অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব ::১৮
#ইফা_আমহৃদ
চোখের অশ্রু টলটল করছে।।না চাইতেও কয়েক ফোঁটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো ।।বড্ড অনুসূচনা হচ্ছে,, নিজের করা কাজের জন্য।। শুধুমাত্র তমোনার জন্য আজ ইশরা সবার উপর তপ্ত অভিমান করে আছে।। এতো গুলো বছর সবার থেকে দূরে সরে ছিলো।। তমোনাকে কিছু বলতে না দিয়ে তৃক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইশরা বললো..
— ” দেখ মা !! আমি তোমার উপর কোনো প্রকার রাগ করে নি !! হয়তো তোমার মেয়ে হিসেবে এটাই আমার প্রাপ্য ছিল।।তবে কি জানো,, তুমি আমার মা !! হাজার কথার ভীড়ে এটাই সত্যি।।তাই তোমার কন্ঠধ্বনি শুনতে আমি ভুল করতে পারি না”।।(অভিমানী সুরে ইশরা)
— “ইশরা আগে আমার কথাটা শোন।।হ্যা তোকে ফোন করে আসতে বলেছিলাম,, আয়ানের সামনে মিথ্যা বলেছিলাম।। কিন্তু তার কারন আছে” !!
— “কি কারন,, সেটাই জানতে চাই” (তমোনাকে থামিয়ে দিয়ে ইশরা)
— “কারন মেঘ আমাকে বাধ্য করেছিলো !! শুধু তোর বাবা জন্য!!আমি ভাবতে পারি নি,, আয়ান এভাবে তোকে
— “ব্যাস আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।।তবে তোমার কাজে আমি মোটেও কষ্ট পাই নি।।স্বামী স্ত্রীর মাঝে একজন তৃতীয় ব্যক্তি এসে সম্পর্কটা নষ্ট করে দিলো।।তবে আমার কষ্ট হয়েছে ,, তোমার জন্য নয় ।। আয়ানের জন্য!! আমার ভালোবাসার মধ্যে বিশ্বাসের অভাব ছিলো।। আমি জানি আমার উপর আয়ানের কোনো দিন,, বিশ্বাস ছিল না।।আর অবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না।। শুধুমাত্র আয়রার মুখের দিকে তাকিয়ে আয়ানকে মেনে নিয়েছি।।তার মানে এই নয়,, আমি এখনো আগের ইশরা হয়ে গেছি।।যে আয়ানকে অন্ধের মতো ভালোবাসতো”।।
কথাগুলো বলে দাড়ালো না ইশরা।।চপল পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল তমোনার রুম থেকে।। দরজার পাশ থেকে সরে দাঁড়ালো আয়ান ।।ইশরাকে ডাকতে এসেছিলো।। এমন কথাগুলো শুনে ডাক দেওয়ার ক্ষমতা আর হয়ে ওঠে নি।। তমোনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ইশরার যাওয়ার দিকে।।
_________________________________
ঘড়ির তিনটা কাঁটা একসাথে একটার ঘরের মাঝবরাবর এসে পৌঁছেছে।। তিনবার টিক টিক শব্দ করে পূর্নরায় আবার সামনের দিকে চলতে শুরু করল।।সবাইকে জানান দিচ্ছে এখন মধ্যেরাতের প্রথম প্রহর শেষ হয়ে দ্বিতীয় প্রহরে পড়েছে।।
ঘড়ির কাঁটা এক মুহুর্ত স্তব্দ হয়ে থাকছে না।।কেবল সামনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।।একটু থামলে মনে হয়,, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে।। পৃথিবীতে কিছু জিনিস আছে যাদের কাজ এগিয়ে যাওয়া।।থেমে গেল তো বাস্তবতার কাছে হেরে গেল।।
আয়ান আর আয়রা বেডের ওপর শান্তমনে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে আছে।।কাত হয়ে শুয়ে আছে আয়ান।আর আয়ানের হাতের উপর নিদ্রায় আয়রা।। মাত্র রুমে প্রবেশ করলো ইশরা।।বাবা মেয়ের জ্বালায় রুমে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো তার কাছে।।কখনো জোড়ে চিৎকার করে কান ফাটিয়ে দিচ্ছে,,কখনো দৌড়াদৌড়ি করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।।তাই ইশরা নিচে বসে ছিলো এতোক্ষণ।।পুরো রুম জুড়ে বড় বড় টেডি ,, চকলেটের রেপার ,, জামা কাপড়,,আরো বিভিন্ন রকম খেলনার ছড়াছড়ি।।