অবশেষে তোমায় হলো পাওয়া পর্ব ৬

0
125

#অবশেষে_তোমায়_হলো_পাওয়া
#পর্ব:৬
#তামান্না_ইসলাম_কথা

একি মোয়াজ কোথায় যাচ্ছো তুমি? আমরা সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।”

ছাদ থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে চলে যাচ্ছিল মোয়াজ। কিন্তু নাজিয়া বেগম অর্থাৎ মোয়াজের ফুপির কথায় থেমে যায়।

” ফুপি আমি কথাকে সাথে নিয়ে একটু বের হচ্ছি। তোমরা আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করো আমরা যাবো আর আসবো।”

” দেখতে পারছো না আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি? আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে তোমাদের বিয়ে হলো এরই মাঝে বাহিরে যাচ্ছো?”

নাজিয়া বেগমের কথার প্রতিউত্তরে মোয়াজ অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই নাজিয়া বেগম চুপ করে গেলেন।

” ঠিক আছে! তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আমাদের তো ওবাড়িতেও কাজ আছে অনেক কিছু।”

নাজিয়া বেগমের কথার প্রতিউত্তরে মোয়াজের মুখে হালকা হাসির রেশ ফুটে ওঠে। একটু আগেই যেই চোখে মুখে অসহায়ের ছাপ ছিলো, এখন সেই মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।

” কিন্তু মোয়াজ অল্প একটু মুখে,,,”

” মামী একটু!”

আমেনা বেগমের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই মোয়াজ আমেনা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে দরজার দিকে চলে গেলো।

” আপা ওদের যেতে দিন। হয়তো কোনো দরকারি কাজ আছে।”

নাজিয়া বেগমের কথার প্রতিউত্তরে আমেনা বেগম আর কিছু বললো না। চুপচাপ সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে লাগল।

——-

প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে মোয়াজ। কথা গাড়িতে উঠার সময় যেমন চুপচাপ ছিলো এখনও তাই আছে। কোথায় যাচ্ছে? কেন যাচ্ছে কিছুই জানে না কথা। কয়েক বার মোয়াজকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করছে না। কিন্তু এবার আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না। মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করেই নিলো-

” সেই কখন থেকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা এখনো পর্যন্ত বললেন না। এবার বলুন আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর কেন যাচ্ছি?”

কথার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে মোয়াজ ড্রাইভ করতে করতে এক পলক কথার দিকে তাকিয়ে আবারও গাড়ি চালানোতে মন দিলো। এতো বিরক্তের শেষে পৌঁছে গেলো কথা।

” সমস্যা কি? আমি কিছু প্রশ্ন করেছি। উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”

” প্রয়োজন মনে করছি না। এন্ড ডোন্ট টক্ টু মি রাইট নাউ। সো বি কোয়াইট।”

কথার উত্তরে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে দিলো মোয়াজ। এইদিকে মোয়াজের এমন কথা শুনে বসে বসে রাগে ফুঁসতে লাগলো কথা।

” আমাকে চোখ রাঙ্গানু? এই কথাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলা? এর প্রতিশোধ যদি আমি না নিয়েছি তো আমার নাম কথা নয়। শয়তান, ইঁদুর, হাতি, বানর একটা।”

মনে মনে আরো কিছু গালি দিয়ে চুপচুপ বাহিরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে লাগলো।
আরো ত্রিশ মিনিট পর নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দেয় মোয়াজ। পাশের সিটের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে, কথা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। দুপুরের শেষ সময়। রোদের তেজ কমে আসছে। তবে তাঁর আলোক রশ্মি ছড়িয়ে আছে চারপাশ ঘিরে। গাড়ির কাচ ভেদ করে রোদের আলোক রশ্মি এসে কথার মুখের একপাশে লাগছে। যদিও মুখের উপর ঘন কালো কেশ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আর সেই এলো কেশের উপর রোদের রশ্মি পড়ায় চুল গুলো চিক চিক করছে। মুগ্ধ চোখে শুধু সেই আভা গুলো দেখছে মেয়াজ।
যেই মোয়াজ মেয়েদের প্রতি আগ্ৰহ কম প্রকাশ করতো, আজ সেই মোয়াজ কারো মায়ায় মুখ আছড়ে পড়ছে। দুটো বছর ধরে মায়ায় আটকে আছে সে।

