#senior_life_partner
পর্ব– 4
Afrin Ayoni
Good morning,ম্যাম।
ইসুয়া– সুপ্রভাত সকলকে।
ইসুয়া ক্লাসরুমে ঢুকে কথাটা বলতে বলতে চেয়ারে বসলো।
ইসুয়া সবাই কে বাংলা ব্যাকরণের কিছু নিয়ম বুঝাতে বোর্ডে লিখার জন্য চক বাক্সে হাত দিলো।হঠাৎ ই চকের বাক্সে কিছু নড়ে চড়ে উঠে। ইসুয়া প্রথমে একটু ভড়কে গেলে ও চিৎকার করে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলো না। কারণ কোনো টিচার কে স্টুডেন্টদের সামনে চিল্লাচিল্লি করা শোভা পায় না।
চক বাক্স থেকে হাত উঠিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে চেয়ারে বসে দুমিনিট নীরবতা পালন করলো সে।তারপর সামনে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো এই কাজটা কার?
পিছনে বসা কয় জোড়া মুখের শয়তানি হাসি ইসুয়ার অভিজ্ঞ চোখ দুটো ধরে ফেললো।মনে মনে সে ও পরের কৌশল টা মাথায় সেট করে নিল।
ইসুয়া– চল guy’s… আজ তোমাদের সাথে একটা মজার খেলা খেলি।শুধু পড়াশোনা করলে সবাই ই বোরিং হয়। so, পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের ও প্রয়োজন। কি বল?
সবাই মাথা নেড়ে সায় দেয় ইসুয়ার সাথে।
নয়ন — কি রে ? আমার কানে কি ঠাডা পড়ছে?
শুভ — মানে?
নয়ন– চিল্লানি ফাল্লানি কিছু শুনলাম না।
তমা — আমি ও বুঝতেছি না।কি হল?তোরা সবকিছু ঠিকঠাক মত করছিলি তো?
নয়ন — আমি নিজে সব ব্যবস্থা করে রাখছি।
শুভ — আমি ও তো দেখলাম।
তমা– তাইলে ঐ শাকচুন্নির কোনো রিয়েকশ নেই কেন?
শুভ — চুপ যা। নয়তো আবার কি না কি করে ?
রবিন ধমকে উঠে,”রোজ তোদের এই ফিসফিসানির জন্য ক্লাসে মন দিতে পারি না। চুপ হবি নাকি উঠে সামনে চলে যাব,বাল।”
তমা মুখ বেকিয়ে,”আইছে আমাদের বিদ্যাসাগরের বাপ”
শুভ — বইন চুপ হ ।
নয়ন — ব্যাপারটা তো কিছু ই বুঝতেছি না। চকের বাক্স কি পাল্টে গেল?
শুভ — হবে হয় তো।
রবিন আবার চোখ গরম করে পিছনে তাকিয়ে, “কি নিয়ে এত গবেষণা করছিস?”
শুভ — কিছু না দোস্ত।
রবিন– তাইলে মুখে পটল দিয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর।
ইসুয়ার কথায় সবাই কৌতূহলী হয়ে নড়েচড়ে বসলো।
ইসুয়া– সকলেই আমার কথামতো কাজ করবে।একটুও হেরফের করা যাবে না। ওকে??
সকলে চিল্লিয়ে — Ok ম্যাম।
ইসুয়া– সবাই চোখ বন্ধ কর।No চিটিং।
সকলে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে চোখ বন্ধ করলো।
ইসুয়া– সবাই যার যার ডান হাত টা সামনে রাখো।
তমা তুলিকে ছোট ছোট করে বললো,”কিরে কি করবে বুঝতেছি না তো।”
তুলি — আমি ও।
ইসুয়া– রেখেছো??
সবাই জোরে বললো,yes……
ইসুয়া– আমি তোমাদের সকলের হাতে কিছু একটা দিব , সেটা হাতে দেওয়ার সাথে সাথে এক সেকেন্ড ও দেরি করবে না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলবে।Done ??
সবাই— Done ….
ইসুয়া চক বাক্সে থাকা জিনিস গুলো এক এক করে দিল । আর সকলেই ইসুয়ার কথা মত কাজ করলো ।
ইসুয়া– এবার সকলে চোখ খুলো আর একজন একজন করে নিজের হাতে থাকা জিনিসটির নাম বল!
সবাই চোখ খুলে হাতে থাকা জিনিসটিকে দেখে কেউ কেউ লাফিয়ে উঠল, কেউ চিৎকার করে উঠলো আর কারো তো বমির বেগ চলে এসেছে।
তমা– ছি,ইয়াক।কেঁচো …….??
শুভ — ওমাগোওওওওও, ককরোজ।??
নয়ন — টিকটিকি ???
সকলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।রবিন তখন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”এটা কেমন অভদ্রতা?”
ইসুয়া মুচকি হেসে, “আর আমি যদি বলি এত irresponsible student তোমাদের মত এই ভার্সিটিতে অন্য কোনো ছাত্র ছাত্রী নেই,তবে?”
রবিন– মানে??
