#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি।
#পর্বঃ২৯
নাদিম পারভেজকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে ততক্ষণে সাদাফের বাবা মা চলে এসেছে।
শুভ্রার মাঃ ভাবি দেখো এইই আমার সে প্রতিবেশী মিনু আপা। যার কথা বলেছিলাম তোমাকে।
সাদাফের মাঃ আসসালামু আলাইকুম আপা। আসেন বসুন। আপনাদের কথা মালিহা আমাদের তো বলতেই থাকে। সত্যি আপনাদের আমারা কি বলে কি করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তা বলে কয়ে বোঝাতে পারবো না। আজ আপনারা পাশে ছিলেন বলেই তো আমার পরিবার কে আমারা কাছে ফিরে পেয়েছি।
মিনু আন্টিঃ এমাহ..৷ এভাবে বলে লজ্জা দিবেন না। মালিহা তো আমার ছোট বোনের মতোই। যবে থেকে আমার ওর সাথে পরিচয় হয়েছে তখন থেকেই আমি আপন করে নিয়েছিলাম তাকে।
[কাজের বুয়া এসে শরবত আর মিষ্টি দিয়ে যায় ]
সাদাফের বাবাঃ তবু আজ কাউসার ছিলো না যখন তখন আপনারা কিভাবে সহযোগিতা করেছিলেন সেকথা মালিহা আমাদের বলেছে।আপনারা সহযোগিতা করেছিলেন বলেই তো কাউসার ছাড়া ঠিকঠাক চলেছিলো সংসার টা।
মিনু আন্টিঃ আরে সেসব বলে আর লজ্জায় ফেলবেন না ভাইজান। আমি জানি বাবা ছাড়া একটা সংসার চালানো কতো কষ্টের। এইতো পারভেজের আব্বা আজ মারা গেছে ৮ বছর হলো। যেই উনি চলে গিয়েছিলেন শশুর বাড়ি থেকে সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাপের বাড়ি থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলাম বলে আজ আমি খুটি ধরে এই অবস্থাতে এসে পৌছেছি। আর আপনারা আমায় যেভাবে বলছেন সেরকম কিছুই তো করি নি আমি। যখন শুভ্রার বাবা মারা যায় তখন পারভেজ তার বোনদের জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলো। কিন্তু আমাদের দায়িত্ববান শুভি ঠিকি কাজ ধরে নিজের ঋন তো মিটিয়েই দিলো। মেয়েটা একেবারে তার বাবাকে কেটে এসেছে। কাউসার ভাইকে তো আমরা দেখেছি।
সাদাফের মাঃআজকাল এতো ভালো মনের মানুষ পাওয়া যায় না। মালিহা আমাদের সবই বলেছে। আরে আপা শরবত নেন। এই গরমে কতো দূর থেকে জার্নি করে এসেছেন। নাও বাবা তুমিও নাও।
মিনু আন্টিঃ এসবের আবার কি দরকার ছিলো। বিয়ে বাড়ির এতো ঝামেলার মধ্যে। তবে আমি বেশ খুশি ই হয়েছি যে শুভির বিয়ের কথা শুনে। পারভেজ তো কালই মালেশিয়া থেকে ব্যাক করলো। আসলে শুভ্রা যখন হয় তখন থেকেই পারভেজ ছোট বোনের মতো আগলে রাখতো, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কুবরার আগমন। ছোট ভাই বোন নেই তো ছোট থেকে ওদের সাথেই বড় হয়েছে। যেই না বলেছি শুভ্রার বিয়ে সেই চলে এলো। তা এই বুঝি আমাদের জামাই? বাহ দেখতে তো একদম রাজপুত্তুর। ( নাদিমের দিকে তাকিয়ে)
নাদিম উৎসুক দৃষ্টিতে ওদের দেখছিলো আর কথা শুনছিলো। বিশেষ করে পারভেজের দিকে। আসার পরই তার চোখ পারভেজের দিকে স্থির হয়। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে লোকটা খারাপ। কিংবা রকম টাইপের। বেশ শান্ত শিষ্ট ভদ্র বেশেই মায়ের পাশে বসে আছে। পারভেজকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে দেখতে মিনু আন্টি এ কথা বলে। ওনার কথা শুনেই নাদিম নেড়েচেড়ে উঠে।
