অচেনা তুমি পর্বঃ৪৩

0
441

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪৩

যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে পর পর দুটি গাড়ি থামে। একটা গাড়ি নাদিমের আরেকটা গাড়ি সাদাফের। গাড়ি ভর্তি পরিবারের সমস্ত পরিস্বজন একে একে নামে আর সকলে একসাথে বিয়ের শপিং করতে ঢুকে মলের ভেতরে।

প্রথমেই ডিসাইড হয় আগে বর কনের বিয়ের পোশাক নেওয়া হবে। সে হিসেবে নাদিমের ফুপি,কুবরার মা আর সাদাফের বাবা, মা, ইলিয়ানার বাবা মা সহ বড়রা একে একে শেরওয়ানি লেহেঙ্গা দেখতে থাকে। তারা ছাড়াও আরো অনেকেই এখানে বিয়ের শপিং করতে এসেছে। শীতকাল বিয়ের সিজন বলে কথা। যার জন্য দোকানে অনেক মানুষের ভিড়।

প্রায় আধ ঘন্টা খানেক নানা দোকান পাট দেখার পর নাদিম কুবরা সহ সকলেরই বিয়ের জন্য দুটো লেহেঙ্গা আর দুটি শেরওয়ানি পছন্দ হয়েছে। একটা হলুদের জন্য পাকনা হলুদে সবুজ আর মেরুন কাজ করা আরে একটা বিয়ের জন্য লাল,গোল্ডেন কালারের মেশাপ। তারপর আরো অনেক গুলো পাঞ্জাবি, শার্ট, শাড়ি, সেলওয়ার, কিনে কুবরার মায়েরা।

এছাড়াও বিয়েতে সকলের জন্য একই ডিজাইনের মেয়েদের জন্য কাচা হলদে শাড়ি আর ছেলেদের জন্য ও কাচা হলদে রঙের উপর সবুজ কারুকার্য এর পাঞ্জাবি কিনে। যদিও সেগুলো শুভ্রা, সাদাফ, ইলিয়ানা, পারভেজ আর আবির রাই ঠিক করে।

এসব বড়দের মাঝে মুটামুটি এক ঘন্টা হতে হতেই বিরক্তি শুরু হয়ে যায় মিমির।

মিমিঃ ধুরু…… এখানে তো দেখছি যে যার যার মতো ব্যাস্ত। আমার দিকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না।(“চ” বোধক উচ্চারণ করে) ।

কিছুক্ষণ হাসফাস করার পর দেখে কুবরা একটু ফ্রি হয়ে দোকানের বাইরে পানি খেতে বের হয়। কুবরাকে ফ্রি দেখে ওমনি গিয়ে ঝাপটে ধরে মিমি।

মিমিঃ ভাবিইই…. আরো কতোক্ষন বলো তো। আমার তো রীতিমতো পা ব্যাথা শুরু করেছে।

কুবরাঃ মাত্র এই টুকুতেই পা ব্যাথা!! তুমি জানো শুভ্রা আপ্পির বিয়েতে আমরা ৮ ঘন্টা শপিং করেছিলাম। আর এখন তো মাত্র দু ঘন্টা হয়েছে মাত্র!

মিমিঃ কিইইইই…. মাগো….. এরকম হলে তো আজ আমার পায়ের সব সার ই খতম হয়ে যাবে। আচ্ছা তোমাদের পরিবারে আমার সমবয়সী কেউ নেই?? সবাই দেখছি কতো বড় বড়। ছোট কেউ নাই মানে আমার এতো টুক( ?){ এরকম দেখিয়ে)

কুবরাঃ হা হা হা… তুমি কি কমেডি করে কথা বলতে পারো। তুমি কি ? এতাও টুকু নাকি?? হাইটে তো আমারই সমান তুমি। অবশ্য আমি একটু বেটে বলেই আমার সমান। তবে তোমার কি বিরক্ত লাগছে??

