The Colourful Fragrance Of Love ?Part: 02

0
1209

?#The_Colourful_Fragrance_Of_Love?
Part: 02

রাতে ডাইনিং এ পাশাপাশি বসে আছে হিয়া উজান,তাদের পাশে গোল হয়ে বাকি সবাই বসে যে যার মতো খাচ্ছে,বাসবি এসে হিয়ার পাতে ভাত তুলে দিয়ে মুরগী তুলে দেয়,আর উজানের জন্য নিয়ে আসে একটা খুবই পাতলা দেখে রুটি আর এক গাদা সবজি,আর তা দেখেই হিয়ার চোখ এখন চড়কগাছে

হিয়াঃ এতো পাতলা রুটি খেয়ে উনি সারারাত কাটাবেন,তাও আবার একটা,মামিই তো আমাকে এর চাইতে মোটা রুটি টা খেতে দিতো,এনার তো দেখছি সব কিছুই কিরকম অদ্ভুত,নীলিমা আপু এনাকে বিয়ে না করে ভালোই করেছে,আবভাব যে রকম বেরসিক তেমনি খাবার দাবারো রঙচটা হুহ?

নিজ মনে কথা গুলো বলতে বলতেই হিয়া হুট করে ভীষম খেয়ে বসে,আর হিয়াকে মাথা চাপড়ে খুক খুক করে কাশতে দেখে উজান নিজে থেকে জগ থেকে জল ঢেলে হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়

উজানঃ আস্তে খাও,কেউ তোমার জন্য কোথাও অপেক্ষা করে নেই যে,যার জন্য এরকম তাড়াহুড়ো করে বাচ্চাদের মতো সবটা খেতে হবে,ইডিয়ট

হিয়াঃ হুম

বাসবিঃ আহা এতে এতো বকার কি আছে,ভালো ভাবে বললেও তো পারিস কথা গুলো___(হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে)নে মা এবার ধীরে সুস্থে সব টা খেয়ে শেষ করতো দেখি,আমি আছি তোর পাশে বসে

হিয়াঃ ঠিক আছে

বাসবিঃ হিয়া

হিয়াঃ জ্বী আন্টি

বাসবিঃ কাল তুই উজানের সাথে একবার মার্কেটে গিয়ে ঘুরে আসবি,বিয়েটা এমন ভাবে হয়েছে না আমরা তোকে ঠিক মতো কিছু দিতে পেরেছি না তোর মামু আমাদের থেকে কিছু নিবে বলেছে,কিন্তু তুই তো তোর জামা কাপড়ের ব্যাগই নাকি ফেলে এসেছিস শুনলাম জিনি বললো তখন,,,,,ওসব তো লাগবে নাকি কিছু হলেও,তাই কাল উজান এখন তোকে নিয়ে একবার ঘুরে যা যা লাগবে তোর,সব কিনে নিয়ে আসবে কেমন

বাসবি আর কিছু বলার আগে উজান উঠে দাঁড়ায়,উজানের ঔ একটা রুটি গেলা এই মিনিট এক এই শেষ

উজানঃ আমার সময় নেই মা কাল অফিসে আমি অনেক ব্যস্ত থাকবো,আমি পারবো না

কথা টা বলেই উজান ওর রুমে চলে যায়,বাসবি কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া বাসবির হাত ধরে বাসবি কে থামিয়ে দেয়

হিয়াঃ ওনাকে আপনি জোর করবেন না আন্টি,জোর করে কোনো সম্পর্ক তৈরি হোক আমি চাই না,আমি বলেছি কাল চিএা এসে আমার জামাকাপড় দিয়ে যাবে আমাকে,আপনি ওসব নিয়ে একদম ভাববেন না
______________________
রাত বারোটার কাছাকাছি
উজান বিছানায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো,কাল পেজেন্টেশন আছে আর অফিসের হেড হওয়াতে এখন সব দায়িত্ব তার উপর,,,,হিয়া এতোক্ষণ জিনিয়ার সাথে ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো কিন্তু উজানের সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সে নিজের কাজ করা নিয়ে ব্যস্ত,,,,জিনি চলে গেলে হিয়া রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে উজানের পাশ থেকে একটা বালিশ টেনে হাতে নিয়ে পাশে থাকা সোফা টায় রাখবে বলে এগুতে ধরে আর তখনি উজান হিয়াকে থামিয়ে দেয়

উজানঃ তুমি বিছানায় ঘুমোও,আমি সোফাতে গিয়ে শুচ্ছি

হিয়াঃ আপনি?,,,,সোফাতে গিয়ে ঘুমোবেন,,,কোনোদিন ঘুমিয়ে ছিলেন সোফাতে

উজানঃ সো হোয়াট,এটা কি এমন হাতিঘোড়া কাজ যে আমি পারবো না

হিয়াঃ নিজের হাইট সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে আপনার,কি করে ভাবলেন এতোটুকু সোফাতে আপনি এটে যাবেন

উজানঃ (সোফার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে)তাতে কি আই উইল ম্যানেজ