সাদাফের মাঃ না নাহ। ও তো আমার ছেলের বন্ধু। বলতে গেলে আমার আরেক ছেলে। খুব ভালো ছেলে বুঝলেন। ও নাদিম বাবা আর কুবরা দেখতো সাদাফ আর শুভ্রা রেডি হয়েছে কিনা? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
এই বলে নাদিম সাদাফকে আর কুবরা শুভ্রাকে ডাকতে চলে যায়।
শুভ্রা আর সাদাফের সাজের রুম সামনাসামনি ই। এদিকে কুবরা শুভ্রাকে নিয়ে বের হচ্ছে অপর পাশে নাদিম সাদাফ কে নিয়ে বের হয়েছে। দরজায় দাড়ানোর পর দুজনে চোখাচোখি হতেই আটকে যায় দুজনের মায়ায়। টকটকে লাল লেহেঙ্গায় সোনালী কারুকাজ, সাথে ব্রাইডাল সাজ, হিজাবের ওপর ই সকল অয়েন্টমেন্টস, হাতে গাঢ় মেহেদী। পুরাই দেখতে আপসরা লাগছে তার মায়াবী ভালোবাসার রমনীকে।
অপরদিকে লাল শেরওয়ানীতে সোনালী কারুকার্য এর সাথে সোনালী সাইড করে নেওয়া উড়না, চাপ দাড়ি, হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি, স্পাইক করা চুল , সুঠাম দেহী সাদাফকে দেখতে এক অপূর্ব স্বপ্ন পুরুষের মতো দেখাচ্ছে।
দুজন দুজনের দিকে যখন দেখাতে মগ্ন তখন নাদিম এসে সাদাফের কানে কানে এসে বলে ” দোস্ত বাসর ঘরের জন্য কিছু বাকি রাখ! সব দেখা এখন দেখে নিলে কি হবে? ”
সাদাফ তাৎক্ষনাত চোখ নামিয়ে ফেলে। শুভ্রাও লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সিড়ি দিয়ে দুজনে নামার সময় সকলের হৈ হৈ শুরু হয়ে যায়। নিচে উপস্থিত সাদাফের মা বাবা, শুভ্রা মা আর পারভেজ আর তার মা তো মুগ্ধ নয়নের তাদের আসার দিকে চেয়ে রয়েছে।
নিচে নামার পর দুজনেই এসে তাদের মা বাবাকে পায়ে ধরে সালাম করে। তারপর পারভেজের মা সামনে আসায় অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রয় শুভ্রা।
আস্তে করে পায়ে ধরে সালাম দেওয়ার সাথে সাথে বুকে জড়িয়ে ধরে মিনু আন্টি।
মিনু আন্টিঃ কি রে শুভ্রা। আজ নতুন পরিবার পেয়ে তো এই বুড়ি আন্টিকে ভুলেই গেলিরে তুই। তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি। তুই না ডাকলেও আমি কিন্তু চলে এসেছি এই দেখ।
শুভ্রাঃ তুমি জানো আজ সকাল থেকে তোমায় বড্ড মনে পড়ছিলো। খালি তোমার মুখটা আমার মনে ভাসছিলো। আমার মনের ইচ্ছে টা এভাবে পূরণ হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি আন্টি।
” হুম আমি আছি বলেই তো সম্ভব হলো ” [মিনু আন্টির পেছন থেকে ভেসে আসে এক পরিচিত পুরুষ কন্ঠ]
শুভ্রাঃ ভাইয়া!!! আন্টি ভাইয়া এসেছে?? কোথায়? আমি ভাইয়ার গলার আওয়াজ শুনেছি মতো লাগলো।
পারভেজঃ তোর বিয়ে আর আমি আসবো না তা কি করে হয় বল তো? আমি না থাকলে তো বিয়েই হতে দিতাম না। তোর বর কে তুলে নিয়ে যেতাম ।
শুভ্রাঃ ভাইয়া….!!!! তুমি এসেছো। মানে সত্যিই!! কবে এসেছো তুমি?
