#Senior_life_partner
পর্ব—-41
Afrin Ayoni
হ্যাঁ অন্য শরীরটা আর কারো নয়!!সেই বিদেশিনী মারিয়ার।শুভ একাধারে চড় দিয়ে চলেছে রিদীমার গালে।দুটো গুলিই লেগেছে রিদীমার শরীরে বুকের ডান পাশে কাঁধের দিক বরাবর।
শুভ– এই এই রিদীমা!চোখ বন্ধ করবে না বলে দিলাম।মেরে ফেলবো আমি যদি চোখ বন্ধ করেছো তো ।এই এই …??
কথাগুলো ধরা গলায় বলে চলেছে শুভ।রিদীমার উপর হওয়া এই হঠাৎ আক্রমণ কারোর ই বোধগম্য হল না। আফজাল সাহেব চোখে ঝাপসা দেখছেন।রবিন দৌড়ে এসে শুভর পাশে বসলো,,,
রবিন ছলছল চোখে– আপুনি!আপুনি..কি হল তোমার?
স্বাদ দৌড়ে এসে রবিনকে একপাশে সরিয়ে রিদীমার পালস চেক করছে।শাহেদ দৌড়ে এসে রিদীমার পায়ের কাছে বসলো।
শাহেদ স্বাদের দিকে তাকিয়ে– কি রে?কিছু বল।?
স্বাদ– ইমেডিয়েটলি হসপিটালে নিতে হবে। ??
শাহেদ রবিনের দিকে তাকিয়ে– সর সর,, জলদি ব্যবস্থা করো।
রবিন উঠে দাঁড়ায়। স্বাদ আর শাহেদ কিছু করবে তার আগেই শুভ রিদীমাকে কোলে তুলে নিলো।ভিড়ের দিকে তাকিয়ে কাউকে ইশারা করে শুভ।তখনই দুজন কালো পোশাকধারী ফরেইনার বের হয়ে এলো।
তারা দুজন ই সকলকে তাদের পরিচয় পত্র দেখালো।তারা লন্ডনে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত বড় পদের অফিসার।
শুভ তাদের দিকে তাকিয়ে– Plz…. arrest her??
দুজন ই মারিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।শাহেদ কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে শুভ বললো,,,
শুভ– এটা ডিসকাস করার সময় নয়।আগে রিদীমা কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া উচিত।
স্বাদ– রাইট….. জলদি চল।??
শুভ রিদীমাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। নয়ন গাড়ি নিয়ে জলদি এসে দাঁড়ায় সদর গেইটে।শুভ,রবিন আর রিদীমা গাড়ির পেছনের সিটে বসলো।নয়ন ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।শাহেদ নয়নের পাশে উঠে বসলো।স্বাদের আর জায়গা হল না সেই গাড়িতে।
রেহানা বেগম, আফজাল সাহেব, তারেক সাহেব, ঝুমা বেগম বেরিয়ে এসেছেন।রেহানা বেগম এগিয়ে আসে ছেলের দিকে,,,,
রেহানা বেগম– তুই গেলি না????
স্বাদ–আমি গাড়ি বের করছি মা।যেতে তো হবেই।
আফজাল সাহেব — আমি ড্রাইভারকে বলেছি গাড়ি বের করতে। স্বাদ, তারেক,আকাশ আর আমি যাচ্ছি।
তারপর আফজাল সাহেব রেহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে– ভাবী একটা কথা রাখবেন।??
