অবশেষে তোমায় হলো পাওয়া পর্ব ৯

0
73

#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব ৯
#তামান্না_ইসলাম_কথা

যেইসব মানুষ নিজেকে উপর থেকে যতটা শক্ত মনের অধিকারী দেখাই আসলে সবাই কি ভিতর থেকে ততটাই শক্ত মনের অধিকারী? যারা নিজেকে শক্ত খোলসের আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখে তাদের সবার আলাদা আলাদা কিছু লুকানো কষ্ট থাকে। কথা নিজেকে যতটা পারে নিজেকে শক্ত আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখার প্রয়াস করে। কিন্তু যখন নিজের আপন মানুষদের কথা আসে তখন নিজেকে সামলানো সহজ নয়। মোয়াজের সাথে বিয়েটা শর্তের হলেও মোয়াজ তার স্বামী। মা-বাবার পর মেয়েদের আপন বলতে স্বামী। আর যদি কোনো মেয়ের বিয়ের প্রথম দিনই স্বামীকে যদি পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে যায়, তখন কোনো মেয়েই নিজেকে শক্ত হয়ে থাকতে পারে না। নিজের শক্ত আবরণ থেকে বের হয়ে আসে। কথার ক্ষেত্রেও তাই। নিজেকে আর শক্ত করে রাখতে পারেনি।

” আমার সাথে কেন এমন হয় মাবুদ? আমি কী কারো ভালোবাসা পাবো না? যাদের তুমি আপন করে নিয়ে আসো আবার তাদেরই কেন আমার থেকে নিয়ে যাও? ছোট বেলায় মা-বাবাকে নিয়ে নিলে, এখন আবার মোয়াজকেও দূরে করে দিলে?”

উষা কথাকে বাজে কথা বলার পর কথা ড্রয়িংরুম থেকে উপরে নিজেদের রুমে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

” তুমি এভাবে ভেঙে পড়ো না কথা। লিজা এমন একটা মিথ্যা মামলা কেনো দিবে ঠিক বুঝতে পারছি না। মোয়াজের উকিলের সাথে কথা বলছে তোমার ভাইয়া। তুমি চিন্তা করো না।”

নয়নতারার কথা শুনে নয়নতারাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার জোর বাড়িয়ে দিলো।

” আমার সাথে কেন এমন হতে হলো ভাবীমনি? উষা তো কোনো মিথ্যে কথা বলেনি। আমি সত্যি অপায়া, অলক্ষী।”

” এইসব কথা বলে না কথা। তুমি তো স্ট্রং! তুমি ভেঙে গেলে মোয়াজ নিজেও নিজের মনোবল হারিয়ে ফেলবে। লিজা যে মিথ্যে অভিযোগ করেছে তার মধ্যে কোনো ভুল নেই। মোয়াজ লিজাকে সবসময় এড়িয়ে চলতো। বলতে গেলে মোয়াজের পছন্দ ছিল না লিজাকে। তাহলে লিজা এমন অভিযোগ করেছে কেন সেটাই বুঝে আসছে না আমার।”

নয়নতারার শেষ কথা গুলো শুনে কথা নয়নতারার থেকে সরে এসে সোজা হয়ে বসলো।

” মোয়াজ লিজাকে এড়িয়ে চলতো? অপছন্দ করতো?”

” হ্যাঁ! লিজা গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। উগ্ৰো ব্যবহার, অহংকারী বলে মোয়াজ সব সময় লিজাকে অপছন্দ করতো। তবে হ্যাঁ লিজা মোয়াজকে পছন্দ করতো।”

নয়নতারার কথা শুনে কিছু সময় চুপ করে কিছু একটা ভেবতে থাকে কথা।

“ভাবীমনি আমাকে লিজার নাম্বার দিতে পারবে?”

“লিজার নাম্বার? কিন্তু কেন? তুমি লিজার নাম্বার দিয়ে কি করবে?”

লিজার নাম্বার চাওয়াতে অবাক হয়ে কথাকে প্রশ্ন করে নয়নতারা।

” তুমি দাও আমাকে। তারপর দেখো আমি কি করি।”

কথা নয়নতারার থেকে লিজার নাম্বার নিয়ে লিজাকে ফোন করে কথা বলতে বলতে ব্যালকনিতে চলে যায়।

” ভাবীমনি আমাকে এখন একটু বের হতে হবে। তুমি একটু সামলে নিলো।”

লিজার সাথে কথা শেষ করে নয়নতারাকে কথা গুলো বলে যেভাবে ছিল কথা সেই ভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

——–

“আমাকে এখানে ডেকেছো কেনো?”

একটা কফি শপে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে কথা আর লিজা। লিজাকে ফোন করে সেই এখানে ডেকেছে।

” তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো লিজা।”

” আমার সাথে তোমার কিসের কথা থাকতে পারে? তোমার মতো মেয়ের সাথে আমার কথা বলতেও রুচিতে বাধে। একটা লো ক্লাসের মেয়ের। কেনো যে তখন আসতে রাজি হয়ে গেলাম।”

লিজার কথা গুলো শুনে একটু হাসলো কথা। নয়নতারা যে কোনো মিথ্যে কথা বলেনি সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। অহংকার, দাম্ভিক অনেক।

” মোয়াজকে ভালোবাসো?”

