#Senior_life_partner
পর্ব——29
Afrin Ayoni
ইসুয়া খাবার শেষ করে যেই পিছনে ফিরতে যাবে তখনই সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলো মমতা চৌধুরী আর সিনথিয়া।
মমতা চৌধুরী– বউমা!তুমি কি বাড়ির সব নিয়ম ভাঙতে চাইছো??
দিতী বেগম– কেন আম্মা??
মমতা চৌধুরী– তোমার জানা নেই আমাদের বাড়িতে কেউ কাউকে ছাড়া খেতে বসে না।
সুরাইয়া খান মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন — আসলে মা!এমনিতেই বউমার শরীরটা খারাপ, ডাক্তার তো বলেই গেলেন সারাদিন না খাওয়ার জন্য এমন হয়েছে।
দিতী বেগম– সেজন্য ই জোর করে খাইয়ে দিলাম আর কি!!
মমতা চৌধুরী দিতী বেগমের দিকে তাকিয়ে– তোমাদের so called বউমাকে আমাদের বাড়ির সব নিয়ম কানুন জানিয়ে দিও।
সিনথিয়া মা আর মামীর এত আদিখ্যেতা দেখে ইসুয়ার দিকে ফিরে মুখ বাঁকালো।যেটা স্পষ্ট ইসুয়ার চোখে পড়ে।হঠাৎ করে আজ এই বাড়িতে আসার পর থাপ্পড় মারতে যাওয়ার দৃশ্যটা ইসুয়ার চোখে ভেসে উঠে।
রবিন একটা কল এটেন্ড করে মাত্র ই আবার ডাইনিং রুমে ফিরে আসে।মমতা চৌধুরী, সিনথিয়া ততক্ষণে ডিনার করতে টেবিলে বসেছে। এর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সুরাইয়া খান আর দিতী চৌধুরী। ইসুয়া বেচারি মনে মনে কিছু ভাবছিলো।
রবিন মায়ের দিকে তাকিয়ে– মা,বাকিরা কোথায়?খেতে ডাকো।খুব ক্ষিদে পেয়েছে তো।??
সিনথিয়া– ভাইয়া আসছে,আমি আসার সময় ডেকে এসেছি।
দিতী বেগম– তোর বাবা আর ফুফা এলো বলে,সবাই বসে পড়ো।
ইসুয়া দিতী বেগমের দিকে তাকিয়ে– আন্টি আমি আপনাকে সার্ভ করতে হেল্প করি????
ইসুয়ার কথায় রবিন একবার কোণ চোখে তাকালো আর মনে মনে বললো — এসেছে বাড়ির বউ হতে??
সুরাইয়া খান — একদম না,ভাবী আর আমি আছি তো।তোমার শরীর ভালো না। যা কাজ করার একটু আধটু কালকে থেকে করো।
রবিন দিতী বেগমের দিকে তাকিয়ে– মা!জিজ্ঞেস করো তো ঔষধ টা খেয়েছে কি না????
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে। দিতী বেগম এগিয়ে যায় ছেলের দিকে– কাকে জিজ্ঞেস করবো??
রবিন– আপনার একমাত্র বউমাকে??
ইসুয়া যেন রবিনের কথায় লজ্জায় নেতিয়ে পড়ে। তারপর আমতা আমতা করে বললো– আমি পরে উপরে গিয়ে মেডিসিন নিয়ে নিব।
ততক্ষণে আফজাল সাহেব, দেলোয়ার খান, আকাশ আর তার বউ ডিনার টেবিলে যোগ দিল।
মমতা চৌধুরী– বউমা তোমার গুণধর মেয়ে কোথায়??
রিদীমা সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে জবাব দিলো– কেন?? মিস করছিলেন নাকি????
মমতা চৌধুরী অস্পষ্ট স্বরে — অসভ্য মেয়ে মানুষ।
রিদীমা এসে সবার সাথে যোগ দিল। ইসুয়া অনেক জোরাজুরি করে সুরাইয়া খান আর দিতী বেগমকে রাজি করালো তাদের সাথে সার্ভ করতে।
সিনথিয়া নাক তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে– মম আমার চিকেন স্যুপ কোথায়??
