You_are_mine season_2 Poly_Anan part_21

0
1812

You_are_mine
season_2
Poly_Anan
part_21

“শেষ বারের মত বলছি ঈশা সত্যটা কি আমায় সোজাসাপটা বলো!(নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করে ঈশান)
” আপনি এত বেহায়া কেন?আমি বলেছি আমি বলবো না। আর কোন সত্যি নেই।সত্যি এটাই আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা।
ঈশান এবার তেড়ে এসে ঈশার গাল চেপে ধরে,
“তুই যে ভালো কথার মেয়ে না আমি যানি,তোর ঘাড়ে রগ একটা বাঁকা।ভেবেছিলাম ফিরে এসেছিস আমি ভালো হয়ে যাবো তোকে আঘাত দেবো না কিন্তু তোকে তো ফুল দিলে তোর সহ্য হয় না তোর জন্য ফুলের কাটাই শ্রেষ্ট।

ঈশান ঈশাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।ঈশা এবার ঘাবড়ে গেছে। যত যাই হোক ঈশানকে সে ভালো করেই যানে ঈশান বড্ড জেদি একবার রেগে গেলে ধূনিয়া উল্টে যাবে তবুও সে শান্ত হবে না।ঈশান তার চুল টেনে পাইচারি করতে থাকে সে যেন কি ভাবছে। অনু আর রাসেল একপাশে দাঁড়িয়ে আছে চুপ চাপ কারন তারাও আজ এর শেষ দেখতে চায়।তাই ঈশার সাপোর্টে কেউ তেমন কথা বলছেনা।

ঈশান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,
” আউট..,রুম থেকে বের হ,
রাসেল আর অনু বেক্কেলের মতো ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশান আবারো তেড়ে এসে বলে,
“আমি বের হতে বলেছি তোদের!(চিৎকার দিয়ে)

অনু ঈশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালে রাসেল তার হাট টেনে নিয়ে যায় তবুও অনু ঈশার দিকে অসহায় ফেস করে তাকিয়ে থাকে।ঈশা দ্রুত দৌড়ে অনুর কাছে ছুটে যেতে নিলেই ঈশান ঈশার হাত টেনে আটকে দেয়।
” অনেক, অনেক হয়েছে।দীর্ঘ অপেক্ষার পর তোমায় পেয়েছি ঈশু জান আমি তোমায় কি করে ছেড়ে দেবো?

ঈশান ঈশাকে টেনে খাটের কার্নিশের সাথে দুই হাত বেধেঁ দেয়।ঈশা নিজকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকতে। ঈশানের তীর্যক চাহনীর দিকে তাকিয়ে সে চুপ হয়ে যায় । অনু ঈশাকে বাচাতে এগিয়ে আসতে নিলে রাসেল তাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।ঈশান দ্রুত দরজা বন্ধ করে দেয়।ঈশার সামনে একটি চেয়ার টেনে বসে বলে,
“আমার দিকে তাকাও ঈশু..!
ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে.
” আমার দিকে তাকাতে বলেছি!
ঈশা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।
“আমার দিকে তাকাও (ধমক দিয়ে)

ঈশা ঈশানের ধমকে কেঁপে উঠে। ঈশা দ্রুত ঈশানের দিকে তাকায়। ঈশান এবার তার ঘাড় কাত করে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমার কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করছো ঈশু জান?

ঈশা ভালো করে ঈশানের দিকে পরখ করে।যে ছেলের স্পাইক করা চুলে ঈশা হাত বুলিয়ে দিতো সেই চুল দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন হয়ে গেছে ঈশান চুল কাটেনা।চুল গুলো ঈশানে ঘাড় ছুয়ে গেছে।কানের দিকটায় ছড়িয়ে গেছে।দুটো চোখ কোটরের ভেতর ডুকে গেছে। চোখের চারিপাশ টায় কালো হয়ে গেছে।গালের চাপা ভেঙ্গে গেছে।যে ঠোটে দিয়ে ঈশান ঈশার কপাল ছুয়ে দিতো রক্তের মতো লাল ঠোটঁ টা এখন কালো হয়ে গেছে কত হাজার সিগারেটের আগুনে এই ঠোঁট ঝলছে গেছে তার জানা নেই।