রেহানা বেগম অশ্রুসজল চোখে– এভাবে বলছেন কেন ভাইজান, আপনারা আমাদের আপনজন। আপনাদের এই বিপদের দিনে আমরা আছি তো আপনাদের পাশে।
আফজাল সাহেব– বুঝেন ই তো একমাত্র মেয়ে, আমি তো যাচ্ছি হসপিটালে।রবিন ও চলে গেল।বাসায় পুরুষ বলতে দেলোয়ার কে রেখে গেলাম,,সবাই চলে গেলে কিছুর প্রয়োজন হলে কে দেখবে?তাই দেলোয়ার থাকুক। আপনি আর ঝুমা ভাবী যদি কষ্ট করে রিদীমার মাকে আর ওর দাদীকে একটু দেখে রাখেন খুব উপকার হয়। আমার বোনটা একা সামলাতে পারবে না ওদের।
ঝুমা বেগম এগিয়ে এসে– আপনারা যান,,,মেয়েটার কাছে।আমরা এদিকটা সামলে নিব।এদিকের বিষয়ে কোন টেনশন করবেন না। রিদীমার খবর দিবেন আমাদের ।??
আফজাল সাহেব– আচ্ছা।
ইসুয়া এগিয়ে এসে– বাবা একটা কথা বলবো????
আফজাল সাহেব– বল মা।
ইসুয়া– দেখুন,আগের গাড়িতে আপনার ছেলে,নয়ন, শুভ আর শাহেদ ভাইয়া গেছে।এখনও আপনারা সকল পুরুষ সদস্য ই যাচ্ছেন।সেখানে কোনো মেয়ে লোকের প্রয়োজন হতেই পারে।আমি বলি কি,,, বাড়িতে মা আর দাদীজানকে দেখার জন্য আমার আম্মু,শুভ ভাইয়ার আম্মু সিরিন আন্টি, সিনথিয়া ফুফি আর রহিমা তো আছেই।আমি, নিশুয়া আর রেহানা আন্টি আপনাদের সঙ্গে যাই।যদি প্রয়োজন হয়??
আফজাল সাহেব কিছু ভেবে চলেছেন।স্বাদ এগিয়ে এসে– আঙ্কেল ইসুয়া ঠিক বলছে।মা,ইসুয়া আর নিশুয়া আমাদের সাথে আসুক।দরকার হতে পারে।
আফজাল সাহেব– আচ্ছা, আমি ড্রাইভারকে আরেকটা গাড়ি বের করতে বলছি।??
রিদীমাকে নিয়ে সবচেয়ে উন্নত অত্যাধুনিক হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়ায় নয়নের ড্রাইভ করা গাড়ি।নয়ন জলদি করে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। শুভর সাদা পাঞ্জাবি রিদীমার রক্তে ভিজে গেছে। শুভ রিদীমাকে কোলে করেই দৌড়ে প্রবেশ করে হসপিটালে।
শুভ চিল্লিয়ে– ডাক্তার ডাক্তার!কই গেল সব???
শুভর চিৎকারে হসপিটালে ভিড় জমে গেছে। কয়েকজন নার্স বেরিয়ে আসে। কিছু ডক্টর ও দৌড়ে আসে।শুভকে একটা কেবিন দেখিয়ে দিতেই সেখানে গিয়ে বেডের উপর নিয়ে রাখে রিদীমার অসাড় শরীর টা।
শুভ– জলদি কিছু করুন।হাতে সময় নেই,,??
শাহেদ — ডাক্তার প্লিজ বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবেন না, কি করতে হবে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করুন।
ডাক্তার– Wait wait …. আগে পেশেন্টের অবস্থা তো দেখতে দিন।??
রবিন হসপিটালে ঢুকেই মাটিতে বসে পড়েছে।হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।ছেলে হয়ে চিৎকার করে কাঁদার অধিকার নেই জেনেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বারবার। নয়ন এসে পাশে বসে,,
নয়ন — দেখ দোস্ত আপুর কিছু হবে না। শক্ত হ প্লিজ।এভাবে ভেঙে পড়লে আঙ্কেল আন্টিকে সামলাবে কে??
রবিন– আপুনির কন্ডিশন দেখছিস তুই।??
