#Senior_life_partner
পর্ব——9
Afrin Ayoni
নিশুয়া হা করে তাকিয়ে আছে ইসুয়ার দিকে।ইসুয়া সেই কখন থেকে ঠোঁট মুছে যাচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিশুয়া বসে আছে ইসুয়ার খাটের উপর।
নিশুয়া — তুই sure তোকে কেউ কিস করেছে?
ইসুয়া রেগে আগুন হয়ে ছোট বোনের দিকে তাকায়। তারপর বলে উঠলো,”আমি কি তোরে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বললাম?”
নিশুয়া — রাগিস কেন আপু?হতে পারে তুই অন্ধকার লাইব্রেরি তে ঠিকমতো ব্যপার টা বুঝতে পারিস নি।
ইসুয়া– তুই এখান থেকে যা?আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই কে এতবড় লুচ্ছা মার্কা কাজ টা করলো তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আর তুই আছোস তোর প্যাচাল নিয়ে।
নিশুয়া — দেখ মাথা ঠান্ডা কর।এভাবে রাগ করলে ঠোঁটের ভার্জিনিটি ফিরে আসবে না। আর এত হাইপার হওয়ার কি আছে?মনের ভার্জিনিটিই আসল ….
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, “তুই পিচ্চি মেয়ে ভার্জিনিটির কি বুঝিস বেয়াদব।”
নিশুয়া — আচ্ছা ঐসব বাদ দাও।বল তো যদি কেউ কিস করেও থাকে,তাহলে অন্ধকারে কেন করবে??
ইসুয়া– তুই এমন ভাবে বলছিস যেন আমার সাথে প্ল্যান করে আমাকে অন্ধকারে কিস করেছে?
নিশুয়া — আচ্ছা!তোমাকে আর কিছু করেনি তো।
এবার ইসুয়ার চোখ দুটো টকটকে লাল আকার ধারণ করে,,”আর কিছু বলতে কি mean করলি?”
নিশুয়া ভয় পেয়ে মিইয়ে গেল। নিশুয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “না আমি বলতে চাইলাম তোকে কিস করার পর আর কোন ঘটনাই ঘটেনি?”
ইসুয়া শান্ত করতে নিজেকে দুমিনিট সময় দিল।তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো,,”আমাকে বলেছে পাল্টা রিভেঞ্জ!”
কথাটা শোনার পর নিশুয়ার মাথায় বাজ পড়লো।সে এবার কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া ই বলে উঠলো,”আচ্ছা তোমাকে ভার্সিটির টিচার বানিয়েছে কোন বেক্কল?”
ইসুয়া– কেন?এটার সাথে ঐটার রিলেশন কী?
নিশুয়া — কারণ,তোমার মাথার গিলুতে পচন ধরেছে।
ইসুয়া– মানে??
নিশুয়া — কারণ চোর নিজেই তোমাকে তার বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার সব দিয়ে গেল।আর তুমি কিনা বলদের মত তারে খোঁজে যাচ্ছো??
ইসুয়া– দেখ , তুই যদি মনে করিস কাজটা প্রথম দিন আমার করা কিসের জন্য রবিন ই আবার এমন করেছে তাহলে সে বিষয়টা আমার মাথায় ও এসেছে।
নিশুয়া — তাহলে??
ইসুয়া– আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই যে ওকে আমরা সন্দেহ করতে পারি।তাছাড়া একটা স্টুডেন্ট হয়ে ওর কি এত সাহস হবে??
