অদ্বিতীয়া শেষ পর্ব

0
151

#অদ্বিতীয়া

#অন্তিম_পর্ব

#নুজাইফা_নূন

-“ইরহান তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অদ্বিতীয়া গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে ইরহানের বিছানার পাশে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইরহান কে দেখে বললো, ঘুমন্ত অবস্থায় কি মায়াবী লাগছে আপনাকে।মনে হচ্ছে সদ্য জন্ম নেওয়া নিষ্পাপ শিশু। কিন্তু কেউ না জানুক আমি জানি আপনি একটা খু’নী । নিজের আসল চেহারা যাতে কারো সামনে প্রকাশ না পায় সেজন্য পলি কে খু’ন করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছেন।যাতে মানুষ ভাবে পলি আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছে।সেটার প্রমাণ স্বরূপ আবার সু’ই’সা’ই’ড নোট ও লিখে রেখেছেন। বাহ্ কি দারুন আইডিয়া।আসলে তুই কোন মানুষের কাতারে পড়িস না ইরহান। তুই একটা জা’নো’য়া’র ।মানুষ রুপি জা’নো’য়া’র।একটা জা’নো’য়া’রের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই বলে অদ্বিতীয়া ইরহানের মুখের উপর বালিশ চেপে ধরলো বললো, তোর মতো নর্দমার কীট বেঁচে থাকা মানে পলির মতো হাজার টা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু এই অদ্বিতীয়া আর কোনো মেয়ের সাথে অন্যায় হতে দিবে না।ইরহান তখন বাঁচার জন্য ছটফট করতে লাগলো।এক পর্যায়ে ছটফট করতে করতে তার হাত পা স্থির হয়ে গেল।যা দেখে অদ্বিতীয়া পৈশাচিক হাসি হেসে নিজেকে বাহবা দিয়ে বললো, বাহ্ অদ্বিতীয়া বাহ্ একটা জা’নো’য়া’রে’র বিনাশ করলি তুই।”

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় জারার।জারা তড়িঘড়ি করে উঠে ওয়াশরুম থেকে অযু করে ফজরের নামায শেষ করে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে জায়নামাজ গুছিয়ে নির্ধারিত স্থানে রেখে দিয়ে রান্নাঘরে যায়। মুক্তি বেগম সবার জন্য নাস্তা তৈরি করছেন।আর তার দুই জা তাকে এটা ওটা দিয়ে সাহায্য করছে।জারা কে রান্না ঘরে দেখেই মুক্তি বেগম বললেন,

-“তুমি এতো সকাল সকাল নিচে আসতে গেলে কেন মা?তোমার অসুস্থ্য শরীর নিয়ে এতো সকালে উঠার প্রয়োজন নেই।যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তখন ইজহান আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না।”

-” আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন মা।আমি একদম ঠিক আছি।”

-” তবু ও এই সময়ে তোমার সাবধান থাকা উচিত।”

-” সবসময় শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগে না মা।আমি আপনাদের কাজে সাহায্য করি?”

-” একদম ই না। কাজের জন্য আমি আছি, মেজো সেজো আছে , অদ্বিতীয়া আছে।আমরা সবাই সবটা সামলে নিবো।তোমাকে কিছু করতে হবে না।”

-“আচ্ছা মা আপনারা সবাই এখানে রয়েছেন কিন্তু অদ্বিতীয়া কে দেখছি না যে? অদ্বিতীয়া কি এখনো নিচে আসে নি?”

-” না তো। গতকাল পলির দাফন কাফন শেষ করার পর অদ্বিতীয়া কে আর দেখতে পায় নি।রাতে কিছু খায় ‌ও নি মেয়েটা।কতোবার ডাকা হলো খেতে আসার জন্য। কিন্তু সে ক্ষুধা নেই বলে এড়িয়ে গেলো। আসলে অদ্বিতীয়া পলি কে খুব ভালোবাসতো।বিয়ের পর থেকেই সবসময় পলির সাথে থেকেছে।পলির এমন মৃ’ত্যু মেনে নিতে পারে নি অদ্বিতীয়া।বড্ড ভেঙ্গে পড়েছে।”

-” ঠিক আছে মা আমি গিয়ে দেখছি।”

-” আচ্ছা যাও। সাবধানে যেও।”

-“জারা ইরহানের রুমে এসে দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো।জারা রুমের ভেতর প্রবেশ করে অদ্বিতীয়া কে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। অদ্বিতীয়া বিধ্বস্ত অবস্থায় ফ্লোরে বসে রয়েছে। শাড়ির আঁচল ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে , দু চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।যেনো মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে।জারা অদ্বিতীয়ার পাশে বসে অদ্বিতীয়া বলে ডাক দিতেই সে চমকে উঠে বললো, আমি ছুবে না আপু। আমি একটা খু’নী।”

-” কি আবোল তাবোল বকছো? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?”