মিমিঃ না….. তেমন না… তবে বোর লাগছে আর কি আমার একজন সমবয়সী থাকলে খুব ভালো হতো। ( মাথা চুলকে)

কারো শপিং মলে আসলে যে বোরিং লাগে তা আমি প্রথম শুনলাম। চলো আমার তো কোনো কাজ নেই। দুজনে শপিং মল টা ঘুরে দেখি কি বলো ( মিমির পেছনের কাধে হাত জড়িয়ে বলে উঠে ইলিয়ানা)

ইলিয়ানার কথায় অতি এক্সাইটেড হয়ে উঠে মিমি। এতোক্ষণ সেটাই ইচ্ছে করছিলো তার। কিন্তু তার মায়ের কড়া বারণে একঘেয়ে জায়গায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে সে।

মিমিঃ সত্যিইই…(তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠে)

ইলিয়ানাঃ হুম সত্যিই। তোমার ভাবির তো কাজ আছে আজ আমার সাথে না হয় ঘুরো।

মিমিঃ ওয়াও। দাড়ান আমি আসছি আম্মুর থেকে পারমিশন নিয়ে আসি আগে।

মিমি তারপর ইলিয়ানা আর কুবরাকে দাড় করিয়ে সটান গিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে দূরে কোথাও যাবে না কাছেই থাকবে বলে অনুমতি নিয়ে আবার ফিরে আসে।

মিমিঃ চলুন আসছি আমি। ( খুশিতে গদগদ হয়ে)

ইলিয়ানাঃ হুম চলো ওইদিক টা ঘুরে দেখা যাক।

এরপর কুবরা ও আবার দোকানে কেনাকাটার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মিমিঃ ওয়াও…. দেখো এটা ক্রিস্টমাস ট্রি তাই না?? এটা তো ডিসেম্বার মাস। সামনে ২৫ এ ডিসেম্বর উপলক্ষে তাই না??

ইলিয়ানাঃ হুম। এখানে বড়দিনে গ্রেন্ড সেলিব্রেশন করা হয়। আমিও গতোবছর এসেছিলাম। এবছর আর আসবো না।

মিমিঃ কেন আসবেন না কেন?? আপনাদের আসার সুযোগ থেকে আসতে চাইছেন না। আর আমরা থাকি সুদূর গ্রামে। এসব তো মাঝে মাঝে দেখে আরো চমকে যেতে ভালোই লাগে। ( ভ্রু কুচকে)

ইলিয়ানাঃ আমারো আগে অনেক ভালো লাগতো। শুধু কি বড়দিন এমন কোনো দিন ছিলো না যে আমি সেলিব্রেট করি নি। তোমার মতো আমারও তুমুল উতসাহ আর উত্তেজনা ছিলো। কিন্তু যখন নিজের ধর্মের পথে ফিরে আসি এবং এসবের পরিনতি সম্পর্কে জানি তবে থেকেই আমি ফিরে আসি।

মিমি বুদ্ধিমত্তা মেয়ের মতো ভ্রু তলে মাথা নাড়িতে সায় দেয় ইলিয়ানার কথায়।

মিমিঃ হুম… একদম ঠিক বলেছেন। আমার আম্মু ও এসব বলে আর কি। মাঝে মধ্যে আমিও তো অনেক কিছু করার জন্য পাগল হয়ে যাই। আম্মু ও আমাকে বুঝায় আর কি। কি কি করতে হবে, মানতে হবে।

ইলিয়ানাঃ হুম বয়সের সাথে সাথে সবকিছু জেনে নেওয়া ভালো। আমায় দেখো আমিও অনেক কিছু নেই অজ্ঞ ছিলাম তবে তোমার ভাবির বোন আর ভাবির কাছ থেকে আমার অনেক কিছুই শেখা।

ইলিয়ানা আর মিমির কথা যে তাদের অগোচরেই আরেকজনের কানে ভেসে আসছে তা তাদের ধ্যান ই নেই। কেনাকাটার ভিড়ের মধ্যে ভালো না লাগায় একটু স্পেসের জন্য হাটাহাটি করছিলো
পারভেজ। হঠাৎ ক্রিস্টমাস ট্রি এর সামনে ইলিয়ানা আর মিমির কথা কানে আসায় থমকে থাড়ায় পারভেজ। আর কৌতুহল বশত ইলিয়ানার কথা গুলো শুনতে ইচ্ছে করে তার।

“ মেয়েটা বড্ড ঘোলাটে… কেমন আজগুবি আজগুবি কথা আর চলাফেরা করে। আগে ছিলো ফেসবুকের ব্যাপার নিয়ে বিরাট চিন্তা আর কৌতুহল । এখন আবার আগের জীবন?? স্ট্রেঞ্জ!!

