অদ্বিতীয়া পর্ব ৫

0
115

#অদ্বিতীয়া

#পর্ব_০৫

#নুজাইফা_নূন

-“অকস্মাৎ একদিন খবর আসে ভাই যে দোকানে কাজ করতো সেখানে মাস শেষে অনেক টাকার গড়মিল হয়েছে। মালিকের ধারণা টাকা চুরি হয়েছে।সেই টাকা চুরির দায়ভার ভাইয়ের উপর পড়ে।মালিক জানায় ভাই যদি সব টাকা না দিতে পারে তাহলে ভাইকে পুলিশে দিবে।আমি চাচাজান কে এই ব্যাপারে বলি ।তিনি যেহেতু চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি চাইলে ব্যাপার টা মিটমাট করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান নি।আবার আমি টাকা চাইলেও তিনি টাকা দিতে নারাজ হন।ভাইকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আমি চাচাজানের লকার থেকে টাকা চুরি করি। আর সেটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।যে ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে কলঙ্কিনী হতে হয়েছে আমাকে।আমি যেহেতু সকলের রুম পরিস্কার, গোছগাছ করতাম, তাই সবার রুমের ব্যাপারে কম বেশি জানতাম কোথায় কি থাকে। এমনকি চাচার লকারের চাবি কোথায় থাকে সেটাও জানতাম। কয়েকমাস আগে পাশের গ্ৰামের রবিউল মেম্বারের মেয়ের বিয়েতে চেয়ারম্যান চাচারা সপরিবারে আমন্ত্রিত ছিলেন। অবশ্য আমাকে ও যেতে বলেছিলো। কিন্তু আমার মাথায় শুধু ভাইকে কিভাবে পুলিশের ‌হাত থেকে বাঁচাবো সেই কথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।তাই আমি আমার মিথ্যে অসুস্থতার কথা বলে বাড়িতে থেকে যাই।সবাই যখন একে একে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ঠিক তখনি আমি চুপিচুপি চেয়ারম্যান চাচার রুমে প্রবেশ করে লকার থেকে টাকা চুরি করি। কিন্তু টাকা নিয়ে বের হ‌বার আগেই ইরহান ভাইজান দরজায় এসে দাঁড়ায়।তাকে দেখা মাত্রই আমার হাত থেকে আপনা আপনি টাকা নিচে পড়ে যায়।যা দেখে ইরহান‌ ভাইজান নিচে থেকে টাকা তুলে আমার হাতে দিয়ে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন,

-“তুই বড্ড বোকা রে পলি। তুই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিস আমি ঠিক কি চাই? তুই যদি আমার প্রস্তাবে রাজি হতিস ,তাহলে আজ তোর চুরির অপবাদ নিজের ঘাড়ে নিতে হতো না।আর না তোর ভাইয়ের উপর অত্যাচার নির্যাতন হতো। এখনো সময় আছে রাজি হয়ে যা পলি।এতে তোর ও লাভ আর আমারো।”

-” আমাকে মাপ করবেন ভাইজান। আমি এই পাপ করতে পারবো না।”

-“চুরির অপরাধে বাবা তোর কি শাস্তি দিবে জানিস তো পলি?”

-” ইরহান ভাইজানের কথা শুনে আমার পুরো শরীর কম্পিত হয়ে উঠে।আমি আমতা আমতা করে বলি, হ্যাঁ জানি।চুরির অপরাধে চেয়ারম্যান চাচা আমার হাত কর্তন করে নিবে। পৃথিবীতে কতো মানুষ আছে যাদের হাত নেই পা নেই। তবুও তারা বেঁচে আছে।হাসি খুশি তে আছে।আমিও না হয় তাদের মতো একজন হয়েই বেঁচে থাকবো। তবু ও আপনার মতো একটা জা’নো’য়া’রে’র
কাছে আমি কখনোই নিজেকে বিলিয়ে দিবো না।আর খুব শ্রীঘ্রই আপনার মুখোশ আমি খুলে দিবো।আমি ইজহান ভাইজানের কাছে আপনার সমস্ত অপকর্মের কথা বলে দিবো।আমার কথা শোনো মাত্রই ইরহান ভাইজান আমার দুই হাত পেছনে মুচড়ে ধরে বলে,

-” আমাকে দেমাগ দেখাস তুই? এই ইরহান কে? তুই ইরহান সম্পর্কে কিছুই জানিস না পলি।ইরহান যা চাই তাই পাই।সেখানে তুই তো সামান্য একটা কাজের মেয়ে।একটা কাজের মেয়ে হয়েও এতো তেজ আসে কোথা থেকে তোর?তোকে অনেক বার অনেক ভাবে বুঝিয়েছি আমি। কিন্তু সোজা আঙ্গুলে যখন ঘি উঠে নি তখন আঙ্গুল বাঁকা করতে হচ্ছে।আজকে এই মুহূর্তে তোর তেজ তোর অহংকার আমি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো বলে ইরহান ভাইজান আমাকে বিছানায় ফেলে পশুর মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।আমি নিজেকে রক্ষা করার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটা পশুর সাথে পেড়ে উঠে নি।আমার সর্বস্ব লুটিয়ে নিয়েছে অমানুষ টা।”

-” তুমি কাউকে কিছু বলো নি কেন? অন্ততপক্ষে ইজহান ভাইকে বলতে পারতে?”