-” সত্যি বলছি আমি তোমার দেবর কে খু’ন করেছি। বিশ্বাস না হয় নিজে চোখে গিয়েই দেখো। কথাটা শোনা মাত্রই জারা দৌড়ে বিছানায় গিয়ে দেখলো ইরহানের শ্বাস চলছে না।ইরহান সত্যিই মা’রা গিয়েছে।ইরহানের নিথর দেহ দেখে জারা যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেললো।সে ভাবতেও পারে নি অদ্বিতীয়া খু’ন করার মতো এমন একটা জঘন্য অপরাধ করতে পারে। অদ্বিতীয়ার শেষ পরিণতির কথা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো জারার। বিশেষ করে ইরহান কে শামসুল জোয়ার্দার অনেক বেশি ভালোবাসেন।তার ছেলের খু’নী কে তিনি নিশ্চয় ছেড়ে কথা বলবেন না।জারা এসে অদ্বিতীয়ার হাত ধরে বললো,

-” তুমি জানো তোমার শেষ পরিণতি কি হতে চলেছে?”

-” জানি আপু। বড়ো জোর ফাঁ’সি হবে। কিন্তু এতে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি কোনো মানুষের খু’ন করি নি।করেছি একটা জা’নো’য়া’রে’র।ঐ অমানুষ টা বেঁচে থাকলে পলির মতো হাজার টা মেয়ে সমাজে নষ্টা মেয়ের উপাধি পেতো। হাজার হাজার নিষ্পাপ প্রাণ পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মাতৃগর্ভ থেকে মা’রা যেতো না। তুমি ঠিক‌ই বলেছিলে আপু আমাদের যা দেখানো হয়েছিলো সেটা সত্য নয়। সত্যের আড়ালে মিথ্যা লুকিয়ে ছিলো।পলি আ’ত্ম’হ’ত্যা করে নি।তাকে খু’ন করা হয়েছে।তাকে খু’ন করেছিলো এই অমানুষ টা।পলি ওর বাচ্চার মা হতে চলেছিলো। যেটা পলি সেদিন রাতে আমাকে জানায়‌।আমি বলেছিলাম সকালে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবো।পলি যখন আমাকে সব বলে নিজের কাজে চলে যায় তখন আমি দরজার কাছ থেকে কারো ছায়া সরে যেতে দেখেছিলাম। কিন্তু আমি ব্যাপার টা নিয়ে ততোটা মাথা ঘামায় নি।তখন সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইরহান আমাদের কথা শুনছিলো।আর ঐ পলি কে খু’ন করে সু’ই’সা’ই’ড বলে চালিয়ে দিয়েছে।”

-” তুমি এতোটা শিওর হয়ে কিভাবে বলছো যে ইরহান ই পলির খু’ন করেছে? ”

-” অদ্বিতীয়া তৎক্ষণাৎ একটা বোতাম দেখিয়ে বললো এই যে এই শার্টের বোতাম টা।যেটা আমি পলির হাতের মুঠোয় পেয়েছি।আর ঐ মানুষ টার দিকে তাকিয়ে দেখো তার ও শার্টের বোতাম নেই।পলি কে যখন সে খু’ন করে তখন নিশ্চয় তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিলো।আর তখনি পলি ইরহানের শার্টের বোতাম ছিঁড়ে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইরহান সেটা খেয়াল করে নি হয়তো।আর করলেও অমানুষ টার কোনো ভয় ছিলো না।কারণ পৃথিবীতে এমন কোন জেল তৈরি হয় নি যেখানে তাকে আটকে রাখতে পারতো।তাই তো আমি নিজে হাতে তার পাপের শাস্তি দিয়েছি।মে’রে
ফেলেছি তাকে।”

-” এখনো এই ব্যাপারে কেউ কিছু জানতে পারে নি।কেউ কিছু জানার আগে তুমি পালিয়ে যাও অদ্বিতীয়া।তোমার খুব‌ই কম বয়স।এখনো তোমার কাছে সারাটা জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি দূরে কোথাও চলে যাও। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করো।”

-” না আপু।খু’নী তকমা গায়ে লাগিয়ে আমি বাঁচতে চাই না।”

-” তুমি কোন অন্যায় করো নি অদ্বিতীয়া।আমি তোমার জায়গায় থাকলে হয়তো এটা করতে পারতাম না। তুমি পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাও।আমি আমার সন্তানের কসম করে বলছি কেউ কোনদিন তোমার ব্যাপারে জানতে পারবে না। তুমি পালিয়ে যাও অদ্বিতীয়া।”

-” অদ্বিতীয়া জারার কথা মতো পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে। ততক্ষণে চেয়ারম্যান বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায় ‌।পুরো গ্ৰামে ছড়িয়ে পড়ে ইরহানের মৃত্যুর খবর।সেই সাথে এটাও ছড়িয়ে পড়ে যে স্বামী কে খু’ন করে নববধূ পালিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক থানায় অদ্বিতীয়ার ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।মোড়ে মোড়ে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে অদ্বিতীয়ার খোঁজ করছে। অদ্বিতীয়া তখন শহরের মধ্যে প্রবেশ করেছে।তখনি পুলিশের নজরে আসে সে। অদ্বিতীয়া পুলিশ দেখা মাত্রই কোনো কিছু না ভেবে দৌড় দেয়‌।আর তখনি একটা ট্রাক করে অদ্বিতীয়া কে পিষে দিয়ে যায়।তাজা র’ক্তে ভেসে ওঠে ঘটনাস্থল। দুচোখে স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখা মেয়েটার শেষ পরিণতি হয় মৃ’ত্যু।

‌ সমাপ্ত

[ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here