#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪১
এই ওইদিন ওটা কে ছিলো রে বলতো!! কিরকম হিরোর মতো এন্ট্রি নিলো আর তোকে নিয়ে গেলো! ( উৎসাহিত কন্ঠে বলে উঠে সাফিয়া)
টিফিন টাইমে কলেজের ক্যানটিনে বসে আড্ডা বসিয়েছে শুভ্রা,কুবরা, সাফিয়া, হীরা, মুক্তা। হঠাত ই ওইদিনের কথা মনে পড়াতে জিজ্ঞেস করে উঠে সাফিয়া।
কুবরা লজ্জামাখা মুখে চুপচাপ পাস্তার প্লেটে চামচ নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাত ঘুরাচ্ছে।
হীরাঃ এই দেখ……. ম্যাডাম আবার ব্লাশিং ও করছে।
শুভ্রাঃ আরে বুঝতে হবে না? কেন লজ্জা পাচ্ছে , উনি তো উনার উনিইইইই…… তাই আর কি। ( কুবরাকে পাশে বসে ধাক্কা দিয়ে)
কুবরা হতোবাক চোখে শুভ্রার দিকে চোখ তুলে তাকায়। একথা তো তার জানার কথা নয়! সে তো সেদিন বাসায় গিয়ে বলেছিলো, কলেজের পাশে লাইব্রেরিতে গিয়েছিলো কিন্তু সেখানে এতোক্ষন খোজাখুজির পর মনমতো কোনো গল্পের বই পায় নি। তাই খুজতে খুজতে লেইট হয়ে গিয়েছিলো। আসার সময় নাদিমের সাথে দেখা হওয়াতে সে বাড়ি পৌছে দেয়। তবে আসল কথা শুভ্রা কি করে জানলো??
শুভ্রাঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তুমি মিয়া ডুবে ডুবে জ্বল খাও আর আমরা তা কেউ বুঝি না?? ভেতরে ভেতরে আমরা সাপোর্ট না করলে এতদূর আসতে পারতে??
শুভ্রার বলা কথা গুলো যেন কুবরর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তারমানে শুভ্রা আর সাদাফ সবকিছু আগে থেকেই জানতো!!
সাফিয়াঃ এই এক মিনিট এক মিনিট। শুভ্রা তুই কি কোনো ভাবে কুবরার বয়ফ্রেন্ডের কথা বলছিস??
শুভ্রাঃ হুমম…. শুধু কি বয়ফ্রেন্ড? হবু হাজবেন্ড ও বটে। কাল তো বাবা সমেত গিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। একেবারে আংটি ও পড়িয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড।
সাফিয়াঃ মাই গড..!!! আমরা অরিজিনাল ঢাকাইয়া হয়ে আজ পর্যন্ত একটা ছেলে অব্দি পটাতে পারলাম না আর তুই কিনা দুদিন আগে কক্সবাজার থেকে এসে প্রেম করে একেবারে বিয়ের পিড়িতে বসে যাচ্ছিস!!
মুক্তাঃ এই একটা জিনিস নোটিস করেছিস তোরা? কোবরা হাত কিন্তু আগে ফাকা ছিলো এখন দেখ একটা নয় বরং দুইটা আংটি। এই কাহিনি কিরে বলতো?
কুবরার লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু আসছে ও না। জীবনের প্রথম কেউ তাকে প্রপোজ করে আর সামনে বিয়েও। বান্ধবীদের জোরাজোরিতে সেদিনের কথা সবকিছুই খুলে বলে তাদেরকে কুবরা।
সাফিয়াঃ মাই গড!!! কি রোমান্টিক!! একদম দেখি সিনেমা স্টাইল। এই তোর উনার কোনো ভাই আছে কিনা বল তো। আমার সাথে একটু সেটিং করিয়ে দে না রে। ( কুবরার গায়ে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে)
সাফিয়ার কথা শুনে কুবরার লজ্জামাখা মুখটা যেন কিঞ্চিত ভয় মিশ্রিত হয়ে উঠে। না জানি আসল কথা জানলে কেমন রিয়েক্ট করে বসে।
হীরাঃ এই শুরু হলো তো তোর হেংলা বাজি। কিছুদিন আগে শুভ্রাকে মনে হয় তার দেবরের কিংবা বন্ধুর কথা বলেছিলি মনে হয়?
