অদ্ভুত_অনুভূতি নুসরাত_জাহান_অংকুর পার্ট_৭

0
1160

অদ্ভুত_অনুভূতি
নুসরাত_জাহান_অংকুর
পার্ট_৭

মায়া সামনে থাকা মানুষের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হয়তো এখন এই সময়ে এখানে আশা করেনি।

‘”কিহলো আমাকে দেখে খুব অবাক হচ্ছো ? আমি জানতাম তুমি কিছু একটা জানো যার জন্য এমন করছো আজ আমাকে সব সত্যি বলবে

মায়া মাথা নিচু করে নেয়। নিবিড় আবার বলে

‘” কিহলো বলো নির্ঝর কে কেনো মারছো? তুমি আমার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছিলে সেটা আমি জানতাম তাই তো কাল রাতে তোমাকে দেখে ও কিছু বলি নি আর আজ আমি বের হবার পর তোমার আব্বু ফোন করে আমাকে বলে তুমি বের হয়েছো আমি তোমার পিছু নি তারপর এখানে দেখলাম আমার বাসায়

মায়া এবার কাপা কাপা ঠোটে বলতে শুরু করে

‘” আমি নির্ঝর কে মারিনি আমি ওকে ভালবাসতাম ওকে মারার ক্ষমতা আমার নেই।

‘” মিথ্যে বলবে না নির্ঝরের মাথায় অনেক আঘাত ছিল আর

‘” নিবিড় বিশ্বাস করো আমি নির্ঝর কে মারিনি সেদিন

ফ্ল্যাশব্যাক

নির্ঝর আর মায়ার বিবাহবার্ষিকী নির্ঝর মায়াকে আর পরিবারে সবাই কে শপিং এ পাঠায় । নির্ঝরের কিছু একট একাজ তাই সে যায়নি । মায়া শপিং এ না গিয়ে ডক্টর এর কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে নির্ঝরের অফিসে যায় কিন্ত ম্যানেজার বলে নির্ঝর বাসায় গেছে মায়া ও বাসায় যায়। নির্ঝর কে সারপ্রাইজ দেবে বলে।

বাসায় পৌছে মায়া চুপিচুপি নির্ঝরের ঘরে যায় কিন্ত সেখানে অন্য একটা মেয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ছিল । নির্ঝর মেয়েটাকে দূরে সরাতে চাইছে কিন্ত মেয়েটা ছাড়ছে না

মায়া এসব দেখে চলে আসতে গেলে একটা কথায় থেমে যায়। মেয়েটা বলছে

‘” তুমি যদি আমাকে অ্যাকসেপ্ট না করো তাহলে আমি মায়াকে বলে দেবো তুমি নিবিড় কে মারতে চেয়েছিলে

মায়ার পা অবশ হয়ে যায় যাকে এত ভালোবাসত সে তার বেস্টফ্রেন্ড কে মারতে চেয়েছিল । মায়া ওখানেই দাড়িয়ে যায় সব টা শুনার জন্য

নির্ঝর হাতের গ্লাসটা রেখে মেয়েটার দিকে হেসে বলে

‘” আমার সত্যি যে জেনে গেছে তাকে কি আমি ছেড়ে দিয়েছি । মায়াকে আমি খুব ভালোবাসি আর ওকে পাওয়ার জন্য আমি নিবিড় আর ওর বোন কে মারতে পারলে তোমাকে কেনো পারবো না ।

মেয়েটা কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বলে

‘” নির্ঝর আমি তোমাকে ভালোবাসি

‘” আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি আমি শুধু মায়াকে ভালোবাসি আর ওর জন্য আমি সব করতে পারি দরকার পড়লে কাউকে খুন করতে পারি । নিবিড় কে আমি কখনো মারতাম না কিন্ত সালা আমার ড্রাগ এর কথা জেনে গিয়েছিল তাই ওকে আর ওর বোনকে মারতে ভালো কিন্ত ভাগ্য আমার সাথে হলো না আবার সেই নিবিড় আমাদের মাঝে ফিরে আসলো । শালার প্রাণ কই মাছের প্রাণ এর মারলাম তাও মরলো না

যাই হোক ওকে নিয়ে আমার টেনশন নেই কারণ নিবিড় অ্যাকসিডেন্ট এর পর ওর ওইদিন এর কিছু মনে নেই শুধু জানে ওর আর ওর বোনের অ্যাকসিডেন্ট হইছিলো এর যদি মনে পড়ে ও মায়াকে অনেক ভালোবাসে আর মায়ার জন্য হলেও কাউকে কিছু বলবে না