পারভেজঃ সব হবে কথা। আগে চল বিয়ে খেতে এসেছি আগে ভুরি ভুজ হবে তারপর কথা।
তারপর সকলে মিলে একসাথে গাড়িতে উঠে। শুভ্রা আর সাদাফ একই গাড়ি করেই যাচ্ছে। একেমন এক বিচিত্র বিয়ে। বিয়ের আগেই বর কনে এক সাতগে একি গাড়ি করেই কমিউনিটি সেন্টারে যাচ্ছে।
কমিউনিটি সেন্টারে পৌছে আগে শুভ্রাকে ঠিকঠাক বসানো হয়েছে। তবে ঝামেলা সাদাফের ঢুকার ব্যাপারে। নাদিম আর কুবরা আগেই পৌছে গেছে।
শালিরা সকলে মিলে মিষ্টি, শরবত, কেক, নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছে। তবে দাবি একটাই বরকে শালীদের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হবে। নাহলে সাদাফকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। যেহেতু এটা প্রাচীন রীতি, সাদাফ বাড়াবাড়ি না করে তাদের আবদার মিটিয়ে দিলো।
তারপর বর কনের বিভিন্ন এঙ্গেলে ফটোসেশান হয়। তারপর পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথেও ছবি তোলা হয়।
নাদিম এদিক ওদিক খোজাখুজি করে কুবরাকে কোথাও পাচ্ছে না। তারপর বারান্দায় গিয়ে দেখে ম্যাডাম মুখ ফুলিয়ে বুকে হাত গুযে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। নাদিম গলা ঝাকিয়ে কুবরার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও কুবরা ফিরিয়ে তাকায় না।
নাদিমঃ তো ম্যাডামের মেজাজ দেখছি আজও ফুল হাই তে। তো কারণ কি জানতে পারি?
কুবরাঃ কারণ আর জানিয়ে কি হবে। অনেকে খুব ব্যাস্ত কিনা! কতো কাজ আশেপাশে। আমার তো কোনো কাজ ই নেই।
নাদিম এবার বুঝতে পারে কুবরার রাগের মূল কারণ। বিয়ে বাড়িতে এসেও যে যার যার মতো ব্যাস্ত। অনেকে ফটোসেশানে। তাই হয়তো এরকম জমজমাট পরিবেশে একলা ভালো লাগছে না।
নাদিমঃ আমি না হয় ফ্রি হলাম তোমার জন্য। তো বলো কি করতে পারি।
কুবরাঃ আমি এতো সুন্দর সাজলাম কতো আশা করেছি একটু ছবি তুলবো। ওই ক্যামেরা ম্যান তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। একদম থাকবো না আমি এই বিয়েতে, আমাকে ছবি তুলতে না দিলে। ( নাক ফুলিয়ে)
নাদিমঃ দেখো তো কত্তো বড় সাহস ওর। তুলে দিতে হবে না ওর। চলো আমিই তুলে দিই।
তারপর নাদিম কুবরাকে বিভিন্ন এংগেলে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দেয়। বারান্দা টা বিভিন্ন ফুল আর ডেকুরেশন করায় এখানেই ছবি তুলে তারা। তারপর পাশে একটা মেয়ে চলে যাওয়ায় তাকে বলে কুবরা আর নাদিমের একটা ছবি তুলে দিতে।
নাদিম পাশাপাশি দাড়াতেই দুজনকে পুরো কাপলের মতো দেখাচ্ছে ম্যাচিং ড্রেস আর নাদিমের হাবভাবে। কুবরা না চাইতেও মানা করে নি। ছবি তুলার সময় এক পর্যায়ে নাদিম কুবরার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে “” তোমায় না আজ একদম পরীর মতো লাগছে মিস কুইন কুবরা….. এতো এতো লুক দেখিয়ে কি আমায় হার্ট এট্যাক করাতে চাও?? ” ”
নাদিমের এই কানে কানে বলাটাও মেয়েটি ক্যাপচার করে নেয়। তারপর কুবরা মিষ্টি হেসে লাজুক ভঙ্গিতে বলে ” আর আপনাকেও যে এতো ড্যাশিং দেখাচ্ছে না…. পুরো ক্লাবের সব মেয়েরাই ফিদা হয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে,, মিস্টার পচা বাদাম…… । “”
নাদিমঃ তাই বুঝি? তো তুমিও ফিদা হয়েছো বলছো?