সাফিয়াঃ ধুর বাবদে তো। ওই হারামি তো সেটিং তো দূরের কথা সেদিনের পর তো আর এব্যাপারে কথাই বলে না। এই বল না কুবরা ( দাত কেলিয়ে হেসে)
শুভ্রাঃ উনাকে বলে কি লাভ হবে। উনি নিজেই তো সেই বন্ধু দেবর কে নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসছেন। বলছি সাফু মেডাম উনি সেই যার কথা আমি সেদিন বলেছিলাম।
শুভ্রার কথা শুনে হীরা আর মুক্তা তো হাসিতে ফেটে পড়ছে। হাসতে হাসতে একেবারে পেট চেপে ধরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। আসলে হবে নাই বা কেন, সাফিয়ার চেহারাটা যা বানিয়ে রেখেছে তা হাসার মতোন।
সাফিয়াঃ ওরে বাটপার। তুই ভেতরে ভেতরে এসব চালিয়ে যাচ্ছিস তোর এই মাসুম সিঙ্গেল বান্ধবীটাকে অনাথ রেখে বিয়ে করে নিচ্ছিস! তুই কতো বড় হারামি রে? ( কুবরার পিঠে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে)
কুবরাঃ ভাই আস্তে আস্তে। সেদিন কি আর আমি জানতাম। তাছাড়া তার আগেই বুকিং হয়ে গিয়েছিলো। সরি রে দোস্ত। তোর জন্য নিশ্চয় আমি এই একটা হিরোর মতো জামাই খুজে দিবো। এক্কেবারে হিরো আলম!! ??
হীরা আর মুক্তা আবারো কুবরার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সাথে শুভ্রা ও।
সাফিয়াঃ তবে রে৷ কূটনি বুড়ি তোকে আমি ছাড়বো না……( এই বলে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে সারা মাঠ কুবরার পেছনে ধাওয়া শুরু করে সাফিয়া)
হাসি ঠাট্টায় আন্দনে তারা কলেজ শেষে বাড়ি ফিরে দুই বোন।
বাড়ি ফিরে এসে রীতিমতো সারপ্রাইজড দুজনে। কারণ কলিং বেল দেওয়ার পর দরজা খোলাতে ওপারে ইলিয়ানাকে দেখতে পায় তারা।
কাল রাতেই বিয়ের কথা জানায় ইলিয়ানা আর বাকি কয়েকজন আত্মীয়স্বজনকে। মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকাতে ইলিয়ানাদের তারাতাড়ি চলে আসতে বলে। তাই তারা আজই চলে আসে। কিন্তু তারা কবে আসবে সেটা ইক্সেক্ট টাইম বলে নি। শুভ্রা কোবরার সাথে বাড়ির বাকি সবাই ও সারপ্রাইজড সাথে খুশি ও হয়।
ইলিয়ানাকে দেখা মাত্র দুজনেই “ইলু আপ্পি.!!” বলে জড়িয়ে ধরে তাকে।
ইলিয়ানাঃ কি রে বুড়ি। তোরা দেখছি খুব ফার্স্ট। প্রেম করে এখন সোজা বিয়ে করে ফেলছিস?
কুবরাঃ তুমিও করে নাও না আপু। তোমারও বিয়ে খাবো ??
