Senior life partner পর্ব ৩৪

0
1520

#Senior_life_partner
পর্ব ——- 34
Afrin Ayoni

শাহেদের ডাকে পিছনে ফিরে তাকাল স্বাদ। রিদীমা পিছনে ফিরলো না।থমকে দাঁড়ালো শুধু। ওইরকম পিছনে ফেরার অভ্যাস সে অনেক আগেই ত্যাগ করেছে।

স্বাদ– problem কি তোর????

শাহেদ– দেখ তোর সাথে ঝামেলা করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি শুধু রিদীমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।

রিদীমার দিকে এগিয়ে যায় শাহেদ। স্বাদ অপলক তাকিয়ে থাকে।শাহেদ রিদীমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো — “আমার সঙ্গে দু কাপ কফি খাওয়ার সময় হবে তোদের প্লিজ।”??

রিদীমা স্বাদের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে।শাহেদের মুখে হাসি ফুটে উঠে।রিদীমা,স্বাদ আর শাহেদ কাছের একটা কপিসপে ঢুকলো।

তিন বন্ধু, আবারো সেই কপি হাউজ,শুধু সম্পর্ক গুলো আগের মত নেই,পাশে নেই বই,মুখে সেদিনের দুষ্টুমির হাসি গুলো আজ পরিণত হয়েছে প্লাস্টিকের হাসিতে।সবাই যেন এক একটা যন্ত্র!!

শাহেদ ওয়েটারকে ডেকে– একটা cold coffee, একটা black coffee & কড়া করে এক কাপ চা।

রিদীমা– No cold coffee….. গ্রীণ টি।??

শাহেদ হা করে তাকিয়ে আছে। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে যায়।

শাহেদ — Cold coffee ছাড়লি কবে??

রিদীমা– জীবনের প্রয়োজনে অনেক কিছুই ছাড়তে হয়।

স্বাদ– সবার ই টেস্ট বদলায়।

শাহেদ — খুব পরিবর্তন হয়েছিস দুজনে।

স্বাদ– তা তো বটেই।

রিদীমা– তা CID তে জয়েন করলেন কবে থেকে Special officer শাহেদ শাহরিয়ার??

শাহেদ– ???

স্বাদ– আইনের লোক হয়েও ঠকিয়ে বেড়াচ্ছিস সবাইকে??

শাহেদ– আমি এতদিন secret officer ছিলাম বিধায় বিষয়টা সকলের কাছ থেকে লুকাতে হয়েছে।

রিদীমা– তারপর??

স্বাদ– এটা না হয় ডিউটির অন্তর্ভুক্ত ছিলো,কিন্তু সে দিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি??

শাহেদ– সেটা বলার চেষ্টাই করছি,তোরা সুযোগ দিচ্ছিস কই??

রিদীমা– তুই তোর চান্স হারিয়ে ফেলেছিস।

শাহেদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে– এভাবে বলিস না!??

রিদীমা– তো কিভাবে বলা উচিত শিখিয়ে দিবি প্লিজ??

স্বাদ নিশ্চুপ। শাহেদ বলে উঠলো — তুই অনেক কঠিন হয়ে গেছিস প্রিয়দর্শীনি।

রিদীমা– ততটা নরম ও ছিলাম না আগে।

শাহেদ– তবে আগের চেয়েও অনেকটা …….

স্বাদ– প্লিজ তুই এখন রিদের ক্যারেকটার সার্টিফিকেট নিয়ে বসিস না।??

শাহেদ– তা দুজন কি এই তেজ টা শুধু আমার উপরই apply করছিস??

স্বাদ– কি বলতে চাস?? ??

শাহেদ রিদীমার দিকে তাকিয়ে– বাইরের দুনিয়াতে রিদীমা চৌধুরীর দাপট তো খুব।ঘরের ভিতরের criminal ধরতে এত সময় লাগে??

স্বাদ– তোর মত চোর পুলিশের চাকরি না আমাদের।

শাহেদ– তা না হয় বুঝলাম,কিন্তু আপনার রিদকে হিসাব করে বলতে বলুন যে তার ঠিক কয়টা সিক্রেট গ্রুপ আছে এই দেশে। ??

রিদীমা– এসব গ্রুপ আমার নিজের নিরাপত্তার জন্য। এটা নিয়ে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।

স্বাদ শাহেদের দিকে তাকিয়ে– তোর জবাব পেয়েছিস?

শাহেদ– এত বকবক ফুটছে কি করে তোর মুখে হারামি,বিদেশ থেকে পালিয়ে এসেছিস সামান্য একটা মেয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য। ছিঃ! ??

স্বাদ– So what…… আমার ইচ্ছা।

শাহেদ– তা না হয় বুঝলাম।

রিদীমা– Wait wait ঘরের criminal মানে????

শাহেদ ভ্রু কুঁচকে– it’s a top secret madam…. বলা যাবে না। খুব শীঘ্রই দেখতে পাবেন।

এভাবে মান অভিমানের পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে তিন বন্ধুর কথা।

……………………………………………………….

ইসুয়া ভার্সিটি শেষ করে বাড়িতে ফিরেছে।রুমে ঢুকতেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রবিন। খালি কাঁধে ঠোঁট রাখে ইসুয়ার। ইসুয়ার চোখ দুটো ছানাবড়া।চেঁচিয়ে উঠে সে।

ইসুয়া– এই এই কি করছেন?ছাড়ুন।

রবিন– সবে তো শুরু।এখনই এত বিরক্ত হয়ে গেছেন?

