নীলাম্বরে জোছনা পর্ব ৭

0
397

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৭

মাঝে মাঝে আমরা প্রকৃতির বেড়াজালে আটকে যাই।সমস্ত পরিবেশ প্রতিকূল আমাদের বিপক্ষে থাকে। সে সময় কেউ থাকেনা আমাদের পাশে সবাই কেমন দূরে সরে যায়। পরিচিত মানুষগুলো অপরিচিত লাগে! আপন বলতে কেউ থাকেনা। নিজের কথাগুলো বোঝার কেউ থাকে না, একাকীত্ব গ্রাস করে নেয় আমাদের।তখন খুব করে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয় দুচোখের পানি ও তখন ছন্দ হারায় তারাও তখন ধরা দিতে চায় না! এমন এক কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে মানহা তারা কি করা উচিত। দুহাতে নিজের চুল খামছে ধরে বেডের উপর বসলো। ভালোবাসা অতীত দুটোর মধ্য থেকে কোনটা বেছে নেওয়া উচিত! অতীতের জন্য বর্তমান কে হারানো,নাকি বর্তমানের জন্য অতীতকে হারানো!
নিজেকে কোন ভাবেই স্থীর করতে পারছে না মানহা। সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে। নয়তো নিজেকে শেষ করতে ইচ্ছে করছে।


মিফতাজ বের হয়ে সোজ চলে আসলো মানহাদের বাসায়।
রুনা বেগম মিফতাজকে দেখে স্বান্ত স্বরে বললো,তোমাদের ষোল কলা পূর্ণ হলো!

– দেখুন আপনি বড় আপনার সাথে আমি বাজে বিহেভ করতে চাইছি না। তাই নিজের লিমিটে থেকে কথা বলুন।
– দু’দিনের বাচ্চা ছেলে এসেছে আমাকে লিমিট শেখাতে! এই শোন এই যে মানহাকে খুঁজে না পাোুার যে নাটকটা চলছে তার মূল নায়ক তুমি!
– দেখুন আমি মানহার বিষয়ে কথা বলতে আসিনি আমাকে আয়াতের ব্যাপারে বলুন।
– আয়াতের বিষয় জেনে তোমার কি?
– আপনি বলুন তারপর বলছি? আয়াত কতদিন দরে অসুস্থ ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো?
– তোমার প্রেমিকা তোমাকে কখনো আয়াতের কথা বলেনি!তা বলবে কেন নিজের এতো বড় পাপ কেউ প্রকাশ করে নাকি?
– আন্টি হেয়ালি না করে আমাকে বলুন কি হয়েছিল। আমি জানতে চাই সবটা?
– আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। মানহা তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আমার আয়াত তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে একি কলেজে পড়তো দু’জনে।মানহার মায়ের মৃত্যুর পর মানহার বাবা আরেকটা বিয়ে করে বাহিরে চলে যায়। সেই তখন থেকে নিজের মেয়ের মত বড় করেছি। তখন বুঝতে পারিনি দুধ কলা দিয়ে কাল সা’প পুষে ছিলাম।
– আয়াতের কোন বান্ধবীর বাসায় বার্থডে পার্টি ছিলো। আদুরী তখন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তাই আয়াতের সাথে মানহাকে পাঠাই সেখানে।এটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কাল।
– আমার সুস্থ হাসোজ্জল মেয়াটাকে পাঠিয়ে ছিলাম এক বিষাক্ত মনের মেয়ের সাথে। যে আমার মেয়েটাকে হিংসা করতো। তখন কি এসব বুঝতাম ওইটুকু মেয়ের মনে যে এতো হিংসা।
– দুজনেই গেলো ঠিক মত কিন্তু রাত তিনটার সময় কল আসলো আপনার মেয়েরা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি দ্রুত আসুন।
– পৃথিবী আমার অন্ধকার হয়ে গেলো। এমনিতেই বারোটার পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম চিন্তা হচ্ছিল কখন আসবে। তোমার আঙ্কেল কল করছিলো দু’জনের ফোন সুইচড অফ।এগারোটার সময়ও মেয়েটা আমাকে কল করে বলেছিল বারোটা দশেই তারা বের হব৷ চিন্তা করতে না। আমি যেন তোমার আঙ্কেলকে একটু এগিয়ে আনতে বলি।
– ছুটে হসপিটালে গেলাম যে দেখি মানহার হাতে আর মাথায় বেন্ডেজ করা। জিজ্ঞেস করলাম আয়াত কই। আইসিইউর দিকে দেখিয়ে দিলো। মেয়েটা আমার মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলো আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম। তিনদিন পর আমার মেয়েটার জ্ঞান ফিরে আসলেও চিনতে পারছিলো না কাউকে। এভাবে মাস খানেক যাওয়ার পর আস্তে আস্তে উদ্ভট কাজ করা শুরু করে দেয়। একটা টাইমে বদ্ধ উন্মাদ পাগলিতে পরিনত হয়। ডাক্তারের বলে দিলো আমার মেয়েকে পাবনা নিয়ে যেতে। সেখানের খোঁজ খবর নিয়ে আর সাহসে কুলোয়নি। তাই এভাবেই শেকল বন্দি করে রেখেছি।
-জানো এতো কিছুর পরেও ওই মেয়ে আমার চোখের সামনে ঘুরঘুর করছে এরচেয়ে বড় কষ্ট ার কি হতে পারে।সবাই বলে এই কাজ মানহা করতে পারেনা নিশ্চিত অন্য কোন কাহিনি লুকিয়ে আছে এর পিছনে। কিন্তু এতো বছরে এতো ভাবে জিজ্ঞেস করার পরেও ওই মেয়ে একি কথা বলে যাচ্ছে! নিজের স্বামীর ভাগ দিতে রাজি হয়ে গেছে! যদি অন্যায় নাই করে থাকতো তাহলে সব মানলেও তোমাকে ভাগ করে নেয়া মানতো না। তারমানে সব করেছে ও নিজেই।

‘কিন্তু এসব হলো কি করো?

