে।

– আমিও ফ্লোরে বসে পড়লাম ওর পাশে। কোন উপায় নেই শুভ্র?

– দেখি ওখানে আগে শিফর্ট হই। তারপর কিছু করা যায় কিনা।

– আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম।

– শুভ্র বুঝতেই পারছে পরীর নোনা জল ওর পিঠ বেয়ে পড়ে যাচ্ছে। শুভ্র একটু কঠিন হয়ে বলল,,,,, পরী এত্ত কান্না করে কেউ। যদি আমি মারা যাই তখন কি করবা হুম….!

– প্লিজ এমন কথা বল না। আমি মরে যাব তাহলে।

– ওকে কান্না থামাও,,,,,,, তোমার শরীর কি ব্যাথা করছে এখনও?

– না আমি ঠিক আছি। ( ছেলে ব্যাথা দেয় আর মা মেডিসিন দিয়ে ব্যাথা সারায়,,,,, চমৎকার শাশুড়ি)

– রুমে যাও পরী। আমি ফ্রেস হয়ে একটু ঘুমাব। শরীরটা ভারী হয়ে আছে। পুরো দিন ঘুমাইতে পারিনি,,,,, কাল আবার রওনা দিতে হবে।

– আমি ওর কথা সুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে আসতেই শুভ্র বলে উঠল ,,,,, দরজাটা খুলে রেখ পরী,,,,, আমি কিন্তু তোমার রুমে যাব।

– আমি খুব খুব খুব খুশি হয়ে বললাম শুভ্র রাতে আমি আসি তোমার রুমে?

– নাহ্ রিক্স নেওয়ার প্রয়োজন নাই তোমার,,,,,, আমার পরিবারকে আমি চিনি। তারা কখন ঘুমাই কি করে সব জানি। তাই কাজটা আমার জন্যই সহজ। দরজাটা জাষ্ট খুলে রেখ।


– ওকে বলে চোখের জল মুছে,,,, দরজা খুলে চলে আসলাম আমার রুমে।



– শুভ্রও ফ্রেস হয়ে সুয়ে পড়ল এবং ঘুমিয়ে পড়ল। বেচারা না পাড়ছে রাতে ঘুমাতে না পাড়ছে দিনে। তাই সুয়ে পড়তেই চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসল।



– রাত ১০ টার দিকে অনিতা এসে শুভ্রকে ডাক দিল।

– মা কিছু বলবে?

– খাবি,,,,, নিচে চল।

– মা খুব ঘুম পাচ্ছে পরে খাব। তোমরা খেয়ে নাও বলেই শুভ্র আবার ঘুমিয়ে পড়তেই অনিতা শুভ্রকে টেনে তুলল।
“সারা রাত কি চুরি করতে বেরিয়েছিস না নাইট গার্ডের কাজ করছিস যে এত্ত ঘুম! বেশ খোঁচা দিয়েই কথাটা অনিতা শুভ্রকে বলল।

– মা,,,, কিসব আজে বাজে বকছো?

– তোর দাদু, বাবা অপেক্ষা করে আছে জলদি ফ্রেস হয়ে নিচে আয় বলেই অনিতা চলে গেল।

– কি আর করা। শুভ্র উঠে জলদি ফ্রেস হয়ে ট্রী শার্ট গায়ে দিয়েই নিচে গেল।
সবাই ওর অপেক্ষায় করছে। শুভ্র গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। অনিতা শুভ্রকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

– শুভ্র তোর পোষ্টিং নাকি সিলেটে হইছে?(নিতাই)

– হ্যাঁ দাদু।

– যাচ্ছিস কবে?(অনিল)

– কাল বিকেল ৩ টার দিকে রওনা দিব বাবা।

– শুভ্র খাচ্ছে আর সবার সাথে কথা বলছে আর আমার বুক ফেঁটে যাচ্ছে মনে হয়। চোখে পানি টলমল করছে। গলা ভারি হয়ে আসছে গলা দিয়ে আর খাবার নামছেনা।

– শুভ্রই আগে খারার শেষ করে বলল অর্পিতা খাবার কমপ্লিট করে আমার রুমে আসিস তো,,, বলেই শুভ্র চলে গেল।

– আস্তে আস্তে সবাই চলে গেল শুধু আমি বসে রইলাম। পলা আন্টি এসে বলল পরী তুমি কেন বসে আছো?

