সূর্যোদয় পর্ব ২৪

0
64

#সূর্যোদয়
#পর্ব_২৪
#কারিমা_দিলশাদ

৬২.

নৃত্যশৈলীর যেই রুমটা ঐশী নিজের জন্য রেখেছিল সেটা এখন ওর নিজের বাসা হয়ে গেছে। ঐশী তাই ভাবে। নৃত্যশৈলীর পুরোটা অংশ ঐশী তার নিজের হাতে, নিজের কল্পনা, নিজের শখ আহ্লাদ দিয়ে সাজিয়েছে। এখন বাসায় মন না টিকলেই এখানে এসে পড়ে। এমনেতেও দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই তার এখানেই কাটে। সন্ধ্যার আগে আগে কেবল বাড়ি যায়। তার বাবা মা যেন তাকে একদম খোলা ছেড়ে দিয়েছে। এতেই সে সন্তুষ্ট।

ঐশী এখন নিজের বাসায় অর্থাৎ নৃত্যশৈলিতে। আজকে সকাল সকাল বেরিয়ে এসেছে। যদিও আজ কেবল একটা ডান্স ব্যাচ আছে। তবুও ওই বাসায় তার মন টিকছিল না। তাই খুব সকাল সকালই চলে আসে। সাথে আশাকেও ফোন করে আসতে বলে দিয়েছিল। সকাল এখন কেবল ৭টা বাজে।

আশা এখন রুমের কর্ণারে রাখা বিন ব্যাগটায় বসে ফোন স্ক্রলিং করছিল। ঐশী সবে গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হয়। ধবধবে সাদা কামিজ আর লাল সালোয়ার গায়ে। ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আড়ঁচোখে একবার আশার দিকে তাকায়। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত গলায় আশার উদ্দেশ্য বলে উঠে,

“ কালকে রাতে আমি মারুফ স্যাররে ফোন দিছিলাম। আমি বলে দিছি তিনি আব্বু আম্মুর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

আশার মাথায় যেন কেউ বো’ম ফাটিয়েছে। তার কানে তালা লেগে গিয়েছে, মাথা ঘুর ঘুর করছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে। ঐশী!! ঐশী নাকি বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে!
আশা কিছুটা চিল্লিয়ে বলে,

“ কি বললি?”

“ বললাম আমি মারুফ স্যারকে হ্যা বলে দিছি। তিনি বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে। আমার সমস্যা নেই।”

“ তুই কি মজা করতাছস আমার সাথে? সক্কাল সক্কাল এই ঢং করবার জন্য নিয়ে আইছস আমারে?”

“ না কথাটা বলার জন্য নিয়ে আসলাম। ফোনেও বলতে পারতাম। বাট মুড নাই।”

‘ মুড নাই ’!!! কথাটা যেন আশার রাগে আরও কেরোসিন ঢালার কাজ করলো। ঐশীর ফোন পেয়ে সে তারাহুরো করে বেরিয়েছে। তার মা তখন ঘুমে, বলেও আসে নি। বাসায় গিয়ে হেব্বি কে’স খাবে আর এসব ফালতু কথা বলে বলছে মুড নেই!

আশা ঐশীকে চট করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,

“ দেখ ঐশী মেজা’জ গরম করিস না। বাসায় আজকে মেলা বাঁশ খামু। এমনভাবে ফোনে কথা কইলি আমি ডরাই গেছি। ভাবছি না জানি কি হইছে। আমি আসার পর কি সুন্দর সে গোসল করতে গেছে গা। একঘন্টা লাগাইয়া গোসল করলি। আর এহন বা**র প্যাঁচাল পারতাছস?”

“ আমি সিরিয়াস। বিশ্বাস না হইলে ফোন চেক কইরা দেখ। কালকে রাতরে ১২টার সময় কথা হইছে।”

আশা হা করে আছে। ঐশী সত্যিই সিরিয়াস ওকে দেখে মনে হচ্ছে না যে সে মজা করছে।

“ তুই সত্যি ঐশী তো? যেই ঐশী কি না বিয়া করবো না বইলা পণ করছে সেই ঐশী বিয়া’র জন্য রাজি হইয়া গেল! এইটাও আমার বিশ্বাস করতে হবো?
ওই ডাক্তারটা কতো ভালো আছিল। তার লুক, আচার, ব্যবহার, বয়সটাও অলমোস্ট ঠিক আছে। তোর থিকা খুব বেশিও বড় না। সব পার্ফেক্ট। ইয়া লম্বা, ফিট বডি। ইশশশশশ পুরাই হ্যান্ডসাম একটা ব্যাটা। ওইটারে ছাইড়া তুই এই টাকলারে বিয়া করবি? ওই ব্যাটার সাথে বিয়া ভাঙবার গেছিলি। আর এইটারে তুই নিজেই ডাইকা নিয়া আসতাছস লাইক সিরিয়াসলি?!
মানে এহন তুইও কি টাকার জন্য একটা বুইড়া টাকলারে বিয়া করবি দোস্ত!? তোর মাথা ঠিক আছে। ”

