#Senior_life_partner
পর্ব —– 37
Afrin Ayoni
মা,তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন বলো তো????
রেহানা বেগম– তোর চেহারাটা আয়নায় দেখেছিস?একদিনে কি হাল হয়েছে।রিদীমাকে না তুই কিছু বলছিস আর না আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দিচ্ছিস।
স্বাদ– দেখ মা,,, জোর করে কাউকে পেতে চাইলে সুখী হওয়া যায় না।
রেহানা বেগম– তোর ভালবাসার কোনো মূল্য নেই??
স্বাদ– এভাবে বলবে না মা।এটা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, Fillings ছাড়া কারো প্রতি ভালো লাগা বা ভালবাসা আসে না মা।প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।
রেহানা বেগম– আচ্ছা তাহলে মারিয়া মেয়েটাকে মেনে নে।??
স্বাদ– মা কি বলছো তুমি?বুঝতে পারছো?
রেহানা বেগম– তোর জীবন আটকে থাকবে না কি??
স্বাদ– ওপপপ মা,,,,,, যাও তো প্লিজ।??
রেহানা বেগম স্বাদের দিকে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।তারপর বলেন,”আমি তো দেখছিলাম আমার ছেলেটা রিদীমা নামের মেয়েটাকে ঠিক কতটুকু ভালবাসে!!”
স্বাদ– তোমার এই বোকা সোকা , সাদাসিধে, গবেট ছেলেটা ঐ বাঘিনীকে অনেক ভালবাসে।অনেক বেশি ????
রেহানা বেগম– শোন না,আমি একবার কথা বলি রিদীমার সঙ্গে??
স্বাদ– আবার শুরু করলা তুমি??
রেহানা বেগম– একবার প্লিজ।
স্বাদ– No means noooooo…..??
রেহানা বেগম রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলেন– যা খুশি কর দুটোতে।বিয়ে তো আমি তোদের ই দিব??
এদিকে,,,,,,,,,,,,,,,,,
শাহেদ গিটারে তাল তুলতে পারছে না। খুব চেষ্টা করছে কিন্তু গিটারের সুর যেন আজ কোথাও একটা আটকে গেছে।
শিলা ঝালমুড়ি মাখিয়ে এনেছে।ভাইয়ের সামনে ঝালমুড়ির বাটি তুলে ধরে,”এই নে খা।”
শাহেদ– তুই খা,ইচ্ছে করছে না।
শিলা — আপু আজ কেন ডেকেছে??
শাহেদ– রিদীমা আগের মত একেবারেই নেই রে।??
শিলা — কিছু কি বলেছে??
শাহেদ– আমার জন্য ওর চোখে আমি ভালবাসা দেখিনি আজ।ওর চোখ পড়া আমার জন্য একেবারে কষ্টসাধ্য নয়।
শিলা — একটা কথা বলবো ভাইয়া?
শাহেদ– বল।
শিলা — এই মেয়েটা অনেক হোঁচট খেয়েছে জীবনে, একা একা অনেকটা পথ হেঁটেছে, এখন সে তার জীবনে একজন successful lady… কিন্তু তার দুঃসময়ে সে কাউকে পাশে পায়নি।তাই তার লাইফের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা তাকে নিতে দেওয়া উচিত।??
শাহেদ– এটা একেবারে ঠিক বলেছিস,হোঁচট খেতে খেতে রিদীমা অনেক শক্ত হয়ে গেছে।
শিলা — আপু তার জীবনের অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এসেছে,অনেক কঠিন মূহুর্তের মধ্যে দিয়ে গেছে।সে তার জন্য অনেক struggle করেছে।আজ অন্য সবাইকে তার সুসময়ের কোকিল মনে হবে,এটাই স্বাভাবিক।
শাহেদ আর কিছু বললো না। গিটারে আবারো টুং টাং আওয়াজ করতে লাগলো।আজ সব তাল গুলিয়ে যাচ্ছে।
———————————————————
রিদীমা বসে আছে বেলকনিতে।আজ হাতে কোনো ল্যাপটপ নেই।কাজের তাড়া নেই।আজ নিজেকে একটু সময় দেওয়া দরকার বলে মনে হচ্ছে রিদীমার। বেলকনিতে বসে আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটার দিকে তাকিয়ে আছে সে।
রিদীমা নিজে নিজে আওড়াতে থাকে — জীবনটা যেন দাবা খেলার ঘরের মত হয়ে গেছে। কোনটা রেখে কোনটাকে বেছে নিব কিছুই মাথায় ধরছে না। জ্ঞানশূণ্য হয়ে পরেছি last moment এ এসে।??
