অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::১৫

0
2530

#অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৫

এখনো ইশরা বাড়ি ফেরেনি।। রাত আটটা ছাড়িয়ে নয় টার কাছাকাছি।।আয়রা মুখ ভাড় করে সোফায় বসে আছে।। অনেক অভিমান জমে আছে আয়রার ।।আজ কেন এতো দেরী করে আসছে।। প্রতিদিন পাঁচটার আগে বাড়ি ফিরে আসে।।তাহলে আজকে আসছে না কেন।।মায়ের আবার কোনো বিপদ হলো না তো।। আয়ান ছাড়া সবাই রাতের ডিনার করছে ,, কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই আয়রার।।কারন সে মাকে ছাড়া কখনো খায় না ,, না কখনো ঘুমাতে পারে।।আয়রার পাশে বসে আয়ানও অপেক্ষা করছে আয়রার মায়ের জন্য।।আয়রার এমন শুকিয়ে যাওয়ার মুখটার দিকে তাকিয়ে দুয়ান ইশরার সেল ফোনে ডায়াল করলো।।নাম্বারে ঢোকার সাথে সাথে রিসিভ হয়ে গেল।।ইশরা জানতো ,, এখন বাড়ি থেকে ফোন আসবে ,, তাই ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিল।।ফোন‌ রিসিভ হতেই অন্যপাশ থেকে শোনা গেল এক বিরক্তিমাখা কন্ঠ।।– “” ফোনটা আয়রাকে দে””!! ইশরার এমন গলা শুনে দেরী করলো না দুয়ান।।তট জলদি ফোনটা এগিয়ে দিয়ে আয়রার দিকে।। কিন্তু আয়রা ফোনটা নি অন্যদিকে ফিরে বসে রইলো।।আয়রার ব্যবহারে দুয়ান মুখ ফুটে বললো..

— “আয়রা মুখ ভাড় করে অন্যদিকে ফিরে আছে।।মনে হয়,, কথা বলবে না”।।

–” তুই ফোনটা স্পিকারে দে …!!

দুয়ান ফোনের স্পিকারে প্রেস করে ,, ফোনটা একটু সামনে এগিয়ে ধরলো যাতে আয়রা ইশরার সব কথা স্পষ্ট শুনতে পায়।। কিছুক্ষণ আবার নিরবতায় ছেয়ে গেল।।পারলে এখন উড়ে আসতো সে।।এই জ্যাম কখন ছাড়বে তার হিসেব নেই ইশরার কাছে।।সব জায়গায় বিরক্তিকর,,রাগিভাব নিয়ে কথা বললেও ,, মেয়ের কাছে একদম নরম,, শান্ত।।তাই বিরক্তিকর ভাবটা একটু দূর করে‌ হাসির রেখা টেনে বললো…

— “সরি মাম্মা,, অনেকগুলো সরি ।।আমি অনেকক্ষন ধরে জ্যামে আটকে আছি ।।প্লীজ তুমি সামান্য কিছু খেয়ে নাও ,, নাহলে তুমি অসুস্থ হয়ে পারবে।।আমি এসে তোমাকে খাইয়ে দিবো”।।

মাম্মার কন্ঠ পেয়ে একটু শান্ত হলেও পরক্ষণে গর্জে উঠলো ।। মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই হিংস্র রুপ ধারণ করলো আয়রা।।হিংস্র বাঘের মতো দুয়ানের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে এনে,, নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো।।সাথে সাথে কয়েক টুকরো হয়ে গেলো।। দুহাতের মাঝে নিজের চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে চেঁচিয়ে বললো..

— “মাম্মা তুমি অনেক পঁচা ।।আগের থেকে আমাকে আর একদম ভালোবাসো না।।আমি কিচ্ছু খাবো না ,, আর তোমার সাথে কথাও বলবো না”।।

আয়রার এমন দৃষ্টিভঙ্গি দেখে সবাই অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌছে গেল।।ছোট একটা মেয়ের এতো রাগ।। একদম ছোট আয়ানের মতো ।। সবাই কৌতূহল নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।। আয়ান হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে,, ঠোঁট বাকি এমন ?? ভঙ্গি করলো।।যেন সে কিছু জানে না।।
আয়রার কষ্টে আয়ানের খুব কষ্ট হয়।।মনে হয় এক রক্তের বাঁধনে বেঁধে আছে।। সত্যিই তো বেঁধে আছে ।। কিন্তু সেটা তার অজানা।।আয়ান নুডুলসের বাটি টা নিয়ে আবার ইশরার পাশে বসে বললো..

— আচ্ছা আয়রা ।। তুমি প্রচুর রেগে গেলে কাঁদো না।

— “না..!! আমি মাম্মা কষ্ট পেলে শুধু কাদি ।।নাহলে না।।তাই মাম্মা আমাকে স্ট্রং গার্ল বলে।। তাছাড়া প্রিন্সেসরা কখনো কাঁদে না “।।(মাথার ঝুঁটি টেনে টেনে আয়রা)

— “ও আচ্ছা।।জানো আমি ৩২ রকমের ভাবে কাঁদতে পারি”??