নয়ন — আল্লাহ্ ভরসা।কিচ্ছু হবে না দেখে নিস।প্রার্থনা কর আপুর জন্য।
রবিন কিছুই বলতে পারে না আর।তার চোখের সামনে তার হাতের ফাঁক দিয়েই এভাবে তার বোনকে মৃত্যু উপহার দিয়ে গেল কেউ।কি লাভ হল এত বছরের দক্ষ পুলিশ অফিসার হয়ে??নিজের উপর আজ সে নিজেই লজ্জিত।
স্বাদরা সবাই ততক্ষণে এসে পড়েছে হসপিটালে।সবাই দৌড়ে আসে হাসপাতালের ভিতরে। রবিন আর নয়ন কে দেখে স্বাদ দৌড়ে আসে,,,
স্বাদ– রিদ কোথায়????
রবিন– কেবিনে নিয়ে গেছে,ডক্টর দেখছেন।
স্বাদ রেগে– What? এতক্ষণে রিদের অপারেশন শুরু হওয়ার কথা।কেবিনে নিয়ে গেছে মানে????
স্বাদের কথার মাঝেই কেবিন থেকে শোরগোলের আওয়াজ শোনা গেল। শুভর চিৎকার ই বেশি শোনা যাচ্ছে তাতে।রবিন আর নয়ন এগিয়ে যাবে শাহেদ বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে,,,
স্বাদ শাহেদের দিকে তাকিয়ে– কি হয়েছে???
শাহেদ– রিদীমার অবস্থা ভালো না।
স্বাদ– তা তো সবাই দেখলাম।অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে বল।
শাহেদ নয়নের দিকে তাকিয়ে– শুভকে বুঝিয়ে বের করে নিয়ে আসো তো।ডাক্তারের সাথে ঝামেলা করছে।
রবিন– কেন ঝামেলা করছে????
শাহেদ– ডাক্তার বলেছে এখন প্রাথমিক চিকিৎসা যতটুকু দেওয়া যায় ততটুকু করবে।যে ডাক্তার অপারেশন করবে সে শহরের বাইরে আছে… তাতেই ঝামেলা শুরু করেছে শুভ।
স্বাদ– ঝামেলা করেছে বেশ করেছে। ডাক্তার নেই মানে।এখানে একজন রোগী মারা যাচ্ছে …..??
শাহেদ– এটা বাংলাদেশ,,, লন্ডন নয়।
রবিন– তাহলে এখন কি হবে?
নয়ন– আজ তো ডাক্তারের লাশ পড়বে মনে হচ্ছে। আমি গিয়ে শুভ কে বুঝিয়ে নিয়ে আসি।
শাহেদ– তাই যাও।
ইসুয়া এগিয়ে এসে– এখন উপায়?????
আফজাল সাহেব ভেঙ্গে পড়লেন– আমার মামণির কপাল এত খারাপ কেন????
তারেক সাহেব– এ রকম বলিস না। দরকার পড়লে অন্য হসপিটালে নিয়ে যাব।
স্বাদ– Impossible… এমনিতেই অনেক ব্লিডিং হয়েছে।অন্য কোথাও নিতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
শাহেদ– মাথা ধরছে না আমার। কি করা উচিত??
শুভ কে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে নয়ন কেবিন থেকে। শুভ রেগে ডক্টরদের শাসাচ্ছে। দুজন ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
ডাক্তার– দেখুন ওনাকে আপনারা শান্ত হতে বলুন।আমাদের যতটুকু দেওয়া সম্ভব তার বাইরে দেওয়া আমাদের সাধ্যে নেই।হসপিটালের কিছু রুলস আছে।অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কেউ ই এখন উপস্থিত নেই হসপিটালে,, আমরা শুধু শুধু চিকিৎসা করে রোগীর লাইফ রিস্ক নিতে পারবো না।
রবিন– তো আমার আপুনি কি এভাবেই আমাদের চোখের সামনে চটপট করবে?
আফজাল সাহেব– হায় খোদা এই কোন বিপদে ফেললে তুমি????