কুবরাঃ আমি কি বলেছি নাকি?
নাদিমঃ সব কথা কি বলে দিতে হয় ( কুবরার আরো কাছে এসে)
দুজন দুজনের প্রতি এতোই উন্মাদ যে কেউ যে তাদের এই মূহুর্তগুলো ক্যাপচার করছে তার ই হুশ নেই। মেয়েটি গলা ঝাকি দিয়ে নাদিম কে তার ফোনটি ফেরত দিয়ে চলে যায়।
নাদিমঃ এই যে শান্তি তো? দেখুন ২০০ টার ও বেশি ছবি তুলেছি মনে হয়। দেখুন।
কুবরাঃ ওয়াও কত্তো সুন্দর দেখাচ্ছে ছবিতে আমায়। খালি আমার তো মোবাইল নেই। ছবিগুলো নিবো কোথায়। আম্মুর টা ও তো বাটন ফোন। ( ঠোঁট উলটে)
নাদিমঃ সমস্যা নেই আপাতত আমার কাছেই থাক। পরে যখন ফোন পাবা তখন না হয় নিয়ে নিয়ো।
কুবরা “আচ্ছা ” বলে ছবি একের পর এক ছবি টানতে আছে। তারপর তাদের একসাথে তোলা ছবি আসতেই প্রথম ছবিটা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে থাকলেই পরে যখন একটার পর একটা টানতে থাকে সবই কাপল দের ক্যান্ডিট ছবি। শেষ যে ছবিটা আসে সেটা তো দেখে কুবরা লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে নাদিমের হাতে মুবাইল টা গছিয়ে দিয়ে দিলো দৌড় ।
নাদিমও বেচারা লজ্জায় আর কিছু বলে নি। কারন শেষ এই ছবিটা দুজন দুজনেত খুবই কাছাকাছি চলে এসেছিলো। যার কারনে মেয়েটি ছবিটা তোলা মাত্রই গলা ঝাকি দিয়ে নাদিমকে ফোন দিয়ে চলে যায়। নাদিম মাথায় হাত দিয়ে চুল ঘষতে ঘষতে সেদিকে যায়।
কোবরা স্টেজের দিকে এসে দেখে পারভেজ দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে এক নজরে কোন দিকে তাকিয়ে আছে। পারভেজের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখে সে এক কোনায় বসে থাকা বোরখা পরিহিতা এক নারীর দিকেই মন দিয়ে তাকিয়ে আছে। কুবরা তো সে নারীর দিকে তাকিয়ে একদফা ধাক্কা খায় মোটামুটি। এ আর কেউ নয় ইলিয়ানা!! হ্যা সকালে শুভ্রার মুখে সে ইলিয়ানার বদলে যাওয়ার কথা সবই শুনেছে। অথচ এখন ইলিয়ানাকে না দেখলে বুঝতোই না সে কতোটা পালটে গিয়েছে। মডার্ন লোক আর ভারি মেকাপে তাকে যতোটা না সুন্দরী লাগতো, হিজাব, বোরখা আর হালকা সাজে ঠিক তার চেয়ে দিগুণ সুন্দরী লাগছে তাকে। মেয়ে হয়েও কুবরা বার বার এই ইলিয়ানার রুপের উপর ক্রাশ খায়। নিজেকে সামলে পারভেজের দিকে এগিয়ে যায় কুবরা।
কুবরাঃ কি গো ভাইয়া….. ক্রাশ খেলে নাকি আপুর উপর??
পারভেজঃ আপু?? কোন আপু??
