অচেনা তুমি পর্বঃ৪২

0
472

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪২

বিষণ্ণ সকাল। মেঘরাঙা কুয়াশায় মগ্ন পল্লব রাশিতে বার্তাহীন লজ্জার আভাস। আকাশের মাথায় এক মুঠো কোমল রোদ্দুর। বাগানের গাছের পাতায় পাতায় মুক্তোর দানার মতোই ছড়িয়ে আছে শিশিরভেজা ভোর। দুর্গম বড় বড় গাছের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা সূর্যরশ্মিতে চিকচিক করছে শিশির ফোঁটার গা। স্তব্ধ নীরবতা কাটিয়ে মাঝে মাঝেই ডেকে উঠছে অচেনা অথিতি পাখির ঝাঁক। কোথাও বা উঁকি দিচ্ছে কাঠবিড়ালী।

বাইরের পরিবেশটা যতো রোমাঞ্চকর তেমনি বাড়ির ভেতরের পরিবেশে টা আরো উৎফুল্লতাপূর্ণ আনন্দময়।

শুভ্রার মাঃ আরে হ্যা হ্যা আমাদের কুবরারই বিয়ে।আমি কিন্তু এইবার ও আপনাদের আসা চাই ই চাই।

————————–

শুভ্রাঃ কি ও এখনো আছে? তাহলে তো ভালো কথা। এক কাজ করেন আপা আজকে রাতের ফ্লাইট ধরে চলে আসেন। আসলে বেশি ঘটা করে করছি না। কুবরার হবু শশুর একটু পরহেজগার মানুষ তো তাই আর কি কম সংখক মানুষ জন নিয়ে ছোট করে সারিয়ে নিচ্ছি। আর আপনারা তো আমাদের পরম আত্মীয়। ছোটবেলা থেকেই মানুষ করেছেন। আপনার আসা কিন্তু চাই ই চাই।

_____________________

শুভ্রার মাঃকোনো কথা মানছিনা আমি। আজ কালের মধ্যেই আসবেন আর কোনো হোটেল ও বুকিং নয়। বিয়ে যখন এই বাড়ি তো সোজা এই বাড়িতেই আসবেন।

————–_————-

শুভ্রার মাঃ আচ্ছা সেই কথা কিন্তু। রাখছি, দ্রুত সম্ভব চলে আসবেন।

এই বলে শুভ্রার মা ফোনটা কেটে দিয়ে আবার আলোচনায় মনোযোগ দেন।

সাদাফের মাঃ আমি যদ্দুর ভাবছি উনি নিশ্চয় পারভেজের আম্মা?

শুভ্রার মাঃ হুম পারভেজ এখনো নাকি দেশে আছে। উনি একা থাকলে ওতো জোরাজোরি করতাম না। কিন্তু এখন তো পারভেজ আছেই। এখানে বিয়েতে আসলে একটু ঘুরাঘুরি ও হয়ে যাবে ছেলেটার।। সারাক্ষন তো বাড়িতে মায়ের পিছু পিছু থাকে।

ইলিয়ানার মাঃ হ্যা তা ঠিক আমার দেখেই লেগেছিলো। ছেলেটা অত্যান্ত ভদ্র, শান্ত শিষ্ট। আমার বেশ লেগেছিল। এবার এরকম একটা ছেলে আমার ইলুর জন্য গেথে দিলেও আমিও বেচে যাই। বয়স তো কম হলো না।

শুভ্রার মাঃ এক কাজ করতে পারেন তো। আপনাদের যদি অসুবিধে না হয় পারভেজের মা আসলে উনার সাথে না হয় কথা বলে দেখতে পারেন।

ইলিয়ানার মাঃ কি বলছেন কি শুভ্রার মা! ওতো বড় একজন বিদেশের ডাক্তার। আর শুনলাম অনেক খানদানি মানুষ। তাদের কি করে আমি এই প্রস্তাব দিবো? তাছাড়া মেয়ের বাড়ি থেকে প্রস্তাব পাঠানো কেমন না??

