#Senior_life_partner
পর্ব—-30
Afrin Ayoni
ইসুয়া রহিমার সাথে ব্রেকফাস্ট রেডি করে ড্রয়িং রুমে বসেই সবার জন্য অপেক্ষা করছিলো।রহিমা তাকে এই বাড়িতে কে কেমন ধাঁচের লোক এসব বলছিলো আর ইসুয়া রহিমার কথায় হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। রহিমার কথার ধরন অনুযায়ী ,,,,,
রহিমা — ছোড ভাবীসাব, আমাগো বড় স্যার অনেক ভালা মানুষ তাই তার কপালে জুটছে ও আমগো বড়মার মতন এক্কেরে খাটি সোনা।
তয় আন্নে আর রবিন ভাইয়ের জোড়াও কিন্তু হেব্বি, মাশল্লাহ্ ….??
রহিমার কথায় কাশতে লাগলো ইসুয়া। রহিমা আবারো বলতে থাকে– কিন্তু ভাবীসাব আরেকখান কথা!!
ইসুয়া ভ্রু উচিয়ে– কী????
রহিমা — এই বাড়িত সিনথিয়া আপা আর বুড়িডা আছে না, এক নম্বরের শয়তানের শয়তান। হারাক্ষণ খালি কুট কাচালি নিয়া পইড়া থাকে।
ইসুয়া চারদিকে তাকিয়ে– আরে রহিমা আস্তে বল।??
রহিমা ও সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে– আরে কেউ নাই,হুনবো না। ঐ দুইডারে বাঁশ দেওয়ার লাগি আমগো বাড়িত বড় মেডম আছে না??
ইসুয়া– বড় মেডম????
রহিমা — আরে রিদীমা আপা গো।খালি হেই পারে দুইডারে সামাল দিতে।আস্ত বদমাইশি দুইডার মধ্যে।
ইসুয়া– আরে রহিমা আস্তে বল , মেরি মা??
ইসুয়া আর রহিমার কথা চলাকালীন সময়ে বাড়িতে ঢুকলো রিদীমা। পিছনে স্বাদ আর রবিন। ইসুয়া এগিয়ে যায় রিদীমার দিকে।
রিদীমা– Good morning….
ইসুয়া– Good morning আপু।
রিদীমা– এই দেখ তো অতিরিক্ত খাবার আছে কিনা??
ইসুয়া– কেন আপু????
রিদীমা স্বাদের দিকে তাকিয়ে– রাস্তা থেকে একটা এতিম তুলে নিয়ে এসেছি।কিছু খাইয়ে বিদায় করো??
স্বাদ– বাড়িতে নিয়ে এসে এভাবে অপমান করছিস??
রবিন– ছাড়ো তো আপুনির কথা।তুমি এসো ভাইয়া, বসো এদিকে।
ইসুয়া রিদীমার দিকে এগিয়ে, ফিসফিসিয়ে বললো– উনি কে আপু????
রিদীমা– আমার bestfriend….
ইসুয়া– ওহ্
রিদীমা– আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি, ততক্ষণ তুমি এদিকটা সামলাও।
ইসুয়া– ওকে।
রিদীমা চলে গেল উপরে।ইসুয়া দুই কাপ কফি নিয়ে এগিয়ে এল স্বাদ আর রবিনের দিকে।স্বাদ ইসুয়াকে পা থেকে মাথা অবধি পরখ করে নিল। তারপর ভ্রু নাচিয়ে রবিনকে বললো — কে উনি????
রবিন– বাড়ির নতুন কাজের লোক। ??
ইসুয়া– কিহ্ আমি কাজের লোক????
রবিন– তা নয়তো কী???
ইসুয়া– আপনি আমাকে কাজের লোক বললেন??
রবিন– কেন?তুমি কি বয়রা?কানে শোনোনি কি বলেছি????
স্বাদ– এই এক মিনিট এক মিনিট এভাবে ঝগড়া করছো কেন তোমরা ??
রবিন– ঠিক বলেছেন ভাইয়া এক নাম্বার ঝগরুটে এই মহিলা।??
ইসুয়া– Same to u Mr.??
স্বাদ কিছুক্ষণ ভেবে রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো– জুনিয়র হয়ে বিয়ে করে নিলে আর আমরা হতভাগা সিনিয়ররা বউ তো দূরে থাক gf ও পাই না।??
