অভিমান #পর্বঃ১১

0
877

#_অভিমান
#পর্বঃ১১
………………

.
আমি অবাক হয়ে চারিপাশ দেখতে লাগলাম,বিছানাটা অর্কিড আর লাল গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো,খুব সুন্দর করে খাটটাকে সাজানো হয়েছে,পুরো রুমটাই অনেক সুন্দর আর মনোরম করে সাজানো ,রুমের মধ্যে অল্প আলোর একটা লাইট জ্বালানো,
বেলকুনির দরজাটা খোলা সেখান দিয়ে চাঁদের আলো আর মৃদু বাতাস আসছে,চাঁদের আলো ,তীব্র ফুলের ঘ্রান ,
মৃদু বাতাস সব মিলিয়ে রুমটাকে যেন মায়াপুরী মনে হচ্ছে ,কিন্তু এই সৌন্দর্যগুলো আমার মন ছুঁতে পারলোনা।এতো সৌন্দর্যের মাঝেও যেন আমার মনটা বিষাক্ত হয়ে রইল,কোন কিছুই ভাল লাগছে না ,কাব্য ভাইয়াকে অসহ্য লাগছে ,তার সাথে তার এই রুমটাকে রুমের সব কিছুকে,
যা দেখছি তাতেই মনে হচ্ছে সব মিথ্যে সবকিছু মিথ্যের মায়াজাল।
জোর করে বিয়ে করে আবার ফুলসজ্জার খাট সাজানো হয়েছে ,
শখ তো মন্দ নয় ,ছ্যাচড়া ব্যাটা কোথার এত কিছু কখন কিভাবে করল কে জানে,ফুলসজ্জার খাটে আমি নতুন বৌয়ের মতো গুটিসুটি মেরে বসে রইলাম ,
আমার মনের মাঝে নেই কোন আনন্দ ,নেই কোন শিহরন আছে শুধু ভয় আর একরাশ তিক্ত অনুভুতি।এই মিথ্যুক লোকটাকে আমি কোনদিন স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।
আমার মনে যার কোনো স্থান নেই তার সাথে আবার কিসের ফুলসজ্জা।
,
.
কাব্য ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার পাশে বসলেন,
আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে রইলাম,
উনি খানিক্ষন আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন,
তারপর আমার একটা হাত উনার দু হাতের মাঝে নিলেন,
উনি আমার হাত ধরতেই আমার প্রচন্ড রাগ হলো আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম,কিন্তু উনি ছাড়লেন না শক্ত করে ধরে রইলেন,
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল আজ বুঝি আমার আর রক্ষা নেই ,উনি নিশ্চই জোর করে উনার অধিকার কাটাবেন আমার উপর,
কিন্তু এভাবে একজন মিথ্যুকের কাছে হার মেনে নেওয়া যায় না,
আমি একটু সাহস নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
আমার হাত ছাড়ো,এভাবে যখন তখন পারমিশন ছাড়া হাত ধরতে ,কোলে তুলে নিতে লজ্জা করে না তোমার।
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তিক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
সেদিন তো খুব বলেছিলে কোন অধিকারে আমি তোমাকে স্পর্শ করি ,ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে ,সেদিন আমার কোনো অধিকার ছিলনা ,তাই আমি কিছু বলতে পারিনি,
কিন্তু আজ তোমাকে স্পর্শ করার সম্পূর্ন অধিকার আছে আমার।
তোমার সমস্ত কিছুর উপর আজ থেকে শুধু আমার অধিকার,
আমার বিয়ে করা বৌয়ের হাত আমি ধরবো, যখন ইচ্ছে হবে কোলে নিবো সেখানে আবার লজ্জা কিসের,বলেই উনি আমার হাতের উপর কিস করে বসলেন।
উনার কথা শুনে আমি জটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলাম,
কিসের আধিকার জোর করে বিয়ে করে অধিকার ফলানো হচ্ছে,তুমি একটা মিথ্যুক মিথ্যে বলে আমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছো,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া ধীর শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না সুহা,
উনার কথা শুনে আমার আরো বেশি রাগ লাগল,আমি আবার ঝাজালো গলায় বলে উঠলাম,
কেন আমার সাথে এমনটা করলে তুমি ,আমি কি ক্ষতি করছিলাম তোমার, যার জন্য এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়,
কথাগুলো শুনে কাব্য ভাইয়া আমার আরো কাছে এসে আবার আমার হাত ধরে বলতে লাগলেন,
জানো সুহা আমি দেশে আসার কিছুদিন পর একদিন বিকেল বেলা আমি প্রচন্ড রেগে আমার এক্স গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম,আমার এতো রাগ হয়েছিল মেয়েটাকে সামনে পেলে খুন করে ফেলতাম,রাগে আমি ফোনটাকেই ছুঁড়ে ফেলে দিলাম,
ফোন ছুঁড়ে ফেলাম সাথে সাথে কারো মৃদু চিৎকার আমার কানে এলো,
উনি থেমে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন,
আমি অবাক হয়ে বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম,একটা মানুষের কত রূপ কখনও শান্তশীষ্ট একজন নরমান মানুষ ,কখনও রাগী ,জেদী ভয়ংকর মানুষ,আবার কখনও দূর্ত ,মিথ্যেবীদী অভিনেতা।
উনি আবার বলতে লাগলেন,আমি চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা লাল পরি দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,তাকে এক নজর দেখেই আমার সমস্ত রাগ হাওয়া মিশে গেল,অজানা এক অনভুতিতে আমার মন ভরে উঠল,পরিটা যখন আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে দৌড় দিল তখন তার পিঠে থাকা তিলটা দেখে আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল,বারবার মনে হচ্ছিল এই তিলের সৌন্দর্য শুধু আমার,এ সৌন্দর্য দেখার অধিকার আর কারো নেই।
