অচেনা তুমি পর্বঃ২৪

0
780

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি।
#পর্বঃ২৪

এভাবে আরো কয়েকটি দিন কেটে চলে যায়। সাদাফ আর শুভ্রার বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। আজ থেকে আর ১ সপ্তাহ পরই তাদের বিয়ে। এই কয়েকদিনে ইলিয়ানা বেশ কয়েকবার অপদস্ত করেছে। তবুও সে কোনো মতে সাদাফ আর শুভ্রার বিয়ে ঠেকাতে পারে নি।

আজ বিয়ের শপিং করতে যাবে সকলে। সকাল থেকে সারা বাড়িময় হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেছে। সকালে খাওয়া দাওয়ার পর সকলে মিলে তৈরি হয়ে নেয় শপিং এর উদ্দেশ্য৷ সবাই রেডি হয়ে নিলেও ইলিয়ানাকে দেখা যাচ্ছে না।

সাদাফের মাঃ কি রে ইলু মা কোথায়?
শুভ্রাঃ আমি দেখছি। রেডি হচ্ছে হয়তো। তোমরা বের হও আস্তে আস্তে।

শুভ্রা গিয়ে দেখে ইলিয়ানা ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। ইলিয়ানাকে কয়েকবার ডাক দেওয়ার পরেও সারা দেয় না।

হঠাৎ কে যেন তাকে সটান টেনে বিছানায় চিত করে ফেলে দেয়। শুভ্রা হালকা আলোয় দেখতে পায় একটি মেয়েলি ছায়া। এবার শুভ্রা বুঝতে পারে এটা ইলিয়ানা। শুভ্রা কিছু করে উঠার আগেই ইলিয়ানা একটা বালিশ নিয়ে চেপে ধরে শুভ্রার মুখের উপর। এই মূহুর্তে শুভ্রার শ্বাস আটকে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

ইলিয়ানাঃ খুব বিয়ে করার শখ না, স্যাডিকে?? তোর শখ আমি আজ আজীবন জন্য ঘুচে দিবো।

শুভ্রার ছটফটানিতে ইলিয়ানা কুলিয়ে উঠতেও পারছে না৷ তবুও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সে।

এক পর্যায়ে শুভ্রা ইলিয়ানার হাত শক্ত করে দুমড়ে মুচড়ে ধরে। আরেকটু শক্ত করে ধরতেই ইলিয়ানা বালিশের ভার ছেড়ে দেয়।

ইলিয়ানাঃ আহহহহহ ইশশশ…

শুভ্রাঃ এই হাত দিয়ে না দা বটির কাজ করে আসছি বোঝছো? কাটতে, ছিড়তে, অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এসব করতে করতে না হাত লোহায় পরিণত হয়েছে বুঝেছেন?? আর আপনি এসেছেন আপনার ওই আকাইম্মা প্যাডিকিউর করা হাত দিয়ে চেপে আমায় মেরে ফেলতে?? ( ঝেড়ে হাত ফেলে দিয়ে)

ইলিয়ানাঃ তোকে তো আমি কোনো মতেই ছাড়বো না। আমার স্যাডিকে বিয়ে করবি তুই? কি যোগ্যতা আছে রে তোর? টাকার জন্য বিয়ে করছিস তো কতো টাকা লাগবে তোর বল একবার আমি দিবো তোকে।

শুভ্রাঃ ভদ্র ভাবে কথা বলেন। আমি কোনো আপনার মতো সস্তা পন্য নই যে, যার তার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিবো তাও সামান্য হাতের ময়লা টাকার জন্য।

ইলিয়ানাঃ তোর সাহস হয় কি করে আমাকে সস্তা পন্য বলা!! তুই কোন দিন দেখেছিলি নাকি যে আমি নিজেকে পন্য হিসেবে ব্যবহার করি।

শুভ্রাঃ আলবাদ দেখেছি। তুমি যে কতোটা নিচ চরিত্রের মহিলা সেটা তো ওইদিন সোহেলের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থাতেই দেখেছি। আর কি বলবো। আবার বলো তুমি সাদাফ কে ভালোবাসো?? ( চোখ রাঙিয়ে)