ইলিয়ানাঃ হুম বললেই হলো। বড় বোনকে রেখে বিয়ে করে নিচ্ছিস। আমায় তো টাইম ই দিলি না।
কুবরাঃ হুম তোমার জন্য না একটা পাত্র দেখতে হবে। খুব সুন্দর, বড়লোক হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং দেখতে। তারপর তার সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে দিবো কেমন? ( বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে)
ইলিয়ানাঃ না রে এখন আর আগের মতো সেসব আশা নেই আমার। একজন দ্বীনদার, ভালো, সতচরিত্রের, মানুষ কেই আমার পার্টনার হিসেবে চাই। না হোক সে ধনী তবে তার মন যেন হয় পরিষ্কার আর সে যেন হয় সৎ।
ইলিয়ানার কথা শুনে শুভ্রা আর কুবরা এখন আর অবাক হয় না। এই কয়েকদিনে সে বেশ বদলে গিয়েছে। স্বভাব চরিত্র আচার আচরন আগের সবকিছু এখন ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়েছে। যার আচরণে পাওয়া যায় শুধু মুগ্ধতা।
শুভ্রাঃ হবে হবে সব হবে। আল্লাহ তোমার জন্য একটা এত্তো ভালো রাজপুত্তুর রেখেছেন। সময় মতো সেটা টুক করে তোমায় উপহার দিয়ে দিবেন ( ইলিয়ানাকে পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে)
ইলিয়ানাঃ হুম দিবে টুক করে , দুটো পাকনা বুড়ি। চলো আগে ফ্রেশ হয়ে এসো।
সন্ধ্যায় ইলিয়ানাদের সাথে আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়ে সকলে মিলে। শুভ্রা আর কুবরা বিয়ে পর্যন্ত কোনো পড়তে বসবে না প্লেন করে। আর এ কথা টা যেন শুভ্রাই সাদাফকে বলে সেটার জন্য বায়না করছে কুবরা। কুবরা ও বোনের কথাতে রাজি হয়ে যায়। কারন বিয়ে বাড়ির এতো এক্সাইটমেন্টে তার নিজেরও পড়াতে মন বসবে না।
কিন্তু সাদাফ তো সেটা মানে না। ঝড় হোক, তুফান হোক, কোথাও বেড়াতে গেলেও সেদিন ই তাদের পড়তে বসতে হয়। পড়ানোর সময় যেন পাক্কা একজন টিচার হয়ে উঠে সে।
সন্ধ্যা ৭ টায় বাড়ি ফিরে সাদাফ। বাসায় এসেই দেখে বারান্দায় আবির আর ইলিয়ানার বাবা, তার বাবা মিলে খেলা দেখছে। এর মানে ওরা নিশ্চয় বিয়ের নিমন্ত্রণে চলে এসেছে। ইতিমধ্যেই বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
শুভ্রা আর কুবরা ইলিয়ানার সাথে গেস্ট রুমে বসে কথা বলছিলো। সাদাফ আসার খবর পেয়ে সাদাফের জন্য গরম গরম কফি নিয়ে যেতে যেতে দেখে সাদাফ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে।
শুভ্রা তোয়ালেটা নিয়ে সাদাফ কে খাটে বসিয়ে মাথার চুলগুলো মুচে দিচ্ছে।
সাদাফঃ বাহ আজ হঠাত এতো সুন্দর করে চুল মুছে দিচ্ছো। ( শুভ্রার কোমর জড়িয়ে ধরে)
শুভ্রাঃ কেন? ভালো লাগছে না বুঝি? আচ্ছা ঠিক আছে আপনি করুন রেখে দিলাম।
সাদাফঃ আহা রেগে যাচ্ছো কেন? মুড সুয়িং হলে বুঝি এভাবে কথার কথা রেগে যেতে হয়? আমি তো বললাম যে এতোদিন এভাবে চুল মুছে দাও নি যে? কত্তো শান্তি লাগছে জানো…. । এবার থেকে রোজ এভাবে চুল মুছে দিবে কিন্তু আমায়। ( শুভ্রার বুকে মুখ গুজে)
ইলিয়ানা সাদাফের রুমের সামনে দিয়ে পাশের রুমে তার মায়ের কাছে যাচ্ছিলো। হেটে যাওয়ার সময় সাদাফের কথা কানে ভেসে আসাতেই কৌতুহল বশত চোখ চলে যায় তাদের রুমে। সাদাফ শুভ্রার ওমন অবস্থা দেখাতেই সটান চোখ ফিরিয়ে নেয় ইলিয়ানা। হঠাৎ নিজের মনে আবার সেদিনের ঘটা ঘটনা মনে পড়ে যায় তার। নিজের নিজেকে এখন ভাবতে খুন ছোট মনে হয়। সারাক্ষণ এই চিন্তায় থাকতো যে কিভাবে তাদের বিয়েতে ব্যাঘাত ঘটানো যেতে পারতো। অথচ আজ তারা এক হতে পেরে কতো সুখী!!
