অবশেষে তোমায় হলো পাওয়া পর্ব ১

0
138

” আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না মিস্টার মোয়াজ। আমি নিজের একটা আলাদা পরিচিতি গড়তে চাই। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই। আমার পক্ষে সম্ভব নয় এখন কোনো রকম বিয়ে করা। আর আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।”

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সামনের চেয়ারে বসে থাকা রমনীর কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাদ ইবনে মোয়াজ।

” আপনি প্লিজ এই বিষয় এখানেই বন্ধ করে দিন। আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নয়।”

এবারও আগের মতই চুপ করে বসে কফির কাপে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে সাদ। এতে যেনো সামনে বসে থাকা রমনীর রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।

” আমি কি বলেছি আপনি কি শুনতে পারছেন না মিস্টার মোয়াজ? আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে এমন চুপ করে বসে আছেন কেন? আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিবেন আশাকরি।”

দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে চেয়ার থেকে উঠতে চলে যেতে গিয়েও আবার পিছন ফিরে তাকিয়ে সাদের কথা গুলো রাগে গজগজ করতে করতে শুনে নিলো।

” মিস আমি আপনাকে বিয়ে করবো। আপনি মানে আপনিই। সেটা অন্য কেউ না। আর আপনার বলা শেষ কথা কতটা সত্য সেটা যাচাই করে এসেছি মিস। আর নিজেকে তৈরি করুন মিস থেকে মিসেস সাদ ইবনে মোয়াজ হওয়ার।”

” আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। না মানে না। আপনাকে তো আমি,,,,”

নিজের কথা গুলো শেষ করতে পারলো না রমনী। তার আগেই হাতের সেলফোনটি বেজে উঠলো। এতে যেনো আরো বিরক্ত হয়ে উঠলো রমনী। বিরক্ত নিয়েই ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই মহাবিরক্ত হয়ে গেলো সে।

” আবে তোরে বলেছিলাম না এই ব্যাডার সাথে প্রেম করতে যাস না। এখন হলো তো? সে তো অন্য একজনকে নিয়ে ফুশ্।আরে রাখ তোর প্যানপ্যান আসছি আমি। ওই ব্যাডাকে সামনে পেয়ে নেই একবার। এখন ফোন রাখ আমি আসছি।”

কথাটা বলে ফোন কেটে দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো মোয়াজ গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মোয়াজকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ধমক দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো রমনীটি। ফোনের ওপাশের ব্যক্তির উপরের রাগ সামনের ব্যক্তির উপর ঝেড়ে চলে গেলো সেটা বুঝতে সময় লাগলো না সাদের।

“আপনি যত যাই করেন না কেন মিস। আপনাকে বিয়ে তো আমাকে করতেই হবে সাথে ভালো এই আমাকেই বাসবেন।”

বিরবির করে কথাটা বিল মিটিয়ে কফিশপ থেকে চলে গেল সাদ।

——-

” এই কথা দেখ না রাজ আমার সাথে এমন চিটিং করতে পারলো? আমি তো ওরে সত্যি কত ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে ওই রাইসার সাথে রিলেশন করছে।”

কথাটা বলেই ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করে দিলো কনা।

” তোরে কতবার বলেছিলাম ওই ব্যাডা রাজের সাথে যাস না। শুনলি না আমার কথা এবার মজা বোঝ।”

পাশ থেকে বিরক্ত নিয়ে কথাটা বললো মীম । এতে কান্নার জোর আরো বেড়ে গেলো।

” কি হয়েছে এই মাইয়া এমন মরা কান্না শুরু করেছে কেন?”

” সব কিছু শুনেও এমন করে বলতে পারলি তুই আমাকে? তুই না আমার বেস্টফ্রেন্ড।”

” আহা আইছে আমার বেস্টফ্রেন্ড। তোকে যখন আমরা বলেছিলাম রাজ ভালো ছেলে না, সে অনেক মেয়ের সাথে এমন করে। তখন তো বেস্টফ্রেন্ডের থেকেও রাজ বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছিল। এখন মনে হয়েছে আমরা তোমার বেস্টফ্রেন্ড।”

কনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পিঞ্চ মেরে কথাটা বললো কথা। এতে কনা কান্না ভুলে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইল।

” আমি এই রাজ ফাজকে ছাড়বো না। আমার সাথে চিটিং করা, আবার আমার ভোলাভালা চেহারা সুযোগ নিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। শুধু একবার সামনে পাই। রাজের বাচ্চা রাজ তুই শেষ। এবার দেখবি তোর কি হাল করি। দোস্ত তোরা আমাকে সাহায্য করবি তো?”