রেহানা বেগম এগিয়ে এলেন,,,”আপনারা অপারেশন থিয়েটারের সব ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?”
ডাক্তার– বললাম তো ডক্টর নেই।
রেহানা বেগম– পারবেন কি না????
স্বাদ– হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন মা??
রেহানা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে– কারণ আমাদের ডক্টরের প্রয়োজন নেই।
শাহেদ– মানে!!
রেহানা বেগম– আমাদের হাতের কাছেই লন্ডনের বিশিষ্ট সার্জন ডক্টর.স্বাদ আহসান রয়েছে।
শুভ– Absolutely….. আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
রবিন চোখের পানি হাতের উল্টো পিঠে মুছতে মুছতে বললো– হ্যাঁ স্বাদ ভাইয়া তো আছেই।??
শাহেদ– তাহলে আমরা দেরি করছি কেন?
স্বাদ– অসম্ভব আমি পারবো না। ??
ইসুয়া– কেন ভাইয়া??
শাহেদ এগিয়ে এসে স্বাদের কলার চেপে ধরে– এই কি বলছিস তুই??রিদীমা আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করে চলছে।আর তুই বলছিস ওর অপারেশন করতে পারবি না??
রবিন হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাদের সামনে,,,
রবিন– প্লিজ ভাইয়া। আমার আপুনিকে বাঁচান।
শুভ– কেন এমন করছেন ভাই?? প্লিজ এভাবে রিদীমা কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না। ??
রেহানা বেগম– না করিস না বাবা।মেয়েটাকে বাঁচা।
স্বাদ– কেন বুঝতে পারছো না তোমরা।??
শাহেদ আবার কলার ধরেই বলে– দেখ,রিদীমাকে চাই তো তোর??আমি সরে যাব তোদের মাঝখান থেকে। তা ও ওকে মরতে দিস না। দয়া কর……
স্বাদ– এটা কোনো কথা না শাহরিয়ার।রিদ ভালবাসা পরে,,,তার আগে সে আমার কলিজার বন্ধু।
শুভ দৌড়ে এসে স্বাদের পা জড়িয়ে ধরে। স্বাদ হতভম্ব হয়ে যায়।
স্বাদ– এই কি করছো ????
শুভ– ভাইয়া আমি ও চলে যাব অনেক দূরে।আর কখনোই আপনাদের বন্ধুকে বিরক্ত করবো না। দূর থেকে দেখবো।কাছে আসবো না। তাও বাঁচান ওনাকে।
স্বাদ– শুভ উঠো,উঠো বলছি।
শুভ– না,,, যতক্ষণ না আপনি রাজি হচ্ছেন আমি আপনার পা ছাড়বো না।আমি তো বললাম আমি ও কখনো আপনার বন্ধুকে ডিস্টার্ব করবো না। শাহেদ ভাই ও বলেছে সরে দাঁড়াবে আপনাদের জীবন থেকে।আপনার হয়েই থাকুক রিদীমা। তারপর ও বেঁচে থাকুক।
উপস্থিত সকলে হা হয়ে আছে এসব দেখে।স্বাদ শুভকে পা ছাড়িয়ে ওঠায়,,
স্বাদ– দেখ,,আমি ভালো সার্জন ঠিক আছে মানলাম।অপারেশনের হাত দক্ষ আমার তাও মানলাম।কিন্তু সবার আগে আমি ও তো মানুষ। আমারও মন, আবেগ, প্রিয়জন হারানোর ভয় আছে।রিদীমার অপারেশন করাতে গিয়ে অপারেশন থিয়েটারে যদি আমার হাত কেঁপে ওঠে ওর 99% লাইফ রিস্ক আছে।আমি এই রিস্কটা ই নিতে চাচ্ছি না।??
রেহানা বেগম– আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু কর,,, সফল হবি।
রবিন– আপনার উপর আমাদের সবার বিশ্বাস আছে ভাইয়া। আপনি পারবেন।
স্বাদ– তারপর ও …………??
