?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 05
সন্ধিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমার তো ভাবতেই কি রকম লাগছে তুই কি না এভাবে,,এখনো এখনো তুই এরকম করে যাবি,কতো বার আর কতোবার বলবো নীলিমা ফিরবে না,নীলিমা এখন অন্য কারো,কি চাস তুই নীলিমা ওর হাসবেন্ড কে ডিভোর্স দিয়ে তোর কাছে ফিরে আসুক,না পরকীয়ার মতো হারাম কাজ করুক কোনটা??
উজানঃ নীলিমা ফিরে____আসবে,নীলি তো আমাকে ভালোবাসে অনেক___অনেক ভালোবাসে,তো–রা বু-ঝবি না,তোরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করে____আমাকে বিয়ে দিয়েছিস তোদের জন্য আমি___আমি নীলিমা কে হারিয়ে ছি(ড্রিংক করা কন্ঠে)
কথা গুলো বলতে বলতেই উজান ফ্লোরে ঢলে পড়ে আর সোফায় কাছের টেবিলটার মাথাটা লেগে কপালের সাইডে চোট পায় হালকা তবুও সেদিকে আজ তার কোনো ব্যাথা নেই,সব ব্যাথা যে আজ তার মনে,সে ফ্লোরে বসেই আপন মনে একা একা আরো কি সব বলতে থাকে
সন্ধিঃ কে কে এনে দিয়েছে ওকে বোতল,আমি জানতে চাই কে এনে দিয়েছে,অভিক তুই এনে দিয়েছিস নাকি তুমি তুষার,উওর দেও
তুষারঃ আমি তো তোমার সাথেই ছিলাম সন্ধি আমি কি করে জানবো ওকে কে এসব বোতল জোগাড় করে দিয়েছে
সন্ধিঃ সাব্বির এদিক শোন,আয় এদিকে(ঝারি দিয়ে)তুই এনে দিয়েছিস তো,কি হলো চুপ করে আছিস কেনো কথা বল
সাব্বিরঃ হ্যা মানে ভাই বললো তাই
সন্ধিঃ(সপাটে সাব্বির কে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে) ভাইয়ের খুব চামচা এসে গেছিস না,ভাই যা বললো তাই করতে হবে,এ-র পর এরপর আর কখনো যদি তোকে দেখছি উজানের ফারফর্মাস খাটা তো তোকে আমি খুন করে ফেলবো
সাব্বিরঃ আর হবে না এরকম ভুল
সন্ধিঃ রাসেল কোথায়,হিয়াকে আনতে এতোক্ষণ লাগছে কেনো ওর
তুষারঃ(সন্ধি কে জড়িয়ে ধরে) শান্ত হও সন্ধি তুমি এরকম করে অস্থির হলে উজানকে কে সামলাবে,উজান তো একটু হলেও তোমার কথা শুনে,তুমি এরকম মাথা গরম করে রাগারাগি করলে চলবে,বলো আমাকে
তুষারের শান্তনায় সন্ধি এবার না চাইতেও তুষারকে জাপ্টে ধরে জোরে করে কেঁদে ফেলে
সন্ধিঃ আমি আর পারছি না তুষার,উজানকে এরকম করে কষ্ট পেতে দেখে আমার আর কিছু ভালো লাগছে না,আর কতো,কি ভুল ছিলো ওর,নীলি কেনো করলো এটা ওর সাথে,ও মরে গেলেই ভালো হতো সেদিন কেনো বেঁচে ফিরলো কেনো কেনো কেনো
অভিকঃ আহ সন্ধি কি সব বলছিস?
সন্ধিঃ আমার মাথার ঠিক নেই অভিক,তোরা আমার উজানকে আবার আগের মতো করে দে নাআআআআ
তুষারঃ চুপ করো না পাখি আমার,হিয়া আছে তো
সন্ধিঃ হিয়া আর কি করবে তুষার,ও তো নিজেই একটা ছোট মেয়ে,
তুষারঃ আমার বিশ্বাস হিয়া পারবে,তুমি খেয়াল করো নি হিয়া আসার পর থেকে উজান একটু হলেও নিজেকে ডাইভার্ট করতে পেরেছে এসব থেকে
সন্ধিঃ তারপরো তুষার,,আচ্ছা তুষার আমরা কোনো অন্যায় করছি না তো হিয়ার সাথে!!!!