শুভ্রার মাঃ কেমন আবার কি? মেয়ে পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো সুন্নত যে আরো৷ আর মিনু ভাবির ডিমান্ড হলো মেয়ে যেন ভদ্র, নম্র আর পরহেজগার হয়। আর আমাদের ইলিয়ানা তো আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এক্কেবারে সুপাত্রীর সুলক্ষণা মেয়ে বলতে।

ইলিয়ানার মাঃ তা ও। আমাদের তুলনায় উনারা অনেক উচুতে। আর শুধু কি মায়ের পছন্দতে হবে ছেলে যদি নাকচ করে, ছেলের ও তো একটা চাহিদা থাকতে পারে! না শুভ্রার মা বলার দরকার নেই। আল্লাহর হুকুম থাকলে ও সময় মতো একদিন ঠিক কিছু না কিছু হবে।

কিছুদূরে শুভ্রা আর ইলিয়ানা রান্নাঘরে কাজ করছিলো। ড্রয়িং রুমে বসে মায়েদের আলোচনা কিছু কিছু কানে ভেসে আসছিলো ইলিয়ানার কানে। মায়ের এহেন কথায় আচমকাই থমকে যায় ইলিয়ানা। কেননা এর আগে পারভেজকে সেই নজরে নেয় ই নি ইলিয়ানা।

তাছাড়া শুভ্রার মায়ের এগ্রোসিভ কথা শুনে তার মনে পারভেজকে নিয়ে রীতিমতো সঙ্কুভ আর লজ্জা ভর করছে। যাকে নিয়ে এসবের কানাকড়িও মনের মধ্যে ঠাসা পরিমাণ ভাবনা আসে নি তাকে নিয়ে এতোসব চিন্তা ধারনা তার মায়ের। অথচ বিয়ের কথা শুনে কেমন এক অজানা রাশময় লজ্জা ভর করে ইলিয়ানার মুখে।

সন্ধ্যার ফ্লাইটে তোরজোর করে পারভেজ কে টিকিট কাটায় তার মা। যথাসম্ভব জোর করেই তাকে নিয়ে আসেন তিনি। আর আগের বারেও ঝড়বৃষ্টির জন্য অগত্যা কতোদিন তাদের বাড়ি থেকে যেতে হয়েছিলো। আর এখন তো বিয়ের এতোদিন আগে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।

প্লেনে উঠার আগে এয়ারপোর্টে বসে এই নিয়েই কথা বলছে পারভেজ আর তার মা।

পারভেজঃ আচ্ছা আম্মা এটা কোনো কথা বিয়ে কবে শুক্রবার আর আজ তো রোববার। এতোদিন আগে যাওয়ার কোনো মানে হয়?

পারভেজের মাঃ তুই সেই তখন থেকে এই একই কথা বলে ঘ্যানঘ্যান করছিস কেন রে? আমার আর কতো ভালো লাগে বল একা একা ওই বাড়িতে বসে থাকতে? আগে তো তুই ছিলি না কুবরা আর তার মাকে নিয়ে কোনো মতে সময় কাটতো। এখন তো অর্ধেক সময় তুই বাড়িতেই থাকিস না। একা একা আমার একদম ভালো লাগে না। তার চেয়ে বরং একটু বেড়িয়ে আসলে ক্ষতি কি?

পারভেজঃ তাও আম্মা। শুভ্রা রাই তো আমাদের পরিচিত মাত্র। আর কেউ তো না। এতোদিন আগে গেলো তারা তো বিরক্তবোধ ও করতে পারে।

পারভেজের মাঃ বেশি বুঝিস তুই। মানুষ চিনতে আমার মোটেও ভুল হয় না। ওরা অনেক ভালো মনের মানুষ। শুভ্রার বিয়েতে ওতোদিন মিশে ওদের সাথে বেশ ভালোই সম্পর্ক হয়েছে। চল দেখ আমাদের ফ্লাইটের টাইম হয়েছে মনে হয়।

পারভেজঃ হ্যা আমাদের ই ফ্লাইট এবার চলো।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে সকলেই ঘুমুতে যাওয়ার জন্য চলে যাচ্ছে একে একে। অনেকেই ইতিমধ্যে ঘুমুতে চলে গিয়েছে। হঠাত কলিং বেল বাজাতে চমকপ্রদ হয়ে যায় আচমকা সকলেই। কে এলো হঠাৎ এতো রাতে!

