অচেনা তুমি পর্বঃ৪৭

0
396

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪৭।

নিস্তব্ধ সকাল। চারদিকে কুয়াশায় ঢাকা আচ্ছন্ন ব্যস্ত নগরী। পাখির কিচির মিচির কোলাহল। বাড়িতে আনন্দের কোলাহল হৈচৈ। তবে বেশি লোকজন নেই। ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা শান্ত শিষ্ট ভাবে হবে বলে তেমন বেশি ঘটা করে বাইরের মানুষকে জানানো হয় নি।

মাঘ মাসের মধ্য সময় চলছে বলতে গেলে। যে সময়টা কোমল রোদ আর ম্লান কোয়াশায় ঠান্ডায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে সারাদিন সে জায়গায় আকাশে কেমন গুমোট বেধে জমে রয়েছে ঘন কালো কালো মেঘরাশি। দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বৃষ্টি ঝরে পড়বে আকাশের বুক বেয়ে। এমন ঋতুতে বৃষ্টির আগমন নিছক বড্ড বেমানান। যেমনটা রাজি থাকা সত্ত্বেও নিজের বিয়েতে মন খারাপ করে বসে থাকা কনেকে বেমানান লাগে।

শুভ্রাঃ শুনছেন… বোনটা কাল থেকে এরকম করে কেন আছে। সারাদিন একা একা বসে থাকে। এবার তো লোকজন বলাবলি করবে। ও কি আদেও খুশি নই মন থেকে নাদিম ভাইয়াকে বিয়ে করছে বলে?

সাদাফঃ আরে না না ব্যাপারটা তেমন না। আসলে হয়েছে কি জানো… { সাদাফ লিনার সম্পর্কিত শুরু থেকে সব ঘটনাই খুলে বলে }। বুঝলে শুভি এইজন্যই বেচারির মন খারাপ।

শুভ্রাঃ হ্যা…. ঠিকি বলেছেন। আমিও কাল না ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। মেয়েটা কেমন চিপকে টাইপের। সব ছেলেদের সাথেই কেমন গায়ে পড়ে পড়ে কথা বলছিলো। তো এতে তো আমি ভাইয়ার কোনো দোষ দেখছি না। খামকা ভাইয়ার উপর কেন রেগে আছে বুঝলাম না।

সাদাফঃ বাচ্চা মেয়ে। কি না কি বুঝেছে বলো তো। তোমার বরের যদি এমন কেউ পিএ থাকতো তবে তোমার কি রাগ হতো না।

সাদাফের কথা শুনা মাত্রই শুভ্রা চোখ দুটি বড় করে কোমরে হাত দু হাত দিয়ে রাগী ভাব নিয়ে বলে “একদম কেটে কুটি কুটি করে ফেলবো দুজনকেই..। এরকম চিন্তা ও মাথায় আসবে কেন? ”

সাদাফঃ হা. হা.. হা… দেখো তোমার শুনা মাত্রই কেমন ফুলে ফেপে যাচ্ছো রাগো। তো ওই বেচারির অবস্থা ভাবো! আর আমি তো তোমাকেই এখনো সামলে উঠতে পারিনি অফিসে সাথে মেয়ে পিএ কি করে সামলাবো, বলোতো? ( শুভ্রার কাছে এসে)

শুভ্রাঃ এই এই একদম কাছে আসবেন না। কালকের মতো কেউ দেখে নিয়ে ইজ্জত যতোটুকু আছে তাও ডুবাবেন।

সাদাফঃ তোমার বান্ধবীগুলো একেকটা বদের হাড্ডি। সবসময় কেমন লজ্জায় ফেলে দেয় আমাকে। ( দূরে সরে) ।

শুভ্রাঃ একদম ঠিকি করে। সময় নেই, বলা নেই৷ কওয়া নেই হুটহাট উলটা পালটা কাজ করবেন সবসময়। যাই আমার অনেক কাজ আছে। ( দৌড় দিয়ে)

সাদাফঃ আরে.. কি রে বাবা.. বাতাসের সাথে ছুটে নাকি..! যাই একটু ছোট মেম সাহেবের সাথে কথা বলে আসি।