সুরাইয়া খান — এই তো সবাইকে খাবার টা দিয়ে নিয়ে আসছি।রান্নাঘরেই আছে।
রিদীমাকে প্লেটে ইসুয়া যেই না খাবার তুলে দিতে যাবে তখনই রিদীমা ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো– আমি ডিনারে only সালাদ খাই ইসুয়া।
ইসুয়া– সরি আপু!আমি এক্ষুনি আনছি।
দিতী বেগম ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– রান্নাঘরেই রাখা আছে ,নিয়ে আয় তো মা।
ইসুয়া– আচ্ছা! আমি চিকেন স্যুপ টা ও নিয়ে আসবো রান্নাঘর থেকে। ??
সুরাইয়া খান — আচ্ছা ওটা ও নিয়ে আসিস মা।
ইসুয়া হেসে সম্মতি জানায়। কিন্তু তার মাথায় চলছে অন্য খেলা।
ইসুয়া রান্নাঘরে চলে যেতেই সিনথিয়া মুখ বেকিয়ে বলে — এহ্!কাজ দেখাচ্ছে ??
সুরাইয়া খান মেয়ের কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে — জীবনে ও তো কিছু করিস না, কাজের মর্ম কি বুঝবি।
রবিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিদীমা বলে উঠলো– এক মিনিট পি মণি।
তারপর সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো– কি বললি আবার বলতো।??
পাশ থেকে দেলোয়ার খান মেয়ের হয়ে বলে উঠলো– আরে রিদীমা মামণি ছাড়ো তো ওর কথা,ননদ না !!ভাবীর সাথে একটু দুষ্টুমি করেছে।
রিদীমা — এভাবে ছাড় দিলে তো আমাদের একূল ও যাবে ওকূল ও যাবে।
দেলোয়ার খান ইসুয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে– মানে??
রিদীমা– মানে কিছু না।
তারপর আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে রিদীমা বললো — ড্যাড কাল থেকে কোম্পানির সব দায়িত্ব আমার। তুমি আর ফুফার কয়টা দিন ছুটি।
আফজাল সাহেব– কিন্তু ….
রিদীমা– এতদিনে ও যখন সামলাতে পারোনি অফিস, আর সামলাতে হবে ও না তোমাকে।
মমতা চৌধুরী– তুমি সবেমাত্র দেশে ফিরলে,এখনই অফিসে বসার কী আছে? তাছাড়া দেলোয়ার তো সামলাচ্ছে ই।
রিদীমা একবার আড়চোখে তাকায় দেলোয়ার খানের দিকে — সে তো দেখতেই পেলাম।??
মমতা চৌধুরী– কটা দিন বিশ্রাম নাও।
রিদীমা– আমি বুঝে নেব আমার কি করা উচিত, আপনি এত হাইপার হবেন না।
আফজাল সাহেব– যাক, বুঝলে দেলোয়ার কাল থেকে আমাদের ছুটি।
দেলোয়ার খান– রিদীমা মামণি তুমি হঠাৎ এসেই অফিসের হাল ধরতে পারবে তো ??
রিদীমা– ফুফা আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমি লন্ডনের টপ business lady….
দেলোয়ার খান মনে মনে– সেজন্য ই তো ভয়??
রবিন– আপুনি ভাবছি,আমি ও তোর সাথে আমাদের business টা সামলাই।
দেলোয়ার খানের মাথায় যেন এক মণ চালের বস্তা পড়লো।উনি ভাবতে পারছেন না, এই কদিনের রবিন ঠিক এতটা চেন্জ কি করে হতে পারে!!
রিদীমা– তাহলে তো ভালোই হয়।??
আফজাল সাহেব পাশ থেকে বললেন– যাক আমি এবার নিশ্চিন্ত। আমার দুই ছেলে মেয়ে এবার ব্যবসা দেখুক।
রিদীমা– প্রশ্নই ওঠে না এত নিশ্চিন্ত হওয়ার। তুমি ভার্সিটির দিকে মনোযোগ দাও।
আফজাল সাহেব মন খারাপ করে– Ok??
পারিবারিক কথা চলাকালীন সময়েই ইসুয়া রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো, সালাদের প্লেট টা রিদীমার সামনে রেখে সিনথিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ ই ইসুয়ার হাতের স্যুপের বাটি থেকে কিছু টা গরম স্যুপ ছিটকে পড়ে সিনথিয়ার হাতে।
সিনথিয়া– আহ্???
ইসুয়া চোখ কপালে তুলে — সরি সরি,আমি দেখিনি।
দেলোয়ার খান মেয়ের হাত ধরে ফুঁ দিতে থাকেন,তারপর ইসুয়া কে ধমকে উঠলেন– দেখে চলতে পারো না?দিলে তো হাতটা পুড়িয়ে????