প্রথম কথা গুলো নিজে নিজে বলে শেষ কথা গুলো কথা আর মীমকে উদ্দেশ্য করে বললো কনা।

” হয়েছে এবার একটু বুকে আয়।”

কথাটা বলতেই মীম আর কনা দুইজনেই কথাকে জড়িয়ে ধরলো।

“এখন এইসব ছাড় কথা তুই বল। কথা হয়েছে উনার সাথে? আর কি বলেছে? বিয়ে করবে না বলেছে?”

কথাকে ছেড়ে দিয়ে কথাটা বললো মীম। ওরা দুইজন আগে থেকেই জানতো যে, কথা আজকে মোয়াজের সাথে দেখা করতে যাবে। আর কেনো যাবে সেই কারণ ও জানতো।

“হ্যাঁ কথা হয়েছে। কিন্তু উনার ভাবভঙ্গি দেখে বোঝা যায়নি কিছুই। তবে আমি বলে দিয়েছি আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবো না।‌ আর উনি আমার ব্যাপারে..”

“এই কথা উনি যদি তোর মামীর কাছে এখন সব কিছু বলে দেয় তাহলে?”

কথাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই পাশ থেকে কথাটা বললো কনা। যদিও আগে থেকেই এইটা মস্তিষ্কে ছিলো, কিন্তু মোয়াজের উপর একটু হলেও বিশ্বাস আছে। কিন্তু এখন তার কথা শুনে মনে হচ্ছে না বিশ্বাস করা ঠিক হয়েছে।

” মনে হয় না কিছু বলবে। উনাকে দেখে তো তেমন কিছু মনে হয়নি কিন্তু….”

” কিন্তু কী? যদি বলে দেয় সেই কথা ভাবছিস?”

“আচ্ছা শুন আমাকে এখন যেতে হবে। আর মন খারাপ করিস না। ওই অকাম্মা রাজকে একবার পাই। এমন হাল করবো না যে, আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করার ইচ্ছেও থাকবে না।”

কথাটা বলেই মীম আর কনাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো কথা।

—–

“নবাবজাদি আজকে আসুক একবার। আমার থেকে লুকিয়ে গেছে বিয়েতে না করতে। জন্মের পর তো মা-বাপ দুইজনেরই গিলা খাইয়া এই মামার ঘাড়ে এসে জুড়ে বসছো। ছোট থেকে খাওয়ে পড়িয়ে বড় করলাম আর এখন এই কাজ করে। আজকে আসুক বাড়িতে। এতো বড় ঘর থেকে সমন্ধ আসছে আর উনি আসছে বাড়া ভাতে ছাই দিতে। মুখপুড়ি নিজের ভালোর জন্য এতো বড় ঘরে বিয়ে দিতেছি আর উনি আসছে বিয়ে ভাঙতে। আমিও দেখি কি করে এই বিয়ে ভাঙতে পারে।”

বিকালের নাস্তা বানাতে বানাতে রান্না ঘর থেকে কথা গুলো বলছিলো আমেনা বেগম। এই নিয়ে পাঁচ বার কথা গুলো বললেন তিনি।

” উফ্ আমেনা! কি শুরু করলে তুমি? মেয়েটাকে আসতে দাও। বাড়িতে ফিরলে তখন জেনে নিও কেন এমন করেছে।”

বিকালে ড্রয়িংরুমে বসে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছিলো রুমান সাহেব। কিন্তু নিজের স্ত্রীর মুখে এক কথা পাঁচ বার শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে কথাটা বললেন তিনি। কিন্তু এতেই যেনো আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত কাজ হয়ে গেলো।

” কি শুরু আমি করেছি? না-কি তোমার আদরের ভাগ্নি করেছে? এতো ভালো ছেলেকে কি-না না করে দিছে।”

” আচ্ছা আগে কথা বাড়ি ফিরুক তারপর না হয় ওর সাথে কথা বলে নিও।”

কথাটা বলেই রুমান সাহেব আবার খাতা দেখায় মন দিলেন। আর আমেনা বেগম ও চুপচাপ নাস্তা রেডি করতে লাগলেন।

——

” তা শুনলাম তুমি না-কি কাউকে ভালোবাসো?

#চলবে
#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব:১
#তামান্না_ইসলাম_কথা

(আসসালামুয়ালাইকুম। অনেক দিন পর লিখলাম। অনেক ভুল আছে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর সবাই রেসপন্স করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here