দরজার ধারে ইলিয়ানা থাকাতে সে ই দরজা খুলে দিতে যায়। দরজা খোলার পর ওপারে দাড়িয়ে থাকা লোকটি কে দেখে সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আসলেই যাকে দেখছে সে এসেছে নাকি তাকে নিয়ে সারাদিন মাথার মধ্যে উলটাপালটা ধ্যানধারণা ঘুরছিলো বলে শুধুই চোখের মরিচীকা!!

হ্যা দরজার উপারে ইলিয়ানা পারভেজকেই দেখতে পাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সে সত্যি সত্যিই পারভেজ এখানে এসেছে। কিন্তু এতো রাতে!!

পারভেজ গলা ঝাকরি দেওয়াতে কিছুটা চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে আসে ইলিয়ানা। ততোক্ষণে সাদাফ এবং তার বাবাও ইলিয়ানার পেছনে এসে দাঁড়ায়।

সাদাফের বাবাঃ কি রে এতো রাতে কে এসে….আরে পারভেজ!!!

পারভেজ বিনয়ের সাথে সালাম বিনিময় করে তারপর তার পাশে দাড়িয়ে থাকা তার মা। ইলিয়ানা এতোক্ষণ পারভেজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকায় পাশে দাড়ানো তার মাকেই খেয়াল করে নি। এরপর ইলিয়ানা, শুভ্রা আর সাদাফ তার বাবা ও পারভেজের মা কে সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকায়।

পারভেজের মাঃ আসলে এতোটা দেরি হয়ে যাবে ভাবতে পারি নি। ঢাকা শহরে এতো জ্যাম! আমরা তো ঢাকায় পৌছেছি ৯ টার দিকে। রাস্তার জ্যামে দু/ আড়াইঘন্টা লেট হয়ে গেলো। আর এতো রাতে আমরা এখানকার কিছুই চিনি না বলে হোটেলেও উঠতে পারিনি। তাই বাধ্য হলাম এতো রাতে আপনাদের বিরক্ত করতে।

সাদাফের মাঃ এমা এভাবে বলছেন কেন? আপনারা তো আমাদের খাস মেহমান। বিরক্তি আবার কিসে? একদম ফার্স্ট ক্লাস কাজ করেছেন সোজা এখানেই চলে এসেছেন। বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্নে এসেছেন, রাত হয়েছে বলে হোটেলে থাকতে হবে নাকি?

পারভেজের মাঃ আসলে কাল আর পরশুর মধ্যে নাকি কক্সবাজার থেকে ঢাকার কোনো ফ্লাইট ই নেই। তাই তোরজোর করে আজকের ফ্লাইটেই চলে আসতে হলো।

শুভ্রার মাঃ একদম ঠিক করেছেন। তাছাড়া মানুষ জন না থাকলে কি বিয়ে বিয়ে মনে হয় নাকি? আমাদের তো আপনারা ছাড়া কাছের মানুষ বলতে খুব কম। এখন আপনারাই না থাকলে কি করে হয়!

সাদাফের মাঃ হ্যা। আর আমারা আত্নীয় স্বজন কমই ডেকেছি। এছাড়া যারা আছে তাদের বাড়ি সবারই কাছাকাছি। আপনিই বলুন বিয়ে বাড়িতে আত্মীয় স্বজন না আসলে কি বিয়ে বিয়ে ভাব মনে হয় নাকি??

শুভ্রার মাঃ দেখেছো তো। আপনারা কতো দূর থেকে এসেছেন নিশ্চয় খুব টায়ার্ড লাগছে। এই শুভ্রা যা তোর মিনু আন্টিকে গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে রেস্ট করতে দে আমি ততোক্ষণে খাবার দাবার নিয়ে আসছি।

পারভেজের মাঃ আরে না না এতো ব্যস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আসার সময় ক্ষিদে পেয়েছিলো বলে মা ছেলে টুকটাক খেয়ে নিয়েছিলাম। অনেক রাত তো হলো।

শুভ্রাঃ কোনো কথা না মিনু আন্টি চলো। বাইরের খাওয়া নিয়ে কতোক্ষন থাকবা। আসো ফ্রেশ হয়ে নাও আগে।ভাইয়া তুমিও আসো।

এরপর শুভ্রা পারভেজ আর তার মাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায় আর ফ্রেশ হয়ে তাদের হালকা খাবারের ব্যবস্থা ও করে। এরপর প্রায় রাত দেড়টার দিকে ঘুমুতে চলে যায়।

?????