ভাবামাত্র নিজের লজ্জা কাটিয়ে খুশিতে ভরে উঠে তার মন। তার ফিরে আসার কারণে আজ দুটি ভালোবাসা এক হতে পেরেছে। তাই আজ তারা কতো সুখী। আর কদিন বাদে আরো দুটি ভালোবাসা এক হতে যাচ্ছে। হাসি মুখে দ্রুত হেটে সেই জায়গা প্রস্থান এবং ইলিয়ানা।
শুভ্রাঃ আরে আরে কি করছেন কি? দরজাটা খোলা কেউ দেখে ফেলবে।
সাদাফঃ দেখুক। আমার বউকে আমি আদর করছিব। বাইরের মানুষকে তো আর না। ( আদুরে কন্ঠে)
শুভ্রাঃ বলছি যে শুনেন না। বাসায় তো মেহমান এসেছে দেখেছেনই। এই কয়েকদিন পর্যন্ত না হয় পড়তে না ই বসলাম। বি.. বিয়ের পরে না হয় পড়বো।
সাদাফ শুভ্রার বুক থেকে মাথা তুলে ভ্রু কুচকে তার দিকে এক মনে তাকিয়ে রয়।
সাদাফঃ কি ব্যাপার শুভি! তুমি তো এমন নও, আজ হঠাৎ এমন বায়না? ( ভ্রু কুচকে)
শুভ্রাঃ আপনিও না একদম। বিয়ে বাড়ির হৈ চৈ তে কি আর পড়াশোনায় মন বসে? প্লিজ প্লিজ মানা করবেন না। ( আবদারের সুরে)
সাদাফ মুচকি হেসে আবারও শুভ্রাকে আগের ন্যায় জড়িয়ে ধরে বলে “আমার এক মাত্র বউটি আমার কাছ থেকে কিছু আবদার করেছে আমি কি ফেলতে পারি?? “” খানিক বাদে কি যেন চিন্তা করে আবার বলে উঠে ” তবে বিনিময়ে আমার একটা জিনিস চাই। ”
সাদাফের প্রথম কথা শুনে খুশিতে মন নেচে উঠলেও পরবর্তী কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে শুভ্রা।
শুভ্রাঃ কি জিনিস চাই??
সাদাফঃ বেশি কিছু না এই যে…… ( নিজের মুখটা বাড়িয়ে দিয়ে)
শুভ্রাঃ এ… না না মাগো দরজাটা খোলাই রয়ে গিয়েছে। এখন নিশ্চিত কেউ দেখে ফেলবে। প্লিজ ছাড়ুন।
সাদাফঃ না ছাড়বো না। আগে দিবা তারপর যেতে দিবো।
শুভ্রাতো এবার পড়লো মহাবিপদে। কিছু একটা ভেবে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে “আচ্ছা দিবো আগে চোখ বন্ধ করতে হবে। হাত টা ছাড়ুন আমি সাথে আরও একটা জিনিস দিবো। ” ( সাদাফের গলায় ধরে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে)
শুভ্রার এহেন কথা শুনে অতি এক্সাইটমেন্টে সাদাফ শুভ্রাকে ছেড়ে দেয়। তারপর শুভ্রা সটান সরে এসে সাদাফের হাতে কফির মগটা ধরিয়ে দিয়ে হাতের বুড়ো আঙুলটা দেখিয়ে ” কচু দিবো ” বলেই পালিয়ে যায়।
শুভ্রার এমন কান্ডে সাদাফ তো পুরাই বোকাবনে চলে যায়। ” এই কি হলো কি ব্যাপার টা? এভাবে আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেলো!! উমমম…. মিসস পালাই পালাই যাস্ট ওয়েইট ফর টুনাইট। লেট মি সি যে তখন কি করে পালাতে পারো। “” ( কফির মগে চুমুক দিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে)
সন্ধ্যে হতে রাত পর্যন্ত নানা কাজে ব্যস্ত ছিলো শুভ্রা। এদিকে শুভ্রার পিছু পিছু নানা কাজ শিখতে ব্যাস্ত কুবরা সাথে ইলিয়ানা। তবে এরই মধ্যে ইলিয়ানা নানান রকমের কাজকর্ম শিখে নিয়েছে। বলতে গেলে এখন তার কাজ করতে আর শিখতে খুব ভালোই লাগে।
বাকি বড়রা সকলে মিলে বিয়ের প্ল্যানিং করছে। আর কাকে কাকে ইনভাইট করছে সেসব লিস্ট তৈরি করছে। গুনে গুনে তারা ৫০ জন মতো নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সন্ধ্যে হতে সাদাফ শুভ্রার সাথে টু টিও কথা বলে নি। শুভ্রা ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরেছে মহাশয় কিছুক্ষণ আগের ব্যাপার নিয়ে ফুলিয়ে আছেন। কাজের ফাকে এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে গেলে সাদাফ চুপচাপ তাকে এড়িয়ে যায়। এমনকি খাবার টেবিলে কি খাবে, কি দিবে জিজ্ঞেস করলে চুপচাপ নিজের খাবার নিজে বেড়ে নিয়ে খেয়ে উঠে যায় সাদাফ।