” কোনো এক বসন্তে মাতাল হাওয়ার মতো করে এই হৃদয়ে তোমার ছুঁয়া এঁকে দিয়েছো। করে দিয়েছো এক পাগল পথ প্রেমিক। দাড়ে, দাড়ে তোমার দুয়ারে কড়া নেছেছে এই আমি গো। পাইনি তোমার দেখা, মেলেনি তোমার সেই মাতাল করা ছুঁয়া। তাই তো পাগল হয়ে ঘুরেছি আমি তোমার পথদারে। ওহে শ্যামব্যালিকা! তুমি কি শুনতে পাওয়া এই হৃদয়ে তোমার নিয়ে গড়ে উঠা প্রতিটা হৃদস্পন্দন? এই হৃদয় যে তোমার ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল।”

কথার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বিরবির করে কথা গুলো বললো মোয়াজ। এরই মাঝে কথা হালকা নড়ে চড়ে উঠতে দেখে মোয়াজ সোজা হয়ে বসে।

” উঠে গিয়েছেন? নামো চলে এসেছি আমরা।না-কি কাঁথা-বালিশের ব্যবস্থা করে দিবো?”

কথাকে উঠে বসতে দেখেই টিপকিনি সুরে উপরাক্তি গুলো বললো বললো মোয়াজ। মোয়াজের কথা গুলো কথার কাছে বিষের মতো ঠেকলো।

” সব দোষ আপনি করে কি এখন আমাকে কথা শুনচ্ছেন? আপনাকে কে বলেছিল আজকে এভাবে আসতে? আপনি না আসলে আমি একটু শান্তি মত নিজের কাজ সাথে ঘুম দিতে পারতাম।”

মোয়াজকে কথা গুলো বলতে বলতে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে কথা।

” দুই বছর ধরে আমাকে ঘুম আসতে না দিয়ে আপনি শান্তি মত ঘুম এসেছেন। এবার আমি ঘুম আসব আপনার চোখের ঘুম হারাম করে।”

মনে মনে কথা গুলো বলে নিজেও গাড়ি থেকে নেমে গেলো মোয়াজ।

” আমরা এখানে কেন? বাড়িতে যাবো না?”

গাড়ি থেকে নেমেই কথা কিছু সময়ের জন্য অবাক হয়ে যায়। মোয়াজ এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসবে তা ভাবনারও অতীত ছিল তার। কথা নিজ স্থান থেকে সরে এসে চারপাশ ইট দিয়ে বাঁধায় করা একটা পারিবারিক কবরস্থানের সামনে আসে। কবরস্থানের সাইটে বড় করে লেখা আছে ” চৌধুরী পরিবার কবরস্থান।”

” হুম যাবো। তবে এখানে আসা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো। তোমাকে ধন্যবাদ!”

একে তো এখানে নিয়ে এসেছে আবার ধন্যবাদ। সব কিছু কেমন জানি মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কথার। এইটা বুঝতে পারছে যে এইটা তাদের পারিবারিক কবরস্থান। তবে সেটা এতো দূরে কেন? আর ধন্যবাদ-ই বা কেন? কোনো কিছু বুঝতে না পেরে কথা বোকার মত জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে মোয়াজের দিকে তাকিয়ে রইলো।‌ মোয়াজ ও হয়তো কথার চোখের ভাষা বুঝতে পারলো। তাই কিছু না বলে কথার হাত ধরে কবরস্থানের ভিতরে প্রবেশ না করে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