কুবরাঃ ওইতো ওই বোরকা পরিহিতা আপু ?।
পারভেজঃ কি উল্টো পালটা কথা বলিস রে তুই, কবরা? আশেপাশে দেখছিলাম তাই ওদিকে চোখ গিয়েছিল।
কুবরাঃ ওও আচ্ছা তাইইইই…… তবে জানো ভাইয়া আপু কিন্তু সত্যিই খুব সুন্দরী। আমি মেয়ে হয়েই ক্রাশ খাই আর তুমি ছেলে হয়ে খাবে না তা কি করে হয়।
পারভেজঃ দিবো না একটা। এখনো তোর বাদরামি যাই নি না। পড়ানোর সময় যেমন দিতাম না হাতের তালুতে এখন ও তেমন দিবো এক। এসব নিয়ে পাকনামো করিস বলেই তো পড়াশোনায় ডাব্বা মারিস।
আশেপাশের কেউ শুনছে কিনা তা দেখার জন্য কুবরা এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে নাদিম মুখ চেপে চেপে হাসছে।
“” এই সেরেছে রে…. যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় “” ( মনে মনে বলে উঠে কুবরা)
কুবরাঃ উফফফফ তুমিও না ভাইয়ায়ায়া। এসেছো আর মাস্টারি শুরু করে দিয়েছো? আমার ইজ্জতের ফালুদা করার ধান্দা। অবশ্য ডাক্তার মানুষ এত্তো বেরসিক না হয়ে আর হবেই বা কি। হুহ ( বলেই মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে যায়)
কুবরার কর্মকান্ডে পারভেজ সেই একই ভঙ্গিতে হাসতে লাগলো। তবে কুবরা ভুল কিছু বলে নি। ইলিয়ানাকে দেখে সত্যিই নিজের অজান্তে চোখ আটকে গিয়েছিলো ওই শান্ত চেহারার প্রতি।
নাদিম হাসি চেপে পারভেজের সাথে আলাপ করতে আসে।
নাদিমঃ হাই আম নাদিম। ( হাত বাড়িয়ে)
পারভেজঃ এন্ড আম পারভেজ। শুভ্রার হাজবেন্ডের ফ্রেন্ড রাইট?? আম্মু আপনাকে ভুল করে জামাই বলে ফেলেছিলো। ( হেন্ডশেক করে)
নাদিমঃ হুম। আমি সাদাফের বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি দেখছি ভাবি আর কোবরার আপন ভাইয়ের ই মতো।
পারভেজঃ হুম বলতে গেলে তাই ই। আসলে আমার বয়স যখন ১০ তখন আম্মুর কোলে ফুটফুটে এক ফুল কন্যা কে দেখে নিজের বোনের অস্তিত্ব খুঁজে পাই আমি। আমার আপন বোন নেই ঠিকি তবে তারা আমার আপন বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
নাদিমঃ তা তো আপনারা আসার পর থেকে দেখছি। বাই দ্যা ওয়ে। কুবরা বলে গেলো ডাক্তার মানুষ? রিয়েলি নাকি?
পারভেজঃ হুম আসলে ৫ বছর আগেই মালেশিয়ার এক প্রাইভেট হসপিটাল থেকে আমার কাছে অফার আসে। সেই সূত্রে তখন সেখানে চলে যাওয়া। তবে এখন কয়েকএকমাসের জন্য ছুটি নিয়েছি। সবাইকে খুব মিস করছিলাম আর শুভ্রার ও বিয়ে তাই চলে আশা।
এরপর তারা দুজন আরো অনেক কথাবার্তা বলতে থাকে।
খাওয়াদাওয়া শেষে বিকেলের দিকে কাজি আসে বিয়ে পড়াতে। সব রকম রীতিনীতি মেনে সুস্থ ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
তবে বিদায়ের সময় শুভ্রা তার মাকে জড়ুয়ে কান্নার স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবাই অবাক হচ্ছে এই কারণে সে তো বিয়ে হলে নিজের বাড়িতে নিজে থাকবেই। সারাক্ষন মা বোন ও থকবে। কান্নার কি দরকার তা নিয়েই সকলের মনে প্রশ্ন।
আজ জীবনের এতো বড় এক আনন্দের দিনে শুভ্রা তার বাবাকে বড় মিস করছে। বেচে থাকতে তার বাবা প্রায় বলতো “” মারে শুভি তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে তোর এই বাবা টা কি করে থাকবে বল তো? তবে বিয়ে তো দিতেই হবে, মেয়ে যখন হয়েছিস। জানিস মা,, আমার অনেক বড় স্বাদ রে তোর বিয়ে খুব ধুমধাম করে দিবো ।৷ “”
আজ তার বাবার স্বপ্ন ঠিকি পূর্ণ হলো তবে সে বাবা ই নেই। বাবার কথা বলাতেই শুভ্রার মা ও তাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কুবরা ও তাই।
সাদাফের বাবা মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বিভিন্ন সান্ত্বনা দেয় শুভ্রা আর তার মাকে। পরিশেষে সবকিছু সেরে সকলে গাড়িতে উঠে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে উঠার পরেও শুভ্রা কান্নায় মশগুল। কান্নার তরে বার বার হেচকি উঠছে তার। সাদাফ এক বোতল পানি এগিয়ে খাইয়ে দেয় শুভ্রাকে। তারপর পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে শান্ত করে শুভ্রাকে।
???