বাম হাতে ডান হাতে কিছুটা কাটার দাগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাকে দেখে বুঝাই যাই ছেলেটা ভেঙ্গে চুড়ে এই কয়েক বছর পুরো গুড়িয়ে গেছে।ঈশা তার দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।

“আমাকে দেখে কি তোমার একটু ও মায়া হয়না ঈশা(আকুল কন্ঠে)সত্যটা বলো আমায়(ঢোক গিলে)
” বললাম তো কোন সত্য নেই আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা।
ঈশান আর নিজেকে সামলাতে পারেনা।চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে সেই চেয়ারটা আবার জোরে তুলে আছাড় মারে সে। ঈশা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। রাসেল আর অনু দ্রুত এগিয়ে এসে ঈশাদের রুমের জানালা থেকে সবটা দেখতে পারে।জানালাটা ঘরের করিডোরের ভেতরেই পর্দার আড়ালে যে রাসেল অনু দাঁড়িয়ে আছে তা লক্ষ্য করেনি ঈশা এবং ঈশান।

“তোকে আঘাত করবো না!না তোকে আমি আঘাত করবো না…!এতদিন তোর জন্য নিজেকে আঘাত দিয়ে এসেছি আজ সেই আঘাতের শেষ আঘাতটা দেবো নিজেকে। আর আমার জন্য না তুই ঝামেলায় পড়বি না অন্য কেউ।
গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।

ঈশান আরেকটা চেয়ার নিয়ে, আর একটি লম্বা কাপড় নিয়ে সিলিংএর সাথে বাধতে শুরু করে।ঈশা বুঝতে পারে ঈশান কি করতে চাইছে। ঈশান গলায় ফাঁস দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।রাসেল এবার ঘাবড়ে যায় কারন ঈশানের কাছে এখন সুইসাইড কিচ্ছু না সে আরো অনেক বার এই কাজটা করেছে তাই তার কাছে এর সাহস অনেক।
” ভাই ভাই তুই এমন করিস না।দেখ ঈশা ফিরে এসেছে প্লিজ ভাই।
“যাকে আমি ভালোবাসি সে আমায় ভালোবাসেনা।যার জন্য নিজের মৃত্যু কামনা করি সে নিজে আজ আমায় মারতে সাহায্য করছে(জানালার দিকে তাকিয়ে)

ঈশান গলায় কাপড়টা বেধে নেয়।চেয়ার থেকে পড়ার আগ মূহুর্তে রাসেল বলে,
” ঈশা বোন তোমার পায়ে পড়ি আমার কলিজাটাকে এইভাবে শাস্তি দিয়োনা।দেখো দেখো সে কি করছে।এই বন্ধুর জন্য আমি আমার ভালোবাসা ত্যাগ করেছি আর এই বন্ধু কিনা আজ তোমার জন্য নিজের জীবন শেষ করছে সত্যটা বলে দাও।
অনু মুখে হাত দিয়ে কেদে যাচ্ছে। কি বিশ্রি একটা ঘটনার সাক্ষি হতে চলেছে সে।

ঈশা কেদেঁ যাচ্ছে।নোনা পানিতে দুচোখ ঝাপসা হয়ে উঠছে।কি বলবে সে কি করবে।ঈশানের সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ গলায় ফাস দেওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে বলে,
“আমায় সত্যিটা বলবে ঈশা।
ঈশা মাথা ঘুরিয়ে না বলে।ঈশান আবারো হাসে এবারের হাসিটা বেদনার। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমি তোমায় সত্যি ভালোবাসি। রাসেল.. অনুকে আপন করেনিস। গুড বায় এভরিথিং..!