প্রথম প্রথম শুভ্রা দুষ্টুমি মনে করলেও এখন মনে হচ্ছে সাদাফ একটু বেশিই রাগ করে ফেলেছে। এই মূহুর্তে সাদাফের এড়িয়ে যাওয়া শুভ্রাকে আরো ভেতর ভেতর জ্বালাচ্ছে। যে সাদাফ শুভ্রার সামান্য এটেনশন পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যেতো এখন সে কতোটা নির্মমভাবে অবজ্ঞা করছে। এই ব্যবহার যেন তাকে মনে মনে বিষিয়ে দিচ্ছে।
খাওয়াদাওয়া বাদে আরো বাদবাকি কাজকর্ম সেরে প্রায় ১২ টার দিকে ফ্রি হয় শুভ্রা। রুমে এসে দেকগে সাদাফ খাটে আধহেলান দিয়ে মুখের উপর এক হাত ভাজ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। শুভ্রার আসার টের পেয়েও একবারও চোখ মেলে তাকায় নি। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রয়ার থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে যায় শুভ্রা।
সাদাফ মুখের উপর থেকে হাত টা নিয়ে একবার ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে আবার আগের ন্যায় শুয়ে পড়ে।
মিনিট দশেক পরে শুভ্রা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে সাদাফ এখনো আগের মতো শুয়ে আছে। শুভ্রা মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে রুমের লাইট টা অফ করে ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে এক লাফে সাদাফের গায়ে ধরাম করে গিয়ে পড়ে।
সাদাফ শুধু একবার ব্যাথায় “আহহহ….. ” করে উঠে বসে পড়ে। শুভ্রা ঘুরে সাদাফের কোলে বসে গেঞ্জির কলার চেপে ধরে।
শুভ্রাঃ ওই এসবের মানে কি?
সাদাফঃ কোন সবের আবার কি মানে? ( অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে)
ড্রিম লাইটের টিমটিমে আলোতে দুজন দুজনকে আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছে। যার কারনে শুভ্রা সাদাফের মুখের রিয়েকশন বুঝতে পারছে।
শুভ্রাঃ কি মানে……?? সামান্য একটু কারণে আমাকে এভাবে ইগনোর করছেন আপনি?? একটা কিসি ই তো দিই নি মাত্র!! তার জন্য এতো রাগ!!
সাদাফঃ উফফ শুভ্রা বাড়তি কথা বলো না তো। ভালো লাগছে না আমার। আর আমি না কোনো তোমার উপর রেগে আছি না কোনো ইগনোর করছি।
শুভ্রাঃ ওওও আমার কথা তাহলে এখন বাড়তি তাই না? এভাবে সারা রাত ঘাপটি মেরে বসে থাকবো। এখন শুভি থেকে শুভ্রা হয়ে গেলাম! বুঝছি আমাকে ভালো লাগছে না তাই না? আমিও দেখি আমাকে কি করে সরান।
সাদাফঃ উফফফ আমার ঘুম এসেছে। আমি ঘুমুতে যাচ্ছি। ( এই বলে সাদাফ ওই অবস্থাতেই শুয়ে পড়ে)
শুভ্রাঃ আ… আয়া…. আউচ…..(কপালে হাত ডলতে ডলতে)
{আসলে সাদাফ যখন বসে ছিলো তখন সাদাফের সামনে হয়ে তার কোলে শুভ্রা ও বসে ছিলো। সাদাফ যখন শুয়ে পড়ে তখন শুভ্রা ও অচমকা সাদাফের গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যার কারনে সাদাফের মাথার সাথে শুভ্রার মাথার ধাক্কা লেগে যায়। তাই সে মাথা ডলছে }
