অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ২৭

0
698

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

২৭.

আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আবহাওয়া আজ ভীষণ গম্ভীর। ক্ষণে ক্ষণে আকাশ তার রাশভারি কণ্ঠে ডেকে উঠছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল তালগাছ গুলোও প্রকৃতির তান্ডবে আজ অশান্ত। মেঘমন্দ্র আবহাওয়ায় অলকানন্দার সুন্দর শরীরটাও আধো অন্ধকারে বেষ্টিত মনে হচ্ছে। সে দাঁড়িয়ে আছে তাদের কলেজের মাঠে। শরীরে জড়ানো নীল মখমলের কাপড়। চোখ-মুখ শুকনো তার। চোখের সামনে ভেসে উঠছে কেবল বিহারিণী মহলের দৃশ্য। সব পরিচিত মানুষের শরীরে কেমন অপরিচিতের ছোঁয়া। সে অবশ্য বিহারিণী নামক মেয়েটা সম্পর্কে জানতে চাওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছিল। অথচ সেখানে গিয়ে জেনে এলো অন্যকিছু। সূর্যাস্ত আইনে বিহারিণী মহলের জমিদারি নিলামে উঠতে চলেছে। তার উপর কোম্পানি থেকে নোটিশ এসেছে মোটা অঙ্কের কর পরিশোধ করার জন্য। সকলে তাই হিমশিম খাচ্ছে। মনময়ূরীর স্বামী প্রসাদও আজকাল এ বাড়িতে আর থাকে না। সে নিজ বাড়ি ফিরে গিয়েছে। পানকৌড়ি এবং তার স্বামী অবশ্য এখানেই আছে। তার দেবর মনোহরের চোখেমুখে অবশ্য কোনো শোক তাপের চিহ্ন পাওয়া গেল না। না আনন্দেরও রেশ ছিল। সে বরাবরের মতন ছিল নির্বাক। কোনো গালমন্দও করেনি কিংবা প্রশংসাও করেনি। চুপচাপ নিজের মতনই ছিল। মানুষ গুলোর মাঝে কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা ছিল যা নন্দার ভেতরে লেগেছে। সে হয়তো অনেক কথা শুনিয়ে এসেছে কিন্তু মানুষ গুলোর জন্য তার ভেতরটা কাঁদছে। তার উপর তার হাতে তরঙ্গিণী একটা ছোটো চিরকুটের মতন কিছু একটা দিয়ে ছিল লুকিয়ে। লক্ষ্মীদেবীর ঘর থেকে নাকি সে পেয়েছিল চিরকুটটা। যেখানে উল্লেখ করা আছে চিরকুটটা কেবল নন্দার জন্য। লক্ষ্মীদেবী সবাইকে ছেড়ে কেন তার জন্যই চিরকুট খানা লিখে গিয়েছিল? আর কেনই বা চিরকুট লিখে ছিলেন! সে কী তার মৃত্যু টের পেয়েছিলেন?

নন্দা চিরকুটটা আবারও পড়ল। কালো দোয়াতে ভারী ভারী অক্ষরে কিছু হেয়ালি মাখানো শব্দ লিখা,
“তোমার তরে রেখে গিয়েছি আমি, কিছু সত্যের সমাহার,
জীবনের উত্থান-পতনে যা তোমাকে দিকভ্রান্ত করবে বারংবার।
আপন মানুষের ছদ্মবেশে কে যেন ডাকে যমালয় থেকে সাজিয়ে ফন্দি ,
আমার প্রিয় কৌটায় সোনালী আস্তরণে রয়েছে কত গীতিকাব্য বন্দী।
তুমি জেনে নিও সব,
প্রিয় মানুষের মুখশের আড়ালের যত আছে মিছে কলরব।”

অলকানন্দার ভ্রু কুঁচকে আসে। কেমন ভাসা ভাসা, শক্ত শব্দগুচ্ছ। মনে হচ্ছে কত গোপনীয়তা প্রতিটি অক্ষরে। সে গোপনীয়তা ভেদ করে কেউ যেন ছুঁতে না পারে মানুষটার আড়ালের কিছু। কিন্তু সেই গোপনীয়তা কেন অপ্রিয় নন্দার তরে দান করে গেল সে! কী ভরসায়?

