#Senior_life_partner
পর্ব—-40
Afrin Ayoni
রিদীমা প্রচন্ড depressed হয়েই অফিস থেকে বাসায় ফিরে তাও আবার অনেক দেরি করে। আজকে সারাদিনের এক একটা ঘটনা রিদীমাকে প্রচন্ড ভাবাচ্ছে। আরিফের কল ডিসকানেক্ট হওয়ার দশ কি বারো মিনিট পর কল আসে রিদীমার ফোনে। সেই কলে রিদীমা জানতে পারে আরিফকে কেউ জঘন্য ভাবে হত্যা করেছে। ??
রিদীমা বাড়িতে ফিরেই নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। ঘরে ঢুকে দরজা লক করে আধশোয়া হয়ে বসে পড়ে বিছানায়। কে তাকে হত্যা করতে চায়?কিসের শত্রুতা তার সঙ্গে??
রিদীমা আরিফের সঙ্গে হওয়া পুরাতন কনভারসেশন গুলো দেখার জন্য ফোন হাতে নিল। রিদীমা তার কাজের ব্যস্ততায় প্রায় অনেকের মেসেজ সিন করতে সময় পায় না। আরিফ তাকে গত দুদিন আগে কিছু পাঠিয়েছে।পিকটা একটা সিকিউরিটি গার্ড গ্রুপের দেখে মনে হচ্ছে। সবার পরনে একই ধরনের কালো পোশাক। মাঝখানে কেউ একজন আছে!!যার পরনে blue ব্লেজার,white প্যান্ট, চোখে চশমা।কিন্তু চেহারাটা চারপাশের গার্ড গুলোর জন্য স্পষ্ট নয়।কে এই লোক??
আরিফ মেসেজে লিখেছে– ম্যাডাম এই লোকটাকে চিনেন?সে আপনার খোঁজ নিচ্ছিলো!এবং আরো অনেক কিছুই জানার তদন্ত চালায়।
রিদীমা– চেহারাই তো দেখছি না স্পষ্ট, চিনবো কি করে?
মাথাব্যথা করছে,,,,ফ্রেশ হওয়ার দরকার। রিদীমা ফোনটা বিছানার উপর ফেলে রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। প্রায় আধঘন্টা ধরে শাওয়ার সেরে রিদীমা ওয়াশরুম থেকে বেরুলো।রিদীমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে তার ভিজে চুল গুলো মুছছে।হঠাৎ রিদীমা খেয়াল করে তার রুমের দরজা ফাঁকা। কিন্তু সে তো দরজা লক করেছিলো।তাহলে খুললো কিভাবে??
রিদীমা দরজার দিকে এগিয়ে যাবে,সে খেয়াল করলো তার ফোনটা ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় যেভাবে ছুঁড়ে মেরেছিল,সেভাবে নেই।তার মানে কেউ তার ফোনটা ধরেছে।রিদীমা জলদি তার ফোনটা হাতে নিল। আরিফের পাঠানো পিকটা,যেটা রিদীমা একটু আগে দেখেছে সেটা কেউ ডিলিট করে দিয়েছে।রিদীমা হতভম্ব,,, কি হচ্ছে এসব!!
রিদীমা– তবে কি আমার উপর ই নজরদারি করছে কেউ??
রিদীমা একূল ওকূল কিছুই ভেবে পেল না।বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশ।চারদিকে মেহমানের ছড়াছড়ি। হইহই রব।ইসুয়া ডিনারের জন্য সবাইকে ডেকে দিল।
নয়ন আর শুভ ডেকোরেশনের কাজ দেখছিলো।নয়ন শুভর দিকে তাকিয়ে,,,,
নয়ন– একটু আগে কই গেছিলি??
শুভ– দেখে এলাম ওদিকটার সব ঠিকঠাক আছে কিনা!!
রবিন তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই,,এদিকটা হয়েছে তোদের??
নয়ন– শেষের দিকে।
রবিন– শেষ করে ডিনারে আয়।
শুভ– তুই যা,,,,আমরা আসছি।
রবিন– জলদি আয়।
রবিন চলে গেল নিচে।শুভ আর নয়ন তাদের বাকি কাজটুকুতে হাত লাগিয়েছে । পাশ দিয়েই নিশুয়া আর মারিয়া কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো।শুভ নিশুয়াকে ডাকলো। নিশুয়া তখন দু পা সামনে চলে গেছে।সে মারিয়াকে দাঁড়াতে বলে শুভর দিকে এগিয়ে গেল,,
নিশুয়া– ডেকেছেন ভাইয়া??