ইলিয়ানাঃ ওওওও নাউ আই গট দ্যা পয়েন্ট। মনে পড়েছে। মানে তুই সেই কাজের মেয়েটা!! এই জন্যই তো আমার তোকে এতো চেনা চেনা লাগছিলো। মাই গডনেস!! তুই স্যাডিকে কিভাবে পটিয়েছিস? নিশ্চয় স্যাডি আর মামনি তোর অতীত জানে না? সোহেলের মতো ছেলে কি আর তোর সতীত্ব রাখবে? আমার তো মনে হয় না। আমি এখনি গিয়ে সবাইকে বলে দিচ্ছি। দেখবি স্যাডি নিজেই ফট করে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবে। আফটার অল একটা কাজের মেয়েকে তো আর স্যাডি বিয়ে করবে না!

শুভ্রাঃ আমি আমার সতীত্ব নিয়ে যথেষ্ট পসেসিভ। তোমার মতো নিচ চরিত্রের নই যে মানসিক তৃপ্তির জন্য আমি আমার শরীর অন্যজনের কাছে বিলিয়ে দিবো? আর কি বলছো আমার অতীতের পেশার কথা বলে দিবে? যাও গিয়ে বলো না? আর আমিও বলে দিই তোমার সেই নষ্টামির ঘটনার কথা?

ইলিয়ানাঃ হেই মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ। কি প্রমান আছে তোর কাছে যে আমি এসব করেছি? হ্যা করেছি তো করেছি। আর আজকালকার দিনে না এসব কমন বিষয়। তাই বলে কি সবাইকে জানাতে হবে নাকি? আর তোর কথা ও কে বিশ্বাস করবে রে? তোর কি কোনো প্রমাণ আছে নাকি? দুই টাকার পাতি কাজের লোক।

শুভ্রাঃ তাই নাকি?? তা এটা একটু শুনে দেখো তো??

এই বলে শুভ্রা মোবাইল অন করে কিছুক্ষন আগে ইলিয়ানার বলা কথা গুলো রেকর্ড অন করে শুনালো।

নিজের কথা নিজেই শুনার পর ইলিয়ানা ধর ধর করে ঘামতে লাগলো।

ইলিয়ানাঃ এই এই ডিলিট করো বলছি এখনি। ডিলিট কর এক্ষনি।

শুভ্রাঃ না করবো না। কি করবে তুমি? আমি তো আজ সবাইকে শুনাবোই….

এটা বলার পর পরই ইলিয়ানা শুভ্রার সাথে ধস্তা ধস্তি শুরু করে দিলো। বেশ কিছুক্ষন হেচড়াহেচড়ি করার পর কে যেন ইলিয়ানাকে টান মেরে সরিয়ে নিলো।

ঠাসসসসস……..

ইলিয়ানা মুখে হাত দিয়ে ব্যাথায় গাল নিচু করে ফেললো। তারপর মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে সাদাফ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে।

কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেও সাদাফ আরেকটা চড় মারে ইলিয়ানা কে।

সাদাফঃ তোর এতো বড় সাহস!! তুই আমার শুভি কে আজ মেরে ফেলতে যাচ্ছিলি?? আমি জানতাম আমার শুভি ওভারকাম করে ঠিকি বেচে যেতে পারবে। তাই দাড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু এরপর এসব কি শুনলাম আমি? আমি তো নিজের কানেই বিশ্বাস করতে পারছিনা যে তুই এতো বড় জঘন্য কাজ করতে পারবি! অবশ্য পারবি নাই বা কেন? যে মানুষ মেরে ফেলার সম্পুর্ন পরিকল্পনা করতে পারে সে তো নিচু চরিত্রের হতেই পারে। ছি ইলিয়ানা ছি… । ছোট ছোট বলে তোকে খাম্মি, বাবাই মাথায় চড়ে বসিয়েছিলো আর তুই এভাবে তার প্রতিদান দিচ্ছিস? লাস্ট বারের মতো ওয়ার্ন করছি আমি তোকে, শুধরে যা। নাহলে গোটা পরিবারের সামনে তোর এই কুকীর্তির কথা সব ফাস করে দিবো। আমি তো কল্পনাই করতে পারছি না আমাদের পরিবারের কেউ এতো জঘন্য কাজ করতে পারে। ছি!!!! ( রাগে ফুসতে ফুসতে)

