অভিমান #পর্বঃ১২

0
824

#অভিমান
#পর্বঃ১২
…………….

ঘুম থেকে উঠে আমার চোঁখ ছানাবড়া হয়ে গেল
আমি এক ভয়ংকর চিৎকার করে দড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম,
আমার চিৎকার শুনে কাব্য ভাইয়া দৌড়ে এলেন উনার চোঁখে মুখে ঘুমের আভাস ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠলেন কি হয়েছে,
শান্তি মতো ঘুমাতে ও দিবে না না কি ,এমনিতেই সারা রাত ঘুমাই নি,তুমি কি চিৎকার করা ছাড়া আর কিছুই জানো না,
উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে, আমি বিস্মিত হয়ে চোঁখ গোল গোল করে তাকিয়ে বললাম,
রাতে আমার স্পস্ট মনে আছে আমি বিছানাতে ঘুমিয়েছি,তাহলে আমি বেলকুনির সোফায় এলাম কি করে,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া হামি তুলতে তুলতে নির্নিপ্ত ভাবে বলে উঠলেন,
আমি তোমাকে এখানে রেখে গেছি ,
উনার কথা শুনে আমি বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলাম,অবাক হয়ে বলে উঠলাম,
তুমি আমাকে এখানে রেখে গেছো ,কিন্তু কেন??
উনি দ্বিধাহীন ভাবে বলে উঠলেন,
তুমি আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না কিন্তু আমি তো তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মানি একি বিছানায় থাকলে বলা তো যায় না কখন কি করে বসি ,আমি তো আর মহা পুরুষ নই রক্তে মাংসে গড়া সাধারন একজন মানুষ,
যদি নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পারি ,তাই তোমাকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে গেলাম,
উনার কথাগুলো শুনে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম কপাল কুচকে কিছুক্ষন উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম,
কি লুইচ্চা ব্যাটা নিজে কন্ট্রোল থাকতে পারবে না তারজন্য আমাকে বাইরে রেখে গেছে ,এখন থেকে যদি কোনো ভুত টুত আমাকে নিয়ে যেত তাহলে কি হতো,এতই যখন কন্ট্রোলের অভাব নিজেই এখানে ঘুমালে পারতো,
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভাইয়া আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলে উঠলেন,
আমাকে কি খুব বেশি সুন্দর লাগছে সুহা রানী এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে না কি ,এবার কিন্তু আমার খুব লজ্জা লাগছে বলেই উনি লজ্জা পাওয়ার ভান ধরলেন,
উনার কথাগুলো শুনে আমার ভীষন রাগ লাগল
আমি চোঁখ পাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম
তুমি কোন সাহসে আমায় এখানে রেখে গেলে ,তোমার যখন প্রবলেম তুমি এখানে ঘুমালে না কেন,তা না করে নিজে আরাম করে বিছানায় ঘুমিয়েছো সেলফিস কোথাকার।
যদি আমায় কোন ভুত বা অন্যকিছু এসে নিয়ে যেত ,তুমি কি জানো ছোট বেলা থেকে আমি ভীষন ভুতে ভয় পাই ,
সারা রাত আমি এখানে একা ছিলাম মনে হলেই আমার সারা গায়ে কাটা দিচ্ছে বলেই সুহা বাচ্চাদের মতো ভয় ভয় মুখ বানিয়ে বসে রইল,
সুহাকে এভাবে বাচ্চাদের মতো ভয় পেতে দেখে কাব্য ভীষন মজা পেল ,কাব্য ইচ্ছে করে সুহাকে এখানে রেখে গেছে সকালে সুহার এমন রিয়েকশন দেখার জন্য,কাব্য মৃদু হেসে মনে মনে বলল,
ভুত বলতে সত্যি কিছু আছে কি না আমি জানি না,
কিন্তু ভুত বা অন্যকোন কিছু তোমাকে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা কোন কিছু তোমার কাছেই আসতে পারবে না,
তোমার কাছে আসতে হলে তাদের আগে আমাকে ফেইস করতে হবে
,তুমি তো জানো না সুহা পাখি আমি সারা রাত বসে তোমায় পাহারা দিয়েছি,