রাত প্রায় ১২ টা। কয়েকজন নিকট আত্মীয় ছাড়া অনেকেই বিয়ে বাড়ি প্রস্থান করে। পারভেজরা চলে যেতে চাইলেও সাদাফের মা বাবা জোড়াজুড়ি করে রেখে দেয় তাদের।
সাদাফের রুমটাকে ফুলে ভরপুর করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তারই মাঝে খাটের মাঝখানে বধু বেশে বসে আছে শুভ্রা। এদিকে রুমের বাইরে সাদাফের নাজেহাল অবস্থা। কুবরা আর নাদিম মিলে আবারও দাবি করছে ৫০ হাজার টাকা।
সাদাফঃ ভাই তুই ও? এই তো দুপুরেও দিলাম। আমাকে যেতে দে না ভাই। বউটা একা বসে আছে।
নাদিমঃ কেন কেন? সব পাওনা তোর শালি কেন পাবে? আমি ভেসে এসেছি নাকি? আমারও চাই। অনেক কষ্টে বাসর সাজিয়েছি। এখন দে।
কুবরাঃ হ্যা ভাইয়া দেন দেন নাহলে দিবো না ঢুকতে।
সাদাফঃ ধর আমি জানতাম এরকমই হবে। মাগার নাদিম্মা তোরে আমি এক্সপেক্ট করি নাই। তোর দিনেও আমি দেখে নিবো। ( নাদিমের হাতে টাকা টা গুজে দিয়ে) ।
নাদিমঃ উমম…. এইবার যাহহহ। তোর ছুটি!!
এই বলে নাদিম আর কুবরা দরজার সামনে থেকে সরে গেলো।
দরজার আওয়াজ শুনেই শুভ্রা হচকচিয়ে উঠে। আর জানান সাদাফ এসেছে। সাদাফ দরজা লাগিয়ে আসতেই শুভ্রা এসে সাদাফকে সালাম করে। সাদাফ শুভ্রাকে দুই হাতে কাধ ধরে বলে।
সাদাফঃ উহু। তোমার স্থান আমার পায়ে নই শুভি, আমার এই বুকে। ( বলে শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে)
সাদাফঃ জানো শুভি আজ আমাদের পূর্ণতা পেলো। কতোদিন কতো ছটফট করেছি। এই বুকটা এতোদিন শুধু খালি খালি লাগতো। আজ যেন আনন্দতায় আর পূর্ণতায় ভরে উঠেছে শুভি।
শুভ্রাঃ কারণ আজ থেকে আমাদের সম্পর্কটা সম্পূর্ণ হালাল। আর আজ আমিও ভীষণ খুশি আপনাকে পরিপূর্ণ ভাবে আমার জীবনের বেস্ট গিফট হিসেবে পেয়ে।
দুজন দুজনে আজ বড্ড খুশি। তাদের এতোদিনের স্বপ্ন এতোদিনের আশা আজ পূরণ হয়েছে। অবশেষে গহীন এই পূর্ণিমার ভরপুর আলোকিত রাতে দুজনে হারিয়ে যায় ভালোবাসার অতল সাগরে।
#চলবে।
( ভুল ত্রুটি হলে মাফ করবেন। রিচেক করি নি। আমি এখনো খুব অসুস্থ। তবু কথা যখন দিয়েছি বিয়ের পার্ট বড় করে দিবো তাই যথাসম্ভব বড় করে দিয়েছি। দোয়া করবেন আমার জন্য ??)