সন্ধির কথার মাঝে কলিং বেজের আওয়াজ বেজে উঠে,অভিক গিয়ে দরজা খুলতেই রাসেল হিয়াকে নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে,আর হিয়ার উপর চোখ পড়তেই উজান আরো রেগে ক্ষেপে যায়,তেড়ে এসে ভেজা চোখ আর ভেজা গলায় হিয়ার এক হাত খামচে ধরে
উজানঃ হে ইউ,তুমি এখানে__কি করছো,,আমার নীলিমার জিনিস নষ্ট করে তোমার শান্তি হয়নি না এখনো
হিয়াঃ লাগছে আমার হাতে,কি করছেন
সন্ধিঃ কি করছিস উজান ছাড় হিয়াকে,ওর লাগছে
উজানঃ (হিয়াকে এক ঝাটকায় সন্ধির গায়ে ফেলে দিয়ে) ওকে বলে দিবি ও যেনো চলে যায় আমার জীবন থেকে,আমার এই জীবনে নীলিমা ছাড়া কারো কোনো জায়গা নেই,আমি শুধু নীলিমা কে ভালোবাসি শুধু নীলিমা কে
কথাটা বলেই উজান দুলতে দুলতে সন্ধির ব্যালকুনিতে গিয়ে বসে পড়ে আঝরে কাঁদতে থাকে,,এদিকে ড্রয়িংরুমে সবাই নিশ্চুপ,কি বলবে হিয়াকে ওরা কেনোই বা ডাকলো ওরা হিয়াকে,অপমান সহ্য করার জন্য
সন্ধিঃ আমাকে ক্ষমা করে দিও হিয়া,উজান এভাবে তোমাকে
হিয়াঃ প্লিজ আপু আপনি এরকম করে হাত জোর করবেন না,আর আপনি এরকম করে কাঁদছেন কেনো,সব ঠিক হয়ে যাবে আমার উপর ভরসা রাখুন
তুষারঃ একটু উজান কে দেখো হিয়া,কি করতে পারবে জানি না শুধু জানি ওকে বাঁচাতে হবে যেভাবেই হোক
হিয়াঃ সন্ধি আপু
সন্ধিঃ হ্যা আপুনি বলো
হিয়াঃ আপনি বাড়িতে একবার ওনার মা কে ফোন দিয়ে বলবেন আমরা আজ আপনার বাড়িতে থাকবো আসলে বাড়িতে পিসি রা আছে,সবাই ওনাকে এরকম ড্রিংক করা অবস্থায় দেখলে ব্যাপারটা খুবই খারাপ দেখাবে তাই আমি চাইছি উনি আজ রাত টা এখানে যদি থাকে
সন্ধিঃ এটা তোমাকে এতো সংকোচে বলতে হচ্ছে কেনো হিয়া,আমার বাড়িতে তোমরা থাকবা তার জন্য পারমিশন নিতে হবে না কখনো বুঝছো
হিয়া হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে উজানের পিছুপিছু ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড় হয়,উজান তখনো ব্যালকুনির ফ্লোরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলো,হিয়া গিয়ে আলতো করে উজানের পাশে বসে,উজান এবার আর হিয়াকে কিছু বলে না শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে অঝোরে চোখ দিয়ে জল বের করতে থাকে,উজানের প্রত্যেকটা জলের ফোটা, প্রত্যেকটা কান্নার গোঙানির শব্দ পাশে থাকা হিয়াকে দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দেয়,হিয়া শুধু উজানের দিকে এক মনে তাকিয়ে নীলিমার প্রতি উজানের ভালোবাসার গভীরতা মাপতে থাকে,সময় পেড়ুতে থাকে,সন্ধি একবার এসে উজান হিয়াকে দেখে আবার চলে যায়,অভিক, সাব্বির আর রাসেল কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে,সন্ধির ঘুম আসে না পাশের রুমে তুষারকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে সে সোফায় বসে অফিসের ফাইল রেডি করতে থাকে,ভাগ্যক্রমে সন্ধি আর উজান একি অফিসে কাজ করে,আর কাল উজানের পেজেন্টেশন আছে কথা টা জেনেই সন্ধি উজানের হয়ে সব তৈরি করতে থাকে
রাত তিনটের কাছাকাছি
উজান কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে হিয়ার কোলে ঢলে পড়ে,হিয়াও আলতো করে উজানের মাথা টা ওর কোলে রেখে আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে উজানের চুলে বিলি কাটতে থাকে,ঘুমের মধ্যেও উজানের মুখে মাঝে মাঝে ভেসে আসে নীলিমা নামক কঠিন শব্দ টা