রবিন– হায় কপাল। আচ্ছা ভাইয়া,আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। আপনারা আলাপ করুন।
স্বাদ– ওকে যাও।
রবিন চলে যায় ফ্রেশ হতে। ইসুয়া এগিয়ে এসে স্বাদের দিকে তাকিয়ে– আমি ইসুয়া।
স্বাদ– আমি স্বাদ আহসান। রিদীমার …..
রবিন– আপুর bestfriend….. I know??
স্বাদ একটা বড় নিঃশ্বাস টেনে— হুমমমমম bestfriend
ইসুয়া খানিকটা সন্দেহের দিকে তাকিয়ে– Anything wrong ভাইয়া????
স্বাদ– না গো , কিছু না।
ইসুয়া– বোন হিসেবে বলতে পারেন, I don’t mind
স্বাদ– সত্যি????
ইসুয়া– অবশ্যই, ঘটনা কী?বলুন তো …..
স্বাদ– রিদ এর one sided lover বলতে পারো।??
ইসুয়া স্বাদের পা থেকে মাথা অবধি চোখ দুটো উঁচু নিচু করে দেখতে লাগলো।স্বাদ অসহায় মুখ করে বললো — “এইভাবে দেখছো কেন?”
ইসুয়া– আপনাকে শেষ বারের মত অক্ষত দেখে নিচ্ছি আর কী!
স্বাদ– মানে????
ইসুয়া– মানে কবে আবার আসবেন এই বাড়িতে, ততদিন অবধি আপনি এখন যেমন আছেন তেমন যদি আর না থাকেন।কথাটা আপু শোনার পর যদি……
স্বাদ– এই তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো ইসুয়া??
ইসুয়া– আরে না না।
স্বাদ– তা নয়তো কী? কোথায় একটু সাহস দিবে রিদকে যাতে মনের কথাটা খুব শীঘ্রই বলতে পারি, তা না।
ইসুয়া– সরি ভাইয়া!আমি এমন সাহস আমার সদ্য ঘোষিত আমার ভাইকে দিয়ে তার কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারি না।
স্বাদ—-?????
রিদীমা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ইসুয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললো — কি,কি কথা চলছে দুজনের মধ্যে??
ইসুয়া– কিছু না, চলুন ব্রেকফাস্ট করবেন।
তারপর স্বাদের দিকে তাকিয়ে– আসুন ভাইয়া আপনিও বসবেন।
চৌধুরী বাড়ির সকলেই স্বাদের সাথে কৌশল বিনিময় করে ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসলো।
আফজাল সাহেব– স্বাদ বাবা কবে ফিরলে দেশে??
স্বাদ– এই তো কাল ই আঙ্কেল।
দিতী বেগম– ছুটিতে নাকি একেবারেই??
স্বাদ– পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
দিতী বেগম– ওহ্।
রিদীমা ব্রেড মুখে দিতে দিতে– আন্টির শরীর এখন কেমন আছে রে ??
স্বাদ– মায়ের জেদেই তো দেশে আসা।
রিদীমা– তাই বল,না হলে তুই যে ব্যস্ত!!
আফজাল সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে– রিদীমা মামণি একটা good news আছে।??
রিদীমা– কি good news….??
আফজাল সাহেব– একটা সরকারী সংস্থা থেকে দেশের প্রথম শ্রেণীর লোকদের ইনভাইট করা হয়েছে।
রিদীমা– So what????
আফজাল সাহেব– মানে!সেখানে তোমাকে ইনভাইট করা হয়েছে।
রিদীমা– আমাকে কেন?আর আমি এসব রাজনীতিতে জড়াতে চাই না ড্যাড।
স্বাদ– R u crazy….?? ??
রিদীমা– মানে।
স্বাদ– মানে হল ঐখান থেকে আমাকেও ইনভাইট করা হয়েছে। তোকে কেউ রাজনীতিতে জড়াতে বলেনি,তুই জাস্ট ইনভাইটেশন পেয়েছিস,যাবি। আমি ও থাকছি সেখানে।
রিদীমা– তোর যাওয়ার হলে যা।আমি কোথাও যাচ্ছি না।
আফজাল সাহেব– কিন্তু মা!!
স্বাদ– এক মিনিট আঙ্কেল আমি রিদ কে বুঝিয়ে বলছি।
তারপর রিদীমার দিকে তাকায় স্বাদ– দেখ,মানলাম তুই লন্ডনে No.1 বিজনেস টাইকন ছিলিস!! কিন্তু দেশে …. দেশে তোকে কজন চিনে?? তুই আর আমি দেশের প্রথম শ্রেণীর লোকদের একজন।কিন্তু দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় আমাদের চেনা জানা লোকের সংখ্যা খুব কম।??