এই মূহুর্তে সাদাফের রুপ দেখে শুভ্রা নিজেই ভয়ে গুটিয়ে গেছে। সাদাফের এমন রুপ আর ব্যবহার সে এর আগে কখনো দেখেনি। বরাবরই সে নরম স্বভাবে আচরণ করতো।

সাদাফঃ তুমি ঠিক আছো তো শুভি? কোথাও ব্যাথা লাগে নি তো তোমার??

শুভ্রাঃ আমার কিছুই হইনি। একদম ঠিক আছি। আপনি আগে শান্ত হোন।

সাদাফঃ শান্ত কি হবো আমি। আমি পারছিনা যে এই ইলিয়ানাকে চড় মেরে মেরে ফাটিয়ে ফেলতে। আমাকে বিয়ে করার তোর আসল উদ্দেশ্য কি আমি জানি না ভেবেছিস তুই? আমি কিন্তু ওইদিন আবির আর তোর কনভারসেশন সব ই শুনেছি। টাকার জন্যই যে তোর আমাকে বিয়ে করার আগ্রহ আমি তা সেদিনই বুঝেছ। এসব ভালোবাসা টাসা যে মুখের উপর বলিস সেটা আমি সেদিন ই বুঝেছিলাম। আর আজ তো তোর আসল রুপ টাও দেখেনিলাম।

ইলিয়ানা এখনো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। নিশ্চুপ শুধু চোখের পানি ফেলছে।

ফারদার যদি দ্বিতীয় বার এই কাজ করার চিন্তাও করিস তবে দেখে নিস এই সাদাফ মাহমুদ চৌধুরীর ও আসল রুপ। এই আমি বলে দিলাম। ( এই বলে শুভ্রার হাত ধরে সাদাফ চলে যায়) ।

( ইলিয়ানাকে ডাকতে পাঠানোয় সাদাফের মনে সন্দেহ হয়েছিল বলে পিছনে এসেছিলো সাদাফ। আসতেই দেখে ইলিয়ানা শুভ্রার মুখের উপর বালিশ চেপে আছে। সাদাফ দৌড়ে আসতেই ততোক্ষণে শুভ্রা নিজেকে ভাচিয়ে ইলিয়ানাকে জব্দ করে ফেলে। আরেকটু দাড়াতেই শুভ্রা আর ইলিয়ানার কথা সব শুনে ফেলে। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হলে সাদাফ যেতে বাধ্য হয়)

সাদাফ আর শুভ্রা বাইরে আসতেই দেখে নাদিম,কুবরা আর আবির গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

নাদিমঃ কিরে তোদের এতোক্ষন লাগে নাকি?? ভেতরেও বুঝি রোমেন্স করছিলি?? ( সাদাফকে গুতো দিয়ে)

সাদাফঃ এই বন্ধ করতো তোর এসব আজাইরা কথা। ( নাদিম কে সরিয়ে দিয়ে)

সাদাফের এমন ব্যবহারে নাদিম নিজেই অবাক হয়ে যায়। পরে ভালো করে লক্ষ করে দেখে সাদাফ থম থমে চেহারায় মুখে বিরক্তিকর ছাপ।

কুবরাঃ তোদের জন্যে তো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আম্মু,মামনী সবাই চলে গিয়েছে। আমরা যেন তোদের সাথে যেতে পারি তাই অপেক্ষা করছি। এবার চল চল অনেক্ষন লেট হয়ে গেলো।

আবিরঃ আরে ভাবি ইলিয়ানাকে ডাকতে গিয়েছিলেন। আসবে না ও?