একটুর জন্যও ঘুমাই নি,আমার যে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল চাঁদের আলোয় তোমার চাঁদ মুখটা দেখার ,
তাই তো তোমাকে এখানে নিয়ে এসে মন ভরে তোমায় দেখেছি,চাঁদের আলোয় তোমার মুখটা কতখানি মায়াবি আর স্নিগ্ধ লাগছিল তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না,তুমি এতোটা সুন্দর কেন হলে সুহা ,তোমাকে নিয়ে সবসময় আমার ভয় হয়,যদি কারো নজর লেগে যায় তোমার উপর।তোমাকে এতো কাছে পেয়ে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকা সত্যি আমার জন্য কষ্টকর,জানি না কত দিন নিজেকে সামলাতে পারবো,এই তুমি কবে বুঝবে আমার ভালবাসা।
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুহার দিকে এগিয়ে গেল,
সুহা তখনও মুখ গুমরা করে বসে আছে ,কাব্য গিয়ে সুহাকে কোলে তুলে নিল ,
কাব্যের এমন কান্ডে সুহা চাপা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল ,
-তুমি আমায় কোলে নিলে কেন ?নামাও বলছি আমাকে,
-রাতে আমার পাশে থাকতে দেই নি বলে আমার বৌয়টার খুব রাগ হয়েছে ,ভয় ও পেয়েছে এখন আদর দিয়ে সবটা পুষিয়ে দেবো,
-একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবে না ,আমার বয়েই গেছে তোমার পাশে থাকতে,নামাও বলছি ,বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট এভাবে একদম আমায় কোলে নিবে না,
আমার কথা শুনে উনি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
-একশো বার নিব ,হাজার বার নিবো ,তোমার কি ?আমার বৌকে আমি যখন খুশি তখন কোলে নিবো তাতে তোমার কি প্রবলেম ,
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম,এ কেমন কথা!!!
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম এই মানুষটা দেখতে অসাধারন সুন্দর কিন্তু স্বভাব চরিএ খুব বাজে,
উনি আমাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন ,আমি উঠে যেতে চাইলাম কিন্তু উনি আমাকে দু হাত দিয়ে বিছানায় চেপে ধরে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে ,উনার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার ও কেমন ঘোর লেগে গেল,আমি এক দৃষ্টিতে উনার চোঁখের দিকে তাকিয়ে রইলাম,কি হচ্ছে না হচ্ছে আমার কোন খেয়াল রইল না ,
হঠাৎ নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় আমার ঘোর ভাংলো ,কি হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি উনাকে হাত দিয়ে ধাক্কাতে লাগলাম ,আমাকে ছাড়ার জন্য,
কিন্ত উানার কোনো হেলদোল নেই উনি নিজের কাজেই মগ্ন রইলেন,উনার মতো বলিষ্ঠবান পুরুষের শক্তির সাথে আমি কিছুতেই পেরে উঠলাম না,আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল,কোনো উপায় না পেয়ে আমি বাজ্জাতটার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলাম,কামড় দেওয়ার সাথে সাথে উনি আমাকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টপিট দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলে উঠলেন,
গুড মর্নিং কিস দিয়ে দিলাম আর রাগ করে থেকো না সুহা রানী আমার,আর হে লাভ বাইটা কিন্তু সেই ছিল,
বলেই চোঁখ মেরে ওয়াশ রুমে চলে গেলেন,
রাগে আমার মন চাইছিল উনার মাথার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলি,
কি পেয়েছেটা কি অসভ্য লোকটা, যখন মন চাইছে কোলে নিচ্ছে,যখন মন চাইছে চুমু খাচ্ছে ,উনার এই চুমাচুমির কারনে আমার লাইফটা হেল হয়ে যাচ্ছে,
উফ!!অসহ্যকর,
.
