অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ২৫

0
631

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

২৫.

আনন্দপিঠ মহাবিদ্যালয়ের ভেতর অলকানন্দার প্রথম যাত্রা। কিন্তু যাত্রা তেমন শুভ বোধহয় হয়নি। কলেজের ভেতর প্রবেশ করেই মুখ থুবড়ে পড়ল সে। গাছের শুকনো ডালায় লেগে ডান হাতের কনুইয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে গেল। মুহূর্তেই ঘটে গেল রক্তারক্তি কান্ড। আশেপাশের বিস্মিত দৃষ্টি গুলো মুহূর্তেই একটা অস্বস্তিতে ভরিয়ে দিল অলকানন্দার শরীরের কোণায় কোণায়। পায়ের ব্যাথায় মেয়েটা ওঠে দাঁড়ানোর শক্তি পেলনা। অলকানন্দা লজ্জায় যখন সংকুচিত হয়ে এলো, ভাবলো এই বোধহয় শহুরে ছেলেমেয়ে হো হো করে হেসে তার মজা উড়াবে। কিন্তু তার সবটুকু ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে একটি হাস্যোজ্জ্বল মেয়ে এগিয়ে এলো। কেমন জামাকাপড় গায়ে তার। মেয়েটা এগিয়ে এসেই হাত বাড়িয়ে দিলো অলকানন্দার দিকে, ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“এই মেয়ে, পড়ে গিয়েছ কীভাবে? উঠো তো দেখি। উঠো।”

অলকানন্দার লজ্জা মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেল। সে ব্যাথাযুক্ত হাতটা এগিয়ে দিল মেয়েটার দিকে, আমতা আমতা করে বলল,
“এখানে শুকনো ডাল, আমি আসলে দেখতে পাইনি।”

মেয়েটা অলকানন্দাকে হেচকা টেনে তুলল। চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
“পা-টা ঝারা দেও তো। নাহয় কিন্তু হাঁটতে পারবে না। জোরে জোরে ঝারো।”

অলকানন্দা মেয়েটার কথা অনুযায়ী কাজ করল। ব্যাথায় মৃদু শব্দও করল সে। কিন্তু ঝারা দেওয়ার ফলে ব্যাথাটা যেন লাঘব হলো। হালকা চিন চিন ব্যাথা করলেও তেমন অসহ্যকর ব্যাথা আর অনুভব হলোনা। অলকানন্দা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ।”

“নতুন নাকি?”

মেয়েটার প্রশ্নে অলকানন্দা উপর-নীচ মাথা দুলালো। ক্ষীণ স্বরে বলল,
“হ্যাঁ, নতুন।”

“আমিও তোমাদের বর্ষেরই কিন্তু ছাত্রী পুরোনো।”

মেয়েটার কথার আগামাথা না বুঝেই অলকানন্দা ভ্রু কুঁচকালো। সংশয় মাখা কণ্ঠে বলল, “মানে!”

“বুঝোনি তো? আসলে আমি গত তিন বছর যাবত একই ক্লাসে আছি। পরীক্ষা না দিলে যা হয় আরকি। সে হিসেবে তোমাদের বড়ো।”

অলকানন্দা ড্যাবড্যাব করে তাকাল, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বুঝতে পারার ভঙ্গিতে বলল, “ওহ্!”

“তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে!”

অলকানন্দা থতমত খেলো। অস্ফুটস্বরে বলল, “হ্যাঁ।”

“তোমার নাম কী?”

“অলকানন্দা। আপনার?”

“ললিতা।”

অলকানন্দা এবার ললিতা নামক মেয়েটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করল। মেয়েটা অত্যন্ত রকমের সুন্দর না। শ্যামলা গড়ন। কেমন ঢোলা মতন একটি জামা পড়নে। ছেলে ছেলে হাবভাব মেয়েটার মাঝে। ললিতা তাড়া দিল,
“চলো, যাবে না ক্লাসরুমে? তাড়াতাড়ি চলো।”

_

অপরিচিত জায়গায়, অপরিচিত টেবিলটাতে বসে আছে নন্দা। তার সাথেই বসা ললিতা নামক মেয়েটা। তাদের বেঞ্চে আর কেউ বসেনি। ললিতা ক্লাসের ছেলেদের সাথেও বেশ আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে যা অন্য কোনো মেয়ে করছে না। বরং তারা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে আর কেমন চোখে যেন অলকানন্দার দিকেও তাকাচ্ছে। অলকানন্দার ভীষণ রকমের অস্বস্তি হলো, প্রায় ফিসফিস করে ললিতাকে ডাকল,
“একটু শুনেন…..”