ইসুয়া– মানে হচ্ছে একজন টিচার ক্লাসরুমে ঢোকার আগে তার ব্যবহৃত সকল কিছু তোমরা স্টুডেন্টদের দেখে রাখার দায়িত্ব নয় কি?
রবিন– আপনি কি বলতে চাইছেন?
ইসুয়া একটা বই তুলে ধরে বললো,”এটা বাংলা সাহিত্যের বই।এটা ছাড়া আমি কি হাতে অন্য কিছু নিয়ে এসেছি ক্লাসরুমে?”
সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। আসলেই কেউ ইসুয়ার হাতে এই বইটা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আসতে দেখেনি।
রবিন ব্যাপার টা বুঝতে পারে।সবার মুখ ছোট হয়ে যায় ইসুয়ার সামনে।
ইসুয়া– আজকে সবকিছুর ছাড় দিলাম।ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের মজা করলে বুঝতেই পারছো কি হবে।আজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছি।ঐদিন মুখে ফুরে দিব।ফাজিলের দল।
রবিন– সরি ম্যাম।
প্রায় সকলে ইসুয়া কে সরি বলে আর কথা দেয় এরকম গাফিলতি আর কখনো হবেনা। টিচার দের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস সবাই দেখেশুনে রাখবে।
নয়ন শুভ কে ইঙ্গিত করে — Over smart মহিলা। বাঁশ টা উল্টা ফেরত দিল।
রবিন পিছনে ঘুরে শুভ আর নয়ন কে বলে — সব তোরা করেছিস।আর বকা খেল সবাই। কখনো আর এরকম করেছিস তো ওনার আগে আমি খবর নিব তোদের।
ইসুয়া তার ক্লাস টাইম শেষ হওয়ার পর বেরিয়ে গেল।
সামনে থাকা একজন মেয়ে বলে উঠলো– আমি ইসুয়া ম্যামের মত হতে চাই।কি সুন্দর সবকিছু হ্যান্ডেল করে ফেলে….. just awesome…
আরেকজন– যেমন সাহস তেমন বুদ্ধি।
তমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। কিছুতেই কিছু করতে পারছে না। না,আর ক্লাসে কিছু করা যাবে না। যা করার বাইরে করতে হবে।তারপর ও হাল ছাড়বে না সে।
ইসুয়া দুপুরে ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে ছিল।একটা স্যান্ডউইচ আর এক কাপ কফি অর্ডার করেছে।
Hi ম্যাম।
ইসুয়া সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে দুটি কে পরখ করে,, “yes….”
মেয়ে দুটি– বসবো?
ইসুয়া– Sure …
আমি কনক আর ও দীপ্তি।
ইসুয়া– বুঝলাম।
কনক — আপনার সকল behaviour আমার খুব পছন্দ। আমি কি আপনার friend হতে পারি , plz ম্যাম।
ইসুয়া– student এসেছে teacher এর কাছে friend হতে??
দীপ্তি — কেন?হওয়া বারণ নাকি?
ইসুয়া– তা না ।একটু অবাক হলাম আর কি?
কনক — বন্ধু বানিয়ে নিন না ম্যাম, প্লিজ।
ইসুয়া খানিকটা হেসে, “Ok ok … শুধুমাত্র ক্লাসের বাইরে।ক্লাসরুমে নয়।”
দীপ্তি — ঐটুকুই চলবে।No সমস্যা।
ইসুয়া– তো পরিচিত হওয়া যাক।
দীপ্তি আর কনকের সাথে ইসুয়ার ভালো ই বন্ধুত্ব হল।এমনিতেও ইসুয়া ভার্সিটিতে একা একা ফিল করে ।বন্ধুর মত কাউকে পাওয়ার সত্যি ই খুব প্রয়োজন ছিলো।
________________________
মা! তুমি ছোটদের মত এত বাহানা খোঁজে পাও কি করে বলো তো ?
রেহানা বেগম — আমি তো এখন ছোট ই তোর কাছে।
ওপপপ!আজব, বলি কি বুঝো কি?
রেহানা বেগম– দেখ স্বাদ , আমার এখন একটা জিনিস ই দরকার।
হ্যাঁ, তা তো জানি ই আমি।আমার গলায় ফাঁসির ওড়না।
রেহানা বেগম– বিয়ে করা মানে ফাঁসি?
তা নয় তো কি ?
রেহানা বেগম– আমার ছেলের বউ চাই ,আর কিছু জানি না আমি।
ছেলের বউ না বলে , বল যে ছেলের জন্য যম চাই।
রেহানা বেগম– ফালতু কথা রাখ।
তুমি এসব নিয়ে বসে থাক।আমি গেলাম,হসপিটালে দেরি হচ্ছে। এমনিতেই আজ evening shift এ একটা অপারেশন আছে।
রেহানা বেগম– যা যা।আমার কথা তো আর কানে নিবি না, এই অচেনা দেশে আর কত একা একা থাকবো আল্লাহ্ ই ভালো জানে। বাংলাদেশ হলেও কথা ছিল। এই লন্ডনে কোন বাঙালি কে খোঁজবো কথা বলার জন্য।
ওকে বাই।তুমি এগুলো ই ভাবতে থাকো।
মায়ের সাথে বউ নিয়ে কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা করে গাড়িতে উঠে বসে স্বাদ আহসান। একজন নামকরা Doctor সে।মা বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা মারা গেছেন কিছু বছর আগে।মা ছাড়া কেউ নাই।ছেলে সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় একাই থাকতে হয় রেহানা বেগম কে।তাই ছেলের বিয়ে দিতে চান।
স্বাদ মায়ের কথা ভাবছিল আর গাড়ি ড্রাইভ করছিলো। হঠাৎ গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসে।স্বাদ দ্রুত ব্রেক কষে।
স্বাদ — Ohh shit …
গাড়ি থেকে নেমে আসে স্বাদ। বিরক্ত নিয়ে, “চোখ নেই?”