ঈশান পায়ের নিচ থেকে চেয়ারটা সরিয়ে দেয় তখনি ঈশা চিৎকার দিয়ে উঠে।সে কখনো ভাবেনি ঈশান সত্যি এমন একটা বাযে কাজ করবে।
রাসেলের ধুনিয়া অন্ধকার লাগছে দ্রুত গাডদের ডেকে দরজা ভেঙ্গে ঈশানকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে ঈশানের জান যেন বেরিয়ে যাচ্ছিল।অল্পের জন্য রাসেল এসে বাচিয়ে দেয়।অনু রেগে ঈশার গালে একটি কষে চড় লাগায়।ঈশা স্তব্দ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঈশান কাশতে কাশতে ঈশাকে জাপটে ধরে তার গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।
অনু ঈশানের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেছে। যে মেয়ের কারনে সে একটু আগে মরতে বসেছে সেই মেয়ের গালে চড় দেওয়ায় ঈশান আবার তাকে জড়িয়ে ধরেছে। গালে হাত ছুয়ে দিচ্ছে।
হায় রে, ভালোবাসা! এতো বেহায়া কেন?

অনু পানির গ্লাস এনে ঈশানকে দেয় ঈশান সম্পূর্ণ গ্লাস শেষ করে অনুর হাতে গ্লাস ধরিয়ে দেয়।রাসেল ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সত্যটা তো জেনেই ছাড়বো!কিন্তু তা আসল কথা নয় আসল কথা মুক্তি তুমি পাবেনা ঈশা।তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তোমরা লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ।সো যত তাল বাহানা সাজাও তুমি বন্ধীনি।অনু ঈশাকে পানি দাও আফটার অল সে এখন আমাদের গত তিন বছরের উপন্যাস পড়ে শোনাবে।
ঈশা পানির গ্লাস এগিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ গ্লাস খালি করে দেয়।সে ঠক ঠক করে কাপছে।ঈশান ঈশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কার জন্য তোমার এত মায়া হলো ঈশা যার কারনে আমার ভালোবাসা এত মূল্যহীন হয়ে গেলো(তাছিল্যে সুরে)
‘”আপনার মায়ের কারনে(ডুকরে কেঁদে)
কথাটা ঈশানের কানে বজ্রের ধ্বন্নির মতো লাগলো।তার মায়ের কারনে?
“মানে কি বলছো ঈশা তুমি আমাকে খুলে বলো সবটা,

ঈশা ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,

“আপনার সাথে যখন আমার সম্পর্ক শুরু হয় তার ঠিক দুইমাস পরেই আপনার মায়ের সাথে আমার ফোনে যোগাযোগ হয়।আমার নাম্বার নাকি রাসেল ভাইয়ার কাছে পেয়েছে।আমার তার আপনার মায়ের মধ্যে বেশ ভালোই ভাব খাতির চলছি! তিনি আমাকে আগেই বারন করেন আপনার সাথে যেন এই বিষয়ে কিচ্ছু না বলি।প্রতিদিন একবার হলেও আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হতো।তিনি আমাকে বলতেন আপনি কি পছন্দ করে কি অপছন্দ করে ইত্যাদি ইত্যাদি..!আমাদের সম্পর্ক শুরু হয় একদম বন্ধুত্ব রূপে।আপনার মা ওই ইউএসে আলিশান বাড়িতে থাকা সত্তেও নিজেকে খুব একা বোধ করে। প্রকৃত বন্ধু বা তার পাশে কেউ নেই যার সাথে সময় কাটাবে বা কথা বলবে আমাকে শুধু প্রতিদিন বলতো ‘ মা তোর পড়া কবে শেষ হবে কবে তুই এই বাড়িতে আসবি।তখন আমার কাছে আর একা লাগবে না’। আমার নিজেকে তখন খুব ভাগ্যবান মনে হতো কারন এত বন্ধুত্বপূর্ণ শাশুড়ী সবার কপালে হয় না আর এত কেয়ারিং হাজবেন্ড ও তেমন না..!কিন্তু আমি দুটোই একসাথে পেয়েছি।নিজেকে কেমন যেন লাকী গার্ল মনে হতো সবসময়।কিন্তু আফসোস নিজেকে নিজের এখন অভিশাপ লাগে।

