অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_৪

0
1433

অদ্ভুত_অনুভূতি পার্ট_৪
#নুসরাত_জাহান_অংকুর

“‘ কি হইছে মায়া মা

‘” আব্বু কাল রাতে ও এসেছিল আমাকে নিয়ে যেতে আমি সত্যি বলছি

মায়ার কথায় সবার একে ওপরের দিকে তাকাচ্ছে। নিবিড় মায়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে

‘” তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে মায়া কাল রাতে তুমি ছাদে সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিল আজ সকালে বুয়া দেখছে

‘” তাহলে কি আমি মিথ্যে বলছি আমি ওকে দেখেছিলাম ও এসেছিল কাউকে ছাড়বে না কাউকে না (কাদতে কাদতে)

‘” মায়া কিছু নেই সব তোমার মনের ভুল বিলিভ মি

‘” না ও ছিল সত্যি ও ছিল

নির্ঝরের আব্বু নিজের চোখের পানি মুছে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় । মায়ার আব্বু আর নিবিড় মায়া কে বুঝাতে বেস্ত ।

মায়াকে অনেক কষ্ট বুঝিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

সোফার উপরে মায়ার আব্বু নির্ঝরের আব্বু আর নিবিড় বসে আছে।

‘” নিবিড় বাবা এখন কি করবে মায়ার অবস্থা তো খারাপ এর দিকে যাচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে তো

নির্ঝরের আব্বু করুন কণ্ঠে বলে

” আমি বলছি মায়া কে তোমরা এখান থেকে নিয়ে যাও । এই বাড়িতে নির্ঝরের অস্থিত্ব আছে মায়া এসবের মাঝে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে

‘” মায়া কে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া অনেকটা রিস্ক হবে আমি বলছি মায়ার পাশের রুমে আমার থাকার বেবস্থা করুন আর আমি মায়ার ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা ধরা পড়বে

মায়ার আব্বু বিরক্তি নিয়ে বললো

‘” নিবিড় তুমি মায়ার কথা ধরে বসে আছো তুমি জানো না ওর এখন মেন্টালি অবস্থা ভালো না

‘” আমি জানি আংকেল কিন্ত মায়ার চোখে আমি ভয় দেখেছি আর সেটা কি কারণে আমার না জানা পযর্ন্ত শান্তি নেই

‘” যা খুশি করো কিন্ত আমার মেয়ে আর নাতি কে সুস্থ অবস্থায় চাই

“‘ আমি চেষ্টা করছি

মায়ার আব্বু চলে গেলো নিবিড় আর নির্ঝরের আব্বু এখন ও বসে আছে

‘” আজ যদি আমার ছেলেটা থাকতো তাহলে মায়া কে কখনো কষ্ট পেতে দিত না

কেনো যে আমি আমার ছেলেটার প্রতি একটু নজর দিলাম না তাহলে আজ আমায় এই দিন দেখতে হতো না

‘” আংকেল আপনি প্লিজ শান্ত হোন আপনি এভাবে ভেংগে পড়লে কি চলবে । মানুষ একদিন না একদিন চলে তো যাবেই হয় দুইদিন আগে নয় দুইদিন পরে । আপন মানুষের হটাৎ চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারে না কিন্ত প্রকৃতি বলতে তো একটা নিয়ম আছে । উপরের একজন তো সেই ভাবে সব সেট করে রাখছে । সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না অতীত ভেবে কেনো বর্তমান কে নষ্ট করবো

‘” তোমার কথা ঠিক এখন আমার বেঁচে থাকার একটাই কারণ আমার নির্ঝরের অংশ

কথাটা বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো। আর নিবিড় ভাবতে থাকে মায়া যা বলছে সেই গুলো কি আসলে সত্যি নাকি অন্য কিছু

রাতে মায়া ঘুমিয়ে আছে আর নিবিড় সিসিটিভি ফুটেজে মায়া কে দেখছে । হটাৎ বাইরে কিছু একটা পরার আওয়াজ পায়

নিবিড় একবার সিসিটিভি দেখে বাইরে আসে কিন্ত কিছু পায় না ভালো করে দেখে একটা ফুলদানি পড়ে আছে