‘” আমি মায়াকে সব বলে দেবো

‘” আগে বেঁচে নাও

কথাটা বলে নির্ঝর মেয়েটার গলায় ইঞ্জকশন দিয়ে দেয় সাথে সাথে মেয়েটার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মারা যায় । নির্ঝর ওর লোকদের বলে মেয়েটাকে মাটি দিতে বলে।

মায়া এসব দেখে ভয়ে চিৎকার দেয় আর সাথে সাথে নির্ঝর বাইরে এসে দেখে মায়া দাড়িয়ে আছে

নির্ঝরের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে ।

‘” মায়া তুমি যা দেখেছ সব ভুল তুমি এখানে কেনো আসলে তোমার তো শপিং এ থাকার কথা

মায়া কোনো কথা বলছে না পিছিয়ে যাচ্ছে নির্ঝর এগিয়ে আসতে গেলে মায়া চিৎকার করে বলে

‘” তুমি আসবে না আমার কাছে আসবে না তুমি খুনি খুনি খুনি

‘” মায়া প্লিজ আমার কথা শুন আমি যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে বিশ্বাস করো

‘” তোমার মত খুনি কে বিশ্বাস করা যায় না

দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে । ধস্তাধস্তির মাঝে দুইজন কিনারায় চলে আসে মায়া নির্ঝর কে ধাক্কা মারে দূরে সরিয়ে দিতেই নির্ঝর তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায় আর সাথে সাথে রক্ত পড়তে শুরু করে

মায়া ওখানেই বসে পড়ে মায়া কখনো নির্ঝর কে মারতে চাইনি ভুল করে হোক আর যেই ভাবেই হক মায়ার হাতেই নির্ঝরের শেষ নিশ্বাস

বর্তমান

মায়া নিবিড় এর সামনে বসে কাদচে । নিবিড় কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না ।

মায়া কাদতে কাদতে বলে

‘” তুমি আমাকে একবার ও বললে না আমি জানি তুমি নির্ঝরের সামনে সব ভুলে যাওয়ার নাটক করছিলে যাতে সে আমার কোনো ক্ষতি না করে

নিবিড় এবার মায়ার কাছে গিয়ে বলে

‘” মায়া আমি

‘” থাক কিছু বলতে হবে না আমি নির্ঝর কে খুব ভালোবাসি তার মানে এই না যে ওর সব অন্যায় কে ভালোবাসবো । আমার জন্য রাত মারা গেছে তোমার এই অবস্থা আমি তোমাকে আর হারাতে চাই না অনেক সহ্য করেছি আর না

আল্লাহ নির্ঝর কে ওর পাপের শাস্তি দিয়েছে ।

‘” কিন্ত মায়া আমি তো এখানে

‘” নিবিড় যে ভালোবাসে সে কখনো কারোর জীবন নিতে পারে না

নির্ঝর কি আমাকে সবটা বলতে পারতো না তাহলে তো আমি ওকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতাম

কাদতে কাদতে মায়ার হেচকি উঠে গেছে নিবিড় মায়াকে দেখছে খুব গভীর ভাবে

‘” ও আমার জীবনে সব থেকে বড় ভুল he is the biggest mistake of my life

ওর জন্য আমি কাদব না পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না ওকে ওর পাপের শাস্তি বেঁচে থাকতে ও দিতে হইছে আর মরার পর ও দিতে হবে । হয়তো ওর আজাব শুরু হয়ে গেছে

মায়া নিজের চোখের পানি মুছে নেয় ।

‘” বাসায় যেতে হবে চলো

নিবিড় কিছু বললো না মায়া নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিবিড়ের সাথে যায় । গাড়িতে কেউ কারোর সাথে কথা বলে নি । মায়া বাসায় এসে ঘরে যায়

নিবিড় ও নিজের ঘরে দরজা বন্ধ দেয় আজ হয়তো ওর একটু একা থাকা দরকার । এতদিন যেই সত্যি সবার থেকে লুকিয়ে গেছে আর এভাবে ওর সামনে চলে আসবে ভাবতে পারে নি হয়তো এখন মায়াকে ছেড়ে ওর যাওয়ার সময় হয়ে গেছে

মায়াকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মনে হতেই নিবিড়ের বুকে চিন চিন বেথা করছে ।

এদিকে মায়া সাওয়ার ছেড়ে কাদঁছে। নিবিড় কি ওকে ভুল বুঝবে এই সব ভেবে মায়ার কান্না আরো বেড়ে যাচ্ছে