” তারপর (ঈশান)

“আপনি যখন বাড়িতে বিয়ের প্রপোজাল পাঠাতে বলেন বাড়িতে তখনি উলটে পালটে যায় সবকিছু।আপনার বাবার সাথে আমার বাবার ছিল পূর্ব শত্রুতা।সেই শত্রুতার জেড়ে প্রতিশোধ টা তিনি এতো বছরপর নিলেন!
” কি শত্রুতা ঈশা তুমি এত ভেঙ্গে কথা বলছো কেন যা বলার সোজাসাপটা বলতে থাকো।(ঈশান)

আমার মা আর আপনার মা ছিল খুব কাছের বন্ধু। যেমনটা আমি আর অনু।আমার মায়ের সাথে সম্পর্ক শুরু হয় আমার বাবার।বিষয়টা কেউ যানতো না শুধু মাত্র আপনার মা ছাড়া।এদিকে আমার বাবার বংশধর তেমন একটা উচ্চমানের ছিল না, কিন্তু আমার আম্মুর বংশ ছিল উচ্চমানের সব শিক্ষিত চাকরিজীবি।সেইসব দিক থেকে আব্বু আম্মুর মিল হওয়াটা ছিল বেশ ক্রিটিকাল। কিন্তু তখনি তাদের জীবনে অভিশাপ রুপে আসে আপনার বাবা আবিদ..!তিনি আমার মায়ের কাছে নিজের ভালোলাগা প্রকাশ করে কিন্তু আম্মু তা বারন করেন কারন আম্মুর জীবনে তখন আব্বু ছিল। আপনার বাবার বংশের প্রতিটি মানুষ ছিল উচ্চমানের বেশ বড়লোক । আম্মু তাকে রিজেক্ট করলে তিনি সরাসরি নানাভাইয়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ১ সাপ্তাহের ভিতরে অবশ্য বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়।আব্বু তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে। কি করবেন, কোথায় যাবেন।তখন আব্বু আপনার বাবার পায়ে ধরে আমার আম্মুকে চায়। তিনি যেন বিয়েটা ভেঙ্গে দেন। কিন্তু আপনার বাবার ইগোর কারনে তাদের সম্পর্কের ফাটল ধরতে শুরু করে।নানাভাই কিছুতেই আব্বু সাথে বিয়ে দিবেন না।

তখন তারা কি করবে একদিকে না পারছে পরিবার ছাড়তে একদিকে না পারছে ভালোবাসার মানুষটাকে ছাড়তে।বিয়ের দিন ভোর বেলায় আপনার মা(সুলতানা) আম্মুকে সাহস দেন পালিয়ে যেতে।আর আম্মু ভরসা পেয়ে সত্যি সত্যি বাবার হাত ধরে অচেনা রাস্তায় পা বাড়ায়।
কিন্তু সবার যাতাকলে পিষে মরে আপনার মা।সেদিন ভরা বিয়ে বাড়ির আসরে বউ পালিয়েছে কথাটা চারিদিকে রটিয়ে যায়।বর বিয়ে করতে এসে খালি হাতে যাবে তাও হয়না।তখনি আমার বড় মামা বলেন,আম্মুকে পালাতে সাহায্য করে আপনার মা..!ব্যস শুরু সবাই তাকে তেড়ে মারতে আসে।ঠিক তখনি দাবার গুটি অন্যদিকে চাল দেয় আপনার ফুফু লিপি..!আপনার ফুফু আর আপনার বাবার বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলে ৩ বছর।একমেয়ে হিসেবে লিপির কথা তখন সবাই মান্য করতো।