ললিতা তখন বিপরীত দিকে ছেলেদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। অলকানন্দার ডাক শুনে পিছে তাকাল। মাথা নাড়িয়ে বলল,
“এই মেয়ে, আপনি আপনি করে বলছো কেন? তুমি করেই বলো না।”

অলকানন্দা ঘাড় কাত করল, ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,“আচ্ছা, বাকি মেয়েরা কারো সাথে মিশছে না কেন? ওরা আমাদের এক টেবিল পরে গিয়ে বসেছে কেন? এখানে কী এমন নিয়ম?”

অলকানন্দার কথায় যেন বেশ মজা পেল ললিতা। তাই তো উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে পেছনের মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে বসে পা দুলাতে দুলাতে বলল,
“এখানের নিয়ম হলো, মানুষ সুখী মানুষদের পছন্দ করেনা। এই যে দেখো, আমি কথায় কথায় হাসছি, আনন্দ করছি, এটা ওদের পছন্দ নয়। ওরা সুখী মানুষ দেখলেই মুখ চোখ বিকৃত করে ফেলে। এখন সুখী মানুষের সাথে তুমি বসেছো মানে তুমিও তো সুখী মানুষ, তাই কেমন আড়চোখে তোমাকে দেখছে। ঐ আরকি, আমার সাথে বসলে তারা সবাইকেই অমন চোখে দেখে।”

নন্দা অবুঝ নয়ন যুগল মেলে তাকিয়ে রইলো। শহুরে মেয়েরা কী তবে কারো সুখ পছন্দ করেনা? এ আবার কেমন কথা! ললিতা অলকানন্দা সংশয় ভরা মুখমন্ডল দেখে হাসলো। অলকানন্দার গাল টিপে বলল,
“তুমি ভীষণ মিষ্টি তো!”

অলকানন্দা লাজুক হাসল। কোমল স্বরে উত্তর দিল, “ধন্যবাদ।”

তন্মধ্যেই তাদের কক্ষে প্রবেশ করলেন একজন শিক্ষক, যাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল সকলে। এবং সমস্বরে চেঁচিয়ে বলল,
“শুভ সকাল, স্যার।”

অলকানন্দাও তাদের সাথে সাথে একই বাক্য উচ্চারণ করল। তার বড়ো মনে পরলো গ্রামের সেই পাঠশালা, বিদ্যালয়ের কথা। ‘স্যার’ কথাটার মাঝে সে আন্তরিকতার আভাস পেল না। কেমন কর্কশ! ইংরেজী তার কাছে সর্বদাই আবেগ বিহীন শব্দ। যা উচ্চারণ করার সময় শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই প্রভাব পড়ে না। বরং কেমন তেঁতো শোনায়! অথচ বাংলা ভাষার কী মাধুর্যতা! ‘মাস্টারমশাই’ বলে ডাক দেওয়ার সময়ই বুকটা সম্মানে ভরে যায়।

উপস্থিত শিক্ষক সকলের শুভেচ্ছার উত্তর দিয়ে বসার আদেশ করলেন। অলকানন্দা কলেজে সবার শেষে ভর্তি হয়েছে বিধায় সে এখানের নতুন মুখ। সেই জন্যই শিক্ষকের দৃষ্টি প্রথমে তার দিকেই পড়ল। লোকটা চোখ মুখ কুঁচকে পেন্টের বেল্ট একটু উপরে উঠাতে উঠাতে নন্দার উদ্দেশ্যে বললেন,
“অ্যাই, তুমি কী নতুন?”

নন্দা তৎক্ষণাৎ ওঠে দাঁড়াল। মাথা উপর-নীচ নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, মাস্টারমশাই।”

নন্দা কথাটা বলতেই পুরো কক্ষে যেন হাসির স্রোত বয়ে গেল। হাসল না কেবল ললিতা। শিক্ষকও যেন পছন্দ না করল না এই ডাক। মুখ চোখ কেমন অন্ধকার করে বললেন,
“অনলি স্যার ডাকবে, নো মাস্টারমশাই ফাস্টারমশাই।”