হাটতে হাটতে কথা বলে বলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করছে ইলিয়ানা আর মিমি। হঠাত একপর্যায়ে পারভেজের সাথে ইলিয়ানার সামনাসামনি হতেই চোখাচোখি হয় দুজনের। কাল এসেছে থেকে কোনো কথা ই তাদের মধ্যে হয় নি। পারভেজের মায়ের সাথেই যা বলার বলেছে। এছাড়া ইলিয়ানা নিজেও পারভেজকে ইচ্ছে করে এড়িয়ে চলেছে। তার মায়ের মুখে ওমন কথা শুনে মনে মনে কেমন সঙ্কোচ ধরে গিয়েছে পারভেজ কে নিয়ে।

“কেমন আছেন??” হঠাত ই বলে উঠে পারভেজ।

আচমকা পারভেজের মুখ থেকে কথা শুনে থমকে যায় ইলিয়ানা। এখন ইলিয়ানার বা আছে কোনো বয়ফ্রেন্ড না আছে কোনো ছেলে ফ্রেন্ড। যার কারনে ছেলেদের সাথে কথা বলতে গলে মনের মধ্যে জড়তা কাজ করে তার। হঠাত পারভেজের প্রশ্ন শুনে এ কারনে থতমত খেয়ে যায় ইলিয়ানা।

ইলিয়ানাঃ ভা..ভা.. আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

পারভেজ ইলিয়ানার ইতস্ততবোধ দেখে আনমনেই মুচকি হেসে ফেলে। কেমন একটা ভীত ভীত চাহনীতে তাকায় ইলিয়ানা পারভেজের দিকে। আর আজ তার হরিনী চোখ জোড়াতে কেমন কাপাকাপা লাজ ময় আভা।

পারভেজকে চুপচাপ থাকতে দেখে ইলিয়ানাও জিজ্ঞেস করে ” আপনি?? ”

পারভেজঃ হুম?? আমি? আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ ।

দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। পারভেজের সামনে ইলিয়ানার অস্বস্তি কেবল বাড়ছেই আর পারভেজ এক ধ্যানে আউড়াতে চাচ্ছে সমস্যা টা কি তার! আর মাঝখানে নীরব দর্শক হিসেবে তাকিয়ে আছে মিমি। আপাতত সে এটা বুঝার চেষ্টা করছে যে তাদের মধ্যে হচ্ছে টা কি আসলে?

( একটা জিনিস খেয়াল করেছেন নিশ্চয়, ঘুরেফিরে কিন্তু আজ আবার আমাদের দেখা হলো কিন্তু। সেদিন যে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসেছিলেন, ভেবেছিলেন আর দেখা হওয়ার কোনো চান্স ই থাকবে না হয়তো তাই না?) { নীরবতা কাটিয়ে পারভেজ বলে উঠে }

পারভেজের এই কথা শুনে মনে মনে আরো শিউরে ওঠে ইলিয়ানা। তবে সেদিনের ভাবা মনোকথা পারভেজ কি বুঝতে পেরেছিলো??

ইলিয়ানাঃ ক..কোন কথা আমি সেদিন তাচ্ছিল্যের সুরে নিয়েছিলাম? আমি তো সেদিন স্বাভাবিক ভাবেই সব কিছু বলেছি।

ইলিয়ানার কথা শুনে পারভেজ আরেকদফা হেসে দেয়।

পারভেজঃ মিস সামিরা বিনতে ইলিয়ানা….. আপনি জানেন আমি একজন সাইকোলজিস্ট। আর সাইকোলজিস্ট এর মানে নিশ্চয় জানেন?? আপনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন আমি কোন কথার কথা বলেছি। নাহলে বুঝেছেন কিভাবে আমি ওই দিনেরই কথা বলেছি??