— “ওম্মা!! তুমি এতো কাঁদো”!!( ভ্রু কুঁচকে আয়রা)

— “না !!!আমি কাঁদি না।। কিন্তু সবার কাছ থেকে তার ভঙ্গিতে কান্না শেখার প্রেকটিস করি!! তুমি শুনবে”!!

আয়রা মুখে হাসি টেনে আয়ানের কথা শুনতে মন দিলো।।আয়ান এক চামচ নুডুলস তুলে আয়রার মুখে পুড়ে দিলো।।বাটিটা পাশে রেখে নাক টেনে কাঁদতে লাগলো”” হম হম হম হম””!! আয়রা খাচ্ছে আর দেখছে।।আয়ান আরো এক চামচ মুখে পুড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলো”” ওয়া ওয়া ‘” !!
আয়রার খুশি দেখে কে?? আয়ানের এমন ৩২ রকমের কান্না দেখতে দেখতে পুরো নুডুলস শেষ করে।।
তারপর আবার গল্পে মেতে উঠে।। অজান্তেই নিজের পাপার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো আয়রা।। আয়ান আয়রাকে কোলে নিয়ে রুমে দিয়ে যাওয়ার আগে দুয়ান তুলে নিলো।। আয়ানকে ডিনার করতে বলে আয়রাকে রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।।

______________

বাড়িতে পা রাখতেই শরীরে এক অদ্ভুত কম্পন শুরু হয়ে গেল ইশরার ।।যখন আয়ানের চারপাশে থাকতো তখন এমন অদ্ভুত কম্পন অনুভব করতো ইশরা। চারদিকে অন্ধকার বিরাজ করছে ।। বাড়ির সবাই আলো বন্ধ করে এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।।কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।।আজ সেই বাবা মেয়ের জন্য,, ছোট একটা বাড়ি আর কাজের ব্যবস্থা করতে গিয়ে কিছুটা দেরী হয়েছে ।।বাকিটা জ্যামের কারণে।।রুমে ঢুকতেই দেখলো তার প্রিন্সেস সারা রুমে আলো জেলে ঘুমিয়ে আছে।। দুয়ান ফোন করে জানিয়েছিলো আয়রা নুডুলস খেয়ে ঘুমিয়েছে।।ইশরা ভাবতে পারে নি।।ইশরার প্রিন্সেস ইশরাকে ছাড়াই না খেয়ে ঘুমিয়েছে।।বাইরে থেকে এসেছে তাই মেয়েকে স্পর্শ করেনি।। রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করলো ।।কাবার্ড থেকে কয়েকটা ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে রেখে,, জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। অন্ধকারে আয়রার ফোবিয়া আছে ।।
ভেজা জামা কাপড়গুলো বেলকেনিতে মেলে আয়রার পাশে শুয়ে পড়লো।।আয়রার মাথাটা নিজের হাতের উপর রেখে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।।আয়রাকে না খাইয়ে নিজে কখনো খায় না ইশরা তাই আজও খায় নি।।
মায়ের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে বুঝতে পেরে চোখ খুলে তাকালো আয়রা।।মায়ের ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেয়েছিলো আয়রার।। কিন্তু সে অভিমানে চোখ খুলে নি।।ইশরা একটু নড়েচড়ে শুয়ে পড়লো।।ঘুমের ঘোরে হাতের বাঁধন একটু হালকা হতেই উঠে দাঁড়ালো আয়রা ।। একটা বালিশ হাতের উপর রাখলো।। হাত বাড়িয়ে একটা ক্যান্ডেল নিয়ে নিচে নেমে এলো।।কিচেন থেকে শব্দহীন ভাবে খাবার বেড়ে নিলো।।উপরে উঠার জন্য পা বাড়াতে নিলে দমকা হাওয়ায় নিভে গেলো ক্যান্ডেল।। মুহুর্তেই বাড়ি ছেড়ে গেল আবার অন্ধকারে।।হাত থেকে খাবারের প্লেট পড়ে যেতে নিলে ,, হাত বাড়িয়ে ধরে নিলো কেউ।।লাইটার জ্বালিয়ে পূর্নরায় আবার ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিলো সে।।সামনে ইশরাকে দেখে ভয়ে চলে গেল আয়রার।। অভিমানী সুরে বললো.

