মিঠা রোদ পর্ব ২০

0
2049

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“যৌবন ধরে রেখেছো কীভাবে?এখনও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে।”

“আপনার মনে হয়না আসিফ ভাই ফ্লার্ট করা বা নেওয়ার বয়সটা আমাদের নয়।”

“তুমি তো এতো তেজি ছিলেনা তাহিয়া।হঠাৎ এই রুপ।”

তাহিয়া নিরবতার চাদরকে অবলম্বন করলো।নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ থাকার পরেও এতো ভীরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।সামনে শীতকাল আসবে।পরিবেশ ধীরে ধীরে জানান দিচ্ছে তা।আসিফের বোনের আজ মেহেদী অনুষ্ঠান।পুরো তিনদিনের লম্বা প্রোগ্রাম রেখেছে তারা।আর হবেনা কেন?আসিফ যে রাজনীতিতে আছে তা সকালে জানলো তাহিয়া।তখন থেকে মেজাজ যেন আরো চটে গিয়েছে।তার ভাষ্যমতে রাজনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত মানুষেরা খানিকটা অদ্ভূত ধরণের হয়ে থাকে।যাদের অনুভূতির আগামাথা হয়না।আসিফ হাতে থাকা মোহিতো তাহিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“মাথা ঠান্ডা করো।ফ্লার্ট করছিনা আমি।তবে একটি প্রশ্ন করা আমার অধিকারে আছে।এতো প্রেমের সংসার ভাঙলো কেন?”

“আমার পার্সোনাল ব্যাপার আসিফ ভাই।”

“আমি তো বলিনি যে বিষয়টি জনগণের ব্যাপার।সকলের শোনা উচিত।বিষয়টি নিয়ে চর্চা করা উচিত।এমনকি টিভিতে নিউজেরও কথা বলিনি।”

“আশ্চর্য।”

তাহিয়ার কণ্ঠের গাঢ়তা অনুকরণ করে আসিফ বলল,

“অদ্ভূত।তাইয়ুবা কোথায়?এটার জবাব দাও অন্তত।”

তাহিয়া আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো তোশা কোথাও নেই।সে রেগে গেলো নিজের এসিস্ট্যান্টের উপর।কয়েক মাস আগে এমনই এক অনুষ্ঠানে মেয়েকে সে হারিয়ে বসেছিল।পাশ থেকে মেয়েটিকে ডেকে শুধালো,

“তোশা কোথায়? ”

“ম্যাম, তোশামণি তো উপরে গিয়েছে।বলল ঘুম আসছে বলে।”

” রুমের চাবি পেলো কোথায়?”

তাহিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো খাওয়ানোর সময় সে নিজেই চাবি দিয়েছিল।চারিধারে প্রচন্ড জোরে গান চলছে।মানুষ নাচানাচি করছে।এমন পরিবেশে মেয়েটিকে না রাখা উত্তম দেখে তাহিয়া চিন্তায় মগ্ন ছিল।অকস্মাৎ তাহিয়া আসিফের উদ্দেশ্যে শুধালো,

“দয়া করে তোশার সামনে স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন।আপনি এক সময় আমাকে পছন্দ করতেন বিষয়টি জানলে খুব বিব্রতবোধ হবে।”

“ভয় নেই তাহিয়া।তুমি জানো আমি অনুভূতি প্রকাশে ভীষণ কার্পণ্য করি।এজন্য সতের বছর আগে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিনি।”

“যা তখন পারেননি তা নিয়ে এই মাঝ বয়সে এসে আক্ষেপ করা বোকামো।”