,
নিচে নামতেই আপুর সাথে দেখা হলো আপু হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এসে স্নেহাকে আমার কোলে দিয়ে গেলেন,
আমি ওকে নিয়ে সোফায় বসে খেলা করতে লাগলাম,
কিছুক্ষন পর কাব্য ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলেন,
আমি উনার দিকে না তাকিয়ে স্নেহার সাথে কথা বলতে লাগলাম,আমার কথা শুনে মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগল,
ওর হাসি দেখলে মনটা ভরে উঠে ,আমি খুব ইনজয় করি ওর আদো আদো বলা কথা আর হাসি,
উনি মৃদু কাশি দিলেন আমার এটেনশন পাওয়ার জন্য কিন্তু আমি কোনো পাত্তাই দিলাম না স্নেহার সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে রইলাম,এমন একটা ভাব করছি যেন আমি আর স্নেহা ছাড়া এখানে আর কেউ নেই,
আমার কাছে পাত্তা না পেয়ে কাব্য ভাইয়া উনার মাথার চুল গুলো ঝাড়া দিয়ে উঠলেন উনার চুল গুলোতে থাকা পানি গুলো আমার চোঁখে মুখে এসে পরল,
আমি বিরক্তি নিয়ে তাকালাম উানার দিকে,আমি তাকাতেই উনি দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিলেন,
উনার ঠোঁট হালকা ফুলে আছে দেখে আমার একটু কেমন যেন লাগল ,আমি চোঁখ সরিয়ে নিলাম,
উনি আমার আরো কাছে এসে বসে বলতে লাগলেন,
এই ফুলা ঠোঁট নিয়ে আমি মা আর ভাবীর সামনে কিভাবে যাবো বলতো,তারা দেখলে কি ভাববে,ভাববে তোমার আর আমার মাঝে হেব্বি রোমান্স চলছে,ইশ!
কি লজ্জা জনক ব্যাপার স্যাপার,
উনার কথা শুনে আমি রাগি চোঁখে উনার দিকে তাকালাম,
আমার তাকানো দেখে উনি আবার হেসে উঠলেন,
স্নেহার আমার কাছ থেকে নিয়ে উনার কোলে বসিয়ে এক হাত পিছনে নিয়ে আমার কোমড় জরিয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রাখলেন,
আমি উঠে যেতে চাইলে উনি বলে উঠলেন,
প্লিজ সুহা একটু বসো ,
উনার বলা কথা কেমন অন্যরকম শুনালো কথাটা উপেক্ষা করে আমি উঠে যেতে পারলাম না,বসে রইলাম স্থিরভাবে,
উনি আবার বললেন,সুহা আমার খুব ইচ্ছে আমাদের একটা ছোট্ট প্রিনসেস হবে,সেই প্রিনসেসটা আমাকে আদো বুলিতে পাপ্পা আর আমার সুহা রানীকে মা বলে ডাকবে, তুমি আমি আর আমাদের ছোট্ট প্রিনসেস নিয়ে আমাদের একটা হ্যাপি ফ্যামেলি হবে যেখানে থাকবে শুধু ভালবাসা আর ভালবাসা,
আমার সাধ্যের ভিতরে থাকা সব কিছু দিয়ে আমি তাদের খুশি রাখতে চেষ্টা করবো,আমাদের একটা ছোট্ট প্রিনসেস হবে তো সুহা,
উনার বলা কথাগুলো শুনে আমার ভেতর অদ্ভুত এক অনুভুতির সৃষ্টি হলো,বুকের ভেতর কেমন করতে লাগল ,জানি না কেন ভীষন কান্না পেল,আমি আর বসে থাকতে পারলাম না উঠে চলে এলাম,
রুমে চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু সামনে আন্টিকে দেখে থেমে গেলাম,
আমাকে দেখে আন্টি গম্ভির কন্ঠে বলে উঠলেন,
সুহা আমার সাথে একটু আমার রুমে এসে তো তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে,
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে উনার সাথে যেতে লাগলাম ,
আন্টি হঠাৎ আমাকে কি বলতে চান কিছুই বুঝতে পারলাম না,অজানা কৌতুহল নিয়ে উনার সঙ্গে হাঁটতে লাগলাম ।
#_চলবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here