অলকানন্দার ভাবনার মাঝে তার পিঠে চাপড় মারলো কেউ। সে পিছু ফিরে তাকাকেই দেখল ললিতা। ঝলমলে হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নন্দা পিছু ফিরতেই সে শুধাল,
“ভালো আছো, নন্দা?”

নন্দা মাথা নাড়াল, মুচকি হেসে বলল,
“হ্যাঁ। তুমি ভালো আছো?”

“দারুণ আছি। নন্দা, একটা জায়গায় যাবে?”

অলকানন্দা ঘাড় নাড়াল, শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায়?”

“আসোই না, শহরের জায়গা কী তুমি চেনো? আসো, তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব।”

অলকানন্দা মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়াল। ললিতা শক্ত হাতের মুঠোয় চেপে ধরল অলকানন্দার ডান হাতটা। প্রায় কিছুটা টেনেই নিয়ে গেল। তারা কলেজ থেকে বেরিয়ে ট্রামে চড়ল। নন্দা অবশ্য এর আগে কখনো ট্রামে চড়েনি। তাই আগ্রহ নিয়েই ললিতার কাছ থেকে ট্রাম সম্পর্কে জানল। কয়েকটা লোক আবার ওদের দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়েও রইল। ট্রাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতেই ললিতা অভিজ্ঞ পায়ে নেমে গেল। সমস্যা হলো নন্দার। ভীতু ভীতু পা যুগল ফেলতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ তার পেছনে বাকি যাত্রীরাও নামার জন্য উতলা। একজন তো প্রায় অসহ্য কণ্ঠে বলেই ফেলল,
“নামতে না পারলে উঠোই কেন বাপু! আজকালকার ছেলেমেয়ে গুলো না বেশি পাখনা গজিয়ে গেছে।”

নন্দা লোকটার দিকে তাকাল, কিছুটা শক্ত জবাব দেওয়ার আগেই ললিতা মুখ ঝামটি দিয়ে লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,
“একজন মানুষের সমস্যা হতেই পারে, স্যার, আপনার এত তাড়া থাকলে উড়োজাহাজে চলাচল করতে পারেন না! তাহলেই তো আর পাখনা গজানো ছেলেমেয়ে গুলোকে দেখতে হয় না।”

লোকটা চুপ করে গেল। অলকানন্দার মুখে দেখা মিলল মুচকি হাসির রেখা। ললিতা মেয়েটাকে যেখানে সবার অপছন্দ, শিক্ষকরা প্রায় নিষিদ্ধ বস্তুর ন্যায় নিষিদ্ধ মানুষ বলে ঘোষণা করে দিয়েছে সেখানে নন্দার তাকে ভীষণ ভালো লাগে। কথায় আছে, নিষিদ্ধ সবকিছুর প্রতিই মানুষের বাড়াবাড়ি রকমের ঝোঁক থাকে। নন্দাও বোধকরি এর বহির্ভূত নয়। কিন্তু এখন দেখার পালা, বরাবরের মতন নিষিদ্ধ বস্তু সবচেয়ে বড়ো ক্ষতির কারণ হয় কিনা।

নন্দা রাস্তায় নামতেই ললিতা আবারও হাতটা জড়িয়ে ধরল। কেমন আদুরে শাসনের ভঙ্গিতে বলল,
“এই, তুই কী একটু রাগ দেখিয়ে লোকটাকে উত্তর দিতে পারলি না? এসব লোককে দু এক কথা শুনিয়ে দিতে হয়। বুঝেছিস?”

নন্দা হাসল। ললিতা মেয়েটা তাকে বেশ গুরুতর একটা আপন সম্পর্কে বাঁধছে তাকে। যেটা তার বেশ পছন্দও হয়েছে।

নন্দাকে চুপ থাকতে দেখে ললিতা আবার বলল,
“এভাবে হাসছিস কেন? শহরের মানুষদের তো চিনিস না, এরা বড়ো স্বার্থপর। মেয়ে মানুষ ট্রামে বাসে চড়লেই এরা ভাবে মেয়েদের চরিত্র খারাপ। তাই এদের সাথে কড়া আচরণ করতে হয়।”

“আচ্ছা। পরবর্তীতে খেয়াল রাখব।”

কথা শেষ করতে করতেই তারা একটি শহুরে গলিতে প্রবেশ করল। কেমন অপরিচ্ছন্ন সরু গলি! জায়গায় জায়গায় ময়লার স্তূপ, সেখানে বসে ক্ষুধার্থ কাক বিরহী সুরে গাইছে আহ্লাদী দুঃখের গান। অলকানন্দার ভীষণ ভাবতে ইচ্ছে করল- আচ্ছা, ক্ষুধার্থ কণ্ঠে কখনো বিরহ আসে?

