অপরিচিত লেখিকাঃ তাহমিনা তমা পর্বঃ ২৫

0
1566

#অপরিচিত
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ২৫

মেহরাব কী উত্তর দেবে আরফার এই প্রশ্নের ? এর উত্তর যে তার নিজেরই জানা নেই।

আরফা আবার বললো, কী হলো কিছু বলছেন না যে ?

মেহরাব মুচকি হেঁসে বললো, সব প্রশ্নের উত্তর সবসময় পাওয়া যায় না। সময় হোক তোমার এই প্রশ্নের উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে।

আরফা কিছু বলবে তার আগেই মেহরাব ফ্রুট জুস আরফার হাত দিয়ে বললো, তাড়াতাড়ি এটা শেষ করো। তোমার খাওয়া শেষ হলে আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে।

আরফার এতোক্ষণে বাসার কথা মনে হলো৷ সে হসপিটালে ভর্তি আর দাদাজান বা মা তাকে দেখতে আসবে না এটা কীভাবে সম্ভব ? আর তার নিজের মাই বা কোথায় ?

আরফা বলে উঠলো, দাদাজান আর মা কোথায় উনারা এখনো আমাকে দেখা করতে এলেন না কেনো ?

মেহরাব এক পিস আপেল তুলে আরফার মুখের কাছে নিতে গিয়ে তার হাত থেমে গেলো৷ আরফাকে কীভাবে বলবে দাদাজান কোথায়। মেহরাবের চোখের কোণে পানির কণা চিকচিক করে উঠলো।

আরফা ব্যস্ত হয়ে বললো, আপনি কিছু বলছেন না কেনো ? সবাই ঠিক আছে তো ? আপনি গতরাতেও আমার কথা কেমন এড়িয়ে গেলেন।

মেহরাব নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, আরে কী বোকার মতো কথা বলছো ? এড়িয়ে যাবো কেনো ? দাদাজানের ওপর দিয়ে অনেক বড় একটা ঝড় গেছে। যাকে ছেলের মতো ভালোবেসে এসেছে সেই এতোবড় ধোঁকা দিয়েছে। একটু অসুস্থ হয়ে গেছে তাই মম বাসায় আছে দাদাজানের কাছে।

কথাটা শেষ করতে করতে মেহরাবের চোখ আবার পানিতে ভড়ে উঠলো। আরফাও যে দাদাজানকে খুব ভালোবাসে সেটা মেহরাব ভালো করেই জানে। এই অসুস্থ অবস্থায় যদি জানতে পারে দাদাজান আর নেই তাহলে হয়তো ওর ক্ষতি হবে সেটা এই মুহূর্তে মেহরাব কিছুতেই হতে দিবে না। আরফা আর কিছু বললো না চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো। মেহরাব আরফাকে খাইয়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। আরফার কপালে একটা কিস করলো। আরফা বড়বড় চোখ করে তাকালো মেহরাবের দিকে। মেহরাবের হুঁশ ফিরতে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো৷ এখন পর্যন্ত মেহরাব যতবার আরফার কপালে কিস করেছে সে হয় ঘুমে ছিলো নাহয় অজ্ঞান কিন্তু এখন।

আরফা কিছু বলার আগেই মেহরাব বললো, তুমি থাকো আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। নার্সকে বলে যাচ্ছি কিছু প্রয়োজন হলে সে দিবে।

আরফা মাথা দিয়ে সায় দিলে মেহরাব মুচকি হেঁসে আসছি বলে বের হয়ে গেলো। আরফা এখনো ভাবছে মেহরাব এটা কী করলো আর কেনো ? আজকাল মেহরাবকে বড্ড রহস্যময় লাগছে আরফার কাছে। আরফা এখনো জানতে পারলো না মেহরাব সিনথিয়ার কথা কীভাবে জানলো ? হয়তো সিনথিয়ার সাথে জেদ করেই তাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন নানা চিন্তা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো আরফা। মেহরাব বাসায় পা রাখতেই বুকের ভেতরটা কেমন ধক করে উঠলো। মনে হচ্ছে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই সোফায় বসে থাকা মুজাহিদ খান বলে উঠবে দাদুভাই চলে এসেছো ? কিন্তু না আর কোনদিন এমন হবে না। বাসায় মনে হচ্ছে কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই একদম পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। রহমান দাদু দরজা খোলে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।

মেহরাব বললো, মম কী কিছু খেয়েছে দাদু ?

রহমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, বাড়িতে তো চুলোয় জ্বলেনি দাদুভাই। কেউ খাবার খাবে কোথা থেকে ? আমাদের বৌমা এখন কেমন আছে দাদুভাই ?

মেহরাব ভেতরে ঢুকে বললো, এখন ভালো আছে ? ফ্রিজে ফ্রুটস আছে দাদু ?

রহমান বললো, কী জানি আছে হয়তো ?

মেহরাব বললো, তুমি কিছু ফ্রুটস কেটে আর হালকা কিছু ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দাও। আমি ততক্ষণে একটু শাওয়ার নিয়ে আসছি। এসে মমকে খাইয়ে দিবো।

রহমান বললো, ঠিক আছে দাদুভাই ?

মেহরাব যেতে যেতে বললো, আর কুককে বলো সবার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করতে। সবাই কী না খেয়ে মরবে নাকি ?

রহমান কিছু না বলে কিচেনে চলে গেলো। মেহরাব শাওয়ার নিয়ে এসে মমকে খাইয়ে দিলো জোর করে আর নিজেও একটু খেয়ে নিলো। বাসায় কাজ শেষ করে আবার হসপিটালে গেলো। গিয়ে দেখে আরফার মা বসে আছে আরফার পাশে। উনি এখন সুস্থ তাই ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। আরফা বাসায় যেতে চাইলেও মেহরাব নিয়ে যায়নি। মেহরাব বেশির ভাগ সময় হসপিটালে থাকে তাই আরফার দেখাশোনাও করতে পারে। বাসায় গেলে মেহরাবের অসুবিধা হয়ে যাবে দেখাশোনা করতে আর তাছাড়া বাসায় গেলেই আরফা দাদাজানের কথা জানতে পেরে যাবে তাই নিয়ে যায়নি। কিন্তু এই কয়েকদিন আরফার প্রায় সব দেখাশোনা মেহরাব করেছে আর বাকিটা নার্স করেছে। আরফার মা দিনে একবার দেখে গেছে এসে আর মেহেকও হসপিটালে থাকে এখন বেশি সময় তাই ফাঁকা থাকলেই আরফার কাছে চলে যাবে। মেহরাব বা মেহেক কেউই বাসায় থাকতে চায় না কারণ বাসাটাতে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে তাই। মিমিও সময় পেলে দেখা করে গেছে। রুমানকে আর হসপিটালের সামনে দেখা যায়নি সে রাতের পর। আরফাকে আজ বাসায় নিয়ে যাবে মেহরাব তাই ভয়ে আছে। কীভাবে রিয়াক্ট করবে কে জানে ? আরফা এখন অনেকটা সুস্থ তবে ঘা পুরোপুরি শুকাতে আরো সময় লাগবে। আরফা বাসায় এসে মুজাহিদ খানের রুমে চলে গেলো কারণ এই কয়েকদিনে সে একবার দেখা করতে যায়নি আরফার সাথে তাই একটা বুঝাপরা করতে হবে তার সাথে।

রুমে কাউকে না পেয়ে আরফা ড্রয়িংরুমে এসে রহমানকে দেখে বললো, দাদাজান কোথায় সে তো রুমে নেই।

আরফার কথায় রহমান মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। আর মেহরাব সোফায় বসে আছে মাথা নিচু করে।

আরফা আবার বললো, কী হলো রহমান দাদু ? আপনি কথা বলছেন না কেনো ?

এবার আরফার ভয় করছে সে রহমানের কান্না দেখেছে। আরফা তাড়াতাড়ি মেহরাবের সামনে গেলো আর বললো, কেউ কিছু বলছেন কেনো ? দাদাজান কোথায় ?

মেহরাব আরফাকে সোফায় বসিয়ে দিলো নিজের পাশে। আরফার মুখটা নিজের হাতের আঁজলে নিয়ে বললো, দাদাজান নেই চলে গেছে আমাদের সবাইকে ছেড়ে।

আরফা কথাটা শুনে কেমন পাথর হয়ে গেলো, মনে পরে গেলো বাবাকে হারানোর সেই দিনটা। আজ আবার অনেক বছর পর আরফা সেই যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছে। দাদাজানের সাথে কাটানো দুষ্টু মিষ্টি সময়গুলো ভাসতে লাগলো আরফার চোখের তারায়। টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ছে আরফার চোখ থেকে।

কাঁপা গলায় আরফা বললো, আ,,আপনি কী বলছেন এসব ?