সন্ধিঃ হিয়া
হিয়াঃ আপু আপনি,ঘুমোননি এখনো
সন্ধি এগিয়ে হিয়া উজান দুজনের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে হিয়ার পাশে বসে পড়ে,কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকে
সন্ধিঃ ভালোবাসার মানুষকে হারানোর গভীরতা কতো টা মারাত্মক হতে পারে সেটা উজান কে না দেখলে কেউ কখনো অনুভব করতে পারবে না____১ বার না নীলিমা চলে যাবার পর ৫/৬বারের বেশি উজান সুইসাইড করতে গিয়েছিলো কখনো হাত কেটে কখনো ঔষধ খেয়ে কখনো বা স্যভলন গিলে,শেষ বার তো পুরো একটা সপ্তাহ ও আই সি ইউ তে নিজের সেন্স হারিয়ে(সন্ধি আর কিছু বলবার আগেই আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে) আমরা তো সেদিন সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম উজান হয়তো আর কখনো বেঁচে ফিরবে না
হিয়াঃ তারপর….!!
সন্ধিঃ অনেক কষ্টে ওকে সুস্থ করে বাড়িতে আনলাম,কিন্তু এর পরো যে লাভ বেশি একটা হয়নি,,,,,সারাদিন নিজেকে রুমের মধ্যে বন্দি করে রাখতো উজান,একটা পর্যায় খাবার দাবারো ঠিক মতো খেতো না ওমনি প্লেটে পরে থাকতো সব,এভাবে চার মাস পার হয়,আন্টি ব্যাপারটা কিছু তে আর সহ্য করতে পারে না,আন্টির শরীর খারাপ হতে শুরু করে পেশার ফল করতে থাকে রোজ রোজ,দু দুবার আন্টি কে হসপিটালে এডমিট করা হয়,শেষমেষ উজান বাধ্য হয় রুম থেকে বেড়িয়ে হসপিটালে যেতে,অনেক কষ্টে আন্টির পেশার টা আগের অবস্থায় আনা হয় সেদিন,সেন্স ফিরে আন্টি উজান কে দিব্যি দেয় এবার যদি উজান নীলিমাকে ভুলে বিয়ে করে নতুন করে জীবনটা শুরু না করে তাহলে আন্টি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে আর কখনো ফিরবে না,,,,,,তারপর তো তুমি দেখছোই
সন্ধি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখে আসা জল গুলো মুছে উঠে যায় নিজের ঘরে,হিয়ার চোখ ভর্তি জল তখন,কি বলে গেলো সন্ধি এগুলো,তার কোলে মাথা রাখা মানুষ টা কি করে এতো টা সহ্য করেছে,কি করে
হিয়াঃ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আর একবার, আমি জানতাম না আপনি আপুকে এতো টা ভালোবাসেন(উজানের পুরো মুখে হাত বুলিয়ে)কোনোদিন কি আমি আপনার এতো ভালোবাসা থেকে একটু ভালোবাসা পাবার যোগ্য হতে পারবো!!❤️
________________
সকালের তপ্ত রোদ এসে পড়ে উজানের মুখে,চোখ টা হালকা কুঁচকে শরীর টা বাকিয়ে উঠতে গিয়েই উজান নিজেকে হিয়ার কোলে আবিস্কার করে,আলতো করে উঠে হিয়ার পাশে বসতেই মনে পড়ে কালকে রাতে করা হিয়ার সাথে বাজে ব্যবহার,তারপর ড্রিংক করে সন্ধির বাড়ি অবধি আসা পর্যন্তই মনে করতে পারে সে,এরপর হিয়া কিভাবে এখানে আসলো আর তারপরই বা কি ঘটলো কিছুই স্মৃতিতে নেই তার,শুধু বুঝে কালকে রাতে হিয়ার কোলে মাথা রেখেই সে অঘোরে ঘুমিয়ে ছিলো,হিয়াকে আলতো করে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় উজান,হিয়ার মাথার বালিশ টা ঠিক করে দিয়ে নিজের অজান্তেই হাত বুলিয়ে দেয় হিয়ার মাথায়
উজানঃ ক্ষমা করে দিও আমায়,কালকে ওরকম করে তোমার সাথে ব্যবহার করা টা উচিৎ হয়নি আমার,নীলিমার দেওয়া জিনিস টা ওভাবে অযত্নে পড়ে ছিলো বলেই রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারি নি,I am Sorry