ইসুয়া কাঁদো কাঁদো মুখে– আমি দেখিনি,সত্যি বলছি।
রবিন– It’s ok…. এটা কেবল একটা accident ছিলো
রিদীমা– এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দাও পিমণি ঠিক হয়ে যাবে।
মমতা চৌধুরী ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না, এসেছো কাজ দেখাতে।করলে টা কী????
রিদীমা– বললাম তো মলম লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে। এত বকাবকির কি আছে?ইচ্ছে করে ফেলেনি তো।
রবিন– মা,জলদি নিয়ে এসো মলম।
সুরাইয়া খান — আমি আনছি।
শত হলেও মা তো,হন্তদন্ত হয়ে ছুটলেন মলম আনতে।
ইসুয়া মনে মনে — বেচারি!!ইসুয়া তালুকদারের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিলি না??এইবার বুঝো ঠেলা।??
রবিন আর রিদীমা বারবার ইসুয়ার দিকে তাকাচ্ছে। কারণ কারো চোখে ধরা না পড়লেও ওরা দুজন ঠিকই বুঝতে পারছে এটা ইসুয়ার ইচ্ছাকৃত ভুল।অতঃপর রিদীমা রবিনের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।তারপর রবিন কে উদ্দেশ্য করে বললো– ভাই তোর কপালে ঝাটা আছে ??
রিদীমার কথা ইসুয়ার কানে যেতেই হালকা কেশে উঠলো সে।রবিন আড়চোখে তাকায় তার অতি চতুর সিনিয়র বউয়ের দিকে।
সিনথিয়ার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিল দেলোয়ার খান। সবাই ডিনার শেষ করে যে যার মত রুমে ফিরে গেল।রিদীমা ইসুয়ার পাশ কেটে যাওয়ার সময় হালকা হেসে বলে উঠে– Dangerous ??
ইসুয়া রিদীমার কথার মানে বুঝতে পারলো না। সবকিছু গোছগাছ করে ইসুয়া উপরে উঠে রবিনের ঘরে যায়।
রবিন তখন ল্যাপটপ দেখছিলো।কাল থেকেই অফিসে জয়েন করবে তাই রিদীমার কাছ থেকে কিছু কাজ বুঝে নিয়ে এসেছে।ঘরে ঢুকেই রবিনের সামনে এসে দাঁড়ায় ইসুয়া।
রবিন ল্যাপটপে চোখ রেখেই বললো — কিছু চাই??
ইসুয়া– আপনার ফোনটা!!??
রবিন আড়চোখে– কেন??
ইসুয়া– বাড়িতে কথা বলবো মায়ের সাথে, আমার ফোনটা নিয়ে আসিনি।
রবিন পকেট থেকে ফোন বের করে ইসুয়ার সামনে ধরলো,”এই নাও।”
ইসুয়া– লক????
রবিন ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে– Miss. অধ্যাপিকা!
ইসুয়া খানিকটা বিচলিত হয়ে পিছু ফিরে বারান্দায় চলে যায়। তারপর ফোনের লক খুলে সে তো অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে, রবিনের ফোনের স্কিনে ইসুয়ার বারান্দায় বসে অন্য মনস্ক হয়ে চা খাওয়ার একটা ছবি ভাসছে।
ইসুয়া হেসে মনে মনে বলে– বানরের মত পিছনেই লেগেছিলো মনে হয় ??
বাড়িতে কল করে ইসুয়া। দুই তিনবার কল হয়ে কেটে গেল।হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। কাল সকালে কথা হবে ভেবে আবারো রুমে ফিরে ইসুয়া। রবিনের দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দিল।
ইসুয়া– এই নিন!
রবিন– কথা হয়েছে????
ইসুয়া– না।হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, ফোন তুলছে না কেউ।
রবিন– ওহ্।মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়ুন।
ইসুয়া বেডের দিকে যেতে যেতে– বিনা অনুমতিতে কারো পিক তোলা উচিত নয় ??
রবিন– আমি অন্য কারো পিক তোলেনি??
ইসুয়া হা করে পিছনে ঘুরে রবিনের দিকে তাকায়। রবিন দায়সারা ভাব নিয়ে বললো — আমার হবু বউয়ের পিক তুলেছি ।
ইসুয়া কথা না বাড়িয়ে মেডিসিন খেল।তারপর রবিন ই বলে উঠলো– আর কেউ যে ইচ্ছে করে কাউকে জ্বালিয়ে দিল!!??
ইসুয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়, আমতা আমতা করে বললো– মানে??