“ক্ষুধার চেয়ে বড়ো বিরহ নেই, নন্দু। কারো পেটের ক্ষুধা, কারো বা ভালোবাসার ক্ষুধা। সবারই যে নিজস্ব একটা ব্যাক্তিগত ক্ষুধা থাকেই। শুধু পার্থক্য এখানেই, আমরা পেটের ক্ষুধাকে স্বাভাবিক ভাবি। আর ভালোবাসার ক্ষুধাকে ভাবি নেহাৎ বাড়াবাড়ি কিংবা অতিরঞ্জিত।”

ললিতার মনোমুগ্ধকর বাক্যে নন্দা বিস্মিত। মেয়েটা মন পড়ার দারুণ ক্ষমতা নিয়ে বোধহয় জন্মেছে। নাহয় নন্দার মনের খবর জানলো কীভাবে? নন্দার বিস্মিত মুখমন্ডল দেখে হাসল ললিতা। শুধাল,
“মন পড়ে ফেলায় অবাক হলে?”

নন্দা উপর-নীচ মাথা নাড়াল। অস্ফুটস্বরে বলল,
“হ্যাঁ।”

“জানো নন্দা, আমি খুব দ্রুত মানুষের অঙ্গভঙ্গি দেখে তাদের ভেতরটা পড়ে ফেলতে পারি। মানুষের চোখ-মুখ কী ইঙ্গিত করছে তা বুঝে ফেলি। যার জন্য মানুষকে খুব দ্রুত অবাক করে দিতে পারি। মানুষ আমার এই ব্যাপারটাকে দারুণ ভাবলেও আমার কাছে তা বিরক্তকর। এই যে মানুষকে বুঝে ফেলার পর মানুষের প্রতি আমার আগ্রহ হারিয়ে যায়। যার জন্য আমি খুব দ্রুতই বন্ধু হারিয়ে ফেলি।”

“আমারও তো মন পড়ে ফেলল, আগ্রহ হারিয়ে ফেলছ?”

নন্দার প্রশ্নে বেশ উচ্চস্বরেই হাসল মেয়েটা। অতঃপর নন্দার গাল টেনে বলল,
“উহু, বরং আগ্রহ জমেছে তোমাকে জানার।”

ললিতার কথার বিপরীতে হাসল নন্দা। ততক্ষণে তারা প্রায় গলিটার শেষ মাথায় চলে এসেছে। একটি সাদা পর্দা দেওয়া, রঙ খসে যাওয়া পুরোনো দালানে প্রবেশ করল তারা। কেমন অদ্ভুতুরে এবং কৌতুহল জাগানো জায়গাটা। অলকানন্দা প্রশ্ন করার জন্য মুখ খুলতে প্রস্তুত হওয়ার সাথে সাথেই একটা পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো,
“আরে, ললিতা যে? আজ এত দ্রুত এসেছিস!”

একটা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি পরিহিত, চিকন ছিমছাম দেহটা, লম্বা সরু এক ছেলেই প্রশ্নটা করল। দেখতে আহামরি সুন্দর নয়, চাপা গায়ের রঙ। মেটে রঙের পাঞ্জাবিতে তাকে আরও রঙহীন লাগছে। বয়স ললিতার চেয়ে বেশিই হবে। হয়তো চব্বিশ কিংবা পঁচিশ। ললিতা এগিয়ে গেল, হাসিমুখে বলল,
“আজও এই পাঞ্জাবিটা পড়েছিস কেন? মানা করেছিলাম না পড়তে?”