লিপির কথা অনুযায়ী আবিদের সাথে বিয়ে হয় সুলতানার।তারপর থেকেই তার উপর শুরু হয় শারীরিক, মানসিক অত্যাচার।দিনের পর দিন নিজের মৃত্যু কামনা করে গেছেন সুলতানা।এইসবেই ক্ষান্ত হননি লিপি। একদিন মিথ্যা অভিযোগে পরিবারের সবাই মিলে সুলতানার গায়ে হাত তুলে এবং অবশেষে উতপ্ত গরম পানি গায়ে ছুড়ে মারে। সুলতানা তার বন্ধবিকে পালানোর সাহায্য করার সেই সময় পাড়ায় তার বদনামি রটিয়ে যায়।অবশেষে বিয়ের কিছুদিন পর সুলতানাকে তার বাবা মা ত্যায্য করে।তাই বেচারির কোথাও যাওয়ার যায়গা ছিল না।দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করে থেকে যায় সেই বাড়িতে। একদিন ভোরের দিকে ঈশানের দাদার লাশ পাওয়া যায়।তিনি শুয়ে আছেন অথচ মুখ দিয়ে ফেনা ভেসে যাচ্ছে।সবাই সেদিন সুলতানার দিকেই অভিযোগ তুলে। আবারো চারিদিকে রটিয়ে যায় সুলতানা তার শশুরকে খাওয়ারের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলেছে।এবার শুরু হয় পুলিশের অত্যাচার কোন প্রমান না পাওয়া শর্তে ও পুলিশ সুলতানাকে নিয়ে যায়।দিনের পর দিন অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু যোগ্য প্রমান ছাড়া পুলিশের কিছু করার ছিল না। ঈশানের বাবা পরবর্তীতে তাকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনে।

জীবনে দুটো মানুষের ভালো করতে গিয়ে নিজের জীবনটা মোমের আলোর মতো আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যায়।ঈশানের দাদার মৃত্যুর পর সুলতানা, আবিদ আর লিপি ঢাকায় আসে।একদিন অপ্রত্যাশিত ভাবেই সুতলানার সাথে ঈশার মা মাহমুদার দেখা হয়।যানা যায় মাহমুদা বেশ সুখেই আছে।কিন্তু তখনো সুলতানার এই নির্মম ভাগ্য সর্ম্পকে মাহমুদা কিছু জানতো না।এর কয়েকবছর পর ঈশান হয় সে অবশ্য বড় হতে শুরু করে।ইতিমধ্যে আবিদ, মাহমুদা আর মুজাহিদের খোঁজ পেয়ে যায়।এর পর শুরু হয় আবিদের আড়ালে দাঁড়িয়ে প্রতিশোধ নেওয়া। একের পর এক চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য কোম্পানিকে মোটা অংকে টাকা ঢালতেন আবির।

সুলতানা আর মাহমুদার আবারো দেখা হয়। আড়ালে তারা তাদের সম্পর্ক ঠিক রাখে।বিষয়টা যেনে যায় আবিদ তিনি সুক্ষ্ণ কৌশল করে
তারপর ব্যবসার নানান বাহানা দিয়ে আবিদ তার স্ত্রী সন্ত্বানকে নিয়ে ইউএসে চলে যায়।দেশে থেকে যায় লিপি আর তার স্বামি। ইউএসে প্রায় তিন বছর কিছুটা শান্তিতে জীবন কাটায় সুলতানা। কারন তখন লিপি তাদের জীবনে ছিল না।কিন্তু সুলতানার ভাগ্যে সুখ বেশিদিন সয় না।আবারো ফিরে এলো ইউএসে লিপি শুরু হয়ে গেলো আবারো অত্যাচার।আর সেই অত্যাচার এখন পর্যন্ত চলে আসছে।

ঈশা এবার কিছুটা দম নেয়।তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।অনু ঈশার পাশেই চুপ করে বসে আছে।রাসেলের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে।আর ঈশানের বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, মাথায় আসছে একের পর এক প্রশ্ন।
“ঈশা সব তো বুঝলাম,কিন্তু বিয়ের প্রপোজাল পাঠানোর পর ঈশানের বাবা আবার কি শুরু করেছিলেন?(রাসেল)