রবিন– মানে good night ……. Miss. অধ্যাপিকা। ঘুমিয়ে পড়ুন।
ইসুয়া ধরা পড়তে চাইলো না,তাই রবিনের কথামতো চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরলো।
রবিন মনে মনে– আমার নিষ্পাপ বউটা??আমার কত কথা শুনে উল্টিয়ে ফেলছে,good বউ???
——————————————
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রিদীমা জগিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে তখনই রবিন কোথাও থেকে তড়িঘড়ি করে বাড়িতে ঢুকলো। সামনেই বোনকে দেখে অবাক হয়ে গেল রবিন।
এত সকালে রিদীমা ছাড়া কেউ ই উঠে না এ বাড়ির।ভাইকে দেখে রিদীমা সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করলো– এত সকাল সকাল কোথা থেকে আসলি??
রবিন– আসলে……..??
রিদীমা– রাতে কোথাও গিয়েছিলি না কি??
রবিন আমতা আমতা করে– কোথায় যাব রাতে আমি?ছাড়ো তো…. তুমি হঠাৎ এত সকালে??
রিদীমা– এটা আমার জগিং টাইম,তোর তো অজানা নয়।
রবিন হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে– আরো আধা ঘণ্টা পর উঠো সবসময় তুমি।
রিদীমা– আমার উপর নজরদারি করিস না কি??
রবিন– না মানে……..
রিদীমা– আজ থেকে আধা ঘন্টা আগে জগিং এর টাইম সেট করেছি।
রবিন– ওহ আচ্ছা!!
রিদীমা– তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
রবিন– বল।
রিদীমা– বাড়িতে বলা যাবে না, আমার সঙ্গে জগিং এ চল।
রবিন– আচ্ছা চল।
ভাই বোন দুজন ই বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। এদিকে ইসুয়া সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়লো।তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে এল।বাড়ির কাজের লোক রহিমা বললো — “ছোট ভাবী,কিছু লাগবো আপনের?”
ইসুয়া– না গো!ব্রেকফাস্ট বানাতে এলাম।
রহিমা — ওমা আপনি কেন?বড় মা আছে না??
ইসুয়া– আজ থেকে আমিই করবো।তুমি just আমাকে হেল্প করো।??
রহিমা — আইচ্ছা। কন,কি হেলেপ করতাম??
ইসুয়া রহিমার ইংরেজি বলার চেষ্টা দেখে মুচকি হেসে বলে — সকালের নাশতায় কে কি খায়?আমাকে বল।বাকিটা আমি করে নিতে পারবো।
রহিমা ইসুয়াকে সবার নাশতার লিস্ট বলে ।তারপর এগিয়ে এসে কোথায় কি রাখা আছে ইনেস্ট্রাকশন দিতে থাকে।কাজের মধ্যেই ইসুয়াকে রহিমা বলে উঠলো– “আপনি খুব ভালা,ভাবীজান।আমাগো রবিন ভাইয়ের দিল ও খুব খোলামেলা। অনেক ভালা আপনেরা দুই জনেই ।”??
ইসুয়া– হয়েছে আর প্রশংসা করতে হবে না, নাশতা গুলো টেবিলে রাখবে চলো।
রহিমা আর ইসুয়া পুরো ডাইনিং টেবিল জুড়ে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে রাখলো।সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলো দিতী বেগম। ইসুয়ার মুখপানে চেয়ে বললো — এই কি রে??
ইসুয়া এগিয়ে এল শ্বাশুরীর দিকে — কি আন্টি??
দিতী বেগম– আমাকে ছাড়া এত কিছু করতে গেলি কেন??
ইসুয়া– I am sorry….??
দিতী বেগম– হয়েছে হয়েছে, একা একা এতকিছু করতে হবে না তোর।
ইসুয়া– তুমি দেখে নাও তো সব ঠিকঠাক কিনা।
দিতী বেগম– সবকিছু দেখতে হবে না, শুধু রিদীমার fruit juice, রবিনের লেবু চা আর মায়ের নিমপাতার পাচন ঠিক থাকলেই হল।
ইসুয়া– আচ্ছা ঐগুলাই দেখে টেস্ট করে বলো তো কেমন হয়েছে??
দিতী বেগম খাবার গুলো টেস্ট করে হাসিমুখে বাহবা দেয় ইসুয়া কে ।
দিতী বেগম– আমার চেয়ে ও best…..
ইসুয়া জড়িয়ে ধরে বলে– Thnx আন্টি। ??