“ আম্মুউউউউউ…….. মিনু আন্টি আর ভাইয়া আসছে নাকি কাল রাতে!!! ”

সকাল বেলা ডাইনিং এ শুভ্রা, ইলিয়ানা, সাদাফ আর তাদের মা বাবা বসে নাস্তা করার ব্যবস্থা করছিলো। কাল কুবরার মাথা ব্যাথা করায় তারাতাড়ি ঘুমিয়ে যায় সে। সকাল বেলা সুভ্রা ঘুম থেকে ডাকতে যাওয়ায় ঘুম থেকে যখন উঠছিলো না তখন এই কথা বলে শুভ্রা। মিনু আন্টি আর পারভেজের কথা শুনে এক লাফে উৎসাহিত হয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় কুবরা। কিন্তু ততোক্ষণে শুভ্রা তার রুম থেকেই বেরিয়ে যায়। তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রেশ হয়ে রেডি হিয়ে নিচে চলে এসে এ কথা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে কুবরা।

শুভ্রার মাঃ রসো… রসো…। আপনার এতোক্ষনে খবর হলো। কাল রাত এতো হৈচৈ কানে বিন্দুমাত্র ও গেলো না?

কুবরাঃ বললাম না আম্মু…. কাল না মাথা টা খুব ব্যাথা করছিলো। তাই ওষুধ খেয়ে ঘুমটা বেশি হয়ে গিয়েছিলো বোধহয় ( মাথাটা চেপে ধরে)

শুভ্রার মাঃ ও… মাটা টা ব্যাটা কচ্ছিলো…( ভেঙিয়ে) বলি চব্বিশ ঘণ্টা ওই মোবাইলটা নিয়ে গুটে বসে থাকে মাথা ব্যথা না করে আর কি করবে শুনি? পেয়েছিস তো ভাইয়ের দিন্না মাগনা মোবাইল। তোর চোদ্দগুষ্টি কি আগে মোবাইল দেখে নি নাকি? সারাক্ষণ শুধু ওই মোবাইলে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর। ( কুবরার কান টেনে ধরে) ।

শুভ্রার মাঃ লাগুগ। আজ বাদে কাল বিয়ে এখনো কিছু শেখা নেই, কওয়া নেই মাথা ব্যাথা বলে সারাদিন ঘুমুলে হবে? বলি শশুর বাড়িতে কি শুধু সেজেগুজে বসে থাকতে যাবি?

কুবরাঃ উফফ আম্মু কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বলোতো তুমি! বলেছি মিনু আন্টি আর ভাইয়া এসেছে নাকি আর তুমি সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোবাইলের দিকে নিয়ে যাচ্ছো!

” একেই বলে যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া পড়শির ঘুম নেই ”

পেছন থেকে চেনা কন্ঠ কানে ভেসে আসতে ফিরে দেখে মিনু আন্টি বুকে হাত গুজে কুবরার পানে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।

কুবরা মিনু আন্টিইইইইই বলে আগে সালাম করে তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উনাকে। মিনু আন্টি কুবরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন ” বলি তোর কি কখনোই বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না রে! আজ বাদে কাল বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর তুই এখনো বাচ্চাদের মতো আচার আচরন করছিস? ”

কুবরাঃ এই তোমারা দেখছি জোর করে আমায় টেনে টুনে বুড়ো বানিয়ে দিচ্ছো। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে নিশ্চয় এখন পর হয়ে গেলাম। সারাক্ষন দেখি বিয়ে বিয়ে বিয়ে বলে ভো ভো করতে থাকো। ( ঠোঁট উলটে)

কুবরার ন্যাকাময় কথা শুনা ডাইনিং এ বসা সমলেই হু হা করে ভুবন কাপানো হাসিতে ফেটে পড়ে।

কুবরাঃ আজব!! হাসির কি হলো? আমি কি হাসির কিছু বললাম নাকি… আচ্ছা ভাইয়া কোথায় দেখছি না যে?

পারভেজঃ দেখবি কোথায় তোর চোখ আছে নাকি?