-” বলতে চেয়েছিলাম ভাবি। কিন্তু পারি নি। অমানুষের হাত যে অনেক লম্বা হয়।ইরহান ভাইজান আমার সর্বস্ব লুটিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।সেটা ভিডিও করেও রেখেছিলো।যেখানে তাকে না দেখা গেলেও আমার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো।সে আমার ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়।আমার ভাইটার কথা চিন্তা করে চুপ ছিলাম আমি।কারণ ভিডিও টা ভাইরাল হলে মৃ’ত্যু ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিলো না আমার।আমার সেই চুপ থাকাকে ইরহান ভাইজান কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন ইন্টিমেন্ট হয়েছে আমার সাথে।আর যখন তার পাপের ফসল আমার গর্ভে আসে তখন সে আমার হাতে কয়েক হাজার টাকার চকচকে নোট ধরিয়ে দিয়ে বলে,

-” তোর পাপের ফসলের দায়ভার আমি নিতে পারবো না। তুই যেহেতু আমাদের বাড়ির কাজের লোক ।তাই ব্যাপার টা জানাজানি হলে আমার বাবার মানসম্মান নষ্ট হবে। তাই কেউ কিছু জানার আগেই এবোরশন করে নিস।আর যদি কোনো প্রকার চালাকি করার চেষ্টা করিস , তাহলে তোর ভিডিও ভাইরাল হবার পাশাপাশি তোর ভাই ও এই পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিবে।সব দিক থেকেই আমি অপরাগ ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিলো আপনাকে এই কথাটা জানানো প্রয়োজন।আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। এখন আপনিই বলে দিন আমি কি করবো ? আমার কি করা উচিত?”

-” তুমি এবোরশন করবে না পলি।পাপ তোমরা দুজনে করেছো। তোমার গর্ভের শিশু টা নিষ্পাপ। তোমাদের পাপের শাস্তি কেনো একটা নিষ্পাপ শিশু ভোগ করবে? একটা নিষ্পাপ প্রাণ কে দুনিয়ার আলো দেখা থেকে বঞ্চিত করো না পলি। বাচ্চাটা কে দুনিয়ার আলো দেখাও।”

-” কিন্তু ভাবী একটা অবিবাহিত মেয়ের বাচ্চা পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়ে কার পরিচয়ে বড়ো হবে?লোকে যে তাকে অজন্মা বলে ডাকবে।”

-” কেউ তাকে অজন্মা বলে ডাকবে না পলি।সে পিতৃপরিচয় পাবে।যে আসছে সেও আর পাঁচটা বাচ্চার মতো মা , বাবার আদর স্নেহে বড় হবে।”

-” কিন্তু ভাবী….?”

-” যদিও বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস আমার নেই। তবু ও আমি সকালে এই বিষয় নিয়ে বাবার সাথে কথা বলবো।একটা নিষ্পাপ প্রাণ বাঁচাতে যদি আমাকে সতীনের সংসার করতে হয় ,আমি করবো। তবু ও তোমার সাথে কোনো অন্যায় আমি হতে দিবো না পলি।”

-” পলি তৎক্ষণাৎ অদ্বিতীয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো আপনি অনেক বড়ো মনের মানুষ ভাবী।বুকের উপর থেকে অনেক বড় একটা পাথর সরে গেলো।”

-” অদ্বিতীয়া পলির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো , কান্নাকাটি না করে নিজের কাজে মনোযোগ দাও।আমি কথা দিচ্ছি তুমি ন্যায় বিচার পাবে।”

-” ঠিক আছে ভাবী বলে পলি অদ্বিতীয়ার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পলি যেতেই অদ্বিতীয়া দরজা বন্ধ করে ডুকরে কেঁদে উঠলো ।সে রাতে অদ্বিতীয়ার খাওয়া হলো না।জারা কয়েকবার ডাকতে আসলেও অদ্বিতীয়া ক্ষুধা নেই বলে মিথ্যা বাহানায় সবার আড়ালে থেকেছে।মূলত সে চায় নি সকালের আগে কারো মুখোমুখি হতে।”

_______________________________________________

-” সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় অদ্বিতীয়ার। অদ্বিতীয়া তড়িঘড়ি করে উঠে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা বেজে গেছে।রাতে অনেক কান্নাকাটি করার দরুন অদ্বিতীয়া মাথা ব্যাথায় ঘুমোতে পারছিলো না। সেসময় রাত বারোটা বাজে।ইরহান তখন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে রুমে প্রবেশ করে।ইরহান কে দেখে ঘৃণার গাঁ ঘিনঘিনে উঠে অদ্বিতীয়ার। অদ্বিতীয়া ইরহানের রুম ছেড়ে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।যার কারণে ঘুম থেকে উঠতে অনেক বেলা হয়ে যায় তার।
ঘুমের জন্য ফজরের নামাজ টা মিস হয়ে গেছে ভাবতেই অদ্বিতীয়ার নিজের উপর রাগ হলো। অদ্বিতীয়া সবে বিছানা থেকে নামতে যাবে তার আগেই দরজায় কড়া ঘাত শুনতে পেলো। অদ্বিতীয়া তড়িঘড়ি করে নেমে দরজা খুলে দিতেই জারা হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বললো,

-” বৈঠক খানায় পলির লা’শ পাওয়া গেছে অদ্বিতীয়া।”

-” চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here