রিদীমা– কিন্তু…………
স্বাদ– আমার কথাটা শেষ হতে দে।এই ইনভাইটেশন রক্ষা করলে আমাদের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বরং লাভ হবে।ভেবে দেখ, সেখানে আমাদের নেতৃত্ব দিতে বলছে না তো।কিছুক্ষণ বসে থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ছবি তুলে newspaper এ ছাপা হবে।এতে প্রায় অধিক সংখ্যক লোক আমাদের চিনবে জানবে।
রিদীমা কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর স্বাদের কথায় রাজি হল।সবাই ব্রেকফাস্ট করে যে যার কাজে চলে যায়। স্বাদ ও বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে।রবিন রিদীমা অফিসে যায় একসঙ্গে।
ইসুয়া ঘরে বসে bore হচ্ছিলো, তাই ছাদে যায় সময় কাটাবে বলে।
—————————————————–
গাড়িতে বসে রিদীমা দুপাশের প্রকৃতি দেখছিলো।আর রবিন ফোন টিপছিলো,,,,,
ভাইকে উদ্দেশ্যে করে রিদীমা জিজ্ঞেস করলো — সব ঠিক আছে তো রবিন????
রবিন– কি ঠিক থাকার কথা বলছো আপুনি??
রিদীমা– ইসুয়ার রিয়েকশ কি ছিলো??
রবিন– ওহ এই ব্যাপার!!??
রিদীমা– সিরিয়াস হতে শেখ, ছোট রয়ে যাসনি তুই।
রবিন– আসলে আপুনি কাল তেমন করে কোনো কথাই হয়ে উঠে নি আমাদের।অসুস্থ ছিলো ইসুয়া তাই।
রিদীমা — কোনো রিয়েকশ ও দেখায়নি??
রবিন– না।
রিদীমা– মেয়েটাকে ওর নিজের মত করে থাকতে দে।ওর যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবি।
রবিন– আচ্ছা।???
অতঃপর মনে মনে রবিন বললো — এবার Miss. অধ্যাপিকাকে আমার দূরত্ব বুঝাতে হবে।অনেক ভালবাসা দেখিয়েছি,আর না ….. এবার দূরে দূরে থেকে বোঝাতে হবে ভালবাসা কী??
………………………………………………………..
নিশুয়া ক্লাসরুমে বসে জীববিজ্ঞানের কিছু অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো।পাশে তার বান্ধবীরা বসে আড্ডা দিচ্ছে।
নিশুয়া– একটু আস্তে কথা বলবি প্লিজ।??
মিশু — কেন রে?কাল বাড়িতে পড়িসনি??
নিশুয়াকে যেন জন্মের বিরক্তি এসে ঘিরে ধরলো।বান্ধবীদের কথা যেন তার গায়ে শূলের মত বিধলো। রেগে বেরিয়ে গেল ক্লাসরুম থেকে।
মিশু অন্যদের দিকে তাকিয়ে– কি হল এটা?আমি ভুল কি বললাম?এভাবে বের হয়ে গেল কেন???
সবাই নিশুয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা করছিলো।
শাহেদ স্কুলের অফিস কক্ষে বসে কিছু কাগজ পত্র দেখছিলো।পাশেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বসেছিলেন।
আমিনুল ইসলাম– বুঝলে শাহেদ,আমার বোধ হয় রিটায়ার্ড করার সময় এসে গেছে।??
শাহেদ– সে কি স্যার?কবে???
আমিনুল ইসলাম– সামনের মাসেই।
শাহেদ– দু মাস পর ssc exam….. এভাবে নতুন প্রধান শিক্ষক এলে কিভাবে চলবে?হুট করে সব গুলিয়ে যাবে না????
আমিনুল ইসলাম– তাতে আর আমার হাত কই?সময় হলে সবাইকেই যেতে হবে নিজ গন্তব্যে।
শাহেদ বিষন্ন মুখে– তা যা বলেছেন।??
আমিনুল ইসলাম শাহেদের দিকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে — তোমার নামে এসেছে এটা।পিয়ন এসে দিয়ে গেছিলো।
শাহেদ খামটা হাতে নিতে নিতে — কি এটা????
আমিনুল ইসলাম– তোমার জিনিস তুমিই দেখে নাও।
শাহেদ খামটা তার পকেটে ভাঁজ করে রাখলো।বাড়িতে গিয়ে দেখবে বলে।আবার নিজের কাজে মন দেয় সে।
______________________(চলবে)