অলকানন্দা কিছুটা লজ্জাই অনুভব করল এসবে। সে কোনোমতে দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে মাথা নাড়াল। শিক্ষক তাকে বসতে বলেই বক্তব্য শুরু করলেন। নন্দা যতটুকু বুঝল, ভদ্রলোকের নাম নরেণ ঘোষ। ইংরেজির শিক্ষক সে। কথাবার্তায় কেমন যেন বোকা বোকা হাবভাব থাকলেও পড়াশোনা দুর্দান্ত বুঝান। অলকানন্দার হুট করে মুমিনুল ইসলামের কথা মনে পড়ল। মানুষটা সেদিন তাকে বাঁচাতে গিয়ে তো প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল, এখন কেমন আছেন সে? ভালো আছেন তো! নন্দা তো একটিবারও খোঁজ নিল না মানুষটার। কী পাষাণ সে! তার ভীষণ কান্না পেল কিন্তু নতুন জায়গায় বোকার মতন কান্না করলে সে হাসির পাত্রী হয়ে যাবে। সেই কথা ভেবেই আর কাঁদল না। প্রায় বেশ খানিকটা সময় নিয়ে নরেণ ঘোষ নামক মানুষটা পড়া বুঝাচ্ছেন। কিন্তু এখানে কেউ যে তেমন মনযোগ দিয়ে পড়া বুঝছে, তা মনে হচ্ছে না। যে যার মতন কথা বলছে ছোটো ছোটো শব্দে। মেয়েরা একজন আরেকজনের শাড়ি, চুল নিয়ে কথা বলছে। ছেলেরা কেউ কেউ একজন আরেকজনের সাথে নীরব মারামারিতে অংশগ্রহণ করেছে আর কেউবা কিছু নিয়ে করছে ঘোর আলোচনা। ললিতাও পা দুলাচ্ছে আর হালকা আওয়াজে শিষ বাজাচ্ছে। তন্মধ্যেই শ্রেণীকক্ষের বাহিরে একটি চিকন করে ছেলে এলো। ছিমছাম দেহটা তার। এসে নরেণ ঘোষকে পাত্তা না দিয়েই গলা ছেড়ে হাঁক ছেড়ে ডাকল,
“ও ললিতা দি, সুদীপদা ডাকছে তোমায়। একটু এসো তো।”

ললিতাও তড়িৎ গতিতে ওঠে দাঁড়াল। ব্যস্ত কণ্ঠে শিক্ষককে বলল,
“স্যার, আসি।‘

শিক্ষকের আর কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি। তার আগেই ললিতা ধুপধাপ পায়ে বেরিয়ে গেল। নন্দা সবটাই বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখল। এখানে ওরা পড়াশোনা সংবলিত বিষয় নিয়ে এত উদাস কেন! ললিতা নামের মেয়েটা এত ভালো হওয়া সত্বেও শিক্ষককে সম্মান করেনা। এ আবার কেমন জীবন!

অলকানন্দার ভাবনার মাঝে নরেণ ঘোষ নাক-মুখ কুঁচকে বলে উঠল,
“ইডিয়েট গার্ল।”

_

ক্লাস শেষ হতেই সকলে দল বেঁধে অলকানন্দার নিকট এলো। ও মাত্রই তৈরী হয়েছে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ললিতা নামের মেয়েটা আর এলো না। কেমন অদ্ভুত চালচলন মেয়েটার! সকলকে নিজের কাছে আসতে দেখে অলকানন্দা ভ্রু কুঁচকালো। তাকিয়ে রইল প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে।

এমন সময় সব মেয়ে গুলোর মাঝে থেকে একটি মেয়ে কথা বলল,
“নাম কী তোমার?”

“অলকানন্দা। তোমার?”

“সরস্বতী। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে?”

মেয়েটার প্রশ্নে অলকানন্দা কিছুক্ষণ মৌন থেকে ধীরে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”

“তাহলে তুমি ললিতার সাথে মিশছো কেন? ও কী ভালো মেয়ে?”

সরস্বতীর ফিসফিস কথায় অলকানন্দা ভ্রু কুঁচকালো। সরস্বতীর পাশের মেয়েটাও তাল মিলিয়ে বলল,
“ওর সাথে মিশবে না, খারাপ হয়ে যাবে পরে। ও মেয়ে মোটেও ভালো না।”

অলকানন্দা মহা সংশয়ে পড়ল। ললিতাকে তার মোটেও খারাপ মনে হয়নি। তবে মেয়ে গুলো এমন বলছে কেন? নিজের কৌতূহল দমন করতে না পেরে সে নিজেই প্রশ্ন করল,
“ললিতা খারাপ কই? খারাপ কিছু তো দেখিনি।”

অলকানন্দার এমন প্রশ্ন যে মেয়েগুলো পছন্দ করেনি তা তাদের চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সরস্বতী তো চোখ-মুখ কালো করে প্রায় বিরক্ত কণ্ঠে বলেই ফেলল,
“তুমি কী ভাই! দেখছো না ও কেমন সব ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে। ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে, এদের চরিত্র কী ভালো হবে বলো? তাও আবার এ ক্লাসে তিনবছর। করে রাজনীতি। পোশাক দেখেছো? আবার থিয়েটারও করে। এসব কী ভালো মেয়েদের লক্ষণ?”

অলকানন্দা হাসলো, প্রায় খোঁচা মারা কণ্ঠে বলল,
“কারো বদনাম করাও কী ভালো মেয়েদের লক্ষণ নাকি?”