‘” আমি নির্ঝর এর ক্ষতি চাইনি কিন্ত কি করে কিভাবে কি হলো বুঝতে পারিনি প্লিজ নিবিড় আমাকে ছেড়ে যেও না । আমার জন্য তোমার অনেক কস্ট হইছে আমি জানি চাইলে ও আমি সব ঠিক করে দিতে পারবো না

মায়া সাওয়ারের নিচে কাদতে থাকে । আর বন্ধ দরজায় নিবিড় কাদতে থাকে ।

দুইজনের অনভূতি দুইরকম এই অনুভুতির নাম কেউ জানে না তাই ত এই অনুভুতির নাম #অদ্ভুত_অনুভূতি

১ঘণ্টা পর মায়া গোসল সেরে ঘরে এসে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে । চোখ দিয়ে এখনও পানি পড়ছে

সব কিছু এভাবে এক পলকে শেষ হয়ে যাবে সেটা কেউ আশা করেনি ।

মায়া বিছনায় বসে আসে তখন ওর পুরনো কথা মনে পড়ে যায়

মায়া যখন কোনো ভুল করত নিবিড় রাগ করে বসে থাকতো আর মায়ার সেই রাগ ভাঙ্গতে হতো একবার তো মায়া জ্বরের মধ্যে ice cream খেয়েছিল আর জ্বর আর বেড়ে গিয়েছিল ।

কিছুদিন পর যখন মায়া সুস্থ হয়ে যায় নিবিড় মায়ার সাথে কোনো কথা বলেনি মায়া কত কিছু করে নিবিড়ের রাগ ভাঙ্গতে চেয়েছে কিন্ত পারে না ।

নিবিড় বসে ছিল মায়া নিবিড়ের চুল ধরে টানছিল তাও নিবিড়ের রাগ ভেংগে নি

শেষে মায়া রেগে বলেছিল

‘” তুমি যদি এভাবে কথা না বল দেখো একদিন আমি অনেক দূর চলে যাবো

তাতে নিবিড়ের রাগ আরো বেড়ে যায় এবার মায়া এক বালতি পানি এনে নিবিড়ের মাথায় ঢেলে দেয় । নিবিড় ও কম কিসে সে মায়া নিয়ে গিয়ে পানিতে ফেলে দেয়

মায়া ডুবে যাওয়ার ভান করতেই নিবিড় সব ভুলে মায়া কে তুলে আনে

‘” কে জানি আমার উপর রাগ করেছিলো

‘” শেষ বারের মত মাপ করেছি এর পরের বার হলে তুমি না আমি ছেড়ে চলে যাবো

‘” এমন কোনো দিন হবে না মায়াবীর কখনো আলাদা হতে পারে না

মায়ার সেই কথা মনে উঠতেই হেসে দেয়। নিবিড় যদি রাগ করে তাহলে মায়া আবার পানিতে ঝাঁপ দেবে। কথাটা ভেবেই মায়া হেসে দেয়

কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে নিবিড়ের ডাইরি বের করে যেটা আসার সময় নিয়ে আসছিলো ।

মায়া ডাইরির উপরের লেখার উপর হাত রাখে বড়ো করে লেখা

_______________অদ্ভুত_অনুভূতি___________

মায়া এর মানে জানে না তবে এটা বুঝতে পারছে এর মধে এমন কিছু আছে যেটা নিবিড়ের খুব কাছের । এই ডাইরি কখনো নিবিড় কাউকে হাত দিতে দেয়নি । মায়া ও কখনো জোড় করে নি হয়তো খুব কাছের কিছু আছে

মায়া প্রথম পৃষ্ঠা খুলে পড়তে থাকে

~জানো ডাইরি তোমাকে এনেছি আমার মনের অনুভুতির প্রকাশ করার জন্য জানিনা আজ কয়দিন আমার কি হইছে তবে কেমন একটা #অদ্ভুত_অনুভূতি হচ্ছে যার কোনো নাম নেই । কি করবো বলো না ডাইরি এই অসস্তি থেকে কি করে মুক্তি পাবো । এত দিন আমার এই অনুভূতি হয়নি কিন্ত আজ কয়দিন ধরে হচ্ছে

কেনো কিসের জন্য সেটা আমি জানিনা তবে এই অনুভূতি আমাকে খুব অসস্তি দিচ্ছে

পরের পৃষ্টায় মাথা একটা ছবি পেলো পিন মারা।

মায়া ছবিটা দেখে মুচকি হাসি দেয়

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here