অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব ২২

0
652

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

২২.

হেমন্তের আকাশে কতগুলো অনির্দিষ্ট মেঘ ভেসে যায়। যাদের কোনো নিজস্ব ঠিকানা থাকেনা, নিজস্ব ঘর থাকেনা। নেই তাদের পিছুটান। একমাত্র মানবজাতি সামনে এগুতে পারেনা পিছুটানের জন্য কিন্তু মেঘেদের তেমন ভয় নেই। তারা নিজ আনন্দে যেখানে ইচ্ছে ছুটে বেড়াতে পারে। মাটির সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বিধায় হয়তো এই কাজটা তারা ভালো করতে পারে। কারণ যারই মাটির সাথে সম্পর্ক তৈরী হয়, তাদের শিকড়ই বহুদূর চলে যায়। তাই চাইলেও তারা আর পিছুটান ফেলে চলে যেতে পারে না। সংসারের নিয়মই যে বড়ো অদ্ভুত, তুমি চাইলেও নিয়ম অমান্য করে, মায়া কাটিয়ে বাঁধনহারা হতে পারবে না। এই সংসার তার বাঁধন ছাড়ে না, ছাড়তে চায় না।

অলকানন্দার পড়নে কলাপাতা রঙের একটি ঢাকাই মসলিন শাড়ি। মোটা গহনা তার অঙ্গ জুড়ে সৌন্দর্য বর্ধন করছে। মোটা সিঁদুরে তাকে কিশোরী লাগছে না মোটেও। সতেরোর আভাস তার শরীর জুড়ে। হুট করে যেন কিশোরী মেয়েটা বড়ো হচ্ছে খুব গোপনে। ভিনদেশী পুরুষের ছায়ায় কিশোরী যেন হয়ে উঠেছে স্বামী সোহাগি এক অপরূপা। তাহার রূপের অন্ত নেই। অলকানন্দা তৈরী হয়ে বসে আছে নিজের ঘরে। স্টিফেন তাকে কোথাও একটা নিয়ে যাবে বলেছে আর তাই সে তৈরী হয়েছে। যেতে চায়নি সে কিন্তু তার শাশুড়ির জোড়াজুড়িতে রাজি হয়েছে। দু’জন কর্মচারী মেয়েই তাকে সাজিয়ে দিয়েছে। অলকানন্দার প্রচন্ড রকমের বিরক্ত লাগছে। এ বাড়িতে কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সকলে চুপচাপ নিজের মতন থাকেন। তার শাশুড়ি বিভাবরী দেবী খুবই স্বল্পভাষী মানুষ। মিশুক স্বভাবের হলেও তিনি কথা বলেন কম। আর বাকি যারা আছে বাড়িতে তারা হলো কর্মচারী। খুব অদ্ভুত ভাবে কর্মচারীর কেউ অলকানন্দাকে সোজা চোখে দেখে না। কেমন যেন বাঁকা ভীতু ভীতু চোখে তাকায়। হয়তো সেদিনের মেয়েটাকে শাসন করার কথাটা এরা সবাই জেনেছে তাই এমন অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে তাকে দেখে। নিজেকে বড়ো আবেগহীন লাগে আজকাল। কেমন যেন বাঁধাধরা নিয়ম। পানসে বিকেলের মতন বিরস, মধ্য রাতের মতন নিশ্চুপ এই জীবন। অথচ সপ্তদশী একটি কন্যার জীবন হওয়ার কথা ছিল স্রোতস্বিনী নদীর মতন প্রবল উচ্ছ্বাস মাখা, হৈচৈ পূর্ণ, চঞ্চল। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে। কিছু খুঁজে না পেয়ে অলকানন্দা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আশেপাশে কাউকে না পেয়ে সদর দরজা পেরিয়ে পা রাখে সে সান দিয়ে বাঁধাই করা বাড়ির পেছনের দিকে বিশাল বাগানটায়। বিকেলের পরিবেশে ঘুঘু তখন সুর তুলেছে তারা বর্ণ বিহীন কণ্ঠে। চারদিকে কিচিরমিচির শব্দ। পাখিরা উড়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। আজ বাতাস নেই চারপাশে। কেমন যেন শুনশান সবটা! অলকানন্দা চারপাশে তাকায়। গোল বাগানটার একদিকে সরু রাস্তা গিয়েছে তাও বিভিন্ন বনালি ঔষুধী গাছে ভরা। অলকানন্দার মন সদা কৌতূহলী। কৌতূহল নিয়ে সে রাস্তাটার দিকে পা রাখে। কিন্তু এগিয়ে আর যেতে পারে না। তার আগেই ভেসে আসে পরিচিত পুরুষের রাশভারী কণ্ঠ,
“বিউটিফুল লেডি! কোথায় যাইতেছেন?”

নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে পিছুডাকটা ভয়াবহ শোনালো। মনে হলো চুরি করতে এসে খুব বাজেভাবে ধরা পড়ে গিয়েছে। অলকানন্দা আকস্মিক ডাকে কেঁপেও উঠল কিঞ্চিৎ। অতঃপর অ্যালেনের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি কণ্ঠে বলল,
“ভালো লাগছিল না বলে হাঁটতে এসেছিলাম।”

”আপনাকে স্টিফেন ডাকিতেছে। আসুন আমার সাথে। লেটস্ গো।”

অলকানন্দা অস্বস্তি নিয়ে ফিকে হাসি দিল। আমতাআমতা করে বলল,
“চলুন।”

অ্যালেন সামনে এগিয়ে গেল। খুব অদ্ভুত ভাবে নন্দা খেয়াল করল, অ্যালেন তার দিকে তাকাচ্ছে না। যতবার কথা বলছে মাটিতে দৃষ্টি রেখেই বলছে। যেন সে তাকিয়ে ফেললে গুরুতর কোনো পাপ হয়ে যাবে তার! অথচ অলকানন্দারা ছোটোবেলা থেকে জেনে এসেছে ভিনদেশী পুরুষ মানুষ খারাপ হয়। তাদের চরিত্রে সমস্যা হয়। অথচ অ্যালেনকে দেখলে কথাটা মোটেও সত্য বলে মনে হয়না। অ্যালেন তার চেয়ে বয়সে অনেক বেশি বড়ো হওয়া স্বত্তেও সবসময় একটা শ্রদ্ধা ভাব লোকটার ভেতরে।

অলকানন্দা বাড়ির বাহিরে দাঁড় করা একটি গাড়ির সামনে এলো। সাহেবদের কালো রঙের ছোটোখাটো সাহেবী গাড়ি। স্টিফেন দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে। অলকানন্দাকে দেখেই সে গাড়ির একপাশের দরজা খুলল, ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“তাড়াতাড়ি আসো, দেরি হচ্ছে।”

অলকানন্দা উঠে বসল। চার-পা সংযুক্ত যানবাহনে সে জীবনের প্রথম উঠল। কী অদ্ভুত অনুভূতি হলো বুকের মধ্যিখানে। সে যেমন পরিবারের মেয়ে, তেমন পরিবারে থেকে গাড়িতে ওঠার কথা কখনো সে ভাবেনি অথচ আজ এই অকল্পনীয় জিনিসটাই সত্যি হলো। সে তার নিজের স্বামীর গাড়িতে উঠেছে। স্বামী! শব্দটা বড়ো নিষ্ঠুর ঠেকলো অলকানন্দার কানে। স্বামী নামক মানুষ গুলো বড়ো ভয়াবহ তার কাছে। গাড়ি ছুটে চলেছে আপন বেগে। স্টিফেনের হাতে একটি সংবাদপত্র, যেখানে তার সম্পূর্ণ ধ্যান দেওয়া। গাড়ি ছুটতে ছুটতে এক গ্রাম পেরিয়ে আরেক গ্রামে প্রবেশ করল। অলকানন্দার পরিচিত গ্রাম, প্রাণের ভিটেমাটি। যেখানে সে ষোলোটি বছর নানান স্মৃতি বুকে জড়িয়ে বড়ো হয়েছে। এককালীন প্রশান্তির জায়গা। আজ প্রশান্তি লাগছে না অবশ্য। গায়ে কাঁটার মতন বিঁধছে এ গ্রামের নির্মল হাওয়া। শরীর-মন অজানা আতঙ্কে শিরশির করে উঠছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে কিছুদিন আগের সেই কালো রাতের কথা। যে রাত পৃথিবীর বুকের ফুটন্ত এক অলকানন্দা ফুলকে পায়ে পিষিয়ে থেতলে ফেলেছে। যা রাত ভীষণ বাজে ভাবে কলঙ্ক লেপেছে অভাগিনীর কপালে। এ গ্রাম বড়ো পাষাণ, এ গ্রাম অলকানন্দার চির অপরিচিত। এই গ্রাম অলকানন্দাকে মনে রাখেনি, ভালোবাসেনি।