_______________
রাত দশটা
বাসবিঃ এসেছিস অফিস থেকে,এতো দেড়ি হলো যে আজ(উজানের হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে)
উজানঃ মিটিং ছিলো বাট ক্লাইন্ড রা আসতে লেট করে,তার উপর পেজেন্টেশন রেডি ছিলো না, ভাগ্যিস সন্ধি কাল আমার অর্ধেক ফাইল টা রেডি করে রেখেছিলো(জুতো খুলতে খুলতে)
বাসবিঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার বাড়ছি আমি,আজ দুজনে একসাথে খাবো কেমন
উজানঃ হুম
রুমে এসেই উজান খেয়াল করে ওর রুম টা কি রকম নিস্তব্ধ হয়ে আছে,হিয়া কোথায়,উজান অস্ফুটে হিয়াকে দু বার আস্তে করে ডাকে,কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ আসে না,উজান ভাবে হিয়া হয়তো জিনিয়ার ঘরে,উজান ওর টাই টা খুলে যেই বিছানায় থুতে যাবে ওমনি চোখ যায় নতুন কভারে মোড়ানো গিটার টার উপর,উজান বিছানায় বসে আলতো হাতে কভার টা খুলে গিটার টা বের করে,আর বের করতেই দেখে গিটারের তার গুলো সব ঠিক হয়ে আছে আগের মতো,আর গিটার টা একদম খুব যত্ন করে পরিষ্কার করে রাখা,গিটারের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে উজান,অনেক পুরানো স্মৃতি এসে ভীড় করে তার ক্লান্ত মস্তিস্কে,নীলিমা চলে যাবার পর একটা দিন ও উজান ভুলে গিটার টা হাতে নেয়নি,আজ অনেকদিন পর গিটার টা কোলে নিয়ে টুং করে বাজাতেই দৌড়ে রুমে চলে আসে নিলয়,আর গিটারের তার গুলো একদম ঠিক আছে দেখে নিলয় পুরো অবাক
নিলয়ঃ ?এটা বাজছে
উজানঃ (থেমে গিয়ে একটা হালকা করে হাসি টেনে)কেনো মামা,না বাজার কি আছে
নিলয়ঃ কাল যে আমি তার গুলো সব ছিড়ে ফেললাম এগুলো ঠিক হলো কি করে(কথাটা মুখ ফস্কেই বেড়িয়ে যায় নিলয়ের)
উজানঃ তুই ছিড়েছিস মানে
নিলয়ঃ হ্যা ঔ কাল মানে কাল মামি যখন স্নানে ছিলো তখন আমি এসে এটা বাজাতে গিয়েই টুক টুক করে এই বড় বড় তার গুলো সব ছিড়ে যায়
কথাটা বলেই নিলয় দৌড়ে পালায় ভয়ে,যদি উজান আবার ওকে বকা দেয়
উজানঃ শীট__শীট শীট শীট আমি কি করে এতো কেয়ারলেসের মতো একটা কাজ করলাম,কিছু না শুনে বাচ্চা মেয়ে টাকে এভাবে আমি
উজান নিজের মাথার সব চুল খামচে ধরে কি করলো ও কাল এটা হিয়ার সাথে,উজান কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্নানের জন্য উঠতে যাবে ওমনি খেয়াল করে গিটারের কভারের পাশে একটা খামে ভরা চিঠির উপর,উজান চিঠি টা খুলে পড়তেই নিজের উপর নিজে রেগে উঠে,আর ভাবতে থাকে কবে থেকে ওর ব্যবহার এতো রুড হয়ে গেলো
হিয়াঃ কারো ভালোবাসার মানুষকে তার জীবন থেকে ভুলিয়ে নিজে সেই জায়গা দখল করবো এরকম মেয়ে আমি না____গিটারের আগের কভার টা পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো তাই নতুন একটা কভারে ভরিয়ে দিয়েছি,সব ঠিক আছে কি না দেখে নিবেন একবার,,,,হিয়া❤️
_____________________________
বাসবিঃ কি রে এখনো স্নানে যাসনি,খাবি কখন
উজানঃ মা হিয়া কোথায়
বাসবিঃ হিয়া__আরে কি ভুলো মন আমার,তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি হিয়া ওর বাড়িতে গেছে,বিকালে ওর মামু আসছিলো তখন ও বায়না করলো ও নাকি বাড়ি যাবে,এমনিতেও বিয়েও পর তো ও আর গ্রামে যাই নি তাই আমিও আর মানা করলাম না,,,,ঘুরে আসুক কিছুদিন, এমনিতেও দেখলাম মনটা কি রকম মন মড়া হয়ে আছে আজ
উজানঃ কবে ফিরবে হিয়া?