আশার কথার মাঝেই ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে চলে যায়। আশাও তার পিছে পিছে যেতে যেতে কথাগুলো বলতে থাকে। ঐশী গিয়ে দুটো প্লেটে দুটো করে ডিম টোস্ট নেয়। আর দুই কাপে দু কাপ ঘন দুধ চা ঢালে। ঐশী এসেই এগুলো বানিয়ে নিয়েছে। কিচেনে মাছ মাংস ছাড়া প্রায় সব কিছুই আছে। এটাকে এখন রীতিমতো সে নিজের ব্যাচেলর সংসারে রুপ দিয়েছে।

“ ওওহ আশা প্লিজ শাট আপ ইয়ার। কি বলতেছস তোর মাথা ঠিক আছে? যা মুখে আসতেছে বলতেছস। প্লিজ পাঁচটা মিনিট একটু শান্ত হয়ে বস। প্লিজ।”

ঐশীর কথায় আশা চুপ হয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। এটা বাড়ির মালিকের। এখানেই ছিল। ঐশী তা ব্যবহার করছে। ঐশী গিয়ে আশাকে খাবারের প্লেট আর চা টা দেয়। এক গ্লাস পানিও দেয়। এরপর নিজেরটা নিয়ে আশার মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়ে।

ঐশী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবেশে চোখটা বন্ধ করে ফেলে। চা টা বেশ ভালো হয়েছে। চোখ খুলে দেখে আশা তার দিকে তিক্ত নজর নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে আশার দিকে তাকিয়েই একটা টোস্ট নিয়ে কামড় দিয়ে আশাকেও খেতে ইশারা করে। আশা বিপরীতে একটা মুখ মুচড়া দিয়ে অন্যদিকে তাকায়। তা দেখে ঐশী জোরে হেসে ফেলে। আবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,

“ সিদ্ধান্তটা আমি খুব ভেবে চিন্তে নিছি আশা। এর অনেকগুলো কারণ আছে। আমরা যা চাই, যা চিন্তা করি তা কি আদোও হয়। এই যে আমি বিয়ে করতে চাই না, কেন চাই না এর সবকিছুই তোর জানা। ওসব কথা আর তুলতে চাচ্ছি না।
তুইই তো বলতি যে আমি যতই বলি জীবনে একা আমি থাকতে পারব না। একদিন না একদিন বিয়ে করতেই হবে। আমিই তখন ত্যাড়ামি করতাম আর তুই বকতি। এখন তুই এমন করতেছিস কেন?

তখন তোর সামনে মুখে মুখে ত্যাড়ামি করলেও মনে মনে আমিও জানতাম আমি যা বলতেছি তা কখনো সম্ভব না। অন্তত আমার মতো প্যারেন্টওয়ালা মেয়ের পক্ষে তা সম্ভব না। আর সত্যি বলতে কোথাও না কোথাও একটা সুন্দর সংসারের আকাঙ্খা আমার নিজেরও আছে। সব মেয়েরই থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম না। কিন্তু এই ছেলেদের প্রতি বিদ্বেষ। এটাই আমার বিয়ে না করার মূল কারণ।

কিন্তু কি করবো বল। আজ এইটাকে না করে দিলেই যে আমি এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাব এমন তো না? এটা গেলে আরেকটা আসবে। ওটা যে ভালো হবে তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। এইবার বলি আমি কেন রাজি হলাম। পয়েন্ট করে বলতেছি শোন।

প্রথমতো বাসায় কেউ আমার সাথে কথা না বললেও তারা আমার অলক্ষ্যে বেশ জোরেশোরে পাত্র খুঁজতেছে। বড় খালা পাত্র দেখতেছে। সে আমার জন্য কেমন পাত্র দেখাবে, সে আমাকে কত ভালোবাসে, কত ভালো চায় তা নিশ্চয়ই তোরে ব্যাখ্যা করতে হবে না? কয়েকজনের বায়োডাটা আমার হাতে পড়ছে। বায়োডাটা কি বলছি কিচ্ছা কাহিনি বলা বেটার। একটা ডিভোর্সি, আর একটার অনেকগুলো মুদি দোকান টোকান আছে। বেশ বড়লোক। মেট্রিক পাশ তাহলে বুঝ তারা কতো ভালো…. ওরাও বোধহয় সামনের সপ্তাহে দেখতে আসবে। এই যে আমাকে এখন ফ্রী ছেড়ে দিচ্ছে তার কারণ হচ্ছে আমার পাখাগুলো যেন আমার অলক্ষ্যে খুব বাজেভাবে ঘেচাং করে কে’টে দিতে পারে তার জন্য।