খুব গোপনে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল অলকানন্দার ডান চোখ বেয়ে। হৃদপিন্ডের গতি যেন ক্রমাগত বাড়ছে। তার পাশের মানুষটাও বোধহয় শুনতে পারে হৃদপিন্ডের এই অস্বাভাবিক কম্পন। অলকানন্দা চোখ বন্ধ করতেই অনুভব করল তার ডান হাতে শক্ত হাতের ছোঁয়া। বিপরীত হাতটা কিছুটা উষ্ণ। দ্রুত গতিতে সে চোখ মেলে তাকাতেই স্টিফেনের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। লোকটার চোখে-মুখে প্রগাঢ় গাম্ভীর্যতা, কণ্ঠও সেই গাম্ভীর্যতার ছাঁপ,
“ভয় পাচ্ছো? ভুলে যেও না, তোমার আমি আছি।”

অলকানন্দা থমকে যায়। অনেক অনেক দিন যাবত কত গুলো কষ্ট বয়ে বেড়ানো জীবনটা হয়তো ভরসার হাত খুঁজেছিল, যে হাত হয়ে এসেছিল নবনীল। আজ স্টিফেনের কথায় সে স্টিফেনকে না, খুব করে যেন নবনীলকে অনুভব করল। বুকের মাঝে তীক্ষ্ণ ব্যাথারা উঁকিঝুঁকি দিল। ইশ, এটাই কী তবে ভালোবাসা? যার অভাবে বুকের মাঝে বৈশাখের সর্বনাশা ঝড়ের মতন তান্ডব বয়ে চলে? এটাই কী ভালোবাসা? যাকে কখনো ছুঁতে না পেরেও অনুভবে রেখে দেওয়া যায় প্রতি মুহূর্তে?

অলকানন্দার দৃষ্টি স্থির। স্টিফেন ছেড়ে দিল মেয়েটার হাতটা। তাচ্ছিল্য করে বলল,
“আমার মাঝে অন্য কাউকে খুঁজো না, সানশাইন, আমার যে কষ্ট হয়।”

অলকানন্দা চমকে উঠল। লোকটা মনের কথা পড়ে ফেলতে পারে। যে কথা লুকানোর জন্য অলকানন্দার এত আয়োজন, সে-ই কথা মানুষটা পড়ে ফেলে। অলকানন্দার ভয় হয়। তাকে সবটা কেউ পড়ে ফেলছে এটা মোটেও সুখকর নয়। বরং সবটা পড়ে ফেলার পর সে ফেলনা যাবে এটাই ভাববার বিষয়। আচ্ছা, স্টিফেনের কাছ থেকে ফেলনা যাওয়ার পর নবনীল কী তাকে প্রচুর মূল্যবান ভেবে আদৌও তুলে নিবে? আগলে রাখবে নিবিড় ছায়ায়? আঁতকে ওঠে অলকানন্দা। এমা, ছিহ্! ছিহ্! সে কিনা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে তৃতীয় একজন পুরুষের কথা ভাবছে! তার চরিত্রে সে এমন অপবিত্রতা কীভাবে লাগাচ্ছে! এই কলঙ্ক তো চির জীবনের দাগ হয়ে থেকে যাবে।

গাড়ি তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে থামে। অলকানন্দা গাড়ি থেকে বেরুতে চায় না। তার ঠিক ভরসা হয়না এই গ্রামের মাটিতে পা রাখতে। মনেহয়, এই বুঝি গ্রামের মানুষ গুলো হৃদয়হীন দৈত্য হয়ে ওঠবে, ছিনিয়ে নিবে অলকানন্দার প্রাণের প্রদীপ। এই বুঝি তারা মিশিয়ে দিবে তাকে এই মাটিতে। ভয় হয় মেয়েটার, বাঁচার ইচ্ছে নিয়ে মারা যাওয়া কষ্টের আর সে এই কষ্ট কখনো চায়না। স্টিফেন ভরসা দিয়ে বলে,
“নামো, আমি থাকতে একটা পিপড়াও তোমার কাছে আসতে পারবে না। আর ভয় না, যাই হোক, নিজেকে রাণীর মতন প্রদর্শন করো যেন মানুষ মাথা নত করতে বাধ্য হয়। ভীতুদের কোনো মহত্ত্ব নেই কিন্তু যারা সাহসী, তারাই দৃষ্টান্ত তৈরী করতে পারে। আসো, সবসময় মনে রাখবে তুমি রাণী, তোমার ক্ষমতা তোমার স্বামী। কেউ তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না। স্টিফেনকে পেরিয়ে নন্দার কাছে যাওয়াটা অসম্ভব রকমের কাজ।”