এতোক্ষন কুবরার ঘরের সামনে কথা বলছিলো সাদাফ-শুভ্রা। গতকালের ন্যায় আজও মন খারাপ করে জানালার ধারে হাটুতে মুখ গুজে বসে আছে কুবরা। এমন হাল দেখে বাড়িতে থাকা আত্মীয় স্বজনরা বলাবলি শুরু করেছে। সাথে শুভ্রারও চিন্তা হচ্ছে কি হলো না কি হলো। তবে সাদাফের বুঝিয়ে দেওয়াতে খোলাসা হয় সবকিছু তার কাছে।

“আসবো??”

পেছন থেকে দরজায় টুকার আওয়াজ শুনে মুখ ফিরিয়ে দেখে সাদাফ দাড়িয়ে আছে।

কুবরাঃ আরে ভাইয়া… তুমি? আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো যে আমার ঘরে এসেছো? আর পারমিশন নেওয়ার কি আছে? আসো। ( চোখের জল মুছে)

সাদাফঃ তুমি কাদছিলে কুবরা?

কুবরাঃ ক.. কই না তো আমি আবার কাদি নাকি? ( মেকি হেসে)

সাদাফঃ চোখে জ্বল, মুখে বিষন্নতা, ঘরে একাকিত্ত্ব আর তুমি বলছো
কাদছো না?

কুবরাঃ ও… ওই আসলে মানে… তোমাদের সবাইকে মিস করবো তো তাই.. ( মেকি হেসে)

সাদাফঃ কুবরা আমি তোমার আপন রক্তের ভাই নই ঠিকি কিন্তু কোনো না কোনো দিক দিয়ে তোমার ভাই আর বয়সেও তোমার বড়। কাজেই তুমি যদি আমাকে না ও বলো তবে ও আমি বুঝি যে তোমার মনে কি চলছে। সত্যি বলতে আমি সবটা জানি আর নাদিম আমাকে সবকিছুই বলেছে।

সাদাফের কথা শুনে কুবরা পুরোপুরি চুপসে যায়। চুপচাপ মন দিয়ে সাদাফের বলা কথা শুনে বসে রয়।

সাদাফঃ দেখো.. তুমু যেমন আমার বোন তেমন নাদিম আমার বন্ধু আমার ভাইসম। আর আমি তাকে খুব ভালো করে চিনি যতোটা তুমিও এখনো চিনে উঠতে পারোনি কুবরা। হ্যা আমি তুমি জানি নাদিম বেশ কিছু দিন আগেও ইম্যাচিউর ছিলো, সিরিয়াসলি কোনো কিছুই করতো না, এমন কি আমি দেখেছি সে অনেকের সাথে টাইম পাস ও করেছে। এসব তোমার কাছে শুরু থেকেই কিন্তু ক্লিয়ার ছিলো। কিন্তু একটা কথা কি জানো? ওর মধ্যে ম্যাচিউরিটি এসেছে তোমার জন্য, সিরিয়াস হয়েছে একমাত্র তোমার জন্য, লয়েল হয়েছেও একমাত্র তোমারই জন্য। কেন জানো? কারণ সে সত্যি সত্যিই তোমায় অনেক ভালোবাসে। সে যে ভেতর থেকেই কতোটা পরিবর্তিত হয়েছে তা আমি দেখেছি কুবরা। সে যদি ঠিকি আগের মতো থাকতো আমি কখনোই তোমাদের রিলেশনশিপে সাপোর্ট করতাম না। শুরু থেকে আমি সাপোর্ট করেছি বলেই আজ কিন্তু তোমরা বিয়ের পর্যায়ে এসেছো।

সাদাফের বলা প্রত্যেকটা কথা কুবরা মন দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে শুনছে আর অবজার্ব করছে।