— “আমি খাইনি বলে কেউ খায়নি।।তাই খাবার নিতে এসেছিলাম”।।

ইশরা তৃপ্তিকর হাসি দিয়ে আয়রার হাত থেকে ক্যান্ডেল আর প্লেটটা নিয়ে ড্রাইনিং টেবিলে রেখে দিলো।।আয়রাকে কোলে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।। খাবার মেখে আয়রার মুখের সামনে ধরলে মুখ ফিরিয়ে নিলে সে।। মেয়ের অভিমান দেখে হাত ধুয়ে নিলো আর বললো..–“” আমার প্রিন্সেস বাবুই আয়ু সোনা না খেলে ,, আমি খাই কিকরে””!! এমন কথা শুনে আয়রা খাবার তুলে দিলো ইশরার মুখে।।মা মেয়ের অভিমান বেশিক্ষণ স্থায়ী রইলো না।। ঠিক একজনের কষ্টে আরেকজন কষ্ট পায়।। তারপর আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।।

_______________

— জানো মাম্মা ঐ “”নতুন ভালো আঙ্কেল টা”” অনেক ভালো।।আমাকে কত্তো আদর করে ,, ভালোবাসে ,, খাইয়ে দেয় ,, ঘুম পাড়িয়ে দেয়।।(মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আয়রা)

— কোন আঙ্কেলটা সোনা??(আয়রার চুলের ঝুঁটি বাঁধতে বাঁধতে ইশরা)

— মামা আছে না ।।তার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে ।।তার বড় ভাই।।

— ও আচ্ছা।।

— জানো মাম্মা ,, সেই নতুন ভালো আঙ্কেল টা”” অনেক কিউট।।কি সুন্দর গায়ের রং,,বিলাই চোখ ,, আর দাঁড়িগুলো।। যদি পাপার সাথে তোমার বিয়ে না হোত তাহলে ঐ আঙ্কেলটা সাথে তোমার বিয়ে দিতাম।।

মেয়ের কথা শুনে হাসলো ইশরা।।এখন আয়রা মায়ের বিয়ে দিতে চাইছে।। যদি আয়ানের সামনে এমন কথা বলতো ,, নির্ঘাত বেচারা মরে ভূত হয়ে যেত।। গুছিয়ে রাখা ব্যাগটা আয়রার কাধে পড়িয়ে দিয়ে ,,,কোলে তুলে নিলো।নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে।।

__________________

পড়ন্ত বেলায় আয়রা ছাদে বল দিয়ে খেলছে।। আর তার পাশে আয়ান ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।।আজ কতোদিন পর গোধূলি দেখছে তার হিসেব নেই। একপ্রকার আয়রার বায়না মেটাতে ছাদে আসা।। বৃহস্পতিবার হওয়া আজকে আয়রার হাফ ক্লাস ছিলো।।তাই দুয়ান গিয়ে নিয়ে এসেছে।। প্রতিদিন ইশরা নিয়ে আসে ,, দুপুরে খাইয়ে দিয়ে আবার চলে যায়।।প্রায় আধ ঘন্টা সময় বের করে আসে।।সেই সময়টুকু এসিস্ট্যান্টরা সামলে নেয়।।আয়রা সারা বিকেল জয়ী আর জারার (কাজের লোক আর তার মেয়ে) সাথে থাকে।। অবশ্য আজকে ইশরা আসতে চেয়েছিলো ,, কিন্তু দুয়ান জানালো আয়রা খেয়ে নিয়েছে।।তাই আসেনি।।তবে ফোনে কথা হয়েছে।।

— আয়ান ,, আয়ান!!( পেছন থেকে দিবা)

নিজের নাম অন্যের মুখে শুনে পেছনে তাকালো আয়ান ।দিবা ডাকছে।।কেউ কিছু বলার আগেই আয়রা দৌড়ে গেল আয়ানের কাছে ।। শার্ট টেনে টেনে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো…

— আচ্ছা ”নতুন ভালো আঙ্কেল” তোমার নাম কি আয়ান!!

— হ্যা সোনা!! আমার নাম আয়ান!!(হাঁটু গেড়ে নিচে বসে ,, আয়রার সমান হয়ে)

— জানো ,,আমার বাবার নামও আয়ান !! আয়ান আহম্মেদ অভি!! তোমার নামও কি আয়ান আহম্মেদ অভি?? নাকি শুধু আয়ান??(কৌতূহল নিয়ে আয়রা)

আয়রার কথায় স্তব্দ হয়ে গেল আয়ান।।মুখ থেকে একটাও কথা বের হচ্ছে না।। আয়ানের মনে হচ্ছে,, এটা কি তার প্রিন্সেস আয়রা ।। নামটুকুও জিজ্ঞাসা করতে পারছে না।।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো দিবার ।।এমনিতেই ইশরাকে সহ্য করতে পারে না।। আবার আয়রা ।। আয়রাকে আয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো..

— এই বাড়িতে থাকিস বলে সব জায়গায় তোদের যেতে হবে।।বাবারো বলি হারি ।।জীবন বাঁচিয়েছে বলে সারাজীবন এখানেই রাখতে হবে।। কিছু টাকা দিলেই তো হয়ে যেত।। ইচ্ছে করছে ঠাস করে একটা..!!

হাত বাড়িয়ে মারতে নিলেন ইশরা এসে দিবার হাত ধরে ফেলে ।।ইশরার চোখ মুখ রাখে লাল হয়ে আছে।। পরক্ষনেই ঠাস দুটো চড় পড়লো দিবার গালে।। মায়ের এমন রুপ দেখে আয়রা ভয়ে লাফ দিয়ে আয়ানের কোলে।।

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here