বাসবিঃ গেলোই তো আজকে কবে ফিরবে তা কি আমি শুনতে চাইছি____কি ব্যাপার হ্যা একটা দিনও বুঝি নিজের বউকে ছাড়া থাকতে পারছিস না এখন?
উজানঃ মা প্লিজ
বাসবিঃ আচ্ছা আর মজা করবো না,এখন যা তো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় খেয়ে আবার আমাকে আমার ঔষধ খেতে হবে
উজান কিছু না বলে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়,তারপর বাসবির কাছে এসে কোনো রকম দু লোকমা খেয়েই উঠে আসে,শরীর ক্লান্ত থাকায় উজান সোজা গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে শুইয়ে পড়ে আর তার অজান্তেই বারবার চোখ যায় সোফার কাছে,আসলে এই দেড় মাসে এটা উজানের একটা অভ্যাস হয়ে উঠেছে সে ঘুমে থাকুক বা জাগনা সুযোগ পেলেই হিয়াকে এক বার চোখ বুলিয়ে নেয় সে কারণ তার মনে সবসময়ই একটা ভয় কাজ করে হিয়া যে চঞ্চল ঘুমের মধ্যেও না আবার দুম করে পড়ে যায় হিয়া
__________________________
আজ তিন দিন হয়ে আসে হিয়া আজো ফিরে নাই,কবে ফিরবে তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই,এই তিনদিন কাজের চাপে উজান হিয়াকে খুব বেশি একটা মিস না করলেও আজ সন্ধ্যার পর থেকেই ওর চোখ দুটো কি রকম হিয়াকে খুঁজতে শুরু করে,বিছানার এক কোণে বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে উজান,ঘরময় নিস্তব্ধতা,আর এই নিস্তব্ধতায় উজানের কিছু পুরোনো অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে থেকে থেকে,এমন কিছু শূন্যতা বিরাজ করছে ওর চারপাশে যেটা নীলিমা কে হারাবার সময় উজানের মনে আছড়ে পড়েছিলো
উজান ওর ফোন টা বের করে হিয়াকে একটা ফোন করবে বলে,হিয়ার নাম্বার টা স্ক্রীনে এনেও কি মনে করে হাত টা সরিয়ে নেয়,সেদিনের ঘটনার পর হিয়াকে ইমিডিয়েট তখনি তার একটা সরি জানানো উচিৎ ছিলো আজ তিন দিন পর তার সরি জানানো টা কি উচিৎ হবে, হিয়াই বা কি ভাববে যে নিজের ভুল টা রিলাইজেশন করতে ওর এতো সময় লাগলো,
তবুও সব সংকোচ ভুলে উজান হিয়ার নাম্বারে ডায়াল করে কিন্তু এক বার কল হয়েই ফোন টা কেটে যায়,উজান আর দ্বিতীয়বার কল করে না,কি মনে করে ফোন টা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে অভিককে নিয়ে সন্ধির বাড়িতে চলে যায়,রাত ১২টায় উজান ফিরে আর সন্ধির বাড়ি থেকে রাতের ডিনার করে ফিরে আসায় বাড়িতে আর কিছু খায় না,ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে লাইট টাইট ওফ করে বিছানায় গিয়ে উবুড় হয়ে শুইয়ে পড়তেই ফোনে আসা মেসেজের টোনে ভ্রূকুঁচকে উঠে তার,হাত বাড়িয়ে ফোন টা কাছে আনে,চোখ খুলে ফোন টা হাতে নিতেই দেখে সিম কোম্পানির মেসেজ আর তাতেই মেজাজ টা খানিকটা বিগড়ে যায় মুহুর্তে,ফোন টা নিয়ে একটু চেক করতেই উজান খেয়াল করে ওর ফোনে ছয় ছয় টা মিসড কল হয়ে আছে যার মধ্যে চারটা অফিসের বসের,একটা জিনিয়ার আর একটা হিয়ার