ঈশা ঢোক গিলে আবারো বলতে শুরু করে।
” সেদিন মাহমুদার ফোনে একটি অপরিচিত কল আসে।মাহমুদা রিসিভ করেও বুঝতে পারেনা কন্ঠটা কার।
“হ্যালো,
” কেমন আছো মাহমুদা(আবিদ)
” ভালো কিন্তু আপনি কে?
“চিনতে পারছো না?অবশ্য চেনার কথা না।আমি আবিদ!
নামটা শুনেই মাহমুদার অন্তর আত্না কেঁপে উঠে।
” আ….য়া…প.. নি(ঢোক গিলে)
“হ্যা আমি। কেন এই ফোন পাওয়ার জন্যতো তোমার প্রস্তুত থাকার কথা।
“কি বলছেন আপনি এইসব।
” কেন আমার ছেলের পেছনে তোর মেয়েকে লাগিয়ে দিয়ে শান্তি হয়নি বুঝি।অবশ্য মায়ের যেমন চরিত্রের দোষ আছে মেয়েরও তাই! না হলে ঘুরে ফিরে আমার বড়লোক ছেলের দিকে হাত বাড়ায় কি করে।
“মুখ সামলে কথা বলুন!কি বলছেন আপনি কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ তুলছেন।

” তোর মেয়েকে গিয়ে প্রশ্ন কর ঈশান শাহরিয়ার নামের কাউকে ভালোবাসে কি না?আর সেই ছেলেটি আমার।আমার সোজা হিসাব আমি আমার ছেলের বউ হিসেবে তোর মেয়েকে দেখতে পারবো না।তোর সাথে আমার একটা চুক্তি হবে, তুই তোর মেয়ের অন্যত্র বিয়ে দিবি না হলে তোর স্বামীকে রাস্তায় নামিয়ে ছাড়বো যেমনটা নামিয়ে ছিলাম অতিতে।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি তোর মেয়েকে বল আমার ছেলের জীবন থেকে সরে আসতে।আরেকটা কথা শুধু সরে আসলেই হবে না।আমার দেওয়া পাত্র পক্ষের কাছেই তোর মেয়ের বিয়ে হবে আজ থেকে ঠিক তিনদিন পর।আমার শর্ত না মেনে উপায় নেই,কারন তুই নিজেই যানিস আমি কেমন বিষাক্ত।তোর স্বামীকে আমি বাচঁতে দেবো না। যদি তোর মেয়ে আমার ছেলের জীবন থেকে না যায়।

মাহমুদা সেদিন স্তব্দ হয়ে সবটা শুনছিলেন! কি বলবেন তিনি কি বলার আছে আর।চোখের পানি মুছে দ্রুত ঈশার রুমে পা বাড়ায়।ঈশা মোবাইলে কার সাথে যেনো হেসে কথা বলছে।মাহমুদাকে দেখেই এগিয়ে আসে।
“মা কি হয়েছে তোমায় এমন লাগছে কেন?
“তুই কি ঈশান শাহরিয়ার নামে কাউকে ভালোবাসিস
ঈশা হুট করেই ঘাবড়ে যায়।
” হ..হ্যা মা।
ঈশার কথা শেষ হতে দেরি হলো কিন্তু তার গালে চড়টা পড়তে দেরি হলো না।
ঈশা স্তব্দ হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন দীর্ঘ এই জীবনে এই প্রথম তার মা তার গায়ে হাত তুলেছেন।
“তুই যদি রাস্তার কোন ছেলেকে ভালোবাসতি আমি হাসি মুখে বিয়ের ব্যবস্থা করতাম।আমিও তোর বাবাকে ভালোবাসি তাই ভালোবাসার মর্ম বুঝি। কিন্তু তুই ভালোবাসলি একটা কাঙালের সন্ত্বানকে।যে আমাদের সংসার বার বার ধ্বংস করতে চেয়েছে।আর ধ্বংস করেছে আমার বন্ধবিটার জীবন। শুন তোকে আমি আমার কসম দিলাম।এই বিষয়ে তোর বাবা কিছু যানবেনা যা যানার তুই আর আমি।ছেলে পক্ষর ব্যবস্থা করছি আমি তুই শুধু তৈরি থাকবি। যদি আমার কথা হেরফের হয় তাহলে আমাকে কবর দেওয়ার জন্য তৈরি থাকিস।