পারভেজের কথা শুনে ইলিয়ানা এবার প্রায় চুপসে গেলো।এবার তার সামনে বড় লজ্জায় পড়ে যায় সে। ইলিয়ানাকে কিছু বলতে না দেখে পারভেজ আবারও বলে উঠে।

পারভেজঃ বুঝছেন মিস সামিরা… সবই হলো ডেস্টিনি। চাইলে না চাইলেও কপালের জোরে কিন্তু অনেক কিছুই হতে পারে। আচ্ছা বাদ দেন। তুমি নিশ্চয় নাদিমের বোন?? ( মিমিকে উদ্দেশ্য করে)

মিমিঃ হুম… ( চুপচাপ ভঙ্গিতে)

পারভেজঃ তুমি হঠাৎ এতো শান্ত হয়ে গেলে কি করে? এতোক্ষণ তো বেশ লাফালাফি করছিলে? ( কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে)

মিমিঃ আপনাদের কথা শুনছি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর অবজারভেশন করছি। ( চিন্তিতভাব নিয়ে)

পারভেজঃ তা কি কি অবজারভেশন করলে শুনি?

মিমিঃ হুম প্রথমেই বলি আপনার কথা। আমরা যখন ক্রিস্টমাস ট্রি দেখছিলাম তখন থেকেই আপনি আমাদের দিকে নজর রাখছিলেন। হতে পারে টুকটাক কথা ও শুনেছেন। তবে আপনার মুখে ছিলোনা অদ্ভুত চিন্তার ভাজ, এন্ড যখন অবশেষে আপুর সাথে দেখা হলো, কথা বলার কোনো সোর্স না পেয়ে পুরোনো প্রসঙ্গ দ্বারাই কনভারসেশন স্টার্ট করেছেন। আর আপুর কথা ধরতে গেলে বলা যায় আপনাকে দেখে আপু রীতিমতো ভড়কে যায়। কোনো এক কারণে আপনাকে নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তি কিংবা সঙ্কুচ বোধ করছে।

ইলিয়ানা আর পারভেজ চোখ দুটো বড় বড় করে দুজনেই মিমির দিকে তাকিয়ে আছে। কতোটা পরিষ্কার ভাবে তাদের ভাবান্তের নিখুত বর্ণনা দিয়েছে সে।

পারভেজঃ বাহহহ তুমি তো দেখছি সবকিছু খাপে খাপ বরাবর সবকিছুই উত্তর দিয়েছো। কি ডিটেকটিভ হওয়ার ইচ্ছে নাকি??

মিমিঃ উমম( ভাব নিয়ে)

পারভেজঃ তুমি কিন্তু ভালোই অবজারভেশন করো দেখছি। ডিটেকটিভিটি ইজ পারফেক্টলি স্যুট ফর ইউ।

মিমিঃ সত্যি তাই! কিন্তু আমায় না বাড়ি তে কেউ এই নিয়ে সাপোর্ট করে না। সবাই বলে এগুলো নাকি বাইক্কা কান, ( ?)

পারভেজঃ কে বলেছে। আরো বড় হও নিজের প্যাশন নিয়ে সিরিয়াস হও। দেখবে তোমার প্যাশন কেও সকলে গুরুত্ব সহকারে দেখবে।

হেটে হেটে মল দেখতে দেখতে পারভেজ, মিমি, ইলিয়ানা আরো অনেক কথা বলে। তবে ইলিয়ানার মাথায় আপাতত মিমির বলা পারভেজের কথাই মাথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে। পারভেজ তার দিকে তাকিয়ে কি চিন্তা করছিলো আর নজর রাখছিলো মানে??

কাপড়চোপড় কেনাকাটা শেষে এবার সকলে মিলে গয়না আর কসমেটিকস এর দোকানে যায়। বড়রা সকলে গয়নার দোকানে যায় আর শুভ্রা, সাদাফ,কুবরা, নাদিম, আবির কসমেটিকস এর শো রুমে যায়। ততক্ষণে ইলিয়ানা, মিমি, পারভেজরা ও চলে আসে।

সকলে মিলে একজন একজনের পছন্দমতো সাজগোজের জিনিসপত্র ঠিকঠাক করে। কিন্তু এখানে এসে এখন নাদিমেরও বিরক্তি শুরু হয়ে যায়। কেমন অদ্ভুত ব্যাপার!! কুবরার সাথে কনটিনিউয়াসলি কথা বলতে গেলে কেমন লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বসে থাকে। কেমন কম কম কথা বলছে। যা জিজ্ঞেস করছে তার হুম,হা এরকমই সাড়া দিচ্ছে। কই বাকি সকলের সাথে তো দিব্যি কথা বলছে।

