অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব ২৪

0
845

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৪ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

দুদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এই থামে তো আবার শুরু হয়। সেদিন রাতে জারা চিঠি লিখে বৃষ্টি মাথায় বাসা থেকে বেড়িয়ে আসে কারোর সাথে কিছু বলে নি। সাথে করে দরকারী যা আছে সব নিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। আর ও বাড়িতে যাবে না ঠিক করে নিয়েছে। ও বাড়ি থেকে আসার পরের দিন-ই ডিভোর্স পেপারটা ও বাড়িতে গিয়েছে।

সেই বাড়িটায় আবারও ফিরে এসেছে যে বাড়িটায় প্রতিটা কোণায় সৃতি জমে আছে। কতশত হাসি মজা, খুনসুটি, অভিমান প্রতিটা কোন জুড়ে। প্রতিটা কোণায় সেই আগের মতো জীবন্ত নেই মা নেই বাবা নেই খিলখিল করে হাসার শব্দ নেই তো জীবন্ত থাকবে কেমন করে। খুব করে জারা তার মা বাবাকে মিস করছে। এই বাড়িতে জারাকে শান্তি বেগম আসতে দিতেন না তেমন আসলেও বেশিক্ষণ থাকতো না। জারা যখন কলেজে একা যাওয়া আসা করতো তখন কলেজ বাদ দিয়ে এখানে আসত প্রায় তারপর অনেক দিন আর আডা হয় না পড়াশোনার চাপে ভুলে নি তবে আসতে মন চাই তো কিন্তু উপায় ছিল না যে। যখনি আসত কেঁদে কেটে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলত। এখনো এই আশা পর্যন্ত সব সৃতিচারণ গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কান্না পাচ্ছে জারার। তাই তো কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

প্রতি মাসে এ বাড়িটা পরিষ্কার করে বাড়ির কেয়ারটেকার কিন্তু তাও ময়লা। জারার আগেই সেই ছোট বেলার রুমে গেলো যেখানে তার সব জিনিস গুছিয়ে রাখা পুতুল গুলোর ওপরে ময়লা পড়ে কালো হয়ে গেছে। জারা খুব শখ করে রুমটা পিংক কালার করছিল পিংক কালার তার বড্ড প্রিয় ছিল। জীবনটা কত রঙিন ছিল। আর এখন সাদা কালো ছাড়া কিছু দেখতে পায় না।

জারা ভাংগা গলায় নিজে নিজে বলল

-‘ মৃত্যু কি কাছে না-কি বহু দূরে? এই ক্লান্তি নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না সবটা বিষাদে ভরপুর একটুকরো কি সুখ মিলবে না আমার জীবনে? না-কি এভাবেই চলে যাবে বাকিটা জীবন। নতুন কিছু কি ঘটবে না? যে ঘটনায় আমার জীবনটা আবার রঙিন হয়ে উঠবে? কিছু তো ম্যাজিক হোক আমার জীবনে আর কত কষ্ট লিখে রেখেছেন আমার ভাগ্য? ‘

জারার চোখ দিয়ে টুপটাপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।

-‘ নিজের নিজে ছাড়া আর কেউ নেই। আচ্ছা আমি বেঁচে আছি কিসের জন্য কার জন্য? নিজের জন্য? কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য তো কিছু থাকে কিছু তো একটা থাকে আমার তো তা-ও কিছু নেই ‘

কলিংবেল বেজে উঠলো। জারা চমকালো

-‘ এখন দুপুরে আবার কে এলো? ফুডপ্যাডা থেকে খাবার আসল না-কি? ‘

জারা চশমা খুলে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ভালো করে মুছে নিলো। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। শিরি দিয়ে দৌড়ে নেমে দরজা খুলে সেই মেয়েটা আর শানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জারার থমকে গেলো চোখমুখ শক্ত করে রইল আর যায় হোক নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে না রাজ জারা।

-‘ আপনারা? কি চায়? ‘

শান উত্তর না দিয়ে জারাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। জারা বাহুতে ব্যথা পেয়ে চোখ মুখ কুচকে গেলো। মেয়েটা এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জারা শানের পিছনে পিছনে গিয়ে চেচিয়ে উঠে বলল

-‘ কি সমস্যা কি? আপনাদের এখানে এসেছেন কেনো? ‘

শান থেমে গিয়ে পিছনে ফিরে জারা গলা চে-পে ধরে ওয়ালের সাথে লাগিয়ে বলল

-‘ একদম চেচাবি না গলা টি-পে মে-রে ফেলবো বড্ড বাড় বেড়েছে তোর ‘

জারার চোখ উল্টে যেতেই মেয়েটা এসে শানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জারাকে আগলে রেগে বলল

-‘ কি করছিস তুই? মেয়েটা ম-রে যাবে তো ‘

জারা কাশতে কাশতে চোখে পানি চলে আসলো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো মেয়েটার থেকে সরে বেসিনের গিয়ে মাথায় পানি দিতে লাগলো কয়েকবার গলা টানলো। বমি করলো। মেয়েটা গিয়ে জারা চশমা খুলে মাথায় ভালো করে পানি দিয়ে দিলো। জারা ক্লান্ত হয়ে মেয়েটার গায়ে ঢলে পড়ল। শান জারাকে দেখে চমকালো। দু’দিনে মেয়েটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ গুলো ফোলা চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। শানের নিজের প্রতি অপরাধ বোধ কাজ করলো। মেয়েটা কষ্ট করে জারাকে সোফায় এনে বসিয়ে অন্য দিকে গেলো তোয়ালে খুজতে লাগলো। শান জারার পাশে বসে দুহাতে মুখ ধরল। জারা ক্লান্ত চোখ মেলে তাকালো। শানকে দেখে ভয় পেলো। দূরে সরে আসতে চাইল শান দিল না। জড়িয়ে ধরলো জারাকে। জারা কিছু বলতে গিয়ে দেখলো গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ঘাড়ে গরম তরল পদার্থ অনুভব করতেই কেপে উঠল জারা বহু কষ্টে বলল

-‘ দূরে যান আমাকে মেরে ফেলতে আসছেন তাই না আমি সব জানি দূরে যান একদম আমার কাছে আসবেন না ‘

শান আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল

-‘ একদম মেরে ফেলব তোকে একদম আমাকে কষ্ট দিয়ে তোর খুব ভালো লাগে তাই না? দূরে গিয়ে কি সাদ পাশ হ্যাঁ তোকে আমি কখনো দূরে যেতে দিবো না বুকে আগলে রাখবো। ভালোবাসি তবুও বুঝিস না? ‘

জারা চমকালো! থমাকলো! মেয়েটার গলা শুনতে পেলো জারা

-‘ শান ‘

জারা এতোক্ষণ শানকে দু-হাতে আগলে না নিলেও এবার দু-হাতে আগলে নিলো শানকে হারানোর ভয় জমলো বুকে তার সাথে তো কখনো ভালো হয় না। শান জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই মুচকি হাসলো। চোখে জল মুখে হাসি অদ্ভুত লাগছে শানকে। শান যেনো বুকে শান্তি পেলো।

-‘ বাবাহ্! এতো ভালোবাসা তাহলে দূরে আসলে কেনো? আমার জন্য? তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো জারা আমি তোমার ভালোবাসা কেড়ে নিতে আসে নি জারা এতো ভয় পাওয়ার কিছু নাই ‘

জারা চমাকালো। কি বলল মেয়েটা? ও কি ঠিক শুনলো নাকি সব স্বপ্ন? মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here