মেহরাব আরফার চোখের পানি নিজের দু’হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মুছে দিয়ে বললো, আমি যা বলছি সব সত্যি। দাদাজান সেদিনই আমাদের ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে গেছে আরফা।

আরফা শান্তভাবে মেহরাবের বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো, ত,,তাহলে আ,,আপনি আমাকে মিথ্যা কেনো বলেছেন এতদিন।

আরফার চোখের পানিতে মেহরাবের শার্ট ভিজে যাচ্ছে, আরফা ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে একটু পরপর।

মেহরাব আরফার মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি অসুস্থ ছিলে আর কাউকে হারানোর শক্তি নেই আমার তাই মিথ্যা বলেছি।

আরফা এবার শব্দ করেই কেঁদে উঠলো আর থেমে থেমে বললো, আপন মানুষগুলো কেনো হারিয়ে যায় বলুনতো ?

মেহরাব কিছু বললো না নিজেও চোখের পানি বিসর্জন দিতে লাগলো নিঃশব্দে। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে রহমান। এতোদিন ধরে কাজ করছে মুজাহিদ খানের সাথে। কখনো কাজের লোকের মতো নয় নিজের ভাইয়ের মতো দেখেছে সবসময়।

১৯
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না, খান ভিলায়ও থেমে নেই। কষ্ট ভুলে সবাই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। আরফা এখন পুরোপুরি সুস্থ আর তার সম্পূর্ণ ক্রেডিট মেহরাবের পাওনা। সবসময় খেয়াল রেখেছে আরফার। মানুষটার সাথে থাকতে থাকতে আরফাও কখন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতে পারেনি। তবে এবার আর আরফার ভয় নেই কারণ সে জানে এবার আর কোনো ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি সে। মেহরাব আছে খুব চাপের মধ্যে। হসপিটাল, অফিস, মেডিকেল কলেজ সব একসাথে সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে মেহেক থাকায় একটু রেহাই পেয়েছে। মেডিকেল কলেজের সবটা মেহেকের দ্বায়িত্বেই আছে মেহরাব শুধু মাঝে মাঝে সাহায্য করে। মেহরাব বিজনেসের দিকে বেশি সময় দিচ্ছে কারণ এই বিষয়টা তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। এতো বড় বিজনেস কাঁচা হাতে সামলানো সহজ কাজ নয়। আবার সব সামলে আরফার দেখাশোনাও নিজেই করে কোনো সার্ভেন্টের ওপর তার আস্থা নেই। যারা যারা হাসানের সাথে জড়িত ছিলো সবাইকে বের করে নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে সবাইকে। মেহরাব ভেবেছে আরফা সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে গেলো হসপিটালের দ্বায়িত্ব তাকে দিয়ে দিবে আর নিজে বিজনেসটা সামলাবে। মেহরাব সোফায় বসে কাজ করছিলো হঠাৎ তার খেয়াল হলো আরফা অনেক সময় আগে গেছে শাওয়ার নিতে এখনো বের হয়নি।

ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে গম্ভীর গলায় বললো, আরফা তুমি এতো সময় ওয়াশরুমে কী করছো ?

আরফা চেচিয়ে বললো, আপনার মাথায় কী সমস্যা দেখা দিয়েছে ? দেখলেন শাওয়ার নিতে আসলাম তাও জিজ্ঞেস করছেন কী করছি ?

মেহরাবের আদরে আরফা আবার সেই আগের রুপে চলে গেছে। প্রচুর পরিমাণ দুষ্টুমি করে আগের মতো।

মেহরাব রেগে বললো, আমি জানি তুমি শাওয়ার নিতে গেছো। কিন্তু তুমি এতো সময় শাওয়ার নিচ্ছো কোন সাহসে ? আজকে কেবল ব্যান্ডেজ পুরোপুরি খোলে দিছি আর তুমি ইচ্ছে মতো ভেজাচ্ছো ?