কোথা থেকে পারভেজের কণ্ঠ কানে আসাতে এদিক ওদিক তাকায় কুবরা। হঠাৎ লক্ষ করে পারভেজ এতোক্ষণ সাদাফের পাশের চেয়ারেই বসেছিলো। মুলত এক্সাইটমেন্টের বসে ডাইনিং এ বসা কাউকেই ভালো করে লক্ষ করতে পারে নি কুবরা।

কুবরা চোখ ডলতে ডলতে পারভেজের দিকে তাকাতেই বলে “”উঠে তোকে দেখছি মাথার সাথে সাথে চোখের ও চিকিৎসা করতে হবে। বিয়ের আগে তো সবকিছুর স্ক্রু ই ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। “”

কুবরাঃ ভাইয়ায়ায়ায়া……!! এভাবে চুপচাপ কুনু ব্যাঙ এর মতো এক কোনায় বসে থাকলে তোমায় আমি দেখবো কি করে! আর তুমি থাকতে আমার বাইরে চিকিৎসা করতে কেন হচ্ছে? তুমি আছো না,, ফ্রিতে করে দিবা ??।

পারভেজঃ আসলেই তোর মাথাটা গেছে একেবারে। তুই ভুলে গিয়েছিস আমি একজন সাইকোলজিস্ট। চোখ মাথা দেখা আমার কাজ??

কুবরার বোকামিতে এবারো সকলে হেসে উঠে তার উপর।

হাসি ঠাট্টা আড্ডা দিতে দিতে সকলে মিলে সকালের খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ে।

প্রায় ১১ টার দিকে নাদিম এবং তার এক ফুপি আর ছোট একটা ফুপাতো বোন কে নিয়ে সাদাফদের বাড়িতে আসে। তার বাবার একজনই বোন রয়েছে যিনি নাদিমের ফুপি হোন। আর তার এক মেয়ে আরেক ছেলে। ছেলে বিদেশে পড়াশুনা করে ছোট মেয়ে ক্লাস ৮ এ পড়ে। নাদিমের ফুপি দেখতে বেশ বিচক্ষনমাত্রিক, শান্ত শিষ্ট, ভদ্র একজন মহিলা।

নাদিম এতো তারাতাড়ি চলে আসার মূলত একটাই কারণ আর সেটা হলো কুবরার মাথাব্যথা বলে কাল রাত একফোঁটা ও কথা বলতে পারে নি তারা। যোগাযোগ এর পর থেকে কাল রাতই প্রথম হবে হয়তো যে নাদিম – কুবরা কথা না বলে থেকেছে।

হম্বিতম্বি করে নাদিম আগে বাড়িতে ঢুকে। পেছন পেছন তার ফুপু আর ফুপাতো বোন ও আসে। আসার পর নাদিম সকলের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। ড্রইং রুমে কুবরা ছাড়া সকলেই উপস্থিত থাকায় আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে নাদিম। পাশে সাদাফ দাঁড়িয়ে থাকায় কানে কানে কথা বলে সাদাফের সাথে নাদিম।

নাদিমঃ এই সাদাফ কুবরাকে দেখতে পারছি না যে। আচ্ছা ও কি এখনো অসুস্থ?? ( ফিসফিসিয়ে)

সাদাফঃ মাগো মা… তোর দেখছি এখন থেকেই বউকে নিয়ে খুব চিন্তা! আসতে না আসতেই আমাদের খবর দবর না নিয়ে সোজা হবু বউয়ের খোজ!

নাদিমঃ ধুর বেডা আস্তে কথা বল না শুনবে তো সবাই। ভাই আম সিরিয়াস, প্লিজ বল না।

সাদাফঃ এ মিয়া দেখো কেমন লাগে… আমার বেলায় কি কি করেছিলে, বলেছিলে মনে আছে?? আমি তো প্রতিশোধ নিবোই নিবো। আপনা টাইম আয়া হ্যা আব।ওই দেখ তোর বউ কেমন নেচে নেচে আসছে।

সাদাফ আর নাদিম কথা বলতে বলতে কুবরা আর ইলিয়ানা রেডি হয়ে উপর থেকে আসছে। কুবরা সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নামার কারনেই সাদাফ এমন কথা বলেছে।