হিয়া আর কিছু না বলে মুখে হালকা করে হাসি টেনে সোফায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে উল্টোদিকে ফিরে শুইয়ে পড়ে

হিয়াঃ এটা আপনার অফিসের ফাইল না যে ম্যানেজ বললাম আর ম্যানেজ করে ফেললাম,এটা রাতের ঘুম,সারাদিন অফিসে কাজ করবার জন্য যেটা আপনার খুব দরকার,আর তাছাড়া গ্রামে আমার বিছানা টা এই সোফারি সমান দৈর্ঘ্য প্রস্থ সব দিক দিয়ে,তাই আমার কোনো অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না

কথা গুলো বলেই হিয়া ওর গায়ে জড়ানো ওড়না টা আর একটু টেনে টুনে ঠিক করে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
_____________________

রাত তিনটে আচমকাই হিয়ার ঘুম টা ভেঙে যায় আজ,আসলে হিয়ার ঘুম খুবই পাতলা আশেপাশে অল্পকিছুর হালকা শব্দেও ঘুম থেকে উঠে পড়ে সে,রুমের মধ্যে অন্ধকার,নীল রঙের ডিম লাইট টা জ্বললেও আলোর তেজ কম,ব্যালকুনির দরজা ভেদ করে এক সরু বাহিরের আলো এসে পড়ছে ঘরের এক কোণে,হিয়া উঠে পাশে থাকা পানির গ্লাস টা থেকে পানি খাবে বলে কিন্তু গ্লাস টা হাতে ধরতেই হিয়ার কানে আসে কারো কান্নার শব্দ,শব্দ শুনেই বোঝা যাচ্ছে খুব সর্তকভাবে কাঁদছে কেউ,এপাশ ওপাশ তাকাতে থাকে হিয়া,এতো আবছার মধ্যেও বিছানার দিকে তাকাতেই হিয়া খেয়াল করে উজান বিছানায় নেই,হিয়া কিছু বলে ডাকতে যাবে ওমনি খেয়াল করে কান্নার শব্দ টা ব্যালকুনি থেকে আসছে,হিয়া দ্রুত পায়ে কিন্তু সাবধানে ব্যালকুনির গেটের কাছে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থমকে যায়,উজান কাঁদছে খুব কাঁদছে অনেক অনেক অনেক সর্তকভাবে কাঁদছে

হিয়ার মন টা মুহুর্তে কি রকম টুকরো হয়ে আসে,সময় পেড়ুতে থাকে উজানের কান্না থামে না,উজান সেই এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে তো কাঁদছেই

হিয়াঃ উনি এ-র কম করে কাঁদছে কেনো,নীলিমা আপুর জন্য,,ওনার এই চোখের জলের জন্য আমি দায়ী নয় তো,আমি কি ওনাকে বিয়ে করে ওনার কষ্ট টা আরো বাড়িয়ে তুলেছি,,নিজেকে এতো অপরাধী মনে হচ্ছে কেনো আমার,,আমিও তো বিয়ে টা করতে চাই নি,,পরিস্থিতির চাপে পড়ে,,,,,,,একটা মানুষ কি করে একটা মেয়েকে এতো টা ভালোবাসতে পারে!!নীলিমা আপু কেনো ওনাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো উনি তো আপুকে খুব ভালোবাসেন তাহলে

আপন মনে কথা গুলো ভাবতে থাকে হিয়া,উজান এবার ওর কান্না থামিয়ে আলতো করে চোখ মুছে যেই রুমে ঢুকবে বলে পেছনে ফিরবে ওমনি দুম করে ধাক্কা লাগে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার সাথে,আর উজানের হাতের কনুই গিয়ে লাগে হিয়ার কপালের মাঝ বরাবর চোখের সামনে

হিয়াঃ আউচচ(কপালে হাত ধরে)

উজানঃ হোয়াট দা,কি করছো এখানে দাঁড়িয়ে তুমি,এখনো ঘুমোওনি কেনো

হিয়াঃ আপনি কাঁদছিলেন?

উজানঃ তাতে তোমার কি

হিয়াঃ কার জন্য কাঁদছিলেন,আপুর জন্য

উজানঃ দ্যাটস নান ওফ ইউর বিজনেস,দাড়িয়ে না থেকে যাও শুতে(ঝারি দিয়ে)

হিয়াঃ যাচ্ছি যাচ্ছি,এরকম চেঁচানোর কি আছে হু
_____________________
ছাঁদের এক কোণে দাঁড়িয়ে কাপড় মেলছিলো হিয়া,কাপড় মেল ছিলো বললে ভুল হবে,তার সব কাপড় মেলে দেওয়া শেষ এখন সে ফাঁকা বালতি হাতে ধরে দাঁড়িয়ে বিশাল আকাশ দেখায় ব্যস্ত