ইলিয়ানার কথা শুনে সাদাফ আবারও রাগে কটমট করে উঠে। সাদাফ কিছু বলে উঠার আগেই শুভ্রা তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে “আসলে আপুর নাকি ভালো লাগছে না। তাই আসতে পারবে না । ”

আবির মনে মনে বুঝে নেয় যে তার বোন ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না বলেই ইচ্ছে করে আসতে চাইছে না।

তারপর সকলে একে এক গাড়িতে উঠে পড়ে। শুভ্রা আর সাদাফ একসাথে বসে। নাদিম ডাইভিং সিটে বসে আর আবির পেছনে। কুবরা পেছনে গিয়ে বসতে গেলেই নাদিন জোর দিয়ে বলে উঠে ” আমি কি ড্রাইভার নাকি যে আমি একলা বসবো?? ”

কুবরা খুব বুঝতে পেরেছে যে কথাটা নাদিম কুবরাকে ঈঙ্গিত করেই বলেছে। ইদানিং নাদিমের ইশারা এবং কম কথা বলা কুবরা এখন ভালো করে বুঝতে পারে। এছাড়া আবির আসার পর থেকে কেমন একটা উইয়ার্ড বিহেভ করে সে। ছ্যাত ছ্যাত শুধু কথার কথা রেগে যায়।

কুবরা তারপর গিয়ে নাদিমের পাশের সিটে বসে যায়। নাদিম একবার শান্ত দৃষ্টিতে কুবরার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷।

???

শপিং মলে পৌছে দেখে বড়রা ইতিমধ্যেই অনেক শাড়িটাড়ি কিনে ফেলে।
সাদাফের মাঃ তোদের এখন আসার সময় হলো? সেই কখন রেডি হলি। এতক্ষনে বুঝি আসতে পারলি না?
শুভ্রাঃ আসলে ইলিয়ানা আপু কে ডাকতে গিয়েছিলাম না,,, উনার নাকি ভালো লাগছে না তাই কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেলো।

সাদাফের মাঃ আচ্ছা আয় বস দেখতো কোন লেহেঙ্গা টা পছন্দ তোর?

শুভ্রাঃ তোমরা দেখো না। তোমাদের চয়েজই তো বেস্ট হবে।

সাদাফের মাঃ তা তো আমারা দেখেছি। তুই পড়বি তোর ও কিছু মতামত আছে না। এই সাদাফ দেখ তো এখান থেকে কোনটা দেখতে সুন্দর।

শুভ্রা পেছন ফিরে দেখে সাদাফ একটু দূরে এখনো শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

শুভ্রাঃ মামনী আমি একটু আসছি। ( এই বলে শুভ্রা সাদাফের দিকে এগিয়ে যায়) ।

শুভ্রাঃ এখনো এরকম করছো কেনো? দেখো সব তো ঠিকঠাক হয়েই গিয়েছে। এরকম করে থাকলে তো সবাই আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে।

সাদাফঃ শুভি আমি যাস্ট ওই মূহুর্ত আর কথা গুলো ভুলতে পারছিনা। শুধু মাথায় ঘুরে ঘুরে থাকছে।

শুভ্রাঃ একটু সময়ের উপর ছেড়ে দিন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন আসুন তো।

সাদাফ নিজেই আজ শুভ্রার ব্যবহারে বিষ্ময়, যেখানে সাদাফের মতো শান্ত মনের মানুষও রাগারাগি না করে থাকতে পারছে না, সেখানে স্বয়ং নিজের সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার হওয়া সত্বেও কি করে স্বাভাবিক আছে সে?? একটা লম্বা শ্বাস টেএদিকনে তারপর সে ও যায় লেহেঙ্গা আর শেরওয়ানি চুজ কর‍তে।

“চলেন আবির ভায়া আপনিও আমাকে একটা লেহেঙ্গা চুজ করে দেন তো। মেলায় বলেছিলেন না নেক্সট টাইম আবার শপিং করলে যেন আপনি চুজ করে দিবেন। চলুন ” ( কুবরা)