তাহিয়া শাড়ী সামলে নিজের কাজে চলে গেলো।পিছন ফিরে অবশ্য একবার আসিফের দিকে তাঁকিয়েছিল।লোকটার চোখে একরাশ শূন্যতা কাজ করছে।তাহিয়া বুঝতে পারছে অপর ব্যক্তিটা তাকে পাওয়ার চেষ্টায় আছে।এজন্য তোশার মন জয় করার বহু চেষ্টাও করছে।তবে তাহিয়ার কাছে এসব তেতো অনুভূতি ছাড়া কিছু নয়।জীবনে মায়ান নামের একজন ছিল।সে চলে যাওয়ার পর আর কাওকে প্রবেশ করতে দিবেনা সে।নতুন বউয়ের দিকে তাঁকিয়ে হুট করে তাহিয়ার চোখ দুটো অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।এরকম সুখি একসময় সে নিজেও ছিল।

(—)

আস্তে করে ভারী দরজাটি খুলে ভেতরে উঁকি দিলো তোশা।দরজা ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে অবশ্য আগুন্তকের বার্তা ভেতরের মানুষটিকে জানান দিলো।ফোনটা কানে রেখেই পিছন ফিরে তাঁকালো কবীর।পরক্ষণে সামনে ফিরে ফোনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলল,

“আমি রাখছি আব্বু।বিষয়টি খেয়াল রাখবো।”

কবীর ফোনটা রেখে জানালায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তোশাকে একবার ভেতরে আসতেও বলল না।ছোট্ট মেয়েটির মন এজন্য অভিমানে ভরে গেলেও ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না।মৃদু পায়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।জানালা দিয়ে মৃদু রঙীন আলো আসছে।আলোর উষ্ণ উজ্জ্বলতায় কবীর শাহ নামক মানুষটিকে নতুন করে আবিষ্কার করলো তোশা।লম্বা চওড়া পাহাড়ের মতোন শক্ত দৃঢ় শরীরে সাদা রঙের পাঞ্জাবীটা বেশ ফুঁটে উঠেছে।

“আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে কবীর শাহ।”

“হুম।”

তোশামণির ছোট্ট মন যেন আরো ভেঙে গেলো।সে তো অনেক অনেক সুন্দরী।যা সকলে বলে বেড়ায়।আবার গায়ের রঙ নাকী দুধে আলতা।সেখানে আলতো স্পর্শ করলেও রক্তিম আভা ফুঁটে উঠে।এইতো আজ স্বপ্নের মানুষটির সঙ্গে মিল রেখে সে অফ হোয়াইট রঙের গাউন পড়েছে।গলায় আবার মুক্তোর মালাও দিয়েছে।তাহিয়া তো তাকে ছোট্ট বারবি বলতেও দ্বিধা করেনি।কিন্তু এই পা ষা ণ, নির্দয় পুরুষটি একবার তাঁকিয়েও দেখলো না।কিন্তু দুষ্ট মন তা মানলো না তোশার।নিজ থেকে শুধালো,

“আমাকে কেমন লাগছে বললেন না তো।”

কবীর ঘাড় ঘুরিয়ে একটিবার মেয়েটিকে দেখলো।পরক্ষণে সরিয়ে নিলো দৃষ্টি।

“আমাকে ভালোবাসো অথচ আমার দৃষ্টি পড়তে পারো না?”

“পড়ার সুযোগটি আমাকে দেননি।”

“তোশা তুমি কবে সিরিয়াস হবে?জানো আমি খুব..।”

“আপনি কী?”

“এইযে ভালোবাসার কথাগুলো বলো।হুটহাট দেখা করতে চলে আসো।এসব কেউ জানলে কী হবে জানো?তোমার কিছুই হবেনা।উল্টো আমার সম্মান চলে যাবে।একজন ষোল বছরের কিশোরীর কী আর ভুল ধরবে মানুষ।”

“আপনাকে খুব হতাশাগ্রস্ত দেখাচ্ছে।”

“কারণটা তুমি।”

কথাটি শুনে রাগ হলো না তোশার।বরং সে এগিয়ে এসে অনন্য শৈল্পিক মানুষটিকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো।

“তুমি এভাবে আমার সন্নিকটে চলে আসা বিরাট বড় ভুল করিয়ে দিতে পারে তোশা।”

“যেমন?”