আরফা আবার চেচিয়ে বললো, আজ কতদিন পর শান্তিমত শাওয়ার নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ভালো করে শাওয়ার নিতে দিন, বিরক্ত করবেন না।

মেহরাব বললো, হ্যাঁ কেবল একটা থেকে সেরে উঠলে আবার জ্বর বাঁধিয়ে বসো।

আরফা বললো, কিছু হবে না।

মেহরাব দুগুণ রেগে বললো, তুমি এখনই বের হবে নাকি আমি দরজা ভেঙে ভেতরে আসবো। আর আমার যদি দরজা ভাঙতে হয় তোমার কী হাল করবো বুঝে নিও।

আরফা রেগে বললো, ধুর ভাল্লাগে না, সবসময় শুধু হুমকির ওপর রাখবে।

মেহরাব আগের মতোই বললো, তুমি বের হবে নাকি আমি,,,

আরফা তাড়াতাড়ি বললো, এই না না আমি তাড়াতাড়ি বের হচ্ছি।

মেহরাব দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো। আরফা দু’মিনিটের মধ্যে চেঞ্জ করে দরজা খোলে বের হতেই মেহরাব আরফা হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, এতো সময় শাওয়ার নেওয়ার অনুমতি কে দিয়েছে তোমাকে ? যদি আবার কোনো রোগ বাঁধাও।

আরফা কিছু বলছে না মেহরাবের রাগি ফেস দেখে ভড়কে গেছে। সামান্য কারণে এতো রাগার কী হলো বুঝতে পারছে না। মেহরাব এবার খেয়াল করলো আরফার দিকে। মাথায় সাদা টাওয়েলে চুল পেচিয়ে রেখেছে। তাড়াহুড়ো করায় অনেক চুল বাইরে রয়ে গেছে। কপালে চুল লেপটে আছে, সারামুখে গলায় বিন্দু বিন্দু পানি, গায়ের জামাটা অনেকটা ভেজা, ভেজা ঠোট দুটো মেহরাবের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে লোভনীয় মনে হচ্ছে। মেহরাব নিজের অজান্তে আরফার ঠোট দুটোর অনেক কাছে চলে গেলো। আরফাও তাকিয়ে আছে মেহরাবের দিকে।

হঠাৎ আরফা চেচিয়ে বলে উঠলো, আহ্ বুকে ব্যাথা করছে।

মেহরাব চমকে উঠলো আরফার কথা শুনে, হাত ছেড়ে দু-কাঁধে ধরে ব্যস্ত হয়ে বললো, ক,,,কোথায় ব্যাথা করছে ?

মেহরাবের ভীত মুখটা দেখে আরফা ফিক করে হেঁসে দিলো। মেহরাব কিছু বুঝতে না পেরে এখনো সেভাবে তাকিয়ে আছে দেখে আরফা এবার শব্দ করে হেঁসে দিলো। এবার মেহরাব বুঝতে পারলো আরফা মজা করেছে।

রেগে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, তুমি দিনদিন বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছো আরফা, এসব বিষয় নিয়ে মজা একদম পছন্দ নয় আমার।

আরফা এবার মুচকি হেঁসে বললো, কেনো পছন্দ না শুনি ?

মেহরাব ধীর গলায় বললো, ভয় পাই খুব আরফা, হারানোর ভয়।

আরফা দুষ্টুমি করে বললো, হারিয়ে গেলে আবার নতুন কাউকে খুঁজে নিবেন।

মেহরাব রেগে বললো, আরফা সবসময় মজা একদম ভালো লাগে না। তুমি আগে কত শান্ত ছিলে এখন দুষ্টুর শিরোমণি হচ্ছো দিনদিন।

আরফা মুখটা মলিন করে বললো, বিশ্বাস করুণ আমি আগে থেকেই প্রচন্ড দুষ্টু ছিলাম। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে আর বাবার আদরের দুলালি ছিলাম। তাই প্রচন্ড দুষ্টু ছিলাম কিন্তু একটা দমকা হাওয়া আমার সব চঞ্চলতা কেড়ে নিয়ে পাথর করে দিয়েছিলো। বাবার চলে যাওয়া আর পরিচিত মানুষের আড়ালের #অপরিচিত মুখ আমার পৃথিবী পাল্টে দিয়েছিলো।