প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখলেও হাত ধরা বারণ।।
প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
আঙ্গুলে আঙ্গুল রাখলেও হাত ধরা বারণ।।
তোমায় যত গল্প বলার ছিলো
তোমায় যত গল্প বলার ছিলো
সব পাপড়ি হয়ে গাছের পাশে,ছড়িয়ে রয়েছিলো
দাওনি তুমি আমায় সেসব কুড়িয়ে নেওয়ার কোনো কারণ!!
প্রেমে পড়া বারণ
কারণে অকারণ
ঐ মায়া চোখে চোখ রাখলেও ফিরে তাকানো বারণ।।
হালকা সুরে ঠোঁট নাড়িয়ে গানের কথাগুলো উচ্চারণ করছিলো রিদীমা। তার রুমের দরজায় নক পড়তেই বেলকনি থেকে রুমে এলো সে।
রিদীমা– Come in….
রবিন দরজা দিয়ে ঢুকে — আপুনি তুমি বিজি??
রিদীমা– না বল।
রবিন– এই দুটো কার্ড বাবা তোমাকে দিতে বললো!
রিদীমা– আমাকে কেন????
রবিন– স্বাদ আর শাহেদ ভাইয়াকে invite করতে হবে না??
রিদীমা– স্বাদ কে না হয় করলাম,কিন্তু শাহেদ কি আসবে??
রবিন– তুমি invitation card দিয়ে দিও।বাকিটা দেখতেই পাবে ।
রিদীমা– Ok …… রেখে যা।
রবিন কার্ড দুটো রেখে বেরিয়ে গেল। রিদীমা মারিয়ার নাম্বারে কল দিল।কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেল।
রিদীমা মনে মনে– এই মেয়েটা যে কই? ??
তার দুই সেকেন্ড পর ই কল ব্যাক করলো মারিয়া। রিদীমা স্মিত হেসে কলটা রিসিভ করে।
রিদীমা– এতক্ষণ কল ধরোনি কেন??
মারিয়া– সরি,,পাসপোর্ট চেকিং হচ্ছে তো তাই।
রিদীমা– তুমি কি সত্যিই চলে যাচ্ছো?? ??
মারিয়া– থেকে কি করবো? একটা মানুষকে আর কয়দিন বিরক্ত করবো?আমার নিজের ও তো আত্মসম্মানবোধ বলে কিছু আছে!!
রিদীমা– নিষেধ করবো না যেতে।তবে বলবো দুটো দিন পরে যাও।
মারিয়া– Why????
রিদীমা– আমাদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে পরশু। প্লিজ এটা এটেন্ড করে তারপর না হয় যেও।
মারিয়া– কিন্তু ……..
রিদীমা– কোনো কিন্তু না।তুমি এখন কোথায়??
মারিয়া– এয়ারপোর্টে।কেন??
রিদীমা– আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি, তুমি চলে আসো এক্ষুনি আমাদের বাড়িতে।
মারিয়া– এক্ষুনি????
রিদীমা– দুটো দিন আমার সাথে কাটিয়ে যাও প্লিজ।
কিছুক্ষণ ভেবে মারিয়া জবাব দেয়– Okk…..
রিদীমা– Thank u sooo much….. just 10 minutes ওয়েট করো।আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ??
————————————————————
ইসুয়া খাটের উপর অনেকগুলো জুয়েলারি বক্স এলিয়ে বসে আছে।পাশেই দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান বসে।তখনই রবিন রুমে ঢুকলো কোল্ডিংস এর বোতলে ঠোঁট রেখে। তিনজন কে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে রবিনের।
রবিন– মা তোমরা এখানে ??