নিশুয়া — আমি যদি আমাদের স্কুলের রাক্ষস টিচার কে ভরা ক্লাসে সবার সামনে চোখ মারতে পারি,আবার তা স্বীকার ও করতে পারি,তার ফলস্বরূপ শাস্তি ও পেতে পারি।তাহলে একটা ছেলে হয়ে অন্ধকার লাইব্রেরিতে সুন্দরী ম্যামের সাথে ঐটুকু করা কোনো ব্যাপারই না।
ইসুয়া চোখ বড় বড় করে, “ঐটুকু মানে?আর তুই স্কুলে গিয়ে এসব করিস?আজই মাকে বলবো আমি।”
নিশুয়া মুখ বেঁকিয়ে, “বল।তবে জীবনে আর কখনো আমার কাছে কোনো হেল্প চাইতে আসলে খবর আছে।”
ইসুয়া ভ্রু কিঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে। নিশুয়া কথাটা বলতে বলতে ইসুয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
———————————————
সিনথিয়ার চিৎকারে বাড়ির সকলে তার রুমে ছুটে আসে। দেলোয়ার খান তার মেয়ের রুমে এসে লাইট অন করে,,,
সুরাইয়া খান — এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?
সিনথিয়া — পাপা,,আমার হাত।আমার হাত জ্বলে যাচ্ছে।
বাড়ির সকলে সিনথিয়ার হাতের দিকে তাকায়। আফজাল সাহেব এগিয়ে এসে,”ইস ! এতটা পুড়লো কি করে?”
দেলোয়ার খান– মামণি কিভাবে হল??
সিনথিয়া — আমি তো ঘুমেই ছিলাম,তারপর হঠাৎ হাতটা জ্বলে ওঠে। অন্ধকারে কিছুই দেখিনি।
রবিন এগিয়ে এসে সিনথিয়ার পাশে বসে,”ইসরে!কতটা পুড়ে গেছে। খুব জ্বলছে মনে হয়। তাই না রে?”
সিনথিয়ার ন্যাকামি আরো বেড়ে গেল রবিন কে দেখে।
সিনথিয়া — ভীষণ জ্বালা করছে রবিন। একটু দেখো না।
রবিন সুরাইয়া খানের দিকে তাকিয়ে বললো, “ফুপি ফার্স্ট এইড বক্সটা এনে দাও তো।”
আকাশ এগিয়ে এসে, “খুব ব্যথা করছে বোন?”
সিনথিয়া রবিনের কাঁধে মাথা দিয়ে,”ভীষণ।”
রবিনের খুব বিরক্ত লাগছে সিনথিয়ার আচরণে।কিন্তু সবার সামনে কিছু বলতে ও পারছে না। দেলোয়ার খান মেয়ের কান্ড দেখে মনে মনে বলে,”good job মামণি।”
আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেন।আর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।রবিন সিনথিয়ার হাতে মলম লাগিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে।
খুব মাথা ধরেছে। একটু ঘুমালে ভালো হত।
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
পরদিন সকালে ভার্সিটির গেটে পা রেখেছে কেবল ইসুয়া। তখনি গেটের বামপাশে বটগাছের দিক থেকে গিটারের সুর ভেসে আসে,,
কথা হবে দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসাআসি আর হবে না,,,,
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালোবাসা বাসি আর হবেনা।।
শতরাত জাগা হবে
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবেনা
হুট করে ফিরে এসে,লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙ্গে যাবে,,জানো না??
……… আমার এই বাজে স্বভাব কোন দিন যাবে না
আমার এই বাজে স্বভাব কোন দিন যাবে না……….
ইসুয়া থেমে গেল।গানটা ইসুয়া কে ইঙ্গিত করেই গাইছে, বেশ বুঝতে পারছে ইসুয়া। রেগে গাল দুটো লাল হয়ে আসে ইসুয়ার। রবিনের দিকে এগিয়ে যায় সে।ইসুয়া কে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে রবিন গিটার বাজানো অফ করে একটা রোমান্টিক হাসি দিল।ইসুয়া সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। রবিন ই প্রথমে কথা বললো….
রবিন– Good morning ম্যাম।
ইসুয়া– রাখ তোর good morning… কালকে লাইব্রেরি তে এটা কেমন অসভ্যতা ছিলো??
রবিন কপাল চুলকে কিছু না বোঝার ভান করে বললো,”কোনটা?”