সাদাফ মাথায় হাল্কা ব্যাথা পেয়েছে তবু মুখ ফুটে শব্দ করে নি। শুভ্রাকে ওই অবস্থাতেই রেখে চোখ মুদে ফেলে সে। এসব সে ইচ্ছে করেই করছে এবং দেখছে তার রাগ ভাঙানোর জন্য শুভ্রা আর কি কি করতে পারে। কিন্তু আসলে তো সাদাফ রাগই করে নি।
সাদাফের কোনো সারাশব্দ না পেয়ে শুভ্রার ঠোঁট উলটে কান্না চলে আসার উপক্রম। কতোটা চরম ভাবে আজ তাকে অবজ্ঞা করছে সাদাফ তাকে। শুভ্রা এবার নিঃশব্দে গিয়ে কম্বল ঝাপিয়ে সাদাফের বুকের মধ্যে গুপটি মেরে শুয়ে পড়ে। একেবারে সাদাফের বুকের ভেতর ঢুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তাকে।
শুভ্রাঃ সরি….আর কোনো দিন ওরকম করবো না।এবার থেকে যা বলবেন তাই করবো। ( কান্না মিশ্রিত কন্ঠে)
এবারেও সাদাফ কিছু না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুভ্রার কথা শুনছে।
শুভ্রাঃ বললাম তো সরিইইই…… আমি আহ.. আর কোনোদিন আপনার কথা অমান্য করবো না। যখন যা করতে বলবেন তখন সেটাই করবো। এবার তো আমাকে ক্ষমা করে দিন। ( এবারে শুভ্রা প্রায় কান্নাই করে দেয়)
শুভ্রা কথা বলতে বলতে হঠাত শরীরে ভেজা ভেজা অনুভব হতেই সাদাফ বুঝে উঠে যে শুভ্রা সত্যিই কান্না করছে। সাদাফ তড়িঘড়ি করে উঠে বসে যায়। সাথে শুভ্রাকেও উঠে বসায়।
সাদাফঃ শুভিই…. তুমি কাদছো!! সামান্য এই টুকু বিষয়ে কাদতে হয়?
শুভ্রাঃ তো কাদবো না? কি করে ইগনোর করছেন আপনি আমায়? নিশ্চয় এখন আমাকে আর ভালো লাগছে না। ( ঢুকরে ঢুকরে)
সাদাফঃ ধুর পাগলী মেয়ে। আমি মোটেও তোমার উপর রাগ করিনি। আর ভালো না লাগার কথা আসছে কোথা থেকে? আমি তো যাস্ট একটু দেখছিলাম যে আমি রাগ করলে তুমি কি কি করো। তাই বলে কান্না করে দিতে হবে! সামান্য ইগনোর করাতে যদি এতো ইমোশনাল হয়ে পড়ো তিবে আমি যদি হঠাত একদিন মরে যাই তখন??
“এ্যা…আ……আপনি খুব খুব খারাপ। আজকে বুঝছি আমি। আসলে আমাকে কষ্ট দেওয়া এখন আপনার মেইন উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে। ” ( ভ্যা করে কেদে উঠে শুভ্রা)
শুভ্রাকে সাদাফের এই মূহুর্তে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ছোট বাচ্চা যেন চকলেট না পেয়ে মরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে।
সাদাফঃ আরে আরে বাবা সরি ঠিক আছে আর বলবো না। প্লিজ রাত বিরাতে এখন আর কান্না করো না। আর কখনো এসব নাটকও করবো না আর মরার কথা বলবো না। ( শুভ্রাকে নিজের বুকে আগলে ধরে)
শুভ্রাঃ এই আমি কি আপনার বাবা নাকি?? নিজের বউকে এখন ছলে বলে বাবা বানিয়ে দিলেন।
সাদাফঃ মহা মুশকিলে পড়লাম তো। কারো মুড সুয়িং হলে যে কেউ এতোটা বাচ্চা হয়ে যায় তা তো আমার ধারনাতীত ছিলো। আমি কি ভুল করে কোনো ক্লাস ফাইভের মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসিনি তো!!
শুভ্রাঃ ও…. এখন তো মহামুশকিল, বিরাট মুশকিল , দুনিয়ার সব চেয়ে বড় মুশকিল হয়ে গেলো তাই না? ( নাক টেনে টেনে)
সাদাফঃ আজ্ঞে হ্যা ম্যাডাম। আর কোনোদিন আপনাকে চেতাবো না। এখন চলুন অনেক রাত হয়েছে। ঘুমুতে হবে তো নাকি?
এরপর শুভ্রা চুপচাপ সাদাফের বুকে গুটিসুটি মেরে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। সাদাফ ও শুভ্রার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে মন মাতানো শুভ্রার ঘ্রাণ শুকতে শুকতে ঘুমিয়ে পড়ে।
#চলবে।