সাদাফঃ দেখো কুবরা। আমি জানি না তুমি তাকে নিয়ে কি বুঝেছো কিংবা কি দেখেছো। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে খারাপ কোনো কাজ সে করেনি। দুজনেই বিয়েটা নিয়ে কতো এক্সাইটেড ছিলে। কতাও আশা স্বপ্ন বুনেছিলে। তবে বাইরের একটা মানুষের জন্য কেন মনের মধ্যে এতো অশান্তি পুষে রেখেছো দুজনেই? তুমি হয়তো জানো না, টেনশনে নাদিম কাল সারা রাত ঘুমুতে পারে নি। সকাল থেকে কমে ১০০ টার ও বেশি কল দিয়েছে হয়তো আমাকে শুধুমাত্র তোমার অবস্থা জানার জন্য।( কল লিস্ট দেখিয়ে) । সো , প্লিজ নিজেদেরকে স্বাভাবিক করো আর পরিস্থিতিকেও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করো। আর ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো কি করলে কাটা উপড়ে ফেলতে পারো। যার জন্য সমস্যা তাকে নিয়ে ভাবো। শুধু নিজেদের মধ্যে অশান্তি করে কি লাভ? বুঝেছো?? ( কুবরার মাথায় হাত বুলিয়ে)

কুবরা শান্ত মেয়ের মতো সাদাফের বলা প্রতিটা কথা শুনেছে আর পরিশেষে কি করতে হবে তাও বুঝে নিয়েছে। বুঝদার মেয়ের মতো উপর। নিচে মাথা নাড়িয়ে সাদাফের কথায় সায় দেয় ।

সাদাফঃ দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল। মনে রেখো না বুঝে না ভেবে কোনো স্টেপ নিবে না। বুঝে শুনে করবা যা করার।

সাদাফের প্রতিটা এডভাইস শুনে মূহুর্তেই কুবরার মন হালকা হয়ে যায় । চোখমুখের জ্বল আর বিষন্নতা কাটিয়ে চাকচিক্যময় এক রোপালী হাসি দিয়ে বলে, ” অক্কে ভাইয়া। যা বলেছেন তাই হবে। আর কোনো মন খারাপ নই। এই জন্যই তো তুমি সবচেয়ে বেস্ট ভাই+ দোলাভাই। ” ( লাফ দিয়ে উঠে তালি দিয়ে)

সাদাফঃ এই নাহলে আমাদের কুবরা। এই স্প্রিট টাই তো চেয়েছিলাম এতোক্ষন। কুবরা চুপচাপ থাকবে এই কখনো হয়?

এরপর দুজনেই খিল খিল করে ভুবন কাপানো হাসিতে মেতে উঠে।

অপর দিকে দরজার ধারে দাঁড়িয়ে সবকিছুই দেখছিলো শুভ্রা। সাদাফের মধ্যে এক দায়িত্ববান ভাইয়ের স্নেহ আর উপদেশ দিতে দেখে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠে তার। আজ সত্যিই সাদাফকে নিজের বর হিসেবে পেয়ে গর্বিতবোধ হচ্ছে তার। এমন একটা মানুষ যার প্রত্যেকটা দিক ই পারফেক্ট, তাকে পেয়ে সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে তার।

সাড়ে বারোটা বাজতে না বাজতেই চারদিকে জোহরের আজান শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষন পর খুতবা ও শুরু হয়ে যায়। বাড়ির সকল পুরুষ রা মিলে গোসল করে, নতুন জামা পড়ে ছোট বড় সকলেই জুমার নামাজ পড়তে চলে যায়।

এদিকে বাড়ির মহিলা সদস্য সকলেই বিয়ের সকল জোগাড় বন্দবস্ত করে নামাজ আগায় করে ফেলে একসাথে।

২ টা বাজতে না বাজতেই নিচ থেকে ছোট বাচ্চাদের হল্লা শুরু হয়ে যায় “বর এসেছে, বর এসেছে “। এমন কথা শুনে কুবরার বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে শুরু করে। তবে কি এটাই সে কাঙ্ক্ষিত সময়!