আজ প্রথমবার ইশরার কাছে মনে হচ্ছে,,এটা কোনো বাচ্চার থাকার ঘর।।তবে বাচ্চা আয়রা নয় ,, তার পাপা আয়ান।। মৃদু হাসলো ইশরা।।দেরী না করে নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো।।ফোনটা হাতে পেয়ে পরপর কয়েকবার ছবি তুলে রাখলো ইশরা।।বাবা মেয়ের বন্ধন যেন সারাজীবন থাকে ।। হঠাৎ করেই মাথায় চারা দিয়ে উঠলো রৌদ্র জুবায়ের এর কথা।।তমোনা কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি।।পারে নি বললে ভুল হবে বলতে দেয় নি।।তমোনা এখানে পড়ে আছে তাহলে রৌদ্র জুবায়ের কোথায়।। সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।।আর ভাবলো না সে,, পুরো রুম ভালো ভাবে গুছিয়ে নিলো।।বেডের কোণে ভাজ করে রাখা ব্লাঙ্কেটটা খুলে ভালোভাবে আয়ান আর আয়রার শরীরে পেঁচিয়ে দিলো।।কাবার্ড থেকে অর্ধগলা নেভানো ক্যান্ডলগুলো বের করে জ্বালিয়ে নিলো।।অতঃপর লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।।
।।।।
সবে চোখ লেগে এসেছিল ইশরা।।তখনই হালকা আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো।। মৃদু আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,, আয়ানের বালিশ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই আয়ানের ,, সে তন্দ্রায় ব্যস্ত।।আয়ানের সাথে থাকতে মাঝে মাঝে এমন হতো।। তখন আয়ানের বুকে ইশরা ঘুমিয়ে থাকতো ,, যদি ইশরার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে তাই আয়ান তুলতো না।।বালিশ ছাড়াই ঘুমিয়ে থাকতো।হয়তো আজ আয়রার জন্য বালিশ তুলছে না।। হাই তুলে উঠে বসলো ইশরা।। নিচ থেকে বালিশ তুলে কিছুক্ষণ আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল।।বালিশটা এগিয়ে দিতে গিয়েও কয়েকবার থেমে গেল ।।কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।। পরক্ষনে আবার কি মনে করে একটু ঝুঁকে আয়ানের মাথাটা আলতো হাতে তুললো ।।বালিশটা ঠিক করে ,, মাথাটা পূর্নরায় বালিশে রেখে দিলো।। একটু নড়েচড়ে শুয়ে পড়লো আয়ান।।হালকা ধাক্কায় চুলের খোঁপা খুলে গেল।। কোমর ছাড়িয়ে আয়ানের মুখের উপর ।।অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ইশরা।। নিজের নাকের কাছে চিরচেনা স্মেল অনুভব করতে প্রশস্ত হয়ে শুয়ে পড়লো।। দমে গেল ইশরা।। কিছুক্ষণ ঝুঁকে থাকার পর উঠে আসার চেষ্টা করলে।। হঠাৎ চুলে জোরে টান অনুভব করলো ।। আহহহ করতে গিয়েও মুখে চেপে থেমে গেল।। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখল আয়ানের শার্টের বোতামের সাথে পেঁচিয়ে গেছে।।ইশরা একটু পর পর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।। এদিকে বোতামের টানে একটু পর নড়েচড়ে উঠছে আয়ান।। অনেকক্ষন পরেও যখন চুল ছাড়াতে ব্যর্থ হলো,, তখন জোরে আঘাত করল শার্টের বোতামের উপর ।।সাথে চোখ মেলে তাকালো আয়ান ।।ইশরাকে নিজের এতো কাছে দেখে প্রথমে ভরকে গেলো সে।। পরক্ষনে সবটা বোধগম্য হলে ইশরাকে নিজের বুকে সাথে জড়িয়ে নিল।।হাত থেকে আয়রার মাথাটা বালিশে রেখে শার্ট খুলে ইশরার হাতে ধরিয়ে দিল।।ইশরার মুখের দিকে ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে আছে।।
— “আসলে বালিশটা পড়ে গিয়েছিল,,তাই”
আর বলতে পারলো না ইশরা।।হাত বাড়িয়ে থামিয়ে দিল আয়ান।।শান্তকন্ঠে বললো..