দ্বিতীয়ত এমনেতেও আমার অন্য কোনো পছন্দ নেই। তাই আমার কাছে আমও যা জামও তা। জাতে এক হলেও ফলে পার্থক্য।

তৃতীয়ত এই যে বারবার বলতেছিস বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছি বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছি। মোটেও না। আমি তার প্রস্তাব নিয়ে আসার কথাতে রাজি হইছি। দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না। আমার পরিবার থেকে পছন্দ করবে এটা সিওর। কিন্তু তার পরিবার থেকেও তো পছন্দ করার ব্যাপার আছে।
উনি বলছিলেন রাজি না থাকলে যেন তাকে তার কারণটা বলি। রাজি না হওয়ার কি কারণ দর্শাবো আমি তাকে? তোর মনে হয় আমি যদি বলি এমনেই তাকে বিয়ে করতে চাই না তাহলে সে আমার পিছ ছেড়ে দিবে? তিনি পিছু করতেই থাকবে। আর আমি এসব পিছ ছাড়ানোর জন্য চিল্লাতে পারব না৷ তার থেকে এই ভালো। দেখে যাক, আমিও তাদের দেখে নেই। খারাপ কিছু পেলে তো বাদই গেল আর যদি তা না হয়………যাক।

চতুর্থ এটা তো সত্যি আজহোক আর কাল। বিয়ে আমাকে করতেই হবে। আমি বিয়ের একদম বিপক্ষে এমনও তো না। সংসার করার ইচ্ছে আমারও আছে। তবে তা এখন ছিল না। হয়তো আরও দুই চার পাঁচ বছর বা তারও পরে করতাম। কিন্তু এখন যখন ভালো একটা সম্বন্ধ আসছে তাই আমি সেটা একটু বাজিয়ে দেখতে চাইছি। আর বড় কথা উনি নিজে আমাকে পছন্দ করছে। তার সাথে আমার বেশ অনেকবার কথা হইছে। আচার ব্যবহার ভালোই মনে হইছে। তখন খারাপ লাগতো যেহেতু আমি তাকে বিবাহিত মনে করছিলাম। এখন যেহেতু তার সব কথা আমি জানি তো এখন এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে তার আচার ব্যবহার যথেষ্ট সংযত ছিল এবং ওয়েল বিহেভ ছিল।

বাকিটা তার পরিবারের সাথে দেখা করে বুঝতে পারবো। আমিও তাদের বাজিয়ে দেখি। আমারও অনেককিছু দেখার আছে, বুঝার আছে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে এটাকেই নাহয় বিয়ে করে নিলাম। আর রইলো লুকের কথা। আমি এমন কোনো রুপসুন্দরী না যে আমার জন্য রণবীর সিং, ভারুন ধাওয়ান, ভিকি কোশলের মতো হ্যান্ডসাম প্রিন্স চার্মিং আসবে। লুক আমার কাছে কখনো ম্যাটার করে না। এইটা জেনেও তুই আমাকে এসব বলতে পারস না।
বরং এই যে একজন এসপি আমাকে বিয়ের জন্য প্রপোজাল দিয়েছে সত্যি করে বল তো আদোও এটার যোগ্য আমি?”

আশা চুপ করে আছে। এতগুলো কথা একসাথে বলে হাপিয়ে গেছে ঐশী। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পানি খেয়ে নেয়। তারপর আবার বলে,

“ আর রইলো ডাক্তার জয়ের কথা। তাকে আমি বিয়ে করতে চাই নি এর দুইটা কারণ। একেতো আমাদের মাঝে বিস্তর ফারাক। মারুফ স্যারের ক্ষেত্রেও বিস্তর ফারাক তবে সে সেটা জেনে নিজে থেকে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে। আর ডাক্তার জয়ের ক্ষেত্রে তার মা। এখন মা বাপ তো তারা যা ভাববে সেটাই সন্তানের জন্য ঠিক আর বাকিসব ভুল। তাই এটা ভুল না ঠিক তা আমি পরখ করতে গেছিলাম। এবং ওখানে গিয়ে আমার আন্দাজ ঠিক হয়। সে এই বিয়েতে রাজি না। তাই আর আমি সেখানে আমার অমতের কথা তুলি নি। তাকে এটা বুঝতে দিয়েছি যে তিনি রাজি নন এবং তার ওই কাহিনির ফলস্বরূপ আমিও ইন্টারেস্টেড না। তাই বিয়েটা হয় নি। এখানে বিয়ে ভাঙা কিংবা কারো রিজেকশনের কথা আসবে না।

দ্বিতীয়ত যেই ছেলে অন্য একটা মেয়েরে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে এবং তা জেনেও তাকে আমি কেন বিয়ে করতে যাব? কেবল তার সুন্দর চেহারা আর লম্বা হাইট ধুয়ে ধুয়ে আমি পানি খাব?”