নাদিম যতো কুবরাকে দেখে ততোবারই যেন তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারে না। অপলক ভাবে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে তার প্রিয়দর্শীনীর দিকে। ইচ্ছে করে যেন সারাক্ষন তাকিয়ে থাকতে। আর যবে থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছে তবে থেকে চেহারায় কেমন লাজ লাজ রুপ ধারন করেছে। এখন আর নাদিমের সাথে আগ বেয়ে ঝগড়া করে না, কথার কথা পিঞ্চ মেরে খুটা দেয় না। বরং লজ্জা ভরতি মুখ নিয়ে আরো লুকিয়ে লুকিয়ে থাকার, দেখার চেষ্টা করে।

নিচে নেমেই দেখে নাদিম হা করে অপলকভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকাল নাদিমকে এভাবে তাকিয়ে দেখতে মনের মধ্যে কেমন লজ্জা বিরাজমান করে। আচমকায় মুখ ফুটে বেয়ে আসে মুচকি হাসি। তবু এখন আর আগের মতো চোখে চোখ রেখে কথা বলতে লজ্জা করে।

শুভ্রার মাঃ এই কুবরা এদিকে দেখ কে এসেছে।

কুবরা নাদিম কে পাশ কাটিয়ে তার মায়ের কাছে ছুটে যায়।

শুভ্রার মাঃ ইনি হলেন তোর ফুপি শাশুড়ি। আর ও হলো উনার মেয়ে।

কুবরা তাকিয়ে দেখে একজন বোরকা পরিহিতা মিষ্টপুষ্ট গোলগাল চেহারা নিয়ে একজন ভদ্র মহিলা আর পাশেই চঞ্চলতাভাব পূর্ণ চেহারা নিয়ে এক কিশোরী। কুবরা বিনয়ের সাথে নাদিমের ফুপিকে সালাম করে তারপর তিনিও কুবিরাকে বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করেন।

নাদিমের ফুপিঃ বাহ তুমি তো বেশ মিষ্টি মেয়ে। আমার ভাই তো দেখছি নাদিমের জন্য এক চকচকে রুপো খুজে নিয়েছেন।

কুবরা লজ্জামাখা মুখ নিয়ে চুপচাপ উনার পাশে দাড়িয়ে থাকে।

নাদিমের বোনঃ ও… তুমি বুঝি আমাদের নতুন ভাবিই…. ওয়াও তুমি কি কিউট দেখতে।

কুবরাঃ ও তাই নাকি? তুইমিও তাই একদম পমপমের মতো দেখতে। তা তোমার নাম কি?? ( গাল দুটো টেনে)

নাদিমের বোনঃ আমার নাম হলো মিমি। তোমার নাম নিশ্চয় কুবরা তাই না? আমি তো শুনেছি ভায়া আর মামার কাছ থেকে।

কুবরার মাঃ বাহ তোমার দেখছি আমার কুবরার সাথে খুব মিল!! তোমার কথাবার্তা, আর স্বভাব সবই আমার এই মেয়ের মতো।

মিমিঃ হ্যা তাই তো আমি ভাবিকে না দেখার আগেই পছন্দ করে নিয়েছি। গম্ভির, চুপচাপ, হলে কি আর আমার বন্ধু হতে দিতাম নাকি? কি গো ভাবি আমি তোমার বন্ধু হতে পারি না?

কুবরাঃ নিশ্চয় কেন না? এখন থেকে তো তুমি আমার বন্ধু ই। আমরা সবসময় একসাথে থাকবো এভাবে। ( মিমিকে জড়িয়ে ধরে)

কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ড্রইং রুমে মিমি আর কুবরার হল্লা শুরু হয়ে যায়। সাথে সাদাফ, শুভ্রা, ইলিয়ানা, আবির ও। পারভেজ ও গল্পগুজব করছে তবে কম কম। কারণ কম কথাবার্তা বলতে সে পছন্দ করে তাই।

নাদিমও বেশ খুশি যে কুবরাকে তার পরিবার পছন্দ করেছে। সে আরো ভেবেছিলো কুবরার চঞ্চলতা পূর্ণ আচরণ তার ফুপির আরো পছন্দ হবে না। তা ভুল প্রমান করে তিনি বার বার নাদিমের কাছে এসে কুবরার ই প্রশংসা করছেন। খুশিতে যেন মনটা তার ভরে উঠেছে। আজ সত্যিই মনে হচ্ছে আল্লাহ তার মনের ইচ্ছে কতোটা সুন্দর এবং নিখুত ভাবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পূর্ণ করছে। নিজেকে সত্যিই বড্ড সুখী মনে হচ্ছে।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here