ইসুয়া আর কন্ট্রোল করতে পারে না নিজেকে,,, রবিনের
কলার চেপে ধরে, “খালি অন্ধকার লাইব্রেরি পেয়ে আমার ঠোঁটে কিস করাটা কোন ধরনের লুচ্ছাগিরি?”
রবিন ভাবতে পারেনি শুভ আর নয়নের সামনে ইসুয়া লজ্জাহীন ভাবে কথাটা বলে ফেলবে।শুভ আর নয়ন তো হা করে ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাদের মুখের ঐ হা দিয়ে একশো টা হাতি রোস্ট করে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে নির্দ্বিধায়।
ইসুয়ার রাগী রাগী মুখ দেখে রবিন তার দুদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে শুভ আর নয়ন কে চলে যেতে ইশারা করলো,,,
রবিন—এইভাবে বন্ধু আর বন্ধুর হবু বউয়ের ঝগড়াঝাঁটি না দেখে বিয়েতে কি গিফট করবি চিন্তা ভাবনা কর।যা এখান থেকে …….(কথাটা বলার সাথে সাথে শুভ আর নয়ন চলে গেল)
ইসুয়া– কিসের বন্ধুর বউ??
রবিন– ঐটা ছাড়ুন ম্যাডাম। এভাবে বন্ধুদের সামনে আমাদের hidden kiss এর কথা বলতে লজ্জা লাগলো না?এখন আমি ওদের মুখ দেখাবো কি করে??
ইসুয়া রবিনের কলার ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”তার মানে ঐ কাজ টা তোমার ই?”
রবিন– হতে ও পারে।না ও পারে!
ইসুয়া– লজ্জা করলো না ম্যামকে এভাবে অসভ্যের মত কিস করতে??
রবিন— শুরুটা যে করেছে,লজ্জা তো তার থাকা উচিত।
ইসুয়া–মানে কি এর??
রবিন– আমি তো just আপনার প্রথম কিসটার রিপ্লাই দিলাম।আর আপনি তো…………!!!!!
ইসুয়া– সরি,ঐদিন আমার রাগের কারণে ভার্সিটির মাঠে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছি।
রবিন— Sorry not excepted….
ইসুয়া– কেন??
রবিন– আপনি তো খালি একটা ভুল করেননি ।আপনার ভুলের সংখ্যা গভীর থেকে গভীরে।
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,”বুঝলাম না।”
রবিন এবার ইসুয়ার দিকে এগিয়ে আসে,ইসুয়ার কানের কাছে তার ঠোঁট দুটো নিয়ে আসে আর বলে,,”এইভাবে মাঝ পিঠের তিলখানা না দেখালে কি চলতো না?তা ও একবার নয়,দুবার। আমাকে মারার ষড়যন্ত্র চলছে না কি মনে মনে?”
রবিনের গরম নিঃশ্বাসের হলকা ইসুয়ার কানে পড়ায় ইসুয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে ,রবিনের এই লজ্জা মিশ্রিত কথার কোন উত্তর না দিয়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে যায় সে।ইস!কি লজ্জার ব্যাপার …… ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই এসব হয়ে আসছে ভাবতেই ইসুয়ার ইচ্ছে করছে মাটির ভিতরে ঢুকে যেতে।
ইসুয়া চলে যাওয়ার পর বটগাছের আড়াল থেকে উচ্চ শব্দ করে হেসে বেরিয়ে আসে শুভ আর নয়ন। নয়ন রবিন কে বলে উঠলো,,”ভাই এভাবে তোদের বাসরঘরের live telecast ও দেখতে চাই।”
রবিন– তোর টা ভার্সিটির সবাই কে দেখাবো বড় পর্দায় তা ও আবার জুম করে কোনো টেনশন নিস না দোস্ত।
শুভ — আমি এদেশে বিয়ে করবো কিন্তু বাসর করবো বাইরের country তে।নো প্যারা,নো চিল।তোদের হাতের বাইরে সবকিছু।
এভাবে চলতে থাকে বন্ধু দের দুষ্টু মিষ্টি আড্ডা।
তুলি তমার দিকে তাকিয়ে বললো, “রেলি??তুই রবিন রে পছন্দ করিস?”