শুভ মারিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে– মেয়েটা কে??
নিশুয়া– মারিয়া আপু!!রিদীমা আপুর friend…
শুভ– আগে তো কখনো দেখিনি।
নিশুয়া– লন্ডন থেকে এসেছে।
শুভ– ওহ আচ্ছা।
নিশুয়া– ওকে তাহলে আসি।
শুভ– যাও।
নিশুয়া আর মারিয়া চলে যাওয়ার পর নয়ন এগিয়ে আসে শুভর দিকে,,,,
নয়ন হেসে গাইতে থাকে–
“তোমার ঘরে বাস করে কারা??
ও মন জানো না!!
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা??
মন জানো না,,,,তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা??”
শুভ নয়নের পিঠে ঘুষি মেরে– শালা!মোটেও সে রকম কিছু নয়।আমার one & only একপিস ই যথেষ্ট। আর সে হচ্ছে রিদীমা চৌধুরী ???
নয়ন– হুম,,,,আমারে যত অত্যাচার করেছিস।দোয়া দিলাম সব তোর বউ তোকে দ্বিগুণ করে ফেরত দিবে।
শুভ– বাঘিনী তো!!একটু আঁচড় কাটবেই,সয়ে নিতে হবে।
নয়ন– হয়েছে,,,,এদিকের কাজ শেষ।খেতে চল…. প্রচুর খিদে পেয়েছে। ??
শুভ– চল।
শুভ নয়ন চলে আসে ডিনার টেবিলে।প্রায় অনেকেরই ডিনার করা শেষ। ডাইনিং টেবিলে এখন বসে আছে,,
নিশুয়া ইসুয়া রবিন সিনথিয়া মারিয়া। শুভ আর নয়নকে দেখে ইসুয়া এগিয়ে গেল।
ইসুয়া– আপনারা বসুন।আমি রিদীমা আপুকে ডেকে আনি।
নয়ন শুভর পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো মারে।নয়ন কে শুভ চোখ দিয়ে শাসায়।নয়ন হাসতে হাসতে গিয়ে রবিনের পাশের চেয়ারটায় বসে। শুভ ও তার পাশেই বসে পড়ে।
ইসুয়া রিদীমার রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে,,
রিদীমা– কে???
ইসুয়া– আপু ,, ডিনার করবে চল।
রিদীমা– তুমি যাও,আমি আসছি।
ইসুয়া চলে আসে।টেবিলে সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে থাকে।নিশুয়া ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে,,,
নিশুয়া– তুমি ও বসে পড়ো আপু।
ইসুয়া– রিদীমা আপু আসুক,একসঙ্গে বসবো।
রবিন পিছনে ফিরে– এই তো আপু ও এসে গেছে।সবাই বসে পড়ো।
রিদীমা– ইসুয়া,,, তুমি অপেক্ষা করছো কেন??
শুভ– ভাবী আমাকে চিকেনটা দিন তো।
নয়ন– আর কত খাবি????
শুভ– মাত্র ই তো বসলাম।
রবিন– খা তো।যত খেতে পারিস।
নয়ন– বাপের হোটেলে খাওয়াচ্ছিস তো তাই এরকম বলছিস,একদিন নিজের পকেট খালি করার ট্রিট দে বুঝবি।
শুভ হেসে– That’s true….???
মারিয়া– your r such a nice guys…. real friend যাকে বলে।
শুভ কপাল ভাঁজ করে মারিয়ার দিকে তাকায়। শুভ মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে– What’s your name lady?
মারিয়া– I am Mariya from london….
নয়ন– ohh I see…??
রবিন– মারিয়া,, ওরা আমার বন্ধু। এই হচ্ছে শুভ আর এটা নয়ন।
মারিয়া– হুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
নয়ন– আরে আপনি বাংলা জানেন??
মারিয়া অসহায় দৃষ্টিতে– Yes…..??
শুভ– তা আর কি কি জানেন??
রিদীমা– মানে?আর কী জানবে ও।??
শুভ– Nothing…..??
সবাই ডিনারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ডিনার শেষ করে শুভ হাত ধুয়ে উঠে পড়ে। রিদীমার পাশ কেটে যাওয়ার সময় বললো,,, “Be careful…”??