ঈশা সেদিন প্রচুর পরিমানে ভয় পায়। কারন তার মায়ের এমন রুপ আগে কখনো দেখেনি সে।ঈশা দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে কাদঁছে।ঈশান কে সে কিছুতেই ভুলতে পারবেনা কারন ঈশান তার অস্তিত্বতে মিশে গেছে। কিছুক্ষন পরেই ঈশাকে কল করে সুলতানা।আর সুলতানা ঈশাকে বলে যেন ঈশানের জীবন থেকে সরে যায়। না হলে আবিদ তাদের পরিবার ধ্বংস করে দেবে।লিপির মেয়ের জন্য আগে থেকেই ঈশানকে ঠিক করা হয়েছে ঈশান এবার ইউএসে গেলে তাদের বিয়েটাও দিয়ে দেওয়া হবে।গতকাল রাতেও সুলতানার ঘায়ে হাত তুলেছে আবির শুধু মাত্র একটাই কথা ছেলেকে দেশে পাঠাতে কেন রাজি করিয়েছিল তাকে।সুলতানা ঠিক ততক্ষন মারে যতক্ষন না সে অচেতন না হয়।

সেদিন সুলতানার একদিকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার আকুতি সারাজীবন মহিলাটি কষ্ট পেয়ে এসেছে শেষ মূহুর্তে বুঝি ঈশার কারনে কষ্ট পাবে। অন্যদিকে তার মায়ের সংসার..!সব মিলিয়ে ঈশার নিজের জীবনের ভালোবাসা ত্যাগ করা ছাড়া উপায় ছিল না।
এদিকে মাহমুদা দ্রুত আবিদের ব্যবস্থা করা পাত্রের সঙ্গেই ঈশার বিয়ের সিধান্ত নেয়।মাহমুদার তাড়াহুড়ো দেখে অবাক না হয়ে পারেন না মুজাহিদ।তিনি বার বার ঈশাকে বলেছে তার কোন ভালোবাসার মানুষ আছে কি না কিন্তু ঈশা তা হাসিমুখে না করেছে।

সেদিন রাতে সিধান্ত নেয় ঈশানের সাথে শেষ দেখা করবে ঈশা। তাই ছাদে ডেকে দুজনের সেই অস্বাভাবিক আলাপ টা হয়।
তারপর ঈশানের বাবা মিথ্যা অসুস্থতার নাটক করে ঈশানকে ইউএসে নিয়ে যায়।এইসব কিছুর শুরু থেকে শেষটা সবাই যানলেও যানতো না,মুজাহিদ অনু, রাসেল, ঈশান।

তাই সেদিন বিয়ের দিন রাতেই ঈশানকে ঈশার বিয়ের খবরটা যানিয়ে দেয় অনু। ঈশান ও ছুটে এসে ঈশাকে নিয়ে যায়।আবারো ঈশানের মাঝে হারিয়ে ঈশা অতীত ভুলে যায় সে শুধু ঈশানের মাঝেই মত্ত হয়।

ঈশা সম্পূর্ণ কথা শেষ করে ঈশানের দিকে তাকায় রাগে ঈশানের চেহারা লাল হয়ে গেছে।দাতে দাত চেপে বসে আছে।
“এই তিন বছরের দূরত্বের কারনটা কি আবার নতুন করে কি নাটকের সৃষ্টি করে আমার বাবা(দাতে দাত চেপে ঈশান)
ঈশা ফিচেল হেসে বলে,
“কারন………
#চলবে…….

?৩ বছরের কারনটা জানার বাকি আছে।তার জন্য অপেক্ষা করুন।
?পর্বটা কেমন হয়েছে যানাবেন।
?হ্যাপি রিডিং……!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here