– তোমার প্রেমিকা করেছে সে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে। সে আমার মেয়েকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়েছে।

আচ্ছা আন্টি আমি কি আয়াতকে একবার দেখতে পারি?

– আসো আমার সাথে।
আয়াত তখন ঘুমে, মিফতাজ হয়তো কল্পনাও করতে পারছেনা তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।কোন ভয়াবহ সত্যির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সে! সে যদি জানতো তবে এই সময় টুকু মুছে দিতো জীবন থেকে।


আরহাম ছুটে আসলো নিজের রুমে এসে নিজের ভাবতে লাগলো। হুট করে মনে পরলো মিফতাজের কথা মিফতাজ বলেছিল আরহামের নামে একটা চিঠি এসেছে।
মিফতাজ বসে পরলো বেডে নিচের চুল খামচে ধরে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আশ্চর্য মনে হচ্ছে ফ্লোরে মাহিবার হাসোজ্জল চেহারটা ভেসে উঠেছে।দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকে বলে,আমার ভীনদেশী তারা, তুমি কোন আকাশে উড়ে বেরাও আমার আকাশ ছাড়া!
আরহাম ভাবছে এই হয়তো মাহি হেসে উত্তর দিবে, আমার আমার আকাশ, তাই তোমায় ছেড়ে আর কোথায় উড়বো বলো!
মাহির সাথে আরহামের পরিচয় হয়েছিল বেশ ইন্টারেস্টিং ভাবে,ভার্চুয়াল জগতের পরিচয়,একটা কার্টুনে মাহির কমেন্ট দেখে কৌতূহলি হয়ে মাহিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিল আরহাম। মাহিও একসেপ্ট করে নেয়। তারপর তারা ফেসবুক ফ্রেন্ড হলেও তেমন কথা হতো না তাদের। একদিন মাহির একটা স্টোরির রিপ্লাই করা থেকে কথা শুরু হয়।
প্রথম দিকে তেমন কথা না হলেও মাসখানেক পর তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা শুরু হয়। মাহির চাঞ্চল্য আর মিঠা মিঠা কথা খুব দ্রুত আরহামের মনে জায়গা করে নেয়। তখনও দেখা হয়নি কেউ কাউকে।
একদিন হুট করে সাহস জুগিয়ে আরহাম মাহির পিক চাইলে মাহি একটা হাতের পিক দেয়।
এভাবে ধীরে ধীরে কথা বলতে বলতে একদিন আরহাম মাহিকে প্রপোজ করে বসে, মাহি তোন উত্তর দেয়না। খুব ভালো ভাবে আগাচ্ছিল সম্পর্ক কিন্তু হুট করে কি হলো সব কিছু পাল্টে গেলো এক মূহুর্তে। আর দেখা গেলনা মাহিবার আইডির পাশে সবুজ বাতি।একদিন, এক সপ্তাহ,একমাস, এক বছর এমন করে আজ তিন বছরেও আর পেলো না মাহির কোন খোঁজ।
ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই, এইযে ভিজে উঠেছে আরহামের চোখের কোন এটা কি অন্যায়। আরহাম আবার ব্যাস্ত হলো চিঠি খুঁজতে।

কিন্তু এই এতো বছরে সেই চিঠি পাবে তো আরহাম?


আদুরী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একটা কাজল নিয়ে চোখে পরলো। আবার টিস্যু দিয়ে মুছেও দিচ্ছে। হাঠাৎ হাসছে আবার চোখ ভরে উঠছে। নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,প্রিয় আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবেসেছিলাম তার বিনিময় তুমি আমাকে এক আকাশ না না সাত আসমান সম দুঃখ দিয়ে গেলে।জানো প্রিয় আমারও ইচ্ছে করে বউ সাজতে!কিন্তু বর হিসেবে যে আমি শুধু তোকেই চেয়েছিলাম। কেন পেলাম না। কেন ঠকালে আমায়। একবার কি এই উত্তর দিতে পারবে?
আচ্ছা আমার কমতিটা কোথায় ছিলো বলে যেতে।আমি চাই একবার আমাদের দেখা হোক, আর একবার আমাদের কথা হোক। আমি বেশিকিছু না শুধু তোমার থেকে আমার ভালোবাসা, সময় আমার মূহুর্তগুলো ফেরত চাইবো। এই যে তুমি আমাকে বিরহে রেখে সুখে আছো! তোমার কি হৃদয় কাঁপে না। তোমার কি মাঝ রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে যায় না আমাকে দেয়া কষ্টের ভারে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here