— ”তুমি আমার ওয়াইফ ।। তুমি তখন ইচ্ছে আমার কাছাকাছি আসতে পারো ।। সেই কথাগুলো জিজ্ঞাসা করার রাইট আমার নিজেরও নেই।।কারন ওয়াইফ হিসেবে এক্সপ্লেন দিতে তুমি বাধ্য নয়”।।
কথা বাড়ালো না ইশরা।। দ্রুত সোফায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।। একটু পর পিটপিট করে ডানচোখ খুললো ।। সাথে সাথে আবার বন্ধ করে নিলাম ।। আয়ান বেডে হেলান দিয়ে এক ধ্যানে ইশরার দিকে তাকিয়ে আছে।। বেশকিছুক্ষন পর আবার চোখ খুললো এবারো আয়ান তাকিয়ে আছে।। তাই ইশরা অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।। ইশরার এমন কান্ড দেখে হাসতো আয়ান ।।দেখে মনে হচ্ছে,,যেন মাছ চুরি করতে করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।।একদম বিড়াল।।
__________________
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইশরা।। আয়ান আয়রাকে তৈরি করে দিচ্ছে।।আয়রা বায়না ধরেছে আয়ানের কাছে চুল বাঁধবে।।তাই মেয়ের আবদার পূরন করতে আয়ান বাঁধা দেয় নি।।
অনয়া আর দুয়ানের বিয়ের আগ পর্যন্ত কোর্টে যাবে না ইশরা।। সবকিছু ভালোভাবে এসিস্ট্যান্টকে বুজিয়ে দিয়েছে।।আজকে আয়রাকে স্কুলে দিয়ে একবার চেম্বারে গিয়ে সবটা যাচাই করে আসবে।।আয়রার কথার ঘোর কাটলো ইশরার…
— “পাপা তুমি সামান্য চুলগুলো আঁচড়ে দিতে পারছো না।। এই নিয়ে ৮ বার ট্রাই করেছো কিন্তু একবারও পারোনি।।তোমার দ্ধারা কোনো কাজ হয় না।।কই মাম্মা করলে তো এমন হয়না”।।
মেয়ের কথা শুনে মুখ চেপে হাসলো ইশরা।। শেষে কিনা মেয়ের জন্য লজ্জা পেতে হচ্ছে।।
আয়রা অপেক্ষা করলো না আয়ানের হাত থেকে হেয়ার ব্রাশটা নিয়ে নিলো।।ব্রাশ দিয়ে আয়ানের মাথার দুই পাশে দুটো ঝুঁটি করে দিলো।।এবার আয়ানের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে পড়ে গেল ইশরা।।
— দেখেছ পাপা এইভাবে করতে হয় !! ( কোমরে হাত দিয়ে আয়রা)
বের হওয়ার সময় হয়ে এসেছে ।। তাই আর অপেক্ষা করলো না আয়ানের জন্য ,, ইশরা আয়রার চুলে ঝুঁটি করে দিলো ।।আয়ানকে ঝুঁটি করতে দিলো আজ তো করতে পারতো না ,,আগামী ছয় মাসে পারতো কিনা সন্দেহ।।যাতে আয়রার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত।।
আয়রাকে তৈরি করে ব্যাগ কাঁধে দিয়ে বেরিয়ে এলো তিনজনে ।।
চলবে..??