এদিকে
মায়া ঘুমিয়ে আছে তখন আবার সেই শীতল কণ্ঠে কেউ ডাকছে

‘” চড়ুই পাখি

মায়া উঠে বসে আর চারিদিক দেখতে থাকে তখনই আবার সেই শীতল কণ্ঠে কেউ ডেকে উঠে ।

‘” কে কে এখানে ? (ভয়ে ভয়ে)

তখনই জোরে হাসির শব্দ ভেসে আসে। মায়ার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ।

‘” এত তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে চড়ুই পাখি

মায়া খাট থেকে নেমে বলতে থাকে

‘” নির্ঝর কেনো তুমি আমাদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছ না কেনো? আমরা কি করছি বার বার কেনো এমন করছো

‘” আমি তো তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিতে চাই আমি কখনো চাই না আমার মায়া কষ্ট পাক

‘” তাহলে কেনো বার বার এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কি চাও কি তুমি

‘” আমি কি চাই সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো কোনো কিছু তো তোমার অজানা না

মায়া কিছুটা পিছিয়ে যায়

‘” না আমি কিছু জানিনা কিছু না চলে যাও চলে যাও (চিৎকার করে)

নিবিড় ফুলদানি ঠিক করে ঘরে এসে দেখে মায়া কার সাথে কথা বলছে

নিবিড় ভালো করে দেখে মায়া অতিরিক্ত ভয় পেয়ে আছে । নিবিড় আর এক মুহুর্ত দেরি না করে মায়ার ঘরে যায়

গিয়ে দেখে মায়া ফ্লোরে পরে আছে । নিবিড় মায়ার মুখে হাত দিয়ে বুঝতে পারে মায়ার কোনো সেন্স নেই

নিবিড় মায়াকে শুয়ে দিয়ে নিজের ঘরে যায় । আর আবার সিসিটিভি দেখতে থাকে

হটাৎ নিবিড় নিজের ঘরে কিছুর ছায়া দেখতে পায় । নিবিড় আস্তে করে পিছনে তাকাতেই দেখে মায়া চুরি হাতে দাড়িয়ে আছে

‘” মায়া তুমি এখানে

‘” ও কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না কাউকে না আমাকে নিজের সাথে নিয়েই যাবে তার থেকে ভালো আমি তুমি এক সাথে চলে যাই অনেক দূরে অনেক দূরে

নিবিড় এর কাছে মায়াকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কেমন পাগল এর মত করছে

‘” নিবিড় ও অনেক খারাপ আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না এভাবে তিলেতিলে মরার চেয়ে একবারে মরে যাই সেটাই ভালো

কথাটা বলে মায়া নিজের হাতের শিরা কেটে ফেলে আর সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে । নিবিড় দৌড়ে মায়ার কাছে যায়

‘” মায়া এসব কি পাগলামি কেনো করছো বললাম তো সব ঠিক হয়ে যাবে সব ঠিক করে দেবো আমি সব কিছু ঠিক করে দেবো

‘” ও আমাকে নিয়ে যাবেই

কথাটা বলতে বলতে মায়া সেন্সলেস হয়ে পড়ে। নিবিড় জোরে বাড়ির সবাই কে ডাকতে থাকে । মায়াকে বেড়ে শুয়ে দিয়ে মায়ার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

সবাই মায়ার পাশে বসে আছে মায়া এখনও সেন্সলেস অবস্থায় । নিবিড় নিরবতা ভেংগে বলে

‘” আংকেল মায়া কে আর এখানে রাখা যাবে আজ তো হাত কেটেছে কাল কি করবে সেটা কেউ জানে না আমি মায়া কে নিয়ে অনেক দূরে যেতে চাই

‘” যেটা ভালো বুঝ সেটাই করো

‘” মায়ার সেন্স ফিরার আগেই যেতে হবে নাহলে ও কখনো যেতে চাইবে না । ওকে আমি বাইরে নিয়ে গিয়ে একটা ভালো ডক্টর কে দেখাবো আমার মায়া সুস্থ হয়ে যাবে

” কিন্ত এখন ত কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে না আর এই জায়গা ও ভালো না এত রাতে

‘” আংকেল প্লিজ কিছুর বেবস্থা করো

“‘ আমি দেখছি

মায়ার আব্বু বাইরে যায় । নির্ঝরের আব্বু নির্ঝরের ছবি হাতে নিয়ে চোখের পানি ফেলে ।

নিবিড় মাথা নিচু করে বলে

‘” আংকেল আপনি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারেন । কিন্ত মায়া কে আমি এখানে রাখতে পারবো না আমাকে মাপ করবেন