সাধারণ ভাবে নাদিম, নাদিমের বাবা, নাদিমের ফুপি, ফোপাতো বোন, তার খালা, খালু এবং খালাতো ভাইবোন আসে। আর সাথে একজন হুজুর আর একজন কাজি।

আসারা পর টুকটাক নাস্তাপানি আর কথাবার্তা সেরে সকলে মিলে খাওয়াদাওয়ার পর্ব সেরে ফেলে।

আসার পর থেকে কুবরা নাদিমের সাথে একফোটা কথা বলে নি। যথাসম্ভব আরো নাদিমের সামনে না পড়ার চেষ্টা করেছে। এদিকে পরিস্থিতি এমন গিয়ে কুবরার সাথে আলাদা ভাবে দুদন্ড কথা বলবে তার ও সুযোগ নেই।

কোন রকম সুযোগ করে ওয়াশরুমে যাবে বলে কুবরার পাশের ঘর মানে সাদাফ আর শুভ্রার ঘরে একাকি এসে বসে আছে নাদিম। কিন্তু সাদাফের রোম খালি হলেও কুবরার রোম গেস্ট এ ভর্তি। আর এতো লোকের সামনে আলাদাভাবে ডাকবেও বা কি করে।

সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো সাফিয়া। কালকে মেহেন্দির অনুষ্ঠানে ভালো পরিচয় কুবরার বান্ধবীদের সাথে। নাদিম তারাতাড়ি দরজার সামনে এসে সাফিয়াকে ডাক পাড়ে….

নাদিমঃ এই… সাফিয়া আপু… কুবরার বান্ধবী… শুনছেন?? ( ছোট ছোট করে বলে)

মাত্রই এসেছে সাফিয়া, হীরা, মুক্তা, । হীরা মুক্তা আগে আগে কুবরার রুমে ঢুকে যায়। সাফিয়া একটু পেছন পড়ে ছিলো। হঠাত কোথা থেকে ফিসফিস আওয়াজ আসায় চারদিকে চোখ বুলায় সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর দেখে কুবরার পাশের রুমের দরজায় নাদিম লুকিয়ে তাকে হাতে ইশারায় ডাকছে চুপিচুপি।

সাফিয়াঃ আরে, দুলহা ভাইয়া… ওখানে লুকি…( এগিয়ে এসে)

নাদিমঃ হুশশশ…. আস্তে আস্তে মানুষ শুনবে তো।

সাফিয়াঃ হু…. তো কি দরকারে ডাকছেন এতো চুপিসারে?

নাদিমঃ বলছি যে তোমার বান্ধবীকে একটু ডেকে দাও না।

সাফিয়াঃ ওমা….. এটার জন্য এতো লুকিয়ে থাকতে হয়? দাড়ান এক্ষুনি ডেকে দিচ্ছি।

সাফিয়া তারপর তারাতাড়ি কুবরার রুমে গিয়ে দেখে কুবরা সেজেগুজে বধুবেশে বসে আছে। আশেপাশে সকলে তাকে ঘিরে বসে আছে।

এদের সকলের সামনে নাদিমের কথা এখন বলবে কি করে। সাফিয়া তবু কুবরার কাছে গিয়ে বলে “কুবরা একটু এদিকে আয় তো কথা আছে ”

কুবরা যেই উঠতে যাবে তখনি নাদিমের খালা কড়া গলায় কথা বলে উঠেন।

নাদিমের খালাঃ বিয়ের সাজে এতো ঘুরাঘুরি কিসের। একটু পরেই তো বিয়ে পড়ানো হবে। এখন ওতো এদিক ওদিক যাওয়া যাওয়ি চলবে না।

বেচারি কুবরার হাত পা বাধা। খালা শাশুড়ী বলে কথা। মানা শুনতে বাধ্য সে। তাই আকুতির ভানে সাফিয়ার কাছে ক্ষমা চায় কুবরা।

সাফিয়া ও তড়িঘড়ি করে এসে খবর টা নাদিম কে দেয়।

সাফিয়াঃ উফফফ এক কূটনি বুড়ির জন্য আর আসতে দিলো না কুবরাকে। যেই আসতে যাবে তখনই বকর বকর শুরু করে দেয়। উনার কড়া আদেশ যে নাকি কোনো নড়াচড়া করবে না তাদের হবু বউমা।