ইসুয়া– আগে বলুন আপনি ভার্সিটি থেকে কখন আসলেন? কত খুঁজেছি আমি আপনাকে!!??

ইসুয়াকে জড়িয়ে ধরা হাত দুটো আলগা হয়ে এলো রবিনের।

রবিন আমতা আমতা করে বললো– আসলে আসলে আপুনি তো আজ অফিস থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলো তাই অফিস সামলাতে জলদি চলে আসতে হয়েছিল।

ইসুয়া কাঁধের হাতব্যাগ টা রাখতে রাখতে বললো — ওহ্।আমি আরো ভাবলাম………??

রবিন কপাল ভাঁজ করে– কি??

ইসুয়া– মেয়েদের সাথে ইটিসপিটিস করছেন কোনো চিপায় চাপায় বসে।

রবিন– What ইটিসপিটিস, what চিপাচাপা??

ইসুয়া– Nothing……??

ইসুয়া ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে আর উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।সেই হাসির আওয়াজ রবিনের কানে যেতেই চিল্লিয়ে উঠে রবিন।

রবিন– Miss. অধ্যাপিকা বের হন খালি ওয়াশরুম থেকে। আজ তো আপনার খবর আছে!!

ইসুয়া– কচু করবেন।

হঠাৎ সিনথিয়া এলো রবিনের কক্ষে। সিনথিয়াকে দেখে রবিন জিজ্ঞেস করলো,,,

রবিন– তুই এখানে??

সিনথিয়া ছুটে এসে রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে– মিস করছিলাম তোমাকে।

রবিন– ছাড়,,গায়ে পড়া স্বভাবটা এবার ছাড়।

সিনথিয়া– তোমার থেকে দূরে যেতে ইচ্ছে ই করে না।

রবিন ঝটকা মেরে সিনথিয়ার হাতটা সরিয়ে দিয়ে — আমার বউ দেখলে মারবে,দূরে যা।??

ইসুয়া তখন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছিলো।সিনথিয়াকে দেখে বলে উঠলো — কি গো ননদিনী?ভাইয়ের ঘরে হঠাৎ?

সিনথিয়া– কিসের ভাই?রবিন আর আমি সমবয়সী।

ইসুয়া– তাতে কী?সম্পর্কে তো ভাই ই হয় তোমার।

রবিন– Exactly ??

সিনথিয়া গোমড়া মুখে বললো — এমনিতেই এসেছিলাম।??

কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল সিনথিয়া। ইসুয়া মুচকি হেসে ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়ার জন্য বেরোতে যাবে তখনই রবিন ইসুয়াকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।

ইসুয়া হকচকিয়ে গেল– এই এই আপনার হুটহাট করে জড়িয়ে ধরার ব্যামো আছে নাকি????

রবিন– না তো।আমার তো বউ রোগ।

ইসুয়া– ফাজিল কোথাকার!ছাড়ুন বলছি।নয়তো ভিজে ওড়না দিয়ে গলা পেঁচিয়ে মেরে ফেলবো।

রবিন– তাই করো বউ।অল্প অল্প করে মারার চেয়ে ও একেবারে মেরে ফেল । রেহাই দাও…….. ??

এইদিকে দেলোয়ার খান দুদিন পর ফিরলেন চট্টগ্রাম থেকে। তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকতে যাবেন তখনই স্ত্রী সুরাইয়া খানের সাথে ধাক্কা খেলেন।হাত থেকে পড়ে গেল পুটলিটা।অনেক গুলো চকচকে জিনিস সারা ঘরের মেঝেতে ছিটিয়ে পড়ে।

দেলোয়ার খান ঘরের দরজা লক করে দিল সঙ্গে সঙ্গে। সুরাইয়া খান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দেলোয়ার খান চকচকে জিনিস গুলো একটা একটা করে কুড়াচ্ছেন।সুরাইয়া খানের পায়ের কাছে একটা পড়েছিল,সেটা তিনি তুলে হাত দিয়ে চোখের সামনে ধরে পরখ করে দেখে স্বামীর দিকে তাকালেন,,,

সুরাইয়া খান — Diamond?????

দেলোয়ার খান– আস্তে বল,কেউ শুনতে পাবে।

সুরাইয়া খান — কোথায় পেলে এসব? কি করো তুমি?

দেলোয়ার খান– বললাম না আস্তে কথা বল,,দেয়ালের ও কান আছে।??

সুরাইয়া খান — তুমি কি করো বলবে আমায়??

দেলোয়ার খান– তুই আমার কাছে কৈফিয়ত চাচ্ছিস??

সুরাইয়া খান স্বামীর ধমকে শিউরে উঠেন।

দেলোয়ার খান– দেখেছিস বাপের জন্মে এত হীরে?
শোকর কর আমার কাছে দেখছিস।??

সুরাইয়া খান — তুমি কি স্মাগলিংয়ে যুক্ত।

দেলোয়ার খান হাসতে হাসতে বলেন — অন্য সবার কাছে স্মাগলিং হলেও আমার কাছে এটার মানে ব্যবসা।রাতারাতি বড়লোক হওয়ার ব্যবসা।

সুরাইয়া খান — বয়স তো অনেক হল।এবার এসব পাপকাজ ছাড়ো।

দেলোয়ার খান রেগে — জ্ঞান না দিয়ে এক কাপ চা নিয়ে আয়। যা ………….??

সুরাইয়া খান কথা বাড়ালো না, কারণ তিনি জানেন কুকুরের লেজ কখনো সোজা হবার নয়।এবার শুধু শাস্তি পাওয়ার পালা।রুম থেকে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।

_________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here