রিদীমা শুভর কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না ।তারপর একে একে সবাই ডিনার করে ঘুমাতে চলে গেল যার যার রুমে। আজ ইসুয়া আর নিশুয়া একসঙ্গে থাকবে। রিদীমা একা থেকে অভ্যস্ত, তাই মারিয়ার জন্য গেস্টরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুভ আর নয়ন আজ রবিনকে ছাড়লো না। বাধ্য হয়েই রবিনকে তাদের সঙ্গে থাকতে হল আজ।রবিন তার Miss. অধ্যাপিকা কে মিস করছে খুব।
………………………………………………..
সকাল 10:00 টা,,,
ইসুয়া– এই নিশু উঠ।কটা বাজে দেখেছিস??
নিশুয়া– আহ আপু ঘুমাতে দাও না। ??
ইসুয়া– এখুনি আম্মুরা চলে আসবে ঐ বাড়ি থেকে।উঠ না!!বোন আমার প্লিজ।
নিশুয়া– আর 5 মিনিট আপু।
ইসুয়ার ডাক উপেক্ষা করে পাশ ফিরে আবারো চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে নিশুয়া। দরজায় নক পড়তেই চমকালো ইসুয়া। এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে রবিন দাঁড়িয়ে আছে।
ইসুয়া নিশুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো রবিনের দিকে তাকালো– আপনি এখানে????
রবিন ফিসফিসিয়ে– নিশুয়া কি এখনো ঘুমে??
ইসুয়া– হুম।?
ইসুয়া হুম বলতে দেরি হল রবিন রুমে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি আটকে দিলো।
ইসুয়া– এই এই করছেন কী??
রবিন– আরে আস্তে বল,,, নিশুয়া জেগে যাবে।
ইসুয়া– এখানে কী?
রবিন– Morning kiss নিতে এসেছি।??
ইসুয়া– পাগল না মাথা খারাপ??
রবিন– দুটোই,জানো কাল রাতে কতটা মিস করেছি!!
ইসুয়া– এখন বেরুন তো প্লিজ।নিশুয়া দেখলে লজ্জায় পড়তে হবে।??
রবিন– নিশুয়াকে দেখাতে না চাইলে জলদি করে কিস করে ফেল।
ইসুয়া– ইস্!!না …..??
রবিন– দেখ তুমি যত লেইট করবে তত দেরি হবে??
ইসুয়া– লেইট করলে দেরি হবে????
রবিন– মজা করলাম।জলদি জলদি জলদি কর।
নিশুয়া– আমি কিছুই দেখবো না আপু,,,ভাইয়া যা চাইছে দিয়ে দে।আমার চোখ বন্ধ। ??
রবিন—-???
ইসুয়া লজ্জায় নেতিয়ে পড়ে। দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রবিন কর্নারে টেবিলের উপর রাখা এক গ্লাস পানি নিশুয়ার মুখে ছুড়ে মারে।
নিশুয়া লাফিয়ে উঠে– Ohh no …. কি করলে ভাইয়া??
রবিন– It’s not fear শালিসাহেবা!!বউয়ের আদর নিতে দিলে না।এটুকু তো তোমার প্রাপ্যই।
রবিন চলে গেল। নিশুয়া গায়ের পানি মুছতে মুছতে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে।বেডের উপর রাখা একটা প্যাকেট দেখতে পেল।যার উপরে লেখা For নিশুয়া।
নিশুয়া প্যাকেট টা খুললো,,,একটা ব্ল্যাক গাউন।গোল্ডেনের কাজ করা।ড্রেসটা খুব পছন্দ হয়েছে নিশুয়ার।
ইসুয়া দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলে– পছন্দ হয়েছে??
নিশুয়া গিয়ে ইসুয়া কে জড়িয়ে ধরে– অনেক!!
ইসুয়া– জলদি তৈরি হয়ে নে।
নিশুয়া– আচ্ছা।
ইসুয়া আরো দুটো প্যাকেট হাতে করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। পথিমধ্যে রিদীমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ইসুয়ার। রিদীমা মাত্র ই জগিং করে ফিরেছে।
রিদীমা– Late morning ইসুয়া। ?
ইসুয়া– Morning….. এই নাও আপু।
রিদীমা– কি এটা????
ইসুয়া প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে– তোমার জন্য সেদিন নিয়ে এসেছিলাম।আজকের অনুষ্ঠানে এটা পড়বে।
রিদীমা হেসে– কোনো দরকার ছিলো না এসবের!!