রিদীমা মাথা তুলে– লাইসেন্স দেখি!
স্বাদ — Rid তুই??
রিদীমা ভ্রু কুঁচকে, “আমি কি আপনাকে চিনি?”
স্বাদ — বাঘিনী।আমারে ভুলে গেলি?
রিদীমা– কে?
স্বাদ — স্বাদ আহসান।
রিদীমা খানিকক্ষণ ভেবে,”সবজিওয়ালা?”
স্বাদ মুখ ফুলিয়ে– হ্যাঁ, but now i am doctor
রিদীমা– I seee …
স্বাদ — তুই এখানে?husband এর সাথে settle নাকি এই দেশে?
রিদীমা– No , I am business woman in present
স্বাদ — ওহ।তুই তো আবার বাঘিনী।কারো সাহস আছে নাকি বন্দী করার।
রিদীমা– না থাকাটাই best …
স্বাদ — Ok … drop করে দিই?
রিদীমা– No , এটা আমার workout time
স্বাদ — Ok …. আগের মতোই ফাংচুয়াল রয়ে গেছিস।
রিদীমা– Yeah , bye ….
স্বাদ — Number ও পেতে পারি না।
রিদীমা– অবশ্যই। এমনিতেই আমাদের ও মাঝে মাঝে doctor এর প্রয়োজন পড়ে।একজন doctor এর নাম্বার থাকলে ভালো ই হয়।
রিদীমা তার number টা স্বাদ কে দিয়ে নিজ গন্তব্যে পা বাড়ালো।স্বাদ ও হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে যায়।
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
ড্রয়িং রুমে বসে চিপস খাচ্ছে নিশুয়া। পাশে তারেক সাহেব বসা।দুজনে ই টিভি দেখছিলো।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল।
তারেক সাহেব– দেখ তো ! কে এলো?
নিশুয়া — নিশ্চয়ই আপু এসেছে। দাঁড়াও দেখে আসি।
নিশুয়া দরজা খুলে। ইসুয়া ব্যাগ টা নিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকে।বাবার পাশে বসে,”কি করছো?”
তারেক সাহেব– কাজ টা কি করতেই হবে?
ইসুয়া– কেন?
তারেক সাহেব– তোর বাড়তি হাতখরচ লাগলে আমায় বল।আমার কি টাকার অভাব?
ইসুয়া– বিষয় টা তা নয়।আমি শুধু টাইম স্পেন্ড করছি জবটা করে।
নিশুয়া — হুদাই বাড়তি প্যারা।আমি তো জীবনেও এমন খাটুনির কাজ করবো না।
ইসুয়া– তুই যে অলস।বিয়ের আসরে বসে বলবি আমার কবুল বলতে ইচ্ছে করছে না।
নিশুয়া — আমি এমনই।
ইসুয়া– বাবা কখন এলে?
তারেক সাহেব– এই তো সকালে।
ইসুয়া– ওকে ।আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।
ইসুয়া উপরে চলে যায়। নিশুয়া আর তারেক সাহেব বসে বসে টিভি দেখে।
ইসুয়া গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিছনে কিছু দেখার চেষ্টা করছিলো। দরজায় হেলান দিয়ে হা হা করে হেসে উঠে নিশুয়া।
ইসুয়া জলদি পিছনের দিকে জামার চেনটা টেনে দেয়।
ইসুয়া– গবেট হাসিস কেন?
নিশুয়া — দেখছিলাম ,তুই কি আপ্রাণ চেষ্টা টাই না করছিলি পিঠের সেই lucky তিলটা দেখার জন্য।
ইসুয়া– আজেবাজে কথা ছাড়।
নিশুয়া — তা তাকে খোঁজে পেলি?
ইসুয়া– কাকে?
নিশুয়া — যিনি আমার রূপসী অধ্যাপিকা বোনটার পিঠের তিলখানা উম্মেচন করেছেন।
ইসুয়া– আমি ঐ ব্যাটাকে খুঁজতে যাব কেন?
নিশুয়া — Seriously, তোর মনে হয় না তাকে তোর ধন্যবাদ দেওয়া উচিত?
ইসুয়া কিছু একটা ভাবে।সত্যি ই কি লোকটাকে খোঁজে বের করা উচিত?কিন্তু খোঁজে বের করার পর তাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে?লজ্জায় চোখ কান নাক লাল হয়ে উঠে ইসুয়ার।
_________________________(চলবে)