এই একটু ভরসার আশায় অলকানন্দা ক্ষুধার্থ চোখে তাকিয়ে ছিল আশা বিহীন। তার আশা শূন্য নদীতে আশার এমন বাঁধ ভাঙা বি স্ফো র ণ দেখে সে স্তব্ধ। এতটা আশ্রয়স্থল হয়ে তার জীবনে কেউ কখনো আসেনি। সে কেবল অনির্দিষ্ট স্রোতে ভেসে গিয়েছে। কখনো স্রোতের তোপে একূলে থেমেছে কখনো বা অকূলে, তাকে কেউ নিজ ইচ্ছায় রেখে দেয়নি। এমনকি নবনীলও না। নবনীল সবসময় এগিয়ে যেতে বলেছে, কিন্তু কখনো পাশে থাকবে বলেনি। অথচ এই হিংস্র মানুষটা কেমন ভরসা দিচ্ছে। ভরসাহীন মেয়েটার এমন ভরসা হয়ে এলে সে তো দিক শূন্য হয়। ভালো খারাপের প্রতিযোগীতায় সে কেবল বেঁচে থাকতে চায়।

অলকানন্দা গাড়ি থেকে নামতেই চক্ষু চড়কগাছ। তারা দাঁড়িয়ে আছে বিহারিণী মহলের সামনে। পা দু’খানা কাঁপছে তার। এই মহলে তো তার আর ফেরার কথা ছিল না তবে ভাগ্য দেবতা তার প্রতি এ রুষ্ট হলেন কেন? তার না চাওয়া কাজটাই কেন তাকে করতে হলো?

স্টিফেন অলকানন্দার হাত ধরে দাঁড়াল। বিহারিণী মহলের সামনে প্রচুর ভীড়। পুরো ভীড়টা জুড়ে কেমন মানুষ হারানোর শোক। চারপাশে আগরবাতির তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ ভেসে আসছে। বাড়িতে আবার নতুন করে কেউ মারা গেল? কিন্তু কে! বুক কাঁপছে মেয়েটার। এ বাড়ির প্রতিটি মানুষকেই সে আপন ভেবেছিল, তাই কারো প্রস্থান সে মেনে নিতে পারবে না। তার পা কাঁপছে, ঠিক মতন মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি অব্দি নেই মেয়েটার। গ্রামবাসীর দৃষ্টি এখন অলকানন্দার দিকে। বিস্মিত, স্তব্ধ চোখে তারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। অলকানন্দার সেদিকে হুঁশ নেই, সে ভীত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাড়িটার দিকে। বাড়িটার সামনের জায়গায় সাদা কাপাড়ে জড়ানো একজন মানুষ চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন। কে সে? কার এমন চির বিদায় ঘটলো? কার জীবন গেল স্থায়ী অবসানে!

ভীড়ের মাঝে উঁকিঝুঁকি দিয়েই মেয়েটা আৎকে উঠলো। লক্ষ্মীদেবীর কোমল মুখটা চিরতরে ঘুমিয়ে গিয়েছে। আজ মানুষটার ভেতর কোনো কোঠরতা নেই, কোনো তেজ, রাগ কিছু নেই। নন্দাকে দেখে আজ কেউ হৈহৈ করছে না। কেউ আর তীক্ষ্ণ কথার বাণও ছুঁড়ে মারছে না। অলকানন্দার চোখ ঝাপসা হলো। মনে পড়লো বিয়ের দিনের কথা। যেদিন সে এ বাড়িতে পা রাখল? এই লক্ষ্মীদেবী খুশিতে আটখানা হয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছিলেন। তারপর যেন কী হলো! মানুষটা আর হাসেনি কখনো। দিন-রাত কেবল খোঁটা দিতে শুরু করল! আজ হঠাৎ মানুষটার বিদায়ে সব খারাপ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। অলকানন্দা চোখ বন্ধ করল। সে কাল ভ্রম নাকি কল্পনা থেকে লক্ষ্মীদেবীকে নিজের বাড়ির সামনে দেখেছিল। এক মুহূর্তের জন্য বোধহয়। এটা কী সত্যি ছিল না কেবলই ভ্রম! অলকানন্দার শরী্র ভার হয়ে এলো। কী যেন একটা ভেবে স্টিফেনের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল মানুষটার চোখ হাসছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here