দিতী বেগম রেগে– ছাড় আমাকে,দূরে যা।
ইসুয়া কপাল কুঁচকে বলে– কি হল?ধমকাচ্ছো কেন?
দিতী বেগম– আন্টি ডাকলি কেন?আমি তোর আন্টি?
ইসুয়া– আসলে প্রথম প্রথম আন্টি ডেকেছি তো তাই।
দিতী বেগম– এবার থেকে মা ডাকলেই জবাব পাবি, নয়তো না।
ইসুয়া– ওকে??
——————————————
স্বাদ ছাদে এসে দাঁড়ায় সকালের fresh air এ…. চারদিকে ঠান্ডা বাতাস।কী শান্তি!!হঠাৎ নিচে চোখ যায় তার।চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে উঠে।আরে রিদীমা না!!সাথে কে ওটা ??
স্বাদ দোতলার ছাদ থেকে চেঁচায়– এই রিদ!!??
কারো মুখে রিদ ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায় রিদীমা। পাশেই রবিন। কিন্তু রিদীমা বুঝতে পারছে না ডাকটা কোথা থেকে আসছে??চারদিকে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে থাকে।
রবিন– কি হল??
রিদীমা– কে যেন ডাকলো মনে হল????
রবিন– কই??
রিদীমা– আমি শুনলাম তো।
রবিন– এই গলিতে আমাদের কোনো পরিচিত লোক থাকে না। কে ডাকবে ??
রিদীমা আর রবিনের কথার মাঝেই ছুটে আসে স্বাদ।রিদীমা রীতিমতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হাঁপাতে হাঁপাতে স্বাদ বললো — Hlw guy’s…….
রবিন অবাক হয়ে– স্বাদ ভাইয়া না???
স্বাদ– চিনতে পেরেছো তাহলে????
রবিন– আপনি …………
রিদীমা– তুই দেশে কখন আসলি?কাল ও তো কথা হল বললি না তো???
স্বাদ — সারপ্রাইজ ????
রিদীমা– ??????
রবিন– তা কেমন আছেন ভাইয়া??
স্বাদ– ভালো না, ভাবলাম তোমার আপুকে সরাসরি অফিসে গিয়ে সারপ্রাইজ দিব তার আগেই দেখা হয়ে গেল।
রিদীমা– এটা কোনো কথা বললি?? ??
স্বাদ– বাড়ির ভেতরে আসবি তো আগে।মা তোকে দেখলে যা অবাক হবে না!!
রিদীমা– আজ না,অন্য একদিন।
স্বাদ– আয় না প্লিজ। ??
রবিন– স্বাদ ভাইয়া তার চেয়ে বরং আপনি চলুন আমাদের বাড়িতে, এই গলির পরের গলিতেই।
স্বাদ– আমি??
রিদীমা– হ্যাঁ চল।আন্টি কোথায়??
স্বাদ– মা এখনো ঘুমোচ্ছে।
রিদীমা– ওহ্।??
রবিন– তাতে কী?আপনি জলদি ফিরে আসবেন।আন্টি ঘুমোক,আপনি আমাদের সাথে আজ ব্রেকফাস্ট করবেন চলুন।
রবিন আর রিদীমার অনুরোধে স্বাদকে যেতেই হলো তাদের সাথে বাধ্য হয়ে।
……………………………………………..
“পুরোনো সেই দিনের কথা
ভুলবি কি রে হায়,,,,
ও সেই চোখের দেখা,প্রাণের কথা
সে কি ভোলা যায়??”
????????????????
লাইন দুটো গাইতে গাইতে দেয়ালের হাস্যোজ্জ্বল ছবিটার দিকে এগিয়ে গেল শাহেদ।তিন বন্ধুর ফ্রেমে বন্দী ছবিটির মাঝখানে রয়েছে রিদীমা। দুপাশে দাঁড়িয়ে স্বাদ আর শাহেদ।
ছবিটিতে রিদীমা স্বাদের কাঁধে মারছে আর শাহেদ রিদীমার গাল টেনে দিচ্ছিলো।অনেক সুন্দর একটা ছবি।কত স্মৃতি জড়িত তিন বন্ধুর এই ছবিটি শাহেদকে ভার্সিটির দিন গুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
পিছন থেকে শিলা বলে উঠলো– এইবার সময় এসেছে!তিন বন্ধু আবার এক হওয়ার। সবকিছু খুলে বলো ভাইয়া। সবটা বুঝবে স্বাদ ভাইয়া আর রিদীমা আপু।
শাহেদ– হুম …… তাই ভাবছি ???
___________________(চলবে)