আবীরঃ হিয়া

হিয়াঃ কে,,ও আবীর দা,,কেমন আছেন

আবীরঃ ভালো তুমি

হিয়াঃ ভালো

আবীরঃ কি ফাঁকা বালতি হাতে,কাপড় নেড়ে দিলে বুঝি

হিয়াঃ হুম

আবীরঃ কেনো কান্তাদী কি আজো কাজে আসে নি নাকি

হিয়াঃ না না এসেছে,বিয়ের পর যা ছুটি নিলো,আজ না এলে না মা ওনাকে বাদই দিয়ে দিতো,,,,আসলে মাঝেমধ্যে নিজের টুকিটাকি কাজ গুলো নিজে করে নেওয়া ভালো কি বলেন

আবীরঃ তা ঠিক,অবশ্য তোমার হাসবেন্ড ও ঠিক এই ন্যাচারের ছোট থেকে দেখতাম নিজের কাজ গুলো নিজ হাতে করতেই বেশি লাইক করতো

হিয়াঃ হুম,,আপনি এমন করে বলছেন যেনো আপনি ওনাকে খুব ভালো করে চিনেন

আবীরঃ সে তো চিনিই,,,,ওসব না হয় অন্য এক দিন গল্প করবো,তা কিসে পড়ছো মার কাছে শুনলাম তুমি উজানের অনেক ছোট

হিয়াঃ আট বছরের ডিফারেন্সকে কেউ ছোটই বা বলে কি করে বলুন

হিয়ার কথায় আবীর হেঁসে দেয়,হিয়াকে দেখতে যতোটা ছোট লাগে হিয়ার কথা বার্তা মাঝেমধ্যে বড়দের কেও হার মানিয়ে দেয়,আবীর হিয়ার কথার মাঝে ছাঁদে আসে উজান আর আবীর কে হিয়ার পাশে ওভাবে গল্প করতে দেখে প্রচন্ড রেগে উঠে,হিয়া আবীরের থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে আসে,ছাঁদের গেটে যে উজান দাঁড়িয়ে এতে হিয়ার কোন মাথা ব্যাথা নেই

উজানঃ হিয়ার সাথে কি এতো কথা তোর,হিয়া আমার ওয়াইফ কথা টা ভুলে যাস না

আবীরঃ তুই নিজে মানিস তো হিয়া তোর ওয়াইফ

আবীর একটা সিগারেট ধরিয়ে রেলিং এর ধারে বড় সিড়ি টায় বসে উজানের দিকে সিগারেট টা বাড়িয়ে দেয়

আবীরঃ খাবি

উজানঃ দেখ আবীর,হিয়া এখনো অনেক ছোট ওর ভালো মন্দ বোঝার বুঝ এখনো হয় নি,সো প্লিজ হিয়ার থেকে দশ হাত দূরে থাকবি নয় তো আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না

আবীরঃ তোর কথা আমি শুনতে বাধ্য নাকি,হিয়াকে আমার মনে ধরেছে,পছন্দ করি আমি হিয়াকে কি করবি তুই

উজানঃ আবীর(গম্ভীর গলায়)

আবীরঃ হিয়াকে এখন অবধি স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারিস নি না পারছিস ওদিকে নীলিমা কে ভুলতে,তাহলে আমি হিয়ার দিকে হাত বাড়ালে তোর সমস্যা টা কোথায়,নাকি দু নৌকোতে পা দিয়ে চলতে চাইছিস ঘরে হিয়া বাহিরে নীলিমা….!!!!

উজানঃ (সপাটে আবীরের কলার ধরে) আমাকে কি তোর নিজের মতো মনে করিস নাকি,হিয়াকে আমি ওয়াইফ হিসাবে স্বীকৃতি দেই বা না দেই তোকে যেন আমি হিয়ার আশেপাশে না দেখি ইটস মাই লাস্ট ওয়ার্নিং

আবীরের কলার ধরে আবীরকে হালকা ছুঁড়ে ফেলে উজান নিচে নেমে আসে,হিয়া তখন সবে স্নান করে এসে ওর চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছছিলো,উজান এসে না হিয়াকে কিছু বলতে পারছে না চুপ করে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছে

উজানঃ আবীরকে চেনো তুমি

হিয়াঃ আমাকে বলছেন (আনমনে)

উজানঃ এ ঘরে নিশ্চয় তুমি ছাড়া অন্য কেউ এ মুহুর্তে উপস্থিত নেই

হিয়াঃ হ্যা চিনি,চিনি বললে ভুল হবে আপনাদের এখানে এসেই পরিচিত,(কপালে টিপ পড়তে পড়তে)আপনাদের পাশের ফ্লাটেই তো থাকে,সেদিন মা নিয়ে গেলো ওনাদের বাড়িতে তখন আলাপ,আর তাছাড়া

উজানঃ তাছাড়া

হিয়াঃ সেদিন মার্কেটেও মা আর আমার সাথে উনি আর ওনার মাও গিয়েছিলেন ওখানেই ওনাদের সাথে সময় কাটানো এই যা

উজানঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে আয়নাতে হিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে) আবীরের থেকে একটু দূরে থাকবা,যেতো টা পারা যায় কম কথা বলবা ঠিক আছে

হিয়াঃ ঠি-ক আ-ছে (বোকার মতো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here