‘” নারে বাবা আমি কিছু মনে করিনি । যেখানে আমার ছেলেটা নেই সেখানে আমি কি করে ওকে বেধে রাখবো তোরা যা আর মায়া কে সুস্থ কর আমি এখানেই ভালো আছি

নিবিড় কিছু বললো না কি বা বলবে । নির্ঝরের আব্বুর অবস্থা ভালো না শেষ বয়সে এসে সবাই ছেলে বউ নাতি নাতনি নিয়ে থাকতে চাইবে কিন্ত সবার কপালে তো সব সুখ হয় না

মায়ার আব্বু আসে

‘” নিবিড় কোনো গাড়ির বেবস্থা করতে পারলাম না একে ত রাত তার উপর আবার লকডাউন

নির্ঝরের আব্বু এবার বলে

” আমি বলছি কি নির্ঝরের মৃত্যুর ত অনেক দিন হলো তাই ভাবছি কাল গরীব দের খাওয়াবো । তোরা না হয় পরে যাস এখনও তো মায়া নির্ঝরের স্ত্রী

‘” আচ্ছা ঠিক আছে পরশু আমরা চলে যাবো আমি সব বেবস্থা করে রাখছি আর মায়ার দিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে

নিবিড় মায়ার হাত ধরে রাত ত পার করে দিল । পরের দিন সকালে মায়ার সেন্স ফিরে।

মায়া নিবিড় খুঁজছে কিন্ত বাড়িতে কোনো ছেলে নেই তাই সব নিবিড় কে করতে হচ্ছে ।

নিবিড় কিছুটা কাজ সামলে মায়ার সামনে আসতেই মায়া নিবিড় কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়

‘” নিবিড় আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও আমি তোমাকে হারাতে চাই না কিছুতেই না

জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি আর কিছু হারাতে চাই না প্লীজ নিবিড়

‘” মায়া শান্ত হও আমি আছি তো কাল তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব প্লিজ একটু শান্ত হও আজ নির্ঝরের কলমা। এই কাজ শেষ হলে কাল তোমাকে নিয়ে যাবো প্রমিজ

‘” সত্যি তো

‘” হুম

‘” পাক্কা প্রমিজ

নিবিড় মুচকি হেসে বলে

‘” হুম পাক্কা প্রমিজ । কিন্ত যেই টুকু সময় আমরা এখানে আছি তুমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো থাকবে বুঝছো

মায়া মাথা নাড়িয়ে হা বলে। নিবিড় মুচকি হেসে বাইরে যায় । মায়া ঘরে বসে বোরিং লাগছিলো তাই সে একটু হাঁটতে বাইরে যায় ।

বাইরে এসে দেখে নির্ঝরের বড়ো একটা ছবি । ছবিতে নির্ঝর হাসছে ।

মায়া ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে তখনই মায়ার মাথায় কেউ হাত দিল

মায়া তাকিয়ে দেখে নির্ঝরের আব্বু

‘” কিরে মা নির্ঝরের কথা মনে পড়ছে

মায়া মাথা নিচু করে নেয়।

” আল্লাহ আমার ছেলেটার সকল পাপ মাপ করুন

তখনই মায়া বলে

‘” ও যে পাপ করছে সে পাপ আল্লাহ কখনো মাপ করবে না কখনো না । বেঁচে থাকতে কেউ ওকে মাপ করেনি তো মরার পর আল্লাহ ওকে ওর কাজের জন্য কঠিন শাস্তি দেব

পাপ কখনো বাপ কে ও ছাড়ে না

কথাটা বলে মায়া ছাদে চলে যায় । আর নির্ঝরের আব্বু মায়ার কথার মানে খুঁজছে

মায়া ছাদে গিয়ে নিচে দোলনায় বসে বসে পুরনো কথা ভাবছে

“”অতীত ভালো হক বা খারাপ
সারাজীবন মনে থেকে যায়
চাইলে ও মুছে ফেলা যায় না

চলবে

(গল্প নিয়ে কিছু কথা আমার এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবে এর সাথে কোনো মিল নেই । আর এই গল্পটা মনের অবেগ থেকে লিখছি তাই বাস্তবের সাথে মিলাতে পারবো না । একটু ধর্য ধরেন সব বুঝতে পারবেন গল্পটা বেশি বড়ো করবো না )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here