সুরাইয়া খান — তোর বউয়ের কান্ড দেখ।??
রবিন ভ্রু কুঁচকে ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– কি করেছে?
দিতী বেগম– দেখ না!আমাকে আর তোর ফুফুকে শাড়ি আর গহনা দিয়ে বলছে এসব আমাদের জন্য, পরশু যাতে পড়ি।
রবিন– তো কি হয়েছে??
সুরাইয়া খান — আমরা এখন বুড়ি হয়ে গেছি।এসব আমাদের মানায়।এত সাজগোজ??
রবিন– শাড়ি আর গহনা ই তো।এসব তো অনুষ্ঠানে সব বয়সী মহিলাই পড়ে।এ আর এমন কী!!
সুরাইয়া খান — কেবল শাড়ি গহনা হলে তো হতোই।
রবিন– মানে????
সুরাইয়া খান — ওদিকে দেখ।
দিতী বেগম– এগুলো দিয়ে নাকি কাল আমাদের সাজতে হবে।
রবিন– হাহাহাহা হা হা হা ??????
সুরাইয়া খান — তুই হাসছিস??
রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– এগুলো কী??
ইসুয়া এগিয়ে এসে– কেন?দেখতে পাচ্ছেন না!মেকআপ, লিপস্টিক আর……….??
রবিন– এগুলো মা আর ফুফুকে কেন দিচ্ছো??
ইসুয়া– আমি এগুলো আলাদা করে আন্টিদের use করার জন্য এনেছি।পরশু এগুলো দিয়ে সাজবে।
রবিন—??????
ইসুয়া কপাল কুঁচকে– হাসছেন কেন??
রবিন– Good job….. এমনিতেই হাসলাম।
দিতী বেগম– তুমি যা ই বল বউমা,আমি এসব আটা ময়দা সুজি মাখতে পারবো না।
সুরাইয়া খান — আমি ও।??
ইসুয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান বেরিয়ে গেল। ইসুয়া তাদের পিছু পিছু বের হতে নিবে তার আগেই রবিন পিছন থেকে ঝাপটে ধরে তাকে।
ইসুয়া– আরে করছেন কী? চলে গেল তো।ছাড়ুন আমাকে।
রবিন– চলে যাক।
ইসুয়া– ছাড়ুন বলছি।??
রবিন– এত ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন বলো তো????
ইসুয়া চুপ হয়ে যায়। রবিন ইসুয়ার এলোমেলো চুলগুলো খোঁপা করে দেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়।
ইসুয়া রবিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে খাটের উপর বসে।
ইসুয়া– দেখুন তো এই শাড়িটার সাথে পরশু কোন গহনা গুলো পড়বো??
রবিন– এসব মেয়েলি ব্যাপার।আমি কি জানি??
ইসুয়া– আচ্ছা!নিশুয়াকে কাল নিয়ে আসুন না ।
রবিন– ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো।আমি কাল ওকে সোজা স্কুল থেকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবো বিকেলে। জানিয়ে রেখো তো ওবাড়িতে।
ইসুয়া– হুম।
রবিন– এই Miss. অধ্যাপিকা!!
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে — কী??
রবিন– একটা kiss????
ইসুয়া– ছিঃ নির্লজ্জ।
রবিন– আমি তোমার husband….?
ইসুয়া– তাই বলে এসব??
রবিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে– Husband কে kiss করা সওয়াব
ইসুয়া–??????
রবিন– husband কে আদর করা ফরজ, আদর করতে দেওয়া ফরজ
ইসুয়া– আজ কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন??
রবিন আমতা আমতা করে– না আসলে মানে।??
ইসুয়া– নামাজে ও ফরজ আছে,ঐগুলা কে পালন করবে শুনি??
রবিন– কাল থেকে পড়বো নিয়মিত। তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিও।
ইসুয়া– ওকে ????
__________________(চলবে)
[রিদীমার মিল একজনের সঙ্গেই হবে,কিন্তু যে সিঙ্গেল থাকবে তার সাথে অন্য কারো ঝুঁটি বাধা হবেনা। সব চরিত্রের মিল হওয়া বিশেষ জরুরী নয়।]