কুবরার এহেন কথায় নাদিমের চোয়াল কুচকে উঠে। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দুকদম সামনে এগিয়ে এসে কুবরাকে নিজের দিকে ঘুরে বলেঃ- ” কেন? ও কেন চুজ করবে? এর আগে তো আমারা সকলে শপিং করতে আসলে মাঝেমধ্যে আমিই চুজ করে দিতাম। তাহলে এই বেলায় কেন আমি নয়? নাকি আমি চুজ করা পছন্দ হয় না তোমার? ( আরো কাছে চেপে ধরে)

কুবরা মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখে শুধু আবির ছাড়া আর কেউ তাদের দিকে লক্ষ্য করছে না। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।

কুবরাঃ মিস্টার বাদাম মিয়া কি করছেন কি? ছাড়ুন আমাকে সবাই দেখবে। ( বলেই নিজেকে আলতো ভাবে ছাড়িয়ে নেয়)

নাদিমঃ দেখুক। আমি থাকতে আবির কেন তোমাকে লেহেঙ্গা, শাড়ি চুজ করে দিবে??

কুবরাঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। দুজনেই চুজ করে দিয়েন। এখন চলুন লেট হয়ে যাচ্ছে তো!! কি বলুন আবির ভায়া?

আবিরঃ হ্যা হ্যা। হুয়াই নট? চলো।

তারপর তিন জনে মিলে সাদাফদের অপজিটে যে দোকানটা আছে ওখানে যায়। বেশ কয়েকটা লেহেঙ্গা বের করার পর আবির একটা লেহেঙ্গা ইশারা করে তো নাদিম একটা ইশারা করে। দুজনেই সুন্দর দুটিই চুজ করে। কুবরা এখন নিজেই দুটানায় পড়ে যায় কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবে।

কুবরাঃ ইয়ে মানে আংকেল এখানে কোনটার প্রাইজ কতো কতো?
দোকানদারঃ এটা ৫০ হাজার ( আবির এর চুজ করাটা) আর এটা ৮০ হাজার ( নাদিমের চুজ করাটা) ।
দাম শুনেতো কুবরার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। কি বলে কি দোকানদার!! সে মনে হয় তার জীবনে কমসে কম ১৫ হাজার টাকার মতোই লেহেঙ্গা পড়েছিল। তবু যে বছর তার বাবা বেচে ছিলেন সে বছরের ঈদে। দাম শুনে কুবরা তো রীতিমতো বোবা হয়ে গিয়েছে। কি বলবে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। এদিকে নাদিম আর আবির অতি আগ্রহ নিয়ে বসে আছে যে কুবরা কারটা পছন্দ করবে।

কুবরাঃ ইয়ে মানে এগুলো খুব দামি হয়ে যাচ্ছে না? আর আমি কি বউ নাকি যে এতো দামি লেহেঙ্গা পড়বো? এখান থেকে যেকোনো একটা পড়লে তো মানুষ আপু আর আমার মধ্যে গোলিয়ে ফেলবে কোনটা বউ আর কোনটা বোন? তাই না?? ( মেকি হেসে)

নাদিমঃ একদম লাগবে না।আর কেউ গোলাবেও না। আর এটা দামি কোথায়? ভাবি যে লেহেঙ্গা টা নিয়েছে ওটা দেড় লাখ টাকা। সে হিসেবে তো আপনার টা তো অনেক কম হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এটাও কম পড়েছে। তোমার লেহেঙ্গার দাম তো কমসে কম ১ লাখ টাকা হওয়া উচিত। আংকেল আরও…..

কুবরাঃ এই না না থামুন থামুন। আমার এতো দামি লেহেঙ্গা লাগবে না। এগুলোই অনেক সুন্দর। কিন্তু বুঝতে পারছি না কোনটা নিবো ( মুখে হাত দিয়ে) ।

আবিরঃ আমি বলি কি তুমি এটা নাও। এটা তোমার গায়ের কালার এবং চেহারার সাথে খুব ম্যাচ করবে।

নাদিমঃ না না বিয়েতে কেউ লাল লেহেঙ্গা পড়ে নাকি? এতে তো বউ আর বোন দুজনেই দেখতে সেম হয়ে যাবে। তুমি বরং আমার টা নাও। এটা যেহেতো গোল্ডেন আর সিলভার কম্বিনেশনে আছে। তোমাকে দেখলে কেউ তমন গুলিয়ে যাবে না বুঝছো??