কসমেটিকস কিনতে এসেও নাদিম দেখে কুবরা শুভ্রাকে নিয়ে ব্যস্ত জিনিসপত্র কিনাতে। মাঝে মাঝে চোখাচোখি হলেও আবার লজ্জা লজ্জা ভাব করে। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও এখন প্রায় বিরক্তি লাগছে তার।

হঠাৎ ব্যস্ততার মাঝে আবারও পানির পিপাসা পাওয়ায় দোকানের বাইরে আসে একটু পানি খেতে আসে কুবরা। খাওয়া শেষে যেই ফাক পেয়েছে নাদিম ওমনি টেনে নিয়ে গিয়ে কুবরাকে একটা চেঞ্জিং রুমে নিয়ে যায়।

কুবরাঃ আরে আরে কি করছেন টা কি? এখানে কেন…উ….উ…

নাদিম কুবরাকে টেনে চেঞ্জিং রুমে নিয়ে আসায় কুবরার বলা কথাগুলো ফাকা ঘরে আরো বড় বড় করে শুনাচ্ছিলো বিধায় নাদিম কুবরার মুখ চেপে ধরে।

নাদিমঃ শ…… আস্তে কথা বলতে পারো না? ( হাত নামিয়ে নিয়ে)

কুবরাঃ হাহ…. উহ… আল্লাহ আমি মরে যাবো। এভাবে কেউ চেপে ধরে। দম বন্ধ হয়ে আজকে আমি মরেই যেতাম। তারপর??

নাদিমঃ বেশি বাড়তি কথা বলো তুমি? তোমার মনে হয় আমি তোমায় মেরে ফেলবো? আর আজ তো একটু বেশিই বাড়তি করে ফেলছো। সকাল থেকে এটা আবার কি লজ্জা লজ্জা ড্রামা শুরু করেছো। আর আমাকে এভাবে ইগনোর কেন করছো?? ( কুবরার দুই বাহু চেপে ধরে)

কুবরাঃ বউ না? নতুন বউ হবো তো তাই আর কি.. ( লাজুক হাসি দিয়ে)

নাদিমঃ কিই?? এমন উইয়ার্ড আইডিয়া কে দিয়েছে তোমায়?

কুবরাঃ কেন? আপ্পির কাছ থেকেই তো দেখেছি। আপ্পিকেই তো ফলো করছি। আপ্পির বিয়ের সময় দেখেন নি??

নাদিমঃ এহ! তাই বলে এমন.. লিসেন কুবরা তোমায় আমি ভালোবেসেছি তোমার চঞ্চলতা পূর্ণ আচরণ দেখে, তোমার ওই দুষ্টু মিষ্টি কথা শুনে আর এখন তুমি এভাবে হঠাত পালটে যেতে কেন চাইছো? আমি তো সাদাফ নই।

কুবরাঃ আম্মু বলেছে আমাকে যে, “ তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এসব পাগলামি নাচানাচি বন্ধ কর। আর আজ তো তোর ফুপি শাশুড়ি ও এসেছে। উনার সামনে একদম বেশি বাদরামি করবি না। আর জামাই এর সাথেও বেয়াদবি করবি না। বয়স্ক মানুষ আবার অনেক কিছু মনে করতে পারেন। আর সবসময় চুপচাপ লাজুক ময় ভাব নিয়ে থাকবি, বেশি কথাও বলবি না ”। ( মায়ের ভঙ্গিতে বলে)

নাদিমঃ তাই বলে তুমি আমার সাথে একটু কথা ও বলবে না? তুমি জানো না তোমার সাথে এক মূহুর্ত কথা না বললে আমার বুক টা কেমন আনচান আনচান করে?

কুবরাঃ উম…..শুরু হয়ে গেলো ফ্লার্টইং কথাবার্তা.. আর কয়েকদিন পরেই তো বিয়ে। আর একটু সময় সহ্য করতে পারছেন না?

নাদিমঃ দশটা নই বিশটা নই একটাই তো বউ আমার। আমার বউ এর সাথে ফ্লার্ট করবো না তো আর কার সাথে করবো শুনি? তুমি তো আমার একটা মাত্র মিস কুইন কুবরা। ( জড়িয়ে ধরে)

কুবরাঃ বাদাম বাদাম, ও ভাই পচা বাদাম,
আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম
আমার কাছে আছে শুধু পচা বাদাম….