মেয়ে গুলো এমন অপ্রতুল কথায় চুপসে গেলো। মুখ ভেংচি দিয়ে যে যার মতন চলে গেলো। অলকানন্দার বুঝতে বাকি রইল না যে তাকেও খারাপ মেয়ের দলে ফেলে দেওয়া হয়েছে আজ থেকে। অলকানন্দা হাসল। ধীর পায়ে শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো নন্দা। ললিতাকে চারপাশে খুঁজেও আর পেল না। ধীর পায়ে হেঁটে সে কলেজের বাহিরে আসতেই পরিচিত মুখ দৃষ্টিগোচর হলো। বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল, “নবনীল!”

নবনীল ততক্ষণে নন্দার দিকে এগিয়ে এসেছে, নীল রাঙা এক পাঞ্জাবি পরিহিত। চোখেমুখে নির্লিপ্ততা। কাছে এসেই প্রশ্ন করল,
“ভালো আছেন?”

“আছি।”

নবনীল আশেপাশে তাকাল। গাঢ় কণ্ঠে বলল,
“শুনলাম আপনার স্বামী নাকি এখানে ভর্তি করিয়েছে আপনাকে, তাই দেখতে এলাম। আপনার ভালো থাকার মহিমা। বেশ ভালোই তো আছেন দেখছি।”

“আপনি চাননি ভালো থাকি?”

নবনীল থতমত খেলো। অবাক কণ্ঠে বলল,
“চাইবো না কেন?”

“তবে এভাবে জিজ্ঞেস করলেন যে?”

নবনীল চুপ করে রইল। যেন নন্দা তার সাথে এভাবে কথা বলবে কখনো সে ভাবেইনি। তন্মধ্যেই কোথা থেকে যেন ললিতা চলে এলো। হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী মেয়েটার। নন্দার পাশে এসে ঝলমলে কণ্ঠে বলল,
“আরে নন্দু, যাওনি?”

“এইতো, যাবো এখন।”

“ইনি কে?” নবনীলকে দেখিয়ে প্রশ্ন করল সে। নন্দা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল,
“পরিচিত।”

নবনীল যেন থমকে গেল। সে এমন কেউ যার পরিচয়ও অলকানন্দা নামক মেয়েটা দিতে পারেনা! যার কোনে মূল্য আদৌও নেই মেয়েটার কাছে! বাহ্! এই ব্যাথা যেন নবনীলের জন্য ভারী হলো, সে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“কেবল পরিচিত একজন মানুষকে এতটা সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আসছি।”

ছেলেটা আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। কথাটা বলেই গটগট পায়ে চলে গেল। অলকানন্দা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বুকের কোণায় ব্যাথাদের নীরব উঁকিঝুঁকি দেখা দিল। কিন্তু কী আর করার? নারীর কাছে স্বামী ও সংসার ধর্মের চেয়ে যেন বড়ো কিছু নেই।

অলকানন্দার ভাবনার মাঝেই ললিতা প্রশ্ন করল,
“ছেলেটা কী রাগ করল?”

“না বোধহয়। আপনি কোথায় ছিলেন?”

ললিতা হাসল। নন্দার গাল টেনে বলল,
“আবারও আপনি বলছো কেন? আমি তোমার সই হই। কেমন সই জানো? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ পড়েছিলে? আমি তোমার তেমন সই, যাকে হয়তো কোনো একদিন তোমার চোখের বালি মনে হবে।”

কথাটা মেষ হতেই কেমন অদ্ভুত হাসল ললিতা। নন্দার মস্তিষ্ক ছুঁতে পারেনা বোধহয় সাবধানে বাণী।

_

সন্ধ্যা নববধূ বেশে লাজুক হয়ে যেন বসে আছে গগণ বক্ষে। টুকরো টুকরো মেঘেরা দলবদ্ধ হয়ে জমে আছে এখানে ওখানে। নন্দার গাড়ি সবেই প্রবেশ করেছে বিরাট দরজার কোল ঘেঁষে। তন্মধ্যেই সে আধো আলো অন্ধকারে একটি মেয়ে অবয়ব বেরিয়ে যেতে দেখল বাড়ি ছেড়ে। অলকানন্দা ভ্রু কুঁচকালো। এ বাড়িতে বাহিরের মেয়ে তো প্রবেশ করার কথা না। তবে!

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই তার কানে হরেক রকমের শব্দ ভেসে এলো। কেমন গান বাজনার সুর ভেসে আসছে। অলকানন্দা বাড়িতে ঢুকতেই দেখলে রান্নাঘরে সকল কর্মচারী ব্যস্ত নিজেদের মতন। আর গানের সুর স্পষ্ট হলো। ঘুঙ্গুরের শব্দও স্পষ্ট ভাবে ভেসে এলো। এ বাড়িতে কেউ নাচছে গাইছে! কে তারা!

নন্দা কর্মচারীকে ডাকল, শুধাল,
“কে নাচছে?”

“আজকে বাইজি এসেছে, সাহেব বধু। সাহেবরা সকলে সেখানে।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here