” হ্যাঁ! নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আমি মোয়াজকে। কিন্তু তুমি আমার থেকে মোয়াজকে কেড়ে নিয়েছো।”

” ভালোবাসো বলেই কি মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছো তুমি? এইটাই বুঝি তোমার ভালোবাস?”

” হেই ইউ লিসন! আমাকে তুমি ভালোবাসা শেখাতে আসবে না। আমি যদি মোয়াজকে না পাই তাহলে আমি অন্য কাউকে মোয়াজের আশেপাশে আসতে দিবো না।”

লিজার কথা শুনে আরেকটু হেসে উঠলো কথা। লিজা যে রেগে গিয়েছে সেটা নিশ্চিত। আরেকটু রাগিয়ে দিতেই কিছু গা জ্বালা কথা বলে লিজাকে।

” কিন্তু আমি তো অলরেডি মোয়াজের জীবনে এসে গেছি। শুধু জীবনে নয়। মোয়াজের মনে, ঘরে, মোয়াজের সব কিছুতেই এখন আমার বিচরণ। মোয়াজ আমাকে ভালোবাসে।

” তার জন্য তোমাদের দুজনকেই শাস্তি পেতে হবে। এন্ড ইউ নো! আমি নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমি তোমাকে চিরতরের মতো শেষ করে দিবো। আই মিন ইট। হেল করে দিবো তোমাদের জীবন।”

” আচ্ছা ঠিক আছে। সেই চেষ্টা তুমি করে যেতে পারো। তবে আমি কিন্তু জানি মোয়াজ তোমার সাথে কিছুই করেনি। তুমি তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছো। আর তুমি হয়তো আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না। সো বি কেয়ার ফুল।”

কথার শেষ কথা শুনে লিজা হাত কচলাতে লাগল। কপালে হালকা ঘামের কণা বের হতে লাগলো। সাথে কিছু আচরণ লক্ষ্য করে রাখলো কথা।

” আমি শরীর খারাপ লাগছে। আমি বাড়িতে যাবো। নেক্সট টাইট আমাকে ডাকবে না।”

কথা গুলো শেষ করে এক মূহুর্ত দেরি না করে লিজা কফি শপ থেকে বের হয়ে যায়।

” থ্যাংকস্ লিজা। তবে তোমার এই ছোট মাথায় যে এমন কিছু আসবে সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না। কিছু একটা তো আছে‌।”

নিজে নিজে কথা গুলো বলে কফির বিল মিটিয়ে কথাও বের হয়ে যায় কফি শপ থেকে।

——

“বিয়ে? তাও আবার লিজাকে? তোমার মাথা ঠিক আছে কথা? তুমি আমার স্ত্রী হয়ে, আবার আমার বিয়ের কথা বলছো?”

” হ্যাঁ বলছি। আমাকে একটু বিশ্বাস করুন। আপনাকে এখন এখান থেকে বের করার এইটাই বেস্ট অপশন হবে। আপনার এই খবর সোশাল মিডিয়া, নিউজ চ্যানেল সব জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছে। লিজা বলেছে আপনি বিয়ে করতে চাইলে এই কেস উইথড্র করে নিবে। আর মিডিয়ার সামনে বলবে এইটা ভুল খবর। আপনি শুধু বলে দিবেন বিয়ে করতে রাজি। বাকি সব কিছু আমি সামলে নিবো।”

কথা কফি শপ থেকে বের হয়ে সোজা থানায় চলে আসে মোয়াজের সাথে দেখা করতে। আর কফি শপে বসেয় সব কিছুর প্লানিং করে আসে।

“স্যরি কথা আমি পারবো না। কথা আমার একটা কথা রাখবে?”

মোয়াজের একরুখো কথা শুনে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নেয় কথা। সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি মনে করে।

” কথা আমি চাই আমার কেস তুমি হ্যান্ডেল করো। আমি মিডিয়ার ভয়ে মিথ্যে আশ্রয় না, সত্যি তথ্যর ভিত্তিতে বের হয়ে আসতে চাই। তুমি তো আমার সৎ, আদর্শবান উকিল বউ।”

মোয়াজের কথা শুনে বিরক্তর আভা সরিয়ে নিয়ে আরো কিছু ভেবে নেয় কথা।

” ঠিক আছে। আমি আপনার কেস হ্যান্ডেল করবো। আমাকে সব কিছু সাজাতে হবে। নতুন করে সব কিছু ভাবতে হবে। আর আপনার মায়ের,,,,”

আরো কিছু কথা বলতে গিয়েও হঠাৎ করে কথা মাঝ পথে গিয়ে চুপ করে যায়। নিজের মায়ের সম্পর্কে কিছু শুনতে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে যায় মোয়াজের।

” মিসেস আরাফাত কি করেছে কথা?”

” কিছু না। আজকে আমি আসছি।”

মোয়াজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত কদমে থানা থেকে বের হয়ে আসে কথা। এখন যেতে হবে হসপিটালে। যেখানে রফিক সাহেবকে রাখা হয়েছে। রিয়াদ টেক্সট করেছিল সেখানে যেতে।

——

” নেই মানে কী?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here