নাদিম এবার মনে মনে বেশ ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে এটা তার খালারই কাজ। বয়স হয়েছে তাই মনটা একটি আদ্ধাত্মীক টাইপের। নাদিম আর কোনো উপায় না পেয়ে সাফিয়া কে একটা থ্যাংকস জানিয়ে আবার বৈঠক আসরে চলে যায়।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ বাজে। সকলে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে এবার প্রস্তুত হয় বিয়ে পড়ানোর জন্য। নাদিম কুবরাকে পাশাপাশি বসানো হয়। প্রয়োজনীয় সকল নিয়ম কানুন শেষে এবার কুবরার কবুল বলার পালা।

কবুল বলার সময় গলা টা কেমন ভেঙে আসছিলো তার। অজানা এক কারণে মনে হচ্ছে গলা থেকে আওয়াজ বের হলেই কান্নায় ভেঙে পড়বে সে। শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে কষ্টে ভেতর থেকে। তবে কি আজকেই এবাড়িতে তার শেষ দিন! আজ থেকে সে অন্য বাড়ির সদস্য হয়ে যাবে পারমানেন্টলি?

কুবরার চুপচাপ ভঙ্গি দেখে ভেতর টা মুচড়ে উঠে নাদিমের। কোনো মতে কি বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার আশায় বসে আছে কুবরা? রাগ করে কি নাদিম কে বিয়ে করবে না সে?

কাজি সাহেব বার বার কবুল বলতে বলার পির হঠাৎ নিজেকে শক্ত করর অনর্গল তিন তিনবার কবুল, কবুল, কবুল বলে উঠে কুবরা।

পাশেই বসে ছিলো তার মা। বিদায়ের কথা মনে উঠতেই ঢুকরে কেদে উঠে মা মেয়ে দুজনেই।

সারাদিনের খুশির রোল পড়া বাড়িটি তে নেমে আসে কান্নার রোল। সহীহ সমেত বিয়ে সম্পন্ন
হওয়ার পর এবার বিদায়ের পালা।

এতোদিন বিয়ে করে শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য যে মেয়েটি প্রানপনে নাচছিলো আজ সে সকলকে আকড়ে ধরে কাদছে।।

বরপক্ষ, কনেপক্ষ সকলে মিলে বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। যাওয়ার জন্য এবার সকলেই প্রস্তুত। বাড়ির সবচেয়ে হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েটা আজ অন্যের বাড়ি একেবারের জন্য সংসার গুটানোর জন্য চলে যাচ্ছে। এরপর একে একে সকলে গাড়িতে উঠে রওনা দেয় শশুর বাড়ির উদ্যেশ্যে।

গাড়িতে উঠার পরেও কুবরা ঢুকরে ঢুকরে কাদছে। নাদিম আলতো করে কুবরার পিঠা হাত রাখা মাত্র সঠান গিয়ে নাদিমের বুকে মুখ গুজে কুবরা। এই একটা জায়গা যেখানে সে মা বাবা ছাড়া সবচেয়ে বেশি ভরসা পায়।

একদিক দিয়ে কুবরার কান্না দেখে নিজের ও কষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে আজ কতোদিন পর কুবরাকে সে বুকে পেয়েছে সে প্রাপ্তির খুশি। রাগে অভিমানের জন্য এতো দিন কতো দূরে দূরে থেকেছে সে।

নাদিমঃ পাগলি তুমি কাদছো কেন? তোমায় কি আমি আর ওই বাড়ি যেতে দিবো না? তোমার যখন খুশি তখন তুমি তোমার বাড়ি যেতে পারবে তাদের সাথে থাকতে পারবে। আর কান্না করে না। এবার তো থামো। নাহলে যে অসুস্থ হয়ে পড়বে। (কুবরার মাথায় হাত বুলিয়ে)

নাদিমের কথায় হয়তো কুবরা কিছুটা আশ্বাস পেয়েছে। ধীরে ধীরে কান্নার গতি কমে যায় কুবরার। কুবরা শান্ত হওয়ার পরেও নাদিমের বুকে একই রকম বসে থাকে সে। এক মাত্র এটাই একটা স্থান যেখানে তার প্রশান্তি মিলে। দু হাত দিয়ে ঢুকরে ঢুকরে আরো শক্ত করে চেপে ধরে নাদিমকে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here