তোশা সরিয়ে দিলো কবীর।সে খোলামেলা কিছু বলতে পারছেনা।বরং অনুভূতির বি ষা ক্ত দ ং শ নে শেষ হয়ে যাচ্ছে।হুট করে তোশার প্রতি রাগ উঠে গেলো তার।এগিয়ে তার হাতখানি শক্ত করে ধরে বলল,

“দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে বাবা-মায়ের বন্ধুর প্রেমে কেন পড়তে হলো তোমার?আবার যখন ভালোবাসা তৈরীই হলো।তবে কেন লুকিয়ে রাখলে না।”

“কারণ ভালোবাসা লুকানোর জিনিস না।”

“বড় বড় কথা ফেলতে জানো শুধু।বাস্তবতা জানো?”

তোশা কম্পমান কণ্ঠে শুধালো,

“আমার সাথে এমন করছেন কেন?”

“বয়স অনুযায়ী অনেক ছেলে পাবে।কেন আমাকে মানুষের কথার ভাগীদার বানাচ্ছো?”

“আমি কী করলাম।”

তোশাকে দূরে সরিয়ে দিলো কবীর।রাগে হাসফাস করছে সে।যে ব্যক্তিত্ব সম্মান এতো বছরে কুড়িয়েছে তা এক নিমিষেই শেষ করে ফেলবে মেয়েটা।হুট করে ভয়ার্ত তোশার মুখপানে তাঁকালো সে।কী সুন্দর মায়ামাখা মুখখানি।এমন মায়া সে রোজ দেখতে চাইবে।তোশার চোখের কার্ণিশ ছুঁয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।ছোট্ট করে বলল,

“ভালোবাসি তো কবীর শাহ।”

“ভালোবাসো ঠিক আছে।কাছে আসো।আমার স্ত্রী হতে চাওনা?বিয়েটা চলো এখন করে আসি।এরপর দুজনের রাত রঙিন হোক।”

“না।এটা ভালোবাসা না কবীর শাহ।”

“আমার কাছে এটাই ভালোবাসা।যদি না পারো এখুনি বের হবে রুম থেকে।”

“এটা কী পরীক্ষা?”

“ধরে নাও।”

ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠলো তোশা।কবীরকে আজ ভিন্ন লাগছে তার কাছে।

“আমি ষোল বছরের একজন মেয়ে।তার কাছে কীভাবে আপনি এমন কিছু আশা করেন?”

নিজের কথায় তোশা চমকে উঠলো।সে এই কথাটা বলে তাদের সম্পর্ক যে সম্ভব নয় সেটাই বুঝিয়েছে।কবীরের অধরে হাসি ফুটে উঠলো।সে এগিয়ে এসে তোশার গালে হাত দিয়ে উষ্ণ স্পর্শ করে বলল,

“ভালোবাসা বৈবাহিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত।আর বিয়ে শারীরিক লেনাদেনায় অনেকটা টিকে থাকে।আমার বাচ্চার মুখ থেকে মা ডাক শোনার জন্য আমার স্ত্রী হতে হবে।যাও বের হও রুম থেকে।তা নয় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।”

তোশা এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ালো না।কবীর এই ছোট্ট পুতুলটির মন একটুও ভাঙতে চায়নি।এতোটা কঠোর কখনো সে হতো না।যদি না দিশা সবকিছু কবীরের বাবাকে জানাতো।সেই এখন ফোন করে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলো।অবসন্ন মন নিয়ে কবীর বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো।সিলিং এর পানে তাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“আমাকে ক্ষমা করিও তোশা।নিজেকে এতোটা ছোট করতে হলো শুধু তোমাকে দূরে সরানোর জন্য।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।প্রিয় পাঠকেরা গল্প পড়ে সুন্দর করে রেসপন্স করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here