“আবেগ বুঝিস না তুই। আর আমার বাপ তোর বাপের মতন বড়োলোকও না।”

“আরে বেটা, বাপ দিয়ে কী হবে? বাঁচতে হলো বন্ধুর মতন বন্ধু হলেই যথেষ্ট।”

কথাটা শেষ করেই ললিতা তার ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে এগিয়ে দিল ছেলেটার দিকে। মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,
“তোকে কালো রঙে ভালো মানায় কিন্তু, নে ধর। কালো পাঞ্জাবি তাই।”

ছেলেটা উৎফুল্ল মনেই পাঞ্জাবিটা নিল। আনন্দ চিত্তে বলল,
“আর তোকে ভালো মানায় উপহার হাতে। মাঝে মাঝে কাজটা করবি, বুঝলি?”

নন্দা তাদের এহেন বাচ্চামো দেখে হাসল। আর এতক্ষণে ছেলেটার দৃষ্টি তার দিকে পড়ল। নন্দাকে দেখেই সে কপাল কুঁচকালো। কৌতুহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“ললিতা, ও কে?”

ললিতা নন্দার দিকে তাকাল, নন্দার হাত ধরে কাছে টেনে পরিচয় করারোর ভঙ্গিতে বলল,
“ও অলকানন্দা। কলেজে এবার ফাস্ট ইয়ার। দারুণ মেয়ে।”

ছেলেটা কিঞ্চিৎ হাসল, হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমি শতাব্দ। ললিতার বন্ধু।”

নন্দাও অনভিজ্ঞ হাতটা এগিয়ে হাত মিলিয়ে ভদ্রতা পালন করল। শতাব্দ নামের ছেলেটা ললিতার দিকে তাকিয়ে কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
“তুই যে ওকে এখানে আনলি, দীপকদা যদি কিছু বলেন?”

“কী বলবে! সামলে নিব। ও ভরসাযোগ্য।”

তন্মধ্যেই ঘরে প্রবেশ করল মধ্যবয়স্ক একজন লোক। চুলদাড়ি লম্বা লম্বা। ঢোলা ফতুয়া পড়নে। সে প্রবেশ করেই নন্দাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। রাশভারী কণ্ঠে বলল,
“ললিতা, কাকে নিয়ে এসেছিস এখানে?”

ললিতা চমকালো সাথে গম্ভীর কণ্ঠে চমকায় নন্দাও। শতাব্দ এগিয়ে যায়। আমতা-আমতা করে বলে,
“দীপকদা, ও ললিতার বন্ধু।”

দীপক নামের লোকটা এবার নন্দাকে পা থেকে মাথা অব্দি গম্ভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল। ললিতার উদ্দেশ্যে বলল,
“যাকে-তাকে এখানে আনবি না।”

নন্দার কথাটা বেশ খারাপ লাগল। কথার ধরণ খুব আলগোছে যে তাকে অপমান করেছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না তার। সে শক্ত কণ্ঠে ললিতাকে বলল,
“আমি তো আসতে চাইনি ললিতা। শুধু শুধু আনলে। আমি বরং বাহিরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি, তুমি কাজ শেষ করে এসো।”

ললিতা হুড়মুড় করে এগিয়ে এলো, নন্দার এক বাহু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,
“দীপকদা, ও কিন্তু দারুণ মেয়ে। তুমি তো আমাকে চেনো, মানুষ চিনতে আমি মোটেও ভুল করিনা।”

দীপক নামের লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ভারিক্কি কণ্ঠে বললেন,
“এসেই যেহেতু পড়েছ এবার বসো। ললিতার সাথে আমার কিছু কখা আছে। শেষ হলে একসাথে যেও।”

কথাটা বলেই লোকটা ভেতরে চলে গেলেন। ললিতাও নন্দাকে দাঁড় করিয়ে রেখে ছুট লাগাল। কিন্তু নন্দার এই একাকীত্বে সঙ্গী হলো শতাব্দ। দারুণ আড্ডা দিতে পারে ছেলেটা। মুহূর্তেই মিশে যাওয়ার অসাধারণ গুনটি ছেলেটার মাঝে বিরাজমান।

_

অবশেষে গোটা একটি দিন ললিতার সাথে অতিবাহিত করে নন্দা এসে দাঁড়াল কলেজের সামনে। অবশ্য তার সাথে ললিতাও আছে। চারপাশে সূর্যের বিদায়ী সুর বাজছে। নন্দার মন আজ কিছুটা ঝরঝরে। শতাব্দ নামক ছেলেটা ভীষণ মজার। তার সাথে কথা বললে যে কেউ ফুরফুরে মেজাজে চলে যাবে।

নন্দার ভাবনার মাঝে নন্দার বাহুতে হাত রাখল ললিতা, ক্ষীণ স্বরে বলল,
“দীপকদা’কে খারাপ ভাবিস না, নন্দু। তিনি কিন্তু ভিষণ ভালো মানুষ।”

নন্দা মাথা নাড়াল। ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিল,
“খারাপ ভাববো কেন!”