বলেই থেমে যায় ঐশী। চা টা ঠান্ডা হয়ে তিতা হয়ে গেছে সাথে মনটাও তিক্ত হয়ে গেছে। তবুও সে নির্বিকার ভাবে ওই ঠান্ডা চা আর টোস্টটা খেতে থাকে। আশা এখন শান্ত হয়ে গেছে। তারকাছেও কারণগুলো যুক্তি সংগত মনে হয়েছে। সত্যিই তো বিয়ে আজ না হোক কাল করতেই হবে। আর ঐশীর যে বাপ মা তাদের মাথায় ছিট উঠলে আর ডানে বামে দেখবে না। দেখা যাবে কোনো রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। এই মানুষগুলোর জন্য এসব খুবই সহজ। আশার চিন্তার মধ্যেই আবার ঐশী কিছু রসাত্মক ভঙ্গিমায় বলে,

“ বাই দ্যা ওয়ে ওই ডাক্তাররে বুঝি তোর এতোই পছন্দ হইছে? তাইলে আলাপ করি তোর লাইগা?” — বলেই একটা শয়’তানি হাসি দেয়।

“ ঐশীর বাচ্চা মাথা গরম করবি না কইয়া দিলাম। ওই ব্যাটা এইটার থিকা সুন্দর তাই কইছিলাম। ”

“ হুমম। ইশশশশশ পুরাই হ্যান্ডসাম একটা ব্যাটা। ইয়া লম্বা, ফিট বডি…..” — আশার মতো করে আশার কথাগুলোই আবার রিপিট করছে ঐশী। আশা মনে মনে বিরক্ত হলেও চুপ করে থাকে। কারণ একে বলে কোনো লাভ নেই।

৬৩.

ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজগোজ করছে। সাজগোজ বলতে ধবধবে সাদা কামিজ আর লাল সালোয়ার আর উড়না যা এই মূহুর্তে গলায় জড়ানো। কানে একটা মিডিয়াম অক্সিডাইস কানের ঝুমকো। দুহাত ভর্তি অক্সিডাইস চুড়ি। চোখের নিচে কাজল দিতে দিতে বলে,

“ তোরে যে তোর লাল লিপস্টিকটা আনতে বলছিলাম আনছস?”

আশা নিরবে ব্যাগ থেকে বের করে দেয়। সে এতোক্ষণ ধরে একধ্যানে তীক্ষ্ণভাবে কেবল ঐশীকেই পরখ করে যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে সে অনেক ভালোবাসে। কারণে না অকারণে তা তার জানা নেই। তবে এই মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। মেয়েটার এতো ধরা বাঁধা জীবনে থেকেও তারজন্য অনেক করেছে। যেখানে সে উপস্থিত থাকতে পারে নি সেখানে অন্য কাউকে পাঠিয়েছে। নইলে বারবার ফোন দিয়ে তার খোঁজ নিয়েছে। এতো কঠিন জীবনে থেকেও হাসতে ভুলে না মেয়েটা। কেবল যারা তাকে কাছ থেকে চিনে একমাত্র তারাই এই মেয়েটার অবস্থা জানে। নাহলে ওর হাসিমুখ দেখে সারা দুনিয়া মনে করবে মেয়েটা না জানি কত সুখী। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। নিজের সাথে সাথে আশেপাশের সবাইকেও হাসিতে মাতিয়ে রাখে।

ঐশী খুব যত্ন নিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। যেন কতো সুখী। মনে হচ্ছে মনের খুশিতে সাজছে। কিন্তু আশা জানে ঐশী তার কষ্ট লুকাতে সাজছে। কোনোভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইছে। এরমধ্যে ঐশী বলে,

“ এই দেখতো কেমন লাগছে? ” — বলে একটা পাক দেয় ঐশী।

আশা আর নিজেকে আর নিজের কান্না আটকাতে পারে না। ঝাপটে ধরে ঐশীকে। কান্না করতে করতে বলে,

“ এমন করিস না দোস্ত। মনের মধ্যে এতো কষ্ট চেপে রাখিস না। ভিতরে কষ্ট জমিয়ে বাঁচা যায় না দোস্ত। আমার সামনে অন্তত নিজেকে মেলে দে। আমি জানি তোর কষ্ট হইতেছে। তুই অকৃত্রিম, তোর মাঝে এসব কৃত্রিমতা মানায় না দোস্ত। ”

ঐশীর চোখ দিয়েও দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সেও আশাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে।

#ক্রমশ

( কপি করা নিষেধ। কেউ কপি করবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here