অশান্ত বসন্ত পর্ব-২১

0
642

#অশান্ত বসন্ত
(একবিংশ পর্ব)
#জয়া চক্রবর্তী
*****************
প্রায় ছুটতে ছুটতে কেবিনে আসে পল্লব আর বহ্নি।বেডে শিখাকে দেখতে না পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় বহ্নি।ওর গলার স্বর কে যেন কেড়ে নিয়েছে।

‘ব্যাপার কি নার্সদি?পেশেন্ট বেডে নেই কেন?’,পল্লবের প্রশ্নে নার্স মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে পল্লবকে দেখে নিয়ে বহ্নিকে বলেন,’ছিলেন কোথায় আপনি?পেশেন্টকে আবার ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে,ইমিডিয়েটলি রক্ত বন্ধ করা প্রয়োজন।রক্ত বন্ধ না হলে হাতের বাইরে চলে যেতে পারে সব ‘।

বহ্নি নিজের পায়ে আর কোনো জোর পায়না।ধপ করে বসে পরে শিখার বেডের ওপরে ।

শিখা ঘুমোচ্ছে ভেবে সারা রাত নিজেও সে ঘুমিয়েছে।ভেবেছিলো বিপদ কেটে গেছে, ভয়ের কিছু নেই।কিন্তু ভগবান তাকে এ আবার কি পরীক্ষা নিচ্ছে!

না আর ভাবতে পারছেনা বহ্নি।একটু আগেই সে কতো খুশি ছিলো,আর এখন যেন আকাশ ভেঙে পরেছে তার মাথায়।শূন্য দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে বহ্নি।
পল্লব ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেও যেন কেমন হতভম্ব হয়ে পরেছে।সে কারনে বহ্নিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পায়না পল্লব।

ঘন্টা খানেকের মধ্যেই শিখাকে আবার বেডে দেওয়া হয়।বহ্নি শিখার অবস্থা দেখে ভাবে,কি দরকার ছিলো অপারেশন করবার!দিব্বি তো ভালো ছিলো তার দিদিয়া।মুখ দিয়ে তো শুধু লালাই পরতো।কিন্তু তাতে তো তার কোন অসুবিধা হয়নি কখনো।বাইরের লোকজন না বুঝলেও শিখার ইশারা বহ্নি তো বুঝতো।

ভাবনার জাল ছিঁড়ে যায় ডাক্তার আসায়।এসেই তিনি নার্সকে বলেন,’এক ঘন্টা বাদে tongue depressor দিয়ে মুখ হাঁ করিয়ে দেখবেন গলার ভিতর রক্ত জমছে কিনা।যদি রক্ত জমে তাহলে সাবধানে suction দেবেন’।
নার্স ঘাড় নাড়িয়ে বললো,’ঠিক আছে স্যার’।

উনি আবার বললেন,’দেখবেন যাতে খোঁচা না লাগে। ভেজা গজ পিস artery foreceps এর মাথায় ধরে আলতো করে গলার ভিতরের রক্ত মুছে দেবেন।আর নাক দিয়ে রক্ত আসলে Antazol drop দিয়ে দেবেন’।

পল্লব বলে ওঠে,’আপনি যে বলেছিলেন অপারেশন সাকসেসফুল, তাহলে হঠাৎ…’,
পল্লবের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বললেন,’ভয়ের কিছু নেই,আফটার অপারেশন এসব সমস্যা আসতেই পারে।বিশেষ করে যখন এটা মুখের ব্যাপার।তাছাড়া এই কেসটা সহজ ছিলোনা বলেছিলাম তো’।

কথা শেষ করে উনি ব্লাডপ্রেশার দেখতে বললেন নার্সকে।নিজে অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেবেল চেক করলেন।তারপর টুকটাক আরো কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