শাহেদ– তারপর আর কিছু না। তুই জলদি অপারেশন শুরু কর।
আফজাল সাহেব এগিয়ে এসে স্বাদের হাত ধরেন।স্বাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে– আঙ্কেল কি করছেন??
আফজাল সাহেব–আমার মেয়েটাকে বাঁচাও বাবা।??
স্বাদ অসহায় মুখ করে ডাক্তারদের দিকে তাকিয়ে– অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থা করুন জলদি।
ডাক্তাররা আর না করলো না। তারা খুব শীঘ্রই সবকিছুর ব্যবস্থা করার জন্য চলে যায়।
স্বাদ রবিনের দিকে তাকিয়ে– রিদীমার ব্লাড গ্রুপ কী??
রবিন– ও পজেটিভ।
স্বাদ– ব্লাড জোগাড় করে রাখা ভালো।প্রয়োজন হলেই দেওয়া যাবে।খোঁজতে হবে না।
রবিন– আমার ও সেইম গ্রুপ।
আফজাল সাহেব– আমার ও।
স্বাদ– plus point…..???
অপারেশন থিয়েটারের কাজ শুরু করতে স্বাদ রিদীমা কে নিয়ে ভিতরে গেল। সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে।শুভ মাথায় হাত দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
শাহেদ আফজাল সাহেবের সাথে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর শান্তনা দিচ্ছে।রবিন, নয়ন আর আকাশ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে।ইসুয়া বাড়িতে ফোন করে কিছুক্ষণ পর পর খবর দিচ্ছে আর নিচ্ছে।নিশুয়া বেচারী হসপিটালের পরিবেশে অভ্যস্ত নয়,প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে ও বসে আছে রেহানা বেগমের পাশে।
প্রায় দুঘণ্টা পর স্বাদ বেরিয়ে এলো।ছুটে গেল শুভ আর শাহেদ।
শুভ– কি অবস্থা????
শাহেদ– চুপ করে না থেকে জলদি বল।
স্বাদ– অপারেশন তো করলাম।হুঁশ ফেরার আগ অবধি বলতে পারছি না সাকসেসফুল নাকি??
রবিন– জ্ঞান ফিরতে ঠিক কতক্ষণ লাগতে পারে??
স্বাদ– মিনিমাম 6 ঘন্টা। ?
ইসুয়া– অনেকটা সময়।
শাহেদ– হ্যাঁ।
নয়ন– আমি বলি কি?? আকাশ ভাইয়া আপনি আঙ্কেল দের আর আন্টিকে নিয়ে বাড়িতে চলে যান।এতক্ষণ এত লোককে এখানে allow না ও করতে পারে।
শাহেদ– নিশুয়া ও চলে যাও।
নিশুয়া মনে মনে– এই ব্যাটা খালি আমার পিছনেই পড়ে থাকে।
নিশুয়া– আমি থাকি না!!
ইসুয়া– না শাহেদ ভাইয়া ঠিক ই বলছে।এত মানুষ থাকার দরকার নেই।
স্বাদ নিশুয়ার দিকে এগিয়ে এসে– এই bby doll চলে যাও।হসপিটালের পরিবেশে বেশি থাকলে শরীর খারাপ করবে।
নিশুয়া অসহায় মুখ করে বললো– আচ্ছা। ??
নয়ন– রবিন, ভাবী,শুভ,শাহেদ ভাইয়া আর স্বাদ ভাইয়া তো আছেই।এর বেশি কাউকে থাকতে হবে না।
আকাশ– মামা আর আন্টিদের না থাকাই ভালো অসুস্থ আবহাওয়ায়।
নয়ন– চলুন আকাশ ভাইয়া আপনাদের এগিয়ে দিয়ে আসি।আর এখানে যারা থাকবে তাদের জন্য একটু খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে নিয়ে আসি আমি।
আফজাল সাহেব– আমার যেতে ইচ্ছে করছে না??