হিয়ার মিসড কল দেখেই উঠে বসে উজান,বালিশে হেলান দিয়ে ফোন হাতে সর্বপ্রথম কল করে তার বসকে,বসের সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় রাত তখন একটার কাছাকাছি,ফোন কেটে দিয়ে উজান ভাবে হিয়াকে কি এতো রাতে ফোন টা ব্যাক করা ওর ঠিক হবে,কি মনে করে না করে তার উপর ঘুমিয়েছে কি না কে জানে,কিছুক্ষন চুপ থেকেই উজান ডায়াল করে হিয়ার নাম্বারে,এবার আর শুধু রিং হয় না এবার হিয়া ফোন টা রিসিভ করে
হিয়াঃ হ্যালো
উজানঃ কবে আসবা❤️( অধিকারের কন্ঠে)
ফোন রিসিভ করে অপর পাশ থেকে এরকম গম্ভীর কণ্ঠে কবে আসবা কথা টা শোনার জন্য হিয়া মোটেও প্রস্তুত ছিলো না,চোখ মুখ পাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে হিয়া তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে কথা শুরু করে
হিয়াঃ জানি না,আর তাছাড়া ওখানে গিয়েই বা কি করবো,জিনিয়াও তো নেই
উজানঃ কলেজ শুরু হচ্ছে সামনের মাস থেকে সে খেয়াল আছে
হিয়াঃ সে তো আরো সপ্তাহ দু এক এর মতো দেড়ি আছে তার আগে হয়তো এসে যাবো(হালকা কাশি দিয়ে)
উজানঃ কি হইছে,গলা এরকম শোনাচ্ছে কেনো
হিয়াঃ না কিছু না হালকা ঠান্ডা লেগেছে তাই হয়তো
উজানঃ ঠান্ডা লাগলো আবার কি করে
হিয়াঃ না ঔ তখন মাছ ধরতে নিপা অবন্তী এদের নিয়ে পুকুরে নেমেছিলাম তখন ঔ একটু ভিজে গিয়ে শরীর টা কি রকম শীত শীত করছে
উজানঃ এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি,বাজারে কি মাছ পাওয়া যায় না যে তোমাকে পুকুরে নেমে মাছ ধরতে হচ্ছে
হিয়াঃ আরে কি মুশকিল মাছ কেনো পাওয়া যাবে না,মাছ তো গ্রামে অঢেল আছে কিন্তু জাল দিয়ে মাছ তোলার মজা টা কতো আপনি জানেন,জাল কেনো শুধু বর্শি দিয়ে মাছ ধরে দেখবেন কখনো,বর্শিতে যখন মাছ আটকে না কি যে আনন্দ লাগে
উজানঃ আস্তে
হিয়াঃ হুমমম
উজানঃ বাই দা ওয়ে তুমি এতো রাত অবধি জেগে আছো কেনো কটা বাজে খেয়াল আছে
হিয়াঃ সময় দেখা হয়নি
উজানঃ সে আর তোমার দেখা হয় কখন,শুয়ে পড়ো আমি রাখছি
হিয়াঃ ঠিক আছে
কথা টা শুনেই উজান ফোন টা কেটে দিতে যাবে কিন্তু কি মনে করে আবার ফোন টা কানে ধরে
উজানঃ হিয়া
হিয়াঃ বলুন
উজানঃ I am Sorry সেদিন গিটারের জন্য আমার তোমার উপর ওভাবে রিয়াক্ট করাটা উচিৎ হয় নি
হিয়াঃ আপনি সরি কেনো বলছেন আপনার জায়গায় যে কেউ থাকলেই রেগে যেতো
উজানঃ তবুও আমি বেশি ই হয়তো একটু
হিয়াঃ বাদ দিন,আমি পুরনো জিনিস নিয়ে ঘাটতে পছন্দ করি না
উজানঃ ঠিক আছে
হিয়াঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) আমি কখনো আপনার জীবন থেকে নীলিমা আপুকে ভুলিয়ে দেবো না বরং আপনি ভুলে গেলে আমি নিজ দায়িত্বে আপনাকে আপুর কথা মনে করিয়ে দেবো,শুধু