” এই জায়গাটা আমার মায়ের অনেক পছন্দের স্থান ছিল। পাশেই একটা অনাথ আশ্রম আছে। ওই যে দেখছো অনাথ আশ্রম? ওখানে না-কি মায়ের সাথে বাবার প্রথম পরিচয় হয়। এখান থেকেই শুরু হয় বাবা মায়ের ভালোবাসা। আমার মা যখন ছিলেন তখন আমাকে রোজ গল্প বলতেন। তাদের বন্ধুত্ব, ভালো লাগা, কাছে আসা, ভালোবাসা। আমার খুব ভালো লাগতো। আমিও অনেক আগ্ৰহ নিয়ে শুনতাম। থাক এইসব বাদ দেও। অন্য একদিন তোমাকে সব কিছু বলবো। এখন চলো মায়ের থেকে দোয়া নিয়ে আসি।”

আর কিছু না বলে কথার হাত ধরে কবর জিয়ারত করতে চলে যায়।

——

” তুমি আমায় কি বলেছিলে? তুমি তোমার কথা রাখতে পারোনি। আমি কাউকে ছাড়বো না। মোয়াজ শুধু আমার। আমি কাউকে আসতে দিবো না মোয়াজের আশেপাশে। আমি সব কিছু ধংস করে দিবো।”

এগ্ৰেসিভ হয়ে ঘরের সমস্ত জিনিস ভেঙে ফেলছে লিজা। রুমা সিকদার কিছুতেই লিজাকে শান্ত করতে পারছে না।
আসলে লিজা ও রুমা সিকদার গিয়েছিল মোয়াজের বাড়িতে। দুদিন পর রুমা ও সুমন সিকদার অর্থাৎ লিজার মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী। মি. সুমন সিকদার বড় করে পার্টির আয়োজন করছে। সেই সুবাদে মোয়াজদের বাড়িতে ইনভাইট করতে এসেছিলেন লিজা ও রুমা সিকদার। কিন্তু বাড়িতে আসতেই ড্রয়িংরুমে কথাকে বউ সাজে মোয়াজের পাশে বসে থাকতে দেখে কিছু বুঝতে বাকি রাখেনি লিজা।
সেখান থেকে কোনো মতে লিজাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে রুমা সিকদার। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে পাগলামী।

” লিজা!”

হঠাৎ করে নিজ বাবার কন্ঠ স্বর কর্ণগুছর হতেই দরজার দিকে তাকায় লিজা। নিজ বাবাকে দেখে আরো আল্লাদি হয়ে পড়ে লিজা।

” বাবা মোয়াজ!”

” আমি সব কিছু জানি প্রিন্সেস। আমি সব শুনেছি।”

বাবাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে কথা গুলো বলতে যাচ্ছিল লিজা। সুমন সিকদার লিজার মাথায় বুলিয়ে শান্ত করতে করতে কথা গুলো বললো সুমন সিকদার।

” তুমি এখানে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও পানি নিয়ে আসো। আজকে তোমার বোনের জন্য আমার প্রিন্সেসের চোখে পানি। আর উনি এখানে দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে। যাও এখান থেকে।”

এক প্রকার ধমক দিয়ে রুমা সিকদারকে কথা গুলো বললেন সুমন সিকদার। সুমন সিকদারের রাগ সম্পর্কে জানেন রুমা সিকদার। সাথে এইটাও জানে সে মেয়ে বলতে অন্ধ। আর সুমন সিকদার রাগের মাথায় গায়ে হাত তুলতেও পিছু পা হন না। তাই আর কিছু না বলে রুমা সিকদার রুম থেকে বের হয়ে যায় পানি আনতে।

“এইটা দেখো তো আমার প্রিন্সেস।”

রুমা সিকদার চলে যেতেই সুমন সিকদার লিজার সামনে ফোন কিছু একটা দেখাতেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তোলে।

” এবার তুমি কি করবে মোয়াজ? আমিও দেখবো আমাকে বিয়ে না করে কি ভাবে তোমার কফি হাউজ‌ বাঁচাবে আমিও দেখবো।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here