“খারাপ ভাবার কারণ আছে দেখেই ভাববি। আর তোকে তো আমি বলেছিও, আমি কিন্তু মানুষের চোখ দেখে তার মনের কথা বলতে পারি। তাই কথা লুকাস না। আসলে দীপকদা সহজে মানুষকে বিশ্বাস করেন না। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। এই নশ্বর জীবনে মানুষকে বিশ্বাস করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর কঠিন কাজটা সাবধানেই করা উচিৎ। কিন্তু দীপকদা সত্যিই ভালো মানুষ। যখন পুরোপুরি মিশবি তখন বুঝবি।”

“আচ্ছা! তুমি আর কী কী বুঝতে পারো মানুষ দেখে?”

নন্দা প্রশ্ন করল ঠিকই কিন্তু তার উত্তর দেওয়ার আগেই কোথা থেকে যেন স্টিফেন ছুটে এলো। ঘর্মাক্ত মুখশ্রী, চিন্তায় টইটুম্বুর তার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। তার কণ্ঠ কাঁপছে। কম্পনরত কণ্ঠেই সে শুধাল,
“কোথায় গিয়াছিলে, সানশাইন! আমি কতটা ভয় পাইয়া গিয়া ছিলাম জানো! তোমাদের কলেজ পুরোটাই আমি খুঁজিয়া আসিলাম।”

নন্দা কাঠ কাঠ কণ্ঠে জবাব দিল, “আপনি এখানে কেন?”

“তোমাকে নিতে আসিয়াছি।”

“আমি কী একা যেতে পারি না?”

“একা তো সবাই ই যাইতে পারে। কিন্তু সঙ্গী পাইলে যাইতে দোষ কোথায়? পথ আর দীর্ঘ মনে হইবে না।”

স্টিফেনের ঠোঁটে মোহনীয় হাসি। ললিতা অপলক তাকিয়ে রইলো সে হাসির পানে। আনমনে নন্দাকে প্রশ্ন করল,
“তোমার স্বামী, তাই না?”

নন্দা মাথা নাড়াল। ললিতা বাঁকা হেসে বলল,
“জিজ্ঞেস করলে না আমি আর কী জানি? আমি এটাও জানি, তোমার স্বামী বোধহয় তোমাকে চোখে হারায়। তাই না?”

নন্দা উত্তর দিল না। স্টিফেনের তাড়ায় দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসে। ললিতা তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। গাঢ় চোখে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে।

_

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। স্টিফেন আর নন্দা বসে আছে পাশাপাশি। হুট করেই স্টিফেন নন্দার হাতটা ধরল। মিষ্টি কণ্ঠে বলল,
“তোমারে দেখিয়া যেকোনো মানুষ মিষ্টি স্বরে বলিবে, ভালোবাসি।”

অলকানন্দার চোখে তীব্র ক্রো ধ ভেসে উঠলো, সে প্রায় তাচ্ছিল্য করেই স্টিফেনের উদ্দেশ্যে বলল,
“আপনার ভালোবাসা আমার কাছে গলার কাঁটার মতন। না পারছি গিলতে আর না পারছি ফেলে দিতে। কেবল অসহ্যকর একটা অস্বস্তি নিয়ে বাঁচতে হচ্ছে।”

স্টিফেন তাচ্ছিল্যের বিপরীতে হাসল, প্রায় ফিসফিস করে বলল,
“একদিন ভালোবাসিতে বাসিতে দেখিবে, ভালোবাসার দাবী ছাড়িয়া দিবো, সানশাইন। সেদিন তোমার পৃথিবীতে সব থাকিলেও, অস্বস্তির জন্য তুমি হাহাকার করিবে।”

#চলবে

[গল্পটা কয়েক পর্ব যাবে নতুন চরিত্র বিশ্লেষণে। হয়তো বোর হবেন কয়েক পর্ব। কিন্তু শেষ অব্দি ধৈর্য ধরুন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here