তমা কাগজে লিখতে লিখতে– হ্যাঁ কেন??
তুলি — I don’t believe দোস্ত। আগে তো কখনো বলিসনি??
তমা — এখন তো বললাম।
তুলি — কিন্তু রবিন তো কোনো মেয়েরে পাত্তা ই দেয় না।
তমা– একদিন দুদিন, কতদিন না দিয়ে থাকতে পারবে?
তুলি — জানি না আমি।তবে আমার মনে হয় না কোনো লাভ হবে।
তমা– তোকে এসব নিয়ে এত ভাবতে হবে না। তুই pizza খা।
তমা তার assignment শেষ করছে,আর তুলি পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
……………………………………………
স্বাদ ড্রয়িং রুমে বসে মাথায় পানি ঢালছে।তার মা তার দিকে চেয়ে বলে উঠে,,,,
কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিলে যে প্রেসার হাই হয়ে যায়, তোকে জন্ম না দিলে বুঝতেই পারতাম না।
স্বাদ— মা এসব বলা বন্ধ কর।এমনিতেই মাথা চক্কর দেওয়া কমছে না আমার।
তা তুই কি বললি??তুই রাজি হয়ে গিয়েছিস নাকি?দেখ!আমি কিন্তু বাংলাদেশী বউমা চাই।এসব বিদেশী মেয়ে দিয়ে আমার চলবে না।
স্বাদ— কেন??
কারণ ঝগড়া করলে ঐ মেয়ে খালি ইংরেজি ঝারবে আমি রিপ্লে উত্তর দিতে পারবো না। ঝগড়া তে হেরে যাব।
স্বাদ– পাগলের প্রলাপ বন্ধ করবে মা,প্লিজ??
আমার তো চাই রিদীমা কে।কম কথা বলা মেয়ে,বেশি কথা বললেই ঝগড়া। ওর সাথে আমার কখনো ঝগড়াই হবেনা।
স্বাদ– মা এমনিতেই প্রেসারের অবস্থা বেগতিক। এবার তোমার চাওয়া পূরণ করতে আমার প্রেসার আমার সাথে ব্রেক আপ করবে।আল্লাহর দোহাই, একটু চুপ থাক।
রেহানা বেগম আর কথা বাড়ায় না, উঠে গেল রান্না ঘরের দিকে।
——————————————
শাহেদ তার বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলো,,,,
সত্যি!কি ভয়ানক কান্ড।যে শাহেদ স্যার কে পুরো এরিয়ার স্টুডেন্ট রা এত ভয় পায়। তাকে কি না একটা মেয়ে ডেয়ার নিয়ে চোখ মেরে দিল??
কি dangerous মেয়ে রে ভাই!ভাবতে পারছিস??
এসব বলে চলছিলো শাহেদের বন্ধু রা।শাহেদ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,,,,”এ সব ফালতু টপিক বাদ দিয়ে অন্য কিছু বল।”
বন্ধুরা উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। শাহেদ সবার দিকে রেগে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে,”এই মেয়ে টা একদিনে আমার এই রাগী রূপটা সবার কাছে নড়বড়ে করে দিয়েছে।”
রিদীমা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে ওয়াশরুম থেকে। মাথায় এখনো টাওয়াল জড়ানো।হঠাৎ কেউ একজন তার চোখ মুখ চেপে ধরে।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে রিদীমার।ছটফট করছে আগন্তুকের হাত থেকে রেহাই পেতে। না আর পারছে না। নিঃশ্বাস টা বুঝি এবার দেহ থেকে বেরিয়ে গেল।
দরফরিয়ে উঠে ঘুম থেকে রিদীমা। এ কেমন স্বপ্ন দেখলো রিদীমা। ঘুম থেকে উঠে ও নিজের কপালের ঘাম গুলোর অস্বস্তি খোঁজে পেল রিদীমা।
__________________________(চলবে)