– আমি কিছু না বলে চলে আসতেই পলা আন্টি বলে উঠল শুভ্র চলে যাচ্ছে দেখে মন খারাপ?

– আমি ওনার দিকে তাকিয়ে নিশব্দে মাথা নাড়িয়ে ফুপাতে লাগলাম।

– তোমার এই পিরিতী যদি কর্তা মার কানে একবার যায় তো তোমায় আস্ত রাখবেনা,,,,, রুমে যাও(পলা)

– আমি রুমে এসে বসে কেঁদেই চলছি। আমি মেনেই নিতে পারছিনা ও চলে যাচ্ছে।



– অর্পিতা শুভ্রর রুমে বসে আছে আর শুভ্র এক এক করে সপিং ব্যাগ ওর সামনে রাখল।

– দাদা এগুলো কি?

– দেখ,,,,,,পছন্দ হয় কিনা?

– অর্পিতা সব প্যাকেট খুলে দেখল,,,,,,,, ও বেশ খুশি হয়ে বলল এগুলো আমার জন্য!

– মা, বৌদি,তোর,পরী, দিদুন আর পলা আন্টির জন্য। যা সবাইকে দিয়ে দে।

– এমন সময় কৌশিক আর নিদ্রা রুমে ঢুকে বলল এত্ত কি দিচ্ছিস অর্পিতাকে!

– তেমন কিছু না,,,,,,জাষ্ট কিছু ড্রেস আর জুয়েলারি।

– কি ব্যাপাার সব মেয়েদের দিচ্ছিস আমরা ছেলেরা কি করলাম শুভ্র!

– ওদের মত অবলা যদি হস তাহলে তোকেও দিব দাদা……..

– এই শুভ্র আমরা কি অবলা বলেই নিদ্রা গম্ভীর হয়ে গেল।

– না না তোমরা অবলা কেন,,,,,, তোমরা তো রনচন্ডী বলেই কৌশিক হাহাহা করে হেঁসে উঠল।

– কৌশিক তোমরা কিন্তু আমাদের অপমান করছো!(নিদ্রা)


– দাদা চুপ কর দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মেয়ে তাই এদের কিছু বলতে নেই।( শুভ্র)


– অর্পিতা যাও তো পরীকে ডেকে নিয়ে আসো আজ এদের একটাও ছাড় নেই। ( নিদ্রা)


– অর্পিতা উঠে যেতেই শুভ্র ওকে থামিয়ে বলল ওর আসার প্রয়োজন নাই। কারন শুভ্র ভাল করেই জানে পরী কাঁদছে। কারন ডাইনিং টেবিলে ও নিশব্দে কাঁদছিল। সবাই কথার ব্যাস্ততার মধ্য ভাগ্গিস মগ্ন ছিল বলে ওকে কার প্রশ্নর কোন সম্মুখীন হতে হয়নি।


– রুমে অনিতা সহ সকলে আসল শুধু পরী ছাড়া। সবাই অনেকক্ষন জমিয়ে আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেল। আর শুভ্র নিজের লাগেজ গোছাতে শুরু করল। সব ব্যাপারে শুভ্র একজন দ্বায়িত্ব শীল ছেলে। নিজের কাজ নিজেই করে।



– অনেক রাত হয়ে গেছে তাই আমি শুভ্রকে ম্যাসেজ দিলাম,,,,,, শুভ্র কই তুমি! কখন আসবা,,,,,,,,, আমার কিছু ভাল লাগছেনা তো?


– শুভ্র মাসেজ রিপ্লাই দিল,,,,,,,,,সব কিছু গোছগাছ করছি সোনা। সময় হলে এমনি যাব তুমি ঘুমিয়ে পড়।(শুভ্র)


– আমি বেডে সুয়ে পড়লাম,,,,, রাত ১২ টা পার হয়ে যাচ্ছে তাও শুভ্রটা আসছেনা। ওর আসায় জেগে থাকতে থাকতে আমি একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।



– রাত ৩ টার দিকে নিজের রুমের দরজাটা ভাল করে লাগিয়ে পরীর রুমে আসল শুভ্র এবং দরজা বন্ধ করে দিল।
চলবে——————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here