উজানঃ শুধু
হিয়াঃ শুধু যদি কখনো মনে হয় নীলিমার ভাগের ভালোবাসা থেকে হিয়াকে একটু ভাগ দেওয়া যায় তা দিয়েই ভরিয়ে দিবেন আমায়,আমি আপনার ওতো টুকু ভালোবাসা নিয়েই বেশ থাকতে পারবো❤️
কথা টা বলেই হিয়া ফোন টা কেটে দেয়,আলতো পায়ে জানালায় কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশে ওঠা বড় চাঁদ টার মেলে দেওয়া আলো দেখতে শুরু করে,উজানো হাতে থাকা ফোন টা বিছানায় রেখে ব্যালকুনিতে গিয়ে দু হাত টাওজারের ভেতর ঢুকিয়ে আকাশ পানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে হিয়ার বলা শেষ কথা গুলো ভাবতে থাকে
________________
দুদিন পর
মামিঃ এক বালতি কাপড় ধুতে সারাদিন পার করলে স্বামীর বাড়ি গিয়ে স্বামীর সেবা করবি কি করে,,,,আচ্ছা হিয়া সত্যি করে একটা কথা বল তো তোকে তোর স্বামী ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় নি তো,,,,যার জন্য এ-তো দিনেও জামাই তোকে নিতে আসে না,না ফোন দিয়ে কোনো খোঁজ নেয়,,,,শোন হিয়া বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিস তো গিয়েছিস আবার এসে এই বাড়িতে নিজের দখল নেবার চেষ্টা করবি না,এমনিতেও ছোট থেকে তোর পিছনে সব টা খরচ করে আমাদেরই আঁটেনি ঠিক মতো, তারপর যদি এখন এসব কান্ড হয়,আমি কিন্তু তোকে ঘরে তুলবো না কথাটা মাথায় রাখবি এমনিতেও তোর বিয়ে দিতে যা জমা ছিলো সবটাই তো তোর
মামি আর কিছু বলতে পারে না,কথা বলতে বলতেই চোখ যায় হিয়ার পেছনে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা উজানের উপর
মামিঃ জামাইবাবা তুমি(একটা ঢোক গিলে)
মামির কথায় হিয়া পেছন ফিরে তাকাতেই উজান কে দেখে থমকে যায়,উজান এ বাড়িতে ওকে নিতে আসতে পারে এটা ছিলো হিয়ার কল্পনারো অতীত
মামিঃএসো না ভেতরে এসো দাঁড়িয়ে আছো কেনো,,,,হিয়া দাঁড়িয়ে আছিস যে উজান কে বসতে দে,কখন এলে বাবা তুমি তোমার আঙ্কেল তো কিছু জানালোও না আমাকে,বসো তুমি বসো আমি তোমার জন্য জল খাবারের ব্যবস্থা করছি,চিএা এই চিএা কোথায় তুই,চিএা
বলতে বলতেই মামি রুম থেকে বেড়িয়ে যায় দৌড়ে
উজানঃ এই মামির জন্য ফুলসজ্জার রাতে নিজের হাসবেন্ড এর সাথে কড়া গলায় কথা বলছিলা তুমি??
হিয়াঃ না আসলে আমি সেদিন
হিয়া আর কিছু বলতে পারে না উজানের চোখের দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নেয়,উজানের চোখ তখন রাগে জলজল করছে,হিয়ার হাতে কাপড়ের বালতি তার উপর পুরো জামার নিচ ভিজে আছে,চোখে মুখে ক্লান্তি আর দূর্বলতার ছাপ স্পষ্ট,তাই দেখে উজানের রাগ এখন বজ্রপাতের ন্যায় প্রখর,হিয়া চুপ করে বিছানা থেকে তোয়ালে টা তুলে নেয় স্নানের জন্য
হিয়াঃ আপনি একটু বসুন আমি স্নান টা সেড়ে এক্ষুনি বেড়িয়ে আসছি(কাঁপা কন্ঠে)