মেহরাব আরফা জড়িয়ে ধরে বললো, অতীতকে বর্তমানে টেনে এনে বর্তমান নষ্ট করার মানে হয় না আরফা, ভুলে যাও অতীত।

আরফা মেহরাবের বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো, অতীতের কাছে আমি ঋণী। অতীত আমাকে ছেড়ে না গেলে এতো সুন্দর বর্তমান পেতাম না।

মেহরাব মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো, আমিও ঋণী আমার অতীতের কাছে। সে ছেড়ে না গেলে আমিও তোমায় পেতাম না।

হঠাৎ মেহরাব পেটে ব্যাথা পেয়ে আউচ করে উঠলো। আরফাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আরফার দিকে তাকিয়ে দেখে সে মুচকি মুচকি হাঁসছে।

মেহরাব ভ্রু কুঁচকে বললো, তুমি চিমনি কেটেছো ?

আরফা শয়তানী হাসি দিয়ে বললো, আগের আরফাকে যখন বাঁচিয়ে তুলেছেন তার জালাতন তো সয্য করতেই হবে মশাই।

মেহরাব আরফাকে ধরতে গেলেই আরফা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মেহরাব পেছন থেকে চেচিয়ে বললে, আস্তে যাও পরে গিয়ে আবার ব্যাথা পাবে।

কিন্তু কে শুনে কার কথা আরফা তো ততক্ষণে চলেই গেছে। মেহরাব বিড়বিড় করে বলে উঠলো, তোমার কী তুমি অসুস্থ হলে তোমার সেবা করার জন্য তো বান্দা হাজিরই আছে। এই আরফা আমার জিন্দেগী দফারফা করে দিলো।

আরফা দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে ভ্রু কঁচকে বললো, কী বললেন আপনি ?

আরফার কথায় মেহরাব চমকে পেছনে তাকালো আর চুরি করে ধরা পরে যাওয়ার মতো মুখ বানিয়ে বললো, ত,,তুমি যাওনি।

আরফা মুখ গুমরা করে বললো, মা আপনাকে ডেকে নিয়ে যেতে বললো নিচ থেকেই, লান্স রেডি হয়ে গেছে।

কথাটা বলেই আরফা গুমরা মুখে চলে যেতে নিলে মেহরাব হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আরফা তখনো মুখ গুমরা করে আছে।

মেহরাব আরফার মাথার টাওয়েল খোলে চুল মুছে দিতে দিতে বললো, কী হয়েছে ? রাগ করেছো ?

আরফা বললো, না আগের মতো শান্ত আরফা হয়ে যাবো সেটার ট্রাই করছি।

মেহরাব আরফার কপালে নিজের কপাল লাগিয়ে বললো, আমার এই আরফাই ভালো শান্ত আরফা লাগবে না। এখন চলো খাওয়ার পর তোমার মেডিসিন আছে, চলো খাবে।

আরফা আর কিছু বললো না৷ মেহরাব আরফাকে নিয়ে লান্স করতে গেলো। আজ শুক্রবার তাই সবাই বাসায় আছে।

খাওয়ার মাঝে মেহেক বললো, তোমরা আগামীকাল কক্সবাজার যাচ্ছো।

আরফা আর মেহরাব অবাক হয়ে তাকালো আর মেহরাব বললো, কেনো ?

মেহেক বললো, যাওয়া কথা আরো অনেক আগেই ছিলো কিন্তু এতোসব ঝামেলা হয়েছে যে আর হয়ে উঠেনি। এখন আরফাও সুস্থ হয়ে গেছে। ও আবার হসপিটালে জয়েন করার আগে একটু মাইন্ড ফ্রেশ করে আসো আর তোমার জন্যও এটা প্রয়োজন।

মেহরাব বললো, কিন্তু মম।

মেহেক মেহরাবকে থামিয়ে বললো, আরফা বা তুমি কেউই এখনো কক্সবাজার দেখোনি আর বেশি দূরেও নয় তাই এটাই সিলেক্ট করেছি আমি। ফ্লাইটের টিকিট, হোটেল বুক সব হয়ে গেছে। সকাল আটটার ফ্লাইট। যা শপিং লাগবে আজ করে নিও দুজনে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here