নাদিমঃ আমি এক্ষুনি গিয়ে আন্টিকে কম্পলেইন করছি দাড়াও। তুমি আমার সাথে আবার বেয়াদবি করছো

কুবরাঃ দশটা নই বিশটা নই একটাই তো জামাই আমার। জামাইয়ের সাথে শয়তানি না করলে তো কার সাথে করবো বলো তো। ( নাদিমকেও জড়িয়ে ধরে)

“ কারো রোমান্টিক কথাবার্তা শেষ হলে একটা বের হবেন? বলি তোমাদের জন্য কি না খেয়ে বসে থাকবো?? বাকি সব তো বিয়ের পরেও বলতে পারো!! ”

দরজার বাইরে থেকে ডাক পড়ায় দুজনেরই টনক নড়ে উঠে যে তারা চেঞ্জিং রুমে আছে। অনেকে হয়তো বাইরে ওয়েট ও করছে। আবার খাওয়ার টাইম ও চলে এলো।

দরজা খুলে দেখে বাইরে মিমি বুকে হাত গুজে তাদের পানে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

নাদিমঃ এই পাকনা বুড়ি… সবসময় আমার ইম্পোরটেন্ট কাজে বেঘাত ঘটানো তোর জন্মগত অভ্যাস তাই না ( মিমির মাথায় থাবড় দিয়ে)

মিমিঃ আহহহ… দশটা নই বিশটা নই একটাই মাত্র বোন+ ননদ!! আমি একটু ব্যাঘাত ঘটাবো না তো কে ঘটাবে??

লজ্জায় কুবরার ইচ্ছে করছে এক্ষনি পালিয়ে যেতে। এর মানে তাদের বলা কথা সবকিছুই বাইরে শুনা যাচ্ছিলো।

নাদিমঃ তবে রে… তোকে দাড়া আমি…।

মিমিঃ এইইইই এইই একদম আর মাথা দিয়ে মারবি না। জানো এই মাথায় কতো বুদ্ধি জমিয়ে রাখি? তুমি মেরে মেরে আমার বুদ্ধি গুলো নাড়িয়ে দাও। আর শোনো আমি এখানে ফ্রিতে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছিলাম বলেই এতোক্ষন শান্তিতে ছিলে। নাহলে বলো তো এতোক্ষণে কতো জন ডাক হাকতো?

নাদিমঃ এই তুই দেখছি বড্ড পেকে গেছিস। দাড়া আমি ফুপি কে বলে তোকে আমি কতো পিটা খাওয়াই দেখ। বড় ভাইয়ের পারসোনাল টাইমে ডিস্টার্ব করা তাই না??

মিমিঃ ভাবিইইই দেখো তোমার পচা বাদাম হাসবেন্ড আমাকে সবসময় এভাবে মারতে থাকে।

কুবরাঃ ভাই তোমাকে আমি এত্তোগুলো চকলেট দিবো, প্লিজ এসব কথা বলিও না। আসো আসো তোমার ক্ষিদে লেগেছে তো তোমায় আমি আজ ট্রিট দিবো। চলো।

” শুধু ও কেন পাবে? আমরা কে বানের জলে ভেসে এসেছি নাকি?? ”

কুবরা আর নাদিম পেছনে ফিরে দেখে সেখানে সাদাফ, শুভ্রা, আবির, ইলিয়ানা, পারভেজ দাড়িয়ে আছে।

কুবরাঃ ক.. কেন? তোমাদের আমি কোন দুঃখে ট্রিট দিতে যাবো বলো তো??

“ দশটা নই বিশটা নই কয়েকটি মাত্র ভাইবোন আমরা আমদের ট্রিট কেন দেওয়া যাবে না?? ” ( সকলে একসঙ্গে বলে উঠে)

নাদিম আর কুবরার মুখ এই অবস্থায় দেখার মতো হয়েছিলো। লজ্জায় দুজন কুকড়ে যায়। কুবরাতো পালিয়ে মায়ের কাছে চলে যায় আর নাদিম কাতুকাতু করে মাথায় হাত দিয়ে ইনিতেবিনিতে থাকে। দুজনের চরম লজ্জায় পড়ে যাওয়ার চিত্র দেখে হু হা করে হেসে উঠে সকলে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here