নার্স ওদের বলেন,’আপনারা বাইরে যান।দরকারে ডেকে নেওয়া হবে’।বহ্নি তখনও ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়ে।ব্যাপারটা খেয়াল করে বহ্নির হাত ধরে পল্লব ওকে বাইরে নিয়ে যায়।পল্লব খেয়াল করে বহ্নি এতোক্ষণে একটাও কথা বলেনি।

পল্লব বহ্নিকে বলে,’শুনলে না ডাক্তার কি বললেন?উনি বললেন ভয়ের কিছু নেই, এমনটা হোতেই পারে..’,এরকম আরো অনেক কথা বলে গেলো পল্লব। কিন্তু বহ্নির মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ করা গেলোনা।

ভিজিটিং রুমে এসে বহ্নিকে বসিয়ে পল্লব বাইরে গেলো।কিছু খাওয়াতে হবে মেয়েটাকে।এভাবে চললে তো বহ্নিও অসুস্থ হয়ে পরবে।পল্লব ট্রপিকানা ফ্রুট জুস কিনে আনলো।

আদেশের মতো করে বহ্নিকে বললো,’এক্ষুনি এটা চুমুক দিয়ে শেষ করো।এইভাবে না খেয়ে তোমারো যদি শরীর খারাপ হয় তাহলে তোমার দিদিয়াকে কেয়ার করবে কিভাবে?’

বহ্নি মাথা তুলে পল্লবের দিকে তাকিয়ে বললো,’অপারেশন করিয়ে আমি কোনো ভুল করলাম নাতো?আমার দিদিয়া বাঁচবে তো?’।

পল্লব ভরসা দিয়ে বললো,ভগবান তো আছেন,ওনার ওপর ভরসা রাখো,ভেঙে পরছো কেন?সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখবে তোমার দিদিয়া কয়েকমাস পর কথা ও বলবে তোমার সাথে’,পল্লবের কথায় কেঁদে ফেলে বহ্নি।বলে,’তাই যেন হয়, মায়ের স্বপ্ন যেন পূরণ হয়’।

পল্লব জুসটা এগিয়ে দিয়ে বলে,’এবার তো খেয়ে নাও’।বহ্নি বলে,’তুমি খাবেনা?যাও তুমি গিয়ে খেয়ে এসো কিছু।আমি জুস খাচ্ছি।পল্লব বলে,সত্যি খাবে তো?বহ্নি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।পল্লব নিশ্চিন্ত মনে বেরিয়ে যায়।

ঠিক তখনই ফোনটা আসে।
পিউয়ের ফোন।খুশি মনে ‘হেলো’ বলতেই পিউ বলে ওঠে,’ মায়ের সেই বান্ধবীর ফুল ফ্যামিলি আজ বিকেলে আমায় দেখতে আসছে,কিছু একটা কর দাদাভাই”।

পল্লব বললো,’তুই নিজের বক্তব্য পরিস্কার করে তুলে ধরছিস না কেন বাবার কাছে?’পিউ কেঁদে ফেলে বলে,’আমি কিছু জানিনা,দুপুরের মধ্যেই তুই চলে আসবি,আর যা বলবার তোকেই বলতে হবে বাবাকে।আমি কিছু বলতে পারবোনা’,বলেই কেটে দেয় ফোনটা।

পল্লবের মাথা আর কাজ করছেনা।সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে ডিম পাউরুটির অর্ডার দেয়।
পল্লব ভাবে,পেটে খিদে থাকলে মাথাটাও কাজ করতে চায়না।মেয়েরা কিভাবে যে উপোস করে থাকে কে জানে!

খেতে খেতে পল্লব ঠিক করে দুপুরে নয় বিকেলেই বাড়িতে যাবে।ওর যা বক্তব্য ছেলের বাড়ির লোকেদের সামনেই বাবাকে জানাবে।

আলাদা ভাবে ওর বাবাকে বলে কোনো লাভ নেই।কারন ওর বাবা কারো মতামতের গুরুত্ব দেয়না।তবে বাবা পিউকে পড়াতে রাজি না হলে পিউকে পল্লবই পড়াবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here