কুবরা এবার পড়ে যায় মহা মুশকিলে। কার টা ছেড়ে কারটা নিবে? একজনের টা না নিলেও আবার সে জন মন খারাপ ও কর‍তে পারে। চিন্তার মাথার মগজ ছিড়ে যাচ্ছে তার।

“তাহলে দুটোই নিয়ে নাও”

পেছন থেকে অন্য কন্ঠ ভেসে আসতেই তিনজনেই পেছনে তাকিয়ে দেখে সাদাফ পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদাফঃ এতো কনফিউশন এর কি আছে? দুটুই যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে তো দুটোই নিবা। আমার একটা মাত্র শালিকা তুমি আর তুমি কিনা মাত্র ১ টা লেহেঙ্গা নিবা? তোমাকে তো এতো কাঞ্জুস ভাবিনি কুবরা।

কুবরাঃ না না ভায়া কি বলছো!! তোমাকে দেখছি আমার লেহেঙ্গাই ফকির বানিয়ে দিবে। আমি একটাই নিবো।

সাদাফঃ ধুরু রাখোতো। তোমার বোন ৩ টা নিয়েছে। তোমিও কম কেন যাবে? আংকেল এদুটোই প্যাক করে দিন।

কুবরার প্রথমে লজ্জা পেলেও মনে মনে স্বস্তি পেয়েছে দুজনের মন ই সে রক্ষা করতে পেরেছে। এখন কেউ মন খারাপ ও করবে না। কুবরাকেও দোষারোপ করবে না।

এর পর বাদবাকি শপিং কুবরা শুভ্রার সাথেই মিলে মিশে করে। নাদিম আর আবির দুজন কেই দূরে দূরে রেখেছে।

অপরদিকে শেরওয়ানি চুজ করতে গেলে সাদাফ কে শুভ্রা পছন্দ করে দেয়। একেবারে শুভ্রার বিয়ের লেহেঙ্গার সাথে মিল করে।
এদিকে নাদিম টেনে টেনে কুবরাকে নিয়ে যায় তার জন্যও শেরওয়ানি চুজ করতে।

নাদিমঃ আচ্ছা বলোতো এখানে কোনটা সুন্দর?

কুবরাঃ সেকি আপনি কি বর নাকি যে লাল আর গোল্ডেন কালারের নিতে চাচ্ছেন।

নাদিমঃ ওও তাই তো!! আচ্ছা তুমিই একটা চুজ করে দাও তো।

কুবরাঃ উমমম….. এই নিন এটা আপনাকে খুব সুন্দর স্যুট করবে।

নাদিমঃ বাব্বাহ এটা তো দেখছি তোমাকে পছন্দ করে দেওয়া আমার লেহেঙ্গার কালারের। বেশ মানাবে বলো? আমাদের ও কাপল লাগবে। ( এক চোখ দিয়ে)

কুবরা মনে মনে এটাই চাইছিলো। আর নাদিম সেটা ঠিকি ধরে ফেললো। লজ্জায় কুবরা এক দৌড়ে চোখের অগোচরে চলে যায়।

নাদিম ও মনে মনে মুচকি হাসে। নাদিম এখন নিজেও শিওর যে কুবরা ও নাদিমকে ভালোবাসে। তবে এখনো দুজন দুজনের কাছে কিছুই প্রকাশ করে বলে নি। তবে ঠিকি কথায় কথায় কিছু ইঙ্গিত দেয়। এতেই কুবরা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

শপিং কর‍তে করতে সকলেরই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাতের ডিনার বাইরে থেকে কিনে সকলে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার জন্য রওনা হয়।

#চলবে।

( দেরী হওয়ার জন্য দুঃখীত। তবে যথাসম্ভব গল্প বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কেমন লেগেছে বলবেন কমেন্টের মাধ্যমে।)

ধন্যবাদ ???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here