ইসুয়া– অবশ্যই ছিলো।
রিদীমা– ওকে,আজ তোমাকে পার্লার থেকে সাজাতে আসার কথা না??
ইসুয়া– হুম।??
রিদীমা– ফ্রেশ হয়ে তুমি কিছুক্ষণ রেস্ট কর।
ইসুয়া– মারিয়া আপু যে আসবে আমরা তো জানতাম না তাই ওনার জন্য কিছু নেওয়া হয় নি।
রিদীমা– সমস্যা নেই, আমি ওর জন্য ড্রেস কালকেই নিয়ে এসেছি।
ইসুয়া একটা বড় নিঃশ্বাস টেনে– বাঁচালে আপু!অনেক টেনশনে ছিলাম।??
রিদীমা– এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।তুমি আজ Chill থাকো,,নয়তো চেহারায় মলিনত্ব দেখা দিবে।
রিদীমা ইসুয়া কে কিছু ইনস্ট্রাকশন দিয়ে চলে গেল।ইসুয়া ড্রয়িং রুমে গিয়ে শুভ আর নয়নকে খুঁজতে লাগলো।
ইসুয়া রহিমাকে ডেকে– তোমার রবিন ভাইজানের বন্ধু দের দেখেছো??
রহিমা– শুভ আর নয়ন ভাইজান??
ইসুয়া– হ্যাঁ। কই তারা??
রহিমা– ঐ যে কোণার রুমে বইসা আছে দুজনে।
ইসুয়া– আচ্ছা যাও।
ইসুয়া শুভ আর নয়ন যেখানে বসে আছে সেদিকে পা বাড়ায়। নয়ন ফোন ঘাটতে ব্যস্ত আর শুভ গিটারে টুং টাং আওয়াজ করছে।ইসুয়াকে দেখে দুজনে তার দিকে তাকালো,,,,
শুভ– কিছু বলবেন ভাবী????
ইসুয়া– এখানে আপনাদের জন্য পাঞ্জাবি রাখা আছে।আজ পড়বেন।
নয়ন– অনেক ধন্যবাদ।
শুভ– ঘোষ দিচ্ছেন????
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে– কিসের ঘোষ????
শুভ– যাতে আজ বাসরঘরে disturb না করি??
নয়ন– তাইলে তো এই ঘোষ গ্রহণযোগ্য নয়।??
ইসুয়া লজ্জা পেয়ে প্যাকেট টা বিছানার উপর রেখে চলে যেতে লাগলে পেছন থেকে শুভ চিল্লিয়ে বলে,,
শুভ– সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা রেখেছি আজ।নিস্তার নেই,,,, Live telecast হবে সব।???
শুভ আর নয়ন উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। রবিন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ততক্ষণে,,,,
রবিন– আমাকে বলিস বল।আমার লাজুকলতা বউটাকে এমনি লজ্জা দেওয়ার কি দরকার দোস্ত!!
শুভ– ????
————————————————————
স্বাদ রেহানা বেগম রিদীমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে,,,
রেহানা বেগম– কিরে চল!এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি??
স্বাদ– রিদের সামনে যেতে কেমন লাগছে !!??
রেহানা বেগম– কেমন লাগছে মানে??চল তো।
স্বাদ– সেদিনের পর আজ আবার ওর মুখোমুখি। কখনোই এতটা রিয়েক্ট কারোর সাথে করিনি,,,রিদের সাথে সেদিন যেটা করেছি।
রেহানা বেগম– সে বন্ধু দের মাঝে একটু আধটু হয়।
স্বাদ– তারপর ও!!??
রেহানা বেগম– তারপর আর কিছু না। চল তো।
স্বাদ আর রেহানা বেগম বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। বাড়িতে অনেক মানুষ গিজগিজ করছে।তার মধ্যে কেউ পরিচিত,আর কেউ একেবারেই অপরিচিত। রেহানা বেগম এবং স্বাদকে দেখে এগিয়ে আসে দিতী চৌধুরী।
দিতী বেগম– আরে কি খবর?আসুন আসুন আপা।
রেহানা বেগম ও হেসে এগিয়ে যায়। স্বাদ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। দুজন মহিলা একসঙ্গে আলাপ করা শুরু করলে পাশের তৃতীয় ব্যক্তির কথা কারোর ই মাথায় থাকে না। স্বাদ বেচারার ও হয়েছে সেই দশা।তাই মা আর দিতী বেগমকে রেখে অন্য দিকে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
পিছন থেকে কারো ডাকে চমকে উঠে স্বাদ,,,,
মারিয়া– Hlw ডক্টর আহসান!!??