রবিন বাবার দিকে এগিয়ে– মা আর দাদীজান বাড়িতে একা আছে।তোমাকে এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন তাদের।যাও বাবা,আমরা আছি তো।
স্বাদ– আঙ্কেল আমরা মিনিটে মিনিটে সব খবর দিব আপনাকে বললাম তো।
আফজাল সাহেবকে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠায় সবাই।
…………………………………………………………………..
????????????????
মেরি জিন্দেগি সাওয়ারি,,মুজকো ঘালে লাগাকে
ব্যাঠা দিয়া পালাকফে,,মুজে খাকচে উঠ্যাকে….
মেরি জিন্দেগি সাওয়ারি,,মুজকো ঘালে লাগাকে
ব্যাঠা দিয়া পালাকফে,,মুজে খাকচে উঠ্যাকে….
ইয়ারা তেরি ইয়ারি কো……মেনে তো খোদা মানা
ইয়াদ কারেগি দুনিয়া………তেরা মেরা আপচানা!!
তেরে যেচা ইয়ার কাহা,,,,,,কাহা এচা ইয়ারা হাআআআ
????????????????
দশ ঘন্টা পেরিয়েছে অপারেশনের পর।এখনো হুঁশ ফেরেনি রিদীমার।রিদীমার বেডের দুপাশে দুই হাত ধরে বসে আছে তার প্রাণপ্রিয় দুই বন্ধু। স্বাদ আর শাহেদ। দুজনের চোখে বন্ধুকে হারানোর তীব্র ভয় স্পষ্ট। রবিন আর ইসুয়া বসে আছে পাশেই।রবিন হতাশ হয়ে বসে আছে। ইসুয়া ও আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না শান্তনা দেওয়ার।একমাত্র শুভই এখনো কেবিনে ঢুকেনি।বাইরে থেকে দেখছে রিদীমাকে।কাছে যাওয়ার সাহসটুকু ও হারিয়ে ফেলেছে সে।
নয়ন শুভর দিকে তাকিয়ে– কিরে?ভিতরে যা।
শুভ– নারে । এটাই হয়তো শেষ দেখা খুব কাছ থেকে।
নয়ন– মানে ????
শুভ– কিছু না। একটা কাজ করে দিবি??
নয়ন– কি??
শুভ– বলছি,আয় আমার সাথে!!??
বাড়িতে দিতী বেগমের অবস্থা বেগতিক। বি পি হাই।মমতা চৌধুরীকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। বৃদ্ধা বারবার নাতনির খবর নিতে ব্যাকুল হয়ে উঠেন।এমনিতেই অসুস্থ তিনি।শত হলেও রিদীমা তার একমাত্র নাতনি। হয়তো একটু একরোখা। তারপর ও নিজের রক্ত বলে কথা!!
দীর্ঘক্ষণ ধরে একটা চিঠি লিখেছে শুভ।চিঠিটা লিখেই পাশে বসে থাকা নয়নের হাতে ধরিয়ে দিল।
নয়ন– দেখ!তোর এসব পাগলামি আমার ভালো লাগছে না। ??
শুভ– মন দিয়ে শোন,কি বলছি।
নয়ন– আগে বল চিঠিতে এসব কি লিখেছিস আজেবাজে।
শুভ– রিদীমার জ্ঞান ফেরার পর একটা লোক আসবে।তার সব কথা শেষ হবার পর এই চিঠিটা তুই রিদীমার কাছে দিবি।অন্য কারো হাতে নয়।
নয়ন– কিন্তু!!??
শুভ– কোনো প্রশ্ন করবি না।
নয়ন– এরকম করিস না। আমার আর রবিনের কথা ও ভাব একটু।
শুভ– ভালো থাকিস।??
নয়ন– এইভাবে সব ভেঙে যাবি?????
শুভ ম্লান হাসে।নয়ন ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বন্ধুর দিকে।???
_____________________