সেদিন সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি শুধু চোঁখের সামনে পরিটার মুখ ভেসে উঠছিল,শুধু ইচ্ছে হচ্ছিল তার কাছে ছুঁটে যাই।এক মুহূর্তের জন্য ও তাকে ভুলতে পারছিলাম না,নিজের এমন কান্ডে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, বিদেশে থাকতে অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল কিন্তু তাদের কারো জন্য আমার এমন হয় নি,তাদের কাউকে দেখে আমার মনে এমন অনুভুতি সৃষ্টি হয় নি,তারপর আমি বুঝতে পারলাম সেই সব মেয়েদের জন্য শুধু আমার ভালো লাগা বা মোহ কাজ করতো,কিন্ত এই পরিটাকে আমি ভালোবাসে ফেলেছি,বুঝতে পারার পর পরিটার সাথে কথা বলতে গেলাম,কিন্তু সে আমাকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল ,আমাকে দেখলেই সে প্রচন্ড ভয় পেতো ,তারপর ও অনেক চেষ্টা করলাম কথা বলার জন্য কিন্তু পরিটা অল্প সল্প কথা বলে নানা অযুহাতে আমাকে ইগনোর করতে লাগল,তার এই কাজ গুলো আমাকে ভীষনভাবে কষ্ট দিত,তাকে একটু দেখার জন্য ভার্সিটিতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম সেটা ও সে বুঝলো না,সেখানেও সে আমার থেকে পালিয়ে লুকিয়ে বেড়াতো লাগলো ,কথা বলার কোন সুযোগই দিত না,যা ও একদিন জোর করে নিয়ে গেলাম সব বলার জন্য কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সে ভয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদেদিল,তার মাঝে একদিন শুনলাম পরিটার নাকি বিয়ের কথা চলছে ,যার দিকে কোনো ছেলে তাকালে আমি সহ্য করতে পারি না থাকে আমি অন্যকারো সাথে কি করে মেনে নিবো ,আর সেদিন অধিকার নিয়ে তার বলা কথা গুলো শুনে আমি আর নিজেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না ,আরো আমি জানতে পারলাম আমার রাগ আর অধিক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্কে জন্য সে আমাকে পছন্দ করে না ,ভালবাসার কথা বললে সে আমাকে এতো সহজে মেনে নিবে না,ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাকে হারানোর তাই নাটকে করে, মিথ্যে বলে,জোর করে বিয়ে করে তাকে নিজের করে নিলাম,
তোমাকে আমি খুব ভালবাসি সুহা এই কথা গুলো বলার জন্যই বারবার আমি তোমার কাছে যেতাম।
তোমাকে হারালে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরতো।আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন ।তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য হয়তো আমি মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছি কিন্তু আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়।
আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমার মন জয় করতে পারবো ,তুমিও একদিন আমাকে ভালবাসবে।
কথাগুলো বলেই কাব্য ভাইয়া আমার পিঠের চুলগুলো সরিয়ে পিঠে মুখ গুঁজে দিলেন,একের পর এক কিস করতে লাগলেন এবং হাত দিয়ে আমার পেটের মাঝে স্লাইড করতে লাগলেন ,
সব শুনে কিছুক্ষন আমি মূর্তির মতো বসে রইলাম,উনার স্পর্শগুলো পেয়ে আমার সম্মতি ফিরল,আমি ধাক্কা দিয়ে উানাকে সরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম,
মিথ্যে সব মিথ্যে ,আমি তোমার একটা কথাও বিশ্বাস করি না,তুমি একটা মিথ্যুক তোমাকে কখনই আমি ভালোবাসব না ,এই বিয়ে আমি মানি না,
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া মৃদু হেসে বলে উঠলেন,তোমাকে তো আমাকে ভালোবাসতেই হবে,
একদিন তুমি তোমার নিজের থেকেও বেশী ভালবাসবে আমাকে ,
আর বিয়ে মানো না তাই না বিয়ে কিভাবে মানাতে হয় সেটা আমার খুব ভালোভাবে জানা আছে,
বলেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলেন,উনার এমন আচমকা আক্রমণে আমি দিশেহারা হয়ে পরলাম,উনি যে হঠাৎ এমন কিছু করে বসবেন আমি ভাবতেই পারিনি। অনেকক্ষন পর আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার
বুকের কাপড় সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দিলেন,
আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছিলাম না,কোনো উপায় না পেয়ে
আমি কেঁদে বলে উঠলাম তুমি শুধু জোর করে আমার দেহটাই পাবে কিন্তু আমার মন তুমি কোন দিন পাবে না,এই দেহ পাবার জন্যই তো তুমি আমাকে বিয়ে করেছো,
আমার কথা শুনে উনি থেমে গেলেন মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন তারপর উঠে বসলেন,
ছাড়া পেতেই আমি উঠে বসে শাড়ী নিজের সমস্ত গায়ে জরিয়ে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম,উনি কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে রইলেন তারপর খাট থেকে নেমে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন ,আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করোও না।
না হলে সব কিছু আমি ধ্বংস করে দিব।তুমি শুধু আমার ,শুধুই আমার।বলেই উনি রেগে মেগে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন,
আমি একা একা বসে কাঁদতে লাগলাম,কি করে একজন ভয়ংকর রাগী লোকের সাথে জীবন কাটাবো,
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম জানি না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে আমার চোঁখ ছানাবড়া গেল।(চলবে )
কিছু সাময়িক সমস্যার কারনে গতকাল ১১তম পর্ব আপলোড দিতে না পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here