মারিয়া একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে।মাঝ বরাবর লম্বা করে সিথি টেনে খোঁপা করেছে।দুহাতে দুগাছা চুড়ি। কপালে লাল টিপ।চোখে কাজল।একেবারে বাঙালি বাঙালি সাজ।
স্বাদ অবাক হয়ে– আপনি????
মারিয়া– আজ দুদিন এখানেই আছি,বাংলাদেশে পরিচিত কেউ নেই তো।
স্বাদ– ওহ আচ্ছা।
মারিয়া– কেমন আছেন??
স্বাদ– ভালো।বাংলা টা দারুণ ভাবে জব্দ করেছেন দেখছি।
মারিয়া হেসে– ঐ একটু।
স্বাদ আর কথা বাড়ালো না। তার চোখ দুটো খোঁজে চলেছে অন্য কাউকে।যা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মারিয়া ও স্পষ্ট বুঝতে পারছে।
চৌধুরী মেনশনে পা রাখে শাহেদ আর শিলা। শিলা চোখ বন্ধ করে ভাইয়ের বাহু খামচে ধরে,,
শাহেদ– এত ভয়ের কি আছে????
শিলা– অনেক বছর পর এলাম তাই না ভাইয়া।
শাহেদ– হ্যাঁ,,একটু রিলেক্স মোডে চলাফেরা কর।কেউ খেয়ে ফেলবে না।
শিলা আস্তে করে বললো– হুম।??
শাহেদ আর শিলা এগিয়ে আসে বাড়ির ভিতরে।ওদের দুজনকে দেখে সিনথিয়ার কপালে ভাঁজ পড়ে। মূহুর্তের মধ্যে রেগে উঠে সে।সাথে ই বসে আছেন দেলোয়ার খান। মেয়েকে রেগে যেতে দেখে মুচকি হাসেন তিনি।
সিনথিয়ার হাতে হাত রেখে বললেন– Be cool…. মামণি!আজ এতকিছু ঘটতে চলেছে।ওরা কেন বাদ যাবে?ওরা ও দেখুক,,উপভোগ করুক।??
সিনথিয়া বাবার কথায় শান্ত হল।দেলোয়ার খান মনে মনে সব হিসাব কষে নিচ্ছেন। ইসুয়ার বাবা মা এসে গেছেন।একে একে সব মেহমান উপস্থিত। স্বাদ, রেহানা বেগম, শাহেদ,শিলা,শুভর পরিবার।সবাই কথা বলছে, আড্ডা দিচ্ছে।
রবিন তার স্পেশাল গ্যাং এর ছদ্মবেশী 5 জন ওয়েটারকে বারবার খেয়াল রাখতে বলছে সবার নিরাপত্তার।তারা সকলেই যার যার অবস্থানে প্রস্তুতি নিয়েই আছে।শাহেদ রবিনের দিকে এগিয়ে এলো,,
শাহেদ– সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো?
রবিন– সবকিছু ঠিক আছে।চিন্তার কিছু নেই।
শাহেদ– বললেই হয়ে গেল না।আজ তো কিছু একটা হবেই,কিন্তু কি হবে ধারণা করতে পারছি না আমরা কেউ।তাই যতটুকু সম্ভব চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে।
রবিন– Hmmm….??
নিশুয়া ইসুয়া আর রিদীমা উপর থেকে নিচে নেমে আসছে।নিশুয়াকে তার black গাউনটাতে বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে। রিদীমার পরনে blue গাউন আর কানে দুটো Diamond টপস পড়া।হালকা সাজ।অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিনজনের হার্টে ফুটো করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
নয়ন শুভর দিকে তাকিয়ে– দোস্ত চোখ গুলো কোটরের ভেতরে নে,নয়তো কেউ কাবাব মনে করে খেয়ে ফেলবে।
শুভ– আমার এই বাজে স্বভাব কোন দিন যাবে না??
স্বাদ আর শাহেদ রিদীমাকে দেখছে।কারো কোনো রিয়েকশ নেই।কারণ রিদীমাকে দেখার পারমিশন থাকলেও তাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা করার কোনো অধিকার রিদীমা তাদের দেয়নি।
ইসুয়া গাঢ় মেরুন কালারের একটা গর্জিয়াস কাজ করা জামদানি পড়েছে।আজ সকালেই রবিন তাকে এই শাড়িটা দিয়েছে।অনেক খোঁজ নিয়ে দুদিন ধরে এমন সুন্দর একটা শাড়ি যোগাড় করতে পেরেছে রবিন। ইসুয়ার গায়ের রঙের সাথে শাড়ির রঙ টা ভালোই মানিয়েছে। gold এর গহনা দিয়ে ইসুয়া কে সাজানো হয়েছে। একেবারে অপরূপ লাগছে।রবিন বেচারা হা হয়ে আছে ।
আফজাল সাহেব– Ladies and gentleman… আজ এই আনন্দ আসরের আয়োজন করা হয়েছে আমার একমাত্র ছেলে রবিন চৌধুরীর উদ্দেশ্যে।
সবাই আফজাল সাহেবের কন্ঠে তার দিকে ফিরে তাকালেন।আফজাল সাহেব আবারো বলতে লাগলেন,,
আফজাল সাহেব– আমার একমাত্র ছেলে রবিন চৌধুরীর সাথে আমার বাল্য বন্ধু তারেক তালুকদারের বড় মেয়ে ইসুয়া তালুকদারের বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি কিছু দিন আগে।নানা ব্যস্ততায় আমরা বিয়েটা আনুষ্ঠানিক ভাবে করতে পারিনি,,তাই আজ ছোটখাটো একটা রিসেপশনের আয়োজন করেছি।সবকিছু মিলিয়ে let’s enjoy guy’s……???
শিলা সুরাইয়া খানকে দেখে তার আবেগ সামলাতে পারলো না।সুরাইয়া খান অশ্রুসজল চোখে চেয়ে আছে তার মেয়ের দিকে।পেটে না ধরলেও শিলাকে তার মেয়ে হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন তিনি।শিলা ছোটবেলায় যতটা না তার বাধ্য ছিলো ততটা বাধ্য তার গর্ভে ধারণ করা সিনথিয়া ও ছিলো না।
শিলা সুরাইয়া খানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো,,,,
শিলা — মা????
শাহেদ শিলার হাত ধরে আটকায় — একটু অপেক্ষা কর বোন,,,,মায়ের সাথে দেখা করার সময় তো চলে যাচ্ছে না??
রিদীমা ইসুয়ারা ততক্ষণে নিচে নেমে এসেছে। হঠাৎ সারা বাড়ির লাইট অফ হয়ে গেল।শিলা শাহেদের এক হাত জড়িয়ে ধরে রাখে।
শাহেদ– এই লাইট টা অফ হল কেন হঠাৎ??
স্বাদ অন্ধকারে আশেপাশে তাকিয়ে– Miss মারিয়া!!আছেন????
না,মারিয়ার কোনো সাড়াশব্দ নেই। স্বাদ দু পা সামনে গিয়ে আন্দাজ করে রেহানা বেগমের উদ্দেশ্যে,,,
স্বাদ– মা ! তুমি ঠিক আছো।
রেহানা বেগম — তুই কোথায়?অন্ধকারে কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।
স্বাদ– নাড়াচাড়া করো না, যেভাবে দাঁড়িয়ে আছো সেভাবেই থাকো।
রেহানা বেগম– আচ্ছা।??
রবিন, শুভ আর নয়ন একে অপরের উদ্দেশ্যে ….
রবিন– মোবাইলের টর্চ অন কর।
নয়ন– আমার ফোন উপরে চার্জে দেওয়া।
রবিন পকেট থেকে ফোন বের টর্চ অন করতে যাবে তার আগেই শুভ চিল্লিয়ে উঠে,,,
শুভ– Ohh shit …… রিদীমা??
রবিন জলদি করে আলো জ্বালবে ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে দুটো গুলির শব্দে নিঃস্তব্দময় রুমটা কেঁপে ওঠে।
শুভ জলদি এগিয়ে যায়, পাশেই দৌড়ে কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তাকে হাতের কাছের ফুলদানি দিয়ে আঘাত করে রিদীমার দিকে এগিয়ে যায়।
নয়ন আর অন্যান্যরা মিলে বাড়ির লাইটের ব্যবস্থা করে ফেলেছে ততক্ষণে। লাইট জ্বলতেই দুটো শরীরকে সবাই মেঝেতে দেখতে পেল।একটা শরীর গুলিতে আহত হওয়া রিদীমার,,যেটা শুভর কোলে ঢলে